প্রথমেই পাঠকের কাছে প্রশ্ন ই-বুক যদি বইএর জায়গা দখল করে নেয় পুরপুরিভাবে আপনি কি মেনে নিতে পারবেন? একটি বই হাতে নিয়ে পরার থেকে আপনার ট্যাবটি তে ই-বুক পরতে কি আপনার কখনও ভাল লেগেছে?
কয়েকদিন আগেও বাংলা ই-বুক তেমন ভাবে পাওয়া যেত না, অথচ এখন তার ছড়াছড়ি। প্রযুক্তি আমিও ভালবাসি, হাতে নিয়ে বই পরার মত ভাল না লাগলেও ই-বুক এর জনপ্রিয়তাকে আমিও উৎসাহিত করি। কিন্তু সমস্যাটা হল- বাংলা ই-বুক গুলো যদি এভাবে ফ্রী করে ছাড়া হয়, তাহলে লেখকদের ও প্রকাশনীগুলোর অবস্থা কি দাঁড়াবে?
যেরকম হয়েছে এখনকার অডিও বাজারের ক্ষেত্রে, ঠিক একই অবস্থা ঘটতে যাচ্ছে বই এর বাজারের ক্ষেত্রেও। নিতিমালাই কি শুধু এই বিপর্যয় ঠেকানোর জন্য যথেষ্ট? একদম না। সমস্যা হচ্ছে আমাদের । শিল্পকে ভালবাসলেও শিল্পের মূল্য আমরা দিতে পারছি না।
এভাবে চলতে থাকলে আমরা যে কোথায় গিয়ে পৌঁছাব তা চিন্তা করতেই খারাপ লাগছে। বাঙ্গালির বহুকালের গ্রন্থের প্রতি অনুরাগ আজ এরূপ ধারণ করেছে কেন এই প্রশ্নের উত্তর আমার জানা নেই। কবি-সাহিত্তিক,লেখক রা আর কতদিন তাদেরকে অবহেলিত হতে দেখবেন? একুশে বইমেলা বাদে সারা বছর বইএর কোন প্রচার দেখা জায় না।এই যুগের বাচ্চা রা তাদের বাবা-মা কে বই কিনে দেওয়ার জন্য আবদার করে না। তাদের মস্তিষ্ক ডুবে থাকে কার্টুন আর কম্পিউটার গেমস এর মধ্যে। নিজ সংস্কৃতির প্রতি তাদের ভালবাশা তাদের নেই বললেই চলে।
এতো গেলো বাচ্চাদের কথা বড়দের ক্ষেত্রেও গ্রন্থপ্রেমি লোক কি আগের মত আছে? নেই।
আমার মনে হয় গ্রন্থের বিজ্ঞাপনের আজ যথেষ্ট অভাব রয়েছে। একুশে বইমেলার মত আরও অনেক আয়োজন করতে পারলে অবস্থার উন্নতি হবে আশা করা যায়।
যারা ই-বুকের দিকে ঝুকছেন , তারা যেন অর্থের বিনিময়ে কিনে শিল্প ও শিল্পীর মর্যাদা রাখেন এটাই কাম্য।
----------সূফী
মন্তব্য
এইটা নিয়ে আরো বড় পরিসরে লেখার স্কোপ আছে। আন্তর্জাতিক-ভাবে, পেপার-বুকের বাজার কিন্তু ই-বুক ইতিমধ্যেই দখলে আনতে শুরু করে দিয়েছে। পেপার-বুকের তুলনায় ই-বুক অনেক পরিবেশ-বান্ধব বলে মনে হয়। ই-বুকে আপনার অন্য কি সমস্যা দেখছেন তা পরিষ্কার হল না।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
আরও বড় পরিসরে কিছু বিষয় যোগ করে লিখব শীঘ্র।
ইবুক আর বই দুইটা দুই জিনিস। যার যার প্রেফারেন্সমত কিনবে। আমার ইবুক পড়তে বইয়ের মতই ভালো লাগে।
ইবুক ঠেকানো সম্ভব নয়, করা উচিত ও নয়। বরং প্রকাশকেরা বইয়ের পাশাপাশি ইবুক বিক্রি করা শুরু করা উচিত আর ইলেক্ট্রনিক পেমেন্টের ব্যবস্থা করা উচিৎ বাংলাদেশ ব্যাঙ্কের। অনেক মানুষ ইবই আর এম্পিথ্রি ডাউনলোড করে যারা সম্ভব হলে ঠিকই কিনত। সেই উপায় ই নাই।
..................................................................
#Banshibir.
একটা মন্তব্য করতে গেলাম অ্যাজাক্স ইরোর দিয়ে মন্তব্য গায়েব হয়ে গেলো, সচলে মন্তব্য করা বিশাল ঝামেলা। যাইহোক প্রকাশকের বই পাইরেসির অভিযোগ বা গায়ক সিডি পাইরেসীর অভিযোগ করলেও সফটওয়্যার পাইরেসি তারা নিজেরাই পুরোদমে করছে, জিনিসটা ডাবল স্ট্যান্ডার্ড নয় কি?
দুঃখিত। আরো অনেকের এই সমস্যাটা হচ্ছে নাকি?
জ্বী, আমারো বেশ কয়েকবার এইরাম হইছিলো। বাগটা ফিক্স করেন।
"ইবুক ঠেকানো সম্ভব নয়, করা উচিত ও নয়। বরং প্রকাশকেরা বইয়ের পাশাপাশি ইবুক বিক্রি করা শুরু করা উচিত আর ইলেক্ট্রনিক পেমেন্টের ব্যবস্থা করা উচিৎ বাংলাদেশ ব্যাঙ্কের। অনেক মানুষ ইবই আর এম্পিথ্রি ডাউনলোড করে যারা সম্ভব হলে ঠিকই কিনত। সেই উপায় ই নাই।"
সহমত...
সুবোধ অবোধ
ধরে নিন আজ থেকে ২০ বছর আগের কথা। সেই সময়ে আপনি এরকম একটি লেখাই লিখতে চাইলে কি করতেন? আপনি কাগজ কলম নিয়ে বসে যেতেন। তারপর সেই লেখাটি কোন পত্রিকায় পাঠাতেন। সেখানে সম্পাদকের হাত ঘুরে কম্পোজ হয়ে/ছাপাখানা হয়ে লেখাটি প্রকাশিত হতো। আজ সেটি লিখছেন কীবোর্ড দিয়ে।
আসলে প্রযুক্তির দাবীতে আমরা বদলাচ্ছি অথবা আমাদের দাবীতে প্রযুক্তি বদলাচ্ছে। তবে বলতে দ্বিধা নেই আমার কাগজের বই পড়তেই ভাল লাগে। তবে খুব বেশিদিন এই ভাল লাগা মনে হয় টিকবেনা।
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
।ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট।
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।
১) ছোটো বেলা থেকে কাগজের বই হাতে বড় হয়েছি বলে এক ধরনের কমফোর্ট জোন তৈরি হয়ে গেছে আমার। তাই এখনো হয়তো ইবুক এর চেয়ে কাগজের বই হাতে পেলে বেশি ভালো লাগে। কিন্তু এই অবস্থা আমার নিজের মধ্যেই বদলাচ্ছে। নতুন প্রজন্মের পাঠকরা ইবুক রিডারই বেছে নেবে সম্ভবত।
২) পরিচিতদের মধে্য দেখেছি, যারা বই নামিয়ে পড়ে, তারা বই কেনেও অনেক বেশি। বছরে এমনকি একটা বইও কেনে না, এরা বই ডাউনলোড করেও পড়ে না। দেশে ইলেকঅট্রনিক ট্রাঞ্জেকশন ব্যবস্থা উন্নতবিশ্বের মত হলে এরা ইবুক কিনেই পড়তো। কাগজের বই যেটা ১০০ টাকায় বিক্রি হয় সেটা ইবুক আকারে পনের বিশ টাকাতেও বিক্রি করা সম্ভব। কারণ ওতে উৎপাদন ব্যয় নেই। স্রেফ প্রকাশকের প্রাথমিক খরচ, আর লেখকের রয়্যালটি হিসাবে আসবে তখন।
৩) মূল সমস্যা হলো জনগোষ্ঠির মধ্যে পাঠাভ্যাসের অভাব। কোটি কোটি লোকের দেশে, পাঠ্য বই এর বাইরে বই পড়ার লোক সংখ্যা এক লাখ হবে কি না সন্দেহ!!! ইবুক হোক, আর কাগজের বই হোক। ফ্রী ডাউনলোড করে হোক, বা কিনে হোক। পাঠাভ্যাস বাড়ানো গেলে অনেক সমস্যা দূর হবে। ব্যাপারটা অডিও বাজারের মত হয়ে যাবে না। কারণ- বই, গান না। বই পড়তে পাঠককে দীর্ঘ্য সময় মনসংযোগ ও শ্রম ব্যয় করতে হয়। স্রেফ ঘরের কোনায় একটা প্লেয়ারে ছেড়ে, বা কানের মধ্যে ইআরপিস গুজে রাখলেই চলে না। তাই বই ফ্রীতেও যারা পড়ে, তারা বই-প্রেমী বলেই করে। এদের অনেকেই সুলভে, ও সহজে বইটা কিনতে পারলে কিনেই পড়ত।
৫) গতবছরে আপনি কতগুলো বই কিনেছে, আর কতগুলো বইয়ের ইবুক ফ্রী নামিয়েছেন, বনাম কতগুলো বই কিনে পড়েছেন এবং কতগুলো বই ইবুক ফ্রী নামিয়ে পড়েছেন এগুলো নিয়ে চিন্তা করতে পারেন। আশেপাশের মানুষদের থেকেও এই তথ্য জোগাড় করতে পারেন। ভালো একটা চিত্র পাবেন।
৬) দেশে টেকনিক্যাল বই তো পুরো পাইরেসীর উপরেই চলে! ওদিকে নীলক্ষেত না থাকলে আমার পক্ষে গ্রাজুয়েশন করাই মুশকিল হয়ে যেত। বই পাইরেসি নিয়ে চিন্তা করার সময়, এসব নিয়েও চিন্তা করতে হবে।
৭) বিষয়ের গুরুত্ব বিচারে লেখাটা বেশিই ছোট।
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
আমার মনে হয় পড়ার অভ্যাসটাই বড় কথা - যারা পড়েন তারা ইবুকেও পড়েন পেপার ব্যাকেও পড়েন। আর সত্য বলতে চুরি করে বই পড়ার মাঝে আমি অপরাধ দেখি না। আর পেপারব্যাক পড়তে ভালবাসলেও ইবুকের সুবধা থকে নিজেকে বঞ্চিত করতে চাই না কখনোই- অনেক ইবুক পড়া বই আছে যা আমি পেপারব্যাকের অপেক্ষায় থাকলে কখোনই হয়তো পড়া হোতো না। আর ইবুকের ক্ষেত্রেও প্রকাশনীগুলোর যথেস্ট ব্যবসা আছে।
আমার মনে হয় না ইবুক প্রকাশনী সংস্থার খুব ক্ষতি করবে বা করছে।
আমি কাগজের বই নিয়ে শুয়ে - কাৎ হয়ে, উপুড় হয়ে, চিৎ হয়ে, বই প্রায় দুমড়ে-মুচড়ে পড়তে ভালবাসি। বইয়ের আত্নাটা যেন শুঁষে নিতে চাই। তা নাহলে পুরোপুরি মজা পাই না!
ই-বুক এভাবে পড়া যাবে?
****************************************
আমি কিণ্ডল ব্যবহার করে বেশ ইমপ্রেসড। ই-ইঙ্ক একটা জটিল জিনিস। একটা খোসা পাওয়া যায় যেটা বইয়ের আকৃতি দেয়ে জিনিসটাকে। শুধু কাগজে কালির গন্ধটা মিস করবেন।
কিন্ডল হাতের মধ্যে শক্ত হয়ে থাকে। আমি সবচেয়ে মজা পাই পেপারব্যাক বই। শখ করে বেশি দাম দিয়ে কয়েকটা হার্ডকভার কিনে দেখি পড়ে আরাম নাই। কিন্ডলে পড়তে গেলে আমার হার্ডকভার বই এর মত লাগে। যদিও বাংলাদেশে সেবা প্রকাশনীর বই ছাড়া বেশিরভাগ বইই হার্ড কাভারেই ছিল, কিন্তু পেপার ব্যাক বই যেমন দলাই মলাই করে পড়া যায় সেইটা হার্ডকাভার বা কিন্ডল কোনটাতেই সেই মজা পাই না।
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
হা হা... আপনি এক্কেবারে আমার মনের কথা ধরতে পেরেছেন। দলাই-মলাই করার মজাই আলাদা, হার্ডকাভারে এইটা নাই। পুরোটা পেতে হলে বইয়ের সাথে দৈহিক ও আত্নিক - উভয়বিধ বন্ধনই জরুরী!
****************************************
"লর্ড অব দ্যা রিংস" বা "শার্লক হোমস সমগ্র" সাইজের কোন বই কিন্তু একহাতে ধরে চিৎ, উপুড় হয়ে উল্টে-পালটে পড়া প্রায় অসম্ভব। ই-বুকের কল্যানে এর থেকে ঢাউস আকারের বইও একহাতে ধরে হেসে খেলে পড়তে পারবেন। কিণ্ডলের ওজন এমনকি একটা অতিক্ষুদ্র পেপারব্যাকের চেয়েও কম। কাগজের গন্ধটাই শুধু মিসিং।
খুব সম্ভব!
ওয়ার এণ্ড পীস, টলস্টয় সমগ্র, অসংক্ষেপিত লে মিজারেবল, অসংক্ষেপিত টেইল অফ গেনজি ইত্যাদি এভাবেই পড়েছি আমি। কখনও বুকের উপর রেখে, কখনও কাৎ হয়ে এক হাত বিছানার উপর রেখে সেটা দিয়ে বইয়ের এক পাশ ধরে আর অন্য হাতে অন্য পাশটা খুলে ধরে। খুব সোজা ব্যাপার - হেসে খেলেই পড়া যায় বৈকি!
মিসিংয়ের ব্যাপারে একটু ব্যাখ্যা দেই। মিসিং শুধু কাগজ-কালির গন্ধ নারে ভাই (যদিও ওটাও বিশাল ব্যাপার), মিসিং 'আত্নিক সম্পর্ক'-টাও। আপনি বইয়ের ব্যাপারে 'নাস্তিক মুরতাদ' ( ) মানুষ হলে এবং এর আত্না-ফাত্নায় বিশ্বাস না করলে, আমার কিছু করার নেই। আমি নাচার। আমি শুধু বলতে পারি, এই সম্পর্কটা তৈরি হয় বইয়ের বিমূর্ত বৌদ্ধিক কন্টেন্টের সাথে কাগজ-কালির স্পর্শ-গন্ধের সফল মিলনে, এক অপূর্ব মোহন সমবায়ে। আর এই দেহমন্দিরের সাধনা করেই আত্নার কাছে পৌঁছুতে হয়।
****************************************
১) ট্যাবে বই পড়তে ভাল লাগা/না লাগার ব্যাপারটা আসলে একদমই অভিরুচির ব্যাপার। হার্ডকভার বই দেখতে আমার কাছে বেশ লাগে, কিন্তু পড়ার সময় ইবুককেই প্রাধান্য দেই। হঠাত কোন নির্দিষ্ট তথ্য জানতে চাইলে ইবুকে ওয়ার্ড সার্চ করলেই হয়ে যায়। অনুচ্ছেদের পর অনুচ্ছেদ Ctrl C + Ctrl V চেপে মাইক্রসফট ওয়াননোট কিংবা অনুরুপ কোন সফটওয়ারে সংরক্ষণ করে ক্লাউডসার্ভারে আপলোড করে দেওয়া যায়, যাতে দুনিয়ার যেকোন প্রান্তের যেকোন গ্যাজেট থেকে আপনি আপনার নোটগুলো এক্সেস করতে পারেন(প্লাস, অন্য কারও সাথে শেয়ারও করতে পারেন)। এছাড়া কাগজ চিরতরে নষ্ট হতে পারে, কিন্তু বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কিলোবাইট-মেগাবাইট অত সহজে ধ্বংস হয় না। ইবুকের এই সব সুবিধা আমার কাছে কাগজের গন্ধের চেয়েও মোহনিয় মনে হয়
২) ইংরেজি বই আমি পিডিএফ হিসেবেই পড়ি, বাংলা বইয়ের যুতসই পিডিএফ না থাকায় নিতান্তই বাধ্য হয়ে হার্ডকভারে পড়তে হয়। তবে বাংলা পিডিএফ কেনার সুযোগ থাকলে কিনেই পড়ব।
Big Brother is watching you.
Goodreads shelf
স্পর্শ ভাইয়া বলেছেন
এই বিষয়টা বেশ গুরুত্বপূর্ণ, এবং শীঘ্র আলোচনার দাবীদার
ইবুকের থেকে কাগজের বই পড়তে অনেক মজা। কাগজের বই এর সাথে ই-বুকের কোন তুলনা চলেনা।
---------------------
মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান
প্রকাশকরা বইয়ের দাম যেভাবে বারাচ্ছেন, ইবুক ছাড়া উপায় কি!
মহান বাবা ইউক্লিড, রুয়েট
নতুন মন্তব্য করুন