ছবিটা দেখলে ধাঁধাঁ লেগে যায়।
তেলরংয়ে আঁকা; চারটেমাত্র কালার ব্যবহার করে এমন ছবি আঁকা যায়?
কিছুই প্রায় না এঁকে,পেন্সিলের এলোমেলো আঁচড়ের ওপর আনমনা,আলগোছে ব্রাশ টেনে ঐ রকম যে, একটা গল্প বলা যায়; তা টুশির মাথায় আসে না।
মুগ্ধ হলো; মানে হতে বাধ্য হল।
এমনিতে রেট্রো যুগের মেয়েদের মত, যখন-তখন ‘ওমমা!’ বলে ঘাড় কাত করা আজকাল আর ফ্যাশনেবল নয়।
তার ওপর সেতো ধুর পাবলিক নয়, চারুকলার ফাইনাল ইয়ার। নতুনদের মধ্যে সম্ভাবনাময় হিসাবে নামও ফুটেছে বেশ।
ইওরো আর্ট কম্প.’২০১২-এ বাংলাদেশের একমাত্রপ্রতিযোগী।
ছিপছিপে তন্বী। সুন্দর মুখে কাঠ-বাদাম রঙা জোড়া চোখ,নিখুঁত। বারগান্ডি কালার ছোঁপ দেয়া কাঁধ ছাড়ানো চুল,লেজার কাট-অবশ্য পনি টেইল করাটাই অভ্যাস। মানানসই ঠোঁট। লিপস্টিক বা অন্য মেকআপ এলাউ করে না টুশি কেবল, হাফ-রিমডে ঢাকা চোখ যত্ন করে সাজানোতেই যা একটু সময় দেয়। তাতেই মোহনীয়া- স্টাইল আইকন।হাসলে আবার গালে টোল খায়।
ভাইটাল স্ট্যাটিক সাব্লাইম।
তাকে মডেল করে আঁকা ছবির সংখ্যা হিসাব করলে গিনেজ বুকে নাম উঠে যাবার কথা। কোন কমপ্লেকস নাই, ছেলে-মেয়ে মিলিয়ে ফ্রেন্ডস লিস্ট জ্যাম-প্যাকড। ফেসবুক বা টুইটারে ফলোয়ারস নেহাত কম নয়।
এই প্যারিস ট্রিপে তার আঁকা ‘রোহিংগা-১২’-ফ্রেমটা সেকেন্ড প্রাইজ পেল। প্যারিস-বেসড দু’টোকনসালট্যানসি অফার পেয়ে নাউ-সুপারকুল।
অবশ্য, ফার্স্ট-প্রাইজ যে ছবিটা পেয়েছে সেটা তেমন আহামরি কিছু না। প্রথমে,যখন রাউন্ড-আপের সময় দেখেছিল, তখন পাত্তাই দেয় নি।
কত রং-বেরংয়ের কাজ যে ছিল চারদিকে,ওল আর মাইন্ডব্লোয়িং। প্রায় সব দেশেরই পারটিসিপেন্স সেখানে- রং-কারবারীদের মিলনমেলা।
ব্রাজিলিয়ান ল্যান্ডস্কেপ, পেরুভিজিয়ানের পোট্রেট, কত ধরনের এবস্ট্রাক্ট। পিকাসোর দেশের চোখ ধাঁধাঁনো রংয়ের খেলা।
তাই, রেজাল্টের সময় টেনশান কাজ করছিল খু্ব।
অবশ্য, আগে থেকে আঁকা তো নয়। সবাইকে ৮ ঘন্টা সময় দেয়া হইছিল। টুশির সাবজেক্টটা দেশ ছাড়ার আগে হাশেম দা ঠিক করে দিয়া কইছিল, দেখিস ছেমড়ি- প্রাইজ পাবি, পাবলিক মানবতা সবসময়ই খায়।
টুশির বাম পাশে বিশালদেহি একটা আফ্রিকান প্যাস্টেল নিয়া কুস্তি করছিল।মাঝে মাঝখানে ট্রা-লা-লা-লা বলে, গাঁক গাঁক করে চেঁচানো, ছোট্ট একটা পাঁইটে বার বার সিপ দেয়া,বেধড়ক হাত-পা ছোড়া সবই ছিল।
টুশি মজাই পাইছে, তার অভ্যাস আছে।
আর্টিস্টরা একটু তারছিড়াই হয়, একবার তো বৈশাখ ফেস্টিভালে মাল খাইয়া রমনায় সবার সামনেই কেরামত ভাই পেণ্ট খুইলা.....ফেললো!
সবা্ই যখন জিগাইল, আব্বে-কেরামইত্যা, এবা কেন করলি? ..মিচকি হাইসা কয় যে, কালার আটকানোর জইন্য আঁঠা না পাইয়া ভাবলাম- যেইডা আমার আছে ওইডাই ইউস করি..তোমরা তো আর করতে দিলা না, এইললিগাই আমগো দেশের শিল্পীরা ম্যান্দামারা আঁকে, খালি কাউয়া আর দুর্ভিক্ষ । মকবুইল্যার মতো আমিও একদিন মৌসুমিরে,শাবনুররে লইয়া আ্ঁকমু।
হ, তাইলেই কাম সারছে- মুখ, পেট, পাছার লাইগা আলিদা-আলিদা ক্যানভাস লাগবো, কে জানি ফোঁড়ন কাটল।
হাসতে হাসতে পেট খুইলা যাইতো আট্টু অইলে।
তাছাড়া-নেশা করা, পাড়ায় যাওয়া তো নরমাল কাহিনি। শিল্পীদের ফ্রী লাইসেন্স লওয়া আছে, এট্টু পাগলামি না করলে মাথার মইধ্যে রংয়ের পাগলা ঘোড়া খালি বাঙ মারে, কন্ট্রোলে আনতে সবই জায়েয।
তাই, গান গাওয়া, দুপাক নেচে নেয়া এইগুলা ডাল-ভাত।
সুলতান সার তো পায়ে ঘুঙুর বাইন্ধা, শাড়ি পইরা নাচতে নাচতে আকতো। পায়ে পায়ে ঘুরতো কুত্তা-বিলাই-সাপ। বাপরে বাপ!
একজন শুধু পুরা ঠান্ডা, প্রথমে দেখে টুশি ঠিক শিওর না, বাঙালী মনে হয়। তা কিভাবে, সে তো একাই আসছে দেশ থেকে।
গ্রীকদের মতো গড়ন, নাক-মুখ পাকিস্তানিদের মতো; মোটা ফ্রেমের একটা গুচ্চি চোখে লাগাইয়া সিরিয়াস মুখ করে একটার পর একটা সিগারেট খাচ্ছিল আর একমনে পেন্সিল চালানো। কিন্তু, চোখ দুটো কোথায় যেন হারানো। ধ্যুস, দু-ঘন্টা পর পর যতবার দেখলো ততবারই আবছাভাবে একটা ধূসর দেয়াল আঁকতেই দেখা গেল।
কইথ্থিকা যে আসে এইগুলা, হাতে তুলি নিলেই পিকাসো পার্ট! আজাইরা।
রেজাল্ট দিল।
থার্ড হইল স্পেনের একটা ছেলে, পোট্রেট করছে একটা- কালার,থিম সব মিলিয়ে হেভি। তুমুল করতালি আর হুইসেলে সিক্ত হয়ে স্টেজ ঘুরে আসলো।
সেকেন্ড প্রাইজ ঘোষনা আসতেই পাশে থেকে কে যেন আস্তে করে বললো, অভিনন্দন।
আরেহ! টুশি সেকেন্ড।
কিন্তু, বাংলা কইল কে? আজিব।
ভাবার আগেই স্টেজে চলে গেল, জানা হলো না বিজাতীয় এই মেলায় বাঙালীটা কে! পুরস্কার নিয়ে সংক্ষিপ্ত স্পীচ দিয়া ফিরা আসল। ইংরেজিতে তার ভালই দখল থাকাতে প্রব্লেম হয় নাই।
প্রথম হওয়া ফ্রেমটার নাম ঘোষনা হল, ‘ঘুলঘুলি’।
গুন্জন উঠলো হল জুড়ে। টুশি পর্যন্ত ঠাওর করতে পারলো না কোন দেশি শব্দ। মনে হয় ইস্ট-ইওরোপীয়ান কোন দেশের হবে।
একটু থেমে ঘোষনা হল,‘ঘুলঘুলি- দি ভেন্টিলেটরস’।
টুশির মাথা চক্কর দিয়া উঠল এইবার। সহসা সে বুঝল, এখানে সে একাই বাঙালি না। ভাবল কোলকাতার কেউ না তো।
এরপর, নাটকীয় ভঙ্গীতে কান্ট্রি নেম এনাউন্স হইল- নাভেদ নীল মনডাল ফ্রম দি আর্থ।
এ আবার কে, নিজের দেশের নাম বলে পৃথিবী! ফাইজলামি নাকি?
দেখল, সেই গ্রীক ফিগারের পাকিস্তানি ফেসের ছেলেটি আস্তে আস্তে পোডিয়ামের দিকে এগুচ্ছে।
বড় পর্দায় দেখানো হল ছবিটা;অন্য সবার সাথে টুশিও দেখল,একেবারেই সাদামাটা। কিন্তু,পরক্ষনেই সবার মতো সেও বিস্মিত হলো।
আরেহ! ছবির আড়ালে যেন অনেকগুলা সংকেত;এক-এক করে দেখলে কোন আগা-মাথা নাই বাট মিলাইয়া দেখলে যেন আস্ত একটা জীবনের গল্প।
লিওনার্দো স্টাইল। কিন্তু, এবস্ট্রাক্ট এজিং করলে,সুলতান সারের প্রভাব স্পস্ট।
সবার সাথে সেও ছবিটাতে ডুব দিল।
ধূসর একটা দেয়াল।
কংক্রীটের, ঘষা খাওয়া, পুরনো বাট হেব্বি টাইট। বাইরে থেকে দেখলে থমকে যেতে হয়। এতটা উঁচু দেয়াল আজকাল চোখেই পরে না।
বিশ্বায়নের যুগে সবার দরজা-জানালা খোলা। প্রতিটা এস্টেটেই ঝুলছে বন্ধুত্বের চটকদার বিজ্ঞাপন। জাত-পাত, ছেলে-মেয়ে ভেদাভেদ নাই, সবাই মিলেমিশে একাকার। তাই কৌতূহল একটু হতেই পারে। যারা এখনও নিজের জমির জন্য টেনান্ট খুঁজে পায় নাই অথবা নিজেই বাগান করার জন্য জমি লীজ নিতে চায়, তারাতো বেশ আগ্রহী।
অবশ্য তাদের আর দোষ কি!
হতে পারে, এই উঁচু দেয়ালে ঘেরা বিশাল এস্টেটের রাজা হয়তো একটা চুক্তিতে আসলেও আসতে পারে, চান্স নিতে ক্ষতি কী? সবাই তাই ঘুরে-ফিরে দেখে, খোঁজে; যদি মালিকের হদিশ পাওয়া যায়।
নাহ্, কোন সুযোগ নাই।
কূল-কিনারা না পেয়ে একরাশ হতাশা নিয়ে অনেকেই চলে যায়।
বাইরের রঙিন পৃথিবী যেন কংক্রীটের গায়ে থমথমে অন্ধকার হয়ে জমে গেছে। এমন কিছু গাছ-গাছড়া আছেই, যেগুলো সোহাগ ছাড়াই বেড়ে উঠে—তেমন লতানো গাছ আর ঝোঁপ-ঝাড়ের আড়ালে,‘আই লেভেলে’ একটা চৌকোমতো ঘুলঘুলি প্রায় সবার নজর এড়িয়ে যায়।
ভাল করে লক্ষ্য করলে দেখা যায়, একজোড়া জ্বলন্ত চোখ নি:সীম শূণ্যতা নিয়ে নিনির্মেষ চেয়ে আছে আগন্তুকের আশায়; সাহসী কারও প্রতীক্ষায়।
অনন্তকাল ধরে।
ঘোর কাটে টুশির।
নাভেদ এখন স্পীচ দেবে।
নিজের ইন্ট্রো দিল, ওরিজিন ফ্রম বাংলাদেশ। গ্রান্ড পেরেন্টস চলে আসে মন্টানাতে।শৈশব মেলবোর্নে, কৈশোর ফিলাডেলফিয়াতে। আন্ডার-গ্রাড করতে বাংলাদেশে যাওয়া।স্বর্নালী সময়টা সেখানেই কাটে। আঁকতে শেখা এস.এম.সুলতানর কাছে।নানান দেশের মাঝে অনেক প্রিয়, পরিচয় তাই পৃথিবীর।
সবাই অনুরোধ করল ছবির ইনার স্টোরিলাইনটা বুঝিয়ে দিতে।
নাভেদ তাতে রাজী না।
নিজের তৈরি রংমহলে অষ্ট-প্রহর সে একটা অষ্টা-কষ্টা খেলায় নিমগ্ন। সিঙ্গেল মোমেন্টও নষ্ট করার উপায় নাই ওর। ম্যাথমেটিকস ছিল ওর শৈশবের প্রেম। রামানুজন,উলার বা নিদেনপক্ষে রাসেল হতে পারলেই ওয়াও,মার দিয়া কেল্লা।
প্রিপারেশানটাও তেমনই ছিল বাট একটা অসাম-টক-মিষ্টি শেয়ারিং-এর চক্করে সব ওলট-পালট।
তারপর থেকেই, ননসলভেবল একটা প্রব. সমাধান করতে-করতে তার সকাল-রাত হিসাব ঘুলিয়ে যায়। নট ব্যাড,প্লেজারাস লাইফ। নানান প্লান-প্রোগ. করতেই দিন চলে যায়। সেইরকম একটা প্লানের ঝোঁকে হুট করেই এই কম্প.-এ অংশ নেয়া। না বলা কথাগুলো যদি শিল্প হয়ে টার্গেটে আঘাত হানে!
সেই আশায়।
ছবি সে চিন্তা করে আঁকে না,কখনোই। রংতুলি তার হাতে আপনা থেকেই ক্যানভাসের শরীরে গল্প তৈরি করে। প্রাইজ-টাইজ তাকে একটুও উদ্বেলিত করে না; একরত্তিও না।
তাই, বিব্রত হল।
বহুদিন মনের আবেগ মুখে এক্সপ্রেসড করা হয় না,ভাবনা তার প্রিয় কিন্তু প্রকাশ বড্ড ব্যথা দেয়; শুকনো-পুরনো ক্ষতে রক্ত ঝরায়।
কি আর করা! সাধ করে মোগলদের সাথে দোস্তি করলে মোসাল্লাম খাইতেই হইব- ডায়রিয়ার দোহাই দিয়া রক্ষা নাই।
কেউ ধরতেই পারল না নাভেদের অন্তর্মুখি চিন্তার দ্বন্দ্ব-শেকল, শুনতে চায় সবাই-ছবির গল্প।
বেশ। মধু তো মিষ্টি, বাট দাম দিয়ে কিনলেও মৌমাছির লবডংকা।তবুও, ঝাঁক বেঁধে চাঁক বাঁধা থেমে থাকে না।
সবাইকে অবাক করে বাংলায় বলা শুরু করলো নাভেদ।
প্রত্যেকেই প্রতিবাদ করে উঠলো,কেউ বুঝতে না পারায় ট্রান্সলেটর খোঁজা শুরু। অন্তত: দুজন লাগবে: যারা বাংলাটাকে ফ্রেন্চ ও ইংলিশে কনভার্ট করে দিবে। ফরাসিদের ফান্ডা হল, ইংলিশকে মানে না-বুঝলেও না বোঝার ভাণ করে।
দর্শক সারি থেকে শাড়ি পড়া একটা মেয়ে স্বেচ্ছায় ফ্রেন্চ ইন্ট্রপেটর হতে রাজি। নিটোল বাঙালি ফিগারের উমেন। নিস আর্ট ইন্সটিটিউট এ আঁকা শেখায়, পৌলমি সেনগুপ্তা। ফ্রেন্চদের চেয়ে ফিগার ভাল, চটকদার। শাড়িতে আধখোলা শরীর- শ্যামলা দেহের কিছু দেখাচ্চে, কিছু দেখাবার জণ্য টানছে।
টুশি পর্যন্ত শিহরিত হলো।
ভাবল, যদি ছেলে হত তবে শিওর এর সাথে শোবার স্বপ্ন আসতো। অবশ্য, আজকাল অনেকেই শোবার বেলায় ছেলে-মেয়ে মানতে চায়না।
টুশি অমন চিন্তা করতেই পারে না; মে বি কালচারে বাঁধে। আধুনিকা হলেও টুশি মানে যে, কারও সাথে নিজের সবচেয়ে গোপন সেকশান শেয়ার করার ডেসটিনিশান নিছক আনন্দ নয় বরং নতুন প্রান সৃষ্টি। শিল্পী হিসাবে সে সৃষ্টির মজা একটু-আধটু জানে বাট সেইটা তো জাস্ট শিল্প; প্রান বহন করা নিশ্চয় হেভেনলি ফিলিংস হবে।
সো, তার জোড়া দিলে নেগেটিভ-পজিটিভ বা ভাইস ভার্সাই ভাল, নাইলে কারেন্ট তো পাওয়া যাবেই না বরং সার্কিট পুড়ে যাবে।
তবে যে যাই বলুক, পৌলমি (নিজেকে ইন সর্ট পলা বলে পরিচয় দিল) রমণী হিসেবে ফুল মার্কস পাবে; নারী হিসেবে কেমন তা ক্লোজলি না মিশলে ঠিক বোঝা যায় না। আর মানুষ হিসেবে কে কেমন তা তো হাজার বছর ধরে চিনলেও বলা যায় না! বয়সটা একটু বেশিই হবে, তার থেকে ১০/১২ বেশিই হতে পারে।কিন্তু, টিন-এজারদের ঘুম হারাম করতে পারবে, চাইলেই।
ধ্যাত, কি সব চিন্তা যে-প্রাইজটা পেয়ে টুশিটার কি মাথা খারাপ হইল নাকি? মাই, মাই! পুরাই ম্যানিয়াকদের টাইপে চিন্তা চলছে।
কিন্তু, বাংলা বোঝার আর তো কেউ নাই। লাটের বাট-এর তো আবার দুজন ইন্টপ্রটর লাগে, ঢং!
অগত্যা কাউকে না পেয়ে, টুশিই সই।
মন্চে নাভেদের পাশে উঠে দাঁড়াল। পলা ডানে একটু পেছনে আর নাভেদকে মাঝে রেখে টুশি বামে স্লাইটলি সামনে। অজান্তেই ক্লাসিক পশ্চার।
অমনি চারদিকে ফিসফাস।
টুশির ওয়াইট জিন্স-পিংক টি শার্ট আর নাভেদের ইয়ালো ট্রাওসারস- রয়াল ব্লু বোহেমিয়ান টি শার্টের সাথে পলার টকটকে লাল জামা-লাইট গ্রীন শাড়ির কনট্রাস্ট সবাইকে জীবন্ত একটা ফ্রেমের সামনে দাঁড় করিয়ে দিল।
এরা সবাই শিল্পী, খুঁতখুঁতে- তাও একমত।
পুরো হল জুড়ে একই কথা ধ্বনিত, ওয়াট আ কমবিনেশান।
টুশি যে টুশি,লজ্জা পাওয়াটাকে ওল্ড ফ্যাশান মনে করে সেও কেঁপে উঠে নাভেদের দিকে তাকাল। পলা ঝঁকুনি দিয়ে চুলের গোঁছা ডান দিক থেকে বামে নিয়ে এল, নাভেদের মুখে দুএকটা স্পর্শ লাগতেই, নাভেদের সুদূরে হারানো চোখ সেকেন্ডের জন্য বাস্তবে ফিরে একটু যেন ঝিকিয়ে উঠল।
টুশি কেমন যেন ভরসা পায়, পলাও।
সমস্ত হলের পুরুষদের বুকে কাঁটা খঁচখঁচিয়ে ওঠে। পৃথিবীতে কোন পুরুষই ঈর্ষার ঊর্ধ্বে নয়, এমনকি নপুংসকরাও না।
নাভেদ শুরু করল।
ঠিক যেমন করে ভিনচি খুঁড়ে প্রতীক বের হলে বুকে ধাক্কা লাগে, তেমনি তার গলার বিষন্নতা ছাপিয়ে, নিসঙ্গতায় ছোঁপানো নিস্ব একজন সুপুরুষকে আবিস্কার করল টুশির শিল্পীস্বত্ত্বা;মায়া লাগল। আপন মনে হল।
সবার মনেই অচষা জমি থাকে, তিল তিল করে গড়ে তুলতে হয় বাগান বা স্থাপনা।
কেউ কেউ দেয়াল তুলে রাখে। কজনআবার খুলেই দেয়।
এটা ক্লোজড ফ্রেম।
দেয়ালের ওপারে অন্য এক ভূবন। প্রথম ধাক্কায় অবাস্তব মনে হলেও, আদতে রূক্ষ-সত্য। বড় বেশি বাস্তব।
এককালে বেশ বড় আকারের এস্টেট ছিল; অনেকটুকু জমি নিয়ে। এখানে-সেখানে পুকুর, গাছপালা ভরা অরণ্যাণী। তার মাঝে ছোট্ট একটা ঘর; আটপৌরে,ছিমছাম আর একান্ত নিজস্ব। কারও আপন ঠিকানা।
ছড়ানো-ছিটানো বিলাস উপকরন ও খেলাধূলার ব্যবস্থা ছিল ত বটেই, তাছাড়া- বিশৃংখল একটা লাইব্রেরি হল মেইন বিল্ডিং।
নানা ভাষার, পৃথিবীর সব কর্নার থেকে সংগ্রহ করা রাশি রাশি বইপত্রের নমুনাগুলো (যেমন: বাংলা পুঁথি, নানান ভাষার উপকথা,রূপকথা, ডিটেকটিভ ও ক্লাসিকাল পেপারব্যাক,নভেলসমূহ আর তার ফাঁকে ফাঁকে অযত্নে পরে থাকা একাডেমিক স্ক্রীপ্টস)থেকে নীরব কিন্তু নিটোল সংস্কৃতির ঝাঁঝ ঠিকরে বের হত। অবশ্য, অপাঠ্য একাডেমিক বইগুলো থেকে অন্যান্য বই-এর চল বেশি ছিল।
একটা করে মিউজিক লাইব্রেরি আর ভিডিও ক্লাবও ছিল যেখানে রক মিউজিক, হিন্দি মুভি/গান বা কিছু কিছু ইংলিশ ক্লাসিকস এইসব ছাড়া টিনএজ বয়সের গোপন আনন্দ পর্ণ তো অনেক ছিল।
ভেরিয়াস আউটডোর গেমসে ইন্টারেস্ট এতটাই যে টেন্ডুলকারের সেন্চুরির সংখ্যা কিংবা বিশ্বকাপের খুঁটিনাটি অথবা বেকহামের গার্লফ্রেন্ডের শপিং বাতিকের তথ্য নখদর্পনেই থাকতো। কাঁচা বয়সের কাজ আর কি!
কথাগুলো অনুবাদ করার ফাঁকে পলা ইমপ্রেসড।
সবারই তো শৈশব থাকে। মায়াময় স্মৃতিও। এই এক প্রব্লেম। ছোট থাকতে মনে হয় কবে বড় হব বাট বড় হলেই চিত্তির। এটা-সেটা করতে-করতেই লাইফ হেল। শৈশব তাই সবার অপূর্ণ স্বপ্নের ভিত হয়ে, আজীবন দোল দেয়।
নাভেদের কথা যে সবাই বুঝতে পারছে তেমন নয় বাট হারমনি তৈরি করছে, কেমন যেন। নিজের নিজের মন খুঁড়তে থাকা সবার নাকেই সোঁদা গন্ধ মাথা ঘুলিয়ে দেয়।
ছোকরার তো বেশ এলেম আছে। এত গুলো ম্যাচিওরড মানুষকে খেদিয়ে আনা চাট্টিখানি কথা নয়। দেখো কান্ড! জীবনে তো কম মিনসে দেখা হলো না, তা বলে এই নাবালক ছোঁড়াটা তার মনে সুড়সুড়ি দেবে।
যা হোক শোনা যাক আর কি বলে, তাছাড়া ট্রান্সলেটও তো কম ঝক্কি না।
সেই এস্টেটের নাবাল জমিনে হরেক রকম ইট-বালু-সিমেন্ট-রড এসব বিল্ডিং মেটেরিয়াল থরে-থরে জমানো থাকতো, কখন সুবিধামতো অন্য কারো জায়গা বুকিং দেওয়া যায়।
এত কিছুর মাঝে ও বেশিরভাগ জমিটাই পতিত।
সিদ্ধান্ত এরকম যে দেখেশুনে একঘর টেনান্ট বসানো হবে পূর্ন অধিকার দিয়ে।বলা হবে নিজের পছন্দমতো বাগান বা বাড়ি তৈরি করতে। মডার্ন দুনিয়ার কালচারমতে, এসব ক্ষেত্রে কোন রেসট্রিকশান নাই। যে কেউ যে কারও জমি লীজ নিয়ে বাগান বা স্থাপনা তৈরি করতে পারে খেয়াল-খুশী মতো। চাই কি একাধিক ও থাকতে পারে- সবই জায়েয।
ডিফারেন্ট লেখা/নাটক/ভিডিও/পারিপার্শ্বিক ঘটনাবলী দেখে যতটুকু বোঝা গেছে, ঐটা সম্পূর্ন টেস্ট ডিপেন্ডেবল ম্যাটার, ম্যান টু ম্যান ভেরি করে। অনেকে আবার কারোটা লীজ নেয়না কিংবা নিজের ক্ষেত্রে টেনান্ট এলাউ করে না। নিজস্ব, মেটেরিয়াল দিয়া একের পর এক বাগান করে যায়। যার যার আপনা আপনা ফান্ডা! পুরো বিষয়টাই পিওর বারটার, যাকে বলে গিভ এন্ড টেক। কাউকে লীজ দিলে তাই তার টেনান্ট হবার অধিকার থাকে ষোলআনা। সবার জীবনেই এই অপশান থাকে। সব বিবেচনা করে তাই মাতামাতি করা হয়নি একদমই।
অপেক্ষা করাই তো ভাল, তাই না!
ঘুলঘুলির পেছনের এস্টেটের আকর্ষণ তখন আরও বেশি ছিল, ভার্জিন সিস্টেমের দাম সবসময়ই বেশি।
তখন তো আর দেয়ালটা এত উঁচু ছিল না। সওদা করতে আসতে লাগল অনেকেই। নানান পদ। কারও জমিতে মশলা ভাল তো কারও সম্পদ অনেক। নরম-গরম জমি বুঝে নিয়ে, পাগলামির আহবান। কারো পুকুর বা পাহাড়ের ছোঁয়াতে উচাটনতা যে আসতো না তা নয়। নরম জমি পেলে বাঁশ গাড়ার প্রবনতা মজ্জাগত; সহজাত। কিন্তু পাত্তা দেয়া হয় নি, থাক কি দরকার? রোমহর্ষক খেলাতে নামলে তো নামাই হলো, ফ্যান্টাসিতেই মাসকা বেশি।
টুশির কৈশোরটা, কেরিয়ারের স্বপ্নজাল বোনার প্রিপারেশানেই কেটেছে।
পাড়ার হাফ-ভ্যাগাবন্ড টিংকু, স্কুলের মেট রবিন বা কলেজের বোটানিরআনম্যারিড রফিকউল্ল্যা স্যার- সবাই তো সওদা করতে এসেছিল। তখন এসবে মন ছিল না। স্রেফ না করে দিয়েছে।
টিংকুটা তো স্লিপিং-পিল খেয়ে কি কান্ড! তাকে না পেলে নাকি বাঁচবে না। ঘোড়ার ডিম। এবার, নীস ট্রীপের আগে দেখা হলো। গাব্দা-গোব্দা একটা বউ সাথে- তার সাথে পরিচয়ের সময় বললম টুশি-আমার ছোট বোনের মতো। বোন! টুশির পেটে হাসি কুলকুলিয়ে উঠলো- ছেলেগুলি এমনই।
ভালবাসা না ছাই। প্রথমে মুভি দেখে ডায়ালগ ঝাড়ে, পরে তো ঠিকই আরেকটা জুটিয়ে নেয়। এখনকার যুগে দেবু,ফরহাদ, রোমিওরা শুধু মুভিপর্দা কাপায়, বাস্তবে ওরম আবার হয় নাকি।
দেখা যাক, এর গল্পটা কোথায় ঠেকে।
একটা সময় পার হয়ে অনেকটা জায়গা নিয়ে যৌবন তৈরি হলো।
সময় টানা রথে চেঁপে, হলকার মতো সব দখল করলো। সব নতুন, কোনটা ছেড়ে কোনটা নেওয়া হবে। ক্যাডাভারাস কান্ড। এক ফাঁকে সিকিউরিটি দু্র্বল হলো, কিছু বোঝার আগেই।
সামনে সার সার অকর্ষিত খেত, স্বয়ংবর হবার ফুল চান্স।
একটা সাদাসিধে একটেরে জমি পছন্দ হল, সবাই নিষেধ করলেও; মনস্থির।
কিন্তু, মালিকের কী দাপট!যা ব্বাবা, মরে যাই, ছে: ছে:। ধ্যুত, পুচকি একটু জমি তাও ছিরিছাঁদ নাই- বার হাত লাউ, এমনেই তো ফাউ! মেজাজ বিলা হল। এম্নি না খেয়ে থাকলে প্রব্লেম নাই, তা বলে মূলা কিনারও ক্ষমতা নাই!কেস তখন পুরাই সুটকেস।
এই ফাঁকে ঝড়ের বেগে একজন এগিয়ে এসে সমস্ত এলাকাতে খুঁটি পাতল সহজাত দক্ষতায়।
তার জমির সমস্ত দলিল তুলে দিল বিনাবাক্যব্যয়ে। কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পাল্টা দখল নেয়া হল। কিন্তু, একে তো হাতেখড়ি তাও ফ্রি-লাইসেন্স,ভুল থাকল দেদার। বাগান করার বদলে মাটি খোড়াতেই বেশি মজা।
জুঁই-করবী-গোলাপ চাষপরে থাকল ভবিষ্যত প্রকল্প হিসাবে।
এদিকে নিজস্ব জমিতে নানা রংয়ের ফুল-ফল, ঝরনা, মনুমেন্টের ছড়াছড়িতে মোহিত হয়ে গেল। নিজের জমিদারিতে নিজেই প্রজা। নতুন নতুন টবে-দেয়ালে ঝুলতে থাকা মাধবীলতা, বাগানবিলাস আর অর্কিড স্বপ্নীল আবেশ জন্ম দিল।
জানা ছিল না, অধিকারে পাওয়া জমি রেজিস্ট্রি হবার আগে ফেলে রাখতে নাই। যত্ন নিতে হয় নিয়মিত; অন্যথায় বেহাত তো হবেই।
নেওয়া হলো না,রাজনীতির ভূত তখন পুরো মনোযোগ জুড়ে ছিল।
যা হবার তাই হলো।
হঠাত করে একদিন দেখা গেল আদর করে রাখা সেই টেনান্ট সটকে গেছে।
ভাল কথা!
কিন্তু, তার করা বাগান আর স্থাপনা যে তখনো হাসছে! নিষ্ঠুর হওয়া গেল না। মালিক ফাঁকি দিলেও তার গড়া বাগান নষ্ট করা অসম্ভব। তার জমিতে তো তেমন কিছু করাই হলো না! নিজের গড়া বাগানের কোন চিহ্ন নাই, কে জানে এখন কে লীজ নিল।
দিন যায়।
জমানো ইট-পাথর অব্যবহৃত, দিন দিন আরও জমছে। নিজের জমি আর কাউকে লীজ দেবার উপায় নাই। তাই নতুন কারও সাথে বারটার করার পথও বন্ধ। কী আর করা!
ইট-পাথরের খাঁচায় তৈরি করা শুরু হয় নিরেট দেয়াল।
নিজের কাজে মতি হয় না, বই-পত্র/মিউজিক/ভিডিও সব অর্থহীন। অন্যের হেলা-ভরে ফেলে যাওয়া বাগান পরিচর্যা করা, অযত্নে রেখে যাওয়া টুকরো আসবাব ঝাঁরপোছ করা, যে ঘরগুলোতে থাকতো তা থেকে মাকড়সা তাড়ানো- এই তো এখন কাজ।
প্রবল শোক নাবাল জমিতে তৈরি করেছে বহতা নদী, অবিরাম জল বয়ে যায়, কুলকুল। সে জল জমা হয়ে তৈরি শান্ত হৃদ থম মেরে থাকে।
কখনও-সখনো ঝড় ওঠে।
পলার মনের কোথায় যেন অনুনাদ হলো। এতো তারই কথা।
এই শরীরটার লোভে আসা পতঙ্গগুলো ঠেকাতে পারলেও, রজতকে তো সবই দিয়েচিল। কখনো ভাবতেই পারে নি, রজতটা দু নম্বর হবে। সব ঘেঁটে-ঘুঁটে টায়ার্ড হয়ে, শেষে পার্কস্ট্রীটের কচি ছুড়িটাতে মজল।
সে যাক, পুরুষ জাতটাই এ’রম। খালি শরীর বোঝে- মনের জমিতে বাগান করতে চায় না। তারপরতো, সব ছেড়েছুড়ে প্যারিস চলে আসলো।
একন ফ্রী লাইফ।বয়-ফ্রেন্ড ফি বছর বদল হয়। কালচারটাই এমন। সেও বোঝে, আকাশে-বাতাসে যেখানে রোমান্টিসিজম উড়ে বেড়ায়, বুদ্ধু না হলে কি কেউ রোজ রোজ একই গাড়ী চড়ে।
কিন্তু, এ মালটা কোত্তেকে এল, হিরোমার্কা বডি-ফেস ঠিক আছে; সে মানে। পলা তো কচি খুকী নয়, মেঘে মেঘে বেলা ৪০ ছঁই-ছুঁই, ইয়োগা-ডায়েট-মেকওভারে ২৫ মনে হলে কি হবে। শুধু ফিজিকসের জোরে তার মন জয় হয় না,চাই মানানসই কেমিস্ট্রিও। রজতটা ডিচ করার পর থেকে সেও তো প্রায় হাফ-সন্নীসী হয়েছিল, বেশিদিন টেকে নাই।
যে জানে সে জানে যে, কেউ শুধু স্মৃতির সাহারায় বাঁচতে পারে না। নরম-গরম একটা সঙ্গী, জীবনের রংটাই পাল্টে দেয়-স্বপ্ন আনে। ছোড়াটার মনের বরফ জমে জমে পাথর হয়ে গেছে, গলায় বা মুখে শোকের প্রকাশ নাই। তা বলে, পলা কি চান্স নিয়ে দেখবে যে লাইনে আনা যায় না কি একে? নিজের আনন্দের জন্য নয়।
তার আগুনে তো কত পুরুষ সিগারেট ধরিয়ে চরে খেল- এর বরফটা গলিয়ে দিলে ক্ষতি কি? পূণ্যি হবে, চাইকি পৃথিবীর খেলো রাস্তায় দু-দন্ড পাওয়ার রাইডের মজাটাও ফাও।
খেয়াল হল, নাভেদের গলায় একটু যেন আবেগের রংমিশেল-কান পাতল।
তারপর দিন যায়, জমানো মশলায় বানানো দেয়াল উঁচু থেকে আরো উঁচু হয়। কষ্টের দেয়াল কি তবে আকাশ ছুঁতে চায়?
হবেও বা। থই পা্ওয়া যায় না, নাগালো না।
আই লেভেলে তাই চৌকোমতো একটা ভেন্টিলেটর খোঁড়া হয়।
বাইরের পৃথিবীর সাথে একমাত্র যোগাযোগ। আয়তাকার একফালি আলো এস্টেটের গাঢ় অন্ধকারকে কেবলই রহস্যাবৃত করে।
বাইরে থেকে কেউ খুঁজে পায় না সেই ঘুলঘুলি।
নিরেট দেয়ালের ফাঁকে একজোড়া নিশ্চল চোখের তাঁরা তাই প্রকৃতির খেয়ালিপনা। কাকে যেন খোঁজে, দৃঢ় একমন অপেক্ষায়।
মনের সেই জমির লীজ বা টেনান্ট খোঁজার দাঁয় নিয়ে, চোখ বেচারার গুমরে মরাটাই ঘুলঘুলির ফ্রেমে বাঁধানো চোখের এবস্ট্রাক্ট পেইন্টিং।
নাভেদের কথা টুশি আর পলার জবানিতে শেষ হয়। সবাই বিহ্বল।
নিজের নিজের মনের চষা-আলগা জমি নিয়া হিসাবে ব্যস্ত,একটু যেন দিশেহারা। টুশি এই ফাঁকে নাভেদের দিকে তাকিয়ে অজান্তেই শিউড়ে উঠল।
অতল গভীরতায় মায়ার কোন চিহ্ন খুঁজে পাওয়া যায় না। দু’টুকরো কাল পাথর যেন নিশ্চুপ;নিশ্চল। গহীনে জ্বলন্ত। এখান থেকে মুক্তো কুঁড়োতে ডুবুরির দিশাহারা হবার চান্স আছে। ঘুলঘুলির ফাঁকে প্রায় অদৃশ্য জ্বলজ্বলে চোখজোড়াকে চিনে ফেলেছে সে।
চোখজোড়া থেকেও নেই,কাকে যেন খোঁজে,অনুক্ষণ। সেখানের রাজাকে বিনাশর্তে নিজের সমস্ত জমি লীজ দিতে প্রস্তুত টুশি। বলতে চায়, অন্যের ফেলে যাওয়া বাগানে ফুল তুলতে সে রাজী।
ভাবে বলবে, তোমাকেই স্বপ্নেখুঁজতাম মনে হয়। মনের জমির খবর রাখতে পার,অথচ এই কাঠ-বাদামী চোখের ভাষা পড়তে পারতেছ না!
কেমন শিল্পী তুমি?
পলাও বোঝে, এই কষ্টের গভীরতা মাপা তার কম্ম নয়।
তবু, মনে হয় একবার বলে দেখে, হে সখা- যাচ্ছ যেথা সকাতরে,সঙ্গী করে লহ মোরে। চোখে বাষ্প জমে, কি লজ্জা-ছি: ছি:।
কেউই বলতে পারে না, বলা হয়ে ওঠে না।
তিনজন-ই জানে- তেল রংয়ে আঁকা ছবি রিটাচেবল না,ভুল করে আঁকা হলেও তা থেকেই যায়।
স্বপ্নীল সমন্যামবিউলিস্ট
১৮/০৬/২০১২
মন্তব্য
এই লেখাতে ভাবনার প্রাধাণ্য বেশি। ঘুলঘুলি, জমিন- সব আসলে নাভেদের মনের (ভাবনা) খবর। কন্টিনিউটি ব্রেক হলে, আমি দু:খিত। আর নাভেদ আমার বড় ভাগনের নাম। মেলবোর্ণ থাকে ৩ বছরে একবার দেখি। ওকে মিস করি খুব। (স্বপ্নীল সমন্যামবিউলিসট)
অনেক ভালো লেগেছে। কোথাও আটকায়নি। মাঝে কিছু জায়গায় স্পেস হলে একেবারে তরতরিয়ে পড়া যেত।
স্বয়ম
কিভাবে এডিট করা যায় লেখা, জানাবেন। স্পেসিং করে দেবার ট্রাই করছি, পারতেছি না। (স্বপ্নীল সমন্যামবিউলিস্ট)
দুঃখিত, অতিথি লেখকদের এডিট করার সুযোগ নেই তো।
পোস্ট করার আগে প্রিভিউতে ভাল করে দেখে নেবেন প্লিজ।
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
হুম! তা আপনার পড়তে অসুবিধে হয় নি তো? (স্বপ্নীল সমন্যামবিউলিস্ট)
"কন্টিনিউটি ব্রেক" - বাস্তব-কল্পনা মেশামাশি করে, প্রায় মেখে-মুখে যাকে বলে, যখন গল্প লিখছেন তখন কন্টিনিউটি-র গুরুত্ব অতটা চেপে বসে না। থাকলে ভাল, না থাকলে ও চলে যাবে। কিন্তু এ গল্পে যে হেতু কোন প্রকৃত চমক-এর ব্যবস্থা রাখা হল না অথচ ফর্মটা ছোট গল্পের, তাই পুরো গল্প জুড়ে চরিত্রদের সুষম ডিষ্ট্রিবিউশান রসগ্রহণের পক্ষে অনেক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। সেটা আরো খানিকটা দরকার ছিল বলে মনে হোল। ভাল লাগছে, আপনার গল্পের অপেক্ষায় থাকি।
- একলহমা
এক্ষেত্রে স্বয়মের ভাবনার সাথে সম্পর্ক আছে। স্পেসিং প্রবলেম।
(স্বপ্নীল সমন্যামবিউলিস্ট)
আমি চিত্রকলার বেশী কিছু বুঝি না। তাই বিভিন্ন চিত্রের বা আঁকনভঙ্গীর বর্ণনা বুঝতে পারলাম না। গল্পে নাভেদের কষ্টটা লেখার গুনেই মন ছুঁয়ে গেলো, কিন্তু কাহিনি ভালো করে বুঝতে পারলাম না। মনে হচ্ছে প্রতিটা বাক্যের যেন দ্বৈত অর্থ আছে অথচ আমি শুধু বাইরের অর্থ নিয়ে মাথা কুটে মরছি, আসল রসাস্বাদন করতে পারছি না!
আপনার লেখার ভঙ্গী অসাধারণ। আরো পড়ার অপেক্ষায় থাকলাম।
আমি নিজেও তেমন বুঝি না। বেশিরভাগটাই আসলে চরিত্রচিত্রন আর পারিপার্শ্বিকতার বর্ণনা। তবে, দ্বৈত অর্থ নি:সন্দেহে আছে, এটা একান্তই নিজের জন্য একটা লেখা- কিভাবে কিভাবে যেন সচলে দিয়ে দিলাম। (স্বপ্নীল সমন্যামবিউলিস্ট)
হ্যাঁ, আরও লেখা আসুক আর ঐযে অনেকেই বলেছেন একটু সুবিন্যস্ত ভাবে......
পারেনও বটে! গল্পটা পড়ে যা মনে হলো:
১) গল্পের লেখক দারুণ লালনভক্ত(ভুল হলে গল্পের দোষ )
২) ছবি আর রঙের ব্যাপারে ভালো জানাশোনা এবং মাথা বেশ ভালো রকমের পরিষ্কার
৩) গল্পটা লিখেই পটাং করে সাবমিট বাটনে ক্লিকানো হয়েছে(নইলে ভাষার ব্যাপারটা চোখ এড়াতো না)
৪) গল্পটা পাঠকের অসম্ভব মনোযোগ দাবী করে(আমার তেমনই মনে হয়েছে। কারণ কখন কার সূতো ধরে খেলানো হচ্ছে বুঝতে কম্মোকাবার)
৫) আরো কিছু ব্যাপার যা উপরে একলহমা বলেছেন।
৬) ভাগ্নের নাম করে মামু কাহিনি পড়লাম যেন
এবং
৭) গল্পটা কিন্তু তেলরঙের না, কাজেই এটাকে রিটাচের সুযোগটা কাজে লাগালে সেইরাম একটা গল্প হবে বলে বিশ্বাস।
আপনি থামবেন না প্লিজ! লিখে যান শুভকামনা।
, আসলে এটি যে এডিট করা যায় না- তা জানা ছিল না। তাই স্পেসিং প্রব হয়ে গেছে- আর আপনার অবজার্ভেশান গুলো ঠিকাছে। (স্বপ্নীল সমন্যামবিউলিস্ট)
লেখাটা অসাধারণ লাগল। এত অল্প পরিসরে এত কিছু ফুটিয়ে তোলা সহজ নয়। আপনার অন্য লেখার লিঙ্কগুলি দেয়া যায়?
---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।
পড়ার জন্য ধন্যবাদ। আমি আসলে হাচল হবার পরে কিছু লিখিনি। তবে, অতিথি হিসাবে আমার লেখাগুলো আমার প্রোফাইলে বুকমার্ক হিসাবে পাবেন বোধহয়। তবুও দিয়ে দিলাম-
http://www.sachalayatan.com/guest_writer/49723 (সিবলিং টুইনস)
http://www.sachalayatan.com/guest_writer/49704 (অনুভূ দি পেরিজি)
http://www.sachalayatan.com/guest_writer/49675 (মানুষ দি তালিসমান)
http://www.sachalayatan.com/guest_writer/49672 (স্বপ্নের ফেরিওয়ালা)
http://www.sachalayatan.com/guest_writer/46677 (মানজিরা দি ল্যামেন্ট হোপ)
http://www.sachalayatan.com/guest_writer/49797 (এস্তেখারা)
http://www.sachalayatan.com/guest_writer/49770(জলজ ইন্দ্রজাল:গাঁন্ধার ছুঁয়ে ঋষভ)
-------------------------------------------------
ভালবাসা কেবল নিজেকে দেয় এবং নিজ থেকে নেয়-
ভালবাসার যেমন নিজেরও কিছু নেই, তেমনি সেও কারো নয়;
কেননা, ভালবাসার জন্য শুধু ভালবাসাই যথেষ্ট।
সচলায়তনে লেখার লিংকগুলি দিয়ে মেইল করে দিন, আপনার প্রোফাইলে এ্যড করে দিবে।
---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।
আপনার প্রথম লেখা পড়ি 'এস্তেখারা',ভক্ত হয়ে গিয়েছিলাম ওই একটা পড়েই।
এটাও দারুণ লাগল। একে একে সবগুলোই পড়তে হবে।
রাইটার্স ব্লক চলছে, লিখতে পারি না - এখন। কোন বুদ্ধি আছে? পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
-------------------------------------------------
ভালবাসা কেবল নিজেকে দেয় এবং নিজ থেকে নেয়-
ভালবাসার যেমন নিজেরও কিছু নেই, তেমনি সেও কারো নয়;
কেননা, ভালবাসার জন্য শুধু ভালবাসাই যথেষ্ট।
ধইন্যা দিলাম পুরা ক্ষেত।
-------------------------------------------------
ভালবাসা কেবল নিজেকে দেয় এবং নিজ থেকে নেয়-
ভালবাসার যেমন নিজেরও কিছু নেই, তেমনি সেও কারো নয়;
কেননা, ভালবাসার জন্য শুধু ভালবাসাই যথেষ্ট।
নতুন মন্তব্য করুন