জীবনে প্রথম জিন সম্পর্কে যে ধারণাটি পেয়েছিলাম তা ছিল নূরের তৈরী অতিপ্রাকৃতিক এক স্বত্তাবিশেষ যাহারা বিশেষ ক্ষমতার অধিকারী এবং প্রায়শই মানবজাতির উপর বিশেষ প্রভাব সৃষ্টি করে থাকে যাকে আমরা বলে থাকি জিনের আছর! তবে জীববিজ্ঞান বইতে যখন আরেকরকমের জিনের সন্ধান পেলাম, তা বেশ অভিভূত করেছিল আমাকে। কি করে এই জিনিস ধারণ করে সমগ্র জীবজগতের নীলনকশা। সেই থেকে জেনেটিক্স সম্পর্কিত বিষয়ে জানার আগ্রহ প্রকট। নিজের স্বল্প জ্ঞান থেকেই কিছু লিখার চেষ্টা করলাম।
জিন নিয়ে বলার আগে আমি চলে যাব পৃথিবীতে জীবনের শুরুটা কিভাবে হল সেই গল্পে। জীবনের প্রথম অণু বলা হয় অ্যামাইনো এসিডকে, যা হল প্রোটিনের গাঠনিক একক। এখন প্রশ্ন আসতে পারে ডিম আগে না মুরগী আগে। তাই বিষয়টা একটু খুলে বলি। আদিম পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলীয় অবস্থা ছিল প্রচন্ড রুক্ষ এবং প্রতিকূল। বায়ুমণ্ডলের প্রধান উপাদান ছিল হাইড্রাইড, মিথেন, অ্যামোনিয়া এবং পানিবাষ্প। বজ্রপাত ও তেজস্ক্রিয় বিকিরণের প্রভাবে সর্বদাই বিভিন্ন অজৈব উপাদানের মাঝে ক্রিয়া-বিক্রিয়া চলত এবং ধারণা করা হয় এমনই কোন অবস্থায় হাইড্রাইড, মিথেন, অ্যামোনিয়া এবং পানিবাষ্পের মত উপাদানের মাঝে মিথস্ক্রিয়ার ফলে তৈরী হল প্রথম জৈব অণু অ্যামাইনো এসিড। অ্যামাইনো এসিড অণুটির কাঠামোতেও আমরা দেখতে পাই নাইট্রোজেন, হাইড্রোজেন, অক্সিজেন ও কার্বনের উপস্থিতি। জীবনের প্রথম অণুটি তো তৈরী হল, কিন্তু এদের সন্নিবেশিত করে প্রাণের রূপ দেয়ার পেছনে যার ভূমিকা ছিল প্রধান তা হল জিন।
জীবন তৈরীর সমস্ত বার্তাবহনকারী এই জিন হল ডিএনএ-এর একটি ক্ষুদ্র অংশ। জিনের মাঝে নিহিত এই বিশেষ বার্তাকে বলা হয় কোডন, যা যেকোন তিনটি নাইট্রোজেন বেইজ(অ্যাডেনিন, গুয়ানিন, থাইমিন ও সাইটসিন)-এর একটি অনুক্রমমাত্র। এক একটি কোডন এক একটি অ্যামাইনো এসিডকে নির্দেশ করে এবং তাদের ক্রম নির্দেশ করে কোন অ্যামাইনো এসিডের পর কোনটি বসবে। এভাবে তৈরী হয় বিভিন্ন ধরণের প্রোটিন।
এখন প্রশ্ন আসতে পারে এসব প্রোটিন দিয়ে কি হবে? আসলে সবধরনের জৈবিক গঠন থেকে শুরু করে জৈবনিক সকল কর্যাবলি নিয়ন্ত্রিত হয় প্রোটিন দিয়ে। কোথায় নেই প্রোটিন- কোষের আবরণ থেকে শুরু করে হরমোন (দৈহিক কার্যাবলী নিয়ন্ত্রণকারী), এনজাইম (পরিপাককারী), অ্যান্টিবডি (রোগ প্রতিরোধকারী), রক্তের অ্যালবুমিন (পুষ্টিউপাদান সংরক্ষণকারী), ক্যারিয়ার প্রোটিন (বাহক) অর্থাৎ জিন কর্তৃক প্রদত্ত বার্তা বাস্তবায়নের মূলদায়িত্ব প্রোটিনের। তাই জিন থেকে শুরু করে জীব পর্যন্ত ধারাটি হল এরকম-
কি নির্ভুলভাবে জিন বার্তা বহন করে চলেছে এক জীব থেকে অন্য জীবে! মানুষ থেকে মানুষ, জিরাফ থেকে জিরাফ, হাতি থেকে হাতি, শিম্পাঞ্জি থেকে শিম্পাঞ্জি, পাখি থেকে পাখি জন্ম নিচ্ছে কোন ব্যতিক্রম নেই তার। মানুষ থেকে কখনও জিরাফ জন্ম নেয়না, পাখি থেকে ইঁদুর জন্ম নেয়না, হাতি থেকে শিম্পাঞ্জি জন্ম নেয়না! আবার একই প্রজাতির মাঝে প্রাকৃতিক পরিবেশের ভিন্নতা ও জীবনধারণের প্রয়োজনীয়তা অনুসারে এই জিনই ঘটিয়েছে নানা পরিবর্তন, ডারউইন আমাদের সেই বিবর্তনের জ্বলজ্যান্ত প্রমাণ দেখিয়েছেন। বিবর্তনের ইতিহাস আরেকদিন বলা যাবে, এখন লাইনে থাকার চেষ্টা করছি।
সন্তান জন্ম নেয়ার পর আমরা চেষ্টা করি বাবা-মার সাথে তার চেহারার মিল খুঁজে বের করতে। কি করে সন্তান বাবার মত নাক, মার মত চোখ, দাদার মত রঙ আর নানার মত চুল পায়? বংশে কারও কোন রোগ থাকলে তা কিভাবে বংশধরদের মাঝে চলে আসে? এসব প্রশ্নের উত্তর সেই জিনের মাঝেই থাকে। জিনই হল বংশগতির ধারক ও বাহক।
প্রতিটি মানুষের জিনগত স্বাতন্ত্র্য থাকে যাকে বলে জেনেটিক ফিঙ্গারপ্রিন্ট। এই জেনেটিক ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিয়েই সন্তানের বাবা-মার পরিচয় থেকে শুরু করে অপরাধী পর্যন্ত শনাক্ত করা সম্ভব। একটিমাত্র চুল, নখ, লালা বা রক্তের নমুনা থেকে অজানা ব্যক্তির পরিচয় বের করা সম্ভব।
সেই দিন হয়ত আর বেশি দূরে নয় যখন মানুষ জিন সিকোয়েন্স-এর পরিবর্তন ঘটিয়ে অসাধ্য সাধন করতে সক্ষম হবে; হয়ত জটিল সব রোগের প্রতিকার বের করে ফেলবে; ত্রুটিপূর্ণ অঙ্গ ফেলে দিয়ে জীনপ্রযুক্তি ব্যবহার করে ল্যাবে তৈরী কৃত্তিম অঙ্গ ব্যবহার করবে; হয়ত প্রকৃতিতে টিকে থাকার সংগ্রামে অনেকদূর এগিয়ে যাবে মানুষ। হয়ত তার পছন্দসই বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন উত্তরাধিকারের জন্ম দেবে মানুষ।
-----এপোলোনিয়া------
[এটি সচলায়তনে আমার প্রথম পোস্ট। পাঠকদের উৎসাহই হবে আমার প্রেরণা]
[ছবিসূত্র- ইন্টারনেট]
মন্তব্য
সচলে স্বাগতম এপোলোনিয়া।
লেখাটা আরেকটু বিস্তারিত হলে ভাল হত। তবে পরের বার হবে আশা করি !
facebook
ধন্যবাদ। লিখার অভ্যাস হয়নি এখনও, তাই আলসেমী করে এ পর্যন্তই লিখেছি। তবে আরও লিখার চেষ্টা করব।![হাসি হাসি](http://www.sachalayatan.com/files/smileys/1.gif)
সচলায়তনে স্বাগতম।
জীবনের প্রথম অণু তৈরির সম্ভাবণা বাতাসে নয়, পানিতেই বেশি। প্রথম প্রাণও পাণিতেই সৃষ্টি হয়েছে। জীবণের প্রথম অণুকে সন্নিবেশিত করে প্রাণে রূপ দিয়েছে জীন' এই কথাটি বিভ্রান্তিকর। পাঠক বিভ্রান্ত হতে পারেন।
লিখতে থাকুন নিয়মিত।
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
আমি এখানে চেষ্টা করেছি জিনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাগুলো তুলে ধরতে। এ বিষয়ে প্রচুর গবেষণা হয়েছে এবং হচ্ছে। প্রাণের উৎপত্তিতে জিনই একমাত্র নিয়ামক, সেটাতো বলিনি। আমি জটিল তত্ব ও টার্ম ব্যবহার না করে সরলভাবে লিখার চেষ্টা করেছি। ধন্যবাদ সাজেশনের জন্য। পরবর্তীতে আরও তথ্যবহুল লেখা দেয়ার চেষ্টা করব।
পরিস্কার হয়নি। আরো তথ্যদিয়ে আরেকটা লেখা দিতে পারেন কিন্তু।
_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩
ধন্যবাদ।পরবর্তীতে আরও বিস্তারিত লেখার চেষ্টা করব।![হাসি হাসি](http://www.sachalayatan.com/files/smileys/1.gif)
_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩
"There is grandeur in this view of life." - Charles Darwin
সচলায়তনে স্বাগতম!
ধন্যবাদ![হাসি হাসি](http://www.sachalayatan.com/files/smileys/1.gif)
এপিজিনেটিকসের বিষয়গুলি পড়ে নিতে পারেন। জীবনের সমস্ত বার্তা যে জিন বহন করেনা, বরং অন্য কিছুও আছে সেটা জেনে মজা পাবেন।
খান ওসমান
পড়ে দেখব অবশ্যই, আমারও এ বিষয়ে আরও জানার ইচ্ছে আছে। ধন্যবাদ।
প্রথমেই সচলায়তনে স্বাগত জানাই।
বেশ ভালো লেখা হয়েছে। লিখতে থাকুন।
আরেকটি অনুরোধ: আপনি তথ্যসমৃদ্ধ ভালো লেখা লিখছেন। বাংলা উইকিপিডিয়ায় লিখবেন?
প্রোফেসর হিজিবিজবিজ
কেন নয়, এটি আমার জন্য অসাধারণ একটি সুযোগ হব? অনেক অনেক ধন্যবাদ। কিন্তু বাংলা উইকিপিডিয়ায় কিভাবে লিখবো?
স্বাগতম, লেখা ভাল লেগেছে
ইসরাত
সচলে স্বাগতম এপোলোনিয়া।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
ধন্যবাদ![হাসি হাসি](http://www.sachalayatan.com/files/smileys/1.gif)
ভালো লেগেছে
চালিয়ে যান !
ধন্যবাদ![হাসি হাসি](http://www.sachalayatan.com/files/smileys/1.gif)
লিখতে থাকুন![হাসি হাসি](http://www.sachalayatan.com/files/smileys/1.gif)
------------
'আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ !
নিশ্চয়ই
![আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা- আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-](http://www.sachalayatan.com/files/smileys/dhoinna4-50.png)
ভালো লেগেছে। তিবু দু-চার কথা থেকে যায়।
"লেখা" শব্দটিকে "লিখা" লিখলে চোখে বাজে এবং কানে খটোমটো ঠেকে।
দ্বিতীয় ছবিটি 'জিন থেকে জীব নয়' বরং তীর অনুযায়ী জীব থেকে জিন এক্সট্র্যাকশনের পন্থা বোঝায়।
জেনেটিক এঞ্জিনিয়ারিং আসলে রোগ নির্মূল বা প্রতিরোধে কতটা সফল হবে সে নিয়ে কিছু বলা কঠিন। কারণ প্রায় সব জেনেটিক ট্রেইটের প্রকাশই কম বেশি পরিবেশের ওপর নির্ভর করে এবং এই পরিবেশ বলতে নিয়ন্ত্রক প্রোটিন এবং আপাত নিষ্ক্রিয় জিনের জটিলতম মিথষ্ক্রিয়াকে বোঝায়। কাজেই শুধু জেনেটিক এঞ্জিনিয়ারিং এর মাধ্যমে রোগ নিয়ন্ত্রণ করা গেলেও নির্মূল করা কঠিন হবে।
বেশ আগ্রহ নিয়ে পড়া হলো আপনার লেখাটি। প্রাসঙ্গিকভাবেই মনে পড়ে গেল ডকিন্স খুড়োকে। ওঁর দুটো বই 'দি সেলফিস জিন' আর 'দি এক্সটেন্ডেট ফেনোটাইপ'-এ কী বিস্ময়ই না বুনে রেখেছে বুড়োটা!
আপনি লিখেছেন,
খুড়ো কিন্তু বলেছেন একটু অন্যরকম,
মানে, কি দাঁড়ালো? জিনের বার্তাবাহন একেবারেই যে নির্ভুল, তা কিন্তু নয়। আর জীবজগতের এই যে মনকাড়া বৈচিত্র্য, তাও কিন্তু এই ভুলেরই তরে।
এ বিষয়ে আরো অনেক লিখুন!![হাসি হাসি](http://www.sachalayatan.com/files/smileys/1.gif)
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
ধন্যবাদ, আপনার উদ্ধৃতিটির জন্য। আমি কিন্তু জিনের এই ধরণের মিউটেশনের কথা উল্লেখ করেছি-
তাই তো, লিখেছেন দেখছি! কিভাবে যে নজর এড়িয়ে গেল! বুড়ো হয়েছি তো, তাই এমনটা হতেই পারে।
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
হা হা, তা নয়
। আপনি আমার লেখাটি গুরুত্বের সাথে পড়েছেন, সেজন্য অনেক ধন্যবাদ।
লেখাটা ভালো লাগলো, ভবিষ্যতে এ নিয়ে আরো বড় বড় পোষ্ট চাই।
সময় নিয়ে লিখতে হবে, চেষ্টা করব বিস্তারিত লিখতে।উৎসাহ দেবার জন্য ধন্যবাদ![হাসি হাসি](http://www.sachalayatan.com/files/smileys/1.gif)
মজা পাইলাম ।
প্রথম লেখা তাই সহজ সরল হয়েছে অনেকটা।তবে আরেকটু গভীরে যাবেন আগামীতে।বিশেষ করে জিনের বংশগতি,মেন্ডল সূত্র,তার ব্যাতিক্রম,বিবর্তনে জিনের বিকাশ এগুলো নিয়ে আরেকটু গভীরে আলোচনা হবে আশা করি।হিউম্যান জিনোম প্রজেক্টতো অনেক দূর এগিয়েছে,জিনের ম্যাপ এই দুটো নিয়ে কিছু লিখবেন আশা করি।
অনেক কিছু বলে ফেললাম।হাহা লেকা ভালো হয়েছে।
মাসুদ সজীব
নতুন মন্তব্য করুন