৫। ক) অনুভূ কী? ১
খ) কেন বছরের একটা দিনেই অনুভূ হয়? ২
গ) চাঁদের সাথে পৃথিবীর এভারেজ ডিসটেন্স তিন লক্ষ চুরাশি হাজার চারশ দুই কিলোমিটার! বাপরে বাপ! উসাইন বোল্ট ১০০ মিটার দৌড়াতে পারে ৯.৫৮ সেকেন্ডে মানে এক কিলো যাবে প্রায় দেড় মিনিটে। সে যদি সামহাউ অভিকর্ষকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে দৌড়ায় আর শেরশাহের মতো কেউ যদি মুন টু আর্থ একটা গ্রান্ড ট্রাঙ্ক রোড বানায় তাহলে উসাইন জ্যামাইকা থেকে চাঁদে কতোদিনে পৌছাইতে পারতো? ৩
ঘ) আর যদি অনুভূ হয় তবে কতদিনে পৌছাতে পারবে? উত্তর নির্দিষ্ট করে ব্যাখ্যা নিজের ভাষায় লিখ। ৪
খুব আশা নিয়ে পুরো কোশ্চেনটা পড়লো পিন্টু; এর আগে কোশ্চেনটা পাওয়ার পরেই চুমো দিয়ে- কপালে ঠেকিয়ে নিয়েছিল আর মনে মনে পড়ছিল, ‘লা ইলাহা ইল্লা আন্তা সুবহানাকা ইন্নি কুন্তু মিনাজ জোয়ালেমিন!’
‘একমাত্র আল্লাহই পারে বাঁশটা গোয়াতে যাওয়া ঠেকাইতে। কী লাভ হইল!
এর নাম নাকি সৃজনশীল কোশ্চেন!
প্রত্যেকটা কোশ্চন জঘইন্য, একবারে গুয়ের মতো গন্ধ ছাড়তাছে। আর লাস্ট কোশ্চেনটা তো এন্টিনার উপর দিয়া গেছে! বুঝলাম না হয়, ‘খ’ সেট। তাই বইলা! যে হালায় কোশ্চেনডা করছে হেরে যদি পাইতো পুটকি মাইরা তালগাছে তুইলা দিতো হউরের পুতেরে। এইডা কোন কথা? ইচ্ছা করতাছে ক্যালকুলেটর দিয়া নিজের চান্দিতেই একটা বাড়ি দিতে; নাহ! এমনিতেই ব্যথা।
কিছু করার নাই- অন্য কোশ্চেনগুলাও কমন পরে নাই; আন্ধা-গোন্ধা এইডাই একটা কিছু করতে হইবো।’ সাত-সতের ভাবতে গিয়ে ভয়ের একটা স্রোত কালঘাম হয়ে শার্ট ভিজিয়ে দিচ্ছে বেচারার।
এইচ.এস.সি পরীক্ষার আজকে শেষ দিন- পদার্থবিজ্ঞান ২য় পত্র।
‘এতোদিনের জেলখানার জীবন আইজকাই শেষ। এই কয়ডা দিন যা গেছে!’
আশে পাশে তাকালো- সবাই পন্ডিতের মতো মুখ কইরা খিচ্চা লেখতাছে। কতক্ষণ কলম কামড়ে দেখলো, ‘নাহ! একটা কিছু করতেই হইবো।’
তার উপর সীট পড়েছে ধানমন্ডি আইডিয়াল কলেজে; হেব্বী কড়া গার্ড দিয়া জান তেজপাতা কইরা ফালা্ইতাছে এক্কেরে। আরে বাবা, রাজউক উত্তরা মডেল কলেজের স্টুডেন্টগরে একটু চান্স দিবো না- একটু এক্সট্রা খাতির করলে কি অয়! কয় বছর ধইরাই তো তাদের কলেজ বোর্ডে হায়েস্ট রেজাল্ট করে।
কতক্ষণ তব্দা মাইরা থাইকা- ঠাশ কইরা স্ট্যান্ড আপ!
‘স্যার খাতা জমা দিয়া দেই?’ পিন্টু এইসবের ভিতর না গিয়া ডাইরেক্ট একশানে গেল। দিলাম না শালার এক্সাম; বাল ফালানি যাইবনি!
চশমার ফাঁক দিয়ে গোঁফ অলা স্যারটা অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে। পাঙ্ক টাইপের একটা ছেলে।
লম্বা চওড়া শরীরে সুন্দর মুখ, টম ক্রুজকে ফলো করে বোধহয় চুল কেটেছে; চশমাটা মুখে ভালো ছেলে ভাব আনতে পারেনি। বাম হাতে একটা ব্যান্ডেজ মতো- বেশ বড়। এরা ছাত্র সমাজের কলঙ্ক! পড়াশোনাতো করেই না খালি গুন্ডামি! মুখটা পুল টেবিলের হোলের মতো বড় করে বললো-
‘বলে কি ছেলে! বিশ মিনিটেই খাতা জমা দিয়ে দিবে?’ ‘কেন? লেখা শেষ?’
‘শুরুই করতে পারলাম না স্যার- আপনে কন শ্যাষের কথা!’
‘হুম! চুপ করে বসে থাক! ইন্সট্রাকশান হলো দুই ঘন্টার আগে বের হওয়া যাবে না।’
ফোঁস করে অজগরের মতো একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো পিন্টু।
দেখলো আশেপাশের সবাই তার দিকে তাকিয়ে আছে। এমনিতে হলে বিষয়টা এনজয় করতো সে, বাট নট নাউ। এই টাইমটাতে সবাই তারে ভোদাই ভাবতাছে নিশ্চিত।
আবার বসে পরলো।
এমনিতে তার সীটটা হেভি সুইটেবল। এই হলে ৬০ জনের সীট পরেছে, তিন সাড়িতে ২০টা বেঞ্চ- প্রত্যেক বেঞ্চে দুইজন করে। তার বেঞ্চটা একদম ডানদিকের কর্ণারে, সে বসেছেও ভিতরের দিকে; কিন্তু, প্রথম দিন এসেই দেখেছে তার দোস্ত ডিকনের সীট কেটে পরের রোর ফার্স বেঞ্চে!
কী আর করা! পাশের সীট ফর্সা মতো একটা মেয়ের- হলিক্রসের ছাত্রী; প্রথমদিন বাংলা একটা বানান জিগাইতে গেলো পিন্টু- মেয়েটা (প্রবেশপত্রে নাম লেখা তাসনুভা তাবাসসুম; অবশ্য বান্ধবীরা মিতু বলে ডাকে – পিন্টু শুনেছে এক্সাম শুরু হবার আগে।) মুখচোখ কঠিন করে বললো,
‘দেখুন- আমি কখনো কারো সাহায্য নেই না, আবার কাউকে সাহায্য করিও না। সো ডোন্ট ডিস্টার্ব- ইফ ইউ, আমি কিন্তু স্যার কে বলবো!’
এতো মেজাজ খারাপ হইলো পিন্টুর! সেও তো গোল্ডেন পাওয়া ছাত্র। ময়মনসিংহ জেলা স্কুলের ফার্সট বয় ছিল। অহংকারে লাগলো। ভাল করে আর মেয়েটার দিকে তাকালো না পর্যন্ত। তারপরে এই যে পরীক্ষাগুলো গিয়েছে- পাশাপাশি সীটে বসে তাদের মধ্যে চাঁদ-পৃথিবীর চেয়েও বেশি দূরত্ব।
নকল করে এই কয়দিন কেটেছে।
মোটামুটি চোথা নিয়া আসায় এক্সপার্ট পিন্টু; তার নকল ধরার মতো ইনভিজিলেটর এখনও পয়দা হয় নাই। হাত-পায়ে লিখে ঢোলা প্যান্ট আর ফুলহাতা শার্ট পড়লে তো কথাই নাই। তাছাড়া, ছোট অফসেট তিন ভাগ করে ছিড়ে তাতে এপাশ ওপাশ গুটি গুটি করে লিখে রাবার ব্যান্ড দিয়ে কাফ মাসলে বেঁধে আনলে তো সুপার্ব, মাঝে মাঝে টয়লেটে গিয়া চোথা চেঞ্জ করে আনলেই হয়।
এইসব দুই নাম্বারি কাজে তার ব্রেন ফার্স্ট ক্লাস ফেলুদার মতো খেলে।
কিন্তু ধ্যুস!
কালকে আম খাওয়াটাই ঠিক হয় নাই।
কিন্তু কি করন যাইব! এক্কেবারে ঠাকুরগাঁও এর টক জিনিস-অরজিনাল আর মাত্র পাঁচ টাকা কইরা দাম একেকটার। ডিকনের চাসতো ভাই নিয়া আসছে।
অবশ্য, কথা ছিল পরীক্ষা শেষ করে পার্টি হিসাবে খাওয়া হবে।ইন্টার পাস করা নিয়া কথা- হু হু; অরা তো কাইলকার পরেই ভার্সিটির পোলাপাইন!
মেসের চারজনের লাইগা চাইরটা আর সুরুজ ভাই নিজের জইন্য একটা মোট পাঁচটা আনছে। পিন্টু ছাড়া আগে কেউ এইসব খায় নাই। সুরুজ ভাই যহনই চান্স পায় পিন্টুর লাইগা লইয়া আহে।
কিন্তু, আমের লোভ ছাড়ার মতো জিভবা তো পিন্টুর নাই। সবাই যখন পড়ছে, তখন বাথরুমে গিয়া সুরুজ ভাই অর্ধেকটা খাইয়া অরে চিকনে ডাক দিলো- ‘আব্বে পিন্টু! ল প্রসাদ ল!’
কি আর করা; ফিজিক্সের গুষ্টি মারি কইয়া দিল পুরা মাইরা। আহ!
টক মালডা খাইয়া পিনিক তো পুরাই চেইতা গেলো।
আর কি করা! তিন-চাইর ইস্টিক জি বানাইয়া সুরুজ ভাইরে লইয়া সোজা বাইরে। এইগুলা খাওয়ার সবচেয়ে ভালো জায়গা অইলো সোরওয়ার্দী উদ্যান। সেই জায়গায়, এইখানে-সেইখানে গোল হয়ে বসে সবাই বানাচ্ছে আর দমে দমে টানছে। পোলা-মাইয়া আলাদা নাই। এখানে যারা আসে তারা তাড়ছিড়া- শিল্পী আর জিনিয়াস। এরা গঞ্জিকাসেবন না করলে কারা করবে! জিনিসটা আল্লায় দিছেনই তো মাজারের উঁচু দরের ভাবুক আর শিল্পীদের জন্য।
যাওয়ার সময় হুজ্জত। মহাখালি থেকে বাস পেতে ঘাম ছুটে যাবে। মাত্র আম (ফেন্সিডিলের বর্তমান চালু নাম) খেয়েছে বলেই তাদের দুজনেরই তখন আমিরি মেজাজ। এই সময় জি খাওয়ার জন্য পরানডা কান্দে!
নিয়ে নিল একটা সিএনজি।
ঢাকার জাম ঠেলে- কোঁতাইতে কোঁতাইতে দুইজনে যেতে লাগলো। এই ফাঁকে এক প্যাকেট গোল্ডলীফ কিনল সুরুজ। এমনিতে পিন্টু বেনসন খেলেও- আম বা বাবা খেলে লীফ খায়।
নেমে, শিখা চিরন্তনীর পাশে উঁচু টিলাটা বেয়ে উপরে টাঙ্কির মতো জায়গাটায় গিয়েই দেখে বংশালের পুরো টীম হাজির। দেখে- সুদীপ নামে এক ইলেকট্রিকস গুডসের দোকান মালিকের আজকে জন্মদিন।
ওফ! কী যে মজা হলো। ওরা বহুতটি বাবা নিয়ে আসছে, সেগুলোর ভাগ ওরাও পেলো। নিজেদের জি খরচই হলো না।
একসময় ঘড়ি দেখে চমকে গেলো সুরুজ, ‘আব্বে! পিন্টু তর না কাইল শেষ পরীক্ষা! এগারটা বাজে কিন্তু!’
এরপরে আর শরীর টানে না; কোনমতে মজা ছুটিয়ে দৌড়ে বের হবার সময় কি মনে করে দুইটা ইস্টিক ধরিয়ে দুজনে ইচ্ছামতো টানলো- এক্কেবারে ‘নিমাই’ খেলো।
পুরোই টাল। হি হি কইরা হাসতে হাসতে অশ্লীল সব ঠাট্টা একজন আরেকজনকে ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
বারডেমের সামনেও কোন সিএনজি নেই; ইস! কি আর করা এয়ারপোর্ট রুটের ভাঙা ৩/এ বাসে উঠে বসলো। নিজেদের ভেতর বকবক করছে তারা। বাসে বেশি মানুষজন নাই। চলছে-থামছে; সিগনালে আটকাচ্ছে। ওদের ওদিকে নজর নেই।
হঠাত, খেয়াল হলো একটা নারী কন্ঠের চিতকারে;
‘নাহ! প্লীজ ব্যাগটা দিয়ে যান- ওইটাতে আমার প্রবেশপত্র।’
প্রবেশপত্র কথাটাতেই চমকে উঠলো পিন্টু!
দেখলো, জানালা দিয়ে মুখ বের করে একটা মেয়ে চেঁচাচ্ছে- পাশ থেকে আধবুড়ো একটা লোক (বাবা/চাচা হবে মনে হয়) শক্ত করে একটা হাত ধরে রেখেছে। মেয়েটার সাদা ওড়নাতে কান থেকে থির থির করে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে।
বাসটা কাওরান বাজারের সিগনালে আটকে ছিল।
জানালার পাশ থেকে ছিনতাইকারী কানের দুল আর ব্যাগ ধরে টান দিয়েছে; সীগনালটাও তখনই ছেড়ে দিল। এমন দুর্লভ সময়টাই বেছে নেয় ছিনতাইবাজরা। জানে, সিগনাল ছেড়ে দিলে পার্কের মধ্য দিয়ে এইপাশে ফ্রি স্কুল স্ট্রিটের ভিতর চলে গেলে তাদেরকে আর ধরা যায় না, এমনকি লোকাল পুলিশের সাথে সাঁটও থাকে।
মেয়েটার কান্না আর প্রবেশপত্র কথাটা পিন্টুর মাথায় আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। বাসের জানালায় উঠে বিপজ্জনক ভঙ্গীতে দুইহাত ঝুলিয়ে একটা লাফ দিলো সে। যখন ঝুলছে দেখলো- সুরুজ ভাই ভ্যাবলার মতো তার দিকে তাকিয়ে আছে- বুঝতে পারছে না কিছুই।
ঠকাস করে হাঁটুটা পীচের রাস্তার সাথে বাড়ি লাগলো; চোখে যেন কেউ গরম শিক দিয়ে গুঁতো দিয়েছে- তবে টাল অবস্থায় ব্যথা টের পেল না; উঠেই দেখলো ব্যাগটা হাতে ঝুলিয়ে লাল গেঞ্জী পরা ছিনতাইকারীটা দৌড়ে রয়েল বেঙ্গল টাইগার দুটোকে (ভাস্কর্য) পার হয়ে ওপাশে অন্ধকারে চলে যাচ্ছে; হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে তার পেছনে ছুটলো পিন্টু- উসাইন বোল্ট না হলেও সে কলেজ টীমের ফাস্ট বোলার; তার সাথে দৌড়ে কে পারে!
একসময় পেছন থেকে লাল গেঞ্জীটা মুঠো করে ধরতেই, চোখের সামনে ইস্পাতের একটা ঝলসানি দেখে কলিজাটা মুখে চলে আসলো। ইস!
কোনমতে হাত দিয়ে ছুড়িটা ঠেকিয়ে আরেকহাতে একটা আপার কাট চালাল কুত্তার বাচ্চার ঘাড়ে।
মারের চোটে, ব্যাগটা হাত থেকে ছিটকে কোথায় যেন পড়লো, ‘আর কি নিছস দে শুওরের বাচ্চা!’
হতবাক হয়ে তার থেকে ফুটখানেক উঁচু শরীরটার দিকে তাকিয়ে আছে রজ্জব। ‘এমুন তো দেহে নাই আগে, তার ড্যাগারটা মাদারচোদের হাত ফাইড়া ফালাইছে, গলগল কইরা রক্তও পরতাছে- তারপরেও আবার শাকিব খানের মতো ফাইটিংও করে! মনে হয় ছেড়িডার লাভার!ধুর!!
কোনমতে পকেট থেকে দুলটা বের করে বাতাসে উঁচু করে দিল- পি্ন্টু সেটা ক্যাচ করতে হাত উঠাতেই রজ্জব দিল ঝাইরা দৌড়! আর সামলাতে পারলো না পিন্টু, মাথা ঘুরছে; কাটা কলাগাছের মতো লুটিয়ে পড়লো সে, ভাগ্য ভাল মাথাটা পরলো রাস্তার মাঝে পানি জমা একটা গর্তে।
তারপর অন্ধকার।
সব আবছা আবছা- চশমাটা কোথায়!
অনেক মানুষ। একটা মেয়ের কান্না কান্না গলায় চিতকার (টাল বলেই কি সেই কান্নাতে নিজের জন্য ভালবাসা দেখলো পিন্টু!), সুরুজ ভাই মনে হয়- তাইতো; ধরাধরি করে ওঠালো; তারপর সিএনজি নিয়ে সোজা ঢাকা মেডিকেলে; হাত সেলাই করে ব্যান্ডেজ করে দিল ডাক্তার।
এদিক-সেদিক মেয়েটাকে খুঁজলো, নাহ! এটা তো আর সিনেমা না যে, এরপরে দুজনের প্রেম আর পুবাইল গিয়ে গাছের চিপায় চাপায় উব্বা নাচন! আজকালকার মেয়েরা সেলফিশ- হুদাই পিনিকে হিরো সাজতে গিয়া কালকের এক্সামটা গেলো।
বাসায় ফিরতে ফিরতে রাত তিনটা।
সবাই পড়া শেষ করে ঘুম। কাউরে ডিস্টার্ব না দিয়ে বিছানায় লম্বা হয়ে গেলো। মনের চিপায় খুঁতখুঁত, ইস! চোথা যে বানাইলো না! কালকের পরীক্ষা কেমনে কী?
আল্লাহু শাফি! আল্লাহু কাফি! এই ছাড়া আর কিছু ভাবতে পারলো না। ঘুমে তলিয়ে গেলো...
এখন পরীক্ষার হলেও একমনে ডাকছে সে, আল্লাহু শাফি! আল্লাহু কাফি!
আরেহ! পাশের থেকে পেনসিল বক্সের একটানা আওয়াজ আসছে। সেদিকে তাকিয়ে দেখে, পেন্সিল বক্সের ওপাশে খাতার মাঝে লেখা ৫নং প্রশ্নের উত্তর, গুটি গুটি করে- মার্কার দিয়ে দাঁগানো ক,খ, গ এর উত্তর লেখা। কিন্তু পৃষ্ঠা উল্টাচ্ছে না মেয়েটা! কেন!
অপাঙ্গে তাকালো পিন্টু।
সেদিনের যুদ্ধংদেহী মুখটার বদলে স্নেহময়ী একটা মুখ দেখলো- খাতা খোলা রেখেই অন্যমনস্ক ভঙ্গীতে প্রশ্ন দেখছে। আমন্ত্রনের স্পষ্ট ইঙ্গিত।
প্রাণপনে কপি করছে পিন্টু। এ যাত্রা পরিত্রানের উপায় অলৌকিক ভাবেই পাওয়া গেল...
দেখলো খাতায়- ক এর উত্তরে লেখা, কখনও চাঁদ পৃথিবীর থেকে ৩,৫৬,৯৯১ কি.মি. দূরত্বে চলে আসে; বিশেষ একটা পূর্ণিমার সময় চাঁদ-পৃথিবী-সূর্য একটা সরলরেখায় আসে, তখন চাঁদের সাথে পৃথিবীর দূরত্ব হঠাত করেই ২৭,৪১১ কিমি কমে যায়- এই ঘটনাকে অনুভূ বলে...
লিখতে লিখতে দমসম হয়ে যাচ্ছে পিন্টু। বাম হাতের সেলাইটা দপদপ করছে; কোনদিকে তাকানোর সময় নেই।
হঠাত থেমে গেল, তীর্যকভাবে দেখলো মিতুর ডানদিকে ফেরানো মুখটাতে বাম কানের লতিতে ছোট্ট একটা ব্যান্ডেজ।
কপালে তিনটা ভাঁজ পড়লেও আমলে না নিয়ে এবার খ এর উত্তর কপি করার প্রস্তুতি পিন্টুর, এতশত ভাবার সময় নেই।
এমন সময়েই মিতু হঠাত করে চোখ ফেরাতেই দুজনের চোখাচোখি হয়ে গেল..মিতুর চোখের কোণের কাজল টলটলে জলে একটু কি ছেতড়ে গেছে?
অস্পষ্টভাবে শুনলো পিন্টু, ‘ধন্যবাদ।’
ভালবাসার মমতা মাখানো স্লোয়ার বাউন্স করে চলে গেল।
কপি করায় ব্যস্ত সে, তাই টের পেল না আজই হয়তো অনুভূ!!
স্বপ্নীল সমন্যামবিউলিস্ট
২৩/০৬/২০১৩
(*নিমাই খাওয়া মানে হলো, একজন টান দিয়ে ধোঁয়া আটকে রাখবে যতক্ষণ না পাশের জনের টানা শেষ হয়। পাশের জন দম আটকে রাখা মাত্রই প্রথমজন দম ছাড়তে পারবে। গঞ্জিকা সেবনের ঐতিহ্যবাহী কেঁতা।
* উব্বা নাচন মানে উদ্বাহু নৃত্য।
* সারারাত লোডশেডিং, অসহ্য গরম আর ডর্মিটরিতে একা; অনুভূ দেখা ছাড়া আর কোন কাজ ছিল না, দেখলাম চাঁদের রোয়াব। পথচলতি জীবন লেয়ারে নানা সংস্কৃতির মানুষের সাথে মেশার জমকালো অভিজ্ঞতা- লেখার মশলা জুগিয়েছে।)
একবার ভাবলাম পিন্টু/ ছিনতাইকারীর মুখের অশ্লীল শব্দগুলো কেটে বা চেঞ্জ করে দিব। বিশ্বাস করুন- মানাতো না, ওরা ওভাবেই ভাবে, কথা বলে! শালীনতার সীমা লঙ্ঘিত হলে ক্ষমাপ্রার্থি।
মন্তব্য
ভালো লেগেছে।
আহা, চমৎকার!
বিশ্বাস করলাম এদের মুখে সুশীল ভাষা তুলে দিলে প্রবন্ধ হতে পারত, গল্প না
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
চমৎকার. লেখার স্টাইলে সমরেশ বসুর প্রজাপতির ছায়া আছে মনে হইল. জোস গল্প হইছে
..................................................................
#Banshibir.
ঠিকই ধরছেন, তবে অবচেতনে হইসে।। প্রজাপতি আমারো প্রিয় লেখার একটা। (স্বপ্নীল সমন্যামবিউলিসট)
বেশ টানটান লেখা! ভালো লাগল!
দারুন লাগলো । আপনার নিকটাও চমৎকার
তাই!
ভাল লাগলো .
বেশ লাগল তো! আরো লেখা চাই।
সাধু সাধু সাধু,
সুন্দর গল্প !সৃজনশীল প্রশ্ন-টা আরো সুন্দর
বাচ্চাদের জন্য প্রশ্ন করছিলাম পরীক্ষার। তখনই, মনে হলো লিখি।। (স্বপ্নীল সমন্যামবিউলিসট
গল্প ভাল্লাগ্লো।
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
পড়ে বেশ মজা পেলাম ।
ভালো লাগলো
ইসরাত
গল্প ভালো লেখেছে। কী ভালো লেগেছে? ভাষা, ফর্ম, আইডিয়া। কাহিনী একটু সিনেমাটিক হয়ে গেছে।
গল্প লেখা চালিয়ে যান।
অটঃ আপনার নিকটার অর্থ কী?
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
ধন্যবাদ, নিকটার অর্থ: এখনো ভাষায় প্রকাশিত না আমার নিজের কাছেই, যেদিন জানবো= নিশ্চয়ই বলবো। আপনি ঠিক, কাহিনী নাটক নাটক মনে হইসে- আমারও তাই মনে হইসে; গল্প লেখা চালাচ্ছি বাট সচল কখনো নেয় কখনো নেয় না। আমি আপনার লেখা মন দিয়েই পড়ি, আপনি বলছেন- উতসাহ পেলাম। (স্বপ্নীল সমন্যামবিউলিসট)
সম্ভবত অর্থটা 'দ্য ড্রিমার'।
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
ঠিক ড্রিমার না। দ্বিতীয় অংশটার অর্থ যে ঘুমঘোরে হাঁটে, প্রথম অংশটা ড্রীমার। কম্বো টা কি আমি এখনো বুঝি নাই। বাট এই নামে লিখলে লেখা কেন যেন আসে!! (স্বপ্নীল সমন্যামবিউলিসট)
গল্প ভাল লেগেছে।
উতসাহিত হলাম। (স্বপ্নীল সমন্যামবিউলিসট)
জম্পেস গল্প! পাঁচতারা।
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
(স্বপ্নীল সমন্যামবিউলিসট)
বিদিক পছন্দ হয়ছে।
আহা !! আর নিমাই খাওয়ার কথা মনে করায়ে দিছেন, ভাই ।
(স্বপ্নীল সমন্যামবিউলিসট)
ভালো লাগলো। এতদিন ছিলেন কই? মন্তব্য ছাড়া লেখা তো দেখি নাই!!
চালায়া যান - পারলে সিনেমার মত সিকুয়েলও ছাড়তে পারেন, মাগার জমবো জব্বর - কয়া দিলাম।
-প্রোফেসর হিজিবিজবিজ
ফাজিলের মত হাবিজাবি জিনিষ খাওয়া হয় তার আবার নামের কি সব কায়দা
তবে নিমাই জামাই কি জিনিষ বলে দিয়ে উপকার করেছেন।
গল্পটা বেশ ভালো লেগেছে। আরো আসুক।
আর নিকটা এত্তো কঠিন কেন রে আপনার! নিক
ইস এটা তো ঐ পিচ্চি খাইছে, আমি কি জানি! আর নিকটা কিন্তু সুন্দর, তাই না? (স্বপ্নীল সমন্যামবিউলিসট)
আপনার সব লেখা একসাথে কোথায় পাব? কোন ব্লগ থাকলে কিংবা ফেসবুক লিংক থাকলে দয়া করে দিন। সচলায়তনের অতিথি লেখার ভীড়ে আপনারগুলো খুঁজে পাওয়া শক্ত।
http://www.sachalayatan.com/guest_writer/49723 (সিবলিং টুইনস)
http://www.sachalayatan.com/guest_writer/49704 (অনুভূ দি পেরিজি)
http://www.sachalayatan.com/guest_writer/49675 (মানুষ দি তালিসমান)
http://www.sachalayatan.com/guest_writer/49672 (স্বপ্নের ফেরিওয়ালা)
http://www.sachalayatan.com/guest_writer/46677 (মানজিরা দি ল্যামেন্ট হোপ)
আর, ইংরেজিতে, এম এ এইচ আই ইউ এ এইচ এম ই ডি লিখে সার্চ দিলে আমার পরিচিত একজনের ফেসবুকের আইডিতে নোট হিসাবে বাকী ৫০ টার মতো লেখা আছে, পাবলিক করা, যে কেউ পড়তে পারে। (স্বপ্নীল সমন্যামবিউলিসট)
নতুন মন্তব্য করুন