পরিশোধিত মূলধনঃ রহিম আর করিম পড়াশোনা শেষ করে চিন্তা করল শহরে চাকরী-বাকরী না করে গ্রামে ফিরে গিয়ে নিজে নিজে কিছু করবে। একজনের পরামর্শে ঠিক করল তারা মুরগীর খামার করবে। খামার প্রকল্পে তারা একেকজন ১০০ টাকা করে দিল। গ্রামের হেডমাস্টার জলিল সাহেব তাঁর প্রিয় ছাত্রদের উদ্যোগে খুশী হয়ে প্রকল্পে আরো ১০০ টাকা দান করলেন। মাত্র ৩০০ টাকা খামার শুরুর জন্য যথেষ্ট মনে না হওয়ায় তারা বন্ধু জব্বারের বোনের কাছ থেকে আরো ২০০ টাকা ধার করল বার্ষিক ১০% হার সুদে। তাহলে তাদের মোট মূলধন হল ৫০০ টাকা।
তাদের এই ৫০০ টাকার প্রকল্পে দেখা গেল বছর শেষে জব্বারের বোনের ঋণ সুদসহ পরিশোধ করার পরেও ৫০০ টাকা রয়েছে। অর্থাৎ ২০০ টাকা লাভ হয়েছে। এই ২০০ টাকা দিয়ে তাহলে কি করা হবে? সেটা প্রকল্পের কাজে আবার লাগানো যায় (Retained Surplus), এতে সামনের বছরে তাদের লাভ আরো বেশী হবে। অথবা টাকাটা দু’জনের মধ্যে ভাগ করে নিতে পারে (Dividend)। এখানে স্পষ্টতই বুঝা যাচ্ছে, ভাগ করতে হলে দু’জনের মধ্যে সমান ভাগ করতে হবে। কিন্তু আমরা আসলে এটা ঠিক করছি তারা কে কত টাকা প্রকল্পে বিনিয়োগ করেছে সেটা দিয়ে। এটাই পরিশোধিত মূলধন। এখানে পরিশোধিত মূলধন ২০০ টাকা, এবং দু’জন শেয়ারহোল্ডার ১০০ টাকা করে দিয়েছে, তাই দু’জনের মধ্যে সমান ভাগ হবে।
এখন মনে করি, প্রথম বছরের লাভের ২০০ টাকা আবার তারা ব্যবসায় বিনিয়োগ করল। এদিকে রহিম তার মায়ের কাছ থেকে ১০০ টাকা উপহার পেল যেটা সে আবার ব্যবসায় বিনিয়োগ করতে চায়। এখন প্রশ্ন হবে ১০০ টাকা দিলে তাকে প্রকল্পের কত ভাগের শেয়ার দেয়া হবে? লক্ষ্য করুন ১০০ টাকা পরিশোধিত মূলধনের সাথে যোগ হলে মোট পরিশোধিত মূলধন হবে ৩০০ টাকা, যার মধ্যে রহিমের থাকবে ২০০ টাকা অর্থাৎ দুই-তৃতীয়াংশ, তাতে পরবর্তীতে রহিম প্রকল্পের লাভের দুই-তৃতীয়াংশের দাবীদার হবে। কিন্তু প্রকল্পে আরো টাকা রয়েছে, জলিল সাহেবের দান এবং আগের বছরের লাভের ২০০ টাকা, যেখানে রহিমের অবদান কিন্তু দুই-তৃতীয়াংশ নয়। তাই ১০০ টাকা দিয়ে প্রকল্পের এক তৃতীয়াংশের মালিক হওয়া রহিমের জন্য লাভজনক, কিন্তু করিমের জন্য নয়। তাই করিম হয়তো চাইবে না, রহিম এভাবে পরিশোধিত মূলধনে টাকা যোগ করুক (শেয়ার কিনুক)। শেয়ার বাজারে বিক্রি হলে এটা খুব সমস্যা না, কারণ তখন শেয়ার লাভজনক হওয়ার কারণে রহিমকে এক তৃতীয়াংশ শেয়ার ১০০ টাকার বেশী দিয়ে কিনতে হবে অন্য ক্রেতার সাথে প্রতিযোগিতার কারণে। কিন্তু এখানে বাজার কাজ না করায়, কে শেয়ার কেনার অনুমোদন পাচ্ছে তার উপরে নির্ভর করবে কে কতটুকু লাভবান হচ্ছে এই প্রকল্প থেকে। আমরা অনুমান করছি প্রকল্পটি লাভজনক।
গ্রামীণ ব্যাংকের সাথে তুলনার জন্য মনে করি এই প্রকল্পের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়ার দায়িত্ব রহিম এবং করিম বিশ্বাস করে গ্রামের মুরুব্বি হিসেবে জলিল সাহেবের উপর ন্যস্ত করেছে। অর্থাৎ জলিল সাহেব নির্ধারণ করবেন প্রকল্পের পরিশোধিত মূলধন কত টাকা হতে পারবে।
অনুমোদিত মূলধনঃ সর্বোচ্চ কত টাকা পর্যন্ত পরিশোধিত মূলধন হতে পারবে সেটাই হচ্ছে অনুমোদিত মূলধন। অর্থাৎ পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ অনুমোদিত মূলধনের চেয়ে বেশী হতে পারবে না। এটা রহিম এবং করিম আগেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ঠিক করে রাখতে পারে, অথবা জলিল সাহেবকে সিদ্ধান্ত নেয়ার দায়িত্ব দিতে পারে।
যেহেতু গ্রামীণের ক্ষেত্রে পরিশোধিত মূলধনের পরিবর্তনের সাথে সাথে তদনুযায়ী অনুমোদিত মূলধন ও পরিবর্তন করা হয়েছে এবং শেয়ারের ডিভিডেন্ড নির্ধারণ করা হয় পরিশোধিত মূলধন অনুযায়ী, তাই আমাদের আলোচনা পরিশোধিত মূলধনে সীমাবদ্ধ রাখব।
গ্রামীণ ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধনঃ গ্রামীণ ব্যাংকের যাত্রার শুরুতে অর্থাৎ ১৯৮৩ সালে গ্রামীণ ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন ছিল ১.৮ কোটি টাকা। যার পুরোটাই সরকার থেকে পাওয়া। কিন্তু ১৯৮৩ এর গ্রামীণ ব্যাংক অধ্যাদেশ অনুযায়ী পরিশোধিত মূলধন হওয়ার কথা ৩ কোটি টাকা যার মধ্যে সরকারের ৬০% (১.৮ কোটি টাকা) এবং ঋণগ্রহীতা সদস্যদের ৪০% অর্থাৎ ১.২ কোটি টাকা। কিন্তু ঋণগ্রহীতাদের ১.২ কোটি টাকা তখনো পরিশোধিত হয়নি। এটা পর্যায়ক্রমে সদস্যদের কাছে ১০০ টাকা মূল্যমানের শেয়ার বিক্রির মাধ্যমে আদায় হওয়ার কথা। এর পরের বছরই ঋণগ্রহীতাদের শেয়ারের মূল্য দাঁড়ায় ৭১ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা, তার পরের বছরে (১৯৮৫ সালে) ঋণগ্রহীতাদের মোট পরিশোধিত মূলধন ১.২ কোটি টাকায় পৌঁছায়।
কিন্তু এর পরেও ঋণগ্রহীতাদের কাছে শেয়ার বিক্রি অব্যাহত থাকে এবং ১৯৮৬ সালে পূর্ববর্তী অধ্যাদেশের সংশোধনীর মাধ্যমে পরিশোধিত মূলধনের সর্বোচ্চ সীমা ৭.২ কোটি টাকায় পুননির্ধারণ করা হয়, যার মধ্যে সরকারের মূলধন ১.৮ কোটি টাকাই থাকে। অর্থাৎ সরকারের শেয়ার কমে ২৫% হয় এই সংশোধনীর ফলে। আবারো ঋণগ্রহীতাদের কাছে শেয়ার বিক্রি করতে করতে ১৯৯০ সালে পরিশোধিত মূলধন ৭.২ কোটি টাকায় পৌঁছায়।
এবার আগের উদাহরণে ঋণগ্রহীতা সদস্যদের রহিমের জায়গায় আর সরকারকে করিমের জায়গায় চিন্তা করুন। ব্যাংকের আর্থিক উন্নতি যদি হয়, তাহলে নতুন শেয়ার ক্রেতারা সেই উন্নতির ভাগ পেয়ে যাচ্ছে, অর্থাৎ যারা আগে শেয়ার কিনেছে তাদের শেয়ারের বিপরীতে লাভের ভাগ কমে যাচ্ছে। অর্থাৎ এটা একধরনের ট্রান্সফার গ্রামীণের পুরনো সদস্য এবং সরকার থেকে নতুন সদস্যদের কাছে। এখানে সরকার চাইলে আপত্তি করতে পারত, অথবা আরো টাকা পরিশোধ করে তাদের শেয়ার বাড়াতে পারত। কিন্তু গ্রামীণ প্রথমদিকে যেহেতু খুব একটা লাভজনক ছিল না এবং আইন অনুযায়ী ডিভিডেন্ড ও দিতে পারত না, তাই সেই পরিস্থিতিতে গ্রামীণে শেয়ার বাড়ানোর জন্য কারুরই খুব আগ্রহ থাকার কথা না। কিন্তু শেয়ার মূলধন বাড়ানো ব্যাংকের আর্থিক স্থিতিশীলতার জন্য জরুরী, তাই ঋণগ্রহীতাদের কাছ থেকে শেয়ার মূলধন সংগ্রহ করা নিয়েও খুব সম্ভব কোন কথা উঠেনি তখন।
১৯৯০ এ পরিশোধিত মূলধন ৭.২ কোটি টাকায় পৌঁছে যাওয়ায় ১৯৯১ সালে অর্থ মন্ত্রনালয়ের একটি পত্রে পরিশোধিত মূলধনের ঊর্ধসীমা ১৫ কোটি টাকায় স্থির করা হয়। এটিও অর্জিত হয় ১৯৯৩ সালে। ১৯৯৪ সালে অর্থ মন্ত্রনালয়ের আরেকটি পত্রে পরিশোধিত মূলধনের ঊর্ধসীমা স্থির করা হয় ৪০ কোটি টাকা। এবং ২০০৮ সালে এটি আবারো বাড়িয়ে ৩০০ কোটি টাকা করা হয়। গ্রামীণের পরিশোধিত মূলধন ২০০৯ সালেই ৪০ কোটি টাকা অতিক্রম করে এবং ২০১২ সালের শেষ পর্যন্ত গ্রামীণের পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ প্রায় ৬০ কোটি টাকা যার মধ্যে সরকারের অংশ এখনো ১.৮ কোটি টাকা, বাকিটা ঋণগ্রহীতা সদস্যদের। অর্থাৎ ১৯৮৩ এর পর থেকে সরকার গ্রামীণ ব্যাংকে কোন মূলধন জমা করেনি, কিন্তু ঋণগ্রহীতাদের শেয়ার বেড়েছে, যেটা এখন প্রায় ৯৭%।
কয়েকটি পর্যবেক্ষণঃ
১। গ্রামীণ ব্যাংকের প্রারম্ভিক মূলধন যোগান দিয়েছিল সরকার।
২। সদস্যদের কাছ থেকে মূলধন সংগ্রহের অনুমোদন ছিল ১৯৮৩ র অধ্যাদেশে এবং প্রয়োজনমত পরিশোধিত মূলধন পরিবর্তনের ও সুযোগ ছিল।
৩। পরবর্তীতে সদস্যদের কাছ থেকে মূলধন সংগ্রহের হার আশাব্যঞ্জক হওয়ায় সরকারকে আর মূলধন যোগান দিতে হয়নি এবং অব্যাহতভাবে সদস্যদের কাছ থেকেই শেয়ারের বিনিময়ে মূলধন সংগ্রহ করা হয়েছে।
৪। যখনই পরিশোধিত মূলধন নির্দিষ্ট সীমা স্পর্শ করেছে তখনই সেই সীমা বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে, সরকার নির্বিশেষে।
৫। অর্থাৎ গ্রামীণ ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধনে ঋণগ্রহীতাদের শেয়ার বেড়ে যাওয়াতে কোন সরকারেরই আপত্তি ছিল না এতদিন।
৬। গ্রামীণ ব্যাংকের সদস্যদের কাছ থেকে মূলধন সংগ্রহ নতুন কিছু নয়, প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এটা হয়ে আসছে। অব্যাহতভাবে মূলধন বৃদ্ধি এবং এটা সরকারের অনুমোদনের একটা মানে হতে পারে, এই প্রক্রিয়াটা প্রত্যাশিত ছিল সব পক্ষের কাছে। সাধারণ বিবেচনায়ও এখানে আপত্তি করার মত খুব কিছু দেখা যায়না, গ্রামীণ ব্যাংক যদি বিদেশী দাতা, সরকার কিংবা বেসরকারী খাত থেকে পুঁজি সংগ্রহ না করেই শুধুমাত্র সদস্যদের পুঁজির উপর ভিত্তি করে বিকাশ লাভ করতে পারে এবং একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠান হতে পারে, সেখানে অখুশী হওয়ার মত কিছু আমার চোখে পড়ে না। বরং ক্ষুদ্র পুঁজি সঞ্চয় করে এত বড় একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা গ্রামীণের সদস্যদের একটি বড় কৃতিত্ব। এবং গ্রামীণ লাভজনক হওয়ার ফলে এই কৃতিত্বের পুরষ্কার ও তারা পাচ্ছেন।
৭। সর্বোপরি গ্রামীণের পরিশোধিত মূলধনের বৃদ্ধি সবসময়ই সরকার কর্তৃক অনুমোদিত ছিল। কিন্তু গ্রামীন ব্যাংক অর্ডিন্যান্স এর ১৯৮৬ এর সংশোধনী যদি বিবেচনা করা হয়, যেখানে সরকারের ২৫% শেয়ারের কথা বলা হয়েছে, তাহলে গ্রামীণ পরিশোধিত মূলধনের এই ভাগ ১৯৯০ সালেই অতিক্রম করে যায়। তাহলে সরকারের ২৫% শেয়ার ধরে রাখার জন্য হয় আরো টাকা বিনিয়োগ করা দরকার ছিল অথবা গ্রামীণের সদস্যদের কাছে শেয়ার বিক্রি বন্ধ করে দেয়া উচিত ছিল। দ্বিতীয় বিকল্পের খুব একটা গ্রহণযোগ্যতা থাকার কথা না কোন বিচারেই। তাহলে বাকি থাকল প্রথম বিকল্প। গ্রামীণ যদি তার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য পর্যাপ্ত মূলধন যোগাড় করতে পারে, তাহলে সরকারের কি স্বার্থ থাকতে পারে শেয়ার বৃদ্ধি করার বা ধরে রাখার? লাভের অংশ পাওয়া? লাভের অংশ যদি সরকারের বদলে দরিদ্র্য ঋণগ্রহীতাদের কাছে যায় তাহলে সরকারের আপাত উদ্দেশ্যের (দারিদ্র্য দূরীকরণ, গরীব মানুষকে আর্থিক নিরাপত্তা প্রদান) সাথে সেটা খুব অসামঞ্জস্যপূর্ন নয়। আর গ্রামীণ ব্যাংকের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখাই যদি শেয়ার রাখার উদ্দেশ্য হয় তাহলে সেটা খুব সহজেই আইন সংশোধন করে বা গ্রামীণের যেকোন নীতিনির্ধারণী প্রস্তাব অনুমোদন করা না করার মাধ্যমে সেটা করা যায়। আমার কাছে মনে হয়, হয়তো এরকম একটা চিন্তা থেকেই সরকার গ্রামীণে শেয়ার বাড়ানো বা ২৫% ধরে রাখার চেষ্টা করেনি এবং ঋণগ্রহীতাদের অব্যাহত শেয়ার বৃদ্ধিকে অনুমোদন দিয়ে গেছে।
৮। ১৯৮৬ র সংশোধণী অনুযায়ী সরকারের ২৫% শেয়ার রাখা যদি আবশ্যকীয় হয়, তাহলে পরবর্তীতে (১৯৯১, ১৯৯৪, ২০০৮) সরকারী শেয়ার সমন্বয় না করে পরিশোধিত মূলধন বৃদ্ধি করার অনুমতি দেয়া মূল অধ্যাদেশের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
বর্তমান পরিস্থিতিঃ আগের পর্বে যেমন দেখা গেছে ২০০২ এর পর থেকে গ্রামীণ মোটামুটি ধারাবাহিকভাবে আর্থিক সাফল্য অর্জন করছে। উপরন্তু ২০০৫ এর পর গ্রামীণের লাভের অংশ ডিভিডেন্ড হিসেবে প্রদানের উপর বিধিনিষেধ উঠে যাওয়ার পর গ্রামীণ প্রতি বছরই উল্লেখযোগ্য হারে ডিভিডেন্ড প্রদান করেছে শেয়ারহোল্ডারদের। প্রথম বছর ২০০৬ এ ১০০% ডিভিডেন্ড দেয়ার পর ২০০৭ এবং ২০০৮ এ ২০% করে এবং পরবর্তী প্রতি বছর ৩০% করে ডিভিডেন্ড দিয়েছে। অর্থাৎ কেউ ২০০৬ এর আগে থেকে গ্রামীণের একটি শেয়ারের (১০০ টাকা) মালিক হলে, এ পর্যন্ত ডিভিডেন্ড হিসেবে মোট ২৬০ টাকা পাওয়ার কথা। অন্যান্য কোম্পানীর শেয়ারের সাথে তুলনা করলে এই হার যথেষ্টই লাভজনক। তাহলে আমাদের রহিম-করিমের উদাহরণে দুজনেরই আগ্রহ থাকবে নিজের শেয়ার বাড়ানোর। কিন্তু এক্ষেত্রে করিম যদি হয় সরকার আর রহিম যদি হয় দরিদ্র গ্রামীণ ব্যাংক সদস্য তাহলে এই স্বার্থের দ্বন্দে কার অনুকূলে যাওয়া উচিত জলিল সাহেবের (যারা গ্রামীণ ব্যাংকের ভাগ্য নির্ধারণ করছেন, জনগন এবং সুশীল, সচেতন সমাজ সহ)?
ইতিমধ্যে সরকার নিজের শেয়ার ২৫% এ উন্নীত করার উদ্যোগ নিয়েছেন। যদিও হিসাবে সামান্য একটু ভুল হয়ে গেছে তাদের। গ্রামীণ ব্যাংকের বর্তমান পরিশোধিত মূলধন ৬০ কোটি টাকা, যার মধ্যে ১.৮ কোটি টাকা সরকারের। সেই হিসেবে ২৫% শেয়ার রাখতে হলে সরকারের ১৫ কোটি টাকা থাকতে হবে মনে করে তারা আরো ১৩.২ কোটি টাকা জমা দিয়েছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে তারা যেটা ভুলে গেছেন সেটা হচ্ছে ১৩.২ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধন হিসেবে জমা দিলে গ্রামীণের মোট পরিশোধিত মূলধন হয় ৬০+১৩.২=৭৩.২ কোটি টাকা, যার মধ্যে ১৫ কোটি টাকা সরকারের। অর্থাৎ তাদের শেয়ার দাঁড়ায় ১৮% এর মত।
এটা কোন বড় সমস্যা নয়। আশা করি, ঠিক কত টাকা জমা দিলে শেয়ার ২৫% হবে এই হিসাব সরকার বাহাদুর এক সময় মিলাতে পারবেন। এমনকী চাইলে সরকারের শেয়ার ৫০% বা ১০০% এ বাড়িয়ে নিতে পারবেন টাকা জমা দিয়ে বা না দিয়েই, এইটুকু ক্ষমতা সরকারকে আমাদের দিতেই হয়। কিন্তু এই ক্ষমতা প্রত্যাশিত উপায়ে ব্যবহার হচ্ছে কিনা দেখার জন্য নীচের পরিস্থিতিগুলো একটু বিবেচনা করে আসিঃ
১। সরকারের শেয়ার ১০০%: যেহেতু ১৯৮৩ সালে গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার সময় গ্রামীণ ব্যাংকের সদস্যদের পরিশোধিত মূলধন শূন্য ছিল অর্থাৎ পরিশোধিত মূলধন পুরোটাই সরকারের ছিল, তাই সরকার পরবর্তী সকল শেয়ার বিক্রি অবৈধ ঘোষনা করতে পারেন। সেক্ষেত্রে যারা যারা গ্রামীণের ১০০ টাকার শেয়ার কিনেছেন, সেটা গ্রামীণের তাদের কাছ থেকে নেয়া ঋণ হিসেবে পরিগণিত হবে এবং তারা কোন ডিভিডেন্ড পাবেন না। অর্থাৎ, গ্রামীণের ২০১৩ সালের লাভের অংশ পুরোটাই সরকার পাবেন, ঋণগ্রহীতারা কোন টাকা পাবেন না। তবে ১৯৮৩ এর গ্রামীণ ব্যাংক অধ্যাদেশ যদি সরকার অমান্য না করেন, তাহলে এটা তারা করতে পারেন না, কারণ সেখানে ঋণগ্রহীতাদের ৪০% শেয়ারের অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
২। সরকারের শেয়ার ৫০% এর বেশী: গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে তদন্ত কমিশনের এরকম একটা সুপারিশ থাকার কথা শোনা যাচ্ছে। কিছু একটা নিয়মের অজুহাতে সরকার বাহাদুর এটাও অবশ্যই করতে পারেন, তাতে ঋণগ্রহীতাদের প্রাপ্য ডিভিডেন্ডের পরিমাণ প্রায় অর্ধেক হয়ে যাবে সামনের বছর থেকে (অর্থাৎ অন্যথায় ৩০% ডিভিডেন্ড পেলে তারা এখন ১৫% পাবেন)। এটা যদিও গ্রামীণ ব্যাংক অধ্যাদেশের ১৯৮৬ এর সংশোধনীর সাথে সাংঘর্ষিক হয়।
৩। সরকারের শেয়ার ২৫% : আগে যেমন বলা হয়েছে, এটা করার প্রক্রিয়া/চেষ্টা ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। স্পষ্টতই এটার মানেও ঋণগ্রহীতাদের ডিভিডেন্ডের ভাগ কমে যাওয়া। এটা আবার ১৯৮৬ এর পরবর্তী যেসব আদেশের বলে গ্রামীণের ঋণগ্রহীতা সদস্যদের শেয়ার ৯৭% এ পৌঁছেচে, সেগুলোর সাথে ঠিক সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে রিভিউ কমিটির রিপোর্টের এক জায়গায় দেখলাম বলা হয়েছে, ২০০৮ এ যেহেতু অনির্বাচিত সরকার ছিল তাই তাদের দেয়া অনুমোদন গ্রহণযোগ্য নয়, যেহেতু পরবর্তীতে নির্বাচিত সরকার সেটা অনুমোদন করেনি। এভাবে চিন্তা করলে আমার মনে হয় যেকোন নিয়মই প্রতিষ্ঠা বা বাতিল করা সম্ভব। ১৯৮৩ বা ১৯৮৬ তে গ্রামীণ ব্যাংক অধ্যাদেশ প্রণয়নকারী সরকার ও খুব সম্ভবত নির্বাচিত ছিল না। তাই আমার কাছে এটা সরকারের সিদ্ধন্তের ব্যাপার, তারা কাট-অফ টা কোথায় ঠিক করবেন, ২৫%, ৫০% নাকি ১০০%, নাকি যেভাবে চলছে সেভাবেই চলতে দেবেন। আর যাই ঠিক হোকনা কেন, সেটার সমর্থনে আইন, নিয়ম-নীতি বা তার ব্যতিক্রম খুঁজে পাওয়া খুব কঠিন হওয়ার কথা না।
দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে, এই প্রক্রিয়ায় প্রভাবিত/ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার সম্ভাবনা আছে যাদের, তারা এই ব্যাপারে মোটেও সচেতন নন। তারা শেয়ারের এই হিসাব বুঝবেন সেটা আমি আশা ও করি না। আবার তারা যে এই শেয়ারের পুরোটার ন্যায্য দাবীদার সেই ব্যাপারেও আমি নিঃসন্দেহ নই। রহিম-করিমের উদাহরণ মনে থাকলে দেখবেন শুরুতেই করিম হিসাবে সরকারের আপত্তি থাকার কথা ঋণগ্রহীতাদের শেয়ার বাড়ানোতে। কিন্তু সরকার বাহাদুররা তখন এই আপত্তি জানাননি। তাদের বদান্যতায় গ্রামীণের সিংহভাগ মালিকানা চলে গেছে গ্রামীণের দরিদ্র্য ঋণগ্রহীতাদের কাছে। এখন সরকার বাহাদুর এই বদান্যতা ফিরিয়ে নিতে চাইছেন, এবং এই সদস্যদের হয়ে এটার প্রতিবাদ করার কেউ নেই। সবাই ভাবছেন, এটা সরকার-ডঃ ইউনূস লড়াই। কিন্তু গ্রামীণের মালিকানা ইস্যুতে ডঃ ইউনূসের লাভ-লোকসানের কিছু দেখি না। বরং এই লড়াইটা হচ্ছে সরকার-গ্রামীণ সদস্যদের মধ্যে। যে লড়াইয়ে এক পক্ষ অক্ষম এবং অচেতন এবং তাদের হয়ে লড়াই করার জন্য আসলেই কেউ নেই।
সুহাস শিমন
আগের পর্ব ১.১: গ্রামীণ ব্যাংকের সুদের হার, মালিকানা এবং আরো কিছু বিতর্ক (পর্ব ১.১)
আগের পর্ব ১.২: গ্রামীণ ব্যাংকের সুদের হার, মালিকানা এবং আরো কিছু বিতর্ক (পর্ব ১.২)
মন্তব্য
গ্রামীণ ব্যাঙ্কের ৯৭% মালিক দরিদ্র ঋণগ্রহীতারা ঠিক কী প্রক্রিয়ায় গ্রামীণ ব্যাঙ্কের কার্যক্রম পরিচালনায় অংশগ্রহণ করেন?
ঠিক জানি না (আমার জানার কথাও না)। তাও, আন্দাজে একটা জবাব দিতে পারি। বাংলাদেশের মালিক তো আমরা (মানে জনগণ)। আমরাই তো দেশের কার্যক্রম পরিচালনায় অংশগ্রহণ করতে পারছি না।
এখন গ্রমীণের রিপ্রেজেন্টেটিভ সিস্টেম কিভাবে চলে সেটা অজানা।
বড় বড় ব্যবসায় শেয়ার হোল্ডারা ম্যানেজিং কমিটি ঠিক করেন, (বা সিইও নিয়োগ করেন)। সিইও নিজের পছন্দ মত চালান, নিজের পছন্দ মত কম্পানির রদবদল করেন। পারফরমেন্স পছন্দ না হলে, শেয়ারহোল্ডারা সিইওর চেয়ার ধরে টান দেন।
কোন বড় প্রতিষ্ঠানেই সব শেয়ারহোল্ডার সরাসরি কার্যক্রম পরিচালনায় অংশগ্রহণ করেন না। সাধারণত বার্ষিক সাধারণ সভায় শেয়ারহোল্ডাররা বোর্ড অফ ডিরেক্টরস নির্বাচন করেন,এবং বোর্ড অফ ডিরেক্টরস সারা বছর শেয়ারহোল্ডারদের পক্ষে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। গ্রামীণ এর ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম হল, শেয়ারহোল্ডার এর সংখ্যা অনেক বেশী হওয়ায় এজিএম অনুষ্ঠান করা সম্ভব নয়। তাই স্থানীয়ভাবে নির্বাচনের মাধ্যমে বোর্ড অফ ডিরেক্টরস নির্বাচিত হন ঋণগ্রহীতা সদস্যদের মধ্য থেকে ৯ জন, এবং সরকার নিয়োজিত মেম্বার থাকেন ৩ জন, এর সাথে ম্যানেজিং ডিরেক্টর (খুব সম্ভবত নন-ভোটিং) মিলে মোট ১৩ জন। নির্বাচন প্রক্রিয়ার খুঁটিনাটি আমার জানা নেই, তবে ডিরেক্টর নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে হচ্ছে না এরকম অভিযোগ ও দেখিনি কোথাও। এই প্রক্রিয়ার কোন সমস্যা থাকলে সেটা সমাধান করার চেষ্টা করা যায়, কিন্তু এর জন্য গ্রামীণের শেয়ার ঋণগ্রহীতাদের হাত থেকে সরকারের কাছে নিয়ে নেয়ার কোন যৌক্তিকতা পাইনা।
সুহাস শিমন
এই স্থানীয় পর্যায়ে নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পর্কে গ্রামীণ ব্যাঙ্কের গ্রামীণ দরিদ্র নারীরা কতটুকু জানেন, বা ব্যাঙ্কের পক্ষ থেকে তাদের কতটুকু জানানো হয়? ৮৩ লক্ষ ঋণগ্রহীতা শেয়ারহোল্ডার থেকে ৯ জনকে নির্বাচন করার প্রক্রিয়াটি যথেষ্ট সময় ও আয়োজনসাপেক্ষ হওয়ার কথা (ইনফ্যাক্ট এটা জাতীয় সংসদ নির্বাচনের চেয়েও বড় স্কেলের মনে হচ্ছে) । এর খুঁটিনাটি না জানা মানে গ্রামীণ ব্যাঙ্কের মালিকানার একটা বিরাট তাৎপর্যপূর্ণ অধ্যায় সম্পর্কেও অনবগত থাকা, তাই না?
নাকি আপনি গ্রামীণ ব্যাঙ্ক পরিচালনা নিয়েও একটি পর্ব লিখবেন?
গ্রামীণ ব্যাংক পরিচালনা নিয়ে লিখার পরিকল্পনা নেই আপাতত। আশা করি তদন্ত কমিশনের ফাইনাল রিপোর্টে এসম্পর্কিত কিছু থাকবে। অর্থাৎ ঠিক কোন ধরনের অনিয়ম বা অনিয়মের সম্ভাবনায় গ্রামীণের বর্তমান পরিচালনা পদ্ধতির কোন ধরনের সংস্কার রিকমেন্ড না করে সরাসরি গ্রামীণের মালিকানা সদস্যদের কাছ থেকে সরকারের কাছে নিয়ে নেয়ার সুপারিশ করা হচ্ছে।
যেকোন মালিকানার দুটো অংশ, একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা, আরেকটি সেই মালিকানা থেকে উদ্ভুত বৈষয়িক লাভ। আপনি গ্রামীণ সদস্যদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা নিয়ে সন্দিহান, কিন্তু তাদেরকে বৈষয়িক লাভ থেকে বঞ্ছিত করা এটার সমাধান হতে পারেনা কোনভাবে। এটা অনেকটা এরকম, আপনার একখন্ড জমি আছে, আপনি সেটা থেকে ধান পান, কিন্তু আপনি সেই জমির পরিচালনা ঠিকভাবে করতে পারছেন কিনা সেই সন্দেহের কারণে আপনার জমি আমি আমার ব্যবহারের জন্য নিয়ে নিলাম। আপনার উপকার করলাম কি?
সুহাস শিমন
আমার একখন্ড জমি আছে। আপনি সে জমির দেখভাল করেন। আর চান্দে চান্দে ঐ জমিকে গ্যারান্টি রেখে আশেপাশে ঝোপেঝাড়ে নানারকম জমি বন্দোবস্ত নেন। সরকার তখন আপনার মতো দুষ্টুকে হটিয়ে নিজেই দেখভালের দায়িত্ব নিলো। সরকার আমার তেমন উপকার না করলেও আপনার বিরাট অপকার করছে। এতেই মনে হয় আপনি বেজার। তাই না?
চান্দে চান্দে! অন্যকিছু মনে পড়ে গেল
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
শেষপর্যন্ত কার!!
হা হা ......শেষপর্যন্ত কার? শেয়ারহোল্ডারদের বিভাজন সরকার যেভাবে নির্ধারণ করবে সেভাবেই হবে মনে হচ্ছে। আর শেষ পর্যন্ত গ্রামীণ ব্যাংক যদি বেসরকারী খাতে ছেড়ে দেয়া হয় তাহলে গ্রামীণের শেয়ার যারা কিনতে পারবে তাদেরই হবে। আর লিকুইডেট করা হলে সেই সময়ে বর্তমান শেয়ারহোল্ডারের বিভাজন অনুযায়ী গ্রামীণের সম্পদ ভাগ হয়ে যাবে দায়-দেনা পরিশোধের পর।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
সুহাস শিমন
আজীবন বিজ্ঞানের ছাত্র হিসাবে বিসিএস এক্সামের জন্য অর্থনীতি পড়েছি, তাই প্রায় কিছুই বুঝি না তবে- এই বিতর্কে সরকার আর ইউনুস স্যারকে জড়ানোর প্রয়োজন কী? অন্যান্য রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের পরিচালনার বহর গত বছর দেখলাম! সেখানে, গ্রামীন ব্যাংক নিয়ে এত ধস্তাধস্তির কারন বুঝি না। দেখুন, এমেরিকা-ইউরোপে গাদা গাদা নোবেল লরেট- তাদের সম্মান ভাগাভাগি হয়ে যায়। কিন্তু, আমাদের সবেধন নীলমণি তার আইডিয়া সারা বিশ্বে অনুকরণীঁয় করতে বাধ্য করেছে। করাপশান- আমাদের জাতিগত বৈশিষ্ট্যে পরিনত কয়েক দশক ধরেই- বাকিদের বাদ দিয়ে - গর্বের থালায় ছিদ্রাণ্বেষণ আন্তর্জাতিক মহলে হাস্যরস যোগায় বৈকি!
এটা যারা সাব্যাস্ত করবেন তারা তো অর্থনীতি গুলে খেয়েছেন- তারা কেন কুরু-পান্ডব যুদ্ধ থেকে সাধারন অক্ষোহনীদের রক্ষা করে না!! আরো সরল করে লেখা হলে ভালো হতো না? হিমদার প্রশ্নটা আমার মনেও বাজছে- উত্তর পাবো অন্য কোন লেখায় না মন্তব্যে। (স্বপ্নীল সমন্যামবিউলিস্ট)
সম্পূরক প্রশ্ন: বিশ্বে আর কোন দেশে সরকার ক্ষুদ্রঋণের জন্যে বিশেষায়িত ব্যাঙ্কে শেয়ারহোল্ডার?
অনেক ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য। হিমুদার প্রশ্নের উত্তর দেয়ার চেষ্টা করেছি উপরে, কিন্তু খুব বিস্তারিত কিছু জানিনা এ ব্যাপারে।
সমস্যা হচ্ছে এটা যারা সাব্যস্ত করছেন তারা আসলেই অর্থনীতি বিবেচনা করছেন নাকি রাজনীতি বিবেচনা করছেন, সেটা একটা বিবেচ্য বিষয়। তাই সাধারণ অক্ষৌহনীদের রক্ষা করার ব্যাপারে নিঃসন্দেহ হতে পারিনা। অন্ততঃ ঘটনাবলী যেভাবে ঘটছে সেটা অন্যরকমই নির্দেশ করে।
হিমুদার এই সম্পুরক প্রশ্নের উত্তরও জানা নেই আমার। কিন্তু গ্রামীণ ব্যাংকই যেহেতু সর্বপ্রথম ক্ষুদ্রঋণ প্রদানকারী ব্যাংক হিসেবে সফলতা লাভ করে, তাই এক্ষেত্রে অন্তত অন্য দেশের পদাঙ্ক অনুসরণ করতে রাজি নই আমি। বরং একটি সফল মডেল হিসেবে গ্রামীণ ব্যাংককেই অন্যরা অনুসরণ করছে। আর সরকার গ্রামীণ ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডার এটা আমার বিবেচনায় বড় ব্যাপার হওয়া উচিত ছিল না। প্রারম্ভিকভাবে সরকার এটাকে একটি উপকারী প্রকল্প মনে করে অর্থায়ন করেছে, ফলস্রুতিতে সেই প্রতিষ্ঠান যখন সফল হয়েছে, সেই সাফল্যের ভাগ তার ঋণগ্রহীতা সদস্যদের দিয়ে দেয়া সরকারের জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত হত। ঋণগ্রহীতা সদস্যদের স্বার্থরক্ষার জন্য গ্রামীণ ব্যাংকের মালিকানা সরকারী হাতে নিয়ে নেয়া ছাড়াও আরো অনেক উপায় ছিল।
সুহাস শিমন
সরকার তো এখনও মালিকানা সরকারী হাতে নেয়নি, তাই না?
তাহলে সবই পন্ডশ্রম, কি বলেন?
সরকার গ্রামীণের মালিকানা নিয়ে নিচ্ছে এমন গুজব রটানোর জন্য সফল শ্রম। যদি সরকার এরকম কোনো পরিকল্পনা নিয়ে থাকে, তার রেফারেন্সও আশা করি।
গ্রামীণ ব্যাংকে শেয়ার ২৫% এ উন্নীত করার জন্য সরকার ১৩.২ কোটি টাকা জমা দিয়েছে এই "গুজব" সব পত্রিকায় এসেছিল। সংবাদের কোন প্রতিবাদ দেখিনি পরে সরকারের পক্ষ থেকে। আর তদন্ত কমিশনের বক্তব্যে সরকারের শেয়ার ৫১% এ উন্নীত করা এবং পল্লীবিদ্যুত এর আদলে গ্রামীণ ব্যাংককে ১৯ ভাগে ভাগ করা দুটোরই সুপারিশের কথা বলা হয়েছে।
সুহাস শিমন
আচ্ছা, সরকার গ্রামীণ ব্যাঙ্কের মালিক হলে কি এরপর গ্রামীণ ব্যাঙ্ক দরিদ্রদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কোনো উপকারে আসে না এমন সব প্রতিষ্ঠান বা প্রকল্পে গ্যারান্টর হিসেবে কাজ করবে?
মানে, ইউনূসের আমলে যেমনটা করতো?
শেষ হয়ে গেল নাকি? আরও কিছু প্রশ্ন ছিল মনে ...
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
আরেকটা পর্ব লেখার ইচ্ছা আছে দারিদ্র দূরীকরণ এবং অন্যান্য বিষয়ে গ্রামীণ ব্যাংক তথা মাইক্রোক্রেডিট এর ভূমিকা নিয়ে। কিন্তু অনেক পড়তে হবে, তাই এটা আসতে একটু দেরী হতে পারে। প্রশ্ন করুন, সব প্রশ্নের উত্তর হয়তো দিতে পারব না, কিন্তু আলোচনা করতে তো দোষ নেই
অনেক ধন্যবাদ।
সুহাস শিমন
অর্থনীতির এতো হিসাব নিকাশ বুঝতে এই পোস্ট আরো ৩ বার পড়তে হবে। তাই সরকার নিজের শেয়ারের অংশ বাড়ালে সেটা পজিটিভ না হয়ে নেগেটিভ হবে কেন এই প্রশ্ন আপাতত মূলতবী থাক।
তবে অন্য একটা প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। গ্রামীণের মালিক যদি হয় সরকার আর গরীব লোকজন, তাইলে নোবেলজয়ী ইউনুস ক্যান? সামাজিক ব্যবসায়ের ফর্মূলা আবিষ্কারের জন্য?
ইউনুস যদি গ্রামীণের একজন এমপ্লোয়ীমাত্র হয়, তাইলে তার অবৈধভাবে দখল করা চেয়ার থেকে তাড়ানোতে সরকারের মুণ্ডুপাতও লোকজন করেছে কেন?
বিন্দু বিন্দু জল সিস্টেমে গরীব লোকজন শেয়ার হোল্ডার ব্যবসায়ের আয়োজক হিসেবে ইউনুসের লাভটা কোথায়?
গ্রামীণ* নামের প্রতিষ্ঠানগুলো গরীব লোকের গ্রামীণ ব্যাঙ্ক থেকে কিভাবে লাভবান হয়?
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
সামাজিক ব্যবসার জন্য ইউনূস নোবেল পাননি। নোবেল পাওয়ার বেশ পরে তিনি এই ধারনা নিয়ে প্রচারনা শুরু করেন। তিনি নোবেল পেয়েছেন গ্রামের দরিদ্র মহিলাদের যে কোনরকম জামানত ছাড়াই ঋণ দেয়া যায় - এই ধারনার জন্য। আর তার সাথে পেয়েছে গ্রামীণ ব্যাংক।
তাঁর ব্যাক্তিগত কোন লাভ নেই। এটা গ্রামীণ ব্যাংক কমিশনও পরিস্কার করেছে। তিনি শুধু এই সিস্টেমের একজন সফল উদ্যোক্তা ছিলেন।
নাম "গ্রামীণ" হলেই এই প্রতিষ্ঠান সমূহ গ্রামীণ ব্যাংকের মালিকানাধিন হবে, এই ধারনা সম্পূর্ণ ভুল। এই প্রতিষ্ঠানগুলো সম্পূর্ণ আলাদা মালিকানাধীন বেসরকারি জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান হিসেবে রেজিস্ট্রিকৃত ও চালিত।
গ্রামীণ উপসর্গযুক্ত এই প্রতিষ্ঠানগুলোর "মালিকানা" কার (এই প্রতিষ্ঠানের পরিশোধিত মূলধন কোত্থেকে এসেছে)? এই প্রতিষ্ঠানগুলোর কোনো কোনোটির প্রতিষ্ঠার পেছনে গ্রামীণ ব্যাঙ্ক আইনবহির্ভূতভাবে গ্যারান্টর হিসেবে ভূমিকা পালন করেছে কেন? এই প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচালনার সঙ্গে ইউনূস যুক্ত আছেন কি? যদি যুক্ত থাকেন, তাহলে ইউনূসের "ব্যক্তিগত কোনো লাভ নাই" কথাটার অর্থ থাকে কি?
ইউনূসের পারিবারিক প্রতিষ্ঠান গরিবের ব্যাঙ্ক গ্রামীণ ব্যাঙ্ক থেকে ৫% সুদে ৯৬৬ লক্ষ টাকা ঋণ নিয়েছে, যার সুদ আবার পরে গরিবদের সম্মতিক্রমে মওকুফও করে দেওয়া হয়েছে। তারপরও যদি ইউনূসের "ব্যক্তিগত লাভ" না থাকে, তাহলে ব্যক্তিগত লাভ কথাটার একটা ড্রাইওয়াশ দেওয়া প্রয়োজন।
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
এটা হয়ে থাকলে, সেটা স্পষ্টতই পদের অপব্যবহার।
তবে, পুরো ব্যাংকটা থেকে ইউনুস সাহেবের ব্যাক্তিগত লাভ থাকা যাবে না সেটাও আমার মনে হয়না। ইউনুস সাহেব এই ব্যাংকের কাজেই তার জীবন পার করেছেন। কাজেই, তিনি যদি বিনা সুদে লোন নেন, সেটা খুবই মন্দ কাজ হয়ে গেল এমন না, আবার খুব ভালো এমনও না। আমি ব্যক্তিগত ভাবে এটা সমর্থন করি না।
আমার মনে হয় ইউনুস সাহেবের প্রসঙ্গ এখানে অতীত, তিনি বাঁচলেন, না মরলেন -তাতে একন গ্রামীণ ব্যাংকের কিছু আসে যায় না এখন। এখন, জ্বলন্ত প্রশ্ন (burning question) হল এই ব্যাংকের কি হবে? এটা উপকারি নাকি বিষফোঁড়া -এটার সমাধান করা।
ধন্যবাদ
ইউনূস সাহেব এই ব্যাঙ্ক থেকে কোটি কোটি টাকা "ব্যক্তিগত লাভ" করলেও আমার কোনো আপত্তি নেই। ইন ফ্যাক্ট, সেটা তিনি করেছেনও। গ্রামীণ ব্যাঙ্ক তাঁর একটি চিন্তার ফেনোটাইপ, এটিকে সামনে রেখে তিনি বিভিন্ন সময়ে বক্তৃতা দিয়ে অর্ধ শত কোটি টাকারও বেশি বৈধ উপার্জন করেছেন [কালের কণ্ঠে তাঁর ব্যাঙ্ক হিসাব নিয়ে খবর বেরিয়েছিলো]। কাজেই এই ব্যাঙ্কের জন্যে গাঁইটের টাকা গচ্চা দিয়ে তিনি জীবন পার করেছেন, এমনটাও ভেবে নেওয়া ঠিক হবে না।
ইউনূস সাহেব গ্রামীণ ব্যাঙ্ককে নিজের পিগি ব্যাঙ্কের মতো পরিচালনা করেছেন, সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের প্রতিনিধিদের সামনে রেখে। বিধি ভেঙে গ্রামীণ ব্যাঙ্ক তাঁর বিভিন্ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে একটা টুল হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। এই টুল নিয়ে প্রশ্ন ওঠেনি তাঁর খুঁটির জোরের লাঠি আর দেশের সুনামের মূলার কারণে। যখন প্রশ্ন উঠেছে, তিনি প্রচণ্ড শোরগোল শুরু করেছেন এবং গ্রামীণ ব্যাঙ্ক পয়মাল হয়ে গেলো এমন একটা আবহ তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন। গ্রামীণ ব্যাঙ্ক এবং বিভিন্ন গ্রামীণ উপসর্গযুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ে যাতে বেশি অনুসন্ধান না হয়, তার জন্যে তিনি বিভিন্ন সময় তদবির করে বেড়াচ্ছেন। এগুলো তিনি করছেন তাঁর বগলস্থ নোবেল পদকটিকে রক্ষাকবচ হিসেবে ব্যবহার করে। সমস্যাটা ওখানে।
গ্রামীণ ব্যাঙ্ক এখন একটা লাল হেরিং। গ্রামীণ ব্যাঙ্ক সমস্যার গোড়া নয়, গোড়া হচ্ছে গ্রামীণ উপসর্গযুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো, যেগুলোতে দারিদ্র্য দূরীকরণ বা গরিবসেবার নামে বিপুলাঙ্কের অর্থ জড়িত, এবং যেগুলো নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি ঠেকানোর জন্যে আইনসিদ্ধভাবে গ্রামীণ ব্যাঙ্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে সরে গিয়েও ইউনূস সর্বশক্তি দিয়ে লবিইং করে যাচ্ছেন।
ইউনূসের গরিবরা গ্রামীণ টেলিকমের লভ্যাংশ থেকে কীভাবে উপকৃত হচ্ছেন, এ প্রশ্নের উত্তর ইউনূসের গরিবদের কখনও করতে শুনেছেন? ইউনূসের নোবেল ধুয়ে যারা পানি খায় তারাও এ প্রশ্ন করলে চটে যান। প্রশ্নটা করা উচিত।
একমত। গ্রামীণ উপসর্গ ওয়ালা প্রতিষ্ঠানগুলোর মাঝে গ্রামীণফোন(গ্রামীণ টেলিকমের শেয়ার আছে) আর গ্রামীণশক্তি (এরা মনে হয় সোলার প্যানেল বেচে), গ্রামীণ বাইটেক (কি করে জানি না) এর নাম জানি। অন্য আর কি কি আছে এটা জানতে আমিও আগ্রহী।
গ্রামীণফোন থেকে মেন হয় ৩৪.২% গ্রামীণ টেলিকমের পাওয়ার কথা। ২০১২ সালের হিসাবে গ্রামীণফোনের (Net profit after taxes) আয় BDT 17.5 billion। এর থেকে ৫ দশমিক ৮৮ বিলিয়ন টাকা যেটা লিখলে মনে হয় এমন হবার কথা ৫৮,৮০,০০০,০০০ , আর এর পুরোটাই তো মনে হয় গ্রামীণ টেলিকম থেকে ব্যাংকে যাবার কথা। এই টাকার হিসাব থাকার কথা। (কিন্তু কই?)
[এই পরিমাণ টাকা দিয়ে একটা গরু কিনলে একটা ফ্রি এমন কিছু করা যায়]।
যাইহোক, আমার মনে হয় গ্রামীণ ব্যাংকে ইউনুস সাহেবের ভূমিকা এখন জেমস বন্ড সিরিজে রজার মুরের মত- একসময় তার গুরুত্ব ছিল, এখন তিনি আউটসাইডার। তবে, এই ব্যাংকেই কেন এখন সরকারের শেয়ার বাড়াতে হবে এটা আমার মাথায় আসে না। বাইরে থেকে দেখে আমার যেটা মনে হয় সেটা হল, ইউনুস সাহেব সরকারের এই শেয়ার বাড়ানো পছন্দ করছেন না। পোস্টের লেখক যা তথ্য দিলেন তা থেকে মনে হল এটা (শেয়ার বাড়ানো) সাধারণ ঋনগ্রাহীতাদের স্বার্থের সাথে সাংঘর্ষিক। তবে, আগেই জিজ্ঞেস করা হয়েছে, এই মালিকানা তৃণমূল পর্যায়ে কি সুফল বয়ে এনেছে? সেটার জবাব এখনও জানা গেল না।
ইউনুস সাহেবকে নিয়ে আমার কোন ভাবনা এখন নেই, তবে আমি চাই না গ্রামীণ ব্যাংক আদমজী জুট মিলের মত ব্যবস্থাপনার দোষে বসে যাক।
ধন্যবাদ।
একটি লাভজনক (ফর প্রফিট) প্রতিষ্ঠানের লাভের অংশ কে কতটুকু পাবে সেটা বের করার জন্য পরিশোধিত মূলধনের হিসাব করা হয়। কিন্তু অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ও হতে পারে, এবং মালিকানাবিহীন প্রতিষ্ঠান ও হতে পারে, যেগুলোতে পরিশোধিত মূলধন থাকবে না। আমার উদাহরণে জলিল সাহেবের দানের ১০০ টাকার সাথে আরো ৩০০ টাকা ঋণ নিয়ে যদি মুরগীর খামার প্রকল্প পরিচালিত হত তাহলে সেটি একটি মালিকানাবিহীন প্রতিষ্ঠান হত। হয়তো একটা বোর্ড থাকত যারা সেই প্রকল্পে কর্মী নিয়োগ করত এবং সিদ্ধান্ত নিত খামারের আয় দিয়ে কি করা হবে।
গ্রামীণ নামধারী যেসব প্রতিষ্ঠান রয়েছে, তার মধ্যে সবার আগে হয়েছে গ্রামীণ ফান্ড এবং গ্রামীণ কল্যাণ। এর মধ্যে গ্রামীণ ফান্ড প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে দাতাসংস্থার টাকায়, দাতাসংস্থা এবং সরকারের অনুমোদনক্রমে। এই টাকার পরিমাণ ৪৯.১০ কোটি টাকা। যে টাকা এর আগে গ্রামীণের SVCF (Social Venture Capital Fund) এ ছিল। এই ফান্ড আবার তৈরী হয়েছিল Studies, Innovation, Development and Experimentation (SIDE) প্রজেক্টের আওতায় দাতাসংস্থার অনুদানে। এটির উদ্দেশ্য ছিল পরীক্ষামূলকভাবে বিভিন্ন প্রকল্প পরিচালনা করা। যেহেতু এসব প্রকল্প রিস্কি তাই এর থেকে গ্রামীণ ব্যাংক এবং তার শেয়ারহোল্ডারদের আলাদা করার জন্য দাতাদের অনুরোধে এই ফান্ড দিয়ে নতুন একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান তৈরী করা হয় "গ্রামীণ ফান্ড" নামে। তাই আইনত এর সাথে গ্রামীণ ব্যাংকের কোন মালিকানা সম্পর্ক থাকার কোন কারণ নেই। প্রশ্ন থাকতে পারে, গ্রামীণকে দিয়ে দেয়া টাকা দাতাসংস্থা চাইলেই কি অন্য প্রতিষ্ঠানে সরিয়ে নিতে পারে? সেটা হয়ত সেই অনুদানের শর্তের উপর নির্ভর করবে। আর SIDE প্রকল্পের বৈশিষ্ট্য দেখে মনে হচ্ছে না এই ফান্ড ক্ষুদ্রঋণ প্রসারের জন্য দেয়া হয়েছিল।
গ্রামীণ কল্যাণ ও অনুরূপভাবে দাতাসংস্থার আরেকটি ফান্ড SAF (Social Advancement Fund) থেকে টাকা নিয়ে (সরকার এবং দাতাসংস্থার অনুমোদনক্রমে) সৃষ্ট। এই টাকার পরিমান ৪৪.২৫ কোটি টাকা।
অর্থাৎ দাতাসংস্থার দেয়া টাকা থেকে মোট ৯৩.৩৫ কোটি টাকা নিয়ে গ্রামীণ ফান্ড এবং গ্রামীণ কল্যাণ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এবং সেটা গ্রামীণ ব্যাংকের অধীনে নয়, স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে। পরবর্তীতে এসব প্রতিষ্ঠান আরো প্রতিষ্ঠান (যেমন গ্রামীণ টেলিকম) তৈরী করেছে, যার কোনটা ফর প্রফিট যেগুলোর মালিকানা আবার অন্য কোন নন-প্রফিট প্রতিষ্ঠানের।
আমি মনে করি, এসব প্রতিষ্ঠানে কি হচ্ছে সেটা যদি কনসার্ন হয় তাহলে সেটা নিয়ে আলাদা তদন্ত হওয়া উচিত। আর গ্রামীণ ব্যাংককে যদি দায়ী করতে হয় তাহলে প্রারম্ভিক এই ৯৩.৩৫ কোটি টাকার ট্রান্সফার নিয়মমাফিক ছিল কিনা সেটা খতিয়ে দেখা উচিত। গ্রামীণ ফোনের কোটি কোটি লাভ হলে সেই টাকা দিয়ে শেয়ারহোল্ডার হিসেবে গ্রামীণ টেলিকম কি করছে সেটা দেখা উচিত বলে মনে করলেও সেই টাকা কেন গ্রামীণ ব্যাংক পাচ্ছে না সেটা একটা অর্থহীন প্রশ্ন।
গ্যারান্টর এর ব্যাপারে যতদূর দেখলাম, গ্রামীণ ব্যাংক নয় বরং ডঃ ইউনূস এবং গ্রামীণ ব্যাংকের আরো দু’একজন কর্মকর্তা ব্যক্তিগতভাবে এসব প্রতিষ্ঠানের গ্যারান্টর। রিভিউ কমিটি তাদেরকে পাবলিক সার্ভেন্ট হিসেবে বিবেচনা করে এটাকে বেআইনি বলছে। যেহেতু তাদের বেতন সরকারী রাজস্ব আয় থেকে আসে না তাই তাদেরকে পাবলিক সার্ভেন্ট বলা যায় কিনা এ ব্যাপারে আমার সন্দেহ আছে। এটা কোর্টে ফয়সালা হওয়া উচিত।
এই তথ্যে একটু ভুল আছে। ৫% সুদ মওকুফ করা হয়নি। সুদ ১০% থেকে ১৬% ছিল, যেটা কমিয়ে ৫% করা হয়েছে এবং প্যাকেজেস কর্পোরেশন সেটা পরিশোধ ও করেছে। ব্যক্তিগত লাভ – লোকসান নিয়ে সিদ্ধান্তে আসার আগে এই ঋন এবং সুদের হার কমানোর প্রেক্ষিত নিয়ে একটু আলোচনা প্রয়োজন মনে করি। আমার গত পর্বের একটা কমেন্টের উত্তর থেকেঃ
সুহাস শিমন
গ্রামীণ টেলিকমের টাকা গ্রামীণ ব্যাঙ্কের পাওয়ার প্রয়োজন নেই, কিন্তু গ্রামীণ টেলিকম প্রতিষ্ঠানটিও যে বাংলাদেশের দরিদ্র নারীদের প্রভূত উন্নতি সাধনের সংকল্পে গঠিত আর নিয়োজিত, এই রূপকথা সারা পৃথিবীতে ছড়ানো হয়েছে। জনৈক বাংলাদেশী নারী পানের দোকানে সোলার সেল টাঙিয়ে মোবাইল ফোনে কলের ব্যবসা করছেন, এরকম একটি ছবি বাংলাদেশের দারিদ্র্যমোচন প্রসঙ্গে বহুল প্রচারিত। গ্রামীণ টেলিকমের টাকা এই দরিদ্রদের কাছে কীভাবে পৌঁছায়, জানতে চাই।
নট নেসেসারিলি আপনার কাছেই।
হিমু ভাই, আপনি কবে দেশ ছেড়েছেন জানি না। তবে, " জনৈক বাংলাদেশী নারী পানের মোবাইল ফোনে কলের ব্যবসা করছেন" এর পরের দৃশ্যগুলো হয়ত দেখেন নি। ভবিষ্যত অনেকটা এরকম:
একটা সময় ছিল যখন কলরেট অনেক বেশি ছিল, কিন্তু এই গ্রামীণ মহিলাদের কাছে থাকা ফোনগুলোর কলরেট ছিল কম। ঢাকা বা বড় শহরের ফোন,ফটোকপি ব্যবসায়ীরা তখন এই 'বিশেষ সিম' গুলোর দিকে হাত বাড়ায়। এর ফল হিসেবে, কিছু কিছু শহুরে দোকানদাররা তুলনামূলক কম রেটে কল করতে দিতে পারত কাস্টমারদের। জামালের পাশের দোকানদার কামাল দেখে, "আরে, জামাল তো গ্রামের মহিলাদের থেকে কি এক সিম কিনে আনছে, মিনিটে ৭টাকায় কথা বলতে দিতেছে, আর আমি কামাল তো মিনিট ১০ টাকার নিচে রাখতেই পারতেছি না। নাহ, ওই সিম আমারও একটা কিনতে হবে"
এভাবে করে গ্রামীণের মাধ্যমে দেয়া সিমগুলো চলে আসে দোকানে। একেকটা সিম চড়া দামেই বিক্রি হয়েছিল (শুনেছি ২৫ হাজার , ঠিক মনে নাই)
আর, এখন বাস্তবতা হল বেশিরভাগ মানুষের হাটে মোবাইল পৌঁছে যাওয়ায় গ্রামেও এই ব্যবসা তেমন লাভজনক না। আগে প্রবাসী স্বামী তার গ্রামের গ্রামীণ ব্যাংকের সদস্যাকে ফোন করে বলতেন যে সে যেন ফোন নিয়ে প্রবাসীর বাসায় যান, তিনি বিদেশ থেকে ফোন করবেন। এখন, ওই প্রবাসী ব্যক্তিই তার পরিবারের সবাইকে ফোন কিনে দেন। কাজেই, এরকম ব্যবসার ক্ষেত্র অনেকটাই সংকুচিত।
সেটা আমি জানি। কিন্তু বিদেশীরা জানে না। বিদেশীদের যারা দারিদ্র্য বিমোচন নিয়ে বক্তিমা শোনায় তারা জানে কিন্তু আলগোছে চেপে গিয়ে ছবিটা ব্যবহার করতে থাকে।
কোর্টে যাবার দরকার নাই। ১৫০ বছর আগে ব্রিটিশ বেনিয়ারা এর সমাধান দিয়ে গেছিলেন-
Penal Code 1860 এর section 21 -
21. The words "public servant" denote a person falling under any of the descriptions hereinafter following, namely:-
......
(b) in the service or pay of a local authority or of a corporation, body or authority established by or under any law or of a firm or company in which any part of the interest or share capital is held by, or vested in, the Government.]
Explanation 1.-Persons falling under any of the above descriptions are public servants, whether appointed by the Government or not.
Explanation 2.-Wherever the words "public servant" occur, they shall be understood of every person who is in actual possession of the situation of a public servant, whatever legal defect there may be in his right to hold that situation.
ভাল। রিভিউ কমিটি অজ্ঞেয়বাদী। আর গ্রামীণের বোর্ড অফ ডিরেক্টরস মহাজন ইউনুসের নেতৃত্বে যে ব্যাখ্যা দিয়ে এই অর্থ অবলোপন করলেন - সেই তথ্যও একটু সম্ভব হলে নীতিবাক্যে জানান। তারা কেমন জ্ঞেয়বাদী ভুমিকাধারী- আমরা তাহলে জানতে পারি।
গ্রামীণের ব্যাখ্যাটা মজার।
ধরেন আমার গরুর ফরমালিন মুক্ত খাঁটি দুধ খাবার প্রয়োজন হল। আপনি দুধ সাপ্লাই দিতে রাজী হলেন। কিন্তু আপনার আবার গাভি নাই। গাভি কেনার ট্যাকাটুকাও নাই। আপনি ধরলেন কুদ্দুসকে। বললেন- বেচারা পথিক পরাণ গরীব লুক। দুধ খাইতে পায়না। পুষ্টিহীনতায় ভোগে। ওর দুধ খাওয়া দরকার।
কুদ্দুস কইল- নো প্রব্লেম। পুষ্টিহীন লুক দূর কর। এই দিলাম ডলার পাউন্ড।
আপনি বললেন- পথিক তো পথে থাকে। ও গরু পালতে পারবে না। বরং আমিই গরু কিনি। ওরে দুধ সাপ্লাই দিমুনে।
গরু কেনা হইল। আপনি দুধ দোয়ান। আমারে কিছু খাইতে দেন। এর পরেও ধরেন গরুর তো একটা উৎপাদনশীলতা আছে। আছে না? গরু তো খালি আমার কথা ভেবেই দুধ দেয়না। বাকী দুধ আপনি রথখোলার হাটে ন্যায্যদামে বেইচা থাকেন আরকি। নইলে তো নষ্টই হৈত। এই যে মার্জিনের উৎপাদনশীলতায় আপনি আমার নাম ভাঙ্গাইয়া কেনা গরুর দুধ বেইচা কিঞ্চিৎ ট্যাকাটুকা কামাই করলেন, অতঃপর মুফতে একটা অস্ট্রেলিয়ান নাদুস নুদুস গাই গরুর মালিক হইলেন- এইটাও তো কোন দোষ হইতে পারে না। তাইনা?
প্যাকেজেস কর্প একটা উদাহরণ মাত্র। আরও যেইসব ব্রাদারস সিস্টার্স কনসার্ন গ্রামীণ ব্যাংকের পুষ্টিহীন পকেটবিহীন দরিদ্র মানুষগুলার অসহায়ত্ব আর দুর্বলতাকে পুঁজি বানিয়ে দারিদ্রের তথ্য বেঁচে তৈরি করা হয়েছে- সেই সব প্রতিষ্ঠানের সাথে গ্রামীণ ব্যাংকের আইনগত কোন যোগাযোগ নেই- জানি।
কিন্তু প্রশ্নটা সেইখানে- যেইখানে জনাব ইউনুস গ্রামীণের ছাতার নীচে দাড়িয়ে এইসব মহিরুহ জন্ম দিয়ে নিজে সেগুলোর সুবিধাভোগী হয়েছেন। এই বিষয়টিতে সকল ইউনুসভক্তগণ আবার নীতিকথা আনলে বিরক্ত হয়ে থাকেন।
দৌড়ের উপ্রে আছি। পড়ে আরও কথা হবে- আশা রাখি।
এই উদাহরণটা প্যাকেজেস এর কেসের সাথে ঠিক মিলল না। রথখোলায় দুধ বিক্রির টাকাও আপনি পাবেন (প্যাকেজেস কর্পোরেশন ১৯৯০-১৯৯৭ এ গ্রামীণ ছাড়া অন্য কোন কাজ করেনি এবং সেই সময়ের কোন লাভ ও নেয়নি )।
আমি হলে উদাহরণটাকে এভাবে লিখতাম। আপনার ফরমালিনযুক্ত দুধ খাওয়া দরকার, আপনি একটা গাভী কেনার চিন্তাভাবনা করছেন। আমি আপনাকে পছন্দ করি, আমার একটা রোগা গাভী আছে। কথাপ্রসংগে আমি বললাম, নতুন গাভী কেনার কি দরকার, আমার গরুর দুধ খেতে পারেন। আপনি দেখলেন ভাল প্রস্তাব, কিন্তু এই রোগা গরুর দুধ তো বেশী পুষ্টিকর হবে না। আপনি তাই আমাকে ৫০০০ টাকা দিলেন, গরুর খোয়াড় উন্নত করার জন্য, একটা রাখাল রাখার জন্য আর গরুকে ভাল খাবার খাওয়ানোর জন্য। তারপর সেইসব ব্যবস্থাপনা আপনি নিজেই করলেন, দুধও আপনি খেলেন। রথখোলায় বেচার মত দুধ হলে বিক্রিও করলেন। ৭ বছর পর আমার গাভী আমাকে ফিরিয়ে দিলেন, আগের চেয়ে একটু মোটাতাজা, কিন্তু আমাকে বললেন ৬০০০ টাকা দিতে হবে, ৫০০০ টাকা ঋণ, আর ১০০০ টাকা সুদ। আমি বললাম, ভাই ৫০০ টাকা সুদ নিলে হয় না? আপনি বললেন ঠিক আছে। আমি ৫৫০০ টাকা আপনাকে দিয়ে আমার গরু ফিরিয়ে নিলাম। এবার মিলিয়ে দেখতে পারেন প্যাকেজেস এর গল্পের সাথে মিলে কিনা।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
সুহাস শিমন
ভেবে বলেছেন তো?
আমি প্যাকেজেস এর কেসটিকে একটা উদাহরণ মাত্র বলেছি। SVCF, SAF ইত্যাদি ফান্ডগুলো গ্রামীণের দরিদ্র মানুষগুলোর কঙ্কালসার চেহারা বেঁচে তৈরি কিনা এই বিষয়ে আপনার মন্তব্য আগে জানা প্রয়োজন।
যদি এমনটি হয়- এই ফান্ডগুলো গ্রামীণের ঋণগ্রহীতাদের উন্নয়ন ঘটাবার লক্ষ্য নিয়ে সৃষ্টি হয়েছিল, তাহলে কিন্তু এইসব ফান্ডের ব্যবহার থেকে প্রাপ্য লভ্যাংশ ঐ কঙ্কালসার মানুষটির প্রাপ্য ছিল। প্রাপ্য কি বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে কখনো?
২। উপরে আপনি কোন একটা মন্তব্যে মালিকানা নিয়ে বলেছেন-
চমৎকার প্রস্তাব। সরকার গ্রামীণের শেয়ার নিয়ে নিচ্ছে। এতে আপনি উদ্বিগ্ন। অথচ গ্রামীণের শেয়ারহোল্ডার আর ঋণ গ্রহীতাদের নামে শত কোটি টাকা অনুদান এলো। এই অনুদান আর ঋণ নিয়ে SVCF, SAF ইত্যাদি ফান্ড তৈরি হল। এই ফান্ডের কোন মালিকানা গ্রামীণ ব্যাংককে দেয়া হল না। অথচ এই ফান্ড স্থানান্তর নিয়ে আপনার কোন উদ্বিগ্নতা দেখা গেল না। এই ফান্ড স্থানান্তরকে কি আপনার মনে হচ্ছে না যে গ্রামীণের জমি অন্য কেউ ব্যবহারের জন্য নিয়ে নিল? এই ফান্ড দিয়ে সরাসরি গ্রামীণের নিয়ন্ত্রণাধীন প্রতিষ্ঠান তৈরি করলে কি গ্রামীণের উপকার হত না? নাকি বলবেন যে এত বড় ফান্ড ব্যবহার করবার মত যোগ্যতা গ্রামীণের ১০০ টাকার শেয়ারহোল্ডারদের নেই। এইজন্য ইউনুস সাহেব আলাদা আলাদা কতগুলো প্রতিষ্ঠান বানালেন!
সরকারের যে আচরণ সন্দেহজনক বলছেন আপনি- ইউনুস সাহেবের এই রকম অসংখ্য মালিকানা বেদখলকে আপনি আমলেই নিচ্ছেন না। অন্য একজন মন্তব্যে বললেন এইসব থেকে নাকি ইউনুস সাহেবের কোন আর্থিক লাভও জুটছে না। কি বিচিত্র!
আপনার মালিকানার ধারণা সংক্রান্ত স্ববিরোধীতা বুঝতে পারছেন কি?
আপনি আমার টাকা , অথবা আমার নাম করে পাওয়া টাকা খাটিয়ে একটা গরু কিনলেন। এরপর সেই দুধ আমার কাছে বেচলেন।
এইটা এভাবে ভেবে দেখা যায় না যে আমার নাম করে পাওয়া টাকায় গরু কেনা হল। সেই গরু আমার মালিকানায়ই থাকল! দুধ অথবা লাথি - গরুটা আমাকেই দিল? আমার টাকার গরুর দুধ দুইয়ে আমার কাছে বেচার অর্থ কি? আমাকে বাইরে রেখে আলাদা একটা আইনি প্রতিষ্ঠান বানানোর প্রয়োজনটা কেন পড়ল?
গ্রামীণ ফান্ড, গ্রামীণ টেলিকম, কিংবা ধরুন প্যাকেজেস কর্প- এর মেশিনটা গ্রামীণ ব্যাংকের মালিকানায়ই থাকতে পারত। এতে কি গ্রামীণের শেয়ারহোল্ডাররা ক্ষতিগ্রস্ত হত আপনার মনে হয়? এইরকম মালিকানা নির্ধারিত না হওয়ায় কি গ্রামীণের ক্ষতি হয়নি?
উহু। আমার নাম ভাঙ্গিয়ে পাওয়া টাকায়, আমার থেকে ধারে কেনা গরু আপনাকে দেব কেন? গরুটা আমি নিজেই রেখে দিতে চাই। অথচ আপনি তা দেননি।
আমার নাম করে পাওয়া টাকায় টেলিকম বানিয়ে আমার কাছে সিম বিক্রি করেন। প্যাকেজেস বানিয়ে আমার কাছে পেপার সাপ্লাই দেন। আবার বলেন- আমার সাথে আপনার কোন আইনগত লাভ লোকসান বণ্টনের সুযোগ নেই। ভালই তো। ভাল না!
৩। উপরে পাবলিক সার্ভেন্ট-এর সংজ্ঞায় দেখিয়েছিলাম যে জনাব ইউনুস একজন সরকারী কর্মচারী বটে! সরকারী কর্মচারির ক্ষেত্রে কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট বলে একটা কথা আছে। নিজের স্বার্থ থাকবার সম্ভাবনা আছে- এমন কোন বিষয়ের সাথে সরকারী কর্মচারি তাঁর কর্মক্ষেত্রের বাইরে যুক্ত হতে পারে না। এই কারনেই একজন ঠিকাদার জন প্রতিনিধি হলে পড়ে তাঁর নির্বাচনি এলাকায় ঠিকাদারি বাদ দিতে হয়। একজন সরকারী কর্মচারি তাঁর পরিবারের সদস্যদের নিয়ে একটা সংঘ গড়ে ব্যবসায় নামতে পারেন না। হোক তা সামাজিক ব্যবসা। একজন সরকারী কর্মচারি অন্য কোন এনজিও -এর সাথে যুক্ত হতে পারেন না। এমনকি আপনার একজন দূর সম্পর্কের ভাই একটা টেন্ডার সাবমিট করল। আপনি আইনত এবং ন্যায়ত ঐ টেন্ডার মূল্যায়ন করতে পারেন না। কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্টএর প্রশ্ন এসে যাবে। কেউ হয়ত বলবেন এগুলো আইনের কথা। দেশে প্রয়োগ নেই। এইজন্য ইউনুস সাহেব কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্টএর সাথে কনফ্লিক্টে যান নাই। তাহলে আর কিছু বলার নেই।
গ্রামীণের প্রতিবেদনের ভেতর এর বিভিন্ন বোর্ড মিটিংগুলোর কিছু বর্ননা আছে। সম্ভবত ৫৩ নম্বর সভায় একজন বলেছেন- গ্রামীণ একটা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। রেহমান সোবহান ছিলেন সেই সভার সভাপতি। তিনি আপত্তি করলেন না। ইউনুস সাহেবও ছিলেন। তিনিও আপত্তি করেন নি। এভাবেই - গ্রামীণ যে সরকারী আইন বলে সৃষ্ট একটা প্রতিষ্ঠান - এই কথাটি মুছে দেয়া হচ্ছিল। এর সদস্যরা যদি ভেবে থাকেন যে এটি ইউনুস সাহেবের প্রতিষ্ঠান- তাতে আর ভুল কি? ১০০ টাকার শেয়ার- গ্রামীণ ব্যাংক অর্ডিনেন্স ১৯৮৩- এই সব বাকোয়াজ!
আপনার আলোচনায় অনেকগুলো বিষয় নিয়ে এসেছেন। আলাদা আলাদাভাবে বললে আলোচনার সুবিধা হত মনে হয়। প্যাকেজেস কর্পোরেশন ডঃ ইউনূস এর পারিবারিক প্রতিষ্ঠান, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, এর উদ্দেশ্য দারিদ্র্যবিমোচন নয়। এই প্রতিষ্ঠানের জন্য দাতাসংস্থা অনুদান ও দেয় না। তাই SVCF, SAF বা গ্রামীণ ফান্ড, গ্রামীণ কল্যাণের আলোচনা প্যাকেজেস কর্পোরেশনের জন্য প্রযোজ্য নয় বলেই মনে করি। আমার উপরের কমেন্টটি ছিল প্যাকেজেস কর্পোরেশন নিয়ে। সেখানে আমার উদাহরণ কেন প্যাকেজেস কর্পোরেশনের কেসের সাথে মিলছে না বুঝিয়ে বললে সুবিধে হত। আমার উদাহরণ কেন গ্রামীণ টেলিকমের সাথে মিলছে না, সেটা অপ্রাসঙ্গিক। এ দুটো সম্পূর্ণই ভিন্ন ধরনের প্রতিষ্ঠান, এবং সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের সম্পর্ক গ্রামীণের সাথে।
বাকিগুলো নিয়েও অবশ্যই আলোচনা হওয়া উচিত। তবে যেগুলোকে আলাদা করা যায় সেগুলোকে আলাদাভাবে আলোচনা করলেই সেটা ফলপ্রসূ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, আমরা শিখতে পারি পরস্পরের থেকে। নাহলে আপনি বলবেন আমি বকোয়াজি করছি, আমি বলব আপনি, কিন্তু কিছুই বের হয়ে আসবে না।
অনেক ধন্যবাদ।
সুহাস শিমন
এই যে গরিবকে কুমীর ছানা দেখিয়ে অনুদান সংগ্রহ করে "মালিকানাবিহীন" প্রতিষ্ঠান গঠন করা হলো, এ নিয়ে একটা পর্ব লিখবেন নাকি? "বাকিগুলো নিয়ে আলোচনা" সেখানে হতে পারে।
অন্য কেউ লিখলে ভাল হয়। প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানের নাড়ি-নক্ষত্র আমার পক্ষে জানা সম্ভব নয়, এত সময় দেয়ার আপাত কোন কারণ নেই। এই লেখার উদ্দেশ্য ছিল গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে প্রচলিত ভুল ধারণাগুলো নিয়ে কথা বলা, সেটা মূলত গ্রামীণের সুদের হার এবং গ্রামীণ ব্যাংকের মালিকানা সংক্রান্ত। "মালিকানাবিহীন" প্রতিষ্ঠানের সাথে গ্রামীণ ব্যাংকের সম্পর্ক এটুকুই যে, গ্রামীণ ফান্ড এবং গ্রামীণ কল্যাণের প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে দাতাসংস্থার বিশেষ ফান্ড থেকে (যেটা গ্রামীণ ব্যাংকের অধীনে ছিল) টাকা ট্রান্সফার করে এগুলো প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। আমি যতটুকু বুঝি, সেই টাকা ক্ষুদ্রঋণের জন্য ছিল না। আরো সহায়ক প্রোগ্রাম এবং পরীক্ষামূলক প্রোগ্রাম চালানোর জন্য দাতাসংস্থার টাকা ছিল এগুলো। এবং দাতাসংস্থার সুপারিশে এবং সরকারের অনুমোদনক্রমে এই টাকা দিয়ে নতুন স্বাধীন প্রতিষ্ঠান তৈরী করা হয়। এখানে অনিয়মের একটাই জায়গা, সেটা হচ্ছে, এই ট্রান্সফার আইন-কানুন মেনে করা হয়েছিল কিনা। গ্রামীণ এবং ইউনূস সেন্টারের মতে ছিল। তদন্ত কমিশনের ফাইনাল রিপোর্ট কি বলে দেখার অপেক্ষায় আছি।
কিন্তু এটা যদি নাও হয়, ধরুন, প্রমানিত হল গ্রামীণ ফান্ড এবং গ্রামীণ কল্যাণে ৯৩ কোটি টাকার ট্রান্সফার সঠিকভাবে করা হয়নি, যেটা মোটেও নিশ্চিত হওয়ার মত ব্যাপার না। তাহলে এর প্রতিকার কি হওয়া উচিত? সেই ৯৩ কোটি টাকা সুদসহ গ্রামীণে ফিরিয়ে আনা (নোরাড এর ক্ষেত্রে যা হয়েছিল)? নাকি গ্রামীণ ফান্ড, গ্রামীণ কল্যাণ এবং সেই দুটো প্রতিষ্ঠান আরো যেসব প্রতিষ্ঠান তৈরী করেছে সবগুলোকে লিকুইডেট করা বা রাষ্ট্রীয়করণ করে ফেলা? নাকি সেই ফান্ড ট্রান্সফার যাদের অনুমোদনে হয়েছে, তাদের সবাইকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো (ততকালীন সরকার ও তাহলে দোষীর তালিকায় থাকবেন)?
আমার কথা হচ্ছে, গ্রামীণ ব্যাংক যখন প্রতিষ্ঠা হয়েছে তখনো গ্রামীণ ব্যাংক আজকের গ্রামীণ ব্যাংক ছিল না। ক্ষুদ্রঋণ একটা আইডিয়া, কিন্তু ডঃ ইউনূস এই ক্ষুদ্রঋণের বড়ি যখন দাতাসংস্থাকে খাইয়েছেন তখন নিশ্চয় দারিদ্র্য বিমোচনের কথা বলেছেন। আর দাতাসংস্থার আগ্রহ ক্ষুদ্রঋণের স্বার্থে ক্ষুদ্রঋণের চেয়ে দারিদ্র্য বিমোচনের স্বার্থে ক্ষুদ্রঋনেই বেশী থাকার কথা। সেক্ষেত্রে তারা ক্ষুদ্রঋণ ছাড়াও বাংলাদেশের গ্রামীণ দারিদ্র্য নিয়ে আরো বিভিন্ন ইস্যুতে সাহায্য করতে চাইতে পারে। তাই ইউনূস সেন্টার যখন বলেন, দাতাসংস্থার আগ্রহে SIDE প্রজেক্টের টাকা দিয়ে গ্রামীণ ফান্ড তৈরী হয়েছিল যাতে গ্রামীণ ব্যাংক পরীক্ষামূলক প্রজেক্টের ঝুঁকি থেকে মুক্ত থাকে, সেটা আমার কাছে অবিশ্বাস্য মনে হয়না। এবং এটা কোনভাবে গ্রামীণ ব্যাংকের সদস্যদের স্বার্থকে ক্ষুন্ন করছে তা মনে করারও কারণ দেখি না।
দ্বিতীয়ত গ্রামীণ ফান্ড বা গ্রামীণ কল্যাণ বা আরো ইত্যাকার প্রতিষ্ঠানের কোন কোনটি পরবর্তীতে আর্থিকভাবে অনেক সফল হয়েছে। এখন সেই প্রতিষ্ঠানগুলো দারিদ্র্য বিমোচনে কতটুকু ভূমিকা রাখছে সেটার কৃতিত্ব এবং দায় ব্যক্তি ডঃ ইউনূসকে নিতে হবে। কারণ এগুলো প্রতিষ্ঠার সাথে তিনি জড়িত, কিন্তু ঐ ৯৩ কোটি টাকার হিসাবের বাইরে গ্রামীণ ব্যাংক জড়িত নয়।
উদাহরণস্বরূপ গ্রামীণ ফোনের কথা বলা যায়। গ্রামীণ ফোন এখন যে অবস্থায় আছে (লাভজনকতার দিক থেকে), আমার ধারণা গ্রামীণ টেলিকমের প্রাথমিক উদ্দেশ্য এরকম ছিল না। কিন্তু এই খাতের বিপুল মুনাফা সম্ভাব্যতার কারণে টেলিনর গ্রামীণকে পুরোপুরি মুনাফাকেন্দ্রিক বানিয়ে ফেলে। যতদূর মনে পড়ে, ডঃ ইউনূস এটা নিয়ে কিছুটা নড়াচড়া করার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু সফল হতে পারেননি। ফলস্রূতিতে গ্রামীণ ফোন সামাজিক ব্যবসা না হয়ে অসামাজিক ব্যবসা। কিন্তু তাতে ক্ষতি কি হয়েছে? হয়তো গ্রামীণ ফোন নন প্রফিট হলে সমাজের আরো বেশী উপকার হত, কিন্তু বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে গ্রামীণ ফোনের ভূমিকা তো তারপরেও অস্বীকার করা যাবেনা।
বাস্তবিকপক্ষে, গ্রামীণ উপসর্গ যুক্ত এই যে ৩৪ টি প্রতিষ্ঠান হয়েছে, সেগুলোর ভবিষ্যৎ আমরা কেউ বলতে পারিনা। কেউ সত্যি সত্যি দারিদ্র্য বিমোচনে ভূমিকা রাখতে পারে, কেউ স্রেফ ব্যবসা করতে পারে, আবার কেউ ট্যাক্স ফাঁকিও দিতে পারে। এবং ডঃ ইউনূস সবসময় এগুলোকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন এরকম মনে করার ও কোন কারণ নেই। তাই এসব প্রতিষ্ঠানের প্রত্যেকটিকে আলাদাভাবেই বিবেচনা করতে হবে, এবং সেই প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রযোজ্য আইন অনুযায়ীই ব্যবস্থা নিতে হবে।
গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতি দুর্বলতা থাকার কারণে আমি তখনই কনসার্নড হব যদি দেখি এসব প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ ব্যাংকের সাথে আর্থিকভাবে সম্পর্কিত। অর্থাৎ এসব প্রতিষ্ঠানের লাভ-ক্ষতি, সাফল্য-ব্যর্থতা, দুর্নীতি-অনিয়ম গ্রামীণ ব্যাংকের উপর প্রভাব ফেলে। সরকারী রিভিউ কমিটির প্রতিবেদন বা গ্রামীণ ব্যাংক এবং ইউনূস সেন্টারের ব্যাখ্যা এর কোথাও এরকমের কোন লিংক পাইনি।
তাই মনে করি, গ্রামীণ ব্যাংকের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে শুধু গ্রামীণ ব্যাংক নিয়েই চিন্তা করা উচিত। আর আগামী নির্বাচনে ডঃ ইউনূস প্রার্থী হলে আপনি তাকে ভোট দেবেন কিনা সেটা যদি সিদ্ধান্ত নিতে হয়, তাহলে আমাদের অবশ্যই জানতে হবে ডঃ ইউনূস কতটি প্রতিষ্ঠান তৈরী করেছেন এবং সেই কোন প্রতিষ্ঠান কি করছে।
অনেক ধন্যবাদ।
সুহাস শিমন
প্রফেসর ডঃ এ কে মনোয়ার উদ্দিন আহমেদ-এর রিভিউ কমিটির রিপোর্টের ৩১, ৩২ পৃষ্ঠা থেকে তুলে দিচ্ছি-
5.03.2. At 37th meeting, the proposal of Grameen Bank to be the guarantor of the loans taken by any institution created by Grameen Bank from other financial institutions was approved. It was decided that Grameen Bank can be the guarantor for a maximum of taka 25.00 crore in case Grameen Uddyog takes loan from other financial institutions. The Board has given the power to the Managing Director of the bank for giving such guarantee to Grameen Uddyog for a maximum of taka 25.00 crore. At that meeting, the Board gave authority to Grameen Trust for running rural health program (Grameen Health Program). For running the stated program, the Board authorized the Managing Director of Grameen Bank to decide on the conditions of loan to Grameen Trust along with sanctioning power.
At 39th meeting, Board approved the formation of an autonomous institution named "Grameen Samagri". At 41st meeting, Grameen Uddyog submitted its annual balance sheet to the Board of Directors of Grameen Bank as it Grameen Bank) is the guarantor of that institution (Grameen Uddyog). Besides, the proposal of giving loan to Grameen Telecom from SAF worth of taka 30 crore was approved.
The 42nd meeting approved the proposal to form an autonomous institution named "Grameen Shokti". Dr. Akbar Ali Khan presided over all the above stated meetings.
5.03.3. At 47th meeting, it was approved that Grameen Bank may give guarantee worth of maximum Taka 10.00 crore for taking loan from other institutions by Grameen Krishi Foundation and the authority was given to the Managing Director of the bank to issue such guarantee. At 48th meeting, the audited annual accounts of the institutions formed by Grameen Bank were submitted to the Board of Directors. The proceedings of this meeting (April 16, 1998) are especially noteworthy. Professor Rehman Sobhan, the chairman of the Board of Directors presided over the stated meeting.
It stated that, according to the decision taken at the 35th meeting of the Board of Directors held on April 21, 1994, the yearly account statements (income-expenditure account and balance sheet) of the institutions, formed by Grameen Bank and where it has also provided guarantee against any loans taken by them from any other financial institution, would regularly be placed before the Board for the information of the Board of Directors of the bank.
The Proceedings of the meeting is under mentioned:
"According to the decision of the Board of Directors in that meeting the audited account statements (income-expenditure account and balance sheet) of the 4 institutions namely, Grameen Uddyog, Grameen Telecom, Grameen Krishi Foundation and Grameen Motshya Foundation were submitted for the information of the Board of Directors as Grameen Bank is the guarantor of these institutions. Discussing on the topic, Mr.Samsujjaman Chowdhury, one member of the Board of Directors said, there is nothing in these statements about the break-down of the amounts guaranteed by Grameen Bank for each institution, or, what's the benefit the bank is getting for being the guarantor. No clear idea can be made about the activities of these institutions from the audit reports which have been submitted for the information of the board. According to these audited report, he said, it appears that these institutions have taken various loans at various times from Grameen Bank. He advised to presentation of clear and constructive proposals on this topic in future.
On the same topic, the chairman of the Board of Directors Professor Rehman Sobhan expressed his opinion to the effect that as these institutions have been formed with the approval of board of Grameen Bank, it is necessary for the Board of Directors of the bank to be aware/ informed about the activities and the progress of these institutions. In connection with this, Managing Director commented that, possibly for this reason it has been decided in a previous meeting of the board that the institutions formed by Grameen Bank will submit a report about their activities and progress for information of the Board of Directors of the bank. In this matter, he advised the secretary of the bank to take necessary action by examining the past decisions of the board.
গ্রামীণ ব্যাংকের সাথে আর্থিক সংশ্লিষ্টতা প্রতিষ্ঠার জন্য আর কি ধরণের যোগসূত্র অবশ্যম্ভাবীরূপে প্রয়োজন হতে পারে বলে আপনার মতামত?
কথার মারপ্যাচের বাইরে উল্লেখযোগ্য কিছু দেখছি না, আগেও পড়েছি। গ্রামীণ ব্যাংক বলছে ডঃ ইউনূস ব্যক্তিগতভাবে এসব প্রতিষ্ঠানের গ্যারান্টর হয়েছেন। রিভিউ কমিটি বলছেন, গ্রামীণ ব্যাংক ম্যানেজিং ডিরেক্টর (ডঃ ইউনূস) কে অনুমোদন দিয়েছেন গ্যারান্টর হওয়ার জন্য। এর মানে কি গ্রামীণ ব্যাংক গ্যারান্টি দিল?
আমি ব্যাপারটাকে সহজভাবে দেখি। রিভিউ কমিটির রিপোর্টে গ্রামীণ উদ্যোগকে ২৫ কোটি টাকার গ্যারান্টি দেয়ার কথা বলা আছে। মনে করি, গ্রামীণ উদ্যোগ কোথাও থেকে ঋণ নিল এবং দেউলিয়া হয়ে গেল। তখন গ্রামীণ উদ্যোগের নেয়া ঋণের টাকা কি গ্রামীণ ব্যাংককে পরিশোধ করতে হবে? যদি না হয়, তাহলে এটা নিয়ে ত্যানা প্যাচানোর কোন মানে নেই। গ্রামীণ ব্যাংক এবং ইউনূস সেন্টার থেকে এই কথাই বারবার বোঝানর চেষ্টা করা হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের লাভের ভাগ বা লোকসানের ঝুঁকি কোনটাই গ্রামীণ ব্যাংক বহন করে না। এবং এই ঝুঁকি থেকে গ্রামীণ ব্যাংককে মুক্ত রাখতেই প্রারম্ভিকভাবে এসব প্রতিষ্ঠান কে স্বাধীনভাবে তৈরী করা হয়েছে। আর যদি আসলেই এসব প্রতিষ্ঠানের লোকসানের ভাগ গ্রামীণ ব্যাংককে বহন করতে হয়, তাহলে মিথ্যাচারের দায়ে ডঃ ইউনূসকে এখনই গ্রেফতার করার দাবী জানাই।
সুহাস শিমন
একটু স্পষ্ট করবেন কি ব্যাপারটা?
ইউনূস "ব্যক্তিগত"ভাবে এসব প্রতিষ্ঠানের গ্যারান্টর হয়েছেন কথাটার অর্থ আসলে কী? তিনি গ্রামীণ ব্যাঙ্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পরিচয়ের ঊর্ধ্বে থেকে কেবলই একজন মুহম্মদ ইউনূস হিসেবে গ্যারান্টর হয়েছেন?
গ্যারান্টর হতে গেলে তো সম্পত্তির হিসাব দেখাতে হয়। আপনি কি বলছেন, ইউনূস নিজের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি দেখিয়ে ২৫ কোটি টাকা গ্যারান্টর হয়েছেন? ঐসব প্রতিষ্ঠানের লাভের ভাগ (ব্যক্তিগত লাভ অ্যালার্ট) বা ক্ষতির ঝুঁকি ব্যক্তি মুহম্মদ ইউনূস বহন করছেন?
তাহলে এখানে গ্রামীণ ব্যাঙ্কের বোর্ডের অথোরাইজেশনের প্রশ্ন আসছে কেন?
এটা বুঝা তো খুব কঠিন হওয়ার কথা নয়। গ্রামীণ টেলিকম ১১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ নিয়েছে ড: ইউনূস এর গ্যারান্টিতে। এর জন্য কি ড: ইউনূসের ১১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার থাকতে হবে? এই ক্ষেত্রে যারা ঋণ দিচ্ছে তারা হয়তো এটুকু নিশ্চিত হতে চাচ্ছে যে এই টাকাটা প্রতারণা করে কেউ ভূইফোড় কোন প্রতিষ্ঠানের জন্য নিয়ে নিচ্ছে না। ড: ইউনূসের গ্যারান্টি হয়তো তাদেরকে এই কনফিডেন্সটুকু দিচ্ছে। এবং খুব সম্ভবত এধরণের বিনিয়োগ ব্যর্থ হলে তার ক্ষতিটুকু মেনে নেয়ার প্রস্তুতিও সেই প্রতিষ্ঠানের থাকে।এক্ষেত্রে ব্যক্তি ইউনূসের ইমেজ মূল বিবেচ্য হওয়ার কথা। ড: ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংকের এমপ্লয়ী হওয়ার সুবাদে এটা করার আগে বোর্ডের অনুমোদন নেয়াতে দোষের কিছু দেখি না। না নিলে যে মহাভারত অশুদ্ধ হত তাও মনে করিনা। তবে আবারো, গ্রামীণ ব্যাংকের কোন ফাইনান্সিয়াল রিস্ক থাকলে বোর্ডের অনুমোদন যথেষ্ট নয়, আরো ব্যাখ্যা চাইব। সেটা না থাকলে এর মধ্যে গ্রামীণ ব্যাংককে টেনে আনার মানে দেখিনা।
সুহাস শিমন
কারা ঋণ দিচ্ছে এই ক্ষেত্রে?
বিভিন্ন উৎস থেকে আসার কথা। আমার গ্রামীণ টেলিকমের উদাহরণের ক্ষেত্রে এটা এসেছে জর্জ সরোস (George Soros) নামের একজন আমেরিকান বিনিয়োগকারীর কাছ থেকে।
সুহাস শিমন
গ্রামীণ টেলিকম জর্জ সরোসের কাছ থেকে হাওলাত করা টাকা শোধ করতে না পারলে সরোসকে সেটা কে পরিশোধ করতো?
এইটা রিভিউ কমিটির কথা?
গ্রামীণ ব্যাংকের অর্ডিন্যান্সে অনুমোদিত বোর্ড তার ৪৭ তম সভায় (এবং অন্যান্য সভায়) গ্যারান্টর হল। সভার কার্যবিবরণী গ্রামীণ ব্যাংকে আছে নিশ্চয়ই। সভার কার্যবিবরণী ১৮৭২ সালের সাক্ষ্য আইন মতে ডকুমেন্টারি এভিডেন্স। গ্রামীণ ব্যাংক থেকে একটা বিবৃতি দিয়ে অন্যরকম বললেই এই এভিডেন্স আদালতের বিচারে বাতিল হবে না বলেই জানি। আর আপনি বলে দিলেন এইটা রিভিউ কমিটির কথা।
এত দীর্ঘ একটা রিভিউ লিখে এবং এতগুলো দীর্ঘ মন্তব্য শেষে এইটা আপনি কি বললেন?
রিভিউ কমিটির রিপোর্টের ৩৩ পাতায় আছে-
3. The board of directors was also informed that as the date of maturity of the guarantee for Grameen Uddyog was over; the total amount of guarantee issued in favor of the rest three institutions has been shown as contingent liability on
the balance sheet of the bank.
আশা করি এই কথাগুলোকে আবার রিভিউ কমিটির কথা হিসেবে চালিয়ে দেবেন না। এই কথাগুলো বোর্ড মিটিং-এর কার্যবিবরণীতে লিপিবদ্ধ আছে- কমিটি এমনটিই বলেছে। গ্রামীণ ব্যাংক থেকে এই কার্যবিবরণীটি বানোয়াট- এমন দাবী করা হয়নি। আপনি এটাকে এবং (আমার কথাকেও) তেনা প্যাচনো বলে দিলেন। এই কথাগুলো যে তেনা প্যাঁচানো- তা প্রমাণ করতে হলে ঐ বোর্ড মিটিং-এর লিখিত কার্যবিবরণীটি লাগবে। আমার ধারণা- আপনি তা আমাদের অবগত করাতে পারেন।
contingent liability হিসেবে একটা অর্থ ঠিক কি পরিস্থিতিতে লিপিবদ্ধ হয়- এধরণের অর্থ পরিশোধের দায় ব্যাংকের উপর বর্তানোর সম্ভাবনা থাকে কি না- এবিষয়ে আপনার সাথে আলোচনার উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছি।
ধন্যবাদ।
পথিক পরাণ, আপনি কি গ্রামীণ ব্যাঙ্ক নিয়ে ইউনূসের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ অংশগ্রহণে সংঘটিত অনিয়মগুলো নিয়ে একটা পৃথক পোস্ট দেবেন, যেটা রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করতে পারবো? ধন্যবাদ।
পোস্ট লেখক "গ্যারান্টর" শব্দটার অর্থ হয় নিজে বোঝেন না, অথবা ধরে নিয়েছেন তার পাঠকরা কেউ বোঝে না।
প্রফেসর মনোয়ার উদ্দিন-এর একটা লেখা এখানে আছে।
অধ্যাপক এম এম আকাশ-এর
একটা লেখা এখানে পাবেন।
আরেকটা লিংক- weeklyblitz
চেষ্টা করছি হিমু ভাই।
আপনি ঠিকই বলেছেন, রিভিউ কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী গ্রামীণ ব্যাংক থেকে গ্রামীণ উদ্যোগ, গ্রামীণ টেলিকম, গ্রামীণ কৃষি ফাউন্ডেশন এবং এবং গ্রামীণ মৎস্য ফাউন্ডেশনের জন্য মোট ৫৪.৫০ কোটি টাকা ঋণের গ্যারান্টার হয়েছিল গ্রামীণ ব্যাংক। সেটা বোর্ডের অনুমোদনক্রমে। এটা দুর্নীতি হয়েছিল কিনা সেই সিদ্ধান্ত আপনারা নেন। সেই সময়ে গ্রামীণের সর্বোচ্চ ২৫ কোটি টাকা পর্যন্ত গ্যারান্টর হওয়ার অনুমোদন ছিল যেকোন একটি প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে এবং এই ঋণের কোনটিই ২৫ কোটি টাকার বেশী ছিল না।
কিন্তু আমরা মনে হয় কোথাও কোথাও কোম্পানী বাই গ্যারান্টির সাথে গ্রামীণ ব্যাংকের গ্যারান্টর হওয়াকে মিলিয়ে ফেলছি। কোম্পানী লিমিটেড বাই গ্যারান্টির সংজ্ঞা এখানে দেখে আসতে পারেন। এখানে ব্যক্তিরা নামমাত্র টাকা দিয়ে মালিকানাবিহীন কোম্পানীর গ্যারান্টর হন। এবং গ্রামীণ নামধারী কোম্পানীগুলোর গ্যারান্টরদের মধ্যে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ডঃ ইউনূস আছেন। এটাকেও রিভিউ কমিটির রিপোর্টে অনিয়ম হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। আপনার কোট করা অংশেও এধরনের অভিযোগ ও ছিল।
একটা অনুরোধ করি। গাদা গাদা রিডিং ম্যাটেরিয়াল আমাকে ধরিয়ে না দিয়ে যদি সুনির্দিষ্ট একটা অভিযোগের কথা বলেন, তাহলে সেটা নিয়ে পড়াশোনা করে অর্থপূর্ন আলোচনা করা যায়। এবং আমার ভুল করার সম্ভাবনাও তাতে কমে। এসব অভিযোগের কথা আমিও ভাসা ভাসা জানি, কমন সেন্সে অনেক বিচলিত হওয়ার কিছু মনে হয়নি। কিন্তু বিস্তারিত জানলে আমার ধারনা পরিবর্তন হতে পারে। আমি যেসব বিষয়ে মোটামুটি স্বচ্ছ ধারনা আছে বলে মনে করি, সেগুলোই লেখার চেষ্টা করেছি আমার পোস্টে। কোন মতবাদ প্রচার বা অপ্রচার করা আমার উদ্দেশ্য নয়। দিনের শেষে একই তথ্যের ভিত্তিতে আপনার এবং আমার মতামত ভিন্ন হতে পারে, কিন্তু তথ্যগুলো সাজানো থাকলে সবসময়ই চিন্তা করতে সুবিধা হয়।
অনেক ধন্যবাদ।
সুহাস শিমন
ইউনূস সাহেবও যদি আপনার মতো অকপট চিত্তে বলতেন যে উনি ব্যবসায়ী মানুষ, সামাজিক ব্যবসা করতে নেমেছেন, সেটা মাঝেমধ্যে হাত ফসকে অসামাজিক হয়ে গেছে-যাচ্ছে-যাবে, "তাতে কি ক্ষতি হয়েছে?", তাহলে আসলে কথা বাড়তো না। দেশ থেকে দারিদ্র্য হটানোর ম্যাজিক মলম হিসাবে গ্রামীণ ব্যাঙ্ককে সামনে রেখে, মাঝে মাঝে মাদুরের মতো আনন্দযজ্ঞে ব্যবহার করে ডানেবামে অসামাজিক ব্যবসা করে যাওয়ার মধ্যে খারাপ কিছু নাই তো। ইউনূস যদি গ্রামীণ ব্যাঙ্ককে পিগি ব্যাঙ্কের মতো ব্যবহার করতে পারেন, আপনার ভাষায় কোনো ক্ষতি না হয়, তাহলে সরকার করলে আপনি রাগ করছেন কেন? ক্ষতিটা কোথায়?
ডঃ ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংক ছাড়াও আরো অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান তৈরী করেছেন। তার কোনটা সফল হবে, কোনটা ব্যর্থ হবে, কোনটা এক বিচারে সফল হবে তো অন্য বিচারে ব্যর্থ হবে। এবং এই সাফল্য ব্যর্থতার দায়ভার ও ডঃ ইউনূস কে নিতে হবে। আমার বক্তব্য হচ্ছে, গ্রামীণ ব্যাংক একটি সফল প্রতিষ্ঠান, দারিদ্র্য দূরীকরণে ক্ষুদ্রঋণের প্রভাবের কথা বাদ দিলেও শুধুমাত্র ৫৮ লক্ষ গরীব মানুষের মালিকানায় একটি সফল আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যৎ নিয়ে আমি চিন্তিত হতে পারি। সরকার গ্রামীণ ব্যাংককে নিয়ে কিছু করছেন না, তারা নিয়ন্ত্রণ বাড়ানোর নামে এর মালিকানা ঋণগ্রহীতাদের কাছ থেকে নিয়ে নিতে চাচ্ছেন। আমি এটাতেই রাগ করছি। ডঃ ইউনূস করলেও রাগ করতাম। অনেকবারের মত আবারো বলছি, গ্রামীণ ব্যাংকের পরিচালনায় স্বচ্ছতা এবং নজরদারী বাড়ানোর আরো অনেক উপায় ছিল শেয়ার বাড়ানো ছাড়া। আর অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে যদি অনিয়ম হয়ে থাকে তাহলে সেটা সেই প্রতিষ্ঠানের আইন অনুযায়ী প্রতিকারের ব্যবস্থা করা উচিত।
অনেক ধন্যবাদ।
সুহাস শিমন
আপনি সঠিক জায়গায় ফোকাস করেছেন। "নিয়ন্ত্রণ বাড়ানো"ই মালিকানা "ঋণগ্রহীতাদের কাছ থেকে নিয়ে নেওয়া"র কারণ।
আপনি কিন্তু এই নিয়ন্ত্রণের প্রশ্নটা মন্তব্যের মাঠে একেবারে শুরুতেই কায়দা করে এড়িয়ে গেছেন। লক্ষ লক্ষ মালিক কীভাবে কোন পদ্ধতিতে নির্বাচন করে ৯ জন প্রতিনিধিকে বোর্ডে পাঠাচ্ছেন, সেটা নিয়ে আপনার কোনো দুর্ভাবনা নেই। এই ৯ জন প্রতিনিধি ব্যাঙ্কিং, ব্যাঙ্কিং আইন বা গ্রামীণ ব্যাঙ্ক অধ্যাদেশ নিয়ে কতটুকু জানেন, বোঝেন, ব্যাঙ্ক পরিচালনা করতে গিয়ে তারা ব্যাঙ্কের বাকি লক্ষ লক্ষ দরিদ্র মালিকের স্বার্থ বহাল বা উন্নয়নের কতটুকু কী করতে পেরেছেন, তা নিয়েও আপনার দুর্ভাবনা নেই। এই প্রতিনিধিদের ওপর ইউনূসের শতভাগ প্রভাব ও নিয়ন্ত্রণ নিয়ে (শতভাগ বলছি কারণ এরা গ্রামীণ ব্যাঙ্ক পরিচালনা প্রসঙ্গে ইউনূসের কোনো ইচ্ছার প্রতিবাদ করেছেন বা ডিসেন্ট নোট দিয়েছেন বা সেরকম কিছু করার ক্ষমতা রাখলেও যোগ্যতা রাখেন, এমন দৃষ্টান্ত কোথাও পাইনি) আপনার দুর্ভাবনা নেই।
গ্রামীণ ব্যাঙ্ক পরিচালনায় স্বচ্ছতা আর নজরদারি বাড়ানো নিয়ে আপনার ভাবনাগুলো গুছিয়ে একটা পৃথক পোস্ট দেবেন নাকি? "অনেক উপায়" না হলেও কিছু উপায়ের কথা আমাদের সবারই জানা থাকা প্রয়োজন। বিশেষ করে সরকারের দুষ্টামির প্রতিবাদ করার জন্যে।
এই ৯ জন প্রতিনিধি যে ব্যাংকিং ভাল বুঝবেন না, সেটা খুবই স্বাভাবিক। অন্যান্য ব্যাংকের যারা বোর্ডে থাকেন, তারা সবাই যে ভাল বুঝেন এমন না। সংসদে যারা থাকেন, তারা আমাদের অর্থনীতি নিয়ে সিদ্ধান্ত দেন, কিন্তু সে জন্য তাদের অর্থনীতির ডিগ্রী নিয়ে আসতে হয় না।ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা আর নীতিনির্ধারন এক নয়। নীতিনির্ধারন সেই সবচেয়ে ভাল করবে যার ইন্টারেস্ট সবচেয়ে বেশী, শেয়ারহোল্ডাররা। এক্সপার্ট দরকার হলে ভাড়া করা যায়। আমাদের যদি সন্দেহ থাকে শেয়ারহোল্ডারদের প্রতিনিধিরা তাদের বেস্ট ইন্টারেস্টে কাজ করতে পারছেন না দক্ষতার অভাবে, তাহলে সরকার তাদেরকে সাহায্য করার জন্য এক্সপার্ট নিয়োগ করতে পারেন। এরকম সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাব। যদি সন্দেহ থাকে, এই প্রতিনিধি নির্বাচন যথাযথ হচ্ছে কিনা তাহলে নির্বাচন প্রক্রিয়ার সমস্যা কোথায় এবং কিভাবে এটাকে সমাধান করা যায় (অথবা যায় না) সেটা বলতে হবে। নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে এখানে বলা আছে, ৭ এবং ৮ নং প্রশ্ন দেখতে পারেন।
সরকারী শেয়ার বাড়ানো দুটো কারণে অপছন্দ করি:
১। এটা সরাসরি সদস্যদের আর্থিক ক্ষতি করে।
২। সরকারী প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা, অদক্ষতা এবং দুর্নীতির মাত্রা দেখে ভরসা পাইনা সরাসরি সরকারী ব্যবস্থাপনায় গ্রামীণের সাফল্য অব্যাহত থাকবে।
সুহাস শিমন
সরকারের প্রতিনিধিও তো গ্রামীণ ব্যাঙ্কে ছিলেন। তাদের চোখের সামনে দিয়ে অনেক অনিয়ম হয়েছে, যেগুলোর প্রতিবাদ তারা করেননি। এটাকেও দুর্বলতা আর অদক্ষতা হিসেবেই ধরা যায়। ইউনূস নিজেও কি সরকারি লোকের ব্যবস্থাপনাগত দুর্বলতা আর অদক্ষতার সুযোগ গ্রহণ করে গ্রামীণ ব্যাঙ্ককে নিজের পিগি ব্যাঙ্কের মতো পরিচালনা করেননি? এ ব্যাপারে আপনি বেশ চুপচাপ আছেন দেখতে পাচ্ছি।
আপনি ভয় পাচ্ছেন, সরকার ব্যাঙ্কটিকে হস্তগত করে ইউনূস যা অনিয়ম করছিলেন সেসব কন্টিনিউ করবে?
অনিয়ম, দুর্নীতি কি হয়েছে সেটা না বলেই তো উপসংহারে চলে যাচ্ছেন। আমি চুপচাপ আছি কারণ গ্রামীণ ব্যাংকে অনিয়ম-দুর্নীতি হয়েছে এরকম তথ্য-প্রমাণ আমার কাছে নাই। যা আছে, সেটা রিভিউ কমিটির কথার মারপ্যাচ, কারণ প্রত্যেকটা পয়েন্টের ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে ইউনূস সেন্টারের পক্ষ থেকে, এবং সেটা এখনো ভুল প্রমানিত হয়নি। আর আছে আপনাদের উপসংহার, পিগি ব্যাংক, সুদখোর মহাজন ইত্যাদি। এগুলো নিয়ে আপনাদের সাথে সাথে আমিও চিন্তিত হতাম শুধুমাত্র যদি এসব সিদ্ধান্তগুলো তথ্য-যুক্তি থেকে আসত। যেকোন একটা অনিয়ম নিয়ে একটু বিস্তারিত লিখুন না? এই অনিয়ম হয়েছে, এই পরিস্থিতিতে, এই কারণে এটা অনিয়ম এবং এর কারণে গ্রামীণ ব্যাংকের এত টাকার ক্ষতি হয়েছে এবং xyx এর এত টাকা লাভ হয়েছে। এই অনিয়ম কিভাবে প্রমাণ করে গ্রামীণ আসলেই ডঃ ইউনূসের পিগি ব্যাংক? কেন সেটা একটি ব্যাংকের স্বাভাবিক কার্যক্রমের মধ্যে পড়বে না? আমি বলতে চাচ্ছি একটি ব্যাংক ৩০ বছর ধরে কার্যক্রম পরিচালনা করলে এবং প্রতি বছর হাজার হাজার কোটি টাকার লেনদেন করলে সেই ম্যানেজমেন্টের প্রতিটি সিদ্ধান্ত লাভজনক না হতে পারে। ঋণ রাইট অফ করা, সুদ মওকুফ করা এর সবই ব্যাংকের জন্য স্বাভাবিক যদি না সেটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে হয়, অথবা সেটা অনেক বড় অংকের হয়। তাই যেকোন একটি নিয়ে একটু যদি বিস্তারিত লিখেন, তাহলে হয়তো জানতে পারি আমি কিছু মিস করে যাচ্ছি কিনা।
অনেক ধন্যবাদ।
সুহাস শিমন
রিভিউ কমিটির "কথার মারপ্যাঁচ"গুলো ইউনূস সেন্টারের ব্যাখ্যার চেয়ে বেশি সরল এবং বোর্ডের রেকর্ড দিয়ে সমর্থিত। ইউনূস সেন্টারের উত্তর ভুল প্রমাণিত হয়নি কিনা জানি না, গ্রহণযোগ্যও প্রমাণিত হয়নি। আর ইউনূস সেন্টার এ ব্যাপারে কেন বক্তব্য দিচ্ছে? বক্তব্য তো আসার কথা সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে ব্যক্তি ইউনূসের কাছ থেকে আর গ্রামীণ ব্যাঙ্কের বোর্ডের কাছ থেকে, তাই না?
আমি আপনার সঙ্গে কথা বলছি, আপনি "আপনাদের" পেলেন কোথায়? সুদখোর মহাজন শব্দ দুটো তো একবারের জন্যেও কোথাও লিখিনি। একটু খেয়াল করে কথা বলি চলুন।
অনিয়মগুলো আপনার চোখে সবই "পদ্ধতিগত অসাবধানতা"। তা বেশ তো, সরকারের হাতে গ্রামীণ ব্যাঙ্ক চলে গেলে নাহয় পদ্ধতিগত অসাবধানতাই হতে থাকবে। সেটা নিয়ে এতো ছটফট করছেন কেন?
একটু গুছিয়ে লিখুন না, সরকারের হাতে মালিকানা যাওয়ার আগেই কিভাবে আপনি নিশ্চিত হলেন যে সরকার এখানে দুর্নীতি, দুর্বলতা, অদক্ষতা দেখিয়ে সব পণ্ড করবে? তাছাড়া, গত ৪২ বছর ধরে প্রতিদিন হাজার হাজার কোটি টাকা নিয়ে কারবার করা সরকারের প্রতিটি সিদ্ধান্ত তো লাভজনক নাও হতে পারে, তাই না?
আমার মনে হয়, আমাদের আলোচনায় খুব একটা দ্বিমত অবশিষ্ট নাই। অন্তত অন্য দু'একটা কমেন্ট দেখে আমার সেরকমই মনে হচ্ছে। একই তথ্য থেকে আমরা ভিন্ন ভিন্ন সিদ্ধান্তে আসতেই পারি। "গ্রামীণ ব্যাংকে অনেক অনিয়ম হয়েছে", এই কথা যদি আপনি বলেন (বলছি না বলেছেন), আপনার সাথে আমার তর্ক করার কিছু নেই। আপনার কাছে যেটা অনেক, সেটা হয়তো আমার কাছে অনেক নয়। কিন্তু কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি যদি বলা হয়, তাহলে স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে, কত কোটি, কিভাবে? তাই আমি নিজস্ব মতামতের জন্য যেকোন ইস্যুকে নিজের মত করেই কোয়ান্টিফাই করার চেষ্টা করি। সব পদ্ধতিগত অসাবধনতা আমার কাছে এক নয়, সব দুর্নীতি ও নয়। এজন্য অনিয়মগুলো কি, কত টাকার, কিভাবে হয়েছে সেটা জানলে আমার নিজের মতামত তৈরী করতে সুবিধে হত। সরকার সব পন্ড করবে সে ব্যাপারেও আমি নিশ্চিত নই, হওয়া সম্ভব ও নয়। দুর্নীতি, দুর্বলতা, অদক্ষতার যতটুকু আমি দেখেছি, বুঝেছি তাতে সরাসরি সরকারী নিয়ন্ত্রণের যাওয়ার চেয়ে গ্রামীণের বর্তমান নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি আমার কাছে বেশী নির্ভরশীল মনে হয়েছে। কিন্তু এটা ব্যক্তিগত মতামত। আপনার ভিন্নমত থাকতে পারে। আবার আরো তথ্য যোগ হয়ে আমার মতামত পরিবর্তন ও হতে পারে। আপনারটাও হয়তো হতে পারে।
কিন্তু আমার পোস্টে আমি মূলত যেটা বলার চেষ্টা করেছি সেটা হচ্ছে, গ্রামীণে সরকারী মালিকানা বাড়ালে এটার সম্ভাব্য প্রভাব কি ঋণগ্রহীতা শেয়ারহোল্ডারদের বার্ষিক লভ্যাংশের উপর। এটা নিয়ে ও অনেকের কনফিউশন ছিল। এবং এটা তথ্য, মতামত নয়। কিন্তু এই তথ্যের ভিত্তিতে মতামত একেকজনের তো একেকরকম হতেই পারে।
অনেক ধন্যবাদ।
সুহাস শিমন
আমি বুঝতে পারছি। ইউনূস করলে ঐসব দুর্নীতি হয় না, সরকার না করলেও সেগুলি দুর্নীতি অদক্ষতা দুর্বলতা ইত্যাদি হতে পারে।
এটাকেই কি কথার মারপ্যাঁচ বলে? সরি, আমি গোল গোল কথা বলতে পারি না। আপনি নিয়মিত লিখলে শিখতে পারবো।
হিমু আপনার এই মন্তব্যকে
শুক্র, ০২/০৮/২০১৩ - ৬:২৭পূর্বাহ্ন)
ঠিক আছে। একটাই বলি এবার। দেখেন।
ডঃ মনোয়ার উদ্দিনের রিভিউ কমিটির রিপোর্ট আপনি পড়েছেন নিশ্চয়ই। তবুও আবার বিনয়ের সাথে মনে করিয়ে দিচ্ছি-
5.02.3. Packages Corporation
Packages Corporation is a family enterprise of Dr. Muhammad Yunus,
Managing Director of Grameen Bank. From 1990 to 2005, amount of loan given to this enterprise and the amount repaid by the borrower were Taka 966.44 lac and Taka 869.69 lac, respectively. During this period, Taka 189.79 lac was charged as interest on the credit of which Taka 141.91 lac was repaid. As a result, in 2005, amounts payable to Grameen Bank by Packages Corporation were Taka 96.75 lac and Taka 47.88 lac (total Taka 144.63 lac) as principal and interest, respectively.
The interest was calculated by imposing 10% interest rate on the term loan and 16% up to 1996 and from 1997 12% on working capital loan given to Packages Corporation.
In the 76th board meeting held in 2006, 5% interest rate was refixed on the loan given to Packages Corporation by GB up to December 2005. Following this decision, the Board fixed Taka 7.22 lac as the debt of Packages Corporation although the real debt was total Taka 144.63 lac (Taka 96.75 lac as principal and Taka 47.88 lac as interest). That means a total of Taka 137.41 (144.63-7.22) lac was waived. But at that time, since interest balance of Grameen Bank was Taka 47.88 lac, excess interest amount(on the basis of 5% interest rate) paid by the clients was regarded as principal.
There is no scope for waiving interest already recovered from the borrower
institution. But the Board has allowed waiver of Taka 137.41 lac. The amount of interest due to the borrower was Taka 47.88 lac. That means the Board has waived Taka 89.53 lac (137.41-47.88) as principal. Interest of the depositors is hampered if the principal of credit is waived. This waiver facility has been allowed to Dr.Muhammad Yunus’s family enterprise by violating the rule.
From 1990 to 1997 Grameen Bank was in the charge of managing the institution. All printing and packaging activities of Grameen Bank were accomplished by Packages Corporation. It may be mentioned that according to the procurement guidelines of Grameen Bank, Open tender is to be floated for procuring printing/ stationery of more than Taka 2.00 lac. But without going for any open tender Grameen Bank procured printing/stationery from Packages Corporation.
In the final evaluation report on the Grameen Bank project by the donors submitted in January 1994, objection was raised against the continuation of Studies, Innovation, Development and Experimentation (SIDE) project by the management of GB and the management of Packages Corporation, Dr. Muhammad Yunus’s family enterprise with allowing credit facility by GB.
In spite of this objection, credit facility was given to Packages Corporation from the fund of SIDE.
Management of the family enterprise of the Managing Director, procuring goods and services from this institution without competitive tendering system and financing to it with allowing waiver of interest and principal amount of the credit create conflict of interest. It may be mentioned here that financial statements of the Packages Corporation of 2010 show that Packages Corporation is not given any credit facility by GB or its associate institutions at that time.
fund of SIDE- টা কি গ্রামীণের জন্য অনুদান নয়? এই ফান্ডের টাকা প্যাকেজেস নিলে এটি কি অনুদানের টাকা ব্যবহার করা হয় না?
প্যাকেজেস নিয়ে আমি কি মনে করি সেটা আগের/পরের কয়েকটা কমেন্টে বলেছি। এখানে রিভিউ কমিটি এবং গ্রামীণের বক্তব্য দুটোই বিবেচনা করা উচিত কিছু একটা ভার্ডিক্ট এ আসার আগে।
এখন স্বাক্ষর কালো কালিতে না হয়ে নীল কালিতে হল কেন এটাও অনেক সময় অনিয়ম হয়ে যায় আমাদের সরকারী হিসেবে, প্রয়োজনমত। এবং এভাবে চাইলে সরকার যেকোন প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দিতে পারে, ক্রসফায়ারের মত। প্রশ্ন হচ্ছে, আমরা সেটা চাই কিনা? রিভিউ কমিটি যেমন বলেছেন, ডঃ ইউনূস বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে তার পেশার নাম লিখতে গিয়ে কোথাও লিখেছেন প্রফেসর, কোথাও ম্যানেজিং ডিরেক্টর। আপনি যদি এটাকে অপরাধ বিবেচনা করতে চান, আপনার বিচারের সূক্ষতাকে আমি স্বাগত জানাই। কিন্তু আমি নিজে আরো স্থূলভাবে চিন্তা করি। তাই এই বিচারের ভার পাঠকের হাতে ছেড়ে দিচ্ছি। আমার চাওয়া ছিল বিচারটা যাতে অন্তত সঠিক তথ্যের উপর ভিত্তি করে হয়। সেটুকুতে কিছুটা সফল হলে আমি খুশী। অনেক ধন্যবাদ।
সুহাস শিমন
এখানে অনিয়মটা কি স্বাক্ষর কালো কালিতে না হয়ে নীল কালিতে হওয়ার মতো তুচ্ছ বলে মনে করছেন?
প্যাকেজেস কর্পোরেশনের অনিয়মের মাছকে "সরকারি ক্রসফায়ারে প্রতিষ্ঠান ধ্বংসের" শাক দিয়ে কেন ঢাকতে হচ্ছে?
আমি যেটুকু অনিয়ম বুঝেছি সেটাকে পদ্ধতিগত অসাবধানতা ছাড়া কিছু মনে হয়নি। প্যাকেজেস কর্পোরেশনের লাভ এবং গ্রামীণের লস হওয়ার মত কিছু দেখিনি। তাই অনিয়ম টা কি সেটা একটু বুঝিয়ে বললে ভাল হত। দয়া করে পুরো তথ্যটুকু ব্যবহার করুন, রিভিউ কমিটির রিপোর্ট এবং গ্রামীণের ব্যাখ্যা। অতিরিক্ত (রিলেভেন্ট) তথ্য থাকলে সেটা যোগ করতে পারেন। কিন্তু সচেতনভাবে আংশিক বা ভুল তথ্যের উপর তর্ক করে কোন লাভ আছে কি?
অনেক ধন্যবাদ।
সুহাস শিমন
"পদ্ধতিগত অসাবধানতা" এসব পরিস্থিতিতে ময়লা ঢাকার জন্য একটা সুন্দর গোল শব্দ ছাড়া আসলে আর কিছুই না। সরকারি অদক্ষতা, দুর্বলতা, দুর্নীতিকেও আমলারা "পদ্ধতিগত অসাবধানতা" "সিস্টেম লস" ইত্যাদি গোল শব্দ দিয়ে ঢাকেন।
আপনি একটা একটা পয়েন্ট আলোচনা করতে চাইছিলেন।
আমি বললাম - তথাস্ত।
আপনি বললেন-
এর প্রেক্ষিতে আমি একটা প্রশ্ন রাখলাম-
এই প্রশ্নটির উত্তর এক শব্দে দেয়া যেত। হ্যাঁ কিংবা না।
আমি তেমন কিছু জানতে চাইছিলাম আপনার থেকে। আপনি এই নিয়ে একটা শব্দ ব্যয় করলেন না। ঘুরিয়ে অন্য একটা আলোচনার মুখ খোলার চেষ্টা করলেন। আলোচনার ফোকাস বদলানোর চেষ্টা সবসময় আনন্দদায়ক নয়। এইভাবে ইস্যু লোপ পায় না। বেড়ে যায়।
এই প্রসঙ্গে আমি আর কথা বাড়াবো না আপনার সাথে।
গ্রামীণে থাকা অবস্থায় ডঃ ইউনুস সাহেবের কোন সিদ্ধান্ত আইন বহির্ভুত হতেই পারে। সাধারণ ঋণগ্রহীতাদের জন্য পাওয়া SIDE ফান্ডের অর্থ প্যাকেজেস কর্পকে দেয়াতেও একটা অনিয়ম হতেই পারে। এই অনিয়মের জন্য গ্রামীণ ব্যর্থ হয়ে যায় নি। যাবেও না। আপনি সেটি স্বীকার করতে দ্বিধাগ্রস্ত হচ্ছেন। প্রমানের উপর প্রমাণ চাচ্ছেন।
প্রশ্ন সেটি নয়। এই সব অনিয়ম রিভিউ কমিটি তুলে ধরেছে। তার প্রেক্ষিতে সরকার একটা ব্যবস্থা নিতে চেষ্টা করেছে। তখন আপনি ভয় পাচ্ছেন এই ভেবে- সরকার গ্রামীণ ব্যাংক ধ্বংস করবার চেষ্টা করছে।
ব্যক্তি ইউনুস ছাড়া গ্রামীণ ব্যাংক টিকবে না- এমনটি বলা হত একসময়। ব্যাংকটি কিন্তু দিব্যি টিকে আছে। ১৯৮৩ সালে এদেশের সরকার এই ব্যাংকটি প্রতিষ্ঠা করেছিল। পরিশোধিত মূলধনের একটা বড় অংশ সরবরাহ করেছিল। গ্রামীণ ব্যাংক অধ্যাদেশ ১৯৮৩ এর প্রস্তাবনায় এবং ভেতরে পরিস্কার করে সরকার বলে দিয়েছিল- ভূমিহীন মানুষকে ঋণ এবং অন্যান্য সুবিধা দেয়ার জন্যই এই ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা হল। সরকার এখনও এই প্রত্যয় নিয়েই আছে।
সরকার এই ব্যাংকের শত্রু নয়। বরং প্রতিষ্ঠাতা। এবং আইনের মাধ্যমে।
সরকার এই ব্যাংক ধ্বংস করতে পারেনা।
ধন্যবাদ।
আলোচনাকে ফোকাসে রাখারই চেষ্টা করছিলাম। প্যাকেজেস কর্পোরেশনেই থাকুক। প্যাকেজেস কর্পোরেশনকে গ্রামীণ কেন লোন দিয়েছিল সেটা আপনার কথায় বা রিভিউ কমিটির রিপোর্টে কোথাও এসেছে কি? কয়েকটা জিনিস দেখি, শুধু তথ্যঃ
১। প্যাকেজেস কর্পোরেশনের মালিক কে?
২। প্যাকেজেস কর্পোরেশনকে গ্রামীণ ব্যাংক ঋণ দিয়েছিল কেন? সেটার ব্যাখ্যা গ্রামীণ দিয়েছে, এবং আমিও কয়েকটা কমেন্টে লিখেছি।
৩। ঋণ নেয়ার আগে, মধ্যবর্তী সময়ে এবং পরে প্যাকেজেস এর সাথে গ্রামীণের সম্পর্ক কি ছিল?
৪। ঋণ কত টাকার ছিল এবং কত টাকার সুদ মওকুফ করা হয়েছে।
এই চারটা তথ্য, মতামত নয়। সুস্থ তর্কের জন্য আমাদের প্রথমে এই তথ্যের জায়গায় একমত হওয়া প্রয়োজন। ভুল তথ্য থাকলে শোধরানো প্রয়োজন। এরপরে মতামত ভিন্ন হতে পারে। আপনার কাছে যেটা অপরাধ, সেটা আমার কাছে অপরাধ মনে না হতে পারে। এবং আমরা তখন হ্যাপিলি এগ্রি টু ডিসএগ্রি করতে পারব দরকার হলে। অনেক ধন্যবাদ।
সুহাস শিমন
পথিক পরানের মন্তব্যগুলো একদম এবিসিডির মতো সব বুঝিয়ে দিলো।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
আপনি কে?
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
ব্যক্তিগত কোনো লাভ নাই - এর মাধ্যমে আমি বুঝাতে চেয়েছি উনি এই সকল প্রতিষ্ঠান থেকে আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারেন না। কেউ ই পারেনা। এসকল কোম্পানির মুনাফা আবার কোম্পানিতেই বিনিয়োগ হয় অথবা অন্য কোন জনকল্যাণমূলক কাজে বোর্ড এর সিধান্ত অনুযায়ী বিনিয়োগ করা হয়।
পরের "ড্রাইওয়াশ" এর উত্তর আশা করি পেয়ে গেছেন।
অন্য কোনো জনকল্যাণমূলক কাজে কী করে যেন বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ীই প্যাকেজেস কর্পোরেশন ঢুকে পড়ে। ঐখানেই সমস্যা।
অর্থহীন জবাব দিলেন।
যা বুঝতে পারছি, ইউনূস গ্রামীণ ব্যাঙ্ক অফিসে ঢুকে পাঞ্জাবির পকেটে করে খাবলা ভরে টাকা নিয়ে বের না হলে আপনি "ব্যক্তিগত লাভ"-এর অর্থ বুঝতে অপারগ।
উনি আসলেই আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারেন না। এই যেমন নোবেল লরিয়েট ট্রাষ্ট-এর কথাই ধরুন না কেন-
5.02.37. Nobel Laureate Trust:
Grameen Bank is the Settler/Grantor of Nobel Laureate Trust. Grameen
Bank's chairman is the ex-officio chairman of the trustee board of Nobel Laureate Trust. Dr. Muhammad Yunus and other five members of GB are the members of this trustee board. Dr. Muhammad Yunus, Mr. Tobarak Hossain, Mr. Kamrul Hasan, Mr. Dipal Chandra Barua, Mrs. Nurzahan Begum and Mr. M Shajahan are the members of the trustee board. The trust was formed to establish Yunus Center and provide financial and other assistance to it and for giving opportunity to Yunus Center to use floor space from Grameen Bank. No other activity of this institution has been observed but taking allotment of 11,000 square feet space at 15th floor
worth of taka 1000 from Grameen Bank under an agreement and allotting it to the Yunus Center on same rent under another contract. It is mentionable that, Yunus Center is mainly a personal institution of Dr. Muhammad Yunus.
সুত্র- গ্রামীণ ব্যাংক রিভিউ কমিটির রিপোর্ট- পৃষ্ঠা ২৬,২৭
ফ্লোর পাওয়া কিন্তু আর্থিক সুবিধা পাওয়া নয়। আমিও একমত আপনার সাথে।
আহারে, লোকটার পকেট থেকে উল্টো এক হাজার টাকা নিয়ে নিয়েছে জালিম গ্রামীণ ব্যাঙ্ক। ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইন অ্যালার্ট!
ব্যক্তিগত লসে পড়ে পড়ে শুকিয়ে গেলো ইউনূস আঙ্কেল ।
এখানে আসলে অর্থনীতির হিসাব নিকাশের তেমন কিছু নাই। সরকারের নিজের শেয়ার বাড়ানো পজিটিভ নাকি নেগেটিভ সেটাও বলতে চাইনি আসলে। শুধু বলতে চেয়েছি সরকারের শেয়ার বাড়ানো মানে ঋণগ্রহীতাদের শেয়ার কমে যাওয়া। এখন ঋণগ্রহীতাদের শেয়ার ৯৭% হওয়ায় তারা মোট ডিভিডেন্ডের ৯৭% পায়। সরকার তাদের শেয়ার ৩% থেকে ৫১% এ বাড়ালে ঋণগ্রহীতারা মোট ডিভিডেন্ডের ৪৯% পাবে, অর্থাৎ প্রত্যেক ঋণগ্রহীতার বার্ষিক ডিভিডেন্ড প্রায় অর্ধেক হয়ে যাবে। এটাকে ঠিক নেগেটিভ বলা যায়না, টাকাটা ঋণগ্রহীতাদের কাছ থেকে সরকারের কাছে যাচ্ছে, যেভাবে সরকার করের টাকা সংগ্রহ করে। কিন্তু সাধারনত আর্থিকভাবে অস্বচ্ছলদের করের আওতার বাইরে রাখা হয়, এটাই ব্যতিক্রম এক্ষেত্রে।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
সুহাস শিমন
এটা সবসময় সত্য না। সরকার যদি বাড়তি টাকা ইনভেস্ট করতে চায়, তাইলে তো গ্রামীণেরই লাভ। ধরেন, আগে সরকারের ৩ টাকা আর গরীব লোকজনের ৯৭ টাকা ছিলো। এখন সরকারও যদি ৯৭ টাকা দেয়, তাইলে তো বিজনেসে মোট ১৯৪ টাকা বিনিয়োগ হচ্ছে। লাভও বেশি হবে। গরীব লোকজন আগেও ৯৭ টাকার লাভ পেতো, এখনো তাই।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
এটা পুরোপুরি ঠিক নয়। গ্রামীণের পরিশোধিত মূলধন ৬০ কোটি টাকা হলেও মোট মূলধন এবং সম্পদের পরিমাণ এর চেয়ে অনেক বেশী, সেটা হাজার কোটি টাকার অংকে। তাই এর সাথে এখন আরো ৬০ কোটি টাকার পরিশোধিত মূলধন যোগ করলে গ্রামীণের লাভের কোন দৃষ্টিগ্রাহ্য পরিবর্তনই হবে না। কিন্তু এই ৬০ কোটি টাকা যারা যোগ করল তারা লাভের অর্ধেকের মালিক হয়ে যাবে। কোম্পানী হিসেবে গ্রামীণের ভ্যালু যদি ৪০০০ কোটি টাকা হয়, তাহলে পরিশোধিত মূলধনে ৬০ কোটি টাকা যোগ করা মানে ৬০ কোটি টাকা দিয়ে কোম্পানীর অর্ধেক কিনে নেয়া হল, অর্থাৎ ২০০০ কোটি টাকার সম্পদ। আর এই ডিসকাউন্ট টা দিচ্ছে বর্তমানে যাদের গ্রামীণে শেয়ার আছে তারা। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
সুহাস শিমন
এটা একটু গোঁজামিলটাইপ উত্তর হয়ে গেলো।
৬০ কোটির মধ্যে বর্তমানে ১,৮ (৩%) কোটি সরকার দেয় আর ৫৮,২ (৯৭%) কোটি গরীব লোকজনের। গ্রামীণের মোট ভ্যালু ৪০০০ কোটি টাকা হলে গরীব লোকজন কি ৩৮৮০ কোটি টাকার লাভ পায়???? তাইলে এরা আর গরীব থাকে কিভাবে? (এই হিসাবে ১০০ টাকা বিনিয়োগ মানে আসলে ৬৬৬৭ টাকা বিনিয়োগ! এরকম কেস হলে দেশের সবাই গ্রামীণের গরীব মালিক হতো!)
সরকার বেশি শেয়ারের মালিক হওয়ার একটা ভালো দিক হলো, সরকারের আয় মানে জনগণের আয়। গ্রামীণ ব্যাঙ্ক সরকার থেকে কোনো রকম স্পেশাল সুবিধা পাওয়া মানে সেটা গ্রামীণে জনসাধারণের বিনিয়োগ। ফলে, গ্রামীণে সরকারের বিনিয়োগ বেড়ে লাভের অংশ সরকারের অর্থাৎ জনসাধারণের কাছে পৌঁছালে আপত্তির কোনো কারণ দেখি না।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
শেয়ার বাজারে ১০০ টাকা ফেস ভ্যালুর শেয়ারের দাম ৮০০০ টাকা হয় কেন চিন্তা করেছেন কখনো? এটা চিন্তা করলেই গোঁজামিলটা ধরতে পারবেন।
আর সরকারের আয় মানে জনগনের আয়, কিন্তু কোন জনগন সেটা ম্যাটার করে। আপনার ব্যাংকের টাকা অথবা বাড়ি অথবা ব্যক্তিগত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সরকারের মালিকানায় নিয়ে নিলে খুশী হবেন? জনগনের আয় বাড়ল কিন্তু!
সুহাস শিমন
প্রশ্নের জবাব বুঝলাম না। শেয়ার বাজার দেখিয়ে দিলেন!
ফেসভ্যালু হোক আর পশ্চাৎ ভ্যালু হোক, বিজনেসে বাড়তি টাকা যোগ হলে গরীব লোকজনের লাভ তো কমছে না। সরকারের বিনিয়োগ বৃদ্ধির পাশাপাশি গরীব লোকদের বিনিয়োগ কমলে তখন লস হতো। ঐকিক নিয়মে সমাধান নাই? নাকি সব কঠিন করে ফেলতে হবে?
আমার ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে সরকার যদি বিনিয়োগ করে, (যেখানে সরকার ইতিমধ্যেই একাংশের মালিক) সরকারের তরফ থেকে বিশেষ বিবেচনায় বিশেষ সুবিধা পাওয়া যায়, এবং আমার লাভ যদি না কমে, তাইলে আমার ব্যবসায়ে সরকারের শেয়ার বাড়লে সমস্যার কিছু নাই। গ্রামীণে সরকারের শেয়ার বাড়লে ইউনুসের বা গরীব লোকজনের সমস্যা কোথায়?
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
আপনার ব্যবসায় ৯৭ টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন আপনি, আর সরকার করেছিল ৩ টাকা। এই ১০০ টাকা দিয়ে ব্যবসা শুরু হয়েছিল। কিন্তু আপনার ব্যবসা আরো বিভিন্ন জায়গা থেকে সাহায্য পেয়েছে, লাভ ও করেছে, সব মিলে কয়েক বছর পর এখন ব্যবসার মোট সম্পদ দাঁড়িয়েছে ৪০০০ টাকার মত। কিন্তু এই পুরো ব্যবসার মুনাফা যা হবে, আপনি কিন্তু এখনো সেই মুনাফার ৯৭% পাবেন। এখন সরকার যদি বলেন, ঠিক আছে আমি ব্যবসায় আরো ৯৪ টাকা যোগ করি, তাতে সরকারের মূলধন ও ৯৭ টাকা হবে আপনার মত। এবং সরকার আপনার ৪০৯৪ (সরকারের ৯৪ টাকা সহ) টাকার ব্যাবসার মুনাফার অর্ধেক পাবেন। আপনি রাজি হবেন? এটা কি ঐকিক নিয়মের চেয়ে খুব কঠিন হল?
আরেকটু সহজ করে দেই আপনার জন্যঃ
১। ৪০০০ টাকার ব্যবসার ৯৭% মালিকানা
২। ৪০৯৪ টাকার ব্যবসার ৫০% মালিকানা
কোনটা নেবেন, আপনাকে চয়েস করতে বলা হলে? এখানেও ৯৪ টাকা যোগ হওয়ায় লাভ কিন্তু কমছে না।
সুহাস শিমন
না, আপনার হিসাবটায় গরীব লোকজনের লাভ কমছে। পাবলিকের লাভ না কমার সিনারিওতে গরীব লোকজনের সমস্যা কি, সেই আলোচনায় আসি।
ব্যবসায়ের বর্তমান মূল্য অনুসারেই তো নোতুন শেয়ার হোল্ডারকে বিনিয়োগ করতে হয়। বর্তমান মোট সম্পদ ৪০০০ টাকা হলে সরকারের আছে ১২০ টাকা, গরীব লোকজনের ৩৮৮০টাকা, ইউনুসের ০। সুতরাং ৫০-৫০ শেয়ার হোলডার হতে হলে সরকারকে আরো ৩৭৬০ টাকা বিনিয়োগ করতে হবে।
নাকি সরকার মাত্র ৯৪টাকাই দিতে চাইছে? আর তার বিনিময়ে দাও মারতে চাইছে? এই জিনিসটা ক্লিয়ার করেন। কোথাও এই হিসাবপত্তরের 'সুনির্দিষ্ট' রেফারেন্স আছে?
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
হ্যা, সরকার ৯৪ টাকাই দিতে চাইছে। গ্রামীণ ব্যাংকের মোট সম্পদের পরিমাণ ২০১২ সালের শেষে ১৫৮৯ কোটি টাকা। কিন্তু paid up capital ৬০ কোটি টাকার মত। সেখানে সরকারের আছে ১.৮ কোটি টাকা, এবং সরকার আরো ১৩.২ কোটি টাকা জমা দিয়েছে (ভুল করে) সরকারী শেয়ার ২৫% এ উন্নীত করার জন্য। পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত যদি হয়, সরকারী শেয়ার ৫১% এ উন্নীত করা হবে, তাহলে শুধুমাত্র পরিশোধিত মূলধনে প্রয়োজনীয় সংযোজন করেই এটা করা হবে। কার কত টাকার পরিশোধিত মূলধন আছে এটাই নির্ধারণ করে কে কত অংশের মালিক। ব্যাংকের মোট সম্পদ বা নেট ওয়ার্থ এর উপর এটা নির্ভর করে না। অর্থাৎ, ব্যাংকের লাভ কত টাকা হবে সেটা মোট সম্পদের উপর নির্ভর করলেও সেই লাভের ভাগাভাগি কিভাবে হবে সেটা নির্ভর করে শুধুমাত্র কার কত টাকার পরিশোধিত মূলধন (শেয়ার মূলধন ও বলা হয়) আছে তার উপর।
সাধারনত পরিশোধিত মূলধন যেকোন প্রতিষ্ঠানের মোট সম্পদের তুলনায় কম হয়। তাই একটি শেয়ার কিনলে আপনি যেহেতু সেই শেয়ারের ভ্যালুর চাইতে বেশী সম্পদের উপর অধিকারপ্রাপ্ত হচ্ছেন, সেজন্য শেয়ার বাজারে অধিকাংশ শেয়ার ফেস ভ্যালুর চাইতে বেশী দামে বিক্রি হয়। অর্থাৎ, বাজার এই দাও মারার অংশটুকুকে শেয়ারের দামের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করে ফেলে। কিন্তু গ্রামীণ ব্যাংকের শেয়ার যেহেতু বাজারে বিক্রি হয়না, তাই শেয়ারের দাম বাড়ার সুযোগ নেই, ১০০ টাকার শেয়ার ১০০ টাকায়ই বিক্রি হয়। তাই দাও মারার সুযোগ তারই যে এই ১০০ টাকার শেয়ার কেনার অনুমোদন পাচ্ছে। বাজারে বিক্রি করা হলে গ্রামীণের ১০০ টাকার শেয়ারের দাম ১০০ টাকার চেয়ে অনেক বেশী হত। দামের এই ব্যবধানটুকুই লাভ বা দাও। আমি যেসব সংখ্যার কথা বলছি সেগুলো গ্রামীণের অডিট রিপোর্ট থেকে নেয়া। আর পরিশোধিত মূলধনের কনসেপ্টের ব্যাপারে আমার দেয়া ব্যাখ্যা গ্রহণযোগ্য মনে না হলে একটু গুগল করে দেখে নিতে পারেন।
অনেক ধন্যবাদ।
সুহাস শিমন
যে ব্যক্তি ১০০ টাকা দিয়ে শেয়ার কিনে শেয়ারহোল্ডার হন, সেই শেয়ার দিয়ে তিনি গ্রামীণ ব্যাঙ্কের কী পরিমাণ ভ্যালুর মালিক হন?
গ্রামীণ ব্যাঙ্ক যখন একটা একটা করে শেয়ার বিক্রি করে, তখন কি অন্য শেয়ারহোল্ডাররা ডিসকাউন্ট দেন?
একসময় গ্রামীণ ব্যাঙ্কের শেয়ারহোল্ডার ছিলো ২৯ লক্ষ জন, তাই না? এখন ৫৮ লক্ষ শেয়ারহোল্ডার। গাণিতিক মতে এখন পুরোনো শেয়ারহোল্ডারদের লাভের পরিমাণ অর্ধেক হয়ে গেছে, তাই না? তো, এরকম একটা পরিস্থিতি তারা ঘটতে দিলেন কেন? তারা কেন নির্বাচিত ঐ ৯ জনকে দিয়ে ব্যাপারটা ঠেকালেন না?
একদম এই কথাটাই বুঝাতে চেয়েছি আমার পোস্টে। পরিশোধিত মূলধনে কোন টাকা যোগ হওয়া মানেই এক্সিস্টিং শেয়ারহোল্ডাররা ডিসকাউন্ট দিচ্ছেন। এতদিন পর্যন্ত এটা হয়ে এসেছে গ্রামীণ ব্যাংকের পুরানো সদস্যরা নতুনদের কাছে ডিসকাউন্টে শেয়ার বিক্রি করছেন। এটার সঠিকতা নিয়ে প্রশ্ন থাকতে পারে, হয়তো পুরানো সদস্যদের বোনাস শেয়ার দেয়া হত যদি গ্রামীণ শেয়ার মার্কেটে থাকত।
কিন্তু গ্রামীণ ব্যাংকের বর্তমান শেয়ারহোল্ডাররা যে প্রিভিলেজ ভবিষ্যৎ শেয়ারহোল্ডারদের দিচ্ছে পর্যায়ক্রমে (অথবা অতীতরা দিয়েছে বর্তমানদেরকে), সেটা আর সরকারী এক সিদ্ধান্তের ফলে হঠাত করে শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ ৭৫% বা ৫০% হয়ে যাওয়া আমার কাছে এক নয়। দ্বিমত থাকতেই পারে। কিন্তু পয়েন্টটা বুঝাতে পেরে ভাল লাগছে। অনেক ধন্যবাদ।
সুহাস শিমন
যে সরকার গ্রামীণ ব্যাঙ্ক গঠনের সময় পরিশোধিত মূলধনের একটা বড় অংশ যোগালো, দীর্ঘ সময় ধরে কর অবকাশ দিয়ে এলো, এবং যে সরকার গ্রামীণের মালিকদেরই একজন, তাকে ডিসকাউন্ট দিতে শেয়ারহোল্ডারদের আপত্তি না-ও থাকতে পারে। আপনি বা আমি বাইরে বসে ভিন্নমত পোষণ করতেই পারি।
যদি এখন শেয়ারহোল্ডাররা ডিসকাউন্টে নতুনদের কাছে শেয়ার বিক্রি করে সঠিক কাজ করে থাকেন, তাহলে সরকারের কাছে বিক্রি করলে সেটা কেন বেঠিক হচ্ছে?
"হঠাৎ করে" বলতেই বা আপনি ঠিক কী বোঝাচ্ছেন? গ্রামীণ ব্যাঙ্কের শেয়ারহোল্ডারদের সংখ্যা সময়ের সঙ্গে কীভাবে বেড়েছে সেটা না দেখে "হঠাৎ" ডিফাইন করা যাবে কি? উদাহরণের খাতিরে বলছি, যদি এক বছরেই গ্রামীণ ব্যাঙ্কের শেয়ারহোল্ডারদের সংখ্যা ২৯ লক্ষ বা ৪৩.৫ লক্ষ থেকে বেড়ে ৫৮ লক্ষ হয়, তাহলে তখনও কিন্তু শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ হঠাৎ করেই কমে ৫০% বা ৭৫%-এ নামে। আপনার কাছে কি সময়ের বিপরীতে গ্রামীণ ব্যাঙ্কের শেয়ারহোল্ডারদের সংখ্যার গ্রাফ আছে?
গ্রামীণ ব্যাঙ্কের শাখা ম্যানেজারের দল যদি সুপারিশের মাধ্যমে গ্রামীণের মালিকের সংখ্যা বাড়িয়ে বর্তমান মালিকদের লভ্যাংশ কমাতে পারে, তাহলে সরকার কেন পারবে না? আর সরকার সেটা পারলে সমস্যাটা কোথায়?
আপনিও জানেন সমস্যাটা কোথায়। সমস্যাটা হবে নিয়ন্ত্রণে। বর্তমানে যে নামকাওয়াস্তে পরিচালকেরা মাসিক বেতন এবং/অথবা সভার পারিতোষিকের বিনিময়ে (যেটা তাদের জন্যে আকর্ষণীয় পরিমাণ হওয়ার কথা) ইউনূসের ইয়েসউইমেন হিসাবে লড়ে যাচ্ছেন, তাদের অভিমতের আইনী জোর কমে যাবে। ফলে ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদ থেকে সরে গিয়েও ইউনূস গ্রামীণ ব্যাঙ্কের পরিচালনা পর্ষদে যে নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছেন, সেটা আর থাকবে না।
আমরা ইউনূসের ব্যক্তিগত লাভ নিয়ে তর্ক করলাম, ব্যক্তিগত লাভ যদি না থাকে, ইউনূসের তো কোনো ব্যক্তিগত লসও থাকার কথা না যদি গ্রামীণ ব্যাঙ্কের মালিকানা সরকারের হাতে যায়, তাই না? ওনার তো একটা শেয়ারও নাই গ্রামীণ ব্যাঙ্কে যে লভ্যাংশ কমে যাওয়ার দুশ্চিন্তায় তিনি এমনটা করবেন। তিনি তারপরও কেন দাঁতেনখে লড়ে যাচ্ছেন? লাভের উত্তরটা ওখানে আছে।
আপনার সবগুলো প্রশ্নের জবাব কিন্তু আপনার মন্তব্যের মধ্যেই আছে। দুটো সিনারিও চিন্তা করিঃ
১। গ্রামীণের বোর্ডের নির্বাচিত সদস্যরা ডঃ ইউনূসের হাতের পুতুল। তাদেরকে কাজে লাগিয়ে ডঃ ইউনূস ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধির চেষ্টা করছেন।
এটা কি প্রমানিত? যতদূর জানি নয়।
২। গ্রামীণের পরিচালনা বোর্ড এতদিন ধরে যথাযথভাবেই গ্রামীণ ব্যাংক পরিচালনা করে আসছেন এবং তার ফলস্রূতিতে গ্রামীণ আজ একটি সফল প্রতিষ্ঠান।
এটা কি প্রমানিত? এটাও নয়। (আমি প্রমাণ বলতে যৌক্তিক বা গাণিতিক প্রমাণ বুঝাচ্ছি, উদাহরণ নয়)
এবার আসি সরকারী শেয়ার বাড়ানোর প্রশ্নে। উভয় কেসেই সরকারী শেয়ার বাড়ানো হলে ঋণগ্রহীতা শেয়ারহোল্ডারদের অংশ কমে। এটাই বলার চেষ্টা করেছি এই পর্বে।
কিন্তু সরকারী শেয়ার বাড়লে আরেকটি ব্যাপার ঘটতে পারে। সেটা হচ্ছে পাইয়ের আকারের পরিবর্তন। সেটা নির্ভর করবে আসলে কোন সিনারিও টা সত্যি। যদি ১ সত্য হয়, অর্থাৎ বোর্ড যদি সদস্যদের বেস্ট ইন্টারেস্টে কাজ না করে, এবং সরকারী নিয়ন্ত্রনে যদি এর চেয়ে ভাল ব্যবস্থাপনা দেয়া যায়, তাহলে গ্রামীণ ব্যাংক হয়তো আরো বেশী সফল হতে পারে।
অন্যদিকে যদি সিনারিও ২ সত্য হয়, এবং গ্রামীণের বর্তমান দক্ষ ম্যানেজমেন্টের তুলনায় সরকারের পারফর্মেন্স যদি খারাপ হয়, তাহলে গ্রামীণ শেয়ারহোল্ডারদের দু'দিক থেকেই ক্ষতি হবে। পাইয়ের সাইজ ও ছোট হবে এবং পাই এ তাদের শেয়ার ও কম হবে।
আমি মনে করি ২য় সিনারিও বেশী সম্ভাব্য। সেটার সমর্থনে প্রথম পর্বে দেখানোর চেষ্টা করেছি কেন আমি মনে করি গ্রামীণ আর্থিক ভাবে সফল একটি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু এটা গাণিতিক সত্য নয়। তাই ভিন্নমত থাকা খুবই স্বাভাবিক।
কিন্তু কেউ যদি আমার মত ২য় সিনারিও কে বেশী সম্ভাব্য মনে করেন, তাহলে তিনি বর্তমান পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন হতেই পারেন। এর জন্য ব্যক্তিগত লাভ থাকতেই হবে কেন? আপনি আর আমি যে ঘন্টার পর ঘন্টা তর্ক করছি, আমাদের কোন ব্যক্তিগত লাভ আছে কি? আমার ও তো কোন শেয়ার নাই গ্রামীণ ব্যাংকে, আপনার আছে কি? আমার কাছে বরং ডঃ ইউনূসের আগ্রহের আরো সম্ভাব্য কারণ মনে হয় যে, গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে যেহেতু উনার ভূমিকা আছে, তাই গ্রামীণ ব্যাংকের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যাপারে উনার আগ্রহ থাকাটাই যৌক্তিক। এবং সিনারিও ১ এবং সিনারিও ২ এর চিন্তায় উনিও যদি আমার মত চিন্তা করে সিনারিও ২ এর পক্ষে থাকেন, তাতে দোষের কিছু দেখি না। আর ব্যক্তিগত লাভ ছাড়া আপনি-আমি যদি এটা নিয়ে কথা বলতে পারি, ডঃ ইউনূসের কথা বলার জন্য ব্যক্তিগত লাভ থাকতেই হবে কেন?
অনেক ধন্যবাদ।
সুহাস শিমন
হয়তো বেচারা ভয় পাচ্ছে, ওর ১১ হাজার স্কোয়্যার ফিটের ইউনূস সেন্টারের ভাড়াটা গ্রামীণ ব্যাঙ্কের গরিব মালিকেরা বোধোদয়ের পর ১ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে দিতে পারে। মিরপুর এলাকায় কমার্শিয়াল বিল্ডিঙে বর্গফুট পিছু ন্যায্য ভাড়া কতো?
ইউনূসের হাতে পড়ে পাইয়ের একটা বিরাট বখরা চলে গেছে গ্রামীণ উদ্যোগ, গ্রামীণ কল্যাণ ইত্যাদি দীনবন্ধু প্রতিষ্ঠানে। আপনি সেটা চেপে গেলেন দেখে ভালো লাগলো।
সরকারের হাতে পড়লে হয়তো পাইয়ের আকার এখনকার চেয়ে বাড়তেও পারে। সে সিনারিওটা আপনার সিনারিওর খাতায় নেই দেখে আরো ভালো লাগলো।
আপনার আরআমার সঙ্গে ইউনূসের তফাৎ হচ্ছে, নিজের লাভ আর লোকসানের বাইরে সে টুঁ শব্দ করে না।পাইয়ের কতটুকু এবং কিভাবে চলে গেছে সেটা যতটুকু বুঝি লেখার চেষ্টা করেছি। আপনার কাছে আরো তথ্য থাকলে লিখুন।
নীচের এই লাইনটা আপনার চোখ এড়িয়ে গেল কিভাবে?
বস ট্যাকাটুকা ইদানিং ঠিকমত পাচ্ছি না, তাই কমেন্টের উত্তর দেয়ার ও আগ্রহ হারিয়ে ফেলছি কিছুটা।
সুহাস শিমন
সব প্রশ্নের উত্তর কি আগ্রহ থাকলেও দেওয়া যায়, বলেন?
গ্রামীন ব্যাংকের সকল সদস্যই কি গ্রামীন ব্যাংকের শেয়ার হোল্ডার? যদি না হয় তবে তাদের ক্ষেত্রে কি হবে!!!
না, সব সদস্য গ্রামীণ ব্যাংকের শেয়ার হোল্ডার নয়। গ্রামীণের বর্তমানে প্রায় ৮৪ লক্ষ সদস্য আছে, যার মধ্যে প্রায় ৫৮ লক্ষ সদস্যের প্রত্যেকে ১০০ টাকার একটি শেয়ার হোল্ড করে। গ্রামীণের যেকোন সদস্যের সঞ্চয় ১০০ টাকার বেশী হলেই সে ১০০ টাকা দিয়ে একটিমাত্র শেয়ার কিনতে পারে এখন। যারা এখনো শেয়ারহোল্ডার নয় এবং যারা শেয়ারহোল্ডার তাদের কি হবে সেটা এখন নির্ভর করবে সরকারের সিদ্ধান্তের উপর। আমি নিশ্চিত নই আপনার প্রশ্ন ঠিকমত বুঝেছি কিনা।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ
সুহাস শিমন
হুমম আপনি ঠিকই বলেছেন সকল ঋণগ্রহীতা শেয়ারহোল্ডার নয় এবং সদস্যদের সঞ্চয় ১০০ টাকার বেশী হলেই চাইলেই তারা শেয়ার কিনতে পারে না। শেয়ারহোল্ডার হতে হলে স্থানীয় শাখার ম্যানেজারের রিকমেন্ডশন লাগে। আর প্রতিবার ঋণ বিতরণের সময় ঋণের কিছু টাকা অফেরৎযোগ্য জামানত হিসেবে রেখে দেওয়া হয় যা কিস্তি পরিশোধের সময় বাদ দেয়া হয় না। এরকম আরো কিছু ছোটখাট বিষয় আছে যা বেশীরভাগ ঋণগ্রহীতা ঠিকমত বোঝেও না। চেষ্টা করছি সদস্যদের মাঝে বিতরণ করা ছোট বইটার বাইরে যে খাতায় গ্রামীণের অফিসাররা তথ্য সংগ্রহ করে তার একটা কপি জোগাড় করতে। সেটা পেলে আপনাকে আরো কিছু বিষয় জানাতে পারব বলে আশা করি।
ধন্যবাদ, ডিটেইলে লেখার জন্য। এতকিছু জানা ছিল আগে।
প্রশ্ন ১: শেয়ারহোল্ডারদের ডিভিডেন্ড কিভাবে দেয়া হয়? (ঋণ লাঘব? )
প্রশ্ন ২: আমরা বেশিরভাগ লোকের ক্ষেত্রেই শুনি, যে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে লোন নিয়েছে, কিন্তু বিনিয়োগ করে ব্যাংকের শেয়ারের মালিক হয়েছে এমনটা শুনছি কম, এর কারণ কি? (সংখ্যা?)
প্রশ্ন ৩: তৃণমূল পর্যায়ের লোকদের শেয়ার কেনার অপশন সম্পর্কে জানানো হয় (বা হয়েছিল) কিভাবে?
অনেক ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য। যত গুছিয়ে প্রশ্ন করেছেন, সেভাবে উত্তর দিতে পারব বলে মনে হয়না। তাও চেষ্টা করি।
আমার মনে হয়না। ছোটবেলায় গ্রামে দেখেছি গ্রামীণ সদস্যদের প্রত্যেকের কাছে একটি ছোট খাতা/বই থাকত, যেটাতে তাদের কিস্তির হিসাব, কত টাকা অপরিশোধিত, সুদ, কত টাকা সঞ্চয় এসব লেখা থাকত। এই খাতার মাধ্যমেই আবার তারা সঞ্চয়ের টাকা চাইলে তুলে আনতে পারত। আমার ধারনা শেয়ারহোল্ডারদের ডিভিডেন্ড ও এভাবেই দেয়া হয়। অর্থাৎ, সদস্যের সঞ্ছয়ী হিসাবে যোগ হয়ে যাওয়ার কথা।
এটা খুবই স্বাভাবিক। গ্রামীণের মালিকের সংখ্যা অনেক বেশী (সরকার বাদ দিলেও প্রায় ৫৮ লাখ) হলেও প্রত্যেক মালিকের শেয়ারের মূল্য খুবই কম (১০০ টাকা)। এবং একজন সদস্য একটির বেশী শেয়ার কিনতে পারেনা। তাই গ্রামীণের শেয়ার একজন সদস্যের আর্থিক পোর্টফলিও তে খুব বড় অংশ নয়। অন্যদিকে ঋণের পরিমাণ বেশী থাকায় ঋণ নিয়েই বেশী কথা হওয়া স্বাভাবিক।
আবার প্রথমদিকে সদস্যদের জন্য শেয়ার কেনা বাধ্যতামূলক ছিল এবং সরকারী বিধিনিষেধ অনুযায়ী ব্যাংক শেয়ারহোল্ডারদের ডিভিডেন্ড ও দিতে পারত না। তাই এই শেয়ারের টাকাটা সদস্যদের কাছে একটা এককালীন প্রদেয় ফি হিসেবেই পরিগণিত হওয়ার কথা।
এজন্য এই শেয়ারের ব্যাপারে গ্রামীণ সদস্যদের কাছ থেকে খুব বেশী সচেতনতা আশা করা যায়না। এটা সম্মিলিতভাবে যদিও গ্রামীণ ব্যাংকের ভাগ্য নির্ধারণ করে, কিন্তু একজন সদস্যের কাছে তার শেয়ারের মূল্য খুব বেশী নয়, যেটা নিয়ে তারা মাথা ঘামাবে। এজন্যই এসব সিদ্ধান্ত সরকার এবং সচেতন নাগরিকদের সুবিবেচনা প্রসূত হওয়া উচিত।
২০১০ এর আগ পর্যন্ত সদস্যদের একটা নির্দিষ্ট হারে সঞ্চয় বাধ্যতামূলক ছিল এবং সঞ্চয় ১০০ টাকা অতিক্রম করলে গ্রামীণের একটি ১০০ টাকার শেয়ার ক্রয় ও বাধ্যতামূলক ছিল। ২০১০ এর পর থেকে সবই ঐচ্ছিক, কিন্তু এই প্রক্রিয়া এতদিন ধরে চলে আসছে যে এটা সদস্যদের না জানার কথা না। আমি যতদূর জানি এসব কার্যক্রম তৃণমূল কেন্দ্রিকই পরিচালিত হয়, অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মত শহরকেন্দ্রিক নয়।
গ্রামীণ ব্যাংক সম্পর্কিত রিভিউ কমিটির (২০১১) রিপোর্টে মাঠ পর্যায়ে পরিদর্শনের কথা বলা আছে। গ্রামীণের বক্তব্য এবং মাঠপর্যায়ের বাস্তবতা (যেমন বেশী সুদ আদায় করা, ডিভিডেন্ড না দেয়া) যদি ভিন্ন হয়, তাহলে এটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ এবং এর ফয়সালা ব্লগে না হয়ে কোর্টে হওয়া উচিত। রিভিউ কমিটির প্রতিবেদনে এবং মাঠ পর্যায়ের পরিদর্শনে এধরনের কোন অসামঞ্জস্যের কথা বলা হয়নি। এটা করা মনে হয় অসম্ভব। গ্রামে থাকতে দেখেছি, মহিলারা কিস্তি দিয়ে আসার পর পরিচিতি পড়াশোনা জানা কাউকে দেখিয়ে নেয় সব হিসাব ঠিকঠাক আছে কিনা এবং কিস্তি, সঞ্চয় ইত্যাদি ঠিকমত লেখা হয়েছে কিনা। তাই এধরনের নগ্ন প্রতারণা করে গ্রামীণ ব্যাংকের পক্ষে পার পাওয়ার কোন সম্ভাবনা দেখি না, সদস্যদের কাছেও না, সরকারের কাছেও না।
সুহাস শিমন
ধন্যবাদ, পয়েন্ট বাই পয়েন্ট জবাব দেবার জন্য। আমার মনে হয় এখান থেকে কিছু সারকথা মূল লেখায় থাকলে ভালো হত। ১০০ টাকার ১ টি করে শেয়ার কেনার বিষয়টা হয়ত আমার মত অনেকেরই অজানা।
ইউনূস সাব আর কত? আর কত? জাপানে এই ব্যাটা দুইদিন পর পর এসে সব লেবেলর উদ্যক্তাদের একটা মেসেজই দেয়: বাংলাদেশে আইলে আমার গ্রামীণের লগে আও, নাইলে ধরা!!!
UNIQLO সহ অন্তত আরো ৭টা কোম্পানিকে(বেশি হবে, আমি ৭টা জানি) ব্যাটা সোশাল বিজ বটিকা খাওয়াইসে!
লেখক এবং হিমুভাইকে(যাক্কাস কেমন্টের জন্য) অনেক ধন্যবাদ!
জাপানে ইউনূসের এমন আহ্বান সম্বলিত কোনো প্রেজেন্টেশনের ভিডিও কি পাওয়া যাবে কোথাও?
হিমু ভাই দেরি করে ফেল্লাম , ক্ষমা করবেন!
রেফারেন্স বা ভিডিও আমার কাছে নাই। খোঁজ করতেসি। ভবিষ্যতে ভিডিও করতে হবে।
আমি যাদের সাথে কাজ করছি তারা এবং তাদের ১টা সিস্টার কনসার্ন(Felissimo) ঢাকায় ইউনূস সাবের হিল্লায় আছেন। এখানে(জাপানিজদের কাছে) উনি প্রবল জনপ্রিয়।
এছাড়াও:
Jikei group of companies, সামাজিক ব্যাবসা, প্রোডাক্ট: এনিমেশন
Toyota Motor Company, সমাজিক ব্যাবসায় টাকা খাটাবে
Nissan Motor Company, সমাজিক ব্যাবসায় টাকা খাটাবে
ওসাকার খুব নামকরা সপিং মল চেইন, সমাজিক ব্যাবসায় টাকা খাটাবে
DECCI, সামাজিক ব্যাবসা, প্রোডাক্ট: মুভি, এনিমেশন
আমার নিজেরটা দিলাম না!
UNIQLO এশিয়ার অন্যান্য দেশে নিজেরা সরাসরি আউটলেট খুলে প্রোডাক্ট সেল করে আর ঢাকায় সামাজিক ব্যবসার নামে ইউনূস সাবের গ্রামীণরে কানদে নিসে।
সামাজিক ব্যবসার জন্যে কি সিএসআর বিষয়ক কোনো সুবিধা (কর ছাড়) পাওয়া যায় জাপানে? পাওয়া গেলে এই খাতে হুড়হুড় করে টাকা আসাই স্বাভাবিক। কারণ অন্য খাতে সে টাকাটা খরচ হয়ে যায়, এ খাতে একটা ব্লকড অ্যাকাউন্টের মতো ব্যবস্থায় টাকাটা থেকে যায়, বাচ্চাও দেয়, আবার যে কোনো সময় গা ঝাড়া দিয়ে সামাজিক ব্যবসা থেকে হাত ধুয়ে ফেলে অসামাজিকও হয়ে যাওয়া যায়।
ভালো বলসেনতো বস। আমি জানিনা। একটু পড়াশোনা করতে হবে। তবে যা বলসেন সেটা ১০০ভাগ লেগে গেলে সিএসআর সুবিধাতে পোয়াবারো হবে অনেকের।
না, জাপানে বা পৃথিবীর অন্য কোন দেশেই সামাজিক ব্যবসার জন্য কর ছাড় বা এধরনের কোন সুবিধা এই। এই ব্যবসা অন্য সব ব্যবসার মতই ব্যবসার নিয়মেই পরিচালিত হতে বাধ্য। অন্য যে কোন ব্যবসা যত কর দিতে হবে সামাজিক ব্যবসায়ও তাই দিতে হবে।
বাংলাদেশে কিছু করতে গেলে ইউনুসের সাথে আসুক আর একলাই আসুক 'ধরা খাওয়া' অবধারিত। একমাত্র নিরাপদ রাস্তা সরকারের ক্ষমতাধীন কারো সাথে সখ্য(!) গড়ে তোলা। এটা তোতো, তবে এটাই সত্য।
ইউনূস সাহেব যদি বাংলদেশের নামে নেতিবাচক প্রচারণা চালিয়ে থাকেন, সেটা খুবই জঘণ্য একটা কাজ আমি বলব।
তবে, প্রত্যেকটা প্রতিষ্ঠান/ব্যক্তি তার পক্ষে 'সেলস স্পিচ' চালাবেন সেটা গ্রহণযোগ্য। যেমন, আমি বলতেই পারি যে বাংলদেশে ব্যবসা করতে হলে আমার সাথে আসুন, আমার ৩ বছর (টিউশনি করানোর ) অভিজ্ঞতা আছে। আমি আপনাকে নানা কায়দা-কানুন শেখাবো, রেগুলেটরি নীতিমালায় বুদ্ধি বাতলে দেব। -এটা দোষের কিছু না। তবে, আমি যদি বলা শুরু করি যে, বাংলদেশে ব্যবসা করতে গেলে আমাকে ছাড়া আপনার গতি নাই, ওইখানে জলে কুমির, ডাঙায় বাঘ, আকাশে ড্রোন - এটা জঘন্য মিথ্যাচার, দেশের উপর কালিমালেপন।
[যদিও নির্মম সত্য হল ঘুষ/দুনম্বরি ছাড়া বাংলদেশে বড় কিছু করা কঠিন। ]
ধন্যবাদ।
ব্যাটা নোবেল পাওয়ার পর থেকে এখানে জোচ্চুরি থামাইতেসে না। ২০০৮ থেকে ব্যাটার লাফালাফি দেকতেসি। প্রথম প্রথম খুব গদ গদ লাগলেও এখন একজন বাটপাররে যেমন লাগে উনারেও তেমন লাগতেসে।
কি কি জোচ্চুরি করলেন তিনি, একটু জানান প্লিজ। না হলে ঢালাও ব্লেম করা হয়ে যাচ্ছে।
আমি তো জানি বাংলাদেশে জাপানের যে কোন ধরনের ব্যবসা বা সামাজিক কর্মকাণ্ডকে সহযোগিতা করার জন্য "জাইকা" ( JAICA) আছে। তাদের কর্মপরিধি, লোকবল, দক্ষতা অনেক।
- রেফারেন্স দিতে পারবেন?
রেফারেন্স কি দিমু ভাই, নাই! তবে এই ব্যাটারে ২/১ মাস পর পরই দেখতে হয়।
রেফারেন্স না থাকলে অন্তত এইটা বলেন কবে, কোন সেশনে উনি জাপানে গিয়ে এসব কথা বলছেন। তারপর আমরা সবাই মিলে উনারে আচ্ছাসে ধরি। তাও যদি না দিতে পারেন তাইলে ভাই অফ যান। উনি ২/১ মাস পর পর জাপানে যায় বলেই ক্ষেপে যাবেন?
রেফারেন্স হইল:
১। জাপানে প্রায় ১০,০০০ বাংলাদেশি আছেন, এর মধ্যে কুতুব টাইপ আছেন ১০০ (ধরে নিলাম)। আজকে ৫ বছর ধরে দেকতেসি একটা বদনা বানানির ওর্ডারও(যদি সেটা বাংলাদেশে বানানির ব্যাপারটা আসে) জাপানিজরা বাবু নাগরিক ছাড়া করবে না। সমস্যা টা কি?
২। দুইদিন আগে খোলা হাওয়ার বের হওয়া মিয়ানমারে বানের স্রোতের মত জাপানিজ বড় , ছোট কোম্পানিগুলা ঢুকতেসে। বাংলাদেশে আইতে গেলে ক্যান খালি বাবু নাগরিক??
৩। ভিয়েতনামের ব্যাপারেও একই কথা
৪। আমি আগে আমার অফিসে কোন একটা প্রপোজাল দিলেও উনারা সেটা বাবু সাহেবরে সেনড করতেন
আর উনি কি আপনার প্রপোজাল দেখে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠতেন?
রেফারেন্সের খেতা পুড়ি: এই এক পাবলিকে দিনের পর দিন জাপানিজগোরে বাংলাদেশ থেকে বিমুখ করাইসে। ৫ বছর পর মিয়ানমার যাবার জন্য লোকজন টাকা খরচ করবে(মালেশিয়ার জন্য যেমন করে) না হয় সীমান্ত পার হইতে নাসাকার গুলি খাবে!
কিসের মধ্যে কি বলেন ভাই? বাংলাদেশে মানুষ ব্যবসা করতে আসে না কেন? এর কারন সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্নীতি। আমি নিজের চোখের সামনে দেখছি। এটা কিভাবে ইউনূসের দোষ হয়?
ইউনুস বাংলাদেশে জাপানের যতগুলি ইনভেস্ট আনার জন্য চেষ্টা করছে ( আপনার আগের কমেন্ট রেফারেন্স) সেগুলো কি এদেশে টাকা আনবে না? ব্যবসা বাড়াবে না? উনি কবে বলেছেন বাংলাদেশে ইনভেস্ট না করতে?
আরেকটা পয়েন্ট: সরকারও কিন্তু একরকম মাইক্রোক্রেডিটের কারবার করছে। কিন্তু সরাসরি না এই গ্রামগঞ্জের সাধারণ মানুষের সাথে ব্যবসা করছে, সরকারেরই একটি প্রতিষ্ঠান। পল্লী-কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশন নামে একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক সরকার। সরকার এটা থেকে আজতক US$ 1534.16 million ধার দিয়েছে। কাকে? বাংলাদেশের বাকি সব এনজিওরা এটা থেকে টাকা নেয়। pksf-bd ডট অর্গ থেকে দেখতে পারেন। একজন সরকারের একজন সাবেক মুখ্যসচিব এর এমডি। ড আতিউর রহমানের পূর্বসুরী, ড সালেহউদ্দিন আহমেদ এই পিকেএসএফ থেকে বাংলাডেশ ব্যাংকের গভর্নর হয়েছিলেন ২০০৫ সালে।
নিচের কথাগুলো আমার একজন আত্মীয় যিনি pksf এ কাজ করেন তার থেকে শোনা, কাজেই এর অথেনটিসিটির কোন সূত্র দিতে পারব না। তার ভাষ্যে, 'পিকেএসএফ সরকারের অর্থমন্ত্রণালয়ের আওতায়। পিকেএসএফ বাইরের ডোনার থেকে (হয়ত আইএমএফ, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক) থেকে ৩% হারে টাকা পায়। সেটাকে অন্য এনজিওদের ধার দেয়া হয় ৭% হারে। আর, বড় এনজিও হলে ( ব্র্যাক, প্রশিকা, আশা, ইত্যাদি) সুদের হার ৯%' (সংখ্যাগুলো ঠিক মনে নাই)
কাজেই, সরকার ঠিক কি কারণে গ্রামীণ ব্যাংকের মালিকানার হার বাড়ানো দরকার সেটা বোধগম্য না। সরকারই তো সুদের ব্যবসায় নেমেছে, কাজেই আরেকজনকে সুদখোর বলা ঠিক না মনে হয়। এর মানে এই না, যে ইউনুস সাহেব সুদ খান না, তবে তাকে সুদখোর বলাটা সরকারের ঠিক মানায় না যেখানে সরকার নিজেই নেপথ্যে সুদের কারবারী।
ধন্যবাদ।
মাইক্রোক্রেডিট এর কারবার ঠিক কি কারণে খারাপ সেটা বুঝলাম না। গ্রামীণ ব্যাংক ও কিন্তু সরকারী উদ্যোগে শুরু হয়েছিল।
প্রথমত সুদের ব্যবসার সমস্যাটা কি ধর্মীয় কারণে? মাইক্রোক্রেডিট দিতে হলে কেন সুদ নিতে হবে সেটা আগের পর্বে বলার চেষ্টা করেছিলাম। আর ব্যক্তি ড: ইউনূস সুদের ব্যবসা বা আদৌ কোন ব্যবসা করেন কিনা সেটার কোন তথ্যসূত্র দিতে পারবেন?
অনেক ধন্যবাদ।
সুহাস শিমন
আপনি সম্ভবত: আমার কথাটা ভুল ভাবে ধরেছেন, আমিই হয়ত বুঝিয়ে লিখিনি। সরকারের লোকেরা (সমর্থক, কর্মী, মন্ত্রী) অনেকেই ইউনূস সাহেবকে সুদের কারবারী বলেন, সাথে মাইক্রোক্রেডিট জিনিসটারও তুলোধুনা চলে। আমি বলতে চেয়েছি যে, সরকার নিজেও এর কাছাকাছি একটা কাজ করছে, কাজেই অন্যকে সুদের কারবারী বলাটা মানায় না। [ ধরুন, আমি ডিভিডিতে বাসায় বসে সিনেমা দেখি আর পাশের বাসার শফিক সিনেমা হলে যায়। এখন আমি যদি শফিককে ভরা মজলিসে সিনেমা দেখলে চরিত্র খারাপ হয়ে যাবে এ জন্য গাল মন্দ করি সেটার মতই হিপোক্রেসি ব্যাপারটা]
মাইক্রোক্রেডিট খারাপ -এটা আমি বলছি না, এটা আমার নিজের বক্তব্যও না। এটা একটা প্রচলিত কথা। অনেকেই কিন্তু বলে যে, 'এটা করে দেশের কোন উপকার হয় নাই, খালি ইউনূস সাহেবের লাভ হয়েছে। সরকারের মাইক্রোডিটের বিরুদ্ধে একটা শক্ত অবস্থান নেয়া উচিত'। আমার লেখা কথাগুলো তাদেরকেই বলা। সরকার মুখে ইউনূসকে 'রক্তচোষা', বললেও, সরকারেরও কিন্তু পরোক্ষ সুদের ব্যবসা আছে। এবং এটা জনসাধারণের অনেকেই জানেন না। তাদেরকে জানানোর জন্যই আমি এই পিকেএসএফ-কে টেনে এনেছি এবং এর সাথে সরকারের সংশ্লিষ্ট সেটা বলেছি।
মাইক্রোক্রেডিট খারাপ না ভাল -এ বিষয়ে আমার জাজমেন্ট হল নিউট্রাল। এটা আমি ভাল মত জানি না, কাজেই এটা ভালো না মন্দ সেই বিচার করার যোগ্যতা আমার নেই।
আর, সুদের ব্যবসার কোন সমস্যা আমি তুলে ধরিনি। আপনার আগের লেখাদুটো মোটামুটি আমার মুখস্থ (কারণ, ওখান থেকে আমি অনেককিছু নতুন জেনেছি, এবং আজকেও কয়েকজনকে আপনার নৌকার উদাহরণটা দিয়ে বুঝিয়েছি)। কাজেই, আমার সুদ নিয়ে কোন অ্যালার্জি নেই, এটা ছাড়া এই প্রতিষ্ঠান টিকবে না।
এখানে একটা দুর্বল শব্দচয়ন ছিল আমার দিক থেকে। আমি বলতে চেয়েছিলাম, যে গ্রামীণ ব্যাংক সুদ নেয়-এটারই কথ্য রূপ "ইউনূস সাহেব সুদ খান"। ব্যক্তি ইউনূস নিজের ১০০ টাকা দিয়ে সুদের ব্যবসা করে ১২০ টাকা পকেটস্থ করছেন -এতটা উদ্ভট ধারণা আমার নেই।
অল্পকথায়:
১। সরকার নিজেই যেখানে মাইক্রোক্রেডিটে জ্বালানি সরবরাহ করছে নেপথ্যে, সেখানে একই সেক্টরের আরেকজনকে 'গরিবের রক্তচোষা' বা 'সুদখোর' এরকম উপাধি দেবার নৈতিক অধিকার সরকারের থাকছে না।
২। সরকারের মাইক্রোক্রেডিটে সংশ্লিষ্টতা তো আছেই, গ্রামীণ ব্যাংকে শেয়ার বাড়ানো কি সুফল বয়ে আনবে সেটাও পরিষ্কার হল না।
সুহাস শিমন
সরকারের টাকা কার? জনগণের না?
সরকার জনসাধারণের প্রতিনিধি, সরকারের আয় মানে জনগণের আয়। ইউনুস জনপ্রতিনিধি না।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
সরকারের টাকা জনগণের -এটা নিয়ে তো কথা হচ্ছে না। আমার কথাটা আবার বলি, উদাহরণ দিয়ে:
সরকার ১ টাকায় নেপাল থেকে কলা এনে ৩ টাকায় রহিমকে সাপ্লাই দেয়, রহিম পাবলিকের কাছে ১০ টাকায় কলা বেচে।
শফিক নিজেই কলা ৩ টাকায় নেপাল থেকে কলা এনে ১০ টাকায় বেচে।
এখন সরকার যদি বলে, শফিকের কারণে দেশে কলার দাম বেশি আর দেশে পুষ্টিহীনতা -এটা হাস্যকর না?
ইউনূস ব্যবসায়ী, সে দাতা হাতেম না। তবে, সরকার ক্ষুদ্রঋণের জন্য আরেকটা এনজিওকে লোন দেয়, অথচ আরেকজন ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে কারবার করলে তাকে সরকারের উপরমহল থেকে 'গরীবের রক্ত চোষা' বলাটা অযৌক্তিক।
সরকার জনগণের প্রতিনিধি, ইউনূস না। ঠিক আছে কিন্তু একই ব্যবসা সরকার করলে ঠিক আছে আর ইউনূস করলে সে সুদখোর তা কেন হবে? সরকার ব্যবসা করুক, লাভ করুক, সমস্যা নাই -এটা জনগণের টাকা হিসেবে রাষ্ট্র জনকখ্যানে খরচ করবে। এখন ইউনূস এসে একই কাজ করলে তাকে সুদখোর বলা সরকারকে কিভাবে মানায়?
আমি নিজে যেটা করি, অন্যে সেটা করলে আমি তাকে ভুল ধরার অধিকার রাখি না -এটাই ছিল কমেন্টের মূল কথা
এটা ইন জেনারেল একটা ভ্রান্ত ধারণা। আমি চুরি করি বলে অন্যের চুরির সমালোচনা/প্রতিবাদ করতে পারবো না, এমন না। কেইস এরকম হলে, যেহেতু আমরা প্রায় প্রত্যেকেই কোনো না কোনো সংজ্ঞায় কোনো না কোনো অপরাধে অপরাধী, সেহেতু অপরাধের সমালোচনা করার অধিকার হারাতাম। একই লাইনে, ইউনুসের সমালোচনা করতে গেলে আগে নোবেল পেয়ে আসতে হবে, বা দেশের জন্য আমি কি করেছি, এই হিসাব নিয়ে আসতে হবে - এরকম অযুক্তিও অনেকের কাছে শুনতে হয়।
প্রশ্নের উত্তর প্রশ্নের মধ্যেই আছে। ইউনুস জনপ্রতিনিধি না। তাই তার ইনকামের ওপর পাবলিকের কোনো অধিকার নাই। অন্যদিকে সরকারের ইনকাম মানে পাবলিকের ইনকাম। পার্থক্যটা সুস্পষ্ট।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
হুম, আজিম ভাই, এসব থেকে কিন্তু একটা জিনিস পরিষ্কার না যে এখানে উনি দেশের বিরুদ্ধে প্রচার চালাচ্ছেন কিনা। UNIQLO অন্য দেশে নিজেরাই আউটলেট খোলে, বাংলাদেশে খোলার সময় ইউনূস সাহেবের সাথে আসার কারণ হয়ত ইউনূসের সেলস প্রোপজাল। শুধু ইউনূস না,, যে কোন লোকেরই অধিকার আছে যে ইনভেস্টরকে কনভিন্স করার চেষ্টা করা টার সাথে আসার জন্য। এটা কোনভাবেই অপরাধ না, যতক্ষণ না সেই ব্যক্তি ঢালাওভাবে এবং অযৌক্তিকভাবে বাস্তবতাকে বিকৃত করছেন। দয়া করে আমার করা ৪৪ নং কমেন্টটা দেখুন।
কিছু মনে করবেন না, আমার মনে আপনার এ বিষয়ে 'কনফ্লিক্ট অভ ইন্টারেস্ট' আছে। কারণ, আপনি ইউনূসের বিষয়ে বলছেন,
এটা ব্যক্তিগতভাবে আপনার ভালো লাগার কথা না। আমি ইউনূস সাহেবের কানা ভক্তও না আবার চরম শত্রুও না।
ইউনূস সাহেব যদি জাপানিদের মাঝে জনপ্রিয় হয়েও থাকেন এবং সবাই যদি আপনার মতে 'বদনা বানানোর' জন্যও ইউনূস সাহেবের সাথে যোাযোগ করেন সেটাও অপরাধ হিসেবে গণ্য হচ্ছে না। কারণ, উনি ন্যায়তই বলতে পারেন যে উনার সাথে ব্যাবসা করলে, উনি পরামর্ষ, এবং উনার কানেকশন দিয়ে সাহায্য করবেন। অন্য দেশের ইনভেস্টমেন্টের আগ্রহ থাকলে, স্থানীয় কলাবরেটর হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করা এবং তাতে অনেকাংশে সফল হওয়া (মানে অনেকগুলো ইনভেস্টমেন্ট বাগাতে পারা) অপরাধ বলে গণ্য হয় কি?
মিয়ানমারের যে উদাহরণটা দিলেন, তার সাথে বাংলাদেশ তুলনীয় না। মিয়ানমার এখন অনেক আকর্ষণীয় একারণে যে বাজার যখন নতুন খোলা শুরু করে, তখন অনেক অপর্চুনিটি থাকে, কাস্টমার বেজ তৈরি করার সুযোগ থাকে। আর, ধর্মীয় কারণেও হয়ত জাপানিজদের মায়ানভার ভালো লাগতে পারে (আমি শিওর না)। আমাদের দেশের তুলনায় মায়ানমার কিন্তু আপাতদৃষ্টিতে স্থিতিশীল, ওখানে জান্তার কারণে মানুষ খুব একটা আওয়াজ করতে পারে না। কিছু লোক এসে আপনার কারখানার জানালা ইট মেরে ভেঙে দিয়ে যাবে, আপনার কার্গোভ্যান হরতালের কারণে পোর্টে যেতে পারবে না- এটা মায়ানমারে সম্ভবত কঠিন। কাজেই, এরকম একটা জিনিস বিনিয়োগকারীদের ভালো লাগতেই পারে। এটা ইউনূস সাহেবের দোষ হবে, যদি উনি প্রচার চলান যে বাংলাদেশে আসলে উনিই একমাত্র রাস্তা, কিন্তু উনি যদি বলেন যে, বাংলাদেশে আসার খুব ভালো বা সবচেয়ে ভালো রাস্তা উনি আর উনার সামাজিক ব্যবসা সেটা দোষের না। উদাহরণের দ্বারস্থ হই, ধরুন একটা মালয়েশিয়ান কোম্পানি ইপিজেডে বিনিয়োগ করবে। তখন ঢাকা ইপিজেডের একজন কর্মকর্তা কিন্তু বলতে পারেন যে, আমাদের এখানে আসলে রাজধানীর কাছ থেকে জনশক্তি পাওয়া সহজ হবে, ঢাকার কাছে হওয়ায় অনেক প্রফেশনাল লোকও তোমার এখানে কাজ করটেতে চাইবে। আবার, চিটাগং ইপিজেডের লোক বলবে যে, তারটা থেকে পোর্ট কাছে। -এগুলো কিন্তু স্বাভাবিক এবং অপরাধ না।
প্রশ্ন: টয়োটা, নিসানের থেকে সামাজিক ব্যবসায় ইউনূস টাকা না আনলে, এরা যে বাংলাদেশে নিজে থেকে সামাজিক ব্যবসা ছাড়া অন্য কিছুতে বিনিয়োগ করত এমনটা হবার সম্ভাবনা ছিল কি?
অনেক ধন্যবাদ।
অনেক কথা বলে ফেললাম, এর আগে কোন পোস্টে ১১ টা কমেন্ট করেছি বলে মনে পড়ে না। যাইহোক, নিজের নাম বাঁচাতে কিছু ডিসক্লেইমার:
১। আমি ইউনূস সাহেবের কোন প্রতিষ্ঠানে চাকরিরত না (আমি বর্তমানে প্রবাসী)
২। কিছু কমেন্ট পড়লে মনে হবে আমি ইউনূসে বিপক্ষে কথা বলছি, আবার কয়েকটা পড়লে মনে হবে তার পক্ষে কথা বলেছি। কিছু যুক্তি আনতে হয়েছে একারণে যে, ঘন ঘন জাপান যাওয়া, জাপানিদের কাছে জনপ্রিয়তা (বা তাদের আস্থাভাজন হওয়া), তাদের পটিয়ে সামাজিক ব্যবসায় রাজি করানো -এগুলোকে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র টাইপের কিছু বলা হয়েছে। এটা গ্রহণযোগ্য না। সুস্পষ্ট প্রমাণ ছাড়া কাউকে দোষ দিতে আমি রাজি না।
৩। ব্যক্তি ইউনূসের অনেক কিছুই আমার অপছন্দ। সবচেয়ে বিরক্তি লেগেছে অনেক ভাইটাল বিষয়ে তার চুপ মেরে থাকা। স্কুলের হেডমাস্টার হলে শুধু স্কুল নিয়েই থাকলে চলবে না, এলাকায় বাল্য বিবাহ রোধেও তাকে এগিয়ে আসতে হবে। ইউনূস সাহেব ব্যাংকের বাইরের বিষয়ে আশ্চর্যরকম চুপ মেরে ছিলেন। টবি ক্যাডম্যানদের মোকাবেলায় তার কলম থেকে দু একটা নিবন্ধ বেরুলে ভাল হত (অবশ্য না হওয়াতেও যে বিরাট ক্ষতি হয়েছে তা নয়, যার যা ছিল সবাই সেটা নিয়েই দেখিয়ে দিয়েছে )
৪। আমি ইউনূস সাহেব নিয়ে কনসার্নড না, উনি বছরের পর বছর বিদেশে বসে থাকলেও দেশের কিছু ক্ষতি বৃদ্ধি হবে না। উনি বাইরে বসে লবিং করে খুব একটা বিশাল কিছু উপকার বা ক্ষতি করে ফেলবেন সেটাও আমার মনে হয় না। উনি গিয়ে হিলারিকে বলবেন আর হিলারি উনার কথা শুনে সব করে ফেলবেন এটা বিশ্বাসযোগ্য না। প্রতিটা বড় বড় দেশেরই নিজস্ব স্ট্রাটেজি থাকে। মুখে হয়ত একটা দু'একটা কথা বলবে কেউ (উই আর কনসার্নড -এই টাইপের) , সেটার গুরুত্ব আদতে নেই।
তবে, আমি চাই গ্রামীণ ব্যাংকের যদি সুফল থেকে থাকে, সেটা যেন তৃণমূল পর্যায়ের মানুষের উপকারে আসুক। গ্রামীণ ব্যাংক পরে আদমজীর মত বসে যাক -সেটা আমি চাইনা। গ্রামীণ ব্যাংক উপকারী না অপকারী -সেটা আমার জানার পরিধির বাইরে। উপকারী হলে এর বিকাশ ঘটুক, আর অপকারী হলে সেটার সংশোধন হোক।
সবাইকে শুভেচ্ছা, ধন্যবাদ, ভাল থাকবেন।
[আগামী কয়েকদিন হয়ত ব্লগে আসব না, কাজেই জবাব দিতে দেরি হতে পারে।]
এই পোস্ট আর তৎপরবর্তী আলোচনা থেকে যা শিখলাম:
১. গ্রামীণ ব্যাঙ্কের মালিকানা ৫৮ লক্ষ শেয়ারহোল্ডার থেকে রহস্যময় পদ্ধতিতে বাছাই করা ৯ জন স্বল্পশিক্ষিতা বা অর্ধশিক্ষিতা গ্রামীণ ঋণগ্রহীতা মিলে চরিতার্থ করেন। এরা লাইনে আছেন। কিন্তু সরকার লাইনে নাই।
২. গ্রামীণ ব্যাঙ্ক গরিব ভূমিহীনকে ঋণ দেওয়ার জন্যে গঠিত বিশেষায়িত ব্যাঙ্ক হলেও মাঝখান দিয়ে ইউনূসের পারিবারিক প্রতিষ্ঠান প্যাকেজেস কর্পোরেশন সেখান থেকে ঋণ পায় এবং তার সুদ বাবদ পাওনা টাকাও মওকুফ পেয়ে যায়। প্যাকেজেস কর্পোরেশনও লাইনে আছে। কিন্তু সরকার লাইনে নাই।
৩. ইউনূস গ্রামীণ ব্যাঙ্কের সাথে কোনো রকম আর্থিক সম্পর্কে জড়িত নয়, এমন একটি প্রতিষ্ঠান গঠনের জন্য ব্যাঙ্কের কাঁধে সম্ভাব্য দেনার দায় চাপিয়ে পদাধিকার বলে ২৫ কোটি টাকার গ্যারান্টি দেন। ইউনূসও লাইনে আছেন। কিন্তু সরকার লাইনে নাই।
৪. এইসব অনিয়মে যখন সরকার নিযুক্ত তৎকালীন প্রতিনিধিরা বাধা দেননি বা সহযোগিতা করেছেন, তখনও সরকার লাইনে ছিলো। কিন্তু এখন সরকার লাইনে নাই।
৫. সরকার যখন এইসব করে তখন সেগুলি অদক্ষতা, দুর্বলতা আর দুর্নীতি। আর ইউনূস যখন করেন তখন সেটা পদ্ধতিগত অনবধানতা। ইউনূস তারপরও লাইনে আছেন। কিন্তু সরকার লাইনে নাই।
৬. গ্রামীণ ব্যাঙ্কের মালিকানা সরকারের হাতে চলে গেলে বিরাট সর্বনাশ হবে। হয়তো সরকারের কোনো ভাইভাতিজার গ্রামীণ ব্যাঙ্কের সাথে আর্থিক সম্পর্কহীন প্রতিষ্ঠান গঠনে গ্রামীণ ব্যাঙ্ক গ্যারান্টর হবে। যেমন ইউনূস হয়েছিলেন। কিন্তু কে লাইনে ছিলেন আর কে লাইনে থাকবেন না সেটা বুঝতে হলে দেখুন ৫ নং পয়েন্ট।
চমৎকার একটি আলোচনা হচ্ছে এখানে, আশা করি আরো হবে। আমি খুবই উপভোগ করেছি এবং অনেক কিছু শিখছি এই আলোচনা থেকে। যারা নতুন করে এই লেখা পড়বেন তাদের জন্য উপরের আলোচনা এবং সেখানে আমার মন্তুব্যের একটা সামারি করতে চাই যাতে আপনারা দ্রুত ক্যাচ আপ করতে পারেন এবং আলোচনায় অংশগ্রহণ করতে পারেন। প্রায় সবকিছুই আলোচনা করা হয়ে গেছে তাই নতুন করে পোস্ট দেয়ার খুব একটা মানে নেই।
১. প্রথম বিতর্কের বিষয় ছিল গ্রামীণের ৯৭% দরিদ্র্য শেয়ারহোল্ডার আসলেই গ্রামীণের মালিক কিনা? তারা ডিভিডেন্ড পান কিনা এবং তারা ঠিক কিভাবে ব্যাংক পরিচালনায় অংশগ্রহণ করেন?
যেকোন মালিকানার দুটো ভাগ, আর্থিক বা বৈষয়িক লাভ এবং সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা। গ্রামীণের আর্থিক লাভ যেটা ডিভিডেন্ড হিসেবে শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে বিতরণ করার কথা তার ৯৭% গ্রামীণের সদস্য শেয়ারহোল্ডাররাই পাচ্ছে, বাকি ৩% পাচ্ছে সরকার। এই টাকা নিয়ে সদস্যদের মধ্যে খুব উচ্ছাস বা উৎকণ্ঠা না দেখার কারণ হল, প্রত্যেক সদস্য শুধুমাত্র ১০০ টাকার একটি শেয়ার হোল্ড করতে পারে। তাই গ্রামীণের শেয়ারহোল্ডার ৫৮ লাখ, সরকার বাদে। কিন্তু ১০০ টাকার একটি শেয়ার একজন সদস্যের আর্থিক পোর্টফলিও তে খুব বড় নয়, যদিও এখন পর্যন্ত সেই শেয়ারের বিপরীতে প্রতি শেয়ারহোল্ডারের মোট ২৬০ টাকা করে ডিভিডেন্ড পাওয়ার কথা। এবং এই ডিভিডেন্ড প্রত্যেক শেয়ারহোল্ডারদের ব্যক্তিগতভাবে পরিশোধ করা হয় তাদের সঞ্ছয়ী হিসাবের মাধ্যমে।
সিদ্ধান্ত গ্রহণ বা ব্যাংক পরিচালনার ক্ষেত্রে গ্রামীণের সাথে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের দুটি বড় পার্থক্যঃ
ক। অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে তাত্বিকভাবে শেয়ারহোল্ডারের সংখ্যা অনেক হওয়া সম্ভব হলেও মাল্টিপল শেয়ার হোল্ডিং এর সুযোগ থাকায় সাধারণত কোম্পানীর মূল শেয়ারহোল্ডার থাকেন কয়েকজন। তাই বার্ষিক সাধারণ সভায় সেই কয়েকজনের ভোটই ব্যাংকের মূল নীতিনির্ধারকের ভূমিকা পালন করে। গ্রামীণের ক্ষেত্রে একজন সদস্য একটির বেশী শেয়ার হোল্ড না করতে পারায় ৫৮ লক্ষ শেয়ারহোল্ডারের প্রত্যেকের ভোটিং পাওয়ার সমান। কিন্তু ৫৮ লক্ষকে নিয়ে এজিএম করা অসম্ভব তাই, গ্রামীণ একটি রিপ্রেজেন্টেটিভ সিস্টেম অনুসরণ করে। অর্থাৎ শেয়ারহোল্ডাররা নির্বাচনের মাধ্যমে নিজেদের মধ্য থেকে ৯ জনকে মনোনীত করে পাঠান, যারা সেই বছরের জন্য সব শেয়ারহোল্ডারের প্রতিনিধিত্ব করেন। এর জন্য প্রথমে সব শেয়ারহোল্ডারদের ৯ টি ভাগে ভাগ করা হয়। এবং তিনটি পর্যায়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম পর্যায়ে একদম তৃণমূল পর্যায়ে প্রতিনিধি নির্বাচন করা হয়। সেই পর্যায়ে নির্বাচিতদের মধ্য থেকে তাদের ভোটে দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রতিনিধি নির্বাচিত হন। সেখান থেকে আবার তৃতীয় পর্যায়ে ৯ জন চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হন। অর্থাৎ প্রত্যেক নির্বাচিত প্রতিনিধিকে তিনটি পর্যায়েই নির্বাচিত হয়ে আসতে হয়। অনেকটা ক্লোজ আপ ওয়ানের (চ্যানেল আই এর ট্যালেন্ট হান্ট) মত, শুধু এক্ষেত্রে সিলেকশনের বদলে ইলেকশন হচ্ছে।
খ। অন্য ব্যাংকের প্রধান শেয়ারহোল্ডাররা সাধারনত বড়লোক হওয়ার কারণে, তাদের সিদ্ধান্তের ভালমন্দ বুঝার ক্ষমতা বেশী থাকতে পারে। গ্রামীণের সদস্যরা যেহেতু অশিক্ষিত, গরীব, তাই তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধির ও অন্যদের দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
তাহলে দেখা যাচ্ছে, মালিকানার প্রথম বৈশিষ্ট্য অর্থাৎ আর্থিক লাভ সেটা যে সদস্যরা পাচ্ছেন সে ব্যাপারে খুব একটা দ্বিমত নেই। দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য অর্থাৎ নিয়ন্ত্রণ কতটুকু আছে সেটা নিয়ে দ্বিমত আছে।
২. গ্রামীণ ব্যাংক সরকারের নিয়ন্ত্রণে চলে যাওয়া নিয়ে আমি উদ্বিগ্ন কিন্তু গ্রামীণ ব্যাংকে এতদিন ধরে চলে আসা অনিয়ম নিয়ে আমার মাথাব্যথা নেই কেন?
প্রথমত গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে একটি পূর্নাঙ্গ বিশ্লেষণ দেয়া এই লেখার উদ্দেশ্য ছিল না। এটা শুধুমাত্র নির্দিষ্ট কিছু বিষয় (সুদের হার এবং মালিকানা), যেগুলোতে আমি মনে করি আমার মোটামুটি স্পষ্ট ধারণা আছে, সেগুলো নিয়ে লেখা। উদ্দেশ্য এই বিষয়গুলোতে যদি কারুর ভুল ধারণা থাকে, সেখানে সঠিক তথ্যটা দেয়ার চেষ্টা করা। তাই পর্ব ১.১ এ গ্রামীণের সুদের হার কত, ১.২ এ ক্ষুদ্রঋণের সুদের হার কি কি বিষয়ের উপর নির্ভর করতে পারে, পর্ব ২ এ গ্রামীণের মালিকানা কার কত শতাংশ এবং সেটার পরিবর্তন শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশকে কিভাবে প্রভাবিত করে সেটা বলার চেষ্টা করেছি।
এর বাইরে লেখার টোন থেকে মনে হতে পারে, গ্রামীণ ব্যাংকে সরকারী শেয়ার বাড়ানোর এই আইডিয়াটা আমি খুব একটা পছন্দ করছি না। এটা সত্য, যদিও তথ্য এবং পর্যবেক্ষণ ছাড়া লেখায় আমি আর কিছু দেইনি। টোনটা ব্যক্তিগত মত দ্বারা প্রভাবিত, আপনি চাইলে টোন বাদ দিয়ে শুধু তথ্যটুকু নিতে পারেন। কিন্তু কেন আমি এরকম মনে করি সেটা নিয়েও আলোচনা হতে পারে, যা হয়েছেও। তাই মূল লেখার অংশ না হলেও যে যে অনিয়ম নিয়ে কথা হয়েছে মন্তব্যে এবং সেগুলোর ক্ষেত্রে আমি কেন খুব উদ্বিগ্ন না সেটা বলার চেষ্টা করেছি।
৩। প্যাকেজেস কর্পোরেশনঃ
তথ্যঃ গ্রামীণ ব্যাংকের কার্যক্রম সম্প্রসারণের জন্য যখন অনেক ছাপার কাজ দরকার হচ্ছিল, তখন সেগুলোর সময়মত যোগানের প্রয়োজনে গ্রামীণ ব্যাংকের একটি নিজস্ব ছাপাখানা স্থাপন করার কথা চিন্তা করা হয়। কিন্তু সেটা যেহেতু ব্যয়বহুল, ডঃ ইউনূসের পরিবার তাদের নিজস্ব প্রিন্টিং প্রতিষ্ঠান প্যাকেজেস কর্পোরেশন গ্রামীণ ব্যাংককে ব্যবহার করতে দিতে রাজি হন।
কিন্তু গ্রামীণ ব্যাংকের প্রিন্টিং কাজ পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় টেকনোলজির উন্নয়ন এবং দক্ষতা বাড়ানোর জন্য প্যাকেজেস কর্পোরেশনকে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ৯.৬৬ কোটি টাকা ঋণ দেয়া হয়, যেটা গ্রামীণের ব্যবস্থাপনায় খরচ করা হয়। গ্রামীণ নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় প্যাকেজেস কর্পোরেশন ব্যবহার করে ১৯৯০-১৯৯৭ পর্যন্ত, এই সময়ে প্যাকেজেস এ শুধুমাত্র গ্রামীণের কাজ করা হয় এবং সেই সময়ের আয় বা কোন ভাড়া প্যাকেজেস এর মালিকগন নেননি গ্রামীণ থেকে।
১৯৯৭ এর পর প্যাকেজেস মূল মালিকের কাছে ফিরিয়ে দেয়া হয়। প্যাকেজেস ঋণের টাকা ২০১৫ সালের মধ্যে পরিশোধ করে। এই সময়ে ঋণের প্রকারভেদে ১০% থেকে ১৬% হারে সুদ ধার্য্য করা হয়। তাতে গ্রামীণের মোট সুদ পাওনা হয় ১৮৯.৭৯ লক্ষ টাকা। কিন্তু প্যাকেজেস মোট পরিশোধ করে ১০.১১ কোটি টাকা। এই পর্যায়ে, প্যাকেজেস এর সুদের হার কমিয়ে ৫% এ পুননির্ধারণ করা হয় এবং তাতে আর মাত্র ৭.২২ লক্ষ টাকা পরিশোধ করেই প্যাকেজেস এর সব ঋণ শোধ হয়ে যায়। অর্থাৎ প্যাকেজেস এর কাছে পাওনা সুদের ১৩৬.৪১ লক্ষ টাকা মওকুফ করা হয়।
আমার মতামতঃ এই তথ্যের ভিত্তিতে আমার কাছে মনে হয়নি এখানে কোন অনিয়ম হয়েছে। এভাবে দেখা যায়ঃ
- গ্রামীণ ব্যাংকের লাভঃ প্যাকেজেস কর্পোরেশন ৭ বছর বিনা ভাড়ায় বিনা লভ্যাংশ পরিশোধে ব্যবহার করার সুযোগ।
- গ্রামীণ ব্যাংকের ক্ষতিঃ ১৩৬.৪১ লক্ষ টাকা।
- প্যাকেজেস কর্পোরেশনের লাভঃ ৯.৬৬ কোটি টাকা মূল্যের কারিগরি উন্নতি।
- প্যাকেজেস কর্পোরেশনের ক্ষতিঃ ১০.১৮ কোটি টাকা ঋণ পরিশোধ এবং ৭ বছরের ভাড়া অথবা মুনাফা যেটা গ্রামীণ ব্যাংককে ব্যবহার করতে না দিলে প্যাকেজেস কর্পোরেশন করতে পারত।
আমার কাছে মনে হয়নি, এখানে নিশ্চিতভাবে বলা যায় যে এটা গ্রামীণ ব্যাংকের জন্য ক্ষতি ছিল অথবা প্যাকেজেস কর্পোরেশনের জন্য লাভ ছিল। এটা একটা ইনফরমাল এরেঞ্জমেন্ট ছিল যেটা পরবর্তীতে পুনর্বিবেচনা করার দরকার পড়েছিল কোন কারণে। অনেকভাবেই এরকম পরিস্থিতি তৈরী হতে পারে। একটা সহজ কারণ হতে পারে, প্যাকেজেস কর্পোরেশনের ১৯৯৭ এর অবস্থা ৯.৬৬ কোটি টাকা পূর্ণ সুদে পরিশোধ করতে পারার মত না হতে পারে। সেক্ষেত্রে গ্রামীণের প্রয়োজনে ডঃ ইউনূস এর পরিবারকে প্যাকেজেস এর লাভ এবং ভাড়া স্যাক্রিফাইস করার পরেও নিজের পকেট থেকে টাকা দিতে হত। এরকম পরিস্থিতি হলে সেই অতিরিক্ত চার্জ মওকুফ করাই স্বাভাবিক। শুধু গ্রামীণ ব্যাংক নয়, যেকোন প্রতিষ্ঠানেই তাদের সামগ্রিক কার্যক্রমে এধরনের অনেক পরিস্থিতি মোকাবেলা করা স্বাভাবিক, এবং সেটার ভালমন্দ সেই পরিস্থিতি অনুযায়ীই বিবেচনা করতে হবে।
এটা আমার মত। ভিন্নমত থাকতে পারে। এটাকে একটা বড়সড় দুর্নীতি মনে করতে পারেন কেউ, যেটা অনেক কমেন্টে উঠে এসেছে। সঠিক আর পূর্নাংগ তথ্যের উপর ভিত্তি করে হলে কোন মতকেই ভুল বলার উপায় নেই মনে হয়।
৪। গ্রামীণ ফান্ড এবং গ্রামীণ কল্যাণঃ এ দুটো প্রতিষ্ঠান নিয়ে কথা বলার মূল কারণ গ্রামীণ নামধারী অন্যান্য সকল প্রতিষ্ঠান এই দুটি প্রতিষ্ঠানের সাথে কোন না কোনভাবে সম্পর্কিত এবং এ দুটো প্রতিষ্ঠানই শুধুমাত্র গ্রামীণের বিশেষ ফান্ডের টাকা আলাদা করার মাধ্যমে তৈরী করা হয়েছে।
তথ্যঃ ১৯৮০ সালে গ্রামীণ Studies, Innovation, Development and Experimentation (SIDE) নামে একটি প্রকল্প গ্রহণ করে যেটির উদ্দেশ্য ছিল দারিদ্র্য বিমোচনে বিভিন্ন নতুন উপায় নিয়ে গবেষণা করা এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো। এবং এটার জন্য দাতাসংস্থার কাছ থেকে ফান্ড সংগ্রহ করা হয়েছিল যেটা Social Venture Capital Fund (SVCF) নামে আলাদা রাখা হয়েছিল। যেহেতু এই প্রকল্পের অধীনে বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ প্রজেক্ট নেয়া হত তাই দাতাসংস্থা সুপারিশ করে এই ফান্ড দিয়ে আরেকটি নতুন প্রতিষ্ঠান তৈরী করতে যাতে ঝুঁকিপূর্ণ প্রজেক্টের লাভ-লোকসান থেকে গ্রামীণ ব্যাংক মুক্ত থাকে। এই সুপারিশ অনুযায়ী গ্রামীণের বোর্ড এবং সরকারের অনুমোদন সাপেক্ষে SVCF এর ৪৯.১০ কোটি টাকা দিয়ে গ্রামীণ ফান্ড প্রতিষ্ঠিত হয়।
একইভাবে দাতাসংস্থার আরেকটি ফান্ড SAF (Social Advancement Fund) থেকে ৪৪.২৫ কোটি টাকা নিয়ে গ্রামীণ কল্যাণ প্রতিষ্ঠিত হয়।
আমার মতামতঃ উপরের তথ্য অনুযায়ী গ্রামীণ ফান্ড এবং গ্রামীণ কল্যাণ তৈরী করার ক্ষেত্রে অনিয়ম হয়েছে বা শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থ ক্ষুন্ন হয়েছে বলে আমি মনে করিনা। সেই সময়ে দাতাসংস্থা শুধুমাত্র ক্ষুদ্রঋণ প্রোগ্রামের জন্য টাকা দিয়েছে মনে করার কোন কারণ নেই। যখন ক্ষুদ্রঋণ ও প্রথমদিকে পরীক্ষামূলকই ছিল, তখন দারিদ্র্য বিমোচনের অন্যান্য উপায় নিয়ে ও দাতাসংস্থার আগ্রহ থাকতে পারে। এবং সেই প্রোগ্রামগুলোকে গ্রামীণের অধীনে রাখলে গ্রামীণকে ঝুঁকির মধ্যে রাখা হত। এখন এসব প্রতিষ্ঠানের অনেকগুলোই সফল হয়েছে, তাই আমরা ভাবছি এগুলোও গ্রামীণ ব্যাংকের অধীনে থাকলেই ভাল ছিল। কিন্তু উল্টোটা চিন্তা করুন, এসব প্রজেক্ট ব্যর্থ হলে সেটা ও গ্রামীণ ব্যাংককে বহন করতে হত। গ্রামীণ ফোনে বিনিয়োগ করার জন্য গ্রামীণ টেলিকম ১১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ করে (অন্যান্য ঋণের সাথে), গ্রামীণ টেলিকম যদি এটা পরিশোধ না করতে পারত, তাহলে গ্রামীণ টেলিকম দেউলিয়া হয়ে যেত। কিন্তু গ্রামীণ টেলিকম যদি গ্রামীণ ব্যাংকের অধীনে থাকত তাহলে গ্রামীণ ব্যাংককে হয় এটা শোধ করতে হত, অথবা দেউলিয়া হয়ে যেতে হত। তাই এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে আলাদা করার মাধ্যমে এগুলোর রিস্ক এবং রিটার্ন দুটো থেকেই গ্রামীণ ব্যাংক মুক্ত থাকছে।
তবে এসব প্রতিষ্ঠানের জন্য ছোটখাট ঋণের গ্যারান্টি গ্রামীণ দিয়েছে (পথিক পরাণকে ধন্যবাদ এটা ধরিয়ে দেয়ার জন্য)। যেটার সর্বোচ্চ সীমা ছিল ২৫ কোটি টাকা। এবং রিভিউ কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী এরকম গ্রামীণ নামধারী চারটি প্রতিষ্ঠানের ঋণের বিপরীতে গ্রামীণ ব্যাংক মোট ৫৪.৫০ কোটি টাকার গ্যারান্টর হয়েছিল। এটা গ্রামীণ ব্যাংক না হয়ে কৃষি ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক বা ডাচ-বাংলা ব্যাংক হতে পারত। কিন্তু গ্রামীণ ব্যাংক যে হয়েছে তার কারণ অবশ্যই ডঃ ইউনূস। ডঃ ইউনূস বিদেশ থেকে যখন ফান্ড, ঋণ বা গ্যারান্টি কালেক্ট করেন তখন ও ব্যক্তিগত যোগাযোগই মূল ভূমিকা পালন করে। এক্ষেত্রেও আমি মনে করি তাই কাজ করেছে। ঐ প্রতিষ্ঠানগুলো যেহেতু ডঃ ইউনূসের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত এবং গ্রামীণ ব্যাংকেই তার সবচেয়ে বেশী ব্যক্তিগত যোগাযোগ থাকার কথা, তাই গ্যারান্টর এর প্রয়োজনে গ্রামীণ ব্যাংক এর কথাই সবার আগে আসার কথা। এসব গ্যারান্টির অনেকগুলোর ক্ষেত্রে গ্রামীণ ব্যাংক সার্ভিস চার্জ ও নিয়েছে। এটা কোনভাবেই মালিকানা বা পূর্ন ঝুঁকি বহন করার সাথে তুলনীয় নয়। আমার মনে হয়, ব্যক্তি ডঃ ইউনূসের খ্যাতির কারণে দেশের বা বিদেশের অন্য কোন ব্যাংক ও এই ৫৪.৫০ কোটি টাকার গ্যারান্টর হতে পারত। এবং দেশের অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান এরকমভাবে অন্য প্রতিষ্ঠানের জন্য গ্যারান্টর হয়েছে এমন উদাহরণ পাওয়া দুষ্কর হওয়ার কথা না।
আবারো, এটা আমার ব্যক্তিগত মতামত। অনেকের মতে এভাবে অবৈধ সুবিধা নেয়া হয়েছে এবং শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থ ক্ষুন্ন করা হয়েছে।
৫। অন্যান্য প্রসঙ্গঃ এছাড়াও আরো অনেক প্রসংগ উঠে এসেছে আলোচনায়। যেমন ডঃ ইউনূসকে পাবলিক সার্ভেন্ট হিসেবে বিবেচনা করা যায় কিনা। একজন পেনাল কোডের ধারা উল্লেখ করে জানিয়েছেন সেই ধারা অনুযায়ী ডঃ ইউনূস একজন সরকারী কর্মকর্তা। তাই তিনি ব্যক্তিগতভাবে যেসব লিমিটেড বাই গ্যারান্টি প্রতিষ্ঠানের গ্যারান্টর, সেটা অবৈধ। সে হিসেবে প্রতিবার সরকারী অনুমতি না নিয়ে উনার বিদেশ ভ্রমন অবৈধ, গ্রামীণ ব্যাংক ছাড়া অন্য প্রতিষ্ঠানে লাভজনক/অলাভজনক পদ হোল্ড করা অবৈধ, নিজের পেশা হিসেবে গ্রামীণ ব্যাংকের ম্যানেজিং ডিরেক্টর না বলে প্রফেসর বলা অবৈধ। এসবই উঠে এসেছে গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে রিভিউ কমিটির রিপোর্টে।
আমার মতে, গ্রামীণ ব্যাংক যদি সরকারী ব্যাংকের মত করে চালানো হত প্রথম থেকে, তাহলে গ্রামীণ আজকের অবস্থানে হয়তো থাকতে পারত না। সেটা মনে করার কারণ অন্যান্য সরকারী ব্যাংকের দৈন্যদশা এবং সম্পূর্ণ ব্যতিক্রমী এবং ঝুঁকিপূর্ন এক ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করেও গ্রামীনের সাফল্য (পর্ব ১.২)। তাই গ্রামীণ ব্যাংকের ক্ষেত্রে যদি সরকারী সব নিয়ম কানুন প্রযোজ্য হয় আইন অনুযায়ী, তাহলে গ্রামীণ অধ্যাদেশ সংশোধন করে গ্রামীণকে সরকারী লালফিতার দৌরাত্ম থেকে মুক্ত করা উচিত, যেখানে ম্যানেজিং ডিরেক্টরের প্রতিবার বিদেশ ভ্রমনে সরকারের অনুমতি নিতে হবে না। নজরদারী বাড়ানো হোক, যাতে কোন খারাপ সিদ্ধান্ত আসতে না পারে বোর্ড থেকে। নির্বাচিত প্রতিনিধিদের জন্য দরকার হলে পরামর্শক নিয়োগ করা হোক, যাতে তাঁরা প্রভাবমুক্ত হয়ে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন কিনা সেটা নিয়ে চিন্তা করতে না হয়।
অবশ্যই সবাই একমত হবেন না আমার সাথে। সরকারী আর বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে বিতর্কে ও যেতে চাই না এখন। এটা অনেক ইনভলভড একটা ইস্যু। আমার উপরের মতামত কোন ধরনের চিন্তা থেকে আসা, সেটা বলার চেষ্টা করলাম।
ইউনূস সেন্টারকে ফ্লোর ভাড়া দেয়া ও এসেছে দু’একটা মন্তব্যে। ভিন্নমত থাকতে পারে, কিন্তু অনেকের কাছেই গ্রামীণ ব্যাংক ডঃ ইউনূসের হাতে গড়া নোবেলজয়ী প্রতিষ্ঠান। সেখানে ডঃ ইউনূসের চিন্তাভাবনা, গবেষণা এবং কাজের সুবিধা এবং প্রচারের জন্য একটা ফ্লোর স্থায়ীভাবে বরাদ্দ করা খুব বেশী করা হয়েছে বলে মনে করিনা।
এই ইস্যুগুলোকে আমি যেভাবে দেখেছি, তার চেয়ে ভিন্নভাবে দেখার সুযোগ অবশ্যই আছে, অনেকেই দেখছেন ও। কিন্তু অনেক সময়ই সেটা সত্য এবং তথ্য ছাড়িয়ে অনেক দূরে চলে যায়। গ্রামীণ ব্যাংকের সুদের হার ৭০% হয়ে যায়, ডঃ ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংকের মালিক হয়ে যান, হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির কথা চলে আসে। তাই, অনুরোধ থাকবে যেকোন ইস্যুতে মতামত তৈরী করার আগে তথ্যগুলো জানুন, তারপর আপনার মত করেই উপসংহারে আসুন। সেই উপসংহার হয়তো আমার সাথে মিলবে না, কিন্তু আমরা সবাই ই লাইনে থাকব তখন। আমাদের মন্তব্য পড়লেও অন্যরা বুঝতে পারবেন কে কোন লাইন থেকে কথা বলছেন। অনেক ধন্যবাদ।
সুহাস শিমন
[সূত্র]
গরিব মালিকদের নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে ইউনূস এতো দুশ্চিন্তিত কেন?
[সূত্র]
গ্রামীণ ব্যাঙ্কে নির্বাচন কমিশন হলে গ্রামীণ ব্যাঙ্ক ধ্বংস হবে কেন?
আপনি দুশ্চিন্তিত নন কারণ আপনি মনে করেন আগে গ্রামীণ ব্যাংকে অনিয়ম হয়েছে, তাই এখন ব্যবস্থাপনা, মালিকানা, নির্বাচন পদ্ধতি ইত্যাদি পরিবর্তন হলে অনিয়ম কমতে পারে। ডঃ ইউনূস মনে করতে পারেন, গ্রামীণ ব্যাংকে অনিয়ম হয়নি এতদিন, দক্ষ ব্যবস্থাপনার ফলে গ্রামীণ আজ একটি সফল প্রতিষ্ঠান। সেখানে পরিবর্তন আনতে গেলে বরং সেই সাফল্যের ধারা অব্যাহত না থাকতে পারে। গ্রামীণ ব্যাংকের নিজস্ব নির্বাচনী আইন আছে, নির্বাচন কমিশন ও আছে, যার মাধ্যমে নির্বাচন হয়। প্রচলিত সিস্টেম যদি কেউ যথাযথ মনে করেন, তাহলে সেটাকে পরিবর্তন করে সরকারী কর্মকর্তার মাধ্যমে নির্বাচন করা তো অদ্ভুত সিদ্ধান্ত মনে হতেই পারে।
সুহাস শিমন
সরকারি কর্মকর্তার মাধ্যমেই হোক আর গ্রামীণ ব্যাঙ্কের নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমেই হোক, সেই তো গরিব মালিকদের পক্ষ থেকেই ৯ জন নির্বাচিত হবেন। এতে করে ব্যাঙ্ক কেন ধ্বংস হবে?
গ্রামীণ ব্যাঙ্কে বিধিনির্ধারিত বয়স অতিক্রান্ত হয়ে যাবার পরও দশ বছর ব্যবস্থাপনা পরিচালকের গদি ধরে পড়ে থাকাটা যদি অদ্ভুত না হয়, তাহলে এটা কেন অদ্ভুত?
আমার মনে হয় একই জিনিস নিয়ে বারবার কথা বলছি আমরা। ডঃ ইউনূসের কাছে যেটা অদ্ভুত, সেটা আপনার কাছে অদ্ভুত মনে না হতে পারে। আবার আপনার কাছে যেটা অদ্ভুত, সেটা অন্য কারু কাছে অদ্ভুত মনে না হতে পারে। আর ব্যাংক ধ্বংস হওয়ার কথা মনে হয় ডঃ ইউনূস আরো আগে থেকে বলে আসছেন, সেটা শুধুমাত্র নির্বাচন পদ্ধতির পরিবর্তনের কারণে না মনে হয়। কিন্তু যে যে পরিবর্তনের সম্ভাব্যতায় ডঃ ইউনূস মনে করছেন, গ্রামীণ ব্যাংক ধ্বংস হয়ে যেতে পারে, সেই একই পরিবর্তন হয়তো আপনার কাছে কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন, গ্রামীণ ব্যাংককে ধ্বংসের মুখ থেকে টেনে তোলার উপায়। এটা সাবজেক্টিভ, আপনার চিন্তার উপর নির্ভর করছে।
সুহাস শিমন
না, সবকিছু সাবজেক্টিভ নয়। ৫৮ লক্ষ মালিক থেকে ৯ জন মালিক নির্বাচিত হয়ে পরিচালনা পর্ষদে যোগ দিলে গ্রামীণ ব্যাঙ্ক আগে যখন ধ্বংস হয়নি, এখন ধ্বংস হয়ে যাবে কেন, সেটার পেছনে তথ্যসমর্থিত যুক্তি আছে নিশ্চয়ই। সেটা আপনি বা ইউনূস বোঝাতে না পারলে সমস্যা নেই অবশ্য।
ইউনূসের যে দুশ্চিন্তার প্রতিধ্বনি আপনার লেখাতে পাচ্ছি, সেটি ছিলো সরকারকে নিয়ে। গ্রামীণ ব্যাঙ্কের দরিদ্র মালিকদের মধ্যেও ৯ জন যে এখন ব্যাঙ্কটির জন্যে হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে, সেটা আজ ইউনূসের কথায় প্রকাশ পেলো।
হিমু ভাই এবং সুহাস ভাই, আপনাদের এইঅংশের কথোপকথন থেকে যেটা বের হল তা হল:
১: সরকার চায় নির্বাচন নিজের তত্ত্বাবধানে করতে।
২: ইউনূস সাহেব সরকারের এই তত্ত্বাবধান পছন্দ করছেন না (উনি , খুব সম্ভব, ইলেকশনে হস্তক্ষেপ হবে এরকম শংকা করছেন)
গ্যালরিতে বসলাম
তবে, আসল ফলাফল দেখার জন্য মনে হয় অনেক সময় অপেক্ষা করতে হবে।
তাই, অনেক পপকর্ন নিয়ে গ্যালারিতে বসলাম। (পপ্পন) (পপ্পন)
গ্রামীণ ব্যাঙ্ক নিয়ে হাউকাউ হওয়ার সুবিধাটা কি জানেন? গ্রামীণ টেলিকমের প্রসঙ্গটা ধামাচাপা পড়ে যায়। তাদের ওয়েবসাইট বলছে এখনও সেটার চেয়ারম্যান ইউনূস। ভবিষ্যতে কোনো সামাজিক ব্যবসার জন্যে গ্যারান্টি দিতে গেলে হয়তো গরিবের মুখের দিকে তাকিয়ে উনি না করতে পারবেন না।
আমাদের দেশে কেউ ক্ষমতা ছাড়তে চান না। না আমাদের নেতারা, না প্রফেসর ইউনূস। আমাদের এখানে কেউ-ই প্রাতিষ্ঠানিকতায় বিশ্বাসী নন। প্রফেসর ইউনূস কেন স্বেচ্ছায় আরও আগেই তার উত্তরসূরী তৈরি করে দায়িত্ব হস্তান্তর করেননি??????
ধরা যাক, সরকার তাকে রেখে দিল। কিন্তু কালই যদি হার্ট-অ্যাটাকে তাঁর মৃত্যু হয়- তাহলে গ্রামীণ ব্যাংকের কী হবে?
পশ্চিমা দেশগুলোর দিকে তাকান। ওখানে সবাই নিজের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে অবসরে যান। বাংলাদেশে সবাই আমৃত্যু ক্ষমতায় থাকতে চান। কী হাসিনা-খালেদা, কী প্রফেসর ইউনূস….
আপনার মন্তব্যটা এক কথায়: কালজয়ী
নতুন মন্তব্য করুন