নন্দন পুকুরের কল্পনার দৃশ্য এখন তোলা থাক। শৈশবের কথা বলি:
তখন স্কুলে পড়ি। বৃষ্টি হলে বাড়ির পাশের পানা-পুকুরের পানি উপচে পায়ে চলার ইট বাঁধানো রাস্তাটি একাকার হয়ে যেত। স্কুল ছুটির পর জুতো জোড়া হাতে নিয়ে পানি ভেঙে বাসায় ফিরতে হত। এক বর্ষাকালের এরকম একটি দিন কৈশোরের কৌতূহলী চোখে ধরা পড়ল ডুবে যাওয়া রাস্তাটির পাশে গোল্ড ফিশের মত লাল রঙের একটি মাছ ভেসে আছে। সেই মাছের থুতনিতে সূক্ষ্ম শনের মত দুটো মাত্র দাড়ি। যেগুলো সোজা সামনের দিকে আলোক রশ্মির মত করে তাক করা ছিল।
ছোট বেলা থেকেই আমার বন্ধুরা ছিল নানান বিষয়ে পারদর্শী। কেউ বিজ্ঞানী, কেউ কবি, কেউ ফাইটার। তাদের মধ্যে মাছ বিশেষজ্ঞ বন্ধুর কাছে খোঁজ করে জানতে পারলাম এগুলো খলশে মাছেরই একটি প্রজাতি। আমার চেয়ে বয়সে ছোট কিন্তু অধিকতর দুরন্ত পাশের বাড়ির ভাড়াটিয়ার ছেলে মাহমুদ বলল যে ১০টাকা দিলে সে আমাকে এই মাছ ধরে দিতে পারে।
আমিও তখন বয়সে খুব একটা বড় না হলেও, বাসার তো বড় ছেলে। দিনে কম করে হলেও তিনবার মুদি দোকানে যাই, আর একদিন পর পর যাই ১০০ টাকার নোট নিয়ে কাঁচা বাজারে। তাই সেখান থেকে ১০ টাকা হাপিশ করা আমার জন্যে তেমন কিছু কঠিন কাজ না। দামাদামি করে ১০ টাকায় দুটো মাছ ধরে নিয়ে আসার চুক্তি করে আসলাম।
ঘরের ঢুকতেই আবার ঝুম বৃষ্টি। পরদিনও টিপটিপ বৃষ্টি মাথায় নিয়ে দেয়াল বেয়ে উঠে এলো মাহমুদ। হাতে একটি কৌটা ভেতরে দুটো লাল খলশে মাছ। মাছ দুটো হাতে পেয়ে মনে হচ্ছিল, কেউ বুঝি আমার হাতে দুটো নক্ষত্র এনে দিলো! জিজ্ঞেস করলাম- কিভাবে ধরলি মাছ দুটো? সে বললো, বড়শি দিয়ে। তখনি মাথার ভেতর ঢুকে গেল বড়শি কেনার ঝোঁক।
এবার আমার সার্বক্ষণিক সহকারী ছোট ভাই রিয়েল কে ডাকলাম, দেখে যা আমার হাতে কী! সে দৌড়ে এসে হাতে দুটো লাল রং এর মাছ দেখে চোখে মুখে বিস্ময় নিয়ে বললো- `গোল্ড ফিস পেলে কই?´
শুরু হল মাছের সুখ-শান্তির জন্য আমাদের কার্যক্রম:
আমাদের একুরিয়াম নেই। তাই মাছের বাসস্থানের উপযোগী কিছু একটা খোজায় ব্যস্ত হয়ে পরলাম আমরা দুজন। চোখ পড়লো চাল রাখার টিনের ড্রামে। বেশ বড় সর আছে। ড্রাম খালি করা হলো। দুই ভাই মিলে ড্রামটি কার্নিশের উপর উঠালাম, পানি ভরলাম। মাছ দুটো সেই ড্রামে ছেড়ে শুরু হলো মৎস্য পালন কর্মসূচী। মনে মনে ভাবছিলাম, বাজার থেকে জ্যান্ত কই আর টাকি মাছ কিনে এনে এক জোড়া করে ড্রামে ছেড়ে দিব। শিং-মাগুরও ছাড়া যেতে পারে।
বাজারের তাজা মাছ ছাড়ার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের আগেই একটি বড়শি কিনে ফেললাম, নাইলন সুতা দিয়ে বেধে একটি চিকন কঞ্চির সাথে বাঁধলাম।
এবার কেঁচো ধরার পালা। এটাই ছিলো সব চেয়ে বিরক্তি কর অংশ। চিন্তা করলাম মরিচা-বাতি বানানোর জন্যে যদি মাহমুদ কসাইখানা থেকে গরুর ভুরি এনে মুখে লাগিয়ে ফু দিয়ে ফুলাতে পারে তাহলে হাত দিয়ে কেঁচো ধরা তো রীতিমত পরিচ্ছন্ন কাজের পর্যায়ে পরে। শুধু একটু ভয় হচ্ছিল কেঁচো গুলো আবার কামড় টামর দেয় কিনা। পরে অবশ্য একটা বিকল্প বের করেছিলাম। আটার কাই বড়শির মাথায় লাগিয়ে টোপ ফেলতেই টাকি মাছ ধরা পড়লো। সেই টাকি মাছের মাথা বেঢপ আকৃতির। লেজে এবং পিঠে প্রজাপতির মত কারুকাজ আছে। লোকজ নাম রাঘা টাকি। বাসার পেছনের দেয়ালের ওপাশে জমে থাকা হাঁটু পানিতে সাতরে বেড়াচ্ছিলো! তাকেও নিয়ে এলাম আমার পানি ভর্তি ড্রামে। আমি এবং রিয়েল দুজনেই খুব এক্সাইটেড এই মাছ নিয়ে।
রিয়েলের স্কুল সকালে আর আমার দুপুরে। তাই দেখা যায় সারাদিনই দুজনের কেউ না কেউ কার্নিশে উঠে বসে থাকি। আমি লম্বা হওয়ায় তরতর করে উঠে গেলেও রিয়েল কে বেশ কসরত করেই উঠতে হয় এখানে। বার বার উঠতে নামতে ওর পেটের চামরা ছিলে গেল। ড্রাম উপরে উঠাবার সময় আঙ্গুলেও খেলো ছ্যাচা। এসব ছোট খাটো ব্যথা তখন ওর নিত্যদিনের সঙ্গী; তাই এসবের কারণে মাছের যত্নআত্তির কোন কমতি হলো না। বরং সারাদিন দুজনে মিলে ভাবি মাছগুলো কে কিভাবে আরো আনন্দে রাখা যায়। ঘুমের মাঝেও স্বপ্ন দেখি মাছেদের। দুই একদিন পর দেখা গেলো মাছ গুলো তেমন একটা সাতার কাটছে না। চুপচাপ ড্রামের একেবারে তলায় গিয়ে ঝিম মেরে বসে থাকে। ভাবলাম টিনের ড্রামে বেচারাদের কষ্ট হচ্ছে। তাই মাছেদের জন্যে প্রাকৃতিক পরিবেশ সৃষ্টি করার লক্ষ্যে ড্রামের ভেতর কিছু মাটি এনে দিলাম যাতে নীচে কাদা জমে আর মাছেরা আরামে থাকে। কিন্তু তখন তো জানতাম না এই ঘোলা পানি মাছদের জন্যে আসলে বিপদ। না জানে উল্টাপাল্টা করা এখানেই শেষ নয়। এবার `গোদের উপর বিষফোড়ার´ ব্যবস্থা করলাম। বাসার পাশের পুকুর থেকে সবুজ পানা নিয়ে ড্রামের পানি তে ভাসিয়ে দিলাম। উদ্দেশ্য মহৎ। প্রাকৃতিক পরিবেশের যতটা কাছাকাছি যাওয়া যায় মাছেদের জন্যে নিশ্চয়ই ততটা মঙ্গল। এখন বড় হবার পর জানি পানা গুলো পানির অক্সিজেন লেভেল কমিয়ে দেয় বলে সেগুলোও মাছেদের জন্যে ভালো কিছু না।
ড্রামের তলায় আগে থেকেই একটু জং ধরা ছিল বলে কিছুদিন পরই নিচে চুইয়ে পানি পড়তে লাগলো। তাই ভাবলাম এদের কে অন্য জায়গায় ট্রান্সফার করা দরকার। বার বার গ্যালনে করে পানি ঢেলে পানির লেভেল ঠিক রাখতে হয়। গ্যালন নিয়ে সানসেটে উঠতেও বেশ পরিশ্রম করতে হয়। তাই অল্টারনেটিভ কোন কিছু খুঁজছিলাম। প্রথমেই মাথায় আসলো ভাঙ্গা শোকেসের বড় কাছের টুকরো কেটে একটা একুইরিয়াম বানিয়ে ফেলতে পারলে সবচেয়ে ভালো হয়। বাসার জানালার কাচ লাগানোর সময় দেখেছি কাচ মিস্ত্রী কলমের মত একটা যন্ত্র দিয়ে খুব সহজেই স্কেলের পাশে বসিয়ে দাগ দিয়ে যেকোনো মাপে কাচ কেটে নিতে পারে। আমাকে শুধু একটু খোঁজ খবর করে কলমটা কোথায় পাওয়া যায় সেটা বের করতে হবে।
খোঁজ খবর করে হতাশ হতে হল। ওই কলমের নিবে নাকি হীরা বসানো আছে। একমাত্র হীরা দিয়েই কাচ কাটা যায়। আর হীরা যেহেতু পৃথিবীর সবচেয়ে মুল্যবান পাথর তাই বাসার বড় ছেলে হওয়া স্বত্যেও এটা আমার পক্ষে কেনা বা যোগার করা সম্ভব হলো না।
ভেবে বের করলাম আমার ঘরের জানালার ওপাশে যে এক চিলতে জায়গা আছে সেখানের মাটি কেটে পুকুর বানাবো। রিয়েল তো আছেই, আমার সকল নির্দেশ পালনের জন্য সদা প্রস্তুত। দুজনে মিলে সবজি কাটার ছুরি আর স্টীলের ভাতের চামচ দিয়ে পুকুর কাটা শুরু করলাম। দৈর্ঘ্য প্রস্থে দুহাতের সমান বড় এবং প্রায় হাঁটু পর্যন্ত যেন ডুবে যায় এমন একটি গর্ত করা হলো। সেখানেই পানি ঢেলে বানানো হলো একেবারে খাটি প্রাকৃতিক একুইরিয়াম।
ড্রামে থেকে নিয়ে এসে মাছগুলো সেখানে ছাড়া হলো। কিছুক্ষণের মাঝেই লক্ষ্য করলাম পানি কিছুটা কমে গেছে। বুঝলাম মাটি পানি কিছুটা শুষে নিচ্ছে। তাই আবার পানি দিয়ে এলাম। এভাবে বেশ কয়েকবার পানি ঢালার পর বুঝলাম, মাটি খুবই তৃষ্ণার্ত। রিয়েল কে দায়িত্ব দিলাম যাতে পুকুরের পাহারায় থাকে আর পানি কমে গেলে গোসলখানার বালতি থেকে মগে করে পানি এনে ঢেলে দিয়ে যায়। এক সময় না এক সময় মাটি যখন পানি দিয়ে সম্পুর্ন ভিজে যাবে তখন আর পুকুরের পানি শুষে নিবে না। রিয়েল প্রায় সারাদিন ধরেই অক্ষরে অক্ষরে দায়িত্ব পালন করে গেছে। পুকুর থেকে পানি কমতে দেয়নি। আমি কিছুক্ষণ পর পর যেয়ে মুগ্ধ নয়নে নিজের কৃতকর্মের দিকে তাকিয়ে থেকে আবার ঘরে ফিরে আসছিলাম।
সারাদিন এভাবে পার হবার পর রাতে ক্লান্ত হয়ে ঘুমালাম। পরদিন সকালে উঠে দেখি পুকুরের সব পানি শুকিয়ে গেছে। আরো আশ্চর্য ব্যাপার হচ্ছে পুকুরে কোনো মাছের চিহ্নও নাই। সম্ভবত পানি শুকিয়ে যাবার পর বাসার পোষা বিড়াল মাছ গুলো খেয়ে ফেলেছে।
নিজের নির্বুদ্ধিতাই ছিলো মাছগুলো মারা যাবার কারন। মাছ পালনের ইতি ঘটিয়ে কিছুদিন মনমরা হয়ে ঘুরেফিরে শৈশবের ব্যাস্ততায় ভুলে গিয়েছিলাম সেসব কথা।
কিন্তু এই বড় বেলায় এসে বারবার মনে পড়ে সেসব কথা। যখনই কোথাও হাঁটুপানির পুকুর দেখি তখনি আমার সেই মাছগুলোর ছবি মনে ভেসে উঠে। দেখতে পাই, এক জোড়া লাল খলশে। যেন জলের ভেতর এক জোড়া জ্বলজ্বলে নক্ষত্র।
রকিবুল ইসলাম কমল
আমার লেখা পুরোন ছাইপাঁশ:
১। ফ্রেন্ডলি ভাইরাস
২। মা দিবসের ইতিবৃত্ত
৩। এসো এবার ফুলের রঙটা দেই পাল্টে
৪। ব্রেক
৫। অভাজনের প্যারিস ভ্রমন -পর্ব চার
৬। অভাজনের প্যারিস ভ্রমন – পর্ব তিন
৭। অভাজনের প্যারিস ভ্রমন – পবর্ দুই
৮। অবশেষে প্যারিস যাত্রা
৯। এই গরমে ঘোল খান
১০। ব্র্যায়েনবোলঃ একটি মজার খেলা
১১। অচেনা পাখি
১২। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও বিমাতা সুলভ আচরন
১৩। I day 2010, প্রবাসে প্রথম সাফল্য
১৪। একজন ‘লেখক’ এবং বছরের প্রথম দিন!
*শুধু খলশে মাছের ছবিটি ইন্টারনেট থেকে নেয়া।
মন্তব্য
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
ভালো লাগলো !
আহা, ছোটবেলার সেইসব মধুর ভুলগুলো...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
ছোটবেলার সে সময় গুলো এখন স্বপ্নের মত লাগে।
স্মৃতির এই ব্যাপারটা কী অদ্ভুত! এক একটা স্মৃতি কোথায় গিয়ে লুকিয়ে থাকে আর আপনার লেখাটার মত এক একটা লেখা পেলেই হুড়মুড় করে বেড়িয়ে আসে একের পর এক!
এককালে যে বড়শি নিয়ে পুকুরের পাড়ে বসে ফাৎনায় মাছের ঠোকর লাগে কি না তার জন্য বসে থেকেছি সে তো ভুলেই গিয়েছিলাম! ছোট্ট আটার টোপে ফেলে বড় নাইলোটিকা ধরার আনন্দটাও মনে পড়ছে! বিনা টোপে কোন এক বেকুব মাছ ধরা পড়ে গিয়েছিল সেটা মনে পড়ছে। আপনার মত করে মাটিতে গর্ত করে সেটাতে মাছ রাখার চেষ্টা চলেছে বন্ধুর বাড়িতে সে কথা মনে পড়ছে! মাছ চেনারও কী ঝকমারি! শোল মাছ ভেবে গজার মাছ কিনে নিয়ে আসা, আর মাগুর ভেবে আফ্রিকান মাগুর! কত শত ঘটনা!
খুব ভাল লাগল। অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে, পুরনো দিনে ফিরিয়ে নিয়ে যাবার জন্য!
~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...
ছোট বেলার যে স্মৃতি গুলো অনায়াসে মনে পরে সেগুলো বেশির ভাগই স্কুলের স্যারদের কিল-চড়ের স্মৃতি! হঠাৎ হঠাৎ কিল-চড় বাদে অন্য মনে পড়লেই লিখে রাখি।
লেখাটি আপনার স্মৃতির দরজায় কড়া নেড়েছে যেনে লেখাটি সার্থক মনে হচ্ছে।
ইমেইল চেক করুন।
অনেক অনেক ধন্যবাদ। একটি অনুরোধ করে ফিরতি ই-মেইল করেছি। অনুরোধটি রাখলে খুব খুশি হব।
লেখাটা ভালো লেগেছে।
ধন্যবাদ।
আপনার লেখা যেমন হয়। খুব সুন্দর। এবং
অ ভি ন ন্দ ন !
- একলহমা
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ সব সময় উৎসাহ দিয়ে মন্তব্য করার জন্য।
কী চমৎকার লেখা! খুব ভাল লেগেছে পড়তে। আর আপনি বোধ হয় হাচল হয়েই গেছেন। অভিনন্দন রইল
--------------------------------------------------------
আমি আকাশ থেকে টুপটাপ ঝরে পরা
আলোর আধুলি কুড়াচ্ছি,
নুড়ি-পাথরের স্বপ্নে বিভোর নদীতে
পা-ডোবানো কিশোরের বিকেলকে সাক্ষী রেখে
একগুচ্ছ লাল কলাবতী ফুল নিয়ে দৌড়ে যাচ্ছি
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে মিষ্টি মন্তব্যের জন্যে।
ভালো লেগেছে
- সিফাত উল কবির
ধন্যবাদ।
ফিরিয়ে নিয়ে গেলেন শৈশবের দিনগুলিতে, আমাদের বাড়িতেও চৌবাচ্চায় মাছ পুষতাম, খলসে মাছের প্রতি ছিল দুর্নিবার আকর্ষণ, সেটার জন্য অন্য মাছের চেয়ে অনেক বেশীগুণ দাম বা বিনিময় চালু ছিল! এমনও হয়েছে গ্রামে বেড়াতে গেলে ফেরার সময় ছোট বোতলে করে মাছ নিয়ে ফিরেছি, রং-বেরঙের নাম না জানা।
নাহ, স্মৃতির আক্রমণ ভাল লাগে না, অস্থির হয়ে ফিরতে ইচ্ছে করে
facebook
ছোটবেলার কিছু ঘটনা বুঝি সবার জীবনেই আশ্চর্য্য রকম ভাবে একই রকম!
হাচল হয়ে গেছেন মনে হয়। অভিনন্দন।
আমি আর আমার ভাই একবার ছোট কাঁচের চারকোনা বাক্সে দুটো কইমাছের বাচ্চা পুষেছিলাম। সাড়ে তিনমাস টিকে ছিল। মুড়ি খাওয়াতাম, রোজ পানি বদলে দিতাম, ছাদে নিয়ে বৃষ্টিতে গোসল করাতাম।
আর পুকুরও খুঁড়েছিলাম একবার, রাজহাঁস পুষব বলে। পাড়াতুতো দলবল নিয়ে বাসার পাশের বিশাল খালি জায়গায় মোটামুটি প্রমাণ সাইজের জলে থইথই পুকুর। তখন বর্ষাকাল ছিল বলে শুষ্কতাজনিত সমস্যা হয় নি। সারাদিন পড়ে থাকতাম ঐ হাঁসটাকে নিয়ে।
তারপর নানুমণি যখন সেই হংস সখাকে জবাই করে লোকজন দিয়ে সাধের পুকুর ভরাট করে দিলেন-- দুই ভাই-বোনের মাটিতে গড়াগড়ি দিয়ে সে কী বিলাপ করে কান্না!
হায়, কত বোকা ছিলাম, কত ছোট ছিলাম... কত ভাল ছিলাম....
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
আরে আমাদেরও তো দুটো রাজহাঁস ছিল! ছোটবেলার ঘটনা কী অদ্ভুত ভাবে সবার সাথে মিলে যায়!
[হাচলত্ব পেয়েছি তবে নিক জনিত একটি জটিলতায় আছি! প্রথমে রেজিষ্ট্রেশন করেছিলাম, ছাইপাশ নামে, পরে লিখেছি ছাইপাঁশ নামে, একদিন আরেকটি ই-মেইল থেকে নিজের নাম রকিবুল ইসলাম কমল দিয়ে রেজিষ্ট্রেশন করলাম। প্রথম একাউন্টে হাচলের ইমেইল পেয়েছি। কিন্তু চাচ্ছিলাম পরের ই-মেইলে আসুক যাতে নিজের নামেই লিখতে পারি। ]
কি সুন্দর লেখা! লেখা আর ছবির বিন্যাসটা দারুণ।
কল্যাণপুরে নানাবাড়ীতে প্রতিশুক্রবার যেতাম গর্ত করে পুকুর বানাতে। পলিথিন দিয়ে পানি ধরে রাখতে চেষ্টা করেছি কত। কাজ হয় নাই।
--------------------------------
হে প্রগাঢ় পিতামহী, আজো চমৎকার?
আমিও তোমার মত বুড়ো হব – বুড়ি চাঁদটারে আমি করে দেব বেনোজলে পার
আমরা দুজনে মিলে শূন্য করে চলে যাব জীবনের প্রচুর ভাঁড়ার ।
উৎসাহ দিয়ে মন্তব্য করার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।
প্রথম অংশটুকুআপনি খুজেঁ পাবেন বলধা গার্ডেনের শঙ্খপুকুরে। মাছেদের লেফট-রাইট পাবেন তবে হিজলের ছায়া পাবেন না। কিন্তু ওখানে গেলে হিজলের ছায়ার অভাবটুকু অনুভব করবেন না।
খুব ভালো লেগেছে পড়ে।
অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
হাচলাভিনন্দন...
আহা সেই সব দিন...!!! বড়শি নিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকা... আমি কিন্তু কেঁচো সহজেই ধরতাম। এমন বৃষ্টির দিনে অবশ্য বড়শি ফেলা হতো না। কিন্তু জালি জাল(তিন কোণা) নিয়ে দাড়িয়ে থাকতাম পুকুরের পাশে। পুকুরের পাশেই ছোট গর্ত করা থাকতো। সেঁচে মাছ ধরতাম। ছোট ছোট রঙিন পুটি মাছ পাওয়া যেত এই সময়। মাছ পেলে পুষে রাখার ইচ্ছে কখনো হয় নি। পেটেই যেত...
অনেক অনেক ধন্যবাদ।
নতুন মন্তব্য করুন