নীলাভ দুখীর হলুদাভ বসন্ত

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: সোম, ০১/০৭/২০১৩ - ১১:১৩অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

সে আর কিছু বলতে পারছিলো না। তার পাশের চেয়ারে গিয়ে বসলাম। জিজ্ঞেস করলাম, “মাথা ব্যাথা?” মাথা নেড়ে বোঝালো না। আবার জিজ্ঞেস করলাম, “শরীর খারাপ?” -আবার না সূচক মাথা নাড়ালো। বুঝলাম মেয়েটা কাঁদছে। যেন-তেন কান্না নয়। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে চলা যাকে বলে। সাঁজ-গোছ করে শাড়ী পরা একটা মেয়ে কান্না করে যাচ্ছে। এটা মানায় না। তবুও মেয়েটি কাঁদছে। কান্নাটা একদম শব্দহীন বললেই চলে। আশেপাশের মানুষজনকে আড়ালে রেখে কান্নাকরা আর কি! বাংলাদেশের মেয়েরা বোধহয় এ কান্নায় খুব ভাল রকমের পারদর্শী। চাপা কান্নায় সব আড়াল করার চেষ্টা করে। আমি ভাবছিলাম কি বলে সান্তনা দেয়া যায়। আসলে সান্তনা দেয়ার ভাষা খুঁজে পাচ্ছিলাম না। কোন ঘটনা না জেনে সান্তনা দেয়া যায় না! এমন ফুঁপিয়ে কান্নার কারণ জিজ্ঞেস করলে না জানি আবার জোরে কান্না জুড়ে বসে কি না, সেই ভয়ে জিজ্ঞেস করার সাহস পাচ্ছিলাম না। ক্লাসরুমের এক কোনে একজন পড়ছিল। সে-ও বুঝতে পেরেছে কিছু একটা ঘটেছে। আড় চোখে একবার আমার দিকে, আরেকবার মেয়েটা দিকে তাকাচ্ছিল। আমি কিছুটা বিব্রত বোধ করছিলাম এই ভেবে যে, ছেলেটি হয়তো আমাকেই মেয়েটির কান্নার জন্য দায়ী ভাবছে। এইবার সাহস করে মেয়েটাকে জিজ্ঞেস করে বসলাম, “কি হয়েছে? কাঁদছ কেন তুমি?” মেয়েটার উত্তর, “ও বলেছে.. আমি নাকি তাকে সময় দেই না.. আমার বন্ধুদের……..”

আমি বাকীটা শোনার কোন আগ্রহ বোধ করলাম না। বুঝে নিলাম ‘ও’ টা মানে কে। আর চিরায়িত ‘ও’ কে দোষারপ করার সংস্কৃতিতে বিশ্বাসী মানুষগুলোর সংখ্যাও নেহাতই কম না। হয়তো আমিও একদিন তাদের দলে যোগ দিবো। নিজের ভুলগুলো শুধরে নেয়ার মানসিকতা আমাদের কবে হবে? মেয়েটা তখনো আমাকে অভিযোগ করে চলছিল.. আর আমি আমার নিজস্ব ভাবনায় এতটাই মত্ত ছিলাম যে ভালমতো কিছুই শুনতে পারিনি। হঠাৎ খেয়াল করলাম সে একটা প্রশ্ন করেছে আমায়।

“জিটু, আমি অনেক বোকা.. তাই না?”

প্রশ্নটার উত্তর যাই হোক সে কিছুটা নিজের প্রতি বিরক্তি প্রকাশের ইঙ্গিত তো দিয়েছে। এতোসব ভাবার সময় নেই। চারপাশে উৎসবের রং লেগেছে। ক্যাম্পাসে উৎসবের আমেজ। হলুদে হলুদে ছেয়ে গেছে গোটা বসুন্ধরা। বসন্তের প্রথম দিন বলে কথা। আজ কেউ নিরালায় একাকী কান্না করবে আর সবাই আনন্দ করবে, তা তো হয় না।

[i]“আরে বাদ দাওতো এসব আজকে! চলো, সবাই অপেক্ষা করছে। ফোন দিচ্ছে।”[/i]

হলুদে ছেঁয়ে যাওয়া বসন্তে আজ কারো মনে হয়তো বেদনায় নীল ভর করেছে আর কারো মনে আনন্দের রঙ্গীন পাখা। আজ আমি হিমু। হলুদ পাঞ্জাবী পরেছি, যদিও সেন্ডেল পায় আমি। তবুও আমার মন খারাপ থাকতে মানা। ভীড়ের মাঝে মেয়েটা কোথায় যেন হারিয়ে গেল। হারিয়ে যাক.. আনন্দের মাঝেই হারাক। গ্যালারীর দিকে যেতেই কনসার্ট থেকে ভেসে আসছে..
“পাগলা হাওয়ার তরে.. মাটির পিদিম নিভু নিভু করে..”

নিভু প্রদীপের আলোটা জ্বলে উঁঠুক সবার প্রাণে। ভাল ভাবে.. ভালই হবে তাতে!

(মোশারফ জিটু)


মন্তব্য

ব্যাঙের ছাতা এর ছবি

ছোট্ট লেখা তবে ‍আমার ভালো লেগেছে। হাসি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।