"দ্যাখেন আম্মু, এই লোকটার সাথে আমার অনেক মিল"... শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় এর লেখা পার্থিব পড়তে পড়তে, বইটার একটা চরিত্র কৃষ্ণজীবনের ব্যাপারে আম্মুকে বললাম।
আম্মুর তেমন কোন আগ্রহ নেই বই-টইয়ের দিকে, তাও জিজ্ঞেস করলেন, "কেমন মিল?"
আমি ব্যাখ্যা করলাম, "সে-ও আমার মত পরিবারের বড় ছেলে, বাবা-মা তাকে ভুল বোঝে, সে-ও এই পৃথিবীটাকে অনেক ভালোবাসে, সে অনেক মেধাবী (নিজেকে মেধাবী ভাবতে ভালো লাগতো তখন, হি হি) এবং নিজে নিজে পড়াশোনা করে অনেক দূর গিয়েছে (যেমনটা আমি যেতে চাইতাম)"
আম্মু বললেন, "সবই বুঝলাম, কিন্তু সে করেটা কি?"
তখন একটু ভ্যাবাচ্যাকা খেলাম, "সে এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্টিস্ট"
আম্মুর আমাকে ডাক্তার হিসেবে দেখার ইচ্ছা ছিলো, "তো, ঐটা তো আর মিলবেনা"
তখন আমি এইচএসসি'র ফার্স্ট ইয়ারের ছাত্র। আমি জানতামও না কিভাবে পরিবেশ বিজ্ঞানী হওয়া যায়। কিন্তু পৃথিবী-প্রকৃতির প্রতি তার প্রেম দেখে, গাছপালা যে পৃথিবীর মুখে দাঁড়ি এবং সে দাঁড়ি যে কামিয়ে দেয়া উচিৎ নয়, সেটা নিজের ছেলেকে বোঝানো দেখে আমি নিজেই মনে মনে পরিবেশবিজ্ঞানী হয়ে উঠেছিলাম।
এরপর ঐ সময়টাতে ওপার বাংলার আরো প্রচুর বই পড়া হয়ে গেছে, আমি বলতে গেলে ভুলেই গেছি এটার কথা। কখনো সমরেশের লেখা গর্ভধারিণীর "আনন্দ" হয়ে গিয়েছি, অথবা "আট কুঠুরী নয় দরজা"র আকাশলাল। কখনো সুনীলের "পূর্ব-পশ্চিম" এর অতীশ/পিকলু, কখনো শীর্ষেন্দুর "মানবজমিন" এর দীপনাথ, অথবা "দূরবীন" এর কৃষ্ণকান্ত।
এইচ এস সি'র পর তিন মাস ঢাকায় গিয়ে থাকলাম, প্রাইমেটে মেডিক্যাল ভর্তি কোচিং করবো বলে। কিন্তু, পড়াশোনার ধারে কাছে দিয়েও গেলাম না। কোচিং এর ক্লাসও করা হলোনা ঠিকমত। মেডিক্যালে পরীক্ষা দিতেও মন চাইলোনা। তবুও দিলাম, এবং খুব স্বাভাবিকভাবেই টিকলাম না।
চিটাগাং ভার্সিটির দুইটা ইউনিটে পরীক্ষা দিয়েছিলাম, দুটোতেই কিভাবে যেন মেধাতালিকায় চলে এলাম - বায়োলজিক্যাল সায়েন্সে ১৭তম বা ১৯তম (একজ্যাক্টলি মনে নেই) আর ফরেস্ট্রি বা বনবিদ্যাতে ৭ম। বনবিদ্যার জন্য ভাইভা দিতে গিয়ে দেখলাম, সে বছরেই প্রথম (২০০৫-এ) ঐ ডিপার্টমেন্টে পরিবেশ বিজ্ঞান অফার করা হচ্ছে। ইন্টারভিউ বোর্ডে গিয়ে আত্মবিশ্বাসের সাথে বললাম, পরিবেশ বিজ্ঞান নিতে চাই। কেন জিজ্ঞেস করা হলে, তাদেরকে শোনালাম পার্থিবের কৃষ্ণজীবনের গল্প।
এর অনেক দিন পরে (প্রায় বছরখানেক পর) আবার পার্থিব বইটা রিভিশন দিচ্ছিলাম। এবার আম্মুকে গিয়ে বললাম, "আম্মু, মনে আছে, পার্থিবের একটা চরিত্রের কথা বলেছিলাম, যার সাথে আমার অনেক মিল?"
আম্মুর অতো ডিটেইলস মনে ছিলোনা। মনে করিয়ে দেয়ার পর বললাম, "আম্মু, আমি এখন এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স এর স্টুডেন্ট, আমিও ওর মত পরিবেশ বিজ্ঞানীই হতে যাচ্ছি"
.......................................... পর সমাচারঃ
কৃষ্ণজীবন আমেরিকাতে এসে একটা কনফারেন্সে প্রেজেন্টেশন করেছিলো। আমেরিকার Auburn University তে আমার নিজের প্রথম কনফারেন্স প্রেজেন্টেশনের পর সবাই যখন হাততালি দিয়ে উঠলো, তখনো আমার মাথায় শুধু একটা কথাই ঘুরছিলো, "আমি কৃষ্ণজীবন, আমি কৃষ্ণজীবন"
সে পরিবেশ নিয়ে একটা বই লিখেছিলো, ডার্লিং আর্থ...... এই কাজটা আমাকে করতে হবে, পরিবেশ নিয়ে একটা বই লিখতে হবে, এটা আমার টার্গেট !!
- ফরহাদ হোসেন মাসুম
মন্তব্য
শুভকামনা রইলো কৃষ্ণজীবন!
ধন্যবাদ।
বাহ! আমাদের কৃষ্ণজীবন!
এগিয়ে যাও।
অনন্ত শুভকামনায়
---- মনজুর এলাহী ----
শুভেচ্ছা রইল
শুভ কামনা!!
--------------------
সুবোধ অবোধ
-----------------------
শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি কেন এত বোকা হয়?!!
ডার্লিং আর্থের অপেক্ষায় থাকলাম
অশেষ ধন্যবাদ। কিছু peer reviewed journal আর্টিক্যাল আর বুক চ্যাপ্টার দিয়ে হাত পাকিয়েছি। বইয়ের কাজ শুরু করবো অচিরেই। ভালো থাকবেন...
শুভকামনা।
সচলায়তনে স্বাগতম!
--------------------------------------------------------
আমি আকাশ থেকে টুপটাপ ঝরে পরা
আলোর আধুলি কুড়াচ্ছি,
নুড়ি-পাথরের স্বপ্নে বিভোর নদীতে
পা-ডোবানো কিশোরের বিকেলকে সাক্ষী রেখে
একগুচ্ছ লাল কলাবতী ফুল নিয়ে দৌড়ে যাচ্ছি
তুমি নাকি পুরোটা পড়ে কি যেন গঠনমূলক মন্তব্য করবে আরো কি হেন তেন !! কই সেটা ?
শরীর ভাল না আমার। জ্বর। দেখেছো হয়ত ফেসবুকে। তাই আর অনেক কিছু লেখা হয়ে উঠলো না। অন্য কোন লেখায় অবশ্যই গঠনমূলক মন্তব্য হবে। লেখা চালিয়ে যাও।
শুভ কামনা।
--------------------------------------------------------
আমি আকাশ থেকে টুপটাপ ঝরে পরা
আলোর আধুলি কুড়াচ্ছি,
নুড়ি-পাথরের স্বপ্নে বিভোর নদীতে
পা-ডোবানো কিশোরের বিকেলকে সাক্ষী রেখে
একগুচ্ছ লাল কলাবতী ফুল নিয়ে দৌড়ে যাচ্ছি
ধন্যবাদ, আশা করছি নিয়মিত লিখবো।
বা: দারুণ! আরো লেখার অপেক্ষায় রইলাম।
- একলহমা
ধন্যবাদ !! আরেকটা লিখেছি, রেলখাতের সমস্যা ও সম্ভাব্য সমাধানসমূহ টাইটেলে...... লিংক এড করতে গেলে ওয়ার্ড ভেরিফিকেশন করতে বলে, কিন্তু ভেরিফিকেশনের কোন বক্স খুঁজে পাইনা
নতুন মন্তব্য করুন