প্রসঙ্গঃ হেফাজতে ইসলামের ৫ই মে’র সমাবেশ

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: সোম, ১৯/০৮/২০১৩ - ৩:০৫অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

৫ই মে, ২০১৩-তে ঢাকার মতিঝিলে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশকে কেন্দ্র করে ঘটে যাওয়া ঘটনাসমূহ সংশ্লিষ্ট কিছু বিষয় আমরা ভুলে যাবার আগে লিখে রাখাটা দরকার বলে মনে করছি।

৫ই মে-তে গোলযোগের আশংকায় আমাদের অফিস বন্ধ ছিল। তাই সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত সময় কেটেছে টিভি দেখে ও ফোনে খোঁজখবর নিয়ে। এই সময় টিভিতে যা দেখতে পাই ও বিভিন্ন জনের কাছ থেকে যা শুনতে পাই (এই শোনা কথাগুলো তখনকার সংবাদ প্রতিবেদনগুলোতেও পাওয়া যাবে) এবং ৬ই মে সকাল ৯টায় কাকরাইল, বিজয়নগর, পুরানা পল্টন, বায়তুল মোকাররম, দৈনিক বাংলা, মতিঝিল, দিলকুশা এলাকায় গিয়ে যা দেখতে পাই সেগুলো হচ্ছেঃ

১. হেফাজতের আক্রমণে পুলিশ সদস্য নিহত হওয়া। ২০১২ সাল থেকে যখন জামায়াত-শিবিরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারবিরোধী আন্দোলন সহিংস হয়ে ওঠে, তখন থেকে প্রতিটি হরতাল বা ধরপাকড়ের ঘটনায় পুলিশের ওপর হামলা ও হত্যা করার ঘটনা আমরা দেখতে শুরু করি। আওয়ামী লীগ-বিএনপি কয়েক দশক ধরে রাজপথের আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত থাকলেও তাদের কর্মী-সমর্থকদের হাতে পুলিশ হত্যা বা পুলিশকে দলবদ্ধভাবে আক্রমণ করার ঘটনা আমরা কখনো দেখেনি। এখনো পর্যন্ত আওয়ামী লীগ-বিএনপি’র কর্মী-সমর্থকদের দৌড় পুলিশের প্রতি ঢিল ছোঁড়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। হেফাজতের হাতে দফায় দফায় পুলিশের খুন হবার ঘটনা এটা ইঙ্গিত করে যে হেফাজতের কিছু কর্মী বা তাদের মধ্যে থাকা কেউ কেউ পুলিশকে আক্রমণ করা ও হত্যার ব্যাপারে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। হেফাজত কখনোই এটা ব্যাখ্যা করেনি কীভাবে তাদের হাতে পুলিশ বা বিজিবি’র সদস্যরা মারাত্মকভাবে আহত হয়েছে বা নিহত হয়েছেন। পুলিশ এবং বিজিবি উভয়ই রাষ্ট্রের এক একটি প্রতিষ্ঠান। রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বা সহিংস আক্রমণ চালানো রাষ্ট্রবিরোধী কর্ম। যারা এই রাষ্ট্রের অস্তিত্ত্ববিরোধী তাদের পক্ষেই এটা করা সম্ভব। স্মর্তব্য, ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাতেও পাকিস্তানীবাহিনী এদেশের পুলিশ ও বিজিবি (তৎকালীন ইপিআর)-র ওপর সশস্ত্র হামলা চালিয়েছিল।

২. পল্টন ময়দান, বঙ্গবন্ধু এভিনিউ, গুলিস্তান চত্ত্বর, বায়তুল মোকাররমের উত্তর, দক্ষিণ ও পূর্ব গেট এলাকায় রাজনৈতিক সভাসমাবেশ, মিছিল, অবরোধ, অবস্থান কর্মসূচী বহু বহু কাল ধরে একটি স্বাভাবিক ঘটনা। অত্র এলাকায় অনুষ্ঠিত রাজনৈতিক কর্মসূচীতে সহিংস ঘটনা যে কখনো ঘটেনি তা নয়। মোশতাকের জনসভায় গ্রেনেড ও বোমা হামলা, সিপিবি’র জনসভায় বোমা হামলা, শেখ হাসিনার জনসভায় গ্রেনেড হামলা’র মতো বড় ঘটনাগুলোর কথা আমরা সবাই জানি। এছাড়া এরশাদের আমলে জিহাদ হত্যা বা নূর হোসেন হত্যার মতো ঘটনাও এই এলাকাতেই হয়েছে। সর্বশেষ ২০০৬ সালের অক্টোবরে গুলিস্তান এলাকায় কয়েকদিন ধরে চলা সহিংসতার কথাও আমাদের মনে থাকার কথা। এতসব ঘটনায় এই এলাকায় যে ব্যাপারগুলো এখানে কখনো ঘটেনি কিন্তু হেফাজতের ৫ই মে’র কর্মসূচীর সময়ে ঘটেছে সেগুলো হচ্ছেঃ

২.১. বায়তুল মোকাররমের স্বর্ণের দোকানগুলোতে হামলা,লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ।
২.২. এই এলাকার ফুটপাথে থাকা হকারদের দোকানগুলো হামলা,লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ।
২.৩. বায়তুল মোকাররম মসজিদে ভাঙ্গচুর ও অগ্নিসংযোগ।
২.৪. বইবিক্রেতাদের ক্বোরআন ও ইসলামী পুস্তকাদি পোড়ানো।
২.৫. স্টেডিয়াম আক্রমণ,প্রেসবক্স ভাঙচুর,অ্যাথলেটিক টার্ফ ও গ্যালারীতে অগ্নিসংযোগ।
২.৬. গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পরিবহন পুলের গাড়িতে গণহারে অগ্নিসংযোগ।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়েও এই ঘটনাগুলোর সবগুলো ঘটেছে কিনা সন্দেহ আছে। এই ঘটনাগুলো থেকে আক্রমণকারীদের রাষ্ট্রবিরোধী,জনবিরোধী ও ইসলামবিরোধী চরিত্র স্পষ্ট। এই ব্যাপারগুলো নিয়েও হেফাজতের ব্যাখ্যা নেই। কোন কোন মহল এর দায় আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনগুলোর ওপর চাপাতে চাইলেও সেটার কোন প্রমাণ তারা দিতে পারেনি। বরং প্রাপ্ত ভিডিও ফুটেজসমূহ ও ঐদিন হেফাজতের নেতাকর্মীদের দেয়া বক্তব্যগুলো তাদের সংশ্লিষ্টতা প্রমাণ করে।

৩. ৬ই মে সকালে বিজয়নগর থেকে শুরু করে পুরানা পল্টন, বায়তুল মোকাররম, দৈনিক বাংলা, মতিঝিল এলাকায় দেখেছি আগের দিন বড় বড় গাছগুলো বৈদ্যুতিক করাত দিয়ে কেটে ফেলা হয়েছে, রোড ডিভাইডার গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে, গ্রিল ও কাঁটাতারের বেড়াগুলো উপড়ে ফেলা হয়েছে, রাস্তা খুঁড়ে ফেলা হয়েছে। এই কাজগুলোর কোনটাই উপযুক্ত যন্ত্রপাতি এবং যথাযথ দক্ষতা ছাড়া করা সম্ভব না। পুরানা পল্টন এলাকার কয়েকজন দোকানকর্মী ও রিক্‌শাচালকদের কাছে শুনেছি, যে দ্রুততা ও দক্ষতার সাথে গাছ কাটা, গ্রিল উপড়ানো, রোড ডিভাইডার ভাঙ্গা হয়েছে সেটা দেখে তাঁরা অবাক হয়ে গেছেন। অর্থাৎ, হেফাজত এই ব্যাপারে শুধু আটঘাট বেঁধেই আসেনি বরং আগে থেকে প্রশিক্ষণ নিয়েও এসেছে। ধ্বংসাত্মক কার্যক্রমের যন্ত্রপাতি যোগাড় ও এর প্রশিক্ষণের ব্যাপারটির মূল অনুসন্ধান না করলে ভবিষ্যতে এমন দৃশ্য আরো দেখতে হবে।

৪. ৫ই মে’ হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশনের পুরানা পল্টনস্থ কার্যালয়ের একতলায় অবস্থিত জনতা ব্যাংকের শাখাটিকে আগুন দিয়ে আক্ষরিক অর্থে ভস্মীভূত করা হয়েছে। ৬ই মে সকালে সেখানে পোড়া ছাই ছাড়া আর কিছু দেখতে পাইনি। অর্থাৎ,ব্যাংকটির কিছুই রক্ষা পায়নি। এছাড়া ৫ই মে মতিঝিল ও তৎসংলগ্ন এলাকার অনেকগুলো এটিএম বুথ ভাংচুর ও সেখান থেকে টাকা লুটের ঘটনা ঘটেছে। এই দুইটি ব্যাপার বাংলাদেশের কোন আন্দোলনের সময় ঘটেনি। বিশেষ যন্ত্রপাতি ও প্রশিক্ষণ ছাড়া এটিএম বুথ ভেঙ্গে টাকা লুট করা সম্ভব নয়। সুতরাং এই ব্যাপরটিকে অবহেলা করার উপায় নেই। একটি রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংক ভস্মীভূত করা এবং অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বুথে হামলা হামলাকারীদের লক্ষ্য ও চরিত্রকে স্পষ্ট করে।

৫. ঢাকা শহরে যারা ঈদুল আযহা যারা প্রত্যক্ষ করেছেন তারা জানেন যে, দুর্বল পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার জন্য এই শহরের ফুটপাথে বা রাস্তার পাশের কোন বাসার আঙ্গিনায় কোরবানীর পর পরিষ্কার করা হলেও পরবর্তী কয়েকদিন ধরে ঐখানে রক্ত ও ময়লার দাগ এবং রক্ত ও গোবরের গন্ধ রয়ে যায়। ৫ই মে যদি বিপুল সংখ্যক মানুষ হত্যা করা হতো তাহলে পরবর্তী কয়েকদিন ধরে ঐ এলাকায় রক্তের চিহ্ন ও গন্ধ রয়ে যেত। অথচ ৬ই মে সকালে মতিঝিল এলাকার ফুটপাথ ও দেয়ালে রক্তের দাগ বা বাতাসে রক্তের গন্ধ পাইনি। রক্তের দাগ যদি থাকতোই তাহলে সেগুলোর অসংখ্য চিত্র ও ভিডিও ইতিমধ্যে গণমাধ্যম ও সোশাল মিডিয়াগুলোতে প্রকাশিত হয়ে যেত। বাস্তবে তার কিছুই হয়নি।

৬. ট্রাকে ভারী পণ্য ওঠানামা করার দৃশ্য কাছ থেকে দেখার ও তদারক করার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা যাদের আছে তারা জানেন, গড়ে ৬০ কেজি ওজনের এক একটি লাশ তোলার জন্য নূন্যতম ২ জন শ্রমিকের প্রয়োজন হবে এবং প্রত্যেকটি লাশ রাস্তা থেকে ট্রাকে তুলতে তাদের নূন্যতম ৫ মিনিট করে সময় ব্যয় হবে। এভাবে ২৫০০ লাশ ২ ঘন্টায় ট্রাকে তুলতে ২১০ জন শ্রমিকের দরকার হবে। ২১০ জন শ্রমিক ২ ঘন্টা ধরে অসম্ভব দক্ষতায় প্রতি ৫ মিনিটে এক একটি লাশ ট্রাকে তুলে ফেলছে — এটি যে কী বিশাল কর্মযজ্ঞ সেটা কল্পনা করতে হলে আপনার চট্টগ্রাম বন্দরে শ্রমিক দিয়ে পণ্য ওঠানামা করার দৃশ্য দেখার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। এই বিশাল কর্মযজ্ঞটির কোন স্থিরচিত্র বা ভিডিও ফুটেজ নেই এটা কী করে হতে পারে! লাখ লাখ (!) হেফাজত কর্মীদের কেউ বা কোন গ্রুপ এই ২৫০০ লাশের একটিও ছিনিয়ে নিতে বা নিয়ে পালিয়ে যেতে পারলো না! বাংলাদেশ ব্যাংকের পাশের যে রাস্তা কমলাপুরের দিকে গেছে অথবা গোপীবাগের যে রাস্তাটা ব্রাদার্স ইউনিয়ন আর রামকৃষ্ণ মিশনের পাশ দিয়ে বিশ্বরোডের দিকে গেছে সেই পথে লাশ নিয়ে পালিয়ে যাওয়া তো সহজ ছিল। সেদিকে তো কোন পুলিশ-র্যা ব-বিজিবি ছিলো না।

৭. গড়ে ৬০ কেজি করে ধরলে ২৫০০টি লাশের ওজন হয় ১৫০ মেট্রিক টন, যা পরিবহন করতে নূন্যতম ৮টি কন্টেইনার ভ্যান লাগবে। খোলা ট্রাক ব্যবহার করলে ৩০টি ট্রাক লাগবে। ৮টি কন্টেইনার ভ্যান বা ৩০টি খোলা ট্রাকের কোনটাই এমন ছোট কিছু না যে সেগুলোর আসা, যাওয়া, লোডিং, আনলোডিং কারো চোখে পড়বে না। এই ট্রাকবাহী লাশগুলো রাতারাতি কোথাও সরিয়ে নিতে গেলেও সেটা সবার চোখে পড়বে, রাস্তায়ও রক্তের চিহ্ন থেকে যাবে। এই ট্রাকগুলোকে প্রত্যক্ষ করেছেন এমন দাবী করে কেউ কি আজ পর্যন্ত কোন বক্তব্য দিয়েছেন বা কোন ছবি দেখাতে পেরেছেন?

৮. ২৫০০টি লাশকে একটি মাত্র গর্তে চাপা দিতে হলে যে গর্ত লাগবে তার গভীরতা নূন্যতম ১ মিটার হলে তার মেঝের ক্ষেত্রফল হবে কমপক্ষে ২,৮০০ বর্গমিটার। এক্সকেভেটার ব্যবহার করা ছাড়া রাতারাতি এই গর্ত খোঁড়া সম্ভব নয়। শ্রমিক ব্যবহার করে এই গর্ত খুঁড়তে গেলে ১০০ শ্রমিককে একটানা ১০ ঘন্টা করে কাজ করতে হবে ৭ দিন ধরে। দৃশ্যমান জায়গা থেকে এক্সকেভেটার গোপন জায়গায় নিয়ে যাওয়া ও গোপনে খোঁড়াখুঁড়ি করা সম্পূর্ণ অসম্ভব। সরকার যদি এক মাস আগে থেকে জানে যে, তাদেরকে ২৫০০টি লাশ গুম করতে হবে এবং তারা সেই অনুযায়ী প্রস্তুতি নিয়ে রাখে কেবল তাহলেই এটা সম্ভব। এক গর্তে দুই, তিন বা ততোধিক স্তরে লাশ রাখতে গেলে গর্তের গভীরতা আরো বেশি হতে হবে, তাতে মোট মাটি কাটার পরিমাণ বিশেষ হেরফের হবে না। গর্তের গভীরতা ১ মিটারের চেয়ে কম হলে লাশ পঁচলে গ্যাসের চাপে মাটি ফেটে যে গন্ধ বের হবে তাতে আশেপাশের এলাকায় টেকা মুশকিল হয়ে যাবে। ১৯৯১ সালে সাইক্লোন পরবর্তী কালে যারা চট্টগ্রাম এলাকায় উদ্ধার অভিযান ও ত্রাণ তৎপরতায় অংশ নিয়েছিলেন তাদের যে কাউকে জিজ্ঞেস করলে জানা যাবে লাশের গন্ধ কী ভয়ঙ্কর রকমের ভারী ও অসহনীয়। বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু বা শীতলক্ষ্যার মতো অগভীর, অপ্রশস্ত নদীতে ২৫০০টি লাশ ফেলে গুম করার ব্যাপারটি কতটুকু অবাস্তব সেটি ব্যাখ্যার প্রয়োজন রাখে না।

৯. ২৫০০ জন বা অন্য কোন সংখ্যক নিখোঁজ মানুষের তালিকা আমরা কখনো দেখতে পাইনি। হেফাজতও আজ পর্যন্ত নিখোঁজ মানুষের কোন তালিকা পেশ করেনি। ২৫০০ সংখ্যাটির ভিত্তি কেউ উল্লেখ করতে পারেনি। এর কম বা বেশি যে সংখ্যাগুলো আলোচনায় আসে সেগুলোরও ভিত্তি প্রমাণিত নয়। এক্ষেত্রে সরকার তার প্রেসনোটে নিহতের সংখ্যা যা দাবি করেছে তার ভিত্তিতে সরকারের কাছে নিহতদের পরিচয় জানতে চাওয়া যেতে পারে। অন্য কেউ বা কোন প্রতিষ্ঠান সেই সংখ্যার সাথে ভিন্ন মত পোষণ করলে ভিন্ন সংখ্যক নিহতের পরিচয়সহ সরকারের দাবিকে চ্যালেঞ্জ করতে পারে। এক্ষেত্রে আদালতে সরকারকে চ্যালেঞ্জের পথ খোলা আছে। কিন্তু এখনো কেউ সেই পথে হাঁটেনি।

১০. ঢাকা অবরোধ কী করে মতিঝিল অবস্থান হয়ে গিয়েছিল? ৫ই মে কী হতে যাচ্ছে সে ব্যাপারে সরকারের ডজনখানেক গোয়ান্দা সংস্থার কারো কাছে কি কোন খবর ছিলো না? যদি থেকে থাকে তাহলে তারা সেটা কি পুলিশকে (ডিএমপি) জানিয়েছিল? পুলিশ কিসের ভিত্তিতে মতিঝিলের মতো জায়গায় তাদের অনুষ্ঠান করতে দিল? এই ব্যাপারে সরকার শ্বেতপত্র প্রকাশ করতে পারে। সরকার শ্বেতপত্র প্রকাশে আগ্রহী না হলে সেটা সরকারের কাছে দাবি করার পথ খোলা আছে। বলাই বাহুল্য, সেই পথেও এখনো পর্যন্ত কেউ হাঁটেনি।

১১. ৫ই মে এবং এর আগে হওয়া হেফাজতের একাধিক অনুষ্ঠানগুলোর অর্থায়ণ কে বা কারা করেছে এটা নিয়ে কোন তদন্ত হয়নি। সংবাদমাধ্যমগুলোও এই ব্যাপারে আলোকপাত করেনি। বিভিন্ন মাধ্যমের আলোচনাগুলোতেও এই প্রশ্নটি প্রায় উত্থাপিতই হয়নি। অর্গানাইজ করা, অংশগ্রহনকারীকে কনভিন্স করা, প্রস্তুতি নেয়া, পরিবহন ব্যয়, খাবার ব্যয়, অবস্থান ব্যয়, অস্ত্রশস্ত্র ও যন্ত্রপাতির ব্যয়, অনুষ্ঠানের ব্যয়, প্রচারণার ব্যয় সব মিলিয়ে এই অনুষ্ঠানগুলোর মোট ব্যয়ের অংকটা বিশাল। মাদ্রাসার লিল্লাহ্‌ বোর্ডিং-এর ফান্ড দিয়ে এই মাপের অনুষ্ঠানের ব্যয় সংস্থান করা সম্ভব নয়। তাহলে এই বিশাল অংকের টাকা কোথা থেকে এলো? কারা দিলো? হেফাজত কি কখনো এইসব অনুষ্ঠানের আয়-ব্যয়ের হিসাব প্রকাশ করেছে?

১২. যেহেতু বিষয়টি নিয়ে দেশে-বিদেশে বড় ধরনের আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে তাই এক্ষেত্রে সরকার বিচারবিভাগীয় তদন্ত কমিটি বা কমিশন গঠন করতে পারতো। কিন্তু সেটা না হওয়ায় ব্যাপারটিকে ঘোলা করার সব রকমের চেষ্টাই সুযোগসন্ধানীরা করে যাচ্ছে।

ইফতেখার আলী


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

চলুক
ভাল বিশ্লেষণ কিন্তু কিছু বেওকুফ উজবুক লোকদের আপনি যাই বোঝান দিনশেষে তারা "যাই হোক তালগাছটা আমার" মতাদর্শেই বিশ্বাসী থাকবে। প্রচণ্ড রাগ লাগে যখন আশেপাশে কিছু উচ্চশিক্ষিত গাধাকেও এই নিয়ে তর্ক করতে শুনি।
ইসরাত

অতিথি লেখক এর ছবি

১২. যেহেতু বিষয়টি নিয়ে দেশে-বিদেশে বড় ধরনের আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে তাই এক্ষেত্রে সরকার বিচারবিভাগীয় তদন্ত কমিটি বা কমিশন গঠন করতে পারতো। কিন্তু সেটা না হওয়ায় ব্যাপারটিকে ঘোলা করার সব রকমের চেষ্টাই সুযোগসন্ধানীরা করে যাচ্ছে।

এইটা করলেই বা কি রাভ হতো? বিচার বিভিগীয় কমিশনের রিপোর্ট কি গ্রহনযোগ্য হতো? যারা উচ্চ আদালতের রায়কেই গ্রহনযোগ্য বলে মনে করে না তাদের কাছে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটির কি মূল্য আছে?
এইবার আসেন কাজের কথায়। হেফাজত এবং বিএনপি বলছে আড়াই হাজার হত, সরকার বলছে একজনও না। আমরা নিরপেক্ষ হিসেবে একটা মাঝামাঝি অবস্থান কি গ্রহন করতে পারি না? মানে আড়াই হাজার আর একজনও না এর মাঝামাঝি কোন সংখ্যা?

আব্দুল্লাহ এ এম

অতিথি লেখক এর ছবি

সরকারী প্রেস নোটে কিন্তু ১১ জন নিহত হওয়ার কথা বলা হয়েছে (সরকারী প্রেস নোট, ইউনিকোড লিঙ্ক)। মাঝামাঝি কোন সংখ্যাটা আপনি নিতে চান? ১২৫০? সেটাও একটু বাড়াবাড়ি হয়ে গেল না?

- ঘুমকুমার

অতিথি লেখক এর ছবি

১২৫০ একটু নয় পুরোপুরিই বাড়াবাড়ি। কথাটা আসলে এক ধরনের ব্যঙ্গোক্তি, নিচে এ ব্যাপারে কিঞ্চিৎ ব্যাখ্যা দেয়ার চেষ্টা করেছি।

আব্দুল্লাহ এ এম

সুবোধ অবোধ এর ছবি

এইবার আসেন কাজের কথায়। হেফাজত এবং বিএনপি বলছে আড়াই হাজার হত, সরকার বলছে একজনও না। আমরা নিরপেক্ষ হিসেবে একটা মাঝামাঝি অবস্থান কি গ্রহন করতে পারি না? মানে আড়াই হাজার আর একজনও না এর মাঝামাঝি কোন সংখ্যা?

কেন??!!!!

এই 'নিরপেক্ষ' শব্দটার ব্যাপারে আমার একটু কথা আছে- এই শব্দটারে বড়ই সুবিধাবাদী মনে হয়! মানে,এই অবস্থানটায় থাকলে সুযোগ বুঝে যে কোন একদিকে লাফ মারা যায়!!!(ব্যাক্তিগত মতামত)
আর,যে ক্ষেত্রে এক পক্ষের নাম "জামাত শিবির" সেই ক্ষেত্রে এই 'নিরপেক্ষ' শব্দটা জাস্ট ঘৃণার যোগ্য!!!

অতিথি লেখক এর ছবি

বিষয়টা সঠিকভাবে উপস্থাপিত করতে পারি নি বলে দুঃখিত, নিচে এ ব্যাপারে কিঞ্চিত ব্যাখ্যা দিয়েছি।

আব্দুল্লাহ এ এম

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

হেফাজত এবং বিএনপি বলছে আড়াই হাজার হত, সরকার বলছে একজনও না। আমরা নিরপেক্ষ হিসেবে একটা মাঝামাঝি অবস্থান কি গ্রহন করতে পারি না?

এটা গড় গড় খেলার ইস্যু না, এটা সত্য-মিথ্যার ইস্যু। ওই রাতে পুলিশের অভিযানে ১জন মারা যাওয়ারও কোনো প্রমাণ নাই। প্রমাণ ছাড়া আন্দাজের ওপর গড় গড় খেলা যাবে না। বাঁশের কেল্লা আপনি আন্দাজে কিছু একটা ধরে নিবেন, সেটাই চায়।

হেফাজত ওইদিন যে তাণ্ডব চালিয়েছিলো, তাতে গণছাগুহত্যাই তাদের পাওনা ছিলো। সরকার যথেষ্ট ধৈর্য্যের পরিচয় দিয়েছে। সরকারের এত বেশি ধৈর্য্য অবশ্য সমর্থনযোগ্য না। ছাগুদের আক্রমণ থেকে পাবলিকের জানমাল রক্ষার দায়িত্ব সরকারের। তারা সেটা সময়মতো করে নাই।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

অতিথি লেখক এর ছবি

গড়ের প্রস্তাবনাটা আসলে এক ধরনের ব্যাঙ্গোক্তি, হয়তো সঠিকভাবে উপস্থাপন করতে পারি নি, সেজন্য দুঃখিত।

আব্দুল্লাহ এ এম

হিমু এর ছবি

আপনি বলছেন আপনার কোনো লেজ নেই।

আমি একটা ফেসবুক পেইজ খুলে বলাম আব্দুল্লাহ ভাইয়ের চোদ্দোটা লেজ।

কেউ যদি তারপর মাঝামাঝি অবস্থান গ্রহণ করতে চায়, সেটা কি যৌক্তিক হবে?

অতিথি লেখক এর ছবি

হিমু ভাই,
গড় সংখ্যার ধারনাটা আমার না, আমাদের সমাজে বিখ্যাত অখ্যাত অনেক নিরপেক্ষ(?) সুধীজনের কন্ঠে এই সুর লক্ষ করেছি, যেমন আসিফ নজরুল, মতিউর রহমান চৌধুরী, পিয়াস করিম, আসাফুদ্দৌলা, জিল্লুর রহমান ইত্যাদি ইত্যাদি। তাদের লক্ষ করেই এই ব্যঙ্গোক্তি, সঠিকভাবে হয়তো উপস্থাপন করতে পারি নি, সেজন্য দুঃখিত। আমি নিজেও আসলে এই ঘরানার নিরপেক্ষ নই, সচলায়তনে আমার প্রথম পোষ্টটি হয়তো লক্ষ করে থাকবেন।

আব্দুল্লাহ এ এম

তারেক অণু এর ছবি

গুরুত্বপূর্ণ লেখা, ভাল বিশ্লেষণ।

কিন্তু প্রায় ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়েও এই ঘটনাগুলোর সবগুলো ঘটেছে কিনা সন্দেহ আছে-- সবকিছু সাথে মুক্তিযুদ্ধর তুলনার করার দরকার আছে কি?

হেফাজতের লোকজন কিছু হলেই যেমন বলে ২৫ মার্চের কালো রাতেও এমন কিছু ঘটে নি, তাদের কাছে মুক্তিযুদ্ধ একটা গণ্ডগোল, কিন্তু আমাদের কাছের মুক্তিযুদ্ধ অতুলনীয়, সেটাকে সবকিছুতে টানলে ভালো লাগে না।

অতিথি লেখক এর ছবি

চলুক
- একলহমা

সুবোধ অবোধ এর ছবি

কিন্তু প্রায় "১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়েও এই ঘটনাগুলোর সবগুলো ঘটেছে কিনা সন্দেহ আছে"-- সবকিছু সাথে মুক্তিযুদ্ধর তুলনার করার দরকার আছে কি?

হেফাজতের লোকজন কিছু হলেই যেমন বলে ২৫ মার্চের কালো রাতেও এমন কিছু ঘটে নি, তাদের কাছে মুক্তিযুদ্ধ একটা গণ্ডগোল, কিন্তু আমাদের কাছের মুক্তিযুদ্ধ অতুলনীয়, সেটাকে সবকিছুতে টানলে ভালো লাগে না।

সহমত।

অতিথি লেখক এর ছবি

এইখানে 'মুক্তিযুদ্ধ' শব্দটা মুক্তিযুদ্ধ অর্থে ব্যবহার করা হয়নি, ব্যবহার করা হয়েছে বাংলাদেশে সংঘটিত সর্বশেষ যুদ্ধটি অর্থে। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধকে খাটো করার কোন অভিপ্রায় এখানে নেই, লেখার সামগ্রিক স্পিরিট সেটা প্রমাণ করে। এখানে এটা বোঝাতে চেয়েছি যে, যুদ্ধকালীন অবস্থায় যে অরাজকতা হয়নি এখানে সেটাও হয়েছে। এতে ৪২ বছরে এই গোষ্ঠীটির অধঃপতন আরো কতদূর হয়েছে সেটা বোঝা যায়।

যারা দাবি করে ২৫শে মার্চ যা হয়নি ৫ই মে তাও হয়েছে, তাদেরকে জিজ্ঞেস করুন ২৫শে মার্চ কী কী হয়েছে সেটা তারা বিস্তারিত বলতে পারবে কিনা। এটাও এক প্রকার কেপি টেস্ট।

ইফতেখার আলী

তারেক অণু এর ছবি
এস এম নিয়াজ মাওলা এর ছবি

অসাধারণ বলেছেন অণুদা।

-নিয়াজ

সুবোধ অবোধ এর ছবি

লেখা এবং বিশ্লেষণ ভাল লাগল। ওই সময় আমার অপরিপক্ক চিন্তাভাবনায়

অতিথি লেখক এর ছবি

লেখা এবং বিশ্লেষণ ভাল লাগল। ওই সময় আমার অপরিপক্ক চিন্তাভাবনায় এই লেখাটা লিখেছিলাম।

---------------------
সুবোধ অবোধ

ঈয়াসীন এর ছবি

চলুক

------------------------------------------------------------------
মাভৈ, রাতের আঁধার গভীর যত ভোর ততই সন্নিকটে জেনো।

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

লেখা একদম টু দ্য পয়েন্ট হয়েছে। কমনসেন্স। সুশীলদের অবশ্য কমনসেন্স পছন্দ না, বাঁশের কেল্লার সাথে ম্যাৎকারে চেনা ছাগুর চেয়ে নিরপেক্ষতার ছাল পরা সুশীল ছাগুরাই বেশি গলা মিলিয়েছে।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

চরম উদাস এর ছবি

চলুক

ধুসর গোধূলি এর ছবি

একদা যুক্তিবাদী ভেকধারী হেফাজতিরা যেভাবে ৫মে'কে উদ্বৃত করে নানা সংখ্যাকে আমলে নিয়ে কিবোর্ডের বোতাম তুলে ফেলছে, তারা কি আদৌ নিজেদের কমনসেন্স নামক জিনিসটার ব্যবহার করতে জানে নাকি সেটা লোহার সিন্দুকে তালা মেরে রেখে এসে মুষলধারায় এখানে ওখানে ম্যাৎকার করে- জানতে খুব ইচ্ছে হয়।

খেকশিয়াল এর ছবি

চলুক চলুক চলুক

-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'

অতিথি লেখক এর ছবি

বুঝবেওনা, শিখবেওনা, বদলাবেওনা ছাগুরা ।তার থেকে আমার লাইনে আসেন।
যখন,যেখানে, যেভাবে, যে অবস্থায়ে থাকেন, ছাগুসুখ (ছাগু পোন্দাইয়া যেই সুখ)
হাসিল করার এবং উপভোগ করার চেষ্টা করেন ।
মেঘ ও রৌদ্র

কড়িকাঠুরে  এর ছবি

চলুক ভাল লিখেছেন।

শামীম এর ছবি

লেখাটার ইংরেজি ভার্সন নাই?

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনি বা অন্য কেউ চাইলে করে ফেলতে পারেন, অসুবিধা নেই।

ইফতেখার আলী

অতিথি লেখক এর ছবি

অণুদার সাথে সহমত।সবখানে সবকিছুকে মুক্তিযুদ্ধের সাথে তুলনা করার দরকার নেই।লেখা ভালো হয়েছে,কিন্তু যাদের জন্যে এই লেখা তারা আদৌ এতো গভীরে যায় কিনা আমার সন্দেহ আছে।তারা কখনো নিজে কিছু যাচাই করার ক্ষমতা রাখেনা।অন্যের মুখস্থ করা বুলি তাদের মুখের বুলি হয়।তবু লিখে যান,পরিবর্তন আসতে সময় লাগবে।

মাসুদ সজীব

প্রান্তিক রহমান এর ছবি

গ্রাম বাংলার অশিক্ষিত মানুষ এর উপর দোষ দিয়ে কি লাভ??? বাইরের দেশে মাস্টার্স পিএইচডি করতেসে এমন পোলাপাইন যখন এইসব বিশ্বাস করে বসে থাকে তখন কি যুক্তি দিবেন???

এস এম নিয়াজ মাওলা এর ছবি

বিশ্লেষনটা চমৎকার। কিন্তু চোরে না মানে ধর্মের কথা! যাদের জন্য এই লেখা, তারো কোনোভাবেই বুঝবে না। শামীম ভাইয়ের মতো বলছি, লেখাটার ইংরেজী ভার্সন করা যায় কী না?

-নিয়াজ

আমি জানি না এর ছবি

ভালো বিশ্লেষন।

আমি জানি না

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

চলুক

আইচ্ছা, শর্মিলাপ্পু এখনও এইটা নিয়া নয়া থিসিস টিসিস করে নাই? চিন্তিত
আগের বার কমানির চেষ্টা করছে, এইবার নাহয় ক্যাম্নে বাড়াইতে হয় তার একটা প্রসেস দেহুম

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

তাসনীম এর ছবি

অসাধারণ যুক্তিপূর্ণ লেখা।

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।