অভিন্ন সময়ে সে এবং সে...

সুবোধ অবোধ এর ছবি
লিখেছেন সুবোধ অবোধ (তারিখ: শনি, ১৮/০৫/২০১৩ - ৮:০৮পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

১.

মোবাইলে খুব তীক্ষ্ণ এলার্ম বেজে ওঠে। পাশ ফিরে প্রচন্ড বিরক্তি নিয়ে কেয়া স্টপ লেখা যায়গাতে ছুঁয়ে দেয়। বিশ বছরের এই জীবনে তার কাছে সব থেকে কঠিন কাজ হচ্ছে এত সকালে ঘুম থেকে ওঠা! বুধ বারের সকালটাই এমন বিরক্তিকর! এদিন সকালে ক্লাস থাকে। ঘুম থেকে তাই অনেক আগে উঠতে হয়। আবার উঠতে ইচ্ছে করে না বলে আয়েস করে চা এ চুমুক দেয়ার সময় থাকে না। আবার চাইলেই এলার্ম বন্ধ করা গেলেও মা এর একটু পর পর ডাকাডাকি বন্ধ করা যায় না। তাই উঠতেই হয়। ক্লাসেও যেতে হয়।

আজও উঠতে হলো মায়ের ডাকেই। ঘড়িতে চোখ পড়তেই লাফিয়ে উঠলো সে! সোয়া ৭ টা বেজে গেছে। দ্রুত বাথরুমে ঢুকে যায় সে। ২০ মিনিটে ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে আসে। ড্রেস পাল্টে নেয় যতটা সম্ভব দ্রুততায়। ডাইনিং রুমে ঢুকে দেখে মা টোস্টে জেলি মেখে রেডি। কোনমতে একটা মুখে ঠেলে দিয়েই ছুট দেয় সে। মা পেছন থেকে ডেকে ওঠেন "আরেকটা নিয়ে যা" বলে। হাত নেড়ে মা কে 'না ' করতে করতে ড্রাইভারের উদ্দেশ্যে হাক ছাড়ে, "আঙ্কেল, গাড়ি বের করেন।"

গাড়িতে উঠেই ঘড়ি দেখে সে। সাতটা পঁয়তাল্লিশ। আট টায় ক্লাস। যেতে ১০ মিনিটের বেশি লাগার কথা না। আট টার আগে ক্লাসে ঢুকতেই হবে। ভার্সিটির এই স্যারটাই এত কড়াকড়ি করে টাইমিং নিয়ে। পেইন একটা!! গাড়ি থেকে নেমে হাত ঘড়ি দেখে সে। আর চার মিনিট বাকি। লিফটের ভরসায় না থেকে সে প্রায় লাফিয়ে লাফিয়ে সিঁড়ি বেয়ে উঠে যায় চতুর্থ তলায়। ক্লাসের সামনে গিয়ে হাফ ছেড়ে বাঁচে যেন। আহ!! স্যার এখনো আসেনি।

২.

ঠিক ঘড়ি ধরে ৭ টায় ই যেন মেয়ের ঘুম ভাঙতে হবে! কোন ব্যাতিক্রম নেই। আর ঘুম ভেঙ্গেই এমন চিৎকার করে ওঠে পারলে মুর্দ্দা জেগে যায়। সারাদিনের খাটুনি শেষে বাড়ি ফিরে আবার ঘরের কাজ সেরে ঘুমাতে ঘুমাতে যথেষ্ঠ দেড়ি হয়ে গেলেও তার মেয়ে সেটা বুঝবে কেন? এমনিতেই সে তার মা কে সারাদিন কাছে পায় না। সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরার পর কেমন একটা অভিমান মাখা দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে তারপর কোলে আসে। বুকের মধ্যে মুখ গুঁজে দিয়ে কি সব বলতে চায় যেন তার ভাষায়! হয়তো সারাদিন তাকে ছেড়ে থাকার কষ্টের কথা জানিয়ে অনুযোগ করে। সে কি আর বাস্তবতা বোঝে? সে চায় মা যেন কাছে থাকে সবসময়। আছিয়া তারাতারি পাশ ফিরে মেয়ে কে বুকে নেয়। পিঠ চাপড়ে দিয়ে শান্ত করার চেষ্টা করে। পারেও...

মেয়ে কে কোলে নিয়ে ঘর থেকে বের হয় সে। মা উঠেছে আগেই,সেই ফজরের সময়। মায়ের কাছে মেয়েকে দিয়ে সে হাতমুখ ধুতে ঢুকে যায়। তারাতারি করেই বের হতে হয়,সময় বেশি নেই। রুমে ঢুকে মেয়েটার সারাদিনের খাবারের জন্য বুকের দুধ ছেঁচে রাখে। যাওয়ার জন্য বের হতেই মা বলে-“কাইল না কইলি,যাবি না আর ওইখানে কামে,বিল্ডিং না ফাইটা গেছে! তা যাইতাছস যে আবার?” মেয়েটা ঝাপ দিয়ে কোলে আসে,মায়ের দখল নেয়। মেয়েকে আদর করতে করতে সে বলে-“রাইতে ফ্লোর ম্যানেজার ফোন দিছিলো,যাইতে হইবো,নাইলে বেতন দিব না। কিছুই নাকি হয় নাই,খালি পেলাস্টারে ক্ষইয়া গেছে। কিছু হইবো না।”
-“আমার য্যান তাও কিরম লাগতাছে! ‘কু’ ডাক ডাকে মনে! না গেলে হয় না?”
-“না,মা। যাইতেই হইব। বেতন দিব না কইছে ,খামু কি তাইলে? আর তোমার মনে ‘সু’ ডাক ডাইকাই কি লাভ ডা হইছে কবে হুনি? গরীব মাইনসের আবার ‘কু’ ডাক ‘সু’ ডাক!”
মেয়েকে মার কাছে দেয়ার সময় মেয়ে তার গলা আকড়ে ধরে,বুঝে গেছে যে মা তার সারাদিনের জন্য বাইরে যাচ্ছে প্রতিদিনের মতই। ছাড়তে চাইবে কেন? মেয়েকে তবু জোর করেই মায়ের কাছে দিয়ে দেয় সে। বুকটার ভেতর যেন কেমন অস্থিরতা ভড় করে! চিৎকার করে কেঁদে ওঠে মেয়েটা নানীর কোলে গিয়েই। আছিয়া দ্রুত পা চালায় মেয়ের চোখের আড়াল হতে। আড়াল হওয়ার আগ মুহুর্তে পেছনে ফিরে তাকায়। মেয়েটা হাত বাড়িয়ে দিয়ে আকুল হয়ে কাঁদছে... তার চোখ ঝাপসা হয়ে আসে,প্রতিদিনের মতই... হাতে বেশি সময় নেই,দ্রুত পা চালায় সে। ৮ টা বাজার আগেই ঢুকতে হবে-ফ্লোর ম্যানেজারের কড়া হুকুম। সবাই আজ কাজ করবে না বলায় আজ আরও বেশি কড়াকড়ি!! উঁচু ভবনটার সামনে এসেই তার যেন কেমন বুকটা কাঁপে। একটু দাঁড়িয়ে কি যেন ভাবে। তারপর আবার দ্রুত পায়ে উঠে যায় ৬ তলায়...

৩.

ভয়াবহ রকমের বিরক্তিকর ক্লাসে ঘুম আটকে রাখা দুস্কর! ঝিমুনি যেন নিজে থেকেই চলে আসে। আবার এই স্যারের ক্লাসে ঝিমানো প্রচন্ড রিস্কি। টের পেলে রক্ষা নেই! এমন ভাবে অপমান করেন!! ভাবতেই ঝিমুনি কেঁটে গেল কেয়া'র । আজ অপুটাও আসেনি। ও না আসলে কেমন খালি খালি লাগে আজকাল। ক্লাসে বসে থাকা টা কয়েক গুণ কঠিন হয়ে যায়! আবার আসলেও ক্লাসে মনোযোগ থাকেনা! ব্যাপারটা দিনদিন বাড়ছে। কোন ভাবেই ঠেকানো যাচ্ছে না। অপুটাও যেন কেমন! সব বুঝেও যেন কিচ্ছু বোঝেনা! সব কিছুতেই কেমন হেয়ালি!!

বিরক্তি কাঁটানোর জন্য কেয়া খুব সাবধানে স্মার্টফোন বের করে। স্যার দেখলে ঝামেলা আছে! কিছুক্ষণ ফেসবুকে ঘোরাঘুরি করে। নাহ, এখানেও অপুর পাত্তা নেই। কই গেল সে, আজব!? ওদিকে স্যারের একঘেয়ে লেকচার চলছেই! বাংলা একটা নিউজ সাইটে ঢুকে সে! শীর্ষ সংবাদের একটা নিউজে চোখ পড়তেই তার বুক কেঁপে উঠে! অস্ফুট স্বরে বলে উঠে - ও মাই গড!!

হাত কাঁপছে তার। ভাল করে দেখে আবার। নাহ, চোখের ভুল না। তাদের বিশ্ববিদ্যালয় এর নাম নিয়ে একটি সংবাদ যেখানে অপুর ছবিও দেয়া - নিচে লেখা ইয়াবা সহ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র আটক!! এর ঠিক পাশেই আরেকটি ভয়াবহ খবর ছাপা হয়েছে!!! কিন্তু, সেটা তার চোখই পড়ে না। তার চারপাশ কেমন যেন অন্ধকার লাগে। স্যারের লেকচার যেন দূর থেকে ভেসে আসা আওয়াজের মত লাগে! ক্লাসের বাকি দশ মিনিট যেন আর কাটাতে চায় না!!!

৪.

আজ অনেকেই আসেনি। বেশ কিছু মেশিন বন্ধ। ঢুকতে গিয়েই দেখা হয় মকবুলের সাথে।
হাসি মুখে সে জিজ্ঞেস করে আছিয়া কে, "আইছস? আমি তো ভাবছিলাম আইবি না।"
-"না আইসা কি করুম? ফোলোর ম্যানেজার ফোন দিয়া কয় না আইলে বেতন দিবো না! "
-"হ,আমারেও তাই কইছে। আল্লাহ ভরসা! গরীবগো এত ডড়ায়া কি হইবো।"
আছিয়া "হ ভাই " বলে তার মেশিনের সামনে গিয়ে বসে। এই মকবুল এর কাছে সে নানা দিক দিয়ে কৃতজ্ঞ। স্বামী মারা যাবার পর যখন বাচ্চা নিয়ে চোখে মুখে অন্ধকার দেখা শুরু করেছিল এই মকবুল ভাই ই তখন তাকে আর তার মা কে সহ ঢাকায় নিয়ে এসে গার্মেন্টস এ চাকরি দেয়। নাহ্‌,সে কখনো তার অসহায়ত্বের সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করেনি। বরং বড় ভাইয়ের মত আগলে রেখেছিলেন বিভিন্ন ঝামেলা থেকে। অল্প বয়সী বিধবাদের যে কত রকম বাঁধা বিপত্তি পেড়িয়ে চলতে হয় তা শুধু তারাই জানে। এই গার্মেন্টসে কাজে যোগ দেয়ার পর থেকে তাকে কম ঝক্কি পোহাতে হয় নি। সাধারন শ্রমিক থেকে শুরু করে ম্যানেজার,বিভিন্ন জন বিভিন্ন সময়ে লালসার হাত বাড়াতে চেয়েছে বিভিন্ন ছলে। কেউ বা সহমর্মিতার ছলে,কেউ বা প্রভাব খাটিয়ে। প্রতিবারই ছায়া হয়ে দাঁড়িয়েছেন এই মকবুল ভাই। সহ শ্রমিক না,আছিয়া খুবই অবাক এবং শঙ্কিত হয়েছিল যখন ম্যানেজারের কুমতলব জানতে পারল-এত বড়লোক মানুষ,তার নজরও যদি এমন নিচু থাকে তাহলে উপায় কি?! ভয় পেয়ে না পেরে সে সব বলেছিল মকবুল ভাই এর বউ কে। সে আশ্বস্ত করেছিল- “ট্যাকা থাকলেই বড়লোক হয় না রে বইন,বড় মন লাগে। এই ছোটলোক গুলান ফাউ পাইলে আলকাতরাও খায়,আর তুই তো যুয়ান মাইয়া। ডড়াইছ না,তোর ভাইরে কমুনে আমি।” তারপর মকবুল ভাই ই শ্রমিক নেতা কে বলে কিভাবে কিভাবে যেন সব সামলে নিয়েছিল। কয়েকদিন খুব ভয়ে ছিল সে। মকবুল ভাইয়ের ঋণ সে কোনদিনও শোধ করতে পারবে না।

কিছুক্ষন পর বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার সাথে সাথেই ঘরঘর শব্দে জেনারেটর চালু হয়। জেনারেটর চালু হলে একটা ঝিম ঝিম করা কাঁপুনি থাকে সবসময়ই। আজ যেন একটু বেশিই মনে হচ্ছে কাঁপুনি,নাকি মনের ভুল! এটা যে মনের ভুল না,সেটা বোঝার জন্য আছিয়া এক মুহুর্ত সময় পায় মোটে। তারপর জেনারেটরের আওয়াজ ছাপিয়ে বিকট শব্দে পুরো আকাশ যেন ভেঙ্গে পড়ে। কিছু বোঝার আগেই কাঁধের উপর তীব্র আঘাতে সে ছিটকে যায়। প্রচন্ড দম বন্ধ করা ধুলায় নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে যেন। চারিদিক থেকে একটা বিদঘুটে অন্ধকার ঘিরে ধরে! চারপাশের প্রচন্ড চিৎকার আর গোঙানীর আওয়াজ যেন হঠাৎ দূরে মিলিয়ে যেতে থাকে!! তীব্র যন্ত্রনা হঠাৎ করেই কেমন অবসাদে রূপ নিয়ে সে তলিয়ে যেতে থাকে গাঢ় অন্ধকারে...

৫.

শেষ বিকেলে ছাদে উঠার সাথে সাথেই কোণের টবে বেড়ে ওঠা গোলাপ যেন একটা হাসি দিয়ে অভ্যর্থনা জানালো। আজ ঠিক কতদিন পর যে ছাদে উঠলো কেয়ার নিজেরই মনে নেই। অথচ একটা সময় প্রত্যেকদিন ছাদে আসাটা ছিলো নিয়মের মত। ভার্সিটিতে ভর্তি হবার পর তেমন আর আসা হয় না। একসময়কার পরম বন্ধু এই গাছগুলোর যায়গায় স্থান করে নিয়েছে বড় হয়ে যাওয়ায় পাওয়া স্বাধীন চলাফেরা। পড়ালেখার ব্যাস্ততা আর বন্ধুদের সাথে আড্ডাবাজিতে একা একা ছাদে আসার সময় খুব একটা হয়ই না। বেশ কিছুদিন আগে ছাদে শেষ বার যেদিন উঠেছিল সেদিন বেশ কয়েকজন বন্ধুও ছিল।সাথে অপুও ছিল। ছাদের ওই ডান দিকটাতে বসে অনেকক্ষণ গল্প করেছিল তারা। হাসি ঠাট্টা জমেছিল বেশ। বারবার চেষ্টা করেও হাত ধরতে না পারায় কষ্টও লেগেছিল! আর কি কখনো হাত ধরা হবে?

আজ সকালে ক্লাস থেকে বেড়িয়েই সে ছুটেছিল থানায়। কোন লাভ নেই জেনেও কিছু না ভেবেই গিয়েছিল। থানার দারোগা প্রথমে বাঁকা ভাবে তাকালেও তার বাবার পরিচয় শুনে যথেষ্ট সমীহ নিয়ে কথা বলেছে। নাহ,অপুর সাথে তাকে দেখা করতে দেয় নি, বরং বোনাস হিসেবে কিছু উপদেশ বাণী গিলিয়েছে বিচ্ছিরি এক কাপ চা এর সাথে। হতাশ হয়েই তাকে ফিরে আসতে হয়েছে।

ছাদের একপাশে একটা দোলনা আছে। চুপচাপ বসে থাকায় স্মৃতি গুলো যেন একে একে হামলে পড়ে। সন্ধ্যা পার হয়ে গিয়েছে অনেকক্ষণ আগে। পুর্নিমার চাঁদ তার পুর্নাঙ্গ রূপে ততক্ষণে আবির্ভূত হয়ে গেছে। ঘোর লাগা দৃষ্টিতে এক মনে চাঁদের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে সে স্মৃতির গভীরে তলিয়ে যেতে থাকে...

৬.

ঠিক কতক্ষন পর আছিয়ার জ্ঞান ফিরে সে নিজেও জানে না। জানার উপায়ও নেই। চারিদিকে কেমন একটা বিদঘুটে অন্ধকার! পাশ ফিরতে গিয়ে নিজের অজানতেই কঁকিয়ে ওঠে সে। বাম পায়ের উপর কিছু একটা চেপে আছে। নাড়াচাড়া তো দূরের ব্যাপার প্রচন্ড ব্যাথায় সে যেন পুরোপুরি স্থীর হয়ে যায়।একটু পর ধীরে ধীরে ডান পা টা নাড়ানোর চেষ্টা করে। নাহ্‌,এটার উপর কিছু পড়ে নি। ডান হাত নাড়ে সে। প্রচন্ড কষ্টের মধ্যেও যেন একটু খুশি হয় সে,ঠিক আছে হাত টা। বাম হাতে ব্যাথা আছে,কিন্তু তেমনটা না। কাঁধের কাছটাতে একটা যন্ত্রনা হচ্ছে,তবে বাম পায়ের যন্ত্রনার জন্য সব ব্যাথাকেই যেন কম মনে হচ্ছে। পড়নের পায়জামা আর গায়ের জামার পিঠের দিকটায় কেমন স্যাঁতস্যাঁতে হয়ে ভিজে আছে। হাত দিয়ে কেমন আঠালো লাগে। বুঝতে বাকি থাকে না যে এটা তারই ক্ষত থেকে বেড় হওয়া রক্ত। অজান্তেই চোঁখ বেয়ে কান্না নামে।

হঠাৎই তার দেড় বছর বয়সী মেয়ের কথা মনে হয়। এখন কত বাজে? তার মেয়ে হয়তো কেঁদে চোঁখ ভাসাচ্ছে সে না ফেরায়। সে কি আর আদৌ ফিরে যেতে পারবে তার মেয়ের কাছে? তার মেয়ে সারাদিন তাকে কাছে না পাওয়ার অভিমান কার কাছে জানাবে? কার বুকে নাক,মুখে ঘষে ঘষে অনুযোগ করবে? মনে হতেই তার গলার কাছে কান্না দলা পাকিয়ে ওঠে। মেয়ের জন্য ছেঁচে রেখে আসা দুধ বোধয় শেষ হয়ে গিয়েছে। ঘরে তো টাকাও নেই। কি খাবে তার মেয়ে। মায়ের ওষুধও শেষ। সে হঠাৎ প্রচন্ড তাড়না অনুভব করে নিজের ভেতরে। শরীরটাকে টেনে তুলতে গিয়ে তীক্ষ্ণ ব্যাথায় গলা দিয়ে চিৎকার বেড় হয়ে আসে অজান্তেই। অসহায় ভাবে ফুঁপিয়ে ওঠে। সর্বশক্তি দিয়ে হঠাৎ চিৎকার করতে থাকে, “বাঁচান,বাঁচান,কেউ আছেন? বাঁচান...” খুব অস্ফুট একটা গোঙানী যেন ভেসে আসে। তারই মত কোন দূর্ভাগা হবে। আবার চিৎকার করে সে,আবার... কোন আওয়াজ আর আসে না। হঠাৎ তীব্র তৃষ্ণায় যেন গলা কাঠ হয়ে আসে। বিড়বিড় করে দোয়া পড়তে থাকে সে।

বাম পায়ের ব্যাথার যায়গাটাতে আবার রক্ত চোঁয়ানো শুরু হয়েছে নাড়াচাড়ার কারণে। সারা শরীরের মাংস পেশীতে হঠাৎ করেই যেন টান শুরু হয়! সাথে দম বন্ধ হয়ে আসে। বাতাসের জন্য জোড়ে জোড়ে নিঃশ্বাস টানতে থাকে সে,তবুও যেন বাতাস খুঁজে পায় না। ঠিক তখনই হঠাৎ করে তার খুব চোট বেলার কতা মনে পড়ে – একবার খুব জ্বর হয়েছিল,উথাল পাথাল জ্বর। প্রায় এক মাস স্থায়ী ছিল সেই জ্বর। শেষের দিকে গিয়ে সবাই ধরেই নিয়েছিল যে সে আর বাঁচবে না। তখনও এমন কষ্ট হত। দম বন্ধ হয়ে আসত মাঝে মাঝে। মনে হত আসলেই মরে যাচ্ছে। হঠাৎ করেই মৃত্যু ভয় তাকে ঘিরে ধরে। প্রচন্ড অস্থিরতার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে দম বন্ধ করা অনুভূতি। সমস্ত শরীর হঠাৎ শক্ত হতে হতে আবার ছেড়ে দেয়,সব কষ্ট,ব্যাথা কেমন মিলিয়ে যেতে যেতে যেন হাওয়ায় ভেসে যায়...

[পরিশিষ্টঃ এই গল্প সংগ্রামী আছিয়া এবং দুঃখ বিলাসিনী কেয়ার একই সময়ের কিছু ঘটনা ও অনুভূতির কাল্পনিক বর্ণনা। চরিত্র গুলোও কাল্পনিক। বাস্তবের কারো সাথে মিলে গেলে আন্তরিক ভাবে দুঃখিত]

সুবোধ অবোধ


মন্তব্য

সুলতানা সাদিয়া এর ছবি

এতদিন পর লেখাটির প্রথম পাঠক মনে হচ্ছে আমিই। তবে পাঠক হিসেবে ঠকিনি মনে হচ্ছে।

-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু

আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে

সুবোধ অবোধ এর ছবি

ধন্যবাদ। হাসি

মুক্তমন এর ছবি

এত সুন্দর পোস্ট এ একটিমাত্র কমেন্ট! অবাক হলাম৷সাদিয়া'দির সাথে একমত৷

সুবোধ অবোধ এর ছবি

ধন্যবাদ। হাসি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।