জীবের বিলুপ্তি ৪ঃ কিভাবে ম্যামথ ক্লোন করবেন

সজীব ওসমান এর ছবি
লিখেছেন সজীব ওসমান (তারিখ: শুক্র, ১২/০৭/২০১৩ - ২:২১অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

মাত্র সাড়ে চার হাজার বছর আগেও ম্যামথ পৃথিবীতে বসবাস করতো। ইউরোপ থেকে আফ্রিকা হয়ে এশিয়া, এমনকি মেক্সিকো পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল এদের চারণভূমি। ঠিক কি কারণে এদের বিলুপ্তি হয়েছে সেটা নিয়ে এখনও বিতর্ক আছে। কিন্তু এই রাজসিক জীবটি আবার পৃথিবীতে ফিরে এলে দারুন হতো! আর সেই লক্ষে্যই পৃথিবীর নানা কোণার বেশকিছু বিজ্ঞানী চেষ্টা করছেন ক্লোন করে ম্যামথকে আবার পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনতে।

এই পর্বে চলুন দেখি একটা ম্যামথ আপনি কিভাবে ক্লোন করতে পারবেন। বেশি কিছু লাগবেনা না, ম্যামথের ডিএনএ, একটা মা হাতি এবং একটা ক্লোনিং এর জন্য গবেষণাগার। ব্যস। কয়েকদিন পরই দেখবেন ছোট ছোট ম্যামথ আপনার উঠোনে খেলাধুলা করছে! হাসি ব্যাপারটা কি এতই সহজ?! মোটেই না। বিজ্ঞানীদের ঘাম ছুটে যায় শুধু এধরনের ক্লোনিং এর একটা একটা ধাপ পার হতে। এখানে কয়েকটা উপায় উল্লেখ করছি। মোটামুটি সবধরনের বিলুপ্ত প্রাণী ফিরিয়ে আনতে এই ক্লোনিংয়ের উপায়গুলি প্রযোজ্য।

ছবিঃ ম্যামথ এবং এশিয়ান হাতি

ক্লোনিংঃ

এখানে ম্যামথকে ক্লোন করা হচ্ছে একটি হাতিকে হোস্ট হিসেবে চিন্তা করে। মূলত দুইটা পন্থায় ভাগ করা যায়। প্রথমটা হল যদি আমাদের কাছে ম্যামথের কোন অক্ষত কোষ থাকে তবে তা থেকে ডিএনএ নিয়ে, আর দ্বিতীয়ত সিনথেটিক ডিএনএ বা ইঞ্জিনিয়ারিং করা ডিএনএ দিয়ে। ছবিগুলির ধাপগুলি অনুসরণ করুন।

প্রথম উপায়

ম্যামথের স্পার্ম থেকে থেকে ক্লোনিং-
১) ম্যামথের একটি জীবিত স্পার্ম লাগবে।
২) স্পার্মটিকে হাতির ডিম্বকোষ আলাদা করে তার সঙ্গে নিষিক্ত হতে দিতে হবে।
৩) তারপর নিষিক্ত ডিম্বক হাতির গর্ভে স্থাপন করতে হবে।
৪) যে শিশুটি হবে সেটা হবে হাতি-ম্যামথের হাইব্রিড, কারন উভয়ের কোষেরই ডিএনএ এখানে ব্যবহৃত হয়েছে।
৫) তারপর হাইব্রিডটিকে মা হিসেবে ব্যবহার করে ম্যামথের স্পার্ম দিয়ে পুনরায় ক্লোন করলে একটু শুদ্ভ ম্যামথ শিশু তৈরি হবে।

ছবিঃ প্রথম উপায়

দ্বিতীয় উপায়

এবার দেখবো হিমায়িত কোষ থেকে ক্লোনিং এর উপায়-
১) কোনো হিমায়িত ম্যামথ কোষ থেকে নিউক্লিয়াস পৃথক করতে হবে (নিউক্লিয়াসের ভেতরে ক্রোমোজমে সাজানো থাকে ডিএনএ)।
২) কোনো একটি হাতির ডিম্বাণু থেকে নিউক্লিয়াস সরিয়ে তা ম্যামথ নিউক্লিয়াস দিয়ে প্রতিস্থাপন করতে হবে। তাহলে যে ডিম্বাণুটা তৈরি হবে সেটা বিভাজিত হয়ে একটা শিশু ম্যামথের রূপ নিতে পারবে।
৩) এবারে কোষটিকে রাসায়নিকভাবে অথবা বৈদ্যুতিকভাবে উদ্দীপিত করতে হবে যেন কোষবিভাজণ শুরু হয়।
৪) ডিম্বাণুটি নিয়ে একটা হাতির জরায়ুতে স্থাপন করতে হবে, এই হাতিই হবে নতুন ম্যামথের মা।
৫) যদি সফল গর্ভধারন সম্ভব হয় হাতিটি একটি ম্যামথ শিশুর জন্ম দেবে।

ছবিঃ দ্বিতীয় এবং তৃতীয় উপায়

তৃতীয় উপায়

এবার দেখি সিকোয়েন্স করা ম্যামথ জেনোম থেকে কিভাবে ক্লোন করা যায়-
১) প্রথমে ম্যামথের জিনেটিক কোড সিকোয়েন্স করা হয় এবং এরপর নিচের যেকোনো একটি উপায় অবলম্বন করা হয় ঃ

উপায় ক
২ক ) জিনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যাবহার করে ম্যামথের লম্বা ডিএনএ-সূত্র তৈরী করতে হবে। মানে পুরো ডিএনএ কে কৃত্রিমভাবে তৈরি করতে হবে।
৩ক ) ডিএনএ-সূত্রকে একটি ক্রোমোজম হিসাবে সাজাতে হবে। এক কথায় বলে দিলাম, কিন্তু এই কাজ করা মোটেই সহজ কাজ নয়। বর্তমান টেকনোলজিতে প্রায় অসম্ভব।
৪ক) প্রাপ্ত ম্যামথ ক্রোমোসোম একটি কৃত্রিম নিউক্লিয়ার পর্দা দ্বারা বেষ্টিত করা হয়। এই জিনিসও খুবই জটিল জিনিস।
পরের ধাপটা হল হিমায়িত কোষ থেকে ক্লোনিং এর, অর্থাৎ দ্বিতীয় উপায়ের ২ নং উপায় থেকে অনুসরণ করা।

উপায় খ
২খ ) হাতির জেনোম সিকোয়েন্স প্রায় ৪০০০,০০০ টি জায়গায় ম্যামথের চেয়ে ভিন্ন (হাতি এবং ম্যামথের সিকোয়েন্সের ৯৪ শতাংশে মিল আছে)। এই পদ্ধতিতে হাতির জেনোমের জায়গাগুলিকে পরিবর্তন করে ম্যামথের মত বিন্যাসে নিয়ে আসা যেতে পারে। কিন্তু এটা কতটা কষ্টসাধ্য ব্যাপার হবে চিন্তা করছি!
আবার হাতির এপিজিনেটিক চিহ্নগুলি পুরোপুরি ম্যামথের মত না হওয়ারই কথা। কোষে ডিএনএ শুধু বিন্যাসই সবকিছু নয়। ক্রোমোজমের মধ্যে এমন কিছু চিহ্ন আছে যেগুলি কোন জিন কখন প্রকাশিত হবে বা বন্ধ হবে বা কি মাত্রায় প্রকাশিত হবে সেগুলি নির্ধারন করে। এগুলিকে এপিজিনেটিক চিহ্ন বলে। তাই এই পদ্ধতি অবলম্বন করলে ফেইল করার সম্ভাবনাই বেশি।
৩খ) হাতির চামড়ার কোষকে ভ্রূণীয় স্টেম কোষে রূপান্তরিত করার জন্য রিপ্রোগ্রাম করা হয়। মানুষের ক্ষেত্রে এমন করা গেছে সম্প্রতি!
৪খ) এরপর হাতির পরিবর্তিত এবং সংশোধিত জিন এই ভ্রূণ কোষের মধ্যে স্থাপন করতে হবে।
পরের ধাপটা হল হিমায়িত কোষ থেকে ক্লোনিং এর, অর্থাৎ দ্বিতীয় উপায়ের ৩ নং উপায় থেকে অনুসরণ করা।

ঝামেলা সমূহঃ

কি, বিরাটা ঝামেলার ব্যাপার মনে হচ্ছে? ঝামেলা তো বটেই। ঝামেলা সেটা নিয়ে একটু আলোচনা করি। যেমন, প্রথম এবং দ্বিতীয় উপায় অনুসরণ করতে আপনার লাগবে একটি ম্যামথের জীবিত স্পার্ম বা এমন কোষ যার নিউক্লিয়াসে ক্রোমজমগুলি মোটামুটি অক্ষত আছে। এই জিনিসটা পাওয়া খুবই কষ্টকর। শুধুমাত্র পার্মাফ্রষ্ট এলাকায় (বহুবছর যেখানে হিমাংকের নিচে তাপমাত্রা থাকে) কোন ম্যামথ ফসিল সংরক্ষিত থাকলে সেখান থেকে পাওয়া সম্ভব। ম্যামথেরা ৫ মিলিয়ন বছর আগে থেকে ৪.৫০০ বছর পর্যন্ত বসবাস করেছে পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে। কিন্তু সর্বশেষ প্রাণীটিরও দেহাবশেষ থেকে অক্ষত ডিএনএ পাওয়া দুষ্কর। কারণ ডিএনএ খুব সহজেই ভেঙে যায়। সম্প্রতি একটা দেহাবশেষ পাওয়া গেছে- কিছু বিজ্ঞানীরা দাবি করেছেন যে এই ফসিলের জীবিত রক্তের কোষ আছে। কিন্তু সেটা সত্যি হবার সম্ভাবনা কতটুকু এবং হলেও কিকি ধরনের সমস্যা হতে পারে সেটা নিয়ে পরের পর্বে লিখব।

তারপর লাগবে একটা এমন হাতি যেটার সঙ্গে ম্যমাথের কোষের বেশ ভাল মিল আছে। সবচেয়ে ভাল হত যদি একটি ম্যামথ মা বেঁচে থাকতেন। এখন যেটা হবে সেটা হল, যদি আমরা ম্যামথ শিশু ফিরিয়ে আনতে করতে পারি তারপরও শিশটি পুরোপুরি ম্যামথ হবেনা। বরং একটা হাতি-ম্যামথ হাইব্রিড হবে। কারণ আমরা হাতির কোষকে হোস্ট হিসেবে ব্যাবহার করছি। আবার, হাতির থেকে ডিম্বকোষ নিয়ে এরকম পরীক্ষা করে করে চেষ্টা করতে প্রায় ১০০০ টি ডিম্বকোষ লাগতে পারে। এতগুলি জোগাড় করাটা বেশ কষ্টসাধ্য হবে।

তৃতীয় উপায়ে আসি। ব্যাকটেরিয়ার ক্ষেত্রে সম্ভব হলেও, জটিল বহুকোষী এবং বহু ক্রোমোজমসহ জীবের সিনথেটিক ডিএনএ তৈরি করতে পারা এখন অসম্ভব। তারপর আবার রয়েছে এই ডিএনএকে ক্রোমোজমে সাজানো, তার মধ্যে এপিজিনেটিক চিহ্ন সঠিকভাবে বসানো ইত্যাদি। এটা এতই জটিল যে কল্পনা করতেও কষ্ট হয়। উপায় ২খ তে বলছি ৪০,০০০০ স্থানে বিভিন্নরকম মিউটেশান এর কথা! কে করবে এত ম্যামথ আকারের কাজ? আবার কোষকে রিপ্রোগ্রাম করা? বাব্বাহ।

সেজন্য প্রথম এবং দ্বিতীয় উপায়দুইটিই সবচেয়ে সহজ উপায় বলে ধরে নেয়া যায়। আর এত বাঁধা এবং সম্ভাব্য অসফলতার কারণ সত্ত্বেও বিজ্ঞানীরা পিছপা হননি। রাশিয়া, জাপান, কোরিয়া বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানীরা ম্যামথ ক্লোনিং এর গবেষণাগার খুলে বসে আছেন। নিত্য চেষ্টা করছেন অগ্রগতির। আশা করি একদিন তারা সফল হবেন।

আপনার যদি ক্লোন করার সুযোগ থাকতো তবে কোন প্রাণী ক্লোন করতেন?

পূর্বের পর্বঃ

আইবেক্স এর ফিরে আসা! বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া প্রাণী কি ফিরিয়ে আনা যাবে?

গ্যাষ্ট্রিক ব্রুডিং ব্যাঙ এর ফিরে আসা! বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া প্রাণী কি ফিরিয়ে আনা যাবে?

বিলুপ্ত প্রাণী কি ফিরিয়ে আনা উচিত?

সূত্রঃ

১) http://phenomena.nationalgeographic.com/2013/03/19/reinventing-the-mammoth/

খান ওসমান


মন্তব্য

মাহবুব লীলেন এর ছবি

এইসব নিয়া বেশি আলোচনা ভালো না
না হলে কেউ আবার এইসব দেইখা গোলাম আজমের ক্লোন কইরা বসব

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

যেই অবস্থা দেখতেছি আশে পাশে, তাতে গোলামের আজমের ক্লোন অল্রেডি হইয়া গেছে বইলাই ধারণা হয়। আর সেইটা স্থাপন করার জন্য জরায়ুর অভাব হবে না, আমাদের চারপাশে 'ম্যারি মি আফ্রিদি' মেহজাবিন্দের তো অভাব নাই।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

অতিথি লেখক এর ছবি

দেঁতো হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

হাসি

সাকিন উল আলম ইভান  এর ছবি

গোলাম আযমের ক্লোন , হা হা হা গড়াগড়ি দিয়া হাসি

তারেক অণু এর ছবি

বেশ হচ্ছে ! সেই দিন খুব দূরে না মনে হচ্ছে, যেদিন ম্যামথ দেখতে আমরা গাড়ী চেপে সাইবেরিয়ার কোন ন্যাশনাল পার্কে যাব।

অনেক প্রাণীই তো ফিরিয়ে আনতে ইচ্ছে করে, হোমিনিডদের আনলে কেমন হয়?

অতিথি লেখক এর ছবি

হোমিনিডদের ক্ষেত্রে লিগাল এবং নৈতিক ঝামেলাগুলা আছে বোধ হয়। সহজ হবেনা এই গবেষণার ফান্ড পাশ করানো।

ওডিন এর ছবি

হ। কয়দিন আগে এইরকম একটা আর্টিকেল দেখছিলাম, লিঙ্ক খুইজা পাইলে এইখানে আটকে দিবো নে

অতিথি লেখক এর ছবি

চমৎকার হয়েছে - একেবারে ঝরঝর করে পড়ে ফেললাম - সচিত্র!
কি ফিরিয়ে আনব? উদাস করে দিলেন! ধরেন, বিনয় মজুমদার-এর কবিতা থেকে উড়ে চলে যাওয়া সেই প্রকৃত সারস কোনো। নাই তো, কোথাও নাই সে তো আর!
- একলহমা

অতিথি লেখক এর ছবি

সারস! ধন্যবাদ।

হিমু এর ছবি

একটা ব্যাপার সদ্যই জানলাম। স্তন্যপায়ীদের গর্ভকাল নির্ধারিত হয় মায়ের বিপাকের হার আর গর্ভস্থ শিশুর বিপাকের হারের ছেদবিন্দু দিয়ে। মা একটা নির্দিষ্ট সময়ের পর আর বিপাকহার বাড়াতে পারেন না। ওদিকে শিশুর বিপাকহার প্রায় সূচকীয় রীতিতে বাড়ে। মানুষের ক্ষেত্রে এই দুই হার পরস্পরকে ছেদ করে নয় মাসে।

ম্যামথের আকার যেহেতু এশীয় হাতির তুলনায় অনেক বড়, গর্ভস্থ ম্যামথশিশুর বিপাকের হারও হয়তো গর্ভস্থ হাতিশিশুর বিপাকের হারের তুলনায় বেশি। সেক্ষেত্রে সম্ভাবনা থেকে যায় যে ম্যামথশিশুটি হাতির গর্ভ থেকে অকালভূমিষ্ঠ হবে। সেটার মোকাবেলা করা যাবে তো?

সজীব ওসমান এর ছবি

গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিন্তু উলি ম্যামথ মেন হয়না বর্তমান হাতির চেয়ে খুব বেশি বড় ছিল। ছবি এবং লিংকটি দেখুন।

তবে আমি গর্ভকালীণ সময়টা নিয়ে খুবভাল জানিনা। একটু পড়ে নিয়ে জানাচ্ছি (যদি বুঝে থাকি)।

দিগন্ত এর ছবি

এইটা মনে হয় নতুন থিয়োরী। আগে জানতাম শিশুর মাথার ব্যাস আর পেলভিক দৈর্ঘ্যের ব্যাপার।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

হিমু এর ছবি

আমিও তা-ই জানতাম। ধারণা করা হতো জননদ্বারের প্রস্থ বাড়লে তা নারীর চলনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে উদ্বর্তনের অনুপযোগী পরিস্থিতি তৈরি করবে। কিন্তু বেশ সাম্প্রতিক এক নিরীক্ষায় দেখা গেছে, মানুষের ক্ষেত্রে নারীর হাঁটা বা দৌড়ের ওপর জননদ্বারের প্রস্থের কোনো উল্লেখযোগ্য নেতিবাচক প্রভাব নেই। বরং গর্ভস্থ শিশুর বিপাকের হারের সঙ্গে মা মোটামুটি নয় মাস পর্যন্ত তাল রাখতে পারেন। পাঁচ মাস গর্ভকালেই মা বিপাকের হারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে চলে যান, এর বেশি তাঁর পক্ষে ওঠা সম্ভব হয় না। কিন্তু গর্ভস্থ শিশুর বিপাকের হার দ্রুত বাড়তে থাকে। দুটো রেখা নয়মাসের কাছাকাছি এসে ছেদ করে। এরপর মায়ের পক্ষে গর্ভে শিশুকে ধারণ করা আর সম্ভব হয় না। শিশুর মাথার ব্যাসের বিপদ তো আছেই, কিন্তু সেটা জননদ্বারের প্রস্থের বিবর্তনের পেছনে একমাত্র বা মুখ্য কারণ নয়, এমনটাই শুনলাম।

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

চলুক

সজীব ওসমান এর ছবি

হাসি

আয়নামতি এর ছবি

বাব্বাহ এ তো দেখছি অনেক হ্যাপার কাজ! আচ্ছা যেহেতু ক্লোনটা ম্যামথ আর হাতির মিলিত কোষ নিয়ে
ভূমিষ্ট হবে তাহলে ওর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যে কিছু পরিবর্তন আসতে পারে? ইয়ে সিনেমায় দেখেছি পরজন্মের নাম নিয়ে তাধিন তাধিন করে চরিত্রকে আসতে। তাদের আগের জীবনের ঘটনা মনে পড়ার নানান সব কিচ্ছা কাহিনি।
এদের ক্ষেত্রেও কী তেমন ঘটার সম্ভাবনা আছে? নিরেট মাথার প্রশ্ন বুঝতেই পারছেন। এটা নিয়ে হা হা হি হি করলে খুব খারাপ হবে কিন্তু! সিরিজটা খুব আগ্রহ নিয়ে পড়ছি। পরের পর্ব আসুক দ্রুত।

সজীব ওসমান এর ছবি

ম্যামথের স্পার্ম দিয়ে নিষিক্ত করে ক্লোন করলে হাতির ডিএনএ'র সঙ্গে রিকম্বিনেশান হবে। ফলে সেক্ষেত্রে অনেকখানি বাহ্যিক বৈশিষ্ট্যই হাতির মত হওয়ার কথা।

অন্য উপায়ের ক্লোনিং এ ম্যামথের ডিএনএ একক ডিএনএ হয়, এতে বাহ্যিকভাবে কতটা ম্যামথ পরিবর্তিত হবে সেটা বলাটা খুবই মুশকিল বলে মনে করি। কারন কোষের অন্য সব উপাদান হাতির।

জাতীস্মর বৈজ্ঞানিকভাবে কখনই প্রমাণিত হয়নাই হাসি
তবে জিনগতভাবে আমাদের চিন্তার ধারা বংশানুক্রমে নিয়ন্ত্রণের উদাহরণ আছে।

আয়নামতি এর ছবি

সুন্দর করে উত্তর দেবার জন্য আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা- হাসি

রামগরুড় এর ছবি

আমি অবশ্য আরেক যায়গায় পড়েছিলাম যে দ্বিতীয় পদ্ধতিতে ক্লোনিং করলে যে ক্লোন শিশুর জন্ম হয় তার দেহের প্রতিটি কোষের ক্রোমোজমের (জৈবিক) বয়স দাত্রী কোষের ক্রোমোজমের (জৈবিক) বয়সের সমান হয়। সব ক্রোমোজমে নাকি একটা (জৈবিক) ঘড়ি বসানো থাকে, আর শুধুমাত্র শুক্রাণূ দিয়ে নিষিক্ত করা কোষের ক্ষেত্রেই সেই ঘড়ি "শূন্য সময়" বা সোজা ভাষায় "রিসেট" করা অবস্থায় পাওয়া যায়। এবং এই কারণে যে ক্লোন শিশু ভূমিষ্ট হয়, তার বয়স নাকি দাত্রী জীবের বয়সের সমান হয়, সোজা কথায় যদি ৮০ বছর বয়সের একটি প্রাণীর শরীর থেকে ডি.এন.এ. নিয়ে আরেকটা প্রাণী ক্লোন করা হয়, তাহলে ক্লোন শিশুর জৈবিক বয়সও ৮০ হবে (যদি প্রাণীটার গড় আয়ু ১০০ বছর হয়, তাহলে সেই শিশু ২০ বছর বয়সেই বুড়া হয়ে মারা যায়)। এইটা কি সত্যি?

আপনার এই জুরাসিক পার্ক সিরিজের সব লেখাই চমৎকার।

সজীব ওসমান এর ছবি

আশ্চর্যজনক হলেও ব্যাপারটা সত্যি। তবে এরকম বছরের হিসাবটা করা বোধহয় সঠিক না।

সহজ করে বলি কেন। নিউক্লিয়াসের ভেতর ডিএনএ থাকে ক্্রোমজম হিসেবে এবং ক্রোমোজমের প্রান্তিক অংশের নাম টেলোমিয়ার। এখন ব্যাপার হল এই টেলোমিয়ার দৈর্ঘ্যে ছোট হয় প্রতিবার কোষ বিভাজনের সঙ্গে। অর্থাৎ ডিএনএ যত বিভাজিত হয় টেলোমিয়ার তত ছোট হয়। ফলে বেশি বয়সী জীব ডোনার হলে তার ডিএনএ বেশিবার বিভাজিত হয়েছে বলে টেলোমিয়ার অনেক ছোট হয়ে যাবে। ফলে ক্লোন হওয়া জীবটি কম দিন বাঁচবে।

পরের পর্বে হয়তো ক্লোনিংএর সমস্যাগুলি আরেকটু বিস্তারিত বলার চেষ্টা করবো।

স্যাম এর ছবি

শিরোনাম দেখেই বুঝেছিলাম আপনার লেখা হবে, মিলে যেতেই দেঁতো হাসি
বিজ্ঞান নিয়ে সহজ করে লেখায় অনার্য সঙ্গীত, কৌস্তভ সহ আরো বেশ কয়েকজন এর সাথে আশা করি আপ্নিও নিয়মিত হবেন। শফিরা ধ্বংস হবার বেশি দেরী নাই।

অভিনন্দন!!

অতিথি লেখক এর ছবি

দেঁতো হাসি

বন্দনা এর ছবি

এমন সহজ করে লিখছেন , পড়ে মনে হচ্ছে গবেষনাগারে ম্যামথ বানানো কেবল সময়ের ব্যাপার মাত্র। আরো লিখা আসুক এই ধরনের।

সজীব ওসমান এর ছবি

ধন্যবাদ

বিবর্ণ সময় এর ছবি

ও ভাই। অনেক জ্ঞান তো দিলেন। ম্যামথ জিনিস টা কী? কী কী কাজে লাগে ? এবং ফিরিয়ে আনার দরকারটা কী? হাল দিতে পারবে নাকী জমিতে? চিন্তিত

সজীব ওসমান এর ছবি

আগের পর্বগুলি আলোচনা পড়ুন অনুগ্রহ করে। হাতির গুণাবলীই ম্যামথেরও থাকার কথা। এখান থেকেও দেখে নিন।

সুমাদ্রী এর ছবি

হাচলত্বের অভিনন্দন সজীব। আশা করছি সচলায়তনকে নিয়মিত এরকম ভাল লেখা দিয়ে আরও সমৃদ্ধ করবে।

অন্ধকার এসে বিশ্বচরাচর ঢেকে দেওয়ার পরেই
আমি দেখতে পাই একটি দুটি তিনটি তারা জ্বলছে আকাশে।।

সজীব ওসমান এর ছবি

সুমাদ্রী, কিখবর? ধন্যবাদ!

ওডিন এর ছবি

বরাবরের মতোই চমৎকার লাগলো লেখাটা। হাসি

সজীব ওসমান এর ছবি

ধন্যবাদ

মইনুল হাসান এর ছবি

যে প্রানিটাকে ভালবাসি অইডাকেই ক্লোন করে ফেলতাম। সে তো জীবিতই আছে, কোষ রিপ্রোগ্রামিং, মিউটেশন টাইম মেন্টেনিং - এতো কিছুর প্রয়োজনও হইতো না। ইয়ে, মানে...

সজীব ওসমান এর ছবি

হুম।

সজীব ওসমান এর ছবি

জি। বাংলা উইকিপিডিয়া কিন্তু আছে। লিখতে পারেন সেখানে। আলাদা আলাদা ভাবে বহু মানুষ চেষ্টাও করছেন দেশের শিক্ষাব্যাবস্থাকে যুগোপযোগী, সহজলভ্য, এবং সহজবোধ্য করতে।

সাইফুল নিপুণ এর ছবি

আমাদের দেশে বর্তমানে প্রচলিত শিক্ষা ব্যাবস্থায় ব্যবহৃত বইগুলোতে অনেক বিষয়ই থাকে, কিন্তু তার ব্যবহার এমন ভাবে হচ্ছে যে শিক্ষা প্রীতির বদলে শিক্ষা ভীতিই তৈরি হয়। এর পেছনে কারণ হিসেবে শিক্ষার প্রয়োজনীয় উপকরনের পাশাপাশি শিক্ষাদানকারীদের দক্ষতা ও জ্ঞানের স্বল্পতাও দায়ী। অনেক সময়ই দেখা যায় শিক্ষার্থীদের ইন্টারেস্টিং বিষয়ের প্রতি প্রীতি রেস্ট অফ দ্য লাইফে আর ইন্টার করতে পারে না; ফলশ্রুতি শিক্ষাভীতি।

আমার ক্লাস এইটের পরে সায়েন্স না নিয়ে পড়ার কারণ আমাকে কোন বিষয় না বুঝিয়ে মুখস্থ করতে বলতো (ব্যাটা গবেট তুই শুধু মুখস্থ কর)। কিন্তু আমার অযোগ্যতা হচ্ছে আমি কোন কিছু মুখস্থ করতে পারতাম না। একবার যুক্তি দিয়ে বুঝলে মুখস্থ কোরতে হোতো না।

শিক্ষকদের অনেকেই তাঁদের পছন্দের চাকুরী না পেয়ে শিক্ষকতায় যোগ দেন। তাঁরা অনেকটা ঠ্যাকায় পরে শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে নিয়েছেন। এতে করে মনোযোগী শিক্ষক তৈরী হচ্ছে না ফলে ছাত্র-ছাত্রীও মনযোগী থাকছে না। অমনোযোগী অপরিপক্কতা, অজ্ঞানতার বাহন হয়ে থাকছে।

অনেক আগে রাশিয়ান কালচারাল সেন্টার থেকে বের হওয়া বিভিন্ন মজার সব বইয়ের বাংলা অনুবাদ নীলক্ষেতের দোকান থেকে আমরা কিনতাম যেগুলোতে বিজ্ঞান ও অংকের অনেক বিষয়ে অনেক সুন্দর ভাবে বোঝানো থাকতো।

প্রকৃতিগতভাবে বাংলাদেশের মানুষ খুবই মেধাবী, কিন্তু প্রয়োজনীয় ইনফরমেশনের অভাব ও ইনফরমেশন থাকলেও তা প্রসেস করে জ্ঞান হিসেবে ব্যাবহার করার মত জ্ঞান আমাদের নাই। ছোটবেলায় অনেকেই পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে শিক্ষাকেই হারিয়ে ফেলে। অনেকে (খুবই কম সংখ্যায়) সচেষ্ট হয়ে কিছুটা হয়তো শিক্ষিত হয় কিন্তু তা অনেকাংশেই অপরিপক্ক থেকে যায়, এতে অন্ধকার ধ্যেয়ে আসে, কাটেনা।
এটা ঠিক যে আমাদের দেশে কয়জনই বা কম্পিউটার বা ইন্টারনেট ব্যাবহার করে। কিন্তু হয়তো কয়েক বছর পরে বাংলাদেশের ১০০% মানুষ কম্পিউটার ও ইন্টারনেট ব্যাবহার করবে যদি শিক্ষাকে শেখার মতো করা যায়। সেটা হয়তো একবারে হবে না, ধাপে ধাপে হবে। ঠিকমত করলে ধাপগুলো হয়তো দ্রুততম সময়ে শেষ করা যাবে।

সচলায়তনের সবাই খুবই মেধাবী, সবকিছুই সুন্দর ভাবে বুঝতে ও বোঝাতে সক্ষম। সবাই মিলে উইকিপডিয়ার মত বাংলায় কোন পিডিয়া তৈরী করা যায় কি? যেখানে প্যারালাল টিচিং এর কনসেপ্টে যে কেউ বাংলায় বিভিন্ন বিষয় মজার স্টাইলে, গল্পের ছলে পড়তে, বুঝতে ও রেফারেন্স হিসেবে ব্যাবহার করতে পারবে।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।