প্রানের শহরে ধ্বংসযজ্ঞ ও কিছু বিচ্ছিন্ন ভাবনা

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: সোম, ১৩/০৫/২০১৩ - ১০:৫৫পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

৪০০ বছরের পুরনো ঢাকা। আমার শৈশব, কৈশোরের শহর। আমার প্রিয় শহর। জ্যাম, ধুলো, দূর্গন্ধ আর প্রতিদিন হাজার বার "এই শহরে মানুষ থাকে না" বলার পরেও আমার প্রানের শহর।

কিন্তু সেদিন সত্যিই স্তব্ধ হয়ে গেলাম আমার প্রিয় শহরে কিছু নরপশুর ধ্বংসজজ্ঞ দেখে। এই শহরে প্রায়ই কিছু না কিছু হয়। মাসে একটা বড় সমাবেশ আর পুলিশের সাথে মারামারির খবর তো নতুন কিছু না। ৫ তারিখের সমাবেশ নিয়েও সেরকম কিছুই হবে ভেবেছিলাম। কিন্তু বেলা বাড়ার সাথে সাথে অবাক হয়ে দেখলাম কিভাবে নির্বিকারে কিছু মানুষ শহরটাকে ধ্বংসস্তুপে পরিণত করে! আরও অবাক হওয়ার মত ব্যাপার হচ্ছে যারা এগুলো করছে তারা হয়ত প্রথমবারের মত এই শহরে এসেছে!!

৫ তারিখের কর্মকান্ড নিয়ে এরই মধ্যে অনেক আলোচনা / সমালোচনা হয়ে গেছে। আরও বেশ কিছুদিন হয়ত টকশোগুলো গরম হবে এটা নিয়ে এবং যথারীতি আমরা ২/১ সপ্তাহের মধ্যে সব ভুলে যাব। আমি আর কথা না বাড়াই। সেদিন থেকেই "কম আলোচিত" কিছু ব্যাপার আমার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। সেগুলো নিয়েই নাহয় কথা বলি।

১। মতিঝিল হচ্ছে দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বানিজ্যিক কেন্দ্র। অধিকাংশ বানিজ্যিক ব্যাঙ্ক আর ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয় এখানে। এরকম একটা গুরুত্বপূর্ণ জায়গার মাঝখানে হেফাজতীদের সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হলো কোন আক্কেলে? সেদিন রাতে হেফাজতীরা সোনালী এবং জনতা ব্যাঙ্কের প্রধান কার্যালয়ের ভেতরে ঢুকে পড়েছিল। এটা কি ব্যাঙ্কের নিরাপত্তার জন্য হুমকি নয়?

২। সচিবালয়ের মত একটা স্পর্শকাতর জায়গার পাশেই পল্টন এলাকায় অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের কার্যালয়। এর কারণ কি? কয়েকদিন পরপরই এই জায়গা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়!! পল্টন যখন রাজনৈতিক কর্মকান্ডের জন্য পরিচিত হতে শুরু করে তখন সেটা আসলেই পল্টন "ময়দান" ছিল। এখন সেটা পল্টন "মোড়"। একটা গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ছাড়া আর কিছু না। মিটিং মিছিলের জন্য এই এলাকার বিকল্প ভাবার সময় কি এখনো আসেনি?

৩। ৫ তারিখ সন্ধ্যায় আওয়ামীলীগের এক পাতি নেতা (নাম ভুলে গেছি) টকশোতে বলছিল যে তারা নাকি আগে বুঝতে পারেনি হেফাজত তাদের কথা রাখবে না। প্রথমদিন থেকেই সবাই বলে আসছে এদের উদ্দেশ্য ভাল না। সবাই সব বুঝলো আর রাজনীতি করে করে বুড়ো হয়ে যাওয়া নেতাদের বুঝতে এতদিন লাগল??!

৪। র‍্যাব, পুলিশ, বিজিবি'র দূর্বলতা থাকলেও সংগঠিত হয়ে এবং ঠিকমত প্ল্যান করে তাঁরা কোনও অভিযান পরিচালনা করলে এই মোল্লাগুলোর তাদের সামনে দাঁড়াতে পারার কোনও সম্ভাবনাই নাই। তাহলে রাজশাহীতে যখন ২-৩দিন পুরো এলাকাকে দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ধ্বংসজজ্ঞ চালানো হচ্ছিল, ফটিকছড়িতে যখন মানুষগুলোকে পিটিয়ে মারা হচ্ছিল অথবা রামুতে যখন মন্দিরে আগুন দেওয়া হচ্ছিল তখন কেন এরকম কোন অভিযান পরিচালনা করা হলো না?

৫। ৫ তারিখে এবং এর আগের হেফাজতের সমাবেশের দিনেও লক্ষ্য করলাম হঠাৎ করেই পুরো শহরের পুলিশ গায়েব। কোথাও কোনও ট্রাফিক পুলিশও নাই। যেই মোড়ে সবসময় মটর সাইকেল নিয়ে ৩-৪ জন সার্জেন্ট আর ৭-৮জন ট্রাফিক কন্সটেবল থাকে, সেখানে একজন আনসারও নাই!! ৯৯৯ নাম্বারে ডায়াল করলাম, সেখানেও লাইন যাচ্ছে না! এর কারণ কি? এটা তো মানুষের মনে আরও আতঙ্ক আর নিরাপত্তাহীনতা তৈরি করে। আর এই অবস্থার সুযোগে টুপি ওয়ালা কিছু শয়তান রাস্তায় মেয়েদের কে দাঁড় করিয়ে হেনস্তা করে!! সেদিন রাতে যে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে, অথবা সাধারণ সমাবেশে যে নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকে সেটার জন্য তো ট্রাফিক বিভাগের লোকজনের গায়েব হয়ে যাওয়ার কথা না! নাকি আমাদের পুলিশে আসলে কুমিরের একই বাচ্চা কে ভিন্ন পোষাকে বার বার দেখানো হয়??!!

৬। খবরে দেখা গেলো অধিংকাংশ মাদ্রাসার ছাত্র জানতই না তারা কেন ঢাকায় এসেছে। আর তাদের অভিভাবকরাও জানতো না যে এই ছোট ছেলেগুলো ঢাকায় এসেছে! অভিভাবকের অনুমতি ছাড়া এই বাচ্চা ছেলেগুলোকে ধরে নিয়ে আসার ব্যাপারে কি কোন আইনগত বাধা নেই? আমার স্বল্প বুদ্ধিতে ভুলিয়ে ভালিয়ে একটা বাচ্চাকে বাবা-মা'র অনুমতি ছাড়া কোথাও নিয়ে যাওয়াকে কিডন্যাপিং বলে মনে হচ্ছে!

৭। আমরাতো মাত্র জামাতের বি-টিম হেফাজতের কর্মকান্ড দেখলাম। আর এরা মাত্র কয়েক ঘন্টায় রাজধানীকে যুদ্ধবিদ্ধস্ত রূপ দিয়ে ফেললো। সামনে গোলাম আজমের রায় আসছে। তখনতো জামাত-শিবির তাদের পুরো শক্তি নিয়েই সারা দেশে ঝাঁপিয়ে পড়বে বলে মনে হয়। সরকারের কি সেটা মোকাবেলা করার প্রস্তুতি আছে?

৮। একটা বেশ বড় ঘুর্নিঝড় বাংলাদেশের দিকে এগিয়ে আসছে। যদি সেটা বাংলাদেশে আঘাত হানে তাহলে জরুরী পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকারকে ব্যাস্ত হয়ে যেতে হবে। কাছাকাছি সময়ে গোলাম আজমের রায় নিয়ে জামাত-শিবির তান্ডব শুরু করলে সরকার কি পারবে সেটাকে মোকাবেলা করতে?

নোটঃ লেখালেখি খুবই কষ্টকর কাজ। তাই ঘটনার সাথে সাথে পোষ্ট দেওয়ার চিন্তা আসলেও লেখায় রূপান্তর করতে করতে সচলায়তনের কঠিন চাকতি নষ্ট হয়ে গেল! বিলম্বিত হলেও আমার মনে হয় বিষয়টা প্রাসঙ্গিকতা হারায় নি। তাই একটু পরিবর্তন করে পোষ্ট করেই দিলাম।

...
ঘুমকুমার


মন্তব্য

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

৪০০ বছরের পুরনো ঢাকা।

৪০০ বছর আগে কী ছিলো?

ধ্বংশযজ্ঞটা মূলত শিবির চালিয়েছে। তারা হয়তো প্রথমবারের মতো এই শহরে আসে নাই।
শাপলা চত্বর থেকে অভিযান চালিয়ে হেফাজতে ইসলামকে সরিয়ে দেওয়া আর হুট করে ঘটা হাটহাজারির ঘটনা এক না, তেমনি এক না সারাদেশে মন্দিরে আগুন দেওয়ার ঘটনাগুলো। সেগুলোর অ্যাকশন তো ভিন্নই হবে।
৫ তারিখে পুরো শহরের পুলিশ গায়েব হয়ে গিয়েছিলো? আপনি কোন শহরের কথা বলছেন? কোন এলাকার? আমি তো রাস্তায় ট্রাফিক দেখেছি সবখানেই।
জামাত-শিবিরের পুরো শক্তি কতটুকু?

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

ঘুমকুমার এর ছবি

৪০০ বছর আগে কী ছিলো?

ঢাকাই ছিল। কিন্তু রাজধানী হয়েছিল সম্ভবত ১৬১০ সালে। হাসি

ধ্বংশযজ্ঞটা মূলত শিবির চালিয়েছে। তারা হয়তো প্রথমবারের মতো এই শহরে আসে নাই।

সেটা বুঝাই যাচ্ছে। কিন্তু শিবিরের উস্কানিতে হেফাজতের কর্মীরাও কিন্তু ভাংচুর করেছে। আর যদি ধরেও নেই তারা কিছুই করেনি শুধু বসে বসে দেখেছে যখন শিবিরের কর্মীরা কুরআন পুড়িয়ে দিচ্ছিল, সেটাও কিন্তু তাদের দায়ভার কমায় না।

শাপলা চত্বর থেকে অভিযান চালিয়ে হেফাজতে ইসলামকে সরিয়ে দেওয়া আর হুট করে ঘটা হাটহাজারির ঘটনা এক না, তেমনি এক না সারাদেশে মন্দিরে আগুন দেওয়ার ঘটনাগুলো। সেগুলোর অ্যাকশন তো ভিন্নই হবে।

সেটা সত্য। কিন্তু মানুষকে আশ্বস্ত করার মত দৃশ্যমান কোনও অভিযান কি আমরা দেখতে পাচ্ছি? বরং দেখতে পাচ্ছি ২/১ দিন পর পরেই বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে পুলিশ মার খেয়ে আসছে। অথবা শুধু পুলিশের মার খাওয়ার ঘটনাগুলোই প্রচার পাচ্ছে। ঘটনা যেটাই হোক, আশাবাদী হওয়ার মত কোনও খবর কিন্তু সবার সামনে আসছে না।

৫ তারিখে পুরো শহরের পুলিশ গায়েব হয়ে গিয়েছিলো? আপনি কোন শহরের কথা বলছেন? কোন এলাকার? আমি তো রাস্তায় ট্রাফিক দেখেছি সবখানেই।

অন্তত আমি যতটুকু দেখেছি সেটুকুতে তো বটেই। মিরপুর রোডের শ্যামলী থেকে সাইন্স ল্যাব পর্যন্ত কোনও পুলিশ দেখিনি প্রথম সমাবেশের দিনে। কিছু হুজুরের একটা হিউম্যান হলারের ড্রাইভারের সাথে হম্বি তম্বি দেখে ৯৯৯ এ কল করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছি। আর পাঁচ তারিখেও শ্যামলী থেকে পান্থপথ, সার্ক ফোয়ারা, বিজয় স্মরনী, কোথাও পুলিশ দেখি নি। শুধু মাত্র গনভবনের সামনে ২টা পুলিশের গাড়ি ছিল।

জামাত-শিবিরের পুরো শক্তি কতটুকু?

এটা তো জামাত-শিবিরই ভাল বলতে পারবে। "নট" জামাত-শিবিরই যদি মতিঝিলকে ধ্বংসস্তুপ বানাতে পারে এবং তাদের সরাতে ১০০০০ সদস্যের যৌথ বাহিনীর অভিযান লাগে; যদি জামাত-শিবির থানায় ঢুকে পুলিশ মেরে আসতে পারে, যদি বিদ্যুৎ সাব-স্টেশন এবং সেখানে বসবাসকারী শত শত মানুষকে পুড়িয়ে মেরে ফেলার চেষ্টা করতে পারে; তাহলে তাদের শক্তি নিয়ে চিন্তা করতেও আমি আতঙ্কিত বোধ করি। আমি ভয় পাই সেই মানুষটার জন্য যারা গ্রামে থাকে আর যেখানে থানা সদর থেকে পুলিশ পৌঁছাতে কমপক্ষে ২-৩ ঘন্টা লাগে।

পড়ার এবং মন্ত্যবের জন্য ধন্যবাদ। হাসি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।