নারীর মহাশূণ্যে পদচারণার পঞ্চাশ বছর
ভ্যালেন্তিনার পথ ধরে ছুটে চলেছে পৃথিবীর নারীরা
আজ ১৬ জুন। মহাকাশে নারীর পদার্পনে পঞ্চাশ বছর অতিক্রম করছে। এ ব্যাপারে বিশ্বব্যাপি আয়োজন চলছে। ৫০ বছর আগে ১৯৬৩ সালের এই দিনে প্রথম নারী হিসেবে মহাশূন্যে যান সোভিয়েত নভোচারী ভ্যালেনতিনা তেরেসকোভা। এরপর নারীরা অন্তত মহাকাশচর্চা বা পদচারণায় আর লিঙ্গ বৈষম্যের শিকার হননি। এই ঘটনা পৃথিবীর জন্য এই কারণে গুরুত্বপূর্ণ কেননা এটা বলছে আগামীতে নারীপুরুষ কাধে কাধ মিলিয়ে শুধু পৃথিবীতে নয় মহাশূণ্য, গ্রহ গ্রহান্তরে ছড়িয়ে পড়বে। ইতিমধ্যে এই পথ ধরে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে মহাকাশে প্রায় ৬০ জন নারী সফল পদচারণা করেছে। যাবার অপেক্ষায় আছে অনেকে। কতসব নাম পরিচিতি লাভ করেছে ইরানের আনুশেহ আনসারি, জাপানের চিয়াকি মুকাই, ভারতের কল্পনা চাওলা, কানাডার রবার্টা বন্ডার, কোরিয়ার লিও ইয়াং চুক, ফ্রান্সের হেউগনেরে ক্লডি, আফ্রিকার কৃষ্ণাঙ্গ নারী ড. মে জেমিসন। সম্প্রতি চীনা এক নারী ওয়াং ইয়াপিং তার দুই পুরুষ সহযাত্রীদের নিয়ে শিয়ানঝু মহাকাশযানে করে মহাকাশে গিয়েছে। ১৪ জুন ওই মহাকাশযান মহাশূণ্যে অবস্থানকারী চীনা গবেষনা স্টেষণের সঙ্গে সফল সংযুক্ত হয়েছে। ১২ দিন গবেষণাগারে থাকাকালীন সময় মহাকাশযানের এই নারীসহ দুই অভিযাত্রী নানা গবেষণা চালাবে। আর চীন এভাবে একেরপর এক মাহাকাশযানের বিভিন্ন অংশ জোড়া লাগিয়ে বিশাল মহাশূণ্য স্টেষণ গড়ে তুলবে ২০২০ সালের মধ্যে। এজন্য চীনা তরুণদের মধ্যে মহাকাশ প্রোগ্রামকে আরও জনপ্রিয় করতে নানা কার্যক্রম চালাবে মহাকাশ থেকে ওয়াং ইয়াপিং এর দল।
২৬ বছর বয়সী ভ্যালেন্তিনা ভোস্তক-৬ মহাকাশযানে ১৯৬৩ সালে তিনদিনের একক মিশনে মহাশূণ্যে পাড়ি জমান। ওই অভিযানে তিনি ৪৮ বার পৃথিবী প্রদক্ষিন করেন। যুক্তরাস্ট্রের সঙ্গে মহাকাশ নিয়ে তীব্র প্রতিযোগিতায় থাকা তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের এটি ছিল গুরুত্বপূর্ণ অর্জন। আজকের এই ঐতিহাসিক ক্ষণটিকে স্বরণ করার জন্য রাশিয়া বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। যদ্ওি তৎকালীন সময় সমগ্র সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরাট অগ্রগতি ছিল। এটা পৃথিবীর জন্যও একটা অগ্রগতি।
১৯৩৭ সালের ৬ মার্চ তার জন্ম। রাশিয়ার মাসলেনিকোভো গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা ছিলেন ট্রাক্টর চালক। মা ছিলেন স্থানীয় বস্ত্র কারখানার একজন কর্মী। স্কুল ছাড়ার পর মায়ের মতো নিজেও ফ্যাক্টরিতে কাজ নিয়েছিলেন তেরেসকোভা। মানে ফ্যাক্টরিকন্যা থেকে মহাকাশকন্যা! তার বাবা ভাদিমির তেরেস্কোভ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রারম্ভে সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং ফিনল্যান্ডের মধ্যে সংঘটিত শীতকালীন যুদ্ধে প্রাণ হারান। সময়টা ছিল ১৯৩৯ সালের ১৩ মার্চ। শৈশব থেকে তিনি প্যারাসুট নিয়ে লাফিয়ে পড়ার স্বপ্ন দেখতেন। এই আকাঙ্ক্ষার সূত্রে স্থানীয় অ্যারোক্লাবে স্কাই-ডাইভিংয়ে প্রশিক্ষণ নেন। ১৯৫৯ খ্রিষ্টাব্দের ২১ মে, তিনি প্রথম আকাশ থেকে ঝাঁপ দেন। পরবর্তী সময়ে এ অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞানই তাকে নভোচারী হিসেবে যোগ দিতে সাহায্য করেছিল।
১৯৬১ খ্রিষ্টাব্দে ইউরি গ্যাগারিন-এর মহাকাশ পরিভ্রমণের পর, সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রধান রকেট প্রকৌশলী সের্গে কোরোলিয়োভ মহাকাশ যাত্রার সাথে নারীদের সম্পৃক্ত করার উদ্যোগ নেন। ১৯৬২ সালে ১৬ ফেব্র“য়ারি ভ্যালেন্তিনা সোভিয়েত মহাকাশচারী শিবিরে মহিলা সদস্য হিসাবে যোগদান করার সুযোগ পান। চার শতাধিক শিক্ষার্থিনীর ভিতরে তিনিই বেড়িয়ে আসেন মহাশূণ্য অভিযানে। মহাকাশ পরিভ্রমণ শেষে তিনি ঝুকোভ্স্কি বিমান বাহিনী একাডেমি থেকে মহাকাশ প্রকৌশলবিদ্যা নিয়ে লেখাপড়া করেন এবং গ্রাজুয়েট হন। ১৯৬৬ সালে তিনি সোভিয়েত ইউনিয়নের সুপ্রিম সোভিয়েতের সদস্য নির্বাচিত হন।
এদিকে বাংলাদেশ মহাকাশ সংস্থা স্পারসো ১৯৭৪ সালে স্থাপিত হয়েছে। বাংলাদেশে নারীর মহাকাশচর্চাতো দূরের কথা কোনো মহাকাশ বিষয়ক কোনো কিছুরই উদ্যোগ নেই। ১৯৯২ সালে প্রায় নিখরচায় তৎকালীন সরকারের পক্ষে আবহাওয়া সংক্রান্ত খবর আদানপ্রদানের জন্য একটি কৃত্রিম উপগ্রহ স্থাপন করতে পারতো। কিন্তু নানা রাজনৈতিক ডামাডলে তা হারিয়ে গেছে। বর্তমানে বাংলাদেশে আবহাওয়া সংক্রান্ত খবর নেওয়ার জন্য দুটো ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র আছে। একটা হলো কক্সবাজরে অবস্থিত বেদ বুনিয়া আরেকটি হলো তালেবাবাদ। এ সরকার আসার পর উপগ্রহ স্থাপনের একটা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। যাতে আমাদের টেলিযোগাযোগ সহজ হয়। এরজন্য কৃত্রিম উপগ্রহ স্থাপনের পরিকল্পনার ব্যাপারে যাদের কাছ দায়িত্ব¡ দেওয়া হয়েছে, চার বছর হতে চললো তাদের কাছ থেকে কোনো রিপোর্ট এখনও কতৃপক্ষের কাছে এসেছে বলে জানা যায়নি। মহাকাশচর্চাকে জনপ্রিয় করার জন্য অ্যাস্ট্রোনোমিক্যাল সোসাইটি, অ্যাস্ট্রোনোমিক্যাল এসোসিয়েশন এবং ডিসকাশন প্রজেক্ট এর কর্মীদের কিছু কর্মকাণ্ড ছাড়া অন্য কিছু চোখে পড়ে না। সরকারের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ লক্ষ্য করা যায় না। আজ ১৬ জুন ইমপেরিয়াল কলেজের সাথে ডিসকাশন প্রজেক্ট যৌথ উদ্যোগে মহাকাশে নারীর পঞ্চাশ বছর পূতী উপলক্ষ্যে আলোচনা হবে ও প্রামান্যচিত্র দেখাবে।
যাহোক ৎসিওভলস্কি ও গর্ডাডের জ্ঞান বিজ্ঞানের পথ ধরে ১৯৬১ সালে ইউরি গ্যগারিনকে প্রথম নভোচারী মানব হিসেবে মহাশূন্যে ভ্রমণ করাতে সক্ষম হয় সোভিয়েত ইউনিয়ন। মার্কিনদের থেকে আরো এগিয়ে থাকার জন্য মাত্র দু’বছরের মাথায় ১৯৬৩ সালের ১৬ জুন ভ্যালেনতিনা তেরেসকোভাকে প্রথম নারী নভোচারী হিসেবে মহাশূন্যে পাঠাতে সক্ষম হয় কমিউনিস্ট সোভিয়েত ইউনিয়ন। ভ্যালেন্টিনা তেরেসকোভা ৫০ বছর আগে সাহসের যে আলো ফেলেছিলেন মহাকাশে সে পথ ধরে অজানাকে জানতে পথিক হয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নারীরাও। তারা সাদা-কালো, বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী, পদার্থবিজ্ঞানী, রসায়নবিজ্ঞানী, ডাক্তারসহ নানা পেশায় কর্মরত। মহাকাশে একটিই তাদের পরিচয়, তারা মানবজাতির প্রতিনিধি। বিজ্ঞানকর্মীদের আশাবাদ, বাংলাদেশের নারীরাও বিশ্বপ্রবাহের সাথে সম্পৃক্ত করে মহাজাগতিক পথের পথিক হবে।
রচনাকাল : ১৬ জুন ২০১৩
ডিসকাশন প্রজেক্ট
মন্তব্য
স্যালুট ভ্যালেন্তিনাকে। ধন্যবাদ লেখককে
facebook
আজ ই এই নারীর ছবি দেখলাম প্রথম। ভ্যালেন্তিনা তেরেস্কোভা।
আমাদের পাঠতালিকায় ছিলো, 'চাদেঁ অভিযান' প্রবন্ধ। সেখানেই তার নাম পড়ে ভেবেছিলাম কী সাহসী মানুষ।
লেখক কে ধন্যবাদ।
যেই প্রামান্য চিত্রটি দেখাবেন ওইটা কি বাংলায়?
আপলোড করা যাবে ?
আব্দুল্লাহ এ.এম.
বাংলাদেশ মহাকাশ সংস্থার নামটা কিন্তু জোস, স্পারসো!
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
নতুন মন্তব্য করুন