ঝড়!!!!

সুবোধ অবোধ এর ছবি
লিখেছেন সুবোধ অবোধ (তারিখ: শুক্র, ৩১/০৫/২০১৩ - ৮:৪৫অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আজ সারাদিনই টিপটিপ বৃষ্টি। ঝড়ের লক্ষণ ছিল না মোটেও। রাত সারে ৯ টায় কোথা থেকে যেন ঝড়ো বাতাস এসে হামলে পড়লো! সে কি বাতাস!! আছি পাঁচ তলায় এবং বাসার দক্ষিণ ও পশ্চিম দিকটা ফাঁকা,কাছাকাছি বিল্ডিং নেই। শোঁ শোঁ আওয়াজ এসে যেন আছড়ে পড়ছে! কত যে ক্ষোভ তার!!

আমার সাথে ঝড়ের বেশ সখ্যতা আছে! ছোটবেলা থেকে শুরু করে ঝড়ের কবলে পড়েছি বেশ কয়েকবার। ছেলেবেলা কেটেছে টিনের ঘড়ে। তাই ঝড় বৃষ্টি অনুভব করেছিও নেহাত কম নয়। প্রথম যেবার প্রচন্ড ঝড়ে বাসার বাইরে ছিলাম সেই ঘটনা টা বলি –

ক্লাস সিক্স এ পড়ি। আমার বাসা থেকে হাই স্কুল এর দূরত্ব ৫/৬ মিনিতের হাঁটা পথ সাধারণ লোকদের জন্য। আর আমার মত তৎকালিন চেংরা পোলাপান,যারা একটু হাঁটলে আরেকটু দৌড়ায় তাদের জন্য ৩/৪ মিনিটের বেশি লাগে না। ক্লাস চলাকালিন সময়ে,বেলা সাড়ে ১১টা ১২ টার দিকে হঠাৎ ই কালো মেঘে আকাশ ছেয়ে গেল। কালবৈশাখি ঝড় সামনা সামনি দেখার অভিজ্ঞতা যাদের আছে তাদের জানার কথা যে কত অল্প সময়ের মধ্যে আকাশ কালো করে ঝড় শুরু হয়। মফস্বলের স্কুল,নামে পাইলট স্কুল হলেও কাজে কর্মে,রুল্‌স রেগুলেশনে খুব বেশি কড়াকড়ি ছিল না। ক্লাস টিচার ছুটি দিবেন না দিবেন না করতে করতেই দেখি অন্যান্য ক্লাস থেকে ছাত্ররা সব বেড় হয়ে দে ছুট! আমাদের ক্লাস টিচার কিছু বলার আগেই আমাদের ক্লাস থেকেও কয়েকজন বেড় হয়ে দিল দৌড়। যা হবার তাই হল-যার যার মত বেড় হয়ে যে যেমন পারে দৌড়াতে লাগল বাড়ির দিকে। আমার ভাই একই স্কুলে আমার থেকে ২ ক্লাস উপড়ে পড়ে। আমি ক্লাস থেকে বেড় হয়ে কি মনে করে ওকে খোঁজার জন্য কিছুক্ষণ এদিক সেদিক দেখতে লাগলাম। কোথাও না দেখতে পেয়ে কি মনে করে দিলাম বাসার দিকে দৌড়।

আমাদের স্কুলের বাইরে বড় একটা মাঠ,তার পর কলেজের মাঠ,কলেজ,কলেজের মোটামুটি বড়সড় একটা পুকুর এবং পুকুরের ঠিক বিপরীত কোণাকুণিতে আমদের বাসা। স্কুলের বাইরের মাঠে থাকাকালীন সময়েই প্রচন্ড ধুলি ঝড় শুরু হয়ে গেল। আমি কিছু না ভেবেই দৌড়ে যাচ্ছি। কোনমতে দুই মাঠ পাড়ি দিয়ে যেই না পুকুরের কোণাতে পৌছেছি ঝড়ো বৃষ্টিতে সামনে আর তাকাতে পারছিলাম না। আমি ঠিক পুকুরের বিপরীত কোণাতে আমার বাবা কে দৌড়ে বাসায় ঢুকতে দেখলাম। কি মনে করে থমকে গেলাম। সেই ছোট্ট মাথায় কেন যেন উদয় হল পুকুরের পাশ দিয়ে এই ছোট্ট আমি পার হতে পারবো না-যে প্রচন্ড বাতাস তাতে আমাকে পুকুরে ছুড়ে ফেলা এই ঝড়ো বাতাসের কাছে কোন ব্যাপারই না। পাশেই ছিল কলেজের ব্যাচেলর টিচারদের থাকার মেস,সেটাও টিনের ঘড় এবং যথেষ্ট দূর্বল একটা ঘড়। কিন্তু আমার তখন ‘নো আদার চয়েস’ অবস্থা। ঢুকে গেলাম সেখানেই। প্রচন্ড আতঙ্কিত অবস্থায়ও জানালার ফাঁক দিয়ে মাঝে মাঝে ঝড় দেখার লোভ সামলাতে পারলাম না। কেন যেন ঝড়ের ভয়ঙ্কর সৌন্দর্য আমাকে সব সময়ই টানে। প্রায় পৌনে ১ ঘন্টা স্থায়ী ঝড়ের বর্ণনা দেয়ার আগে তার ২ দিন আগে ঘটে যাওয়া একটা ঘটনা বলি,যার কারণে আমাদের এলাকার সবাই ওই সময় ঝড়ের নামে রীতিমত আতঙ্কিত হয়ে পড়ত!

সেদিন সোমবার। আমাদের এলাকার হাটের দিন। স্কুলের বড় মাঠ টার পাশেই বাজার,তাই হাটের দিন বাজার ছাপিয়ে স্কুলের মাঠের অনেকটা যায়গা জুড়ে হাটুরেরা অস্থায়ী দোকান সাজিয়ে বসে,তাই সেদিন ক্রিকেট খেলাটা ঠিক জমে না। তারপরও বাসায় মোটামুটি যুদ্ধ করেই বিকেলে বেড় হয়েছিলাম মাঠের এককোণাতেই ক্রিকেট খেলবো বলে। খেলাটা ছিল নেশার মত। কেবলই খেলা শুরু হয়েছে। আকাশে খুব হালকা মেঘ,বৃষ্টি আসার মতও না। হঠাৎ করেই প্রচন্ড বাতাস আর ধুলি ঝড়! কি মনে করে আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখি বড় একটা কালো মেঘ যেন লাটিমের ঘুরতে ঘুরতে উড়ে যাচ্ছে!! প্রচন্ড ভয়ে আমি কিছু না বুঝে এক দৌড়ে বাসায়। কয়েক মিনিট পর ই সব স্বাভাবিক। ঝড়ের লেশ মাত্র নেই। তখনকার দিনে যোগাযগ ব্যাবস্থা তেমন কিছুই ছিল না। মোবাইল কি জিনিস তাই জানি না!! তাই কিছু জানলামও না তখন।

সন্ধ্যার পর বাবা বাইরে থেকে এসে বললো পাশের থানাতে(উপজেলা) টর্নেডো হয়েছে। হাসপাতাল মানুষে ভড়ে গেছে, ওখানকার হাসপাতাল তো না ই,আমাদের এই হাসপাতালেও যায়গা দিতে পারছে না, এত এত মানুষ আহত!! অনেক নাকি মারা গেছে!! বিকেলের ওই ঘটনার প্রভাব তো ছিলই,আমি এসব শুনতে শুনতে প্রচন্ড ভয়ে সিঁটিয়ে যাচ্ছিলাম। বিচ্ছিন্ন হাত পা এর বর্ণনা শুনেছিলাম তার পর দিন। অনেকেই নাকি ওখানে মানুষের হাত,পা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে থাকতে দেখেছে!! আমি তো ছোট,বড়দের মধ্যেও ওই সময়টাতে একটা আতঙ্ক ঢুকে গিয়েছিল ঝড়ের নামে। একটু গরম বাতাস ভেসে এলেও আতঙ্কিত আলোচনা শুরু হয়ে যেত- টর্ণেডোর সময় নাকি গরম বাতাস হয়! ভ্যাপসা গরম পড়লে আলোচনা হত সেটাও নাকি টর্ণেডো সৃষ্টির একটা কারণ!!

সে যাই হোক,আবার আগের আলোচনায় আসি। ঝড়ের মধ্যে প্রায় নড়বড়ে টিনের ঘড়ে অপেক্ষা করতে করতে মনে হচ্ছিল- যে কোন সময় ঘড় উড়িয়ে নিয়ে যাবে,সাথে ঘড়ে আশ্রিত সবাইকেই। কলেজ মাঠের পাশে লাইন ধরে গিগান্টিক সাইজের বেশ কয়েকটা গাছ ছিল,যাদের উচ্চতা প্রমান সাইজের একটা বট গাছের চেয়েও প্রায় দ্বিগুন। নাম জানি না। আমাদের কলেজের প্রতিষ্ঠাতা কোথা থেকে এনে যেন লাগিয়েছিলেন। ঝড় শেষে বেড় হয়ে দেখি তার একটা গাছ উপড়ানো!!! আমি যে ঘড়টাতে ছিলাম তার পাশেও ওই গাছগুলোর একটা ছিল। সারাক্ষণ আতঙ্কিত ছিলাম-যেকোন মূহুর্তে বুঝি ডাল ভেঙ্গে ঘড়ের উপড় পড়ে। আর পড়লে চেপ্টা হওয়া ছাড়া কোন গতি নেই। কপাল ভালো।

ওখান থেকে বেড় হতেই দেখি বাবা খুঁজতে বেড় হয়েছে। মা’র তো টেনশনে পাগল হবার দশা! পরে শুনলাম মা নাকি এই ভয়াবহ ঝড়ের মধ্যেই খুঁজতে বেড় হতে চাচ্ছিলেন!! বাসায় ফিরে দেখি আমাদের কাঠাল গাছে ডাল ভেঙ্গে পড়ে আছে!

এর পরও অনেকবার ঝড়ের কবলে পড়েছি। এমনকি যে রাতে আইলা আঘাত হানলো উপকুলে ঢাকাতেও তার কিছু প্রভাব ছিল। সেদিন রাতেও আমি ছিলাম খোলা আকাশের নিচে!! সে গল্প আপাতত থাক।

শেষ করার আগে একটা আশঙ্কার কথা বলি- যেভাবে দিন দিন বন উজাড় হচ্ছে অবৈধ ভাবে বা সরকারি ভাবে তাতে প্রকৃতি আমাদের ছেড়ে কথা কইবে না!! সুন্দরবনের মত একটা এস্যেট যদি এভাবে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়া হয় তাহলে উপকুলের অবস্থা কি হবে সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না!! তখন হয়ত মহাসেন,সিডর বা আইলা লাগবে না,এদের নাতিপুতি সাইজের কোন ঝড়ও সিম্পলি একটা কাশি দিলেও আর সামলানো যাবে না!!!

**************
সুবোধ অবোধ
**************
শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি কেন এত বোকা হয়?!!


মন্তব্য

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

বেড় - Width
বের - Get out

ঘড় - ঘড়া?
ঘর - Home

এধরনের বেশ কিছু বানান ভুল।

অতিথি লেখক এর ছবি

এইটা আমার আজীবনের অভ্যাস!!
কনফিউশন!!
খাইছে
ছোট বেলায় খাতার এক পাতাতেই দুই যায়গায় দুই বানান লিখতাম!!
অভ্যাসটা এখনো যায় নি।
পরবর্তিতে আরেকটু সাবধান হব।
যাই হোক,ধন্যবাদ মুর্শেদ ভাই।

**************
সুবোধ অবোধ
***************
শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি কেন এত বোকা হয়?!!

প্রদীপ্তময় সাহা এর ছবি

আপনার লেখা ঝরঝরে, সুন্দর।
মুর্শেদ ভাইয়ের কথামতো বানানের দিকে একটু খেয়াল রাখুন আর হাত খুলে লিখে যান।

শুভেচ্ছা রইল।

অতিথি লেখক এর ছবি

হাসি
ধন্যবাদ।

****************
সুবোধ অবোধ
*****************
শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি কেন এত বোকা হয়?!!

তারেক অণু এর ছবি

চলুক শেষের প্যারাটা জরুরী, এবং নির্মম সত্য

অতিথি লেখক এর ছবি

এবং অবিশ্বাস্য...
ডাকাত,বনদস্যুরা বন ধ্বংস করে। সরকার সেটা প্রটেক্ট করবে,করে; সবাই এমনই জানত।
সরকারই যে এমন বনদস্যু বনে যাবে সেটা বিশ্বাস করাটা কঠিন।
তাও যদি নিজ দেশের সামান্য স্বার্থ থাকত।

***************
সুবোধ অবোধ
****************
শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি কেন এত বোকা হয়?!!

একলহমা এর ছবি

বানানের অসোয়াস্তি সরিয়ে রেখে পড়তে একটু ঝামেলা হল। কিন্ত পড়তে বেশ ভাল লাগল। আর গল্পের শেষটা আ
খুবই দামী।

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ।
বানানের জন্য পরবর্তিতে প্রয়োজনে ডিকশনারি নিয়ে বসব। ডোন্ট ওরি,বি 'হেপি' !!
খাইছে
খুব বেশি 'অসোয়াস্তি' বা অস্বস্তি কোনটাতেই আর পরতে হবে না আশাকরি।
চোখ টিপি

***************
সুবোধ অবোধ
***************
শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি কেন এত বোকা হয়?!!

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।