বাঙালিগো ‘অনুভূতি’ সিনড্রোম’ ও কতিপয় পুরানা ক্যাচাল (প্রথম অংশ)

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: শনি, ২০/০৪/২০১৩ - ১০:৫৬অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

প্রথম পুস্তক :-

‘অনুভূতি’র পক্ষ-বিপক্ষ অথবা একচক্ষু হরিণ : এক ব্যাপক জাতীয় বিনোদন

১.
বিগত কিছুদিন থিকা দেশে ‘অনুভূতি’ নিয়া মাতন শুরু হইছে। শাহবাগ মুভমেন্টের পক্ষে-বিপক্ষে দেশের মানুষগো প্রতিক্রিয়া বিষয়টিরে আরো তীব্র কইরা তুলছে। বিশেষত ব্লগারগো গ্রেফতার ও রিমান্ডে নেওনের পর থিকা ‘অনুভূতি’ আর ‘অনুভূতি’র জায়গায় নাই। মেটাফোরিক্যাল হইয়া উঠছে। ‘অনুভূতি’তে আঘাত দেওনের অপরাধে এক পক্ষ অন্য পক্ষের দিকে আঙুল তুলছেন। নিজেগো ‘অনুভূতি’ হেফাজতের চিন্তায় সকলেই কমবেশি উৎকণ্ঠিত এখন। শাহবাগীরা ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও অনুভূতি’র সুরক্ষা নিয়া উৎকণ্ঠিত। গত দুই মাস যাবত এই ইস্যুতে উনারা ময়দানে সক্রিয় আছেন। অন্যদিকে হেফাজতি হুজুররা ব্লগারগো মাধ্যমে আল্লা-রসূলকে অবমাননা করা হইছে বইলা ধারণা করছেন। সুতরাং ‘ধর্মীয় অনুভূতি’র হেফাজতে উনারাও ময়দানে নামছেন। এরিমেধ্যে বিরাট সমাবেশ করছেন। সামনে আরো সমাবেশ-অবরোধ আছে। প্রয়োজনে জিহাদের হুমকিও দিয়া রাখছেন। পাল্টাপাল্টি এই দুই পক্ষের মাঝখানে বিএনপি-জামাতিরা নিজেরে পারসু করনের তালে আছে। এই হইলো অবস্থা!

এমতো অবস্থায় সরকার আসলে কোন পক্ষে আছেন সেইটা এখনো ক্লিয়ার না। শুরুতে শাহবাগীদের মধ্যে সরকার নিজেরে ভালোই পারসু করছিলেন। কিন্তু ‘নাস্তিকতা’র ইস্যু সামনে আইসা খাড়া হওনে হেফাজতিগো মধ্যে নিজেরে পারসু করন লাগতেছে। সেইক্ষেত্রে সরকার অবস্থা বুইঝা ব্যবস্থা নেওনের পথ ধরছেন। ঝোঁপ বুইঝা কোপ মারার ফন্দি আঁটছেন। অবস্থা যদি ‘তৌহিদী জনতা’ ও ‘নারায়ে তাকবির’-এর পক্ষে যায় তবে শাহবাগীগো ‘অনুভূতি’রে সাইডলাইন দেখাইতে সরকার দ্বিধা করবেন না। অন্যদিকে পরিস্থিতি উলটা ফল দিলে হেফাজতীদের সাইডলাইনে বসানোর দরকার হইতে পারে। সেইক্ষেত্রে সরকার বাহাদুরের ‘অনুভূতি’ কম্পিত না হওনের-ই কথা। হেফাজতিদের তালেবানী ১৩ দফা নিয়া খেলা করার অনভিজ্ঞতায় ফল উলটা হওন বিচিত্র না। সরকারের এই চানক্য নীতি ভোটের বাক্সে নৌকার জোয়ার আনবে কিনা সেটা এই মুহূর্তে গেজ করা মুশকিল। তবে বিএনপি’রে মোকাবিলায় সরকারের অবস্থান ক্লিয়ার। সরকার বাহাদুর জাতিরে এই ধারণা দিতে সক্ষম হইছেন যে বিএনপি’র ‘অনুভূতি’রে উনারা বাল দিয়াও পুছেন না। বিএনপি যে ঝোঁপে নিজেরে পারসু করুক, তারে দেখলেই মাইর। সেইক্ষেত্রে ‘হুকুমের আসামী’ নামের আইনটি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী খুব লাইক করছেন। যার পরিকল্পনা ও ইশারায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করন যায় সেই লোক হইতেছে ‘হুকুমের আসামী’। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এই আসামীগো একটা লিস্ট রেডি রাখছেন। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর হইছেন সেই লিস্টের এক নাম্বার আসামী। ‘হুকুমের আসামী’ নামের আইনটা যে কী চিজ আলমগীর সেটা হাড়েহাড়ে টের পাইতেছেন।

জাতির জন্য মির্জা ফখরুল এখন পুরাই ‘বিনোদন’! একবার চৌদ্দ শিকায় ঢুকছেন। বাইর অওনের পর আবার ঢুকলেন। আবার বাইর অইলেন। আবার ঢুকছেন। হয়তো আবার বাইর হইবেন। এবং অতঃপর …! ঢুকন ও বাইর হওনের এই চিপায় উনার মধ্যে মতিভ্রম (delusion Syndrome) জন্ম নিছে বইলা মনে হয়। এর থিকা ধারণা করন যায়, সকালে ঘর হইতে বাহির হওনের পর মির্জা ফখরুল নিজেও নিশ্চিত থাকেন না রাতে তিনি কই থাকবেন! হইতে পারে পরিবারের সাথে রাত্রিযাপনের সুযোগ সরকার তারে দিবেন। আবার এমন হইতে পারে, পল্টন বা গুলশান থিকা গৃহে ফিরনের কালে ডিএমপি উনারে লালবাগ অথবা কাশিমপুর হাজতে ঢুকনের অর্ডার করতে পারেন। ঘর-হাজত ও ময়দানের ত্রিমুখী চিপায় মতিভ্রম হওন বিচিত্র কিছু না। মির্জা ফখরুলের সেটা হইছে। শাহবাগীদের সমাবেশ তখন তুঙ্গে। সরকার উনারে জেল থিকা মুক্তি দিলেন। কেন দিলেন সেইটা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ভালো জানেন! বাহির হওনের পর মির্জা সাহেবের কেন জানি মনে হইলো জনতা তারে মুক্ত করার জন্য শাহবাগে জাইগা উঠছে। যাক, এই মতিভ্রমে দু’এক দিন গেলো। উনার মনে তখন অন্য বিভ্রমের উদয় হইলো। শাহবাগী পোলাপানগো সাপোর্ট দেওন যায় কিনা সেইটা নিয়া ‘যদি’ ‘কিন্ত’, ‘তবে’ শুরু করলেন। ওই সময়ের পত্র-পত্রিকা ও টেলিভিশন চ্যানেলগুলায় সেটা রেকর্ড আছে।

মির্জা ফখরুল ও বিএনপি’র একাধিক নেতার জন্য শাহবাগ একটি পারমানেন্ট সিনড্রোম হইয়া উঠছিল প্রায়! যদি না মাহমুদুর রহমান ‘নাস্তিক’-এর ইস্যু শাহবাগে পারসু করতেন। এবং ম্যাডাম খালেদা জিয়া আইসা ফখরুল সহ স্ট্যান্ডিং কমিটির মেম্বারগো ‘গণহত্যা’র ‘অনুভূতি’ না বুঝনের জন্য ঝাড়ি দিতেন। ঘটনা এইখানে শেষ হইলে কথা ছিল না। সাইদীরে চান্দে দেখতে পাওনের খবর নিয়া দেশে যে তাণ্ডব শুরু হইছিল তার ধাক্কায় মির্জা ফখরুল এইবার ট্রমার শিকার হইলেন। সংখ্যালঘু হিন্দু, পুলিশ প্রশাসন ও জামাতী ক্যাডারগো চিপার মধ্যে আহাম্মক হইয়া উঠনের বিস্তর উপাদান আছিল। ফখরুলরে এবার সেই ট্রমায় পাইলো। সিঙ্গাপুর থিকা ম্যাডাম সোজা প্রেস কনফারেন্সে আইসা ঘোষণা দিলেন, ‘পাখির মতো মানুষ মারা হইতেছে আর আমার লোকেরা ফুলের তোড়া নিয়া আমারে রিসিভ করতে গেছে। ওরা এইটাও অনুভব করতে পারে নাই, ‘প্রিয়, ফুল খেলবার দিন নয় আজি অদ্য/ ধ্বংসের মুখোমুখি আমরা।’ লীগের ‘গণহত্যা’ নিয়া একটা স্টেটমেন্ট পর্যন্ত তারা এই কয়দিনে দিতে পারে নাই!’ ম্যাডামের মুখ থিকা তিরষ্কারের সঙ্গে জঙ্গি প্রতিরোধের ঘোষণা আসনের আগে পর্যন্ত মির্জা সাহেব ‘গণহত্যা’র ব্যাপারে কিছু চিন্তা করছিলেন বইলা জাতি জানতে পারে নাই। হয়তো চিন্তা করছেন। কিন্তু শিওর হইতে পারেন নাই। ফল যা হওনের সেটাই হইছে। ‘গণহত্যা’র শাহবাগী সংজ্ঞা ও ইকুয়েশনের মধ্যে ম্যাডাম জিয়া ও ফরহাদ মজহারের সংজ্ঞার অনুপ্রবেশ উনারে হজম করতে হইছে। এইটা প্রমাণ করে, ভবিষ্যতে কদম বাড়ানোর আগে তারে দেখতে পাওনের শক্তি ফখরুল সাহেবের নাই। উনারে তাই সখা-নির্ভর-আত্মপ্রেমী (Co dependent narcissist) নামে সম্বোধন করা যাইতে পারে।

মনোবিজ্ঞান বলে সখা-নির্ভর-আত্মপ্রেমী নিজেরে খুব প্রেম করে। কিন্তু নিজের ‘অনুভূতি’ দিয়া কোনোকিছু উপলব্ধি করতে পারে না। আস্থাহীনতা তারে কাবু কইরা রাখে। নিজের চিন্তা ও বিবেচনা দিয়া অন্যরে প্রভাবিত করনের চাইতে নিজে প্রভাবিত হইতে অধিক ভালোবাসে। সেইক্ষেত্রে অন্যের ‘অনুভূতি’র ওপর তারে ব্যাপকভাবে নির্ভর করতে হয়। মাহমুদুর, মজহার ও ম্যাডামের ‘অনুভূতি’র ওপর নিজেরে নির্ভর করানোর মাধ্যমে ফখরুল সাহেবের ‘অনুভূতি’ আপাতত সুরক্ষিত হইছে। এই অর্থে উনি নেত্রীর বিশ্বস্ত গানম্যান। উনারে দিয়া আর কিছু না হউক, মিরজাফরীর সম্ভাবনা শূন্য। তবে লীগেরে নাকানি-চুবানী খাওনের কারিশমা উনার নাই। যে দল ইলেকশানে ৩৩ ভাগ ভোট পায়, জনগণের বৃহৎ অংশ যারে পক্ষ ভাবে, সরকারের বিপক্ষে জনগণরে জাগাইয়া তুলনের জন্য তারে কিনা জামাতি ও হেফাজতিগো ওপর নির্ভর করতে হইতেছে! সাইডলাইনের প্লেয়ার ফ্রন্টলাইনে আসায় বিএনপি’রে ফিল করা তাই কঠিন হইয়া উঠছে। জামাতি ও হেফাজতির পোশাকে যে বিএনপি এখন দৃশ্যমান হইছেন সেইটারে কি জিয়াউর রহমানের বিএনপি নামে ডাকা যায়? শুভাকাঙ্ক্ষীগো মনে এই নিয়া গুঞ্জন উঠছে। ফখরুল অনেক দিন থিকা সখা-নির্ভর-আত্মপ্রেমীর ভূমিকায় নিজেরে সন্তষ্ট রাখনের সংকল্প করছেন। বিএনপি’র থিংক ট্যাংকের লোকজনও সেই পথ ধরছেন বইলা মনে হয়। খোকা, হাফিজ উদ্দিনরে দেখলে সন্দেহের কিছু বাকি থাকে না। বিএনপি’র শুভাকাঙ্ক্ষীগো জন্য বিষয়টি বেদনার। আর, জাতির জন্য পুরাই বিনোদন।

২.
‘অনুভূতি’ নিয়া এইসব ব্যাপক বিনোদন ও হট্টগোলের মধ্যে কাউরে বোঝান মুশকিল যে, -জগতে হেন ‘অনুভূতি’ নাই যারে নিয়া আলোচনা-সমালোচনা করন যায় না। ‘অনুভূতি’ বিষয়টাই আপেক্ষিক। আপনি যারে ‘অনুভূতি’ ধইরা লইছেন, আমি তারে ‘অনুভূতি’ বইলা অস্বীকার যাইতে পারি। আপনার সাথে আমার দ্বিমত হইতে পারে। এবং হইলে সেটা নিয়া প্রশ্ন তুলনের অধিকার আমি রাখি। আপনি এইটা দেখেন, আমার বক্তব্যে আমি যুক্তিবোধের পরিচয় রাখছি কিনা। আমি কি প্রাসঙ্গিক তথ্য, প্রমাণ ও যুক্তি সহকারে কথা কইছি? নাকি খামোখা বিতর্ক সৃষ্টির লিগা আবোল-তাবোল বকবক করছি। আপনার ‘অনুভূতি’র সমালোচনা করতে গিয়া আমার ভাষা আক্রমণাত্মক হইতে পারে। ব্যঙ্গ-বিদ্রূপের সাহায্যে আপনারে আমি পচানোর চেষ্টা করতে পারি। এই অভিযোগে আপনি আমারে ‘ধর-মার-কাট’ শুরু কইরা দিবেন? নাকি পালটা বক্তব্য দিয়া আমারে খণ্ডন করবেন? আপনার বক্তব্য সেইক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক যুক্তির মধ্য দিয়া আক্রমণাত্মক বা ব্যঙ্গাত্মক হইতে পারে। অসুবিধা নাই। সংলাপ বহুভাবে চলতে পারে। চলা উচিত। তবে তার মেরিট বিচার করন জরুরি। আপনি আগে দেখেন আমি কেন ও কীসের ভিত্তিতে সমালোচনা অথবা দ্বি-মত পোষণ করছি। আমার বক্তব্যের পেছনে যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ ও যুক্তির সম্মতি আছে কিনা। আপনার মনের বন্ধ কোনো দরোজায় আমি হয়তো টোকা দিতে চাইছি। প্রচলিত কোনো ধারণায় আঘাত দেওনের ইচ্ছা করছি। ব্যক্তির মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও তা লঙ্ঘনের জায়গা থিকা আমি সঠিক কাজ করছি কি করি নাই সেইটা আগে বিচার করেন। যদি অনুচিত কিছু করি তাইলে আপনি আমারে ‘অনুভূতি’তে আঘাতকারী বইলা বয়কট করতে পারেন। প্রয়োজনে আইন দিয়া হাত-পা বাঁধেন। আপত্তির কিছু নাই। কিন্তু আওয়াজ দিলে ‘অনুভূতি’তে আঘাত লাগছে বইলা ফাল দিবেন কেন?

দুঃখের বিষয় হইলো শাহবাগ কাণ্ডের পর থিকা ‘অনুভূতি’ নিয়া সকলেই স্পর্শকাতর হইয়া উঠছেন। কাউরে কিছু কওনের উপায় নাই। কিছু একটা কইলেই রিএ্যাক্ট কইরা বসেন। ফলে মুক্তচিন্তার পরিসর ছোট হইয়া আসছে। ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও অনুভূতি’ নিয়া কেউ হয়তো একটা প্রশ্ন তুলছেন। আপত্তিকর বক্তব্য বা লেখা লিখছেন। সেজন্য ওই ব্যক্তিরে ‘স্বাধীনতা বিরোধী’ অথবা ‘রাজাকার’ বইলা চিহ্নিত করনের প্রবণতা জোরদার হইছে। কাজটা ঠিক না বেঠিক সেইটা বিবেচনার ধৈর্য কারো নাই। শাহবাগ আন্দোলনের শুরুর দিকে এই প্রবণতা তুঙ্গে উঠছিল। ফেসবুকে ফ্রেন্ডলিস্ট ছাটাইয়ের হিড়িক কিন্তু বেশিদিন আগের ঘটনা না। কেউ খোঁচা দিয়া কিছু কইলেই হইছে! ‘রাজাকার’ সন্দেহে তারে ব্লক, আনফ্রেন্ড করার বাতিক শুরু হইলো! এই বাতিক যে ফ্যাসিবাদী মনোভাবের লক্ষণ সেটা তখন কারোই মনে হয় নাই। ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও অনুভূতি’ যিনি অন্তরে ধারণ করছেন তিনি নিশ্চয় ফ্যাসিবাদী ‘অনুভূতি’ দিয়া মুক্তিযুদ্ধের তাৎপর্য বিচার করেন না। সকল ক্ষেত্রেই ব্যক্তির বক্তব্য আগে বিবেচনা করা উচিত। বক্তব্যে আপত্তিকর কিছু থাকলে তারে পালটা যুক্তি দিয়া ভুল প্রমাণ করা কঠিন কিছু না। যুক্তিই হয়তো সেই ব্যক্তিরে ‘রাজাকার’ বইলা সাব্যস্ত করবে। তার চিন্তা যে ভ্রান্ত ও উদ্দেশ্যমূলক ছিল সেইটা প্রমাণ কইরা দিবে। ফলে খুব বেশি ঠ্যাঁটা কিছিমের লোক না হইলে ফ্রেন্ডলিস্ট থিকা নিজেরে সে প্রত্যাহার কইরা নিতে বাধ্য।

‘ধর্মীয় চেতনা ও অনুভূতি’র ক্ষেত্রেও এই নিয়মের ব্যতিক্রম হওন উচিত না। ‘অনুভূতি’র সমালোচনা করা হইছে দেইখা যারা ফাল দিয়া উঠেন, উনাদের আরো সহিষ্ণু হওয়া প্রয়োজন। কারণ নিজের ‘ধর্মীয় চেতনা ও অনুভূতি’ সম্পর্কে স্পর্শকাতর হইতে গিয়া অন্যের ‘চেতনা ও অনুভূতি’রে উনারা আঘাত দিয়া বসেন। ছোট একটা উদাহরণ দিবার চাই। দেশের মসজিদগুলায় প্রতি শুক্রবারে খুতবা হয়। খুতবা প্রদানের পূর্বে ইমাম সাহেবরা নামাজিগো উদ্দেশে ধর্মীয় উপদেশ খয়রাত করেন। দেশে অগণিত ওয়াজ মাহফিল হয়। সম্মানিত আলেমরা সেখানে হিন্দু, ইহুদি ও খ্রিস্টান ধর্মের কঠোর সমালোচনা কইরা বক্তব্য রাখেন। ওই ধর্মের লোকদের ‘কাফের’, ‘ফাছ্বেক’ ‘মুশরিক’ বইলা গালি দেন। সমালোচনায় আপত্তি নাই। গালিও ক্ষেত্রবিশেষে প্রাসঙ্গিক হইতে পারে। কিন্তু মেরিটের বিচারে আলেমদের সমালোচনা ও গালির মধ্যে অন্য ধর্মের প্রতি অন্ধঘৃণা ও আক্রোশ ছাড়া দ্বিতীয় কিছু আমি আজও পাই নাই! আপনারা পাইছেন কিনা জানি না। যার ফলে উনাদের বক্তৃতা জ্ঞানগর্ভ বিশ্লেষণে পরিণত হইতে ব্যর্থ হয়। ধর্মপ্রাণ মুসল্লিগো কোনো উপকারে আসে না। এইসব ভাষণ থিকা ঘৃণা শিখনের শিক্ষা নিয়া সরলপ্রাণ ধার্মিকেরা বাড়ি ফেরেন।

ঘৃণা সম্প্রচারের এই তরিকার সাথে ফ্যাসিবাদের ভিন্নতা নাই। ফ্যাসিবাদী মনোভাব সাম্প্রদায়িকতা জাগ্রত করায়। মসজিদ ও ওয়াজ মাহফিলের পাশেই হয়তো কোনো হিন্দু বসবাস করেন। অন্য ধর্মে বিশ্বাসী ব্যক্তি থাকতে পারেন। তাগো ‘অনুভূতি’তে এই ‘ঘৃণা সম্প্রচারের’ প্রতিক্রিয়া সুখকর হওনের কথা না। আলেমদের কখনো এসব নিয়া ভাবনা করতে দেখি না। প্রাসঙ্গিক যুক্তি সহকারে অন্য ধর্মের সমালোচনা হইতে-ই পারে। এতে আপত্তির কিছু নাই। কিন্তু সমালোচনার নামে সরলমনা মুসল্লিগো মনে সাম্প্রদায়িক ঘৃণা জাগ্রত করা বাক-স্বাধীনতার পর্যায়ে পড়ে কিনা সেটা নিয়া রাষ্ট্র ও সমাজের আরো চিন্তা-ভাবনা করা উচিত। আমার নিজের পরিবারে দেখছি। বহু শিক্ষিত মানুষজনের ফ্যামিলিও দেখছি। অন্য ধর্মের ইয়ারদোস্তের সাথে উঠবস করেন। কিন্তু ওই পর্যন্ত। মনোজগতে ওই লোকগুলারে উনারা আসলে প্রতিরোধ করেন। তারে আস্ত একটা ইনসান বইলা ভাবতে পারেন না। সেই যুক্তিবোধের চর্চাও করেন না। অন্য ধর্মের, বিশেষ কইরা ‘হিন্দু’ সম্প্রদায়ের মানুষগো বিবেচনার প্রশ্নে ঐতিহাসিক ঘৃণার বিষবাষ্প থিকা বাংলাদেশের মুসলমান সম্প্রদায় আজো বাহির হইতে পারেন নাই। অন্যভাবে ইন্ডিয়ায় মুসলমানগো বিবেচনার প্রশ্নে হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে অনুরূপ দৃশ্য দেখি। এইখানে জামাত আছে। হেফাজতিরা আছেন। ওইখানে বিজেপি। হিন্দুসংঘ। আরো কতো কী! ‘সাম্প্রদায়িক ঘৃণার অনুভূতি’ উপমহাদেশে মুক্তচিন্তার পরিধি তাই ছোট কইরা আনছে।

মনের মধ্যে ‘সাম্প্রদায়িক ঘৃণা ও অভিমান’ নিয়া মুক্তচিন্তা হয় না। কিন্তু বাংলাদেশে এই ‘অনুভূতি’রে ব্যাপকভাবে পৃষ্ঠপোষকতা করা হইছে। একদল মুক্তচিন্তক সম্প্রতি সেই পৃষ্ঠপোষকতায় ঘি ঢালনের কাজে লিপ্ত আছেন। অসাম্প্রদায়িক ভাবনার চর্চারে উনারা ইউরো-সেন্ট্রিক দাসত্ব আখ্যা দিয়া ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ কইরা থাকেন। তাগো মতে ধর্মে বিশ্বাসী কোনো সম্প্রদায়ের পক্ষে সাম্প্রদায়িকতা পরিহার করন সম্ভব না। এর লগে উক্ত সম্প্রদায়ের ‘ধর্মীয় বিশ্বাস ও দৃষ্টিভঙ্গি’ জড়িত। কাজেই পশ্চিমা দেশগুলার ‘সেকুলার’ ভাবনা ধার কইরা অসাম্প্রদায়িক হওনের সুযোগ বাংলাদেশে নাই। যারা সেটা করছেন তারা ভুল প্রমাণিত হইছেন। নিজেরে অসাম্প্রদায়িক প্রমাণ করতে গিয়া ওই নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের ‘অনুভূতি’রে উনারা আঘাত দিছেন। তাগো অপমান করছেন। ফলাফল ভালো হয় নাই। ওই সম্প্রদায় এখন অসাম্প্রদায়িকতার অনুশীলনরে ‘নাস্তিকতা’ জ্ঞান করে। এবং তারে প্রতিরোধ ইমানী দায়িত্ব মনে করে। সুতরাং ধর্মীয় বিশ্বাসের মধ্যে অন্য ধর্মের প্রতি সহনশীল আচরণ নিয়া যেসব বক্তব্য ও সাংস্কৃতিক অনুশীলন আছে তার মধ্য থিকা ‘সাম্প্রদায়িক ঘৃণা’ সমাধানের উপায় খুঁজতে হইবো।

মুক্তচিন্তকগো বক্তব্যে যুক্তির খামতি নাই। তবে অভিজ্ঞতা বলে, ধর্মীয় বিশ্বাসগুলার মধ্যে পরস্পররে খারিজ সহজাত প্রবণতা দূর হয় নাই। নিজেরে শ্রেষ্ঠ প্রমাণের ঝোঁক তাগো মধ্যে শুরু থিকা বিদ্যমান ছিল। নিজেগো ‘বিশ্বাস ও অনুভূতি’র প্রশ্নে ধর্মীয় সম্প্রদায় খুব যে সহনশীল আচরণ করছে সেই প্রমাণ কিন্তু ইতিহাসে লেখে না। অন্য ধর্মের প্রতি ‘সাম্প্রদায়িক ঘৃণা’ বজায় রাখন ছাড়া ‘ধর্মীয় বিশ্বাস’-এর পক্ষে নিজের স্বাতন্ত্র্য নিয়া টিকা থাকন মুশকিল। ইউরোপে শত-শত বছর ধইরা ধর্মযুদ্ধ বা ক্রুসেড সংঘটিত হওনের পেছনে শ্রেষ্ঠত্ব ও স্বাতন্ত্র্যবোধের মানসিকতারে উপেক্ষা করা যায় নাই। ইহুদি, খ্রিস্টান ও ইসলামের ব্যানারে এই ক্রুসেড সংঘটিত হইছে। তিনটি সেমিটিক ধর্ম পবিত্র জেরুজালেম নগরীরে নিজেগো সম্পত্তি বইলা দাবি করছিল। জেরুজালেমে আধিপত্য স্থাপন নিয়া তারা মারামারি করছে। নিজেরে ঈশ্বরের নির্বাচিত প্রতিনিধি ভাবনের দ্বন্দ্ব থিকা তাগো মধ্যে পরস্পরের প্রতি প্রত্যাখানের মনোভাব জন্ম নিছিল। এই ‘সাম্প্রদায়িক মনোবৃত্তি’ মূসা, ঈসা ও মোহাম্মদী কওমের মধ্যে যে ‘অনুভূতি’ সৃষ্টি করছিল সেটা থিকা তারা বাহির হইতে পারে নাই। ক্রুসেডে অবতীর্ণ হওনের মাধ্যমে তাগো সেই মনোভাব জাতি-ঘৃণায় বিস্ফারিত হইছে। ক্রুসেড শেষ হইলেও ঘৃণার মনোভাব আজো তাগো ভাগ করে রাখছে।

উপমহাদেশে ক্রুসেড না ঘটলেও সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা-হাঙ্গামা হইছে। দাঙ্গা প্রতিহত করার ক্ষেত্রে অন্য ধর্মের প্রতি সহনশীলতার বাণী কাজে আসে নাই। বাংলাদেশের মুসলমান সম্প্রদায় নিজেরে শ্রেষ্ঠ ও সংখ্যাগরিষ্ঠ বইলা ভাবেন। সেইক্ষেত্রে সংখ্যার বিচারে লঘু ও শক্তিহীনদের সুরক্ষা দেওন তাগো ইমানী দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। বাস্তবে কয়জন মুসলমান সেই দায়িত্ব পালন করছেন? যে ধর্ম তার অনুসারীর মধ্যে লঘু ও শক্তিহীনগো সুরক্ষা দেওনের চেতনা জাগাইতে পারে না সেই ধর্মে ইনসাফ নাই। অভিজ্ঞতা আরো বলে, নিজ ধর্মের বাইরে অন্য ধর্মের ‘বিশ্বাস ও অনুভূতি’রে ভারতবর্ষ কখনোই সুরক্ষা দিবার পারি নাই। এইখানে মুসলমানগো ‘ধর্মীয় অনুভূতি’রে হিন্দুরা সুরক্ষা দিতে পারে নাই। মুসলমানরা আবার হিন্দুগো বেলায় সেইটা প্রতিষ্ঠা করতে বিফল হইছে। লোকায়ত আচার-বিশ্বাসের সঙ্গে উক্ত ধর্মগুলার সংঘাত-সমন্বয় মানুষরে যে চেতনা উপহার দিছিল সেইটার সাহায্যে সাম্প্রদায়িকতার বিষনখ ঠেকানোর চেষ্টা তারা করছে। সুতরাং ‘ধর্মীয় সহিষ্ণুতা’র বাণী বা সংস্কৃতির লগে আপোসরফা কইরা সাম্প্রদায়িকতার কিনারা করন কঠিন। তবে রাষ্ট্রের পক্ষে কাজটা কঠিন না। রাষ্ট্র ইচ্ছা করলে সহনশীলতার সংস্কৃতি বজায় রাখনে নিজের ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারে। ‘ধর্মীয় বিশ্বাস ও অনুভূতি’র মধ্যে মধ্যস্থতাকারী হিসাবে রাষ্ট্রক্ষমতার প্রয়োগ ঘটানো সম্ভব। সেইক্ষেত্রে ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহার থিকা রাষ্ট্ররে মুক্ত করা প্রয়োজন। মুসলমান অধ্যুষিত ইন্দোনেশিয়ায় যেমনটা হইছে। ইন্দোনেশিয়ায় খ্রিস্টানরা নাকি মুসলমানগো মসজিদ ব্যবহার করতে পারেন। রাষ্ট্র উনাগো সেই অনুমতি দিয়া রাখছেন। মুসলমান সম্প্রদায়ের ‘অনুভূতি’রে ক্ষুণ্ন বোধ করনের সুযোগ রাষ্ট্র সেখানে দেয় নাই। আমাদের এইখানে ধর্মীয় ‘অনুভূতি’র ঠিকাদারী যারা নিছেন তারা মন্দির বা মসজিদের এমন ব্যবহার হইতে দিবেন বইলা মনে হয় না।

সাম্প্রদায়িকতার এইসব জটিলতা থিকা মুক্তিলাভের জন্য অসাম্প্রদায়িক চিন্তা-চেতনা ও যুক্তিবোধে নিজেরে দীক্ষিত করনের ভাবনা কারো মনে জাগ্রত হইতে পারে। যদিও অনেকে এর অপব্যবহার করেন। তাই বইলা অসাম্প্রদায়িক হওনের চর্চারে উপহাস করার কিছু নাই। এই চেতনায় বিবেচনা ও মানবিকতাবোধের প্রসার অনেক ব্যাপক হইয়া থাকে। বাংলাদেশে রাজনীতির বড়ি হিসাবে রাষ্ট্র তারে ব্যবহার করছে। ইউরোপে একসময় সেটা হইছে। প্রগতিশীলতা জাহিরের খাতিরে অনেক সুশীল না হয় তারে ব্যবহার করেন। ওইটা সেই রাষ্ট্র ও সুশীলগো সমস্যা। অসাম্প্রদায়িক ‘চিন্তা-চেতনা ও অনুভূতি’র মধ্যে যুক্তিবোধের যে পরিসর থাকে, -তার না। চেতনার অপব্যবহার হইতে-ই পারে। তবে অসাম্প্রদায়িক ভাবনারে মন থিকা খারিজ করনের আগে ধর্মীয় বিশ্বাসের পক্ষে সকল সম্প্রদায়ের সুরক্ষা দেওন আসলেই সম্ভব কিনা সেটা নিয়া ভাবা উচিত।

বাংলাদেশে ‘ধর্মীয় বিশ্বাস ও অনুভূতি’ যে আকার ধারণ করছে তার স্বরূপ নিয়া দুশ্চিন্তা করনের তাই হাজারো যুক্তি আছে। বিপরীত দিক হইতে ‘প্রগতিশীল চিন্তা-চেতনা ও অনুভূতি’র স্বরূপ নিয়াও সমাজে নানা প্রশ্ন উঠছে। সন্দেহ দেখা দিছে। ‘অনুভূতি’ ক্ষুণ্ন হওনের প্রশ্নে সকলে তাই কোনো-না-কোনো পক্ষ নিতে বাধ্য হইছেন। নিজেরে একচোখা হরিণে পরিণত করছেন। জাতির জন্য একচক্ষু হরিণ হওনের এই প্রবণতা শুভ কিনা, এইটা অনিবার্য আছিল কিনা, তারে রোধ করা যাইতো কিনা, এসব নিয়া চিন্তা-ভাবনা করনের সময় বোধহয় এখনো তামাদি হয় নাই।

‘অনুভূতি’র রাজনীতি, নিরপেক্ষতা ও জনগণের লগে লিডারগো ‘চুক্তি’ : পলিটিকস-এ কি তবে পয়জন ঢুকছে?

৩.
লিডার হইতে জনগণ সকলেই একচোখা হরিণে পরিণত হওনের ফলে জাতীয় জীবনে রঙ্গতামাশার ব্যাপক প্রাদুর্ভাব ঘটছে। কনট্রাডিকশন বা স্ববিরোধিতা তীব্র হওনে কনফিউশন বা বিভ্রান্তি বেগবান হওয়ার সুযোগ পাইছে। ফলে ফখরুল সাহেব এখন আর একা নাই। স্ববিরোধিতা ও বিভ্রান্তির ঘোরচক্করে সকলেই নিজেরে কমবেশি আক্রান্ত ভাবতে শুরু করছেন। জাতীয় জীবনের গুরুতর ইস্যুগুলার সঙ্গে ব্যক্তি ও পারিবারিক জীবনের ইস্যুরে তাই পৃথক রাখন সম্ভব হইতেছে না। বিভক্তির ‘অনুভূতি’ শুধু লীগ, বিএনপি, জামাতিগো মধ্যে আবদ্ধ নাই। শাহবাগী অথবা কওমি হুজুরগো মধ্যেও সীমিত নাই। সমগ্র জাতির মধ্যে সেইটা সংক্রমিত হইছে। বিভক্তি, বিভ্রান্তি এবং পরিশেষে কোনো এক পক্ষে খাড়া হওনের তাড়না ‘নিরপেক্ষতা’ শব্দটিরে তাই কমিক কইরা ফেলছে। ডামাডোলের মধ্যে যে ব্যক্তি নিজেরে ‘নিরপেক্ষ’ রাখনের অভিপ্রায় ব্যক্ত করছেন, তার পক্ষে সেই মনোভাবে স্থির থাকন কঠিন। সকলে যখন কোনো এক পক্ষে, সেইখানে তিনি একলা ‘নিরপেক্ষ’ থাকবেন ক্যামনে? পক্ষ আইসা তারে অনবরত খোঁচাইবো। একটা কিছু কইতে ইনসিস্ট করবো। ‘ই-ধার’ নয় ‘উ-ধার’-এ সাইড লওনের জন্য উত্যক্ত কইরা মারবো। এই চিপার মধ্যে কোনো পক্ষ না লওনের ‘নিরপেক্ষতা’ ব্যক্তিরে সংকটে নিপতিত করায়। সংকট থিকা বাহির হওনের দুশ্চিন্তা তার ঘুম হারাম করে। ধারণা করি, এই মুহূর্তে ‘নিরপেক্ষ’ থাকনের চান্স কারো নাই। সংঘাতের মধ্যে বিচরণের কালে ‘নিরপেক্ষতা’ সুবিবেচনার বিজ্ঞাপন হইতে পারে। তবে সাম্প্রতিক বাংলাদেশে ‘নিরপেক্ষ’ থাকনের সুযোগ কারো নাই।

এতোকিছুর পরে নিজেরে যারা ‘নিরপেক্ষ’ রাখনের পণ করছেন উনারা আসলে পরিস্থিতির ভিতরে নাই। বাহিরে বইসা জাতির ‘অনুভূতি’রে ফিল করনের চেষ্টায় আছেন। ভিতরে ঢুকনের পর তাগো পক্ষে সেই মনোভাব বজায় রাখন সম্ভব বইলা মনে হয় না। পরিস্থিতির কারণে জাতীয় জীবনে যে স্ববিরোধিতা ও বিভ্রান্তি তীব্র হইছে, সেইটা তারে ‘নিরপেক্ষ’ থাকতে দিবে না। ম্যাডাম খালেদা একবার কইছিলেন, ‘জগতে শিশু ও পাগল ছাড়া কেউ নিরপেক্ষ নহে।’ বাংলাদেশের সাম্প্রতিক দশা উনার কথারে সমর্থন করে।

কোনো ব্যক্তি নিজেরে ‘নিরপেক্ষ’ রাখনের যুক্তিবোধে অটল হইতে পারেন। সেই অধিকার দেশের সংবিধান তারে দিছে। তবে এই মুহূর্তে স্ববিরোধিতা ও বিভ্রান্তির আগুনে ঘি ঢালন ছাড়া জাতিরে তিনি বিশেষ কিছু দিতে পারবেন বইলা প্রত্যয় হয় না। সঙ্গতকারণে বাংলাদেশের সিটিজেনগো মধ্যে যারা কোনো এক পক্ষে অবস্থান নিছেন, তাগো দোষ ধরনের কিছু নাই। চলমান পরিস্থিতি হইতে পরিত্রাণের অন্য কোনো রাস্তা যেখানে খোলা নাই, সেইখানে ‘নিরপেক্ষতা’র গদিতে হেলান দিয়া জাতিরে শান্তি, সহিষ্ণুতা, স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র বুঝানোর চাইতে একটা পক্ষ নেওন অনেক বেশি যৌক্তিক ও সময়োচিত সিদ্ধান্ত। সুতরাং পক্ষ নেওন মানেই খারাপ কিছু না। তবে পক্ষগুলার মধ্যে তুলনা করা যাইতে পারে। সংকট থিকা বাহির হওনের জন্য তুলনা করা দরকারী। কে কোন পক্ষ নিছেন, দেশ-কাল বিচারে কোন পক্ষ জাতিরে সামনে নিবার চায়, কে অধিক গ্রহণযোগ্য ও প্রাসঙ্গিক, -এই বিষয়গুলা খিয়াল করা প্রয়োজন। পক্ষ গ্রহণের মধ্যে মতান্ধ হওনের ঝুঁকি থাকে। কিন্তু ‘উপায় নাই গোলাম হোসেন।’ বাংলাদেশে যে সংকট ঘনীভূত হইছে তার নিরসন করতে হইলে পক্ষ নেওন ছাড়া গতি নাই। বর্তমান থিকা ভবিষ্যতের দিকে উত্তরণের তৃতীয় কোনো তীর আপাতত দৃশ্যমান হইতেছে না। কাজেই পক্ষ-বিপক্ষের মধ্যে ফয়সালা জাতিরে সংকট থিকা পরিত্রাণ দিতে পারে। বিষয়টা মনে রাখন প্রয়োজন।

৪.
বিগত ৪২ বছরে বাংলাদেশের পলিটিকস পাবলিকের মগজে বহুবিধ জ্যাম সৃষ্টি করছে। আত্মপরিচয় নিয়া পাবলিকের মনের ধন্দ আজো দূর হয় নাই। মুসলমান ও হিন্দুয়ানীর পুরানা ক্যাচাল সুযোগ পাইলেই তার ওপর চড়াও হয়। প্রগতি ও মৌলবাদের দ্বন্দ্ব তারে বিব্রত কইরা মারে। সে কি গণতন্ত্রে আছে? নাকি একব্যক্তির শাসন-ত্রাসনের তাবে দিন গুজরান করছে? -এই জিজ্ঞাসা তার মাথারে এখনো জ্যাম কইরা রাখছে। পলিটিশিয়ানরা উক্ত জ্যামগুলা জীবিত রাখনের পক্ষে। তাগো কাছে এইগুলা হইলো পলিটিক্যাল এলিমেন্টস। বাংলাদেশে মসনদ নিয়া রাজনীতি করতে হইলে এইগুলান কামে লাগে। পাবলিকের মনের মধ্যে ‘খালি ভাগ করো আর মজাসে শাসন করো’র কার্ফিউ তারা তাই সজ্ঞানে বহাল রাখছেন। আশ্চর্যই বটে!

বাংলাদেশ থিকা ব্রিটিশরা সেই কবে বিদায় নিছে। কিন্তু তাগো নীতি বিদায় নেয় নাই। ‘ভাগ করো, শাসন করো’র পলিটিকসও খতম করন যায় নাই। ফলে পাবলিকের ‘অনুভূতি’র মধ্যে যেসব আবর্জনা জমা হইছে, সেইগুলা এখন বিচিত্র আকারে বিস্ফারিত হইতে শুরু করছে। বিস্ফোরণ অনিবার্য-ই ছিল। প্রশ্ন হইছে তার দায়ভার নিয়া। জাতির মগজে আবর্জনা সৃষ্টির দায়ভার কারা নিবেন? জাতিরে এর থিকা কে উদ্ধার করবেন? পাবলিকের পক্ষে দায় নেওনের যুক্তি নাই। পলিটিশিয়ানগো লগে পাবলিক ‘সামাজিক চুক্তি’ করছিল। সেইখানে এই কথা লেখে নাই যে পলিটিশিয়ানের ভুলের দায় পাবলিকরে নিতে হইবো। সুতরাং চুক্তির শর্ত অনুসারে তারে দোষী সাব্যস্তকরণ অযৌক্তিক হয়।

পাবলিক মানে কি? সে হইতেছে কওমভুক্ত সামাজিক প্রাণ। নৃ ও সমাজ-বিবর্তনের ইতিহাস তারে কওমে আবদ্ধ করছে। কওম থিকা সমাজ ও রাষ্ট্রকাঠামোর উদ্ভব ঘটছে। রাজনৈতিক ব্যবস্থা ও শাসনের ধারণাগুলা আরো উন্নত ও বিচিত্র স্বরূপে বিকশিত হইছে। ‘চুক্তি’র মধ্যে বহু শর্ত আছিল। তবে মূল শর্ত কিন্তু একটাই। কওমভুক্ত জনতার মতামত ও সম্মতির ভিত্তিতে নেতা নির্বাচন। লিডার ঠিক করন। কওমে একতা বজায় রাখনের ধারণা থিকা লিডার সৃষ্টি হইছে। কওমরে তিনি নেতৃত্ব দিবেন। দুষ্টের দমন ও শিষ্টের দেখভাল হইছে তার প্রধান কাজ। অন্যদিকে ক্ষমতা প্রয়োগের অধিকার কওম তারে চুক্তি কইরা-ই দিছে। তবে ক্ষমতা প্রয়োগের সময় ইনসাফের বিষয়টি স্মরণ রাখতে অনুরোধ করছে। অন্যথায় লিডার নামের বটবৃক্ষের ছায়ায় সুরক্ষিত থাকনের ‘অনুভূতি’ ক্ষুণ্ন হয়।

বাংলাদেশের সিটিজেন বা পাবলিকের সংকট ‘অনুভূতি’ ক্ষুণ্ন হওনের জায়গা থিকা ঘনীভূত হইছে। ‘সামাজিক চুক্তি’র অপব্যবহার থিকা তীব্র হইছে। তাগো সাধের ‘সামাজিক চুক্তি’রে লিডাররা অপাঠ্য ও বিকৃত কইরা ফেলছেন। বাংলাদেশে সংবিধান হইলো ‘সামাজিক চুক্তি’র প্রতীক। সময়ের প্রয়োজনে সংবিধান সংশোধনে দোষের কিছু নাই। কিন্তু মূলনীতি লঙ্ঘনের অধিকার জনগণ লিডারগো দেয় নাই। সকলে মিলা লিডার ঠিক করবো, -এইটা কথা ছিল। কওমে বহু মত-পথ ও বিশ্বাসের উপস্থিতি স্বীকার করনের নাম হইলো গণতন্ত্র। বিশ্বাসের বৈচিত্র্য, মূল্যবোধের বৈচিত্র্য, মতামত-প্রকাশের বৈচিত্র্য, প্রথা-আচার ও সংস্কৃতির বৈচিত্র্যের মাঝে বিরাজিত ‘অনুভূতি’রে সঙ্গে নিয়া কওমভুক্ত জনতা গণতন্ত্রে সমবেত হইছে। চেতনার মধ্যে গণতন্ত্র ধারণের নাম হইলো প্রগতি। ‘সামাজিক চুক্তি’র মাধ্যমে সেই প্রগতির দিকে তাগো নিয়া যাওনের জন্য জনগণ লিডারগো নির্বাচন করছে। তারা তাগো ভোট দিছে। নেতা থিকা শাসক হওনের পথ মসৃণ কইরা দিছে। কিন্তু বাস্তবে জনগণের আকুতি মানা হয় নাই। লিডাররা নিজেগো স্বার্থ ও অভিরুচি অনুসারে চুক্তি’র সংশোধন করছেন। সংশোধনের কালে কওমভুক্ত জনগণের ‘অনুভূতি’র পরোয়া উনারা করেন নাই। তাগো নিয়া পলিটিকস করছেন, কিন্তু তাগো ‘অনুভূতি’রে সম্মান দেখান নাই। কালপ্রবাহে বাংলাদেশী পাবলিকের মধ্যে লিডারগো পলিটিকস সংক্রমিত হইছে। কওমি-স্বার্থ ক্রমে কায়েমি স্বার্থে রূপ নিছে। এইটা বোধহয় প্রত্যাশিত ছিল। আগুনে নগর যখন পুড়ে, দেবালয়ে তার কিবা আসে যায়! সেইটাও ছারখার হয়।

৫.
বাংলাদেশে তাই কওমি-বন্ধন বইলা কিছু অবশিষ্ট নাই! কওমি ‘চেতনা ও অনুভূতি’ মোড় নিছে একে অন্যরে কনডেম বা প্রতিহত করনের পলিটিকসে। লীগ ও বিএনপি মিলা জাতিরে এই অশেষ পরিণতি উপহার দিছেন। পরিণতির এক প্রান্তে শেখ মুজিবর রহমান আর অন্যপ্রান্তে জিয়াউর রহমানের রক্তাক্ত লাশ বাংলাদেশী জনগণের চেতনা দখল কইরা নিছে। এই দুইটা লাশ তার ‘অনুভূতি’রে দু’ফাঁক করে দিছে। স্ববিরোধী ও বিভ্রান্ত থাকনের নিয়তিরে কুর্নিশ জানাইতে বাধ্য করছে। কে কার খুনি সেটা নিয়া বাংলাদেশে তাই নাটক হয়। কে কারে স্বাধীনতায় নিয়া আসছে সেইটা নিয়া কমেডি হয়। কে কার ‘অনুভূতি’তে আঘাত হানছে তা নিয়া উত্তেজনার বারুদ সহিষ্ণুতারে ক্ষুণ্ন করে। এর থিকা মুক্তিলাভের জন্য বাংলাদেশের কওমভুক্ত জনগণ তার লিডারগো মধ্যে চাপ সৃষ্টি করতে পারে নাই। অসুস্থতা নিয়ন্ত্রণে নেওনের মতো লিডারের জন্ম হয় নাই। বিকল্প শক্তির জাগরণ-ও ঘটে নাই। লীগ, বিএনপি’র চুক্তিভঙ্গের পলিটিকস তাই এজেন্টগো সুযোগ কইরা দিছে। ইসলামের ফেরিওয়ালা জামাত আর স্বৈরাচার সমর্থিত জাতীয় পার্টিরে বহাল তবিয়তে গণতন্ত্র যাপনের আরাম-আয়েশ উপহার দিছে। সাধে কি কবি ‘উদ্ভট উটের’ উপমা দিছিলেন। স্বাধীন হওনের পর থিকা বাংলাদেশ সেই ‘উদ্ভট উটের পিঠে’ সওয়ারী হইছে। এবং এখনো নামে নাই!

বাংলাদেশের কওমভুক্ত জনতা কিন্তু এইটা চায় নাই। জামাত ও স্বৈরাচারকে জনগণ নির্বাচন করে নাই। স্বাধীনতার বিরোধীশক্তি হওনের কারণে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে জনতা জামাতরে প্রত্যাখান করছিল। গণতন্ত্রের প্রতিপক্ষ হওনে নব্বইয়ের গণজাগরণ ‘স্বৈরাচার’কে মসনদ থিকা নামতে বাধ্য করছিল। ‘সামাজিক চুক্তির’ অন্যতম বিধান হইলো ‘দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন’। এই নীতির মাধ্যমে অপশক্তিগুলারে দমন করা কঠিন ছিল না। লীগ-বিএনপি’রে সেই অধিকার জনতা দিছিল। তারা সেটা করে নাই। সদিচ্ছার অভাবে করে নাই। কায়েমি স্বার্থ বজায় রাখনের জন্য কারণে করে নাই। ক্ষমতায় যাওনের লোভে করে নাই। পরিণামে অপশক্তিগুলা সংহত হইছে। দুই দলের কামড়া-কামড়ির মধ্যে নিজেরে তারা ক্যাটালিস্ট এজেন্টে পরিণত করছে। তারা হইলো সেই রসায়নিক দ্রবণ যাগো বাদ দিয়া লীগ-বিএনপি’র পলিটিকস জমে না। কায়েমি স্বার্থ বজায় রাখন যায় না। বাংলাদেশের জন্য এরচাইতে হৃদয়বিদারক ঘটনা আর কী হইতে পারে!

শাহবাগীদের পক্ষে এই এজেন্টগো নিকাশ করা সম্ভব না। কারণ তারা কওমভুক্ত জনতার অংশ। বিএনপি-জামাতের ভিকটিম। তাগো দাবি রাজনৈতিক। কিন্তু তারা নিজে কোনো রাজনৈতিক শক্তি না। যদিও বিএনপি তাগো সেই চোখে দেখে না। ম্যাডাম খালেদা শাহবাগী জনতারে লীগের বি-টিম বইলা ঘোষণা দিছেন। মঞ্চ-ফঞ্চ বন্ধ করনের হুকুম দিয়া রাখছেন। অন্যথায় নিজে ‘ফঞ্চ’ বানানোর মাধ্যমে শাহবাগীদের বিতাড়িত করার হুমকিও দিছেন। ১৩ দফার প্রণেতা হেফাজতি হুজুরগো পক্ষেও এজেন্টদের নিকাশ করা অসম্ভব। হুজুরগো ১৩ দফার মধ্যে বাংলাদেশ নাই। বাংলাদেশের হৃদয় নাই। মতিঝিলে সমাবেশের পর থিকা বাংলাদেশের ভোটের রাজনীতিতে হেফাজতিরা নিজেগো ফ্যাক্টর বইলা ভাবতে শুরু করছেন। তাগো দাবি উপেক্ষা কইরা মসনদে যাওনের রাস্তা নাকি খোলা নাই! কওমি হুজুররা ‘কোরআন’, ‘হাদিস’ ও ‘ফেকাহ’রে সরাসরি রিলেট কইরা যে দাবি তুলছেন তার মধ্যে কাণ্ডজ্ঞানের ঘাটতি আছে। তাগো দাবির মধ্যে জেহাদী জোশ থাকলেও বাস্তবজ্ঞান নাই। বাস্তবতার সঙ্গে নিজেরে এডপ্ট অথবা খাপ খাওনের ক্ষমতা না থাকলে পলিটিকস হয় না। পুলটিশ হয়। জামাত-বিএনপি মিলা হুজুরগো পুলিটিশ দেওনের কামে নামাইছে। খাপ খাওনের ক্ষমতায় কওমি হুজুরগো দুর্বলতা প্রকট হইয়া উঠছে। তাগো লিল্লাহ নির্ভর খরপোষ ব্যবস্থার সেই শক্তি নাই যে লীগ, বিএনপি, জামাতের ত্রিমুখী স্বার্থের বাইরে গিয়া নিজেরে প্রতিষ্ঠা করে। সুতরাং আশা ক্ষীণ।

৬.
বাংলাদেশের ক্ষমতাছকে নিজেরে এডপ্ট করা পৃথক গুরুত্ব রাখে। মুজিব হত্যার পর লীগেরে সেইটা করতে হইছে। জিয়া নিহত হওনের পর বিএনপিও করছে। জামাতিরা সেই ক্ষমতার পরিচয় রাখছে। লড়াইয়ের ময়দানে জামাত হইছে পুরানা খেলোয়াড়। এই মুহূর্তে কোনঠাসা হইলেও তার সাংগঠনিক ক্ষমতা সহজে নিকেশ হওনের না। লীগ-বিএনপি’র কৃপায় নিজেরে সে শক্তিবলয়ে রূপান্তর করতে পারছে। জাতীয় অর্থনীতির ৩০ ভাগ তার একলার নিয়ন্ত্রণে। এই জামাত আরবি-ইংরাজি জানে। ব্লগ-ফেসবুক-ইন্টারনেটে ঘুইরা বেড়ায়। পুঁজিবাদী অর্থনীতির সকল ছলাকলা বুঝে। ‘কোরআন’, ‘হাদিস’-রে এসবের মধ্যে খাপ খাওনের টেকনিক গোলাম আযম, নিজামীদের শিখাইতে হয় না। স্বাধীনতাবিরোধী এবং মুক্তিযুদ্ধের ‘চেতনা ও অনুভূতি’র বিপক্ষ শক্তি, -এই বাক্যটি তার দিকে বারবার ফেরত না আসলে বাংলাদেশে জামাতের উত্থান ঠেকানো মুশকিল হইতো। নিজেরে টিকানোর জন্য শক্তির সবরকম পরীক্ষাই জামাত দিবে। সে জানে তারে নিষিদ্ধ করা হইতে পারে। আন্ডারগ্রাউন্ডে আত্মগোপনের প্রয়োজন হইতে পারে। অন্য ইসলামী দলের মধ্যে খাপ খাওন লাগতে পারে। পরিস্থিতির খাতিরে নতুন নামে আত্মপ্রকাশ অনিবার্য হইলেও হইতে পারে। এই সম্ভাবনাগুলা দমনের জন্য রাষ্ট্রযন্ত্ররে বিকল কইরা দিতে না পারলে শক্তি সুরক্ষার দ্বিতীয় পথ জামাতের হাতে নাই। যে-কারণে জামাতিরা বিএনপি ও হেফাজতে নিজেরে এভাবে পারসু করছে। হেফাজতিরা যদি জামাতের পরিকল্পনা মান্য কইরা আগায় তাইলে সে সফল। অন্যথায় হেফাজতিগো পেছনে তার এই বিনিয়োগ বিফল। ইসলামী ‘অনুভূতি’ সুরক্ষার প্রশ্নে কওমি ও জামাতিদের মিলন কখনো হয় নাই। শাহবাগী ‘নাস্তিক’দের প্রতিহত করা এবং বিচার বানচাল করনের স্বার্থে কওমি হুজুরগো মধ্যে নিজেরে সে পারসু করছে। দুই পক্ষের মধ্যে সাময়িক চুক্তি হইছে। চুক্তি সফল হওনের ওপর সখ্যের মেয়াদ নির্ভর করবে। অনুমান বলে, ক্ষমতাছকের এইসব জটিল সমীকরণের মধ্যে কওমি হুজুরগো কনডেম হওনের সম্ভাবনাই বেশি।

বাংলাদেশের জন্য এইটা মর্মান্তিক যে, পলিটিকস এখন পয়জন-এ রূপ নিছে। দেশে যে ট্রমার সৃষ্টি হইছে তার অন্ত বা পরিশেষ টানোনের জন্য পলিটিকসরে বিষমুক্ত করা প্রয়োজন। ‘হুকুমের আসামী’ ধরতে ব্যস্ত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আর মতিভ্রমের শিকার মির্জা সাহেবরা সেই বিষে এরিমধ্যে নীল হইছেন। জাতির ‘অনুভূতি’রে সঠিক জায়গায় ফিরানোর দায় জামাত, স্বৈরাচারের ন্যায় এজেন্টরা কখনো নিবো না। লীগ, বিএনপি’র প্লেয়ারগো সেই দায় নিতে হবে। সেইক্ষেত্রে সূচনা কারে দিয়া করন যায় সেইটা লাখ টাকার সওয়াল বটে। তবে লীগ, বিএনপি যারে দিয়া হউক কাজটা করানো দরকার। জাতীয় ‘চেতনা ও অনুভূতি’ নিয়া এই দুই পার্টির মধ্যে পালটা-পালটি বিবাদ আছে। এই বিবাদগুলার সুরাহা হওন প্রয়োজন। ‘মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার চেতনা’, ‘ধর্মীয় বিশ্বাস ও অনুভূতি’ এবং ‘বাঙালি না বাংলাদেশী’ জাতীয়তাবাদ নিয়া লীগ, বিএনপি’র মধ্যে বিদ্যমান ফেরকাগুলার নিরসন আজো হয় নাই। এইটা না হওন পর্যন্ত পলিটিকসরে বিষমুক্ত করন সম্ভব না। (চলবে)
আহমদ মিনহাজ
২০।০৪।২০১৩

পাদটীকা

  • ১. প্রিয় মডারেটর, লেখাটি দীর্ঘ হওয়ার কারণে ‘চলবে’ লিখন ছাড়া অধমের কুনু উপায় নাই। তাই প্রথম পুস্তিকার লগে দ্বিতীয় পুস্তিকাও আলাদাভাবে জুইড়া দিলাম। বাকিটকু আপনার বিবেচনা।
ছবি: 
24/08/2007 - 2:03পূর্বাহ্ন

মন্তব্য

তমসা এর ছবি

চলুক

অতিথি লেখক এর ছবি

বাচনভঙ্গিসহ লেখাটা ভালো লেগেছে। দীর্ঘ লেখা। কাটছাঁট হতে পারতো হয়তো।
দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এমন যে, পক্ষ বেছে নেয়াটা এখানে এখন সময়ের দাবি। আদতে রিপেক্ষ অবস্থানের সুযোগ খুব কম। অবস্থান এর কথা বল্লে আমি বলব নিরপেক্ষতা চাতুরির সমত’ল্য। তবে বিশ্লেষণে নিরপেক্ষতা সবসময়ই জরুরি। সেটাও বিঘিœত হচ্ছে হয়তো কোথাও কোথাও। আপাতত এইটুকু। পওে আরেকবার পড়ে মন্তব্য করবো।

স্বয়ম

অতিথি লেখক এর ছবি

তমসা ও স্বয়মকে ধন্যবাদ। ব্লগ আসলে দীর্ঘ লেখার জন্য খুব উপযুক্ত মাধ্যম নয়। এমনকি সেই লেখা খণ্ডে-খণ্ডে প্রকাশ করা হলেও পাঠকের আগ্রহ ও অংগ্রহণ সেখানে ধরে রাখা মুশকিল। তবে বিষয়বস্তুর কারণে অনেক সময় দীর্ঘ না লিখে উপায় থাকে না। পরে হয়তো সেই লেখাকেই ছোট করে আনা কঠিন হবে না!

আরেকটি বিষয়, নতুন পোস্টে ভিড়ে অনেক সময় প্রাসঙ্গিক ও জরুরি পোস্ট তলিয়ে যায়। ব্লগে লেখালেখির ক্ষেত্রে এই সমস্যা এড়ানোর উপায় নেই। এক্ষেত্রে ব্লগ কর্তৃপক্ষের কিছু দায়িত্ব বোধহয় রয়ে যায়। আমাদের এখানে মডারেশনের বিষয়টি যথেষ্ট পেশাদার হয়ে ওঠেনি। যেটা অনেক ইংরেজি ব্লগে দেখি। পোস্ট ফ্লাডিংয়ের মধ্যেও প্রাসঙ্গিক পোস্ট তারা নজরে নিয়ে আসেন এবং আলোচনার পরিবেশটি তৈর করে দেন। আমাদের এখানে এমনটি-ই হতে হবে সেটা বলছি না। তবে বিষিয়টি নিয়ে ভাবতে পারলে উপকার হয়। আপাতত এভাবেই চলুক না হয়। আবারো ধন্যবাদ। - আহমদ মিনহাজ

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।