পোশাক শিল্পে শ্রমিকদের স্বার্থের ব্যাপারটা আলোচনায় আছে অনেকদিন থেকেই। উন্নতির চেষ্টা কিছুটা হয়েছে স্বীকার করতে হয়, তবে সেটা নিতান্তই অকিঞ্চিতকর। ঠিক এই সময়েই যুক্তরাষ্ট্রের কাছে থেকে জিএসপি সুবিধা স্থগিতের ঘোষণা আসল (অবশ্য তাদের টাইম-লাইন ছিল)। এই স্থগিতের ঘোষণায় পোশাক শিল্পে কী ক্ষতি হবে সেটার মূল্যায়ন এই লেখার উদেশ্য না।
ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হল, জিএসপি স্থগিতের ঘোষণাটা এমন সময় আসল যখন সরকার বাংলাদেশ লেবার অ্যাক্ট ২০০৬ তে শ্রমিক-বান্ধব কিছু ধারা সংযোজনের চেষ্টা করছে (কমিটিতে পাশ হয়েছে, সংসদে পাশ হওয়ার অপেক্ষায়), ওয়েজ-বোর্ড গঠনের ঘোষণা এসেছে, এবং কিছুটা সংশ্লিষ্ট – টিকফা চুক্তির ব্যাপারটা যুক্তরাষ্ট্রে সাথে ফয়সালা হয়েছে।
নোবেল বিজয়ী ডঃ মুহাম্মদ ইউনূস কিছুদিন আগে পোশাক-শ্রমিক স্বার্থের ব্যাপারটায় তার ইন্টারেস্টের কথা প্রকাশ করেন। ডঃ ইউনূস বাংলাদেশের অনেক ব্যাপারে সচরাচর ইন্টারেস্ট দেখান না। রোমে আগুন লাগলে তিনি অন্য দেশে গিয়ে বাঁশি বাজাতেই ভালবাসেন। তিনি যখন ইন্টারেস্ট দেখালেন, আমারা আশাবাদী হলাম। তিনি পোশাক-শ্রমিক নিয়ে ব্যাপক ভিত্তিক ‘হ্যাপি-ওয়ার্কার’ নামের একটা প্রকল্পের ধারণা তুলে ধরেন।
ডঃ ইউনূস আজ জিএসপি স্থগিতের জন্য সরকারকে দায়ী করলেন। তিনি তার ইন্টারেস্ট ধরে রেখেছেন। ‘জিএসপি সুবিধা পুনর্বহালে ভূমিকা রাখবেন কি না’ –আমেরিকার অকৃত্রিম বন্ধু ডঃ ইউনূসকে এক সাংবাদিক এমন প্রশ্ন করলে তিনি উত্তরে তিনি বলেন, “আমি সরকারের কেউ না,আমার এখানে ভূমিকা রাখার কিছু নেই’’। [সূত্র বিডিনিউজ২৪]
কিন্তু মজার ব্যাপার হল, ২ জুন তিনি জাপানে পৃথিবীর বড় বড় গার্মেন্ট ব্যবসায়ীদের/রিটেইলারদের সাথে মিটিং করলেন বাংলাদেশের গার্মেন্ট্স সেক্টর নিয়ে। তিনি বাংলাদেশের গার্মেন্টস ব্যবসায়ীও না, কিংবা সরকারের অংশ না। তিনি তাদের অনুরোধ করলেন বাংলাদেশকে ‘না’ না বলতে। কথা হল, শ্রমিকদের এই অবস্থার পরও স্বল্প-মূল্য শ্রমিকের জন্য এইমুহূর্তে ‘না’ বলার ক্ষমতা নেই বিশ্বের রিটেইলারদের, কিংবা এমন চিন্তা করছে তারও কোন প্রমান নেই। তার এই অনুরোধটা অনেকটা অত্যুৎসাহী মন্তব্য বলা যায়। এবং এ ব্যাপারটা গার্মেন্টস ব্যবসায়ীরাও জানে, তাই শ্রমিক স্বার্থের ব্যাপারটা ঢিমে তালে চলছে।
তিনি তার ‘হ্যাপি-ওয়ার্কার’ ধারণা তাদেরকে বললেন। ব্র্যান্ড-ইমেজের একটা দারুণ উইন-উইন সিচুয়্যাশন। বিশ্বের রিটেইলাদের ‘সিএসআর’। আর এটা তো ডঃ ইউনূসের ব্র্যান্ডের সাথে চমৎকার যায় – সেভিয়্যার অভ দ্য ডাউনট্রোডেন। বিজনেসের সাথে সোশ্যাল অবলিগ্যাশন – সোশ্যাল বিজনেস।
এমপি শাহরিয়ার যখন টিভিতে ডঃ ইউনূসের জন্মদিনে জিএসপি বাতিলের ইঙ্গিত দেন, সস্তা পলিটিক্যাল বক্তব্য মনে হয়। কিন্তু অন্যান্য ব্যাপার গুলো আমলে নিলে জন্মদিনে ‘এই শ্রাবন সন্ধ্যাটুকু তোমাকে দিলাম’ – অবাস্তব মনে হয়না।
দারুণ উইন-উইন সিচুয়্যাশন। আম্রিকাও খুশি আমরাও খুশি। নব্বই লক্ষের উপর দরিদ্র মহিলা ‘মালিকেরা’ আছে গ্রামীণ ব্যাংকে। এখন অর্থনৈতিক দিয়ে কিছুটা ভাল অবস্থানে আছে এমন ‘আরবানাইজড’ শ্রমিকের একটা বিরাট অংশ আসবে ‘হ্যাপি-ওয়ার্কার সিস্টেমে’। সবচেয়ে বড় হল পাওয়ারফুল ‘গার্মেন্টস’ ব্যবসায়ীরাও তার ‘সিস্টেমে’ আসবে। আম্রিকা-ইউনূস এবং আমরা – আমরা-আমারই তো। বাংলাদেশের লোক সবচেয়ে ভাল – বলেছেন মজিনা। ডঃ ইউনূসের রাজনীতির স্টল-ওয়ার্টদের সাথে হঠাৎ ... ডিসকোর্স! সবগুলি টুকরো টুকরো ঘটনাকে জোড়া লাগালে একটা প্যাটার্ন পাওয়া যায়। ঋতুপর্ণ ঘোষের অবহমানে সিনেমায় দীপংকরের মন্তব্য মনে পড়ল – what is a film all about …. too bad too bad.
বোঝা গেল সোশ্যাল বিজনেস আসছে, বেশ জাকজমক নিয়েই। ছোট ছোট শট গুলো জোড়া দিতে হবে শুধু।
তবে ‘কনজিনিয়্যাল অ্যাটমোস্ফ্যার’ কি এই সরকারের সময় পাওয়া যাবে?
নৈঋত
মন্তব্য
যে খাতে শ্রমিকের দুর্দশা লাঘবের কথা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বলছে, সে তৈরিপোশাক খাত তো এমনিতেও জিএসপি সুবিধা পাচ্ছে না। বরং এ খাতে শ্রমিকের প্রতি অবিচারের দোহাই দিয়ে শাস্তিটা মূলত চাপানো হলো জিএসপি সুবিধা পাওয়া অন্য খাতের (প্লাস্টিক, কাচ, সিরামিক প্রভৃতি) ওপর। যেহেতু তৈরিপোশাক খাত সরাসরি বিপন্ন হয়নি, তাই উদ্যোক্তারা পড়শির বাড়িতে লাগা আগুনকে কতটুকু গুরুত্বের সঙ্গে নেবেন সেটা বোঝা মুশকিল।
ইউনূস তৈরিপোশাক খাতের শ্রমিকের কল্যাণের দায়িত্ব ব্র্যাক বা গ্রামীণের মতো কোনো প্রতিষ্ঠানের স্কন্ধে তুলে দিতে চান। গ্রামীণ ব্যাঙ্কের ঋণগ্রহীতাদের অনির্বাচিত প্রতিনিধিরা যেমন সরকারকে ৮০ লক্ষ নারীর পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলনের ভয় দেখাতে পারেন (গ্রামীণ ব্যাঙ্কের সঙ্গে এই ঋণগ্রহীতাদের সম্পর্ক শেষ পর্যন্ত ঋণেই, যদি সত্যিই তাঁরা গ্রামীণ ব্যাঙ্কের মালিক হয়ে থাকেন, নিজকে সহ অন্য দরিদ্রের জন্যে সুদের হার কমানোর জন্যে দীর্ঘ তিন দশকে তাঁরা একবারও কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি কেন?), তেমনি তৈরিপোশাক খাতের শ্রমিকদের কল্যাণের দায়িত্ব নেওয়া প্রতিষ্ঠানেও লোকদেখানো অনির্বাচিত প্রতিনিধিদের বসিয়ে তাদের নামকাওয়াস্তে প্রতিষ্ঠানের মালিক সাজিয়ে ইউনূসের আজ্ঞা বহন করানো হতে পারে। ইউনূস মূলত কল্যাণের মূলাটি ঝুলিয়ে একটি বিপুল সংখ্যক নিম্নবিত্ত মানুষের আর্থিক লেনদেন নিয়ন্ত্রণে আগ্রহী। এই নিয়ন্ত্রণ বাংলাদেশের বাজারে সামাজিক ব্যবসার তথাকথিত মঙ্গলকর মুখোশ পরে প্রবেশ করতে আগ্রহী বিভিন্ন উচ্চপুঁজির বিদেশী প্রতিষ্ঠানকে সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার জন্যেই, আর কিছু না।
আপনি কি নবীজীর এই প্রস্তাবটার কথা বলছেন?
এইটাকে বিশাল "গেমচেঞ্জিং আইডিয়া" বলে ফেসবুকে কিছু আঁতেল এক সময় লাফালাফি করসিল। আমাদের একটা বড় সমস্যা হইল occasional suspension of critical faculty। ইউনুস নবী যে এই স্কিম থেকে কী বেনিফিট পাবেন, সেইটা মনে হয় কেউ গভীর ভাবে চিন্তা করে নাই।
আর এই স্কিম যদি বাস্তবায়ন করতেই হয়, তা' হলে সেটা গ্রামীণ ব্যাংক বা ব্র্যাকের মাধ্যমে করতে হবে কেন? বাংলাদেশের আর্মির জন্য যেমন "সেনা কল্যাণ সংস্থা" আছে, সরকার তেমনই গার্মেন্টস শ্রমিকদের জন্য "শ্রমিক কল্যাণ সংস্থা" গড়ে তুলতে পারে, শার্টপ্রতি ৫০ সেন্ট যেখানে সরাসরি জমা হবে।
সেইটা না আবার পুরাই সরকারি হইয়া যায়। আমাদের সরকার মানেই তো আমলা আর রাজনীতিবিদগো বাপের সম্পত্তি
হা হা হা শাঁখের করাত !
আরে এ যে সালাম সাহেবের ফতোয়া! আপনি যে ওনার স্ট্যাটাস শরীফে হাত দিছেন, গত ছয়মাসে বারট্রান্ড রাসেলের কয়খান বই খতম দিছেন, শুনি?
এরকম একটা গল্প হতে পারে।
-ভাই, আপনি কি সুস্থ মস্তিস্কে এই কথা বলছেন?
-হ্যাঁ আমি সম্পূর্ণ সুস্থ মস্তিস্কে কথাটি বলছি।
-কিন্তু আমি কীভাবে বিশ্বাস করবো যে সত্যিই সুস্থ মস্তিস্কে বলছেন?
-বিশ্বাস হচ্ছে না? এই যে, আমি সুস্থ মস্তিস্কে বলছি যে এসব কথা আমি সম্পূর্ণ সুস্থ মস্তিস্কে বলছি...
-তাও ঠিক বিশ্বাস হলো না।
-কী বললে যে বিশ্বাস করবেন! আচ্ছা ঠিক আছে, আমি সাক্ষ দিচ্ছি যে আমি সুস্থ মস্তিস্কে বলছি যে এসব কথা আমি সম্পূর্ণ সুস্থ মস্তিস্কে বলছি...
-
-
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
স্টিকারের আইডিয়াটা বেশ কাজের। তবে নিঃসন্দেহে লাভের গুড় খাবে ইউনুস বাবুনগরী।
নতুন মন্তব্য করুন