ছেলেটির নাম সান্তিয়াগো। ভেড়ার পাল নিয়ে যখন সে পরিত্যক্ত গীর্জার কাছে পৌঁছালো তখন গোধূলীর আবছায়া নেমে এসেছে চরাচরে। কালের আঁচড়ে জীর্ণ গীর্জার ছাদ ধ্বসে পড়েছে অনেক আগেই। এককালে যেখানে তোষাখানা ছিল, এখন সেখানে সগর্বে মাথা ঊঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে একটি সুবিশাল সাইক্যামোর গাছ।
এখানেই রাত কাটানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ছেলেটি। শেষ ভেড়াটিকে বিধ্বস্ত ফটক দিয়ে ভেতরে এনে কয়েকটি তক্তা দিয়ে ফটকটি ভালো করে আটকে দিলো সে, যেন রাতের বেলা কোন ভেড়া বেরিয়ে যেতে না পারে। ছেলেটি জানে এই এলাকায় কোন নেকড়ে নেই, কিন্তু কোন ভেড়া যদি রাতে বের হয়ে গিয়ে হারিয়ে যায় তাহলে তাকে পরের সারাটি দিন ধরে ভেড়াটিকে খুঁজে বের করতে হবে।
গায়ের জ্যাকেট খুলে মেঝের একাংশের ধুলো ঝেড়ে নিয়ে শুয়ে পড়ল ছেলেটি। সদ্য পড়ে শেষ করা বইটি হল তার মাথার বালিশ। বইয়ে মাথা ঠেকিয়ে সে নিজেকে স্মরণ করিয়ে দিল এখন থেকে আরো মোটা বই পড়া শুরু উচিৎ - মোটা বই বেশি দিন ধরে পড়া যায় আর এগুলো মাথায় দিতেও আরাম।
ঘুম ভাংতে সে চেয়ে দেখল এখনও চারিদিক আঁধার হয়ে আছে। ভেঙে পড়া ছাদের ফাঁক দিয়ে তারা দেখা যাচ্ছে।
আমি আরো কিছুক্ষন ঘুমাতে চেয়েছিলাম, আক্ষেপের সাথে ভাবলো ছেলেটি। এক সপ্তাহ আগে যে স্বপ্নটি দেখেছিলো, সেই একই স্বপ্ন দেখেছে সে আজ, এবং আজ আবারও স্বপ্ন শেষ হওয়ার আগেই তার ঘুম ভেঙে গেছে।
সে উঠে পড়ল, এবং তার লাঠি হাতে নিয়ে তখনও ঘুমন্ত ভেড়াদেরকে জাগাতে শুরু করল। সে খেয়াল করে দেখেছে যে সে ঘুম থেকে ওঠা মাত্রই তার পালের বেশীরভাগ ভেড়া নড়াচড়া শুরু করে দেয়। অনেকটা যেন কোন রহস্যময় শক্তি তার জীবনের সাথে তার ভেড়াগুলির জীবনকে বেঁধে রেখেছে। এই ভেড়াগুলিকে নিয়ে সে বিগত দুইটি বছর ধরে পথে প্রান্তরে ঘুরে বেড়িয়েছে, খুঁজে ফিরেছে ঘাস আর পানি। “এরা আমার সাথে এতটাই অভ্যস্থ যে আমার রোজকার রুটিন তারা আত্মস্থ করে ফেলেছে” আপনমনে বিড়বিড় করে বললো সে। তারপরই তার মনে হলো এটা আসলে অপরদিক থেকেও সত্য, আসলে সে-ই ওদের রোজকার রুটিনে অভ্যস্থ হয়ে গেছে!
কিন্তু তারপরও কিছু ভেড়া আছে যাদের ঘুম ভাঙাতে বেশ কিছু সময় লাগে। একটা একটা করে এই ভেড়াগুলোকে লাঠি দিয়ে খোঁচা দিয়ে জাগালো সে – খোঁচানোর সময়ে প্রত্যেকের নাম ধরে ধরে ডাকলো। সে সবসময় বিশ্বাস করে এসেছে ভেড়াগুলো তার কথা বুঝতে পারে। সে তাদেরকে তার বইয়ের আকর্ষনীয় অংশগুলো পড়ে শুনিয়েছে, কখনও বা উন্মুক্ত প্রান্তরে ঘুরে বেড়ানো একজন মেষপালকের সুখ দুঃখের কথা কিংবা একাকীত্বের কথা শুনিয়েছে। কখনও কখনও পেরিয়ে আসা কোন গ্রামে যা যা দেখেছে তার উপরে মন্তব্য করেছে।
কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে সে ওদের সাথে কেবলমাত্র একটি বিষয়েই কথা বলেছে – মেয়েটির বিষয়ে। মেয়েটি একজন পণ্য ব্যবসায়ীর কন্যা। তারা যে গ্রামে বাস করে সেখানে ছেলেটি তার ভেড়ার পাল সহ আর চারদিনের মধ্যে পৌঁছুবে। সে এই গ্রামে এর আগে মাত্র একবারই গেছে – গত বছরে। সে গ্রামে ব্যবসায়ীটির একটি দোকান আছে। ব্যবসায়ী ভেড়ার লোম ছাঁটার সময়ে নিজে উপস্থিত থাকে যেন তাকে ঠকতে না হয়। ছেলেটি তার এক বন্ধুর মারফত ব্যবসায়ীর কথা জানতে পেরেছিলো। তারপর সে তার ভেড়ার পাল নিয়ে যায় তার দোকানে।
- হিজিবিজবিজ
মন্তব্য
লেখা ভালো লাগলো, তবে কিছু মন্তব্য:
১। একটু বেশী ছোট হয়ে গেছে মনে হয়। পরের কিস্তিটা বড় করুন।
২। পাউলো নাকি পাওলো?
৩। বর্তমানে বাজারে পাওয়া একই উপন্যাসের অনুবাদগুলোর তুলনায় এটার মান বেশ ভালো, তবে প্রথম প্যারাটায় যে টান ছিলো, তা পরে এসে একটু স্তিমিত হয়ে গেছে। আশা করছি পরবর্তী পর্বগুলো শুরুর মানটা ধরে রাখবে।
৪। অনুবাদ করতে করতে মাঝপথে হারিয়ে যাবেন না। আপনার লেখার মান ভালো - পুরো বইটা পড়ার অপেক্ষায় থাকলাম।
ধন্যবাদ পড়ার জন্য। চেষ্টা করবো।
খুব ভাল লাগল
ধন্যবাদ
____________________________
It was pretty good, keep up the good work. And I hope you do justice to the rest of the book. Cheers!
অণুপ্রেরণাদায়ী মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। চেষ্টা করবো
____________________________
নতুন মন্তব্য করুন