ছবিব্লগঃ আমার উত্তরবাংলা ২

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: সোম, ১২/০৮/২০১৩ - ১০:৩৯অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

মেলায় যাবেন? আরে, নানা, এক্সপো-টেক্সপো নয়। এ হল গিয়ে আপনার রাসমেলা। বাংলা অঘ্রান মাসের পূর্ণিমা তিথিতে শুরু হয়ে টানা পনের দিন। তারপর ভাঙা মেলা তো আছেই। না, ভাঙা মেলা থাক। আজ বরং একটা গোটা মেলার গল্প শোনাই। গল্প অল্পই আছে, সাথেথাক কাঁচা হাতের ক-খান হাতেগরম ছবি।

আমার জন্ম কোচবিহার জেলায়। সেখানেই ছেলেবেলা, মাঝারিবেলা, স্কুল, কলেজ, সব স-ব কিছু। তো আমাদের শহরেই যখন মেলা, তাও আবার টানা প নে র দিন ধরে, উত্তেজনাটা, বিশেষ করে যখন একেবারেই পুচকি, পুচকি কেন, বড় হবার পরও কি সেই উত্তেজনা-উন্মাদনা কিছু কম পরিয়াছে? একেবারেই নয়। বরং এখন তো একটা চাপা কলার উচু ভাব চলে এসচে। কেউ যদি অন্য কোন মেলার কথা বলে, ইয়ে নিতে চায়, সাথে সাথে পাটকেলটি ছুড়ে দি – আরে ধুর, আমাদের রাসমেলার কাছে এ মেলা নস্যি... আর যদি কেউ তর্ক জোড়ে, কি আছে তোর, তোদের রাসমেলায়? কি বলব? কোন টু-দ্যা-পয়েন্ট আনসার হয় কি? জানা নেই আমার। মস্তিষ্কের আনাচে কানাচে ভীড় করে হাজারো স্মৃতি, ভাল্লাগা, ছোটবেলার মান অভিমান আরো কত কিছু।

বাদ দিন তো। ওসব গল্প মেরে লাভ নেই। ওসব স্মৃতিমেদুরতা সবারি থাকে কমবেশি। তারচেয়ে বরং ক-খানা কথা সেরে নি। এই রাসমেলার অনুষ্ঠিত হয় কোচবিহার শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত মদনমোহন ঠাকুরের মন্দির চত্তরে। আবার পুচকি একখানা যায়গা ভেবে বসবেন না যেন। এক দিনে হেটে গোটা মেলা ঘোরাটা... পারবেন না, তা নয়, তবে চাপের। তো এই মদনমোহন ঠাকুর ছিল কোচবিহারের রাজপরিবারের কূলদেবতা। অষ্টাদশ শতকের শেষলগ্নে নির্মিত এই মন্দিরকে কেন্দ্র করে সেই তখন থেকেই জমাটি রাসমেলা।

সময়ের সাথে মেলাও বদলেছে নিজের নিয়মে। রঙের পরশ পরেছে, আরো রঙিন করে সাজিয়েছে সে। তবে যেটা ভালো লাগে আমার – রাসচক্রড়া। মনদিরের
পাশেই বাঁশ আর কাগজ দিয়ে বানানো বিশালাকার একটা চক্র, যেটার হাতল ধরে সবাই বাইবাই ঘোরায় রাস। ছোটবেলা সবাই বাবার কাধে চাপে রাস ঘোরানোর জন্য, পরে তারা আবার তারাও কাধে নেয় পরের প্রজন্মকে। আরেকটা ব্যাপার। মন্দির চত্বরে যেমন কীর্তন, পালাগান, যাত্রার আসর, আবার মেলার মাঝে অন্য একটি মঞ্চ আছে যেখানে প্রতিদিন বাংলা ব্যান্ড থেকে কুমার শানু লাইভ, স ব। তাও যদি পছন্দ না হয়, তাহলেও অনেক অপশন খোলা। কি চাই? সার্কাস, চিত্রহার, হরেক কিসিমের নাগরদোলা, ম্যাজিক, দুটো/তিনটে মাথাওয়ালা মানুষ, মৃত্যুকূপ... আর যদি মনে হয়, ধুর, আগে কেনাকাটা করি, তারপর; তাহলে তো কথাই নেই। কি কিনবেন? থাক, আর লিস্ট বড় করার কোন অর্থ হয় না। ঘোরাফেরা, কেনেকাটা অনেক হল। এবার পেট্টা একটু ইয়ে করছে, তাই না? কি খাবেন বলুন? রাসমেলা খ্যাত জিলিপি? নাকি ঢাকাই পরোটা (ইয়া বড় সাইজের, খাস্তা)। ও মিষ্টি ভক্ত নন? তাহলে চাইনিস, কিংবা চাট? নাহলে রাস্তার ধারের এটা ওটা। আর খাওয়ার পর বেনারসী পান না চিবোলে মেলা মাটি।

না অনেক বকবক করে বোর করে দিলাম। এবার ছবি। ছবিগুলো ক-বছরের পুরোনো। নিতান্ত কাঁচা হাতের ছবি। তাই...

১) রাসচক্রঃ
IMG_0692

২) ভক্ত (মদনমোহন মন্দিরে)ঃ
DSCN1042

৩) বিগ্রহঃ
DSCN1041

৪) ক্লিকঃ
IMG_0636

৫) পূতনা রাক্ষসীঃ
DSCN1038

৬) দুরন্ত ঘূর্নীর ১ঃ
IMG_0594

৭) দুরন্ত ঘূর্নীর ২ঃ
IMG_0603

৮) মেলা মগডালঃ
DSCN1026

৯) সুখটানঃ
IMG_0587(বিধিস্মমত সতর্কীকরণঃ ধূমপান ক্যান্সারের কারন)

১০) বিকিকিনিঃ
IMG_0672

১১) রেশম শিল্পঃ
DSCN1018

১২) ফুঃ ঃ
DSCN1021

সবশেষে একটা ভিডিও। টুকরো কিছু ক্লিপিং জোড়াতাপ্পি মেরে বানানো; পাতে দেবার মত না জেনেও তুলে দিলাম।

ভিডিও লিঙ্ক: এখানে

আগের পর্বঃ এখানে

# দীপালোক

# ইমেলঃ

**********************************************************

পুরোনো লিস্টি –
১) যে ছবি দেখলামঃ বারান
২) ছবি ব্লগঃ তিস্তা পারের বৃত্তান্ত
৩) [url= http://www.sachalayatan.com/guest_writer/44998]রিকিসুমের ডায়েরী[/url]
৪) [url= http://www.sachalayatan.com/guest_writer/48755]ছবিব্লগ ঃ জুলুকের চিঠি[/url]
৫) [url= http://www.sachalayatan.com/guest_writer/43832]অনুগল্পঃ হুতুম্বা[/url]
৬) অনুগল্পঃ জেদাজেদি
৭) অনুগল্পঃ রাশিফল
৮) অনুগল্পঃ গিরগিটি


মন্তব্য

মৃষৎ এর ছবি

চলুক চলুক

দীপালোক এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা- আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

সৌরভ কবীর এর ছবি

চলুক চলুক
যাবো। সম্ভব হলে মগডালে বসেই আপনাদের মেলা দেখবো।

__________________
জানি নিসর্গ এক নিপুণ জেলে
কখনো গোধূলির হাওয়া, নিস্তরঙ্গ জ্যোৎস্নার ফাঁদ পেতে রাখে

দীপালোক এর ছবি

স্বাগতম। হাসি

মেঘা এর ছবি

বাহ্‌ চমৎকার। ছবিগুলো দেখে গেলাম। ছোটবেলায় আব্বুর সাথে মেলায় গিয়েছিলাম। বড় হবার পর থেকে বইমেলা ছাড়া আর কোনো মেলায় যাওয়া হয় না অতিরিক্ত ভীড়ের কারণে। আর বাড়ি থেকে ছাড়তেও সাহস পায় না। তাই আর যাওয়া হলো না। তবে ছবি দেখে বেশ যেতে ইচ্ছে করছে।

--------------------------------------------------------
আমি আকাশ থেকে টুপটাপ ঝরে পরা
আলোর আধুলি কুড়াচ্ছি,
নুড়ি-পাথরের স্বপ্নে বিভোর নদীতে
পা-ডোবানো কিশোরের বিকেলকে সাক্ষী রেখে
একগুচ্ছ লাল কলাবতী ফুল নিয়ে দৌড়ে যাচ্ছি

দীপালোক এর ছবি

চলে আসুন। হাসি
আর হারিয়ে গেলে নও চিন্তা। মাইকে সমানে ফুকে যাবেঃ 'মেঘা বলে একজনকে পাওয়া গেছে। তাঁর সাথে যদি কেউ থেকে থাকে ...' বেশ মজা হবে তাই না? জানেন, ছোটবেলায় হারিয়ে যাওয়া নিয়ে ভীষন ফ্যান্টাসি ছিল। খালি ভালতাম, হারিয়ে গেলেই মাইকে অ্যানাউন্স।

অতিথি লেখক এর ছবি

আর ক‌য়েকটা পর্বের পরে রাসমেলায় যাওয়ার হিসাব করছিলাম। কিন্তু সে হল প্রায় অর্ধ শতাব্দী আগের কোচবিহারে। খুব আগ্রহ ছিল জানবার যে রাসমেলা আজ কেমন হয়েছে। আপনার লেখা আর ছবি থেকে সুন্দর ধারণা পাওয়া গেল। মন ভরে গেল।
- একলহমা

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-
সময় সুযোগ মতো একবার চট করে এসে ঘুরে যান, দেখে যান কতটা বদলেছে আমাদের রাসমেলা।
- দীপালোক

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

কয়েকটা ছবি চমৎকার। কিন্তু কয়েকটাতে ব্যাকগ্রাউন্ডে আলোটা কেমন জানি লেপ্টে গেছে, যেমন ৫,৮,৯, ১২। ছবিতে নয়েজও বেশ বেশি, সম্ভবত আইএসও বেশি ছিল রাতের কারণে। লেখালেখি চলুক, ছবিতোলা চলুক।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ।
ছবিগুলোর ব্যাপারে ঠিকি বলেছেন। রাতের ছবি তুলতে গেলে একটু ক্যারামতি না জানলে কেচে যাবার প্রবল সম্ভাবনা। আসলে তখন প্রথম ক্যামেরা কিনেছি। অটো মোড ছাড়া কিছুই জানিনা। তাই বলে এটা আবার ভেবে বসবেন না, এখন সব জেনে বসে আছি। হাসি
- দীপালোক

শুভায়ন এর ছবি

হাততালি

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

অতিথি লেখক এর ছবি

মেলা সবসময় ভালো লাগে। ছোট থাকতে যেকোন মেলা হলেই দেখতে যেতাম। এখন আর আগের মতো সময় পাই না।
চলুক আপনার লেখা।

-এস এম নিয়াজ মাওলা

অতিথি লেখক এর ছবি

আসলে কিবিকিনির পরিধি বেড়েছে। ক্রেডিট কার্ডের নম্বর দিয়েই দমাদম কিনে ফেলছি এটা সেটা। কিন্তু মেলায় দরদাম করে (অ)প্রয়োজনীয় জিনিষ কেনায়, বা না কিনলেও চোখ দিয়ে চেখে দেখার মধ্যে এক নির্ভেজাল আনন্দ আছে, কি বলেন ?
- দীপালোক

তীর্থ চক্রবর্তী এর ছবি

চলুক

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

দুর্দান্ত!

প্রফেশনালদের তোলা ছবি বা ডকুর চেয়ে এই অ্যামেচার ছবি আর ডকু মন্দ লাগে না। আগামী বারে সম্ভব হলে আরেকটু ডিটেইলে কাজ করবেন - লেখা, ছবি, মুভি সব।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

দীপালোক এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-
আসলে যেকোন কাজেই হোমওয়ার্কের দরকার। সেটা বোঝা যায়, বুঝতে পারি, কাজটা খতম হবার পর, যখন এডিটিং এর আর কোন সুযোগ থাকে না। হাসি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।