বৈশাখী মেলায় কাজলাদিদির দাওয়াত ছিল

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বিষ্যুদ, ১৮/০৪/২০১৩ - ১০:২৯অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

পয়লা বৈশাখে আমি তোমার সাথে মেলায় যাব। প্রথমে মাটির প্লেটে আমি পান্তা ইলিশ খাব। আমি জানি ইলিশে তোমার এলার্জি আছে। তাই তুমি খুব ঝাল মরিচ আর ঝাঁঝালো পেঁয়াজ দিয়ে পান্তা খাবে। মরিচ আর পেয়াজের ঝালে তোমার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়বে, আমি আমার শাড়ির সাদা আঁচল দিয়ে সে পানি মুছে দেয়ার সময় মিটিমিটি হাসবো। সেই দৃশ্য আমার বান্ধবী কাজলা তার মেঠো ফোনের হাই রেজোলেশন ক্যামেরা দিয়ে বন্ধী করবে। কাজলা সেই ছবি তার ফেইসবুকে আপলোড করে আমাদের ট্যাগ করবে। আমাদের ফেইসবুক বন্ধরা সে ছবি লাইক করবে, কেউ কেউ আবার কিউট কিউট কমেন্টও করবে। তারপর আমরা পুরো মেলা ঘুরেঘুরে তোমার জন্য একটা বাঁশি কিনবো, আর তুমি আমাকে একটা টিয়ে পাখি কিনে দিবে। কাজলার জন্য একটা সাদা আঁচলের শাড়ি কিনে দিবো। যদিও আমার জানামতে সে শাড়ি পড়েনা। তারপরেও কাজলা’র জন্য একটা সাদা আঁচলের শাড়ি কিনবো। আমার এরকম প্লানের কথা যখন তোমাকে বলেছি – তখন তুমি মিষ্টি করে একটা হাসি দিয়েছ।

ও কাজলা কে তো আপনাদের সাথে পরিচয় করে দেয়া হল না। সে আমার খুব কাছে মানুষ, কাছের বন্ধু। আমি তারে কাজলাদিদি বলে ডাকি। এক সাথে স্কুল, কলেজ পেরিয়ে এখন একসাথে ভার্সিটিতে পড়ছি। কিন্তু আমার সাথে তার সবকিছুতেই আকাশ পাতাল পার্থক্য। যেমন আমি খুব শান্ত শিষ্ট টাইপ বাঙালি বধূ টাইপ, আর সে খুব চঞ্চল এবং খোলামেলা টাইপ। আমি যখন আমার বড় ওড়না মাথায় টানি, সে তখন ফু দিয়ে কপালের চুল উড়িয়ে তার ফতুয়ার উপরে বোতাম খুলে দেয়। তার অনেক ছেলে বন্ধু আছে, সে খুব আড্ডাবাজ টাইপের। ভার্সিটিতে ক্লাস শেষ করে আমি বাসায় চলে আসি, সে তখন তার ছেলে বন্ধুদের সাথে আড্ডায় মেতে উঠে। এমনও হয়েছে রাত ১০/১১ টায় তারে ফোন করলে সে বলত সে এখনও বাসায় ফিরেনি। আমার সাথে তার কেমনে বন্ধুত্ব হল সেটা নিয়ে আমি মাঝেমাঝে খুব অবাক হই। আমি নিজেও জানিনা এই বিপরীত মেরুর মেয়েটাকে আমি এতফিল করি কেন, কেনইবা বন্ধুদের কথা মনে হলেই মেয়েটার মুখ চোখের সামনে ভেসে উঠে।

তুমি প্রায়ই বলো আমি যেন তার সাথে চলাফেরা না করি। আমি তোমার সব কথা মানলেও এই কথাটা মানতে পারিনা। তুমি যখন প্রতিদিন তার বেহাল্লপনা উচ্ছৃঙ্খল লাগাম ছাড়া জীবনের নতুন নতুন ইনফরমেশন দিতে তখন তোমার সাথে তর্কে জড়িয়ে যেতাম। তুমি যেদিন বললে তার সিগারেট খাওয়ার খবরটা দিলে , সেদিন তোমাকে খুব কড়া রিএক্ট দেখিয়েছিলাম। বলেছিলাম তো কি হয়েছে। একটা ছেলে সিগারেট খেলে সমস্যা না হলে, একটা মেয়ে খেলে সমস্যা হবে কেন। তুমি আমার এমন রিএক্ট দেখে ইন রিপ্লাই তেমন কিছু বলনি। কিন্তু তোমার অবাক দৃষ্টি দেখে আমি অনেক কিছু বুঝিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু তোমার কাছে থেকে যেদিন শুনলাম সে ড্রাগস নেয়া শুরু করছে, সেদিন থেকে আমি তাকে নিয়ে বেশ টেনশনে আছি। তাই ঠিক করেছি তোমাকে নিয়ে তার সাথে একদিন বসব, দুজনে মিলে ভাল করে বুঝিয়ে বলব। আর সেই দিন পয়লা বৈশাখ হলে খুব ভাল হবে বলে আমি তুমি মিলে ঠিক করলাম পয়লা বৈশাখ তার সাথে বসবো। বছরের প্রথম দিন থেকে তার একটা নতুন জীবন শুরু হবে। তুমি প্রথমে তাকে আমাদের সাথে বৈশাখী নেওয়ার ব্যাপারে আপত্তি জানালেও আমার সব প্লান শুনে তুমি রাজি হয়ে গেলে। কাজলাও প্রথমে রাজি ছিলনা, কিন্তু আমার পীড়াপীড়িতে সেও আমাদের সাথে মেলায় যেতে রাজি হল।

পয়লা বৈশাখ সকাল থেকে কাজলা’কে মোবাইলে ট্রাই করছি কিন্তু বারবারই তার মোবাইল বন্ধ দেখাচ্ছে। ভাবলাম রাত জেগেছে হয়ত তাই বেলা পর্যন্ত ঘুমাচ্ছে। তার আবার রাত জাগার অভ্যাস আছে। মাঝেমাঝে সে আমাকে রাত তিনটায় মেসেজ দিয়ে জানতে চাইত কেমন আছি! অদ্ভুত একটা মেয়ে। আমি বাসা থেকে বেরিয়ে গেলাম। আমি বৈশাখে সাজে তোমার সাথে যেখানে দেখা করার কথা সেখানে অপেক্ষা করছি। একটু পরে তুমি আসলে। তোমাকে দেখে আমি খুব অবাক হলাম। কারণ তুমি একটা শর্ট পেন্ট আর একটা গেঞ্জি পড়ে আসছো, হাতে একটা পত্রিকা। অথচ তোমার সাথে কথা ছিল তুমি পাঞ্জাবী পাজামা পড়বে। তুমি আমাকে কুশলাদি না বলেই করেই জিজ্ঞেস করলে – তুমি কিছু শুনছ? আমি একটু কড়া হয়ে বললাম – আমি কি শুনবো। তখন তুমি পত্রিকাটা আমার দিকে বাড়িয়ে দিলে। আমি পত্রিকা হাতে নিয়ে পত্রিকা দিকে তাকানোর কিছুক্ষণ পড়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলাম।

কাজলা আমাকে একদিন তার এক মধ্যরাতের মেসেজে লিখেছিল – যে নিয়মগুলো তোর/আমার মত মেয়েদের একটা শিকলে আটকে রাখে।আমি সমাজের সেসব উদ্ভট নিয়ম ভেঙে নতুন নিয়ম বানাবো, এবং সেটা আমাদের এই সমাজে প্রতিষ্ঠা করবো। কাজলা তার নিয়ম এই সমাজে প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। তার আগেই সে সমাজ ছেড়ে চলে যেতে হয়েছে। সমাজ ছেড়ে কিন্তু সে তার ইচ্ছায় যায়নি। তাকে সমাজ থেকে তাড়িয়ে বিদায় করা হয়েছে। তার বিদায়ের দিন পত্রিকার একটা শিরোনাম হয়েছিল এরকম – বারিধারায় ধর্ষণের পর তরুণী খুন। কাজলা তার ছেলে বন্ধুর বারিধারার ফ্ল্যাটে গিয়েছিল। সেখানে তারা চার বন্ধু থাকত। চারজনই কাজলার বন্ধু। সেই চার বন্ধু তার আরও পাঁচজন বন্ধুকে দাওয়াত দিয়ে নিয়ে আসে। তারপর তারা নয়জন মিলে পালাক্রমে কাজলা’কে সারারাত ধর্ষণ করে। সকালের দিকে তাকে তার নিস্তেজ শরীরকে বালিশ চাপা দিয়ে আরও নিস্তেজ করে দেয়।

বন্ধুদের কথা মনে হলে আজও একটা সুইট মেয়ের মুখ চোখের সামনে ভেসে উঠে। যে মেয়েটি বৈশাখী মেলায় আমাদের একটা ছবি তুলার কথা ছিল। যে মেয়েটিকে আমাদের একটা সাদা আঁচলের শাড়ি কিনে দেবার কথা ছিল।
--------------------------------
মাসুম আহমদ


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

গল্পটি ভালই লাগল।
আঃ হাকিম চাকলাদার

মাসুম আহমদ এর ছবি

ধন্যবাদ

আহমেদ বাওয়ানী এর ছবি

পড়লাম, অগোছালো লেখায় বেলাল্লাপানা আর উচ্ছৃক্খলতার সংজ্ঞা দেয়ার চেস্টা করলেন নাকি নিয়ম ভাংতে যাওয়ার পরিনাম শেখিয়ে সাবধান করার চস্টা করলেন? লেখক কী বোঝাতে চাচ্ছেন তা কিন্তু বুঝলাম না। লেখক একটু ঝেড়ে কাশবেন?

মাসুম আহমদ এর ছবি

ঝেড়ে কাশার মত কিছু নাই - একটা অগোছালো গপ লেখার চেস্টা করেছি মাত্র

অন্যকেউ এর ছবি

চলুক

_____________________________________________________________________

বরং দ্বিমত হও, আস্থা রাখো দ্বিতীয় বিদ্যায়।

অন্যকেউ এর ছবি

স্বাধীনচেতা নারী মাত্রেই তার পোশাকের বিবরণ, তার সিগারেট, নেশা ইত্যাদি ইত্যাদি। স্বাধীনচেতা নারীর অন্তঃকরণটা কেমন, সেটা ভাবার চেষ্টা করে দেখেন, বহিরাবরণের বর্ণনায় যে একপেশে ভাবটা হাজার চেষ্টা করেও লুকোনো যাচ্ছে না, সেই বাহ্যিকতার ভুয়া আবরণটা এমনিতেই চলে যাবে।

একজন নারীকে তার পোশাক দিয়ে বিবেচনা করার চেষ্টাটা খুবই একপেশে আর প্রিকনসিভড। যতদিন তার চিন্তার বিশ্লেষণ না করতে পারবেন, তার জন্য সহানুভূতিটা লোক দেখানোই রয়ে যাবে।

_____________________________________________________________________

বরং দ্বিমত হও, আস্থা রাখো দ্বিতীয় বিদ্যায়।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

গল্প ভালো লাগেনি। যা খুশি তাই লিখে পাঠকের পাতে তুলে দেয়াটা পাঠকের প্রতি অন্যায় করা। বলতে পারেন মাঝখানে তো মডারেটররা আছেন। এর উত্তর হচ্ছে - এক, মডারেটররা মেশিনও নন্‌ সুপারম্যানও নন্‌। দুই, নিজেই যেটাকে অগোছালো বলেন সেটা মডারেটরদের হাওলায় ছেড়ে দেয়াটা মডারেটরদের প্রতিও অন্যায় করা।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

মাসুম আহমদ এর ছবি

সবাই যে গুছিয়ে লিখবে বা সবার সব লেখা যে গুছানো হবে সেটাও ভাবা কিন্তু অন্যায়!

আপনার কাছে হয়ত অগোছালো গপ ভাল না লাগতে পারে, আবার আরেকজনের কাছে গুছালো গপও ভাল না লাগতে পারে। যে যার মত করে লিখবে বা পোষ্ট দিবে এটাই তো স্বাভাবিক এবং সহজ ! এখানে আপনার চোখে মডারেটরদের প্রতি অন্যায় কিছু ধরা পড়লেও আমার চোখে কিন্তু সেরকম কিছু পড়ছে না!

তবে আপনার কমেন্ট নেক্সট পোস্ট দিতে হেল্প করবে, এর জন্য আপনাকে ধন্যবাদ!

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

সবাই যে গুছিয়ে লিখবে বা সবার সব লেখা যে গুছানো হবে সেটাও ভাবা কিন্তু অন্যায়!

যে যার মত করে লিখবে বা পোষ্ট দিবে এটাই তো স্বাভাবিক এবং সহজ !

ধন্যবাদ। আপনার মনোভাব জানা গেলো। ভবিষ্যতে আমি আপনার পোস্ট পড়া ও মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করবো।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

মাসুম আহমদ এর ছবি

বস মনে হয় মাইন্ড খাইলেন - সরি আছি !

ভাল থাকেন !

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

ডুপ্লি ঘ্যাঁচাঙ


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

জোহরা ফেরদৌসী এর ছবি

দূঃখিত, মাসুম। গল্পটির রস আস্বাদন করতে পারলাম না।

__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার

মাসুম আহমদ এর ছবি

আমিও দূঃখিত - তবে নেক্সট টাইম .................

মাসুম আহমদ এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

অফ যা

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।