আফ্রিকা ছেড়েছি বেশ কমাস হল। কাজের ফাঁকে আর নানা ব্যস্ততার মাঝে প্রকৃতি আর মানুষের গড়ে তোলা নানা মুহূর্তরাই ধরা দিয়েছে ফেলে আসা দিন গুলোতে। অনেক কিছু আজও রয়েছে এই মনের ফ্রেমে বন্দী আর যা পেরেছি তার ছিটেফোঁটা ধরে রাখতে চেষ্টা করেছি ক্যামেরার ফ্রেমে।
কোন এক বিকেলে গাড়ি চেপে ছুটেছিলাম দূর কোন এক পূর্ব নির্ধারিত গন্তব্যের পানে। রাস্তার দুপাশ দিয়ে সারি সারি গাছ , বিশাল দেহের ব্যাপ্তি নিয়ে ছড়িয়ে থাকা পাহাড়ের মাথা দিয়ে উঁকি দেয়া আকাশ তখন যেন আমায় ডাকছে। আর ওপাশে নীলাকাশ ফেড়ে রবি মামা যেন কালো মেঘের ভেতর দিয়ে পৃথিবীর কোন এক প্রান্তে যাওয়ার অবিরাম চেষ্টায় ব্যস্ত। মেঘ আর রোদের এই উষ্ণ শীতল আলিঙ্গন যেন মনকে এক শান্তির আভায় ভিজিয়ে দিয়ে যায়। তখন কেন জানি মনে হল আমার যাত্রার তো নির্দিষ্ট একটা গন্তব্য আছে কিন্তু মাথার উপর ভেসে যাওয়া এই মেঘ ভেদী সূর্য কিরণের কি সঠিক কোন গন্তব্য ছিল।
(১)
যেতে যেতেই বুজে আসা চোখের পাতায় টান ধরিয়ে দিল শৃঙ্খলাবদ্ধ তুলার বাগান। নেমেই ছিঁড়ে ফেললাম তুলার কিছু কণা। তারপর খণ্ড খণ্ড সাদা মেঘের ভাঁজে শুভ্র তুলাদের ভাসিয়ে দেয়ার চেষ্টা আর কী।
(২)
যে কোন প্রাণীর খাবার সংগ্রহ আর তা ভোজনের দৃশ্য যেন সব সময় একটা বিশেষ মুহূর্ত। আর তা যদি হয় প্রজাপতির মধু সংগ্রহের মত কিছু তাহলে তো কথায় নেই। কেন জানি আমার দোর গোঁড়াই এদের ছিল নিত্য আসা যাওয়া। আমার বাগান ভরা ফুল দিয়েই এরা মিটিয়ে যেত সেই ভোজন বিলাস।
(৩)
আফ্রিকায় বিশেষত আইভরি কোস্টে দেখা যায় যৌথ পরিবার প্রথা। বেশ কয়েকটি প্রজন্ম অথচ তারা যুগের পর যুগ একই চালার নিচে করে যাই বসবাস। তেমনই ধরা দিল একঝাঁক কচি আর এক বৃদ্ধা ।
(৪)
শিশুরা সর্বদায় অবুঝ আর নিষ্পাপ। যে কোন সময় যে কোন কালের জন্য এ যেন শাশ্বত । তেমনই এক নিষ্কণ্টক, সরল কিছু নিষ্পাপ অবয়বে এসেছিল এই দুই বোন। পৃথিবীর চারপ্রান্তে এত সহিংসতা , রক্তপাত আর হানাহানি থাকলেও পৃথিবীর পৃষ্ঠ আঁকড়ে বেঁচে থাকার প্রেরণা আজও এইসব সরল শিশু মুখ।
(৫)
একজন মায়ের কাছে তার সন্তান সবসময় সর্ব শ্রেষ্ঠ। নানা প্রতিকূলতার মাঝেও সন্তানদের আগলে রাখে তার বাবা মা। আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে চলছে যুদ্ধ আর রক্তপাত। মায়েরা হারাচ্ছে তাদের সর্বশ্রেষ্ঠ সন্তানদের। ভাবতেই কষ্ট লাগে এইরকম মায়াবী চোখের উঁকি দেয়া নিষ্পাপ হাসি কিভাবে নিষ্প্রভ হয়ে যায় বুলেটের আঘাতে।
(৬)
অথচ কি দারুণ আর ফুটফুটে একটি সন্তান তার বাবার কোলে।
(৭)
আফ্রিকার একটি শিশু বেড়ে ওঠে নানা প্রতিকূলতা আর সংগ্রামের মাঝে। নানা ঘাত প্রতিঘাতে বেড়ে ওঠে বলে ওদের চাহিদাও অনেক কম। ওরা অল্পতেই যেন অনেক কিছু খুঁজে পায়। এই ছবিটি যেন একই সাথে ক্ষুধা, তৃপ্তি আর ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ।
(৮)
আবার অনেক সময় শিশুসুলভ দুষ্টামির আনন্দে মাতিয়ে দেয় এইসব ভবিষ্যতের কাণ্ডারিরাই।
(৯)
শিশুশ্রম এখানেও আছে। আর যে কারণেই সেই সকাল বেলা মাঠে গিয়ে সাঁঝ বেলায় ঘরে ফেরার তাড়া এই ছোট্ট ছেলেটিরও।
(১০)
নানা ভাবেই কেটে যায় ছেলেবেলা। অনেক কিছুই হবার স্বপ্নে নানা কিছু করেও ফেলা যায় শৈশবে। আবার অনেক কিছুই হয়ে যাই একান্তই নিজের অজান্তে , যেমনটি হয়েছে এই ব্যান্ড অব ব্রাদার্সের কজন ।
(১১)
আবার অনেকেই ধরা দেয় যৌবন আর তারুণ্যের প্রতীক হয়ে।
(১২)
জীবন কিন্তু থেমে নেই। নানা পেশা আর নানা বর্ণে যেন বর্ণীল মানুষের জীবন। যেমনটি এই রাখাল বালকের। কাঁধে একটি পোটলা যেখানে আছে কিছু কাপড়, সাথে চামড়ার থলির তলানিতে জমানো সামান্য পানি আর গরুকে সোজা পথে আনবার লম্বা ছড়ি - এটাও জীবন ।
(১৪)
আফ্রিকান কালো মানুষদের সব সময় ছবি তোলার ব্যাপারে কেমন যেন ঘিন ঘিন একটা ভাব রয়েছে। বাচ্চা ছেলে মেয়ে ছাড়া সহসায় কেউ ছবি তুলতে দেয় না । তাই কাউকে ডেকে দাড় করিয়ে তার ছবি নেয়ার চেষ্টা আমার কাছে রীতিমত দুঃসাহসই বলবো। কিন্তু এমন এক মাদকতা ভরা চাহনি দিয়ে যে তাকাতে পারে তার ছবি না তুলে কি থাকা যায়।
(১৫)
নেশাতুর চোখ কিন্তু সব সময় ধরা দেয় না অথচ তারুণ্য আর যৌবনের জয়ধ্বনির দ্যোতনা যেন মামুলী ব্যাপার এখানে। যৌবন আর তারুণ্যের জোয়ার যেন কোন বাঁধ মানেনা এখানকার তরুণদের।
(১৬)
(১৭)
যৌবনের রং ছেড়ে দিনের আলো একসময় গোধূলির আলোয় মিলিয়ে যায়। অস্তমিত সূর্য কেন জানি অন্তিম সেই মুহূর্তের কথায় মনে করিয়ে দেয়।
(১৮)
গোধূলির এই মন খারাপ করা বেলায় কেউ না কেউ মনে রং দিয়ে যাবে সব সময়। তা নাহলে জীবন তো এই গোধূলির আলোয় মিলিয়ে যেত, এগিয়ে যাওয়া হত না আগামী দিনে ।
(১৯)
(লেখাটি রাতঃস্মরণীয় দা এর জন্য , আফ্রিকা নিয়ে যিনি সর্বদায় আগ্রহী )
অমি_বন্যা
মন্তব্য
সচলায়তনে রেজিষ্ট্রেশন করে থাকলে contact এট সচল বরাবর ইমেইল অ্যাড্রেসটি জানান প্লিজ।
আমার রেজিস্ট্রেশন করা ইমেইল এড্রেস
এ পাঠিয়ে দিয়েছি মাহবুব ভাই। মেইলটি গিয়েছে কিনা কনফার্ম করলে ভালো হত। আমি রেজিস্ট্রেশন করেছি খুব সম্ভবত এপ্রিল ২০১২ সালে।
৮ নম্বর শিশুটির হার্নিয়া আছে মনে হলো।
এই ধরনের বহু শিশুই রয়েছে সেখানে।
দারুণ সব ছবি। আইভরি কোস্টের বাচ্চারা ঠিক কোন বয়েসে স্কুলে যায়? কী ধরনের স্কুলে যায়?
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
আইভরি কোস্টে এই মুহূর্তে শিক্ষা ব্যবস্থা অতটা সুদূরপ্রসারী না। সব জায়গায় আবার স্কুল নেই। যেখানে আছে সেখানে উপস্থিতি অনেক কম। আমাদের মতই ৫-৬ বছর বয়সেই বাচ্চারা প্রাইমারী স্কুলে যায় তবে শিক্ষাদানের ব্যাপারে ঠিক সেইভাবে বাবা মায়েরা সচেতন হয়ে ওঠেনি।
দেশে চলে গেছেন নাকি???
এবারের ছবিগুলোর সাবজেক্ট দারুণ, কিন্তু কালারে কেন জানি মন ভরল না, আপনার আগের চমৎকার ছবিরগুলোর কারণেই হবে।
facebook
চলে এসেছি গত জানুয়ারি মাসে। আমার কম দামী সাইবার সটে যা আসে আর কি। তবে আপনার মত একখান কামরা কিনতে মঞ্চায়।
লেখা ও ছবি চমৎকার ।
মন্তব্যের জন্য এই নাও
ছবির নাম্বারিং এর জন্য মনে হচ্ছে আগে ছবি তারপর ক্যাপশন
ঠিক বলেছেন স্যাম দা। এরপর আর হবে না
শিশুদের এই অসাধারণ হাসির প্রকাশ সব দেশেই মনে হয় একরকম....আফ্রিকায় নানা ধরনের ট্যাবু (Taboo), রীতি-নীতি, উৎসব প্রচলিত, ১৯ নম্বর ছবির মুখোশ আর সাজ কি সেরকম কোন কিছুর সাথে সম্পৃক্ত?
ছবি ও কথা চলতে থাকুক....
তেমন কিছু না। এক বিকেলে আটলান্টিক পাড়ে এক ছোট্ট বন্ধুর ক্ষণিকের জন্য ভ্য় দেখানর চেষ্টা আর কি। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ আপনাকে।
তোমার এই ঔদার্হ্যে ধন্যবাদ জানানোর দুঃসাহস আর না করি। ঠিকই বলেছো, আফ্রিকা নিয়ে আমার আগ্রহ সীমাহীন এবং সেন কারনেই আফ্রিকা নিয়ে লেখাগুলো পড়তে ভালোবাসি। ছবিগুলো চমৎকার হয়েছে। আফ্রিকা নিয়ে আরও লেখা আসুক।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
নতুন মন্তব্য করুন