জেরিন দুপুর থেকেই আজ একটু অস্থির হয়ে আছে । এমন না যে রান্না করতে গিয়ে তরকারিতে লবন বেশি দিয়ে ফেলেছে , মারুফ অফিস থেকে এসে খেতে বসে ভ্রূ কুচকে অনুযোগ এর সুরে তার রান্নার একগাদা ত্রুটি বের করবে ! ব্যাপারটার সাথে সে অভ্যস্ত হয়ে গেছে ! গত পাঁচ বছরে সে অনেক কাজ শিখে ফেললেও রান্নায় এখনো আনাড়িই রয়ে গেছে । মারুফের এসব কথা তার এখন গায়ে লাগে না , সে তার মতই রান্নার বই দেখে দেখে আর টিভিতে কেকা ফেরদৌসির রান্নাঘরের রান্না দেখে রান্না শেখার চেষ্টা করে যাচ্ছে !
জেরিনের ছেলের বয়স সাড়ে তিন । এই বয়সেই ছেলে দুর্দান্ত কথা শিখে গেছে ! সারা বাড়িতে তার বিচরণ ! সারাটা দিন একলা থাকলেও ছেলের উপস্থিতির জন্য তার কখনোই খারাপ লাগে না । একেবারে বাপের স্বভাব প্যেছে ছেলেটা ! সবসময় শুধু এটা ওটা নিয়ে প্রশ্ন করবে । জেরিন উত্তর দিবে , আবার প্রশ্ন করে তার মাথা খারাপ করতেই থাকবে । সন্ধায় মারুফ বাসায় এলে জেরিন একটু হাফ ছেড়ে বাঁচে । অন্তত ছেলের প্রশ্ন আর কথা শোনার একজন মানুষ তো পাওয়া গেল !!
দুপুরে জেরিনের টেনশন বাড়ল মারুফের সাথে কথা বলার পর । মারুফই ফোন দিয়েছিল !
-কি কর ??
-এইতো রান্না করছিলাম !
-বাবু খেয়েছে ??
-হুম, ও ঘুমাচ্ছে !
জিজ্ঞেস করবে না করবে না ভেবেও জেরিন আর না বলে পারল না -
-তুমি কি জানতে আমার মোবাইলে যে ব্যালেন্স নেই ??
-নাতো , কেন তুমি তো বল নাই আমাকে , ব্যালেন্স কি পাঠাবো কাউকে দিয়ে ?
-না থাক , সমস্যা নাই, চলবে আমার । তুমি তাড়াতাড়ি চলে এসো আজ, আমার ভালো লাগছে না !
ফোন রেখে জেরিন চুপ করে বসে রইল ! সে ঘামছে । তারমানে মারুফ টাকা পাঠায় নাই ! তাহলে কে পাঠালো !! একটু আগে তার মোবাইলে দেড়শ টাকা ব্যালেন্স পাঠিয়েছে কে যেন ! ব্যপারটা অস্বাভিকে তেমন কিছু না হলেও জেরিনের কিছুই ভালো লাগছে না ! তারই ভুল হয়েছে , এত পুরানো নাম্বার এতদিন ধরে ব্যবহার করছে সে । অনেক আজেবাজে মানুষের কাছে নাম্বার চলে যেতে পারে ।
আরেকটা শঙ্কা জেরিনের মনে উকি দিয়ে গেল । তবে কি , , ,
নাহ , জেরিন আর ভাবতে পারছে না ! ! !
একটু আগে ফ্লেক্সিলোডের দোকান থেকে বের হয়েছে জহির । অনেকদিন পর তার বন্ধ থাকা একটেল সিমটা ওপেন করল সে আজ ! প্রায় পাঁচ বছর ! এই দীর্ঘ সময়ে একবারের জন্য ও সিমটার প্রতি সে আকর্ষন অনুভব করেনি । আজ হঠাত কি মনে করে মানি ব্যাগের পকেট থেকে বের করে মোবাইলে ঢুকালো ! ব্যালেন্স নেই । বাসার পাশেই ফ্লেক্সিলোডের দোকান ,দোকানে নাম্বারটা দিয়ে রাস্তায় নামতেই মনে হল কিছু একটা ভুল হয়েছে !
দৌড়ে দোকানে ফিরে গেল জহির । ততক্ষণে দোকানি টাকা পাঠিয়ে দিয়েছে !শেষের দুই ডিজিট ৩৪ এর জায়গায় সে ৩৫ লিখে এসেছে । এমন না যে সে নাম্বার ভুলে গেছে , সচেতনভাবেই সে অবচেতন মনে নাম্বারটা লিখে এসেছে !!!
নাম্বারটা জেরিনের ! একসময় সে আর জেরিন মিলে একটেলের পার্টনার নাম্বার নিয়েছিল কম খরচে কথা বলার জন্য । জেরিনের অনেক নিষেধ সত্বেও সে নিজের নাম্বারে যখন টাকা লোড করত জেরিনের নাম্বারেও লোড করে ফেলত । জেরিন এটা নিয়ে অনেক রাগ করেছে , জহির পাত্তা দেয় নি ! দুজন তো একই !
একটু পর দোকানি কনফার্মাশেন মেসজ পেয়ে জানালো যে টাকা পৌছে গেছে !
জহির একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল । সে তার সাধের সীমটা বন্ধ করে সেখানেই থেমে আছে আজ পাঁচ বছর ! অপরটি বেঁচে আছে, বেঁচে থাকুক তাকে ছাড়াই !! এভাবেই চলুক জীবন !!! এ-ভাবেই !!
আয়ন
মন্তব্য
গল্পটা কি অনেক আগে লেখা? একটেল তো এখন দেশে নাই, রবি হয়ে গেছে।
৫ বছর অব্যবহৃত থাকলে সেই নম্বর শুধু ফ্ল্যাক্সিলোডে চালু হওয়ার কথা না, এটা সেলফোন ব্যবহারকারীদেরও জানা থাকার কথা।
ফ্লেক্সিলোড সম্ভবত শুধু গ্রামিন সিমের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। অন্য কোম্পানিগুলোর অন্য কী সব পদ্ধতি যেন আছে।
যতি চিহ্নের আগে স্পেস দিলে ব্যাকরণশুদ্ধ হয় না।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
নজরুল ভাই , লেখাটা রিসেন্ট ই লিখেছি । ৫ বছর আগে রবি সিম একোটেল নামেই পরিচিত ছিল, সিমের গায়ে একটেলই লেখা থাকত । তাই আর রবি শব্দটা ব্যবহার করিনি !
লোডটা তো জেরিনের ফোনে চলে গিয়েছিল , তাই জহিরের সীম চালু হওয়া নিয়ে আর মাথা ঘামাই নি
ফ্লেক্সিলোড শব্দটা এখানে প্রচলিত শব্দে ব্যবহার করেছি
যতি চিহ্নের ব্যপারটা জানা ছিল না আমার,জানানোর জন্য ধন্যবাদ
জেরিনের ফোনে গেলেও, জহির তো নিজের ফোনটা চালু করার উদ্দেশ্য নিয়েই লোড করতে গেছিলো তাই না? নাকি সে তখনই জানতো যে অবচেতন মনে ভুল করে সে জেরিনের ফোনে টাকা ঢুকিয়ে দেবে?
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
নজরুল ভাই , আমি নিজেই কনফিউসড হয়ে গেছি জহির আসলে কি করতে চেয়েছিল
গল্পের টেকনিক্যাল প্যাচ ঘোঁচ বাদে(নজরুল ভাই যা বলছেন) খারাপ লাগেনি।
লিখুন নিয়মিত।
চেষ্টা থাকবে
ধন্যবাদ !!
_____________
নতুন নতুন লেখালেখির চেষ্টা হিসাবে দাড়ি, কমা ইত্যাদি যতি চিহ্ন গুলোর পর স্পেস ছাড়া আর বাকি সব ঠিক আছে। কলেবরে আরেকটু বড় গল্প লিখলে পড়তে আরো ভালো লাগবে।
ধন্যবাদ কমল ভাইয়া , চেষ্টা করব আরো বড় আর মানসম্মত লেখা লিখতে
এই গল্পের টেকনিকাল দিক মানে ফ্লেক্সিলোড ইত্যাদি নিয়ে আমার কোন জ্ঞান নেই। তাই লেখক যা বলেছেন পূর্ণ সরলতার সাথে আমি তার সবটাই সত্য হিসেবে নিয়েছি (প্রায় রূপকথার মত আর কি)! আর, খুব মজার সাথে উপভোগ করেছি এই গল্প। তবে সবে জমতে শুরু করেছিল আর তখন-ই শেষ হয়ে গেল। পরেরবার আর একটু বড় গল্প পাওয়া যাবে কি?
- একলহমা
অত্যন্ত দুঃখিত এভাবে শেষ করে দেয়ার জন্য, পরবর্তিতে আরো বড় গল্প লিখতে চেষ্টা করব !
ধন্যবাদ
নজরুল ভাই বলার আগে প্যাঁচঘোঁচ মাথায় আসেনি, তবে গল্প ভাল্লাগসে।
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
অনেক ধন্যবাদ আশালতা :)
ভালো লেগেছে, তবে আরো বড় করা যেতো। সবে গল্পটা জমে উঠেছিলো।
-এস এম নিয়াজ মাওলা
ধন্যবাদ :)
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
ধন্যবাদ :)
গল্প ভাল হয়েছে
--------------------------------------------------------
আমি আকাশ থেকে টুপটাপ ঝরে পরা
আলোর আধুলি কুড়াচ্ছি,
নুড়ি-পাথরের স্বপ্নে বিভোর নদীতে
পা-ডোবানো কিশোরের বিকেলকে সাক্ষী রেখে
একগুচ্ছ লাল কলাবতী ফুল নিয়ে দৌড়ে যাচ্ছি
ধন্যবাদ মেঘা
বাহ্! দারুণ লাগলো! চমৎকার গল্পও। নজরুল ভাইয়ের সমালোচনাও উপভোগ্য
ভাল লাগলো কিন্তু বড্ড ছোট
ইসরাত
হইলো কিছু, যখন নিজেকেই মনে হতে লাগলো তখনই দেখলাম শেষ।।।।।
আত্যন্ত দুঃখিত এভাবে শেষ করে দেয়ার জন্য
ধন্যবাদ ইসরাত ,
আগের লেখা
লাশকাটা ঘরে
নতুন মন্তব্য করুন