পায়ের বুড়ো আঙ্গুলের নখ ভেঙে যাওয়ায় ডাক্তার দেখাবার প্রয়োজন দেখা দিল। নখটা তুলে ফেলতে হবে। অভিজ্ঞ জনেরা বললো নখ তুলে ফেললে সেখানে আবার নতুন নখ গজায়। তাই দৌড় দিলাম মেডিকেল এ। কোন কাজ আমি সাধারনত একাই করি। এক্ষেত্রেও আমি একাই মেডিকেল এ গেলাম। সরকারী মেডিকেল গুলোতে খরচ অনেক কম তাই মানুষও প্রচুর। আমি ১০টাকা দিয়ে জেনারেল সার্জারীর একটি টিকেট কাটলাম। টিকেটটাই প্রেসক্রিপশন। জেনারেল সার্জারীতে তুলানা মূলক মানুষ অনেক কম। সে তুলনায় অর্থো-সার্জারী, মেডিসিন, নাক-কান-গলা, ইত্যাদি বিভাগে মানুষের ভীড় আরো বেশি। বেশির ভাগ মানুষ গ্রাম থেকে এসেছেন। তাদের কথাবার্তা শুনে বোঝা গেলো। আর আমি একটু বেশি আগ্রহী বলে নাম নিবন্ধন করার সময় ঠিকানা লেখার জায়গায় দেখলাম আমি ছাড়া আমার আগের যতজন এসেছেন তারা প্রায় সকলেই শহরের বাহিরের লোক।
অতঃপর টিকেট নিয়ে সার্জারীর ডাক্তারের কাছে গেলাম। ডাক্তার সাহেব বললো কি সমস্যা? আমি আমার পা দেখালাম। তিনি দেখে বললেন নখটা তুলে ফেলতে হবে। আমিতো আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে এসেছিলাম নখ তুলে ফেলবো। অতএব আমি রাজি হয়ে গেলাম। তখন তিনি বললেন নিচে যারা আছে তাদের দিয়ে তুলবেন না ওটিতে তুলবেন। ওটিতে তুললে ডাক্তাররা অপারেশন করবে। এবার আমি একটু অবাক হলাম। আমি জানতাম এ ছোটখাটো কাজ গুলো নিচের ড্রেসিং থেকেই করে দেয়। আমি বললাম যদি ডাক্তার দিয়ে তুলতে চাই তাহলে? তিনি তখন বললেন তাহলে আপনাকে আগে মেডিকেলে ভর্তি হতে হবে? আমি এবার ঘাবরিয়ে গেলাম। কারন আমি জীবনে কখনো মেডিকেলে ভর্তি হইনি। আমি আস্তে আস্তে বললাম আজ ভর্তি হলে কবে অপারেশন হবে? ডক্তার সাহেব বললেন দুই,তিন দিন লাগতে পারে আবার পাচ-ছয় দিনও লাগতে পারে। সেটা বলা যাচ্ছেনা। আমি আর কি বলি ছোট একটা নখ তুলতে ৪-৫ দিন মেডিকেলে ভর্তি হতে হবে!! আমার দিকে তাকিয়েই তিনি বললেন আপনি কি স্টুডেন্ট? আমি বললাম হ্যাঁ। তিনি আর কিছু বললেন না।
আমি এবার বললাম তাছাড়া আর কি কিছু উপায় আছে? আমার মনে হচ্ছিল তিনি হয়তো অন্য কিছু বলতে চাচ্ছেন। আমাকে বললো আপনার বাবা কি করে? আমি মনে মনে বলি নখ তোলার সাথে বাবার চাকরীর কি সম্পর্ক? আমি বললাম সরকারী চাকুরী করতো এখন অবসরে গেছেন। তিনি বললেন নিচে নখ তুলতে চাইলে তুলেন। তাহলে এখনই বাড়ি যেতে পারবেন। আর আমাদের মত ডাক্তার দিয়ে তুলতে চাইলে ক্লিনিক ছাড়া কোন বুদ্ধি নাই। ক্লিনিকেও নখ তুললে এখনই বাড়ি যেতে পারবেন। ভর্তি হওয়ার কোন ঝামেলা নাই। আমি বললাম নখটা তুললে আবার উঠবেতো? তিনি বললেন সেটা নির্ভর করছে সেটা কে তুলছে তার উপর। এখানে করলে নাও উঠতে পারে। নিচে যারা অপারেশন করেন তারা ডাক্তার না। আমি আরেক ধাপ এগিয়ে বললাম ক্লিনিকে নখটা তুলতে কত টাকা লাগবে? তিনি বললেন সব মিলিয়ে ২০০০টাকা হলেই হবে। তখন আর কি করার বললাম আমাকে নিচে নখ তুলে দেবার ব্যবস্থা করে দেন। আমি সেখানেই আমার নখ তুলবো। প্রেসক্রিপশন নিয়ে বের হয়ে আসলাম।
আমার মনে হল এভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে গ্রামের মানুষদের ক্লিনিকে ভাগিয়ে নেয়া হয়। গ্রামের সহজ সরল মানুষগুলো তাহলে কি করবে? তাছাড়াতো দালালদের দৌড়াত্ব আছে। সরকারী মেডিকেল গুলোর সুযোগ সুবিধা কি মানুষ ঠিক ভাবে পাচ্ছে? আমার মনে হয় পাচ্ছেনা। সেবাই হওয়া উচিত ডাক্তারদের ধর্ম কিন্তু এ কি দেখছি? ক্লিনিকে একবার একজন ভাল বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেখাতে ৫০০টাকা দিয়ে দেখাতে হয়। পুরাতোন হলে ৪০০টাকা ফি। তিন মাস পর আবার আসলে নতুন এর মত ৫০০টাকা ফি দিতে হবে। আর সরকারী মেডিকেল গুলোতে ১০টাকার বিনিময়ে তারা রূগী দেখেন। এতেই কি এত অনাগ্রহ? এ অবস্থা কি বদলাবে না? ডাক্তার কে ক্যামনে বুঝাই আমরা সাধারন মানুষ । জ্বর, ঠান্ডা, কাশি হলে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেখাইনা। জ্বর হইলে প্যারাসিটামল খেয়ে ফেলি। অপারেশন করতে হলে আমাদের সরকারী হাসপাতালে যেতে হয় ক্লিনিকে নয়।
-মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান
মন্তব্য
একমত হতে পারলাম না... কিছু কসাই ডাক্তার অবশ্যই আছেন (এই জাতের মানুষ সব পেশাতেই কম বেশি বিদ্যমান) মেনে নিয়েই বলছি... সরকারী ডাক্তারেরা আছেন বলেই এখন ও বেচে আছি... ডাক্তার প্রতি রুগির চাপ্টা একটু ঠান্ডা মাথায় ভেবে দেখেন...
আমাদের ডাক্তাররা সরকারী মেডিকেল থেকে ক্লিনিকে রোগী দেখতে পছন্দ করেন। চাপের কথা বলে রোগী ক্লিনিকে ভাল করে দেখলে কার লাভ? যাদের কারিকারি টাকা আছে তারাই ক্লিনিকে ভর্তি হয় আর গ্রামের দরিদ্র চাষি মানুষটির জন্য সরকারী মেডিকেলই ভরশা। আমিও আপনার সাথে একমত হতে পারলাম না। কসাই ডাক্তারের সংখ্যাই বেশি। হৃদয়বান ডাক্তারের সংখ্যা খুবই কম। আর তাই তারা ক্লিনিকে ব্যবসা কেন্দ্র খুলে বসে। ছাতার মত গজিয়ে উঠে হাজার হাজার ক্লিনিক। কেন? এই উত্তর শুধু সরকারী হাসপাতাল গুলোকে অবহেলা করার ফলে। একজন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হলে তার অপারেশন করতে ৩-৪ দিন লাগতে পারে কিন্তু ক্লিনিকে গেলে প্রায় সাথে সাথে কাজটি করে দেয়। কারন শুধুই অর্থ।
"চাপের কথা বলে....."
"একজন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হলে তার অপারেশন করতে ৩-৪ দিন লাগতে পারে কিন্তু ক্লিনিকে গেলে প্রায় সাথে সাথে কাজটি করে দেয়। কারন 'শুধুই' অর্থ।"
জনাব আপনার সরকারি মেডিকেল সম্বন্ধে ন্যূনতম ধারণা নাই। মেলোড্রামাটির অধিকাংশটাই বানিয়ে লিখেছেন।
সরকারী হাসপাতালের বর্তমান অবস্থা বর্ননা করলে মেলোড্রামাই মনে হবে। শহুরে জীবনে বসে গ্রামের সরকারী হাসপাতাল গুলোর খোজখবর রাখার কথা আপনার না। আশাকরি একটু খোজখবর করে দেখবেন।
-----------------------------------
মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান
জনাব আপনি আবারো নাটক করলেন।
শহুরে জীবনে আপনিই আছেন(নিজেই বললেন)। ১০টাকা আউটডোর ফি গ্রামের সরকারি হাসপাতালের? গড়াইয়া হাসবো?
আবারো বললাম সরকারী মেডিকেল সম্বন্ধে আপনার ন্যূনতম ধারণা নাই।
মশাই, আমি গত ৩বছর ধরে একটি ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিত্সক হিসেবে আছি। ইউনিয়ন কি জিনিস চেনেন?
সরকারি একটি জাতিয় হাসপাতালের আউটডোরে বসার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি-যদি কখনো ওই চেয়ারটাতে বসতেন তাহলে বুঝতে পারতেন কেন চাইলেও মাঝেমাঝে যত্ন করে দেখা যায় না।
হ্যা,কিছু কিছু দালাল সব যায়গাতেই আছে। আপনার কপাল খারাপ ছিল বলে তেমন একজনের পাল্লায় পড়েছিলেন হয়ত।
তবে যতটা কষ্টের মধ্য দিয়ে একটা ছেলে ডাক্তার হয়,তার যোগ্য প্রতিদান সে সরকারিভাবে পায় না।
এটা একটা বড় কারণ।
সুবোধ অবোধ
আপনি আপনার দিক থেকে বললেন। আমি আজ সারাদিন অনেক মানুষকে আমার অভিজ্ঞতার কথা বলেছি আর জানতে চেয়েছি আপনার এরকম কোন অভিজ্ঞতা আছে কিনা? প্রায় সবাই তাদের বিচিত্র অভিজ্ঞতার কথা আমাকে জানিয়েছে। এ থেকে আমার ধারনা এরকম ঘটনা হরহামেশাই হয়। যা শুধুমাত্র ভুক্তভোগীরাই জানে।
---------------------------------
মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান
অবশ্যই হরহামেশাই হয়। একটা সরকারি হাসপাতালে অনেক ডাক্তার থাকে। আউটডোরে একেক দিন একেক জন বসেন বিভিন্ন রুম এ। তাদের মধ্যে একেকজনই কমপক্ষে ৩০ জন রোগী দেখেন। ধরে নিলাম তাদের মধ্যে একজন খারাপ ডাক্তার। সুতরাং তার দেখা ৩০ জন রোগীদের ই একই অভিজ্ঞতা হবে।
খারাপের হিসেব করলে সংখ্যাটা কিন্তু কম না।
কিন্তু বাকি ১৫০/২০০ জন যে ভাল চিকিৎসা পেলো সেটা কি দেখবেন না??!!!
খারাপ ভাল সব যায়গাতেই আছে।
সুবোধ অবোধ
মানুষের সাইকোলজির খুব মজার একটা ব্যাপার আছে। আমি যখন কোন লোককে ধরে জিজ্ঞেস করব ভাই, আমার একটা ভয়ের অভিজ্ঞতা হয়েছে, সেও তখন তার সেই ধরণের বা কাছাকাছি কোন অভিজ্ঞতার কথা মনে করে বলবে যদিও সারা জীবনে হয়ত এরকম একবারই হয়েছে, সে কোন হাসির ঘটনা মনে করে বলবে না । এভাবে ডাটা কালেক্ট করলে সেটা বায়াস ডাটা হয়, অরিজিনাল না। যাই হোক। লেখার স্বাধীনতা সবারই আছে। লিখতে থাকুন।
আপনার নিজের অভিজ্ঞতা লিখেছেন তাই সেটা যে কোন রকমেরই হতে পারে। আপনি একদিন সরকারী হাসপাতালে গিয়েছিলেন , এবং দুর্ভাগ্যবশত এক দালাল ডাক্তারের পাল্লায় পড়েছিলেন(হাসপাতালের দালাল চক্র সম্পর্কে আপনার কোন ধারনাই নেই তাহলে, সুযোগ পেলে জানার চেষ্টা করে দেখবেন)এবং সেটা আপনি অভিজ্ঞতা হিসেবে লিখতেই পারেন। কিন্তু একদিনের অভিজ্ঞতায়, এক ডাক্তারকে দেখিয়ে পুরো পেশাটার সকল লোককে অথবা অধিকাংশ লোককে বিচার করাটা কি যুক্তিযুক্ত???
সরকারী হাসপাতালে যে রকমের অপ্রতুলতা, অসংগতি, নোংরা পরিবেশ এর ভিতরেও ভর্তি হওয়া বা চিকিৎসা নিতে আসা বেশিরভাগ সংখ্যক রোগীরা সুস্থ হয় কি করে কখনও ভেবে দেখেছেন? অবশ্য আপনার যদি ধারনা এরকম হয় যে রোগী বাঁচলে আল্লাহ বাঁচিয়েছে আর মরলে ডাক্তার মেরেছে তাহলে এই প্রশ্নের উত্তর দেয়ার দরকার নেই।
আমাদের চিকিৎসা সিস্টেম টাতে অনেক বড় ধরণের অনিয়ম,অসংগতি আছে। যদি সত্যি সত্যি সমলচনা করতে চান, তাহলে প্রতিটা জিনিস নিয়ে ভাবুন, বুঝার চেষ্টা করুন, মুখ খুলুন, প্রতিবাদ করুন। ডাক্তার এই সিস্টেমের একটা অংশ,এর আরও অনেকগুলো অংশ আছে এবং হাজার প্রতিকূলতার ভিতরে কাজ করে যাচ্ছে। কিছু মুষ্টিমেয় ডাক্তার দুর্নীতি করছে, রাজনীতির ছত্রছায়ায় থেকে স্বার্থসিদ্ধি করছে,অর্থের লভে পেশার মহত্ত্ব হারাচ্ছে কিন্তু তাদের কে বিচার করার দায়িতু সরকারের , বিচার ব্যবস্থার, আর একজন ডাক্তারের না কিন্তু। এদের কারনে আপনাদের মত মানুষরা চোখ বন্ধ রেখে একদিন এক জনকে দেখে এসে সবাই কে এক মানদণ্ডে বসিয়ে বিচার করছেন, অথচ যারা দুর্নীতি করছে তাদের কিছুই হচ্ছে না। লাভ কিন্তু আপনার আমার জনগনের কাররই হবে না। তাই যদি সত্যি সত্যি এদের বিরুদ্ধে কথা বলতে চান, জেনারালাইজ মন্তব্য না করে সুস্থ সমলচনা করুন। আরও লিখুন। ভাল থাকুন।
আসলে প্রত্যাশার সাথে প্রাপ্তির সামঞ্জস্য না ঘটলে মানুষকে হতাশায় গ্রাস করে ফেলে। সেবা ওরিয়েন্টেড পেশার একটা বড় সমস্য হচ্ছে এখানে সেবা'কে 'প্রাপ্য' হিসেবে ধরে নেওয়া হয়ে থাকে প্রিডোমিনেন্ট সীমাবদ্ধতাগুলোকে বিচারে না এনেই। সেবাদানের প্রক্রিয়ার মধ্যে বিরাজমান ফ্যাকটরগুলো, যেগুলো প্রপার ভাবে ওই সেবাদানকে ব্যাহত করছে, সাধারণ পাবলিক সেগুলোকে বিবেচনায় আনতে চায়না। যেমন- হাসপাতালে রোগী এসেই একটি বেডের প্রত্যাশা করে বেডের তুলনায় রোগীর সংখ্যা বিবেচনা না করেই। বেড না পাওয়াটা রোগীকে প্রথমত ব্যাথিত করে। কিন্তু এর পরপরই যখন রোগী দেখতে পায় তার পরে এসে একজন বখশিশের বিনিময়ে বেড পেলো, তখন সে হয় ক্ষুব্ধ। কিছু অসাধু লোকের কারনে মূলত গোটা সেক্টরটা সমালোচিত হয়।
যাইহোক, অনেক বছর আগে ঢাকা থেকে খুলনায় যাওয়ার পথে আমার এক বন্ধুর বাসে ডাকাত পড়ে খাজুরা রোডে। হঠাতই একজন যাত্রী তার পকেট থেকে রিভলবার বের করে বাসের জানালা থেকে দুই রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়লে ডাকাতরা বাস থেকে নেমে পালিয়ে যায়। যাত্রীরা তার সাহসে বেশ তারিফ করতে শুরু করেছিলো। কিন্তু যেইনা লোকটি তার পরিচয় দিলো এক থানার ওসি হিসেবে, যাত্রীরা যে যার সিটে গিয়ে বসে পড়লো। একজন শুধু বললো আপনি পুলিসের মতোই কাজ করেছেন।
আমরা এ্যাপ্রিসিয়েশন করতে বড়ই কৃপণ।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
সেটাই রাতঃস্মরণীয়দা।
একজন রোগী যখন কোন হাসপাতালে যায় সে কিন্তু অন্য কারো কাছে কিছু আশা করেনা। সে শুধু আশা করে ডাক্তার যেন তাকে ভাল করে দেখে একটা ভাল ব্যবস্থাপত্র দেয়। এখানে রোগীর সাথে ডাক্তারের সরাসরি যোগাযোগ হয়। ডাক্তারদের একটু অবহেলাও এখানে রোগীর নজরে আসে। পার্থক্যটা শুধু হাসপাতালে এক ব্যবহার আর ক্লিনিকে আরেক ব্যবহার। এই দুই জায়গার পার্থক্যটাই প্রথমে নজরে আসে।
--------------------------------
মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান
রাতঃস্মরণীয়'র মন্তব্যটা একবার পড়ুন। আরেকবার পড়ুন।
ভাই দুঃখিত না হেসে পারলাম না। এই লেখাটা প্রথম আলোতে পাঠান। সচলে এসব লিখে বাহবা বেশী পাওয়া যাবে না, প্রথম আলোই এসব ইমোশনাল নাটুকে (!) লেখার ভাল সমঝধার।
ধুর, বিশাল একটা কমেন্ট লিখলাম। সচলায়তান এরর দেখায়া বাদ করে দিল।
যাই হোক, একলাইনে লেখকে বলি, সরকারী হাসপাতালের ডাক্তারদের কিছু বলার আগে একদিন জরুরী বিভাগে সকাল সন্ধা কাটানোর আনুরোধ রইলো। দীর্ঘ সময় থেকে, ডাক্তারদের কাজকর্ম দেখে এসে চিন্তা করুন তাদেরকে 'কশাই' বলবেন কিনা।
ক্লিনিক গুলো চালায় কে? চোখবন্ধ করে না থেকে একটু তাকিয়ে দেখুন। সব রাজনীতিকরা তাদের সমগোত্রীয়দের অত্যন্ত সৎলোক বলে। তারাও বলে তারা জনগনের সেবক। ডাক্তাররাও সেবাটা করেন কিন্তু যেতে হবে ক্লিনিকে। ঢালতে হবে কাড়িকাড়ি টাকা।
উপরে যারা মন্তব্য করেছেন তাদের জন্য আফসোস। এখন আমার মনে হচ্ছে স্বাস্থ্যখাতে দূর্নীতি সমন্ধে আপনাদের বিন্দুমাত্র ধারনা নেই। আমি এখানে টি আই বি র একটা জরিপের ফলাফল উল্লেখ করলাম। এবার নিশ্চই বুঝতে পারবেন।
"ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ কর্তৃক প্রকাশিত ’সেবা খাতে দুর্নীতি: জাতীয় খানা জরিপ ২০১০’ এর তথ্য মতে, যারা সরকারী ও বেসরকারী হাসপাতাল থেকে স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করে তাদের ৩৩.২% সেবা নিতে গিয়ে নানা রকম অনিয়ম ও দুর্নীতির শিকার হয়ে থাকে। জরুরী বিভাগে দুর্নীতি ও অনিয়মের শিকার হওয়া সেবা গ্রহণকারী খানার মধ্যে সার্বিক ভাবে ৩৮.৭% জরুরী মুহুর্তে কোন ডাক্তার পাননি। পাশাপাশি জরুরী বিভাগে সেবা গ্রহনের ক্ষেত্রে দালাল কর্তৃক হয়রানীর শিকারের বহু ঘটনা ঘটেছে।
হাসপাতালের বহিবিভাগেও অনিয়ম ও দুর্নীতি ভয়ংকর রূপ ধারন করেছে। জরিপের তথ্য মতে ৩৫.৭% খানাকে ডাক্তারের ব্যাক্তিগত চেম্বার বা ক্লিনিকে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। এখানেই শেষ নয় বরং হাসপাতালের অন্তর্বিভাগেও দুর্নীতি কম নয়। অন্তর্বিভাগে দুর্নীতি ও অনিয়মের শিকার হওয়া খানার মধ্যে ৪০.৯% খানা জরুরি মুহুর্তে ডাক্তার পাননি বলে উল্লেখ করেন। দুর্নীতি ও অনিয়মের শিকার হওয়া খানার ৫৪.৮% খানাকে বেসরকারী ডায়াগনস্টিক সেন্টার হতে পরীক্ষা করার পরামর্শ দেওয়া হয়।
বেসরকারি সেবা গ্রহণকারী খানার মধ্যে ৯.৬% তাৎক্ষনিক ভাবে জরুরী চিকিৎসা সেবা না পাওয়ার কথা এবং ৪২.১% খানা অপারেশনের পুর্বে সংশ্লিষ্ট ডাক্তার কর্তৃক রোগের সমস্যা চিহ্নিত না করার কথা উল্লেখ করেছেন।
শুধু স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতি বেড়েছে: জরিপভুক্ত সব সেবা খাতে দুর্নীতি কমলেও বেড়েছে শুধু স্বাস্থ্য খাতে। ২০১০ সালে স্বাস্থ্যে দুর্নীতির অভিজ্ঞতা ছিল ৩৩.২ শতাংশ খানার। ২০১২ সালে তা বেড়ে হয়েছে ৪০.২ শতাংশ।"
দৃষ্টিভঙ্গিটা আগে বদলাতে হবে। আশাকরি এবার নিজেরাই ২০১২ সালের টি আই বি র রিপোটটা দেখবেন।
নচিকেতার সুরে সুরে বলতে হয়,
---------------------------------------
মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান
অনেকদিন পর পিউর বিনোদন পাইলাম। মনের ক্ষোভের কথা লিখছেন, সেটাই লিখতে থাকেন, মাঝখান থেকে টি আই বি কে টেনে এনে বিশেষজ্ঞ মতামত দিয়ে ( নচিকেতার গান সহ) নিজের জ্ঞানের অন্তঃসারশূন্যতা প্রকাশ করে ফেলার বোকামি করছেন কেন।
এই রিপোর্ট ডাক্তার দের নিয়ে না, স্বাস্থ্যখাত নিয়ে, এইটা বোঝার মত গ্রে মেটার না থাকলে আর কি করার আছে বলুন। ডাক্তার তো আর আপনার মাথায় গ্রে মেটার ইমপ্ল্যান্ট করতে পারবে না। ডাক্তার গুলো সব খারাপ ।
আমাদের দেশে কর্মরত ডাক্তার আছেন ১১৩০০ জন, আর পদ আছে ২০২৩৪ টি। তার মানে,এখনো ফাঁকা ৪৪.২%। প্রতি ৩০১২ রোগীর জন্য ডাক্তার আছেন একজন, নার্স দরকার ২ লাখ ৮০ হাজার , আছে ২২ হাজার। ডাক্তার ভার্সেস রোগীর হিশাবটা নিয়ে একটু অঙ্ক কষে দেখেন ?
এরপরও WHO এর হিসেব মতে পৃথিবীর ১৯১ টা দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার তুলনামূলক বিচারে আমাদের অবস্থান ৮৮ তম, যেখানে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের অবস্থান ১১২,পাকিস্তান ১২২, রাশিয়া, ইরান, ইন্দোনেশিয়া এদের মত দেশও আমাদের চেয়ে পিছিয়ে। আমাদের সীমিত সম্পদ এবং অজস্র প্রতিবন্ধকতা( সম্পদের সীমাবদ্ধতা আর কাজের প্রতিবন্ধকতা সম্পর্কে আপনার কোন ধারনা নেই। টি আই বি এর মত আরও কিছু রিপোর্ট ঘেঁটে পড়ে নিয়েন) সত্ত্বেও যে ডাক্তার রা কাজ করে চলছে তার অনেক বড় প্রমাণ এই পরিসংখ্যান।
আপনাকে আপাতত এর চেয়ে বেশী পরিসংখান দিলাম না, একেবারে বেশী নিতে ঝামেলা হতে পারে।
উপরে একবার বলেছি, আবার বলছি, লেখা আলু পেপারে দেন। ওরাই সবকিছু বদলাচ্ছে।
প্রিয় আসাদ ভাই,
আপনার জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি, ক্লিনিক গুলোর মালিক ডাক্তারেরা কিনা তা একটু যাচাই করে দেখবেন। আর আপনার এই অভিজ্ঞতা নিয়ে বলার কিছু নেই। সব কিছুর নিয়ম আছে। সার্জারী ওয়ার্ডে ক্যাজুয়াল ওটি বলে একটা বিষয় আছে, সেখানে ছোট ধরনের কাটাকুটি হয়, এর মাঝে আপনার নখ তোলার মতো কাজটিও পড়ে। এই বিষয়টি নিয়েই যখন আপনি ওয়ার্ডে ভর্তি হবেন তখন ওটি ফাঁকা থাকা সাপেক্ষে আসলে অপারেশনের সময় ঠিক করা হয়। এর মাঝে জাস্ট নাঊ কেইস যদি চলে আসে, যেমন ষ্ট্যাব ইনজুরি সেক্ষেত্রে সিরিয়ালে থাকা অপারেশনটার সময় পিছিয়ে যায়।
যাই হোক আপনি আপনার অভিজ্ঞতা সারাদিন ধরে জনে জনে বলে বেরিয়েছেন। ভালো করেছেন। এই কাজটাই অনেকে করে। ভাই আমার একটা প্রশ্ন, সরকারী হাসপাতাল থেকে কি একটা রোগীও ভালো হয়ে বাড়ি যায়না? একটা দিন আপনাকে যদি সরকারী হাসপাতালের অ্যাডমিশন ইউনিটে রাখা যেতো!!! আর আপনি একেবারে ঘেঁটে বের করে নিয়ে এসেছেন টি আই বি এর রিপোর্ট। ভাই, মানুষ খুব বেকায়দায় না পড়লে হাসপাতালে যায়না। সেখানে খুব স্বাভাবিক ভাবেই রোগী সকল ধরনের সুবিধা আশা করে। কিন্তু রোগী শ'খানেক হয়ে ডাক্তার যদি হয় এক কিংবা দুই তাহলে ডাক্তারের ঠিকঠাক কাজ করার সামর্থ্য কতক্ষন থাকে? ডাক্তারেরা তো মানুষ , নাকি? আরেকটা জিনিষ ভাই, হাসপাতালে অনেক কিছুর ব্যাপারেই কিন্তু ডাক্তারের হাত নেই।
আপনি আপনার স্বাস্থ্য খাতে দূর্নীতি নিয়ে থাকেন, আমরা না হয় এই ফাঁকে আরেকজন রোগী দেখি। তবে ভাই একটা কথা সত্যি, আপনার লেখা ভয়াবহ ধরনের মেলোড্রামাটিক, আলু পেপারের শিশির মোড়লের লেখার সাথে অনেক মিল আছে।
আপনাকে আগেও একবার বলেছি,আবার বলি-আউটডোরের ওই চেয়ারটাতে বসিয়ে দিলে টের পেতেন।
যাই হোক,আপনাকে অভিজ্ঞতার কথা বলে লাভ নেই।
মানিক চন্দ্র দাস ভাই অনেক কিছুই বলেছেন,তবে কি,সামনাসামনি না দেখলে আসলে কিছুই বুঝবেন না।
দূর্নীতি আছে,সেটা কেউই অস্বীকার করছে না। তবে আপনার ঢালাও ভাবে দোষারোপ করা পুরোটাই ভুল!
খুব রিসেন্ট সাভারের ঘটনায় ডাক্তারদের ভুমিকাটাই দেখুন না।
নাকি ভালো ব্যাপার গুলো সবসময়ই এড়িয়ে যান??
নেগেটিভ ব্যাপারগুলো সবাই খুব খায় কি না!!!!
আলু পত্রীকার স্ট্র্যাটেজি!!
মন্দ নয়!
আর শেষটাতে যার লেখার উদ্বৃতি দিয়েছেন তাতে যে ডাল টুকু রেঁধেছিলেন তাতেও পানি দেয়া হয়ে গেছে!!!!
যে লোক 'এনিগমা' এর সুর চুরি করে নিজের নামে চালায় তার মুখে আর যাই হোক নীতি বাক্য মানায় না!!!
সুবোধ অবোধ
নতুন মন্তব্য করুন