ঢাকার মিরপুর এলাকার একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কথা বলছি। এখানে প্রথম শ্রেণী থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনার বাবস্থা আছে। স্কুলের পরিচালনায় যারা আছেন তাঁদের লক্ষ্য হচ্ছে এস এস সি পরীক্ষায় স্কুলের কলেজের একটা ভালো ফলাফলের জন্য ছাত্রছাত্রীদের প্রয়োজনীয় পড়াশোনার ব্যাপারটা নিশ্চিত করা। স্কুলের আশে পাশেই আছে বেশ কিছু কোচিং সেন্টার। স্কুলের বেশীর ভাগ শিক্ষক – পরিচালকরাই কোন না কোন কোচিং সেন্টারের মালিক।
এস এস সি পরীক্ষা সমাগত, দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা জানে যে এই পরীক্ষা তাদের জীবনের গতিপথ নির্ধারণ করে দেবে। এস এস সি তে ভালো করা মানেই উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে একটা ভাল কলেজে সুযোগ পেয়ে নিজের ভবিষ্যতের দিকে আরেক ধাপ আগানো।
এই সময় স্কুলের প্রভাবশালী একদল শিক্ষক – পরিচালক এক বিচিত্র দাবী নিয়ে আসলেন । তাদের বক্তব্য হচ্ছে যেসব স্কুলের প্রাক্তন যেসব মেধাবী ছাত্র ছাত্রী এখন কলেজে লেখাপড়া করছে তাদেরকে আবার স্কুলের হয়ে এস এস সি পরীক্ষায় বসতে হবে, তা না হলে তারা ক্লাস বন্ধ করে দেবেন, স্কুল থেকে এই বছর কেউই এস এস সি পরীক্ষা দিবে না। তাদের “যুক্তি” হচ্ছে তারা বহু কষ্ট করে ক্লাসে পড়ান, ভাল ছাত্র ছাত্রীরা না থাকলে তাদের এই কষ্ট মাঠে মারা যাবে, এস এস সি পরীক্ষায় স্কুলের ফলাফল খারাপ হবে, তাদের কোচিং সেন্টারের ব্যাবসা পড়ে যাবে, এই জন্য ইতিমধ্যে একবার এস এস সি পাশ করা হলেও অসুবিধা নেই, কৃতি ছাত্র ছাত্রীদের না পেলে তারা নড়বেন না। বিশেষ করে গত কয়েক বছরে যে ১৫ জন শিক্ষার্থী গোল্ডেন জি পি এ পেয়েছিল তাদের সবাইকে আবার স্কুলে ভর্তি হতে হবে। বর্তমানে দশম শ্রেণীতে ভাল খারাপ মিলিয়ে যে প্রায় ২০০ শিক্ষার্থী অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় আআছে কবে এস এস সির রুটিন দিবে তাদের বলে দেয়া হয়েছে যে এই বছর নাকি পরীক্ষাই হবে না!
ঘটনাটা রূপক হিসাবে বললাম, কিন্তু অবিশ্বাস্য এই ধরনেরই একটা ব্যাপার হচ্ছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে, ঢাকা প্রিমিয়ার ক্রিকেট লীগ নিয়ে। মহাপ্রতাপশালী ক্লাব কর্মকর্তারা বলছেন জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের না পাওয়া গেলে তারা লীগ হতে দেবেন না। বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেট কাঠামো যথেষ্ট পরিমান নাজুক, একটা টেস্ট খেলা জাতি হিশেবে যে পরিমান পেশাদারী মনোভাব নিয়ে ক্রিকেট পরিচালনা করা উচিত তার কোন প্রতিফলন বিসিবির কাজ কর্মে দেখা যায় না। তার উপর একই সঙ্গে প্রধানত ক্লাব কর্মকর্তা এবং সেই সুবাদে পর্যায়ক্রমে বোর্ড পরিচালক এবং হয়ে দেশের ক্রিকেটের মালিক বনে যাওয়া এই মানুষগুলোর আবদারে বলি হচ্ছে দেশের উদীয়মান ক্রিকেটাররা।
৫০ ওভারের এই প্রিমিয়ার লীগ এখন পর্যন্ত বেশীরভাগ ক্রিকেটারদের কাছে দেশের সবচাইত গুরুত্বপূর্ণ টুর্নামেন্ট। যেহেতু দেশের অন্যান্য জেলায় নিয়মিত ভাবে লীগ হয়না, দেশের বিভিন্ন জায়গার উঠতি ক্রিকেটাররা ঢাকার প্রথম বিভাগ আর তারপর প্রিমিয়ার লীগ খেলেই পরিচিতি পায়। হবে হচ্ছি করে দেশের আঞ্চলিক ক্রিকেট কাঠামো এখন পর্যন্ত বাস্তবায়িত হয়নি। তাই অবাক হলেও সত্যি যে বিসিবি বিভিন্ন সময়ে অনূর্ধ্ব ১৯, জাতীয় লীগের বিভাগীয় দল ইত্যাদি যেসব দল ঘোষণা করে তা আসলে প্রিমিয়ার লীগের পারফরমেন্সের উপর ভিত্তি করেই তৈরি করা হয়।
এক সময় ঢাকার ক্লাব ক্রিকেটের যে আকর্ষণ ছিল তার অনেকটাই এখন বিবর্ণ। এর অনেক কারণের মধ্যে কয়েকটা হচ্ছে জাতীয় লীগ, বিসিএল, বিপিএলের জন্য বিসিবির ক্যালেন্ডারে সময়ভাব। কিন্তু এই তিন টুর্নামেন্টতে খেলার সুযোগ পায় কেবল মোটামুটি প্রতিষ্ঠিত খেলোয়াড়রা। বেশীরভাগ ক্রিকেটারাই রুটি-রুজি আর প্রতিষ্ঠার জন্য অপেক্ষা করে থাকে প্রিমিয়ার লীগের জন্য।
কার্যত মনে হয় প্রিমিয়ার লীগের উপর বিসিবির কোন ধরনের নিয়ন্ত্রনই নেই। লীগ কবে শুরু হবে, কবে শেষ হবে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবার মালিক হচ্ছে টুর্নামেন্টতে অংশগ্রহণকারী দলগুলো। গত বছর লীগ প্রায় দুই মাস বন্ধ ছিল পাকিস্তানী খেলোয়াড় মোহাম্মদ ইউসুফকে নিয়ে মোহামোডান–ভিক্টোরিয়া বিরোধের কারণে ! সরকার ঘনিষ্ঠ প্রভাবশালী এক পরিচালকের চাপে উনার অপছন্দের এক ক্লাবকে প্রথম বিভাগে রেলিগেটেড করা হয়, সেটাও গত লীগের ঘটনা । তবে এই মাস্তানি গুলি করে সাধারনত বড় ক্লাবগুলি, সব সময় একে অন্যের সাথে বৈরী সম্পরক থাকলেও লীগ বন্ধ বা এই ধরনের অন্যায় আব্দারের সময় আবাহনী মোহামোডানের মতো চির শত্রুদের একাট্টা হতে সময় লাগে না। মাঝারি আর ছোট ক্লাবগুলো চাইলেও রুই কাতলাদের ইচ্ছামত এবারের লীগ না হবার সম্ভবনাই তাই প্রবল।
হোয়াটমোর থাকাকালীন সময়ে এসব দেখে একবার বলেছিলেন, যেই লীগের কখন শুরু হবে কবে শেষ হবে সেটা কেউ বলতে পারেনা সেই লীগ হবার প্রয়োজনটা কোথায় ? কিন্তু বাংলাদেশের বাস্তবটায় সম্ভবত এই প্রিমিয়ার লিগই আমাদের জাতীয় দলের পাইপ লাইন। এই কথাটা বিসিবি অফিসের কর্তা ব্যক্তিরাও জানেন কিন্তু বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধবেন কে?
-পিয়াল
মন্তব্য
ব্যাক্তিগত অভিগ্যতা থেকে বলি-বি সি বি একটা অদ্ভুত যায়গা!!!
আর যাই হোক ভাল বলা যায় না!!
সুবোধ অবোধ
দুয়েকটা ঘটনা শেয়ার করুন না।
হুম...
দেখা যাক...
সুবোধ অবোধ
পুর্নাঙ্গ একটা লেখাই লিখে ফেলবো ভাবছি।
যদি এখানে প্রকাশ হয়...
সুবোধ অবোধ
খুবই ইন্টারেস্টিং এবং আগ্রহ জাআনিয়া একটা লেখা। দরকারীও। প্রিমিয়ার লীগ ক্রিকেটের সেই কলাবাগান-বিমান-আবাহনীর পয়েন্ট তালিকা মুখস্থ করে রাখা দিনগুলা দারুণ ছিলো। আমার কিন্তু মনে হয় টেস্ট দল হিসেবে আমাদের এখন প্রিমিয়ার লিগের চেয়ে জাতীয় লীগে মনোযোগ দেয়া উচিৎ।
[মন্তব্যে অনেকেই বিশদ আলোচনা করবেন, নিজ মত দেবেন- এমন আশায় রইলাম :)]
প্রিমিয়ার লিগ নিয়ে টানাটানি অনেক দিনের। ঘরোয়া লিগ গুলিতে মনোযোগের অভাবের কারনেই আমাদের ক্রিকেটের মান উন্নয়ন ঘটছেনা।
---------------------------------
মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান
ধন্যবাদ সুমন ভাই। প্রিমিয়ার লীগের চাইতে জাতীয় লীগই অনেক বেশী গুরুত্বপূর্ণ, এই বিষয়ে কোন দ্বিমত নেই। জাতীয় লীগ এখনও পর্যন্ত অনেকটাই পিকনিক ক্রিকেট, ক্লাব ক্রিকেটের চাপ আর উত্তেজনা এখন পর্যন্ত জাতীয় লীগের ম্যাচ গুলোতে দেখা যায়না। জাতীয় লীগ এবং পরবর্তীতে জাতীয় দলের ভবিষ্যৎ খেলোয়াড়রা উঠে আসে প্রিমিয়ার লীগ থেকেই। ক্লাব ক্রিকেটের এই কাঠামো থেকে বের না হওয়া পর্যন্ত উঠতি ক্রিকেটারদের তৈরি হবার আর কোন বিকল্প এখন পর্যন্ত নেই।
আলোচনা চলুক
-পিয়াল
মুদ্রার ও পিঠটাও একটু দেখা প্রয়োজন- ক্লাব পরিচালনা করা কিন্তু সহজ ব্যাপার নয়। আগে যখন আমাদের ক্রিকেট জাতে ওঠে নি, তখন কালে ভদ্রে কোন বিদেশী দলের দ্বিতীয় তৃতীয় সারির দলের সাথে একটা দুটা ম্যাচ আর প্রিমিয়ার লীগ এই ছিল আমাদের ক্রিকেট। তখন ডিস টিভি কালচারও শুরু হয় নাই, তাই টিভিতে পাকিস্তান-ওয়েষ্ট ইন্ডিজ ম্যাচ দেখারও সিষ্টেম চালু হয় নাই। সো একদিকে আমাদের সেরা খেলোয়ারেরা প্রিমিয়ার লীগে অবধারিত ভাবে খেলতেন, অন্যদিকে ক্রিকেট দেখার জন্য আমাদেরও মাঠে যাওয়া ছাড়া উপায় ছিল না।
ক্লাব চালাতে টাকার প্রয়োজন, পরিমানে কম হলেও তখনও খেলোয়ারদের কিছু টাকা পয়সা দেওয়া লাগতো, এ ছাড়া আনুসঙ্গিক অন্যান্য খরচও ছিল। মাঠ ভর্তি দর্শক দেখিয়ে কর্মকর্তারা দাতাদের কাছ থেকে চাঁদা তুলতে পারতেন। সে টাকা অবশ্য কখনোই প্রয়োজনের চেয়ে বেশী হতো না, অর্থাৎ আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা ছিল না বল্লেই চলে। ক্লাবে দু ধরনের কর্মকর্তা থাকতেন- একদল অর্থদাতা, অন্যদল সংগঠক। এই সংগঠককেরা প্রায়শঃই কোন আর্থিক প্রনোদনা ছাড়াই কাজ করে যেতেন। বছর শেষে প্রায় ক্লাবেরই আয় ব্যায়ের হিসাবে ঘাটতিই থাকতো, এর দায় খেলোয়ার থেকে শুরু করে বিভিন্ন সাপ্লায়ারদের বহন করতে হতো।
ক্লাব চালানোর ব্যাপার এখনও আগের মতই আছে, শুধু বদলে গেছে মাঠের অবস্থা। খুব সঙ্গত কারনেই এখন খুব বেশী দর্শক আর মাঠে যেতে চাইবেন না। জাতীয় দলের ষ্টার ক্রিকেটাররা না খেললে দর্শকের সংখ্যা হবে শুন্যের কোঠায়। এমতবস্থায় এমন জৌলুসহীন ক্রিকেটে অংশ গ্রহনের খরচের টাকা তোলা ক্লাবগুলোর পক্ষে অসম্ভব। তাদের দাবী মূল কারন সম্ভবতঃ এটাই।
আব্দুল্লাহ এ.এম.
বাংলাদেশের ক্রিকেট উন্নয়নে ক্লাবের ভূমিকা অস্বীকার করার উপায় নেই। তবে আই সি সি ট্রফি চ্যাম্পিয়ন হবার পর জাতীয় দলের বাস্ততা বেড়ে যায়, টেস্ট স্ট্যাটাস পাবার পর সেটা প্রায় ফুল টাইম সার্ভিসে পরিনত হয়। এই সময় থেকেই ক্লাব ক্রিকেটের সাথে প্রায়ই জাতীয় দলের বা জাতীয় লীগের শিডিউলে ঠোকাঠুকি লাগা শুরু হয়। দেশের ক্রিকেটের অগ্রগতির সাথে ক্লাবগুলো কখনই নিজেদের অভিযোজিত করতে পারেনি। পৃথিবীর আরা অন্য কোনও দেশে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সময় ঘরোয়া ক্রিকেট বন্ধ থাকে না।
বড় বাজেট হোক আর ছোট বাজেটের দল হোক, জাতীয় দলের খেলোয়াড়রা খেলুক আর না খেলুক, লীগ শেষে দুটি দল ছাড়া তো বাকিরা কেউ চ্যাম্পিয়ন-রানারআপ হতে পারবেনা। প্রতিটি ক্লাবে জাতীয় দলের পুলভুক্ত মাত্র দুইজন খেলোয়াড় থাকে, বাকিরা পুলের বাইরের এবং বিদেশী। এবার বরং জাতীয় দলের খেলয়াড় না থাকায় আরাও কম বাজেটে দল গড়তে পারবে ক্লাবগুলো।
আগে ঘরোয়া ক্রিকেটের সেশান শুরু হতো অক্টোবরে দামাল সামার লীগ দিয়ে, দশটি দল দুই গ্রুপে খেলত , তারপর সেমি ফাইনাল, ফাইনাল। তারপর প্রিমিয়ার লীগ। ২০০০ সালের পর থেকে এই সময়ে বাংলাদেশ দলের আন্তর্জাতিক খেলার সূচি থাকলে লীগটা আগে পিছে নিয়ে ফিকচার করা শুরু হয়। দামাল সামার টুর্নামেন্ট তো এখন হয়ই না, নভেম্বরের লীগ পেছাতে পেছাতে মার্চ এপ্রিলে চলে আসে, এবার সেটাও অনিশ্চিত। টুর্নামেন্ট অনিয়মিত হয়ে পড়লেও কিন্তু দর্শকদের মাঠে আসার অভ্যাসটা নষ্ট হয়ে যায়।
-পিয়াল
এই প্রসঙ্গে দুটি খবর
লিগের নিশ্চয়তা নয় আশ্বাস পেলেন ক্রিকেটাররা!
http://www.banglanews24.com/Cricket/detailsnews.php?nssl=235978e2f606640f47979a9677069dc3&nttl=20042013190381
ঢাকা লিগকে গুরুত্ব দেওয়ার দাবি বিসিবিতে
http://www.banglanews24.com/Cricket/detailsnews.php?nssl=cfbee4a1989324171bfb342af09eb535&nttl=20130420073452190415
নতুন মন্তব্য করুন