মেডুসা- গ্রীক মিথলজির এক আকর্ষণ। গ্রীক মিথলজির কোনো আলোচনাই মেডুসা ছাড়া শেষ করা সম্ভব নয়। টাইফোয়িয়াসের কথা মনে আছে? যার সাথে দেবতাদের বিশাল এক যুদ্ধ হয়েছিলো? সেই বিশাল দানব টাইফোয়িয়াস বিয়ে করেছিলেন অর্ধেক সাপ, অর্ধেক মানবী এচিডনে-কে। তাদের তিন মেয়ে ছিলো, যারা গর্গন নামে পরিচিত ছিলেন, এদের মধ্যে একজন ছিলেন মরণশীল, তিনিই হচ্ছেন মেডুসা। কেউ কেউ বলে থাকেন, মেডুসা প্রথমে গর্গন ছিলেন না, তিনি খুব সুন্দরী ছিলেন, তার বাবা মা ছিলেন ফোরকিস এবং কিটো।
এক মিথে দেখা যায়, মেডুসা অনেক অনেক উত্তরে বসবাস করতেন এবং কখনো সূর্যের আলো দেখেন নি। তিনি এথেনার কাছে অনুমতি চাইলেন দক্ষিণে আসতে। কিন্তু এথেনা অনুমতি দিতে অস্বীকৃতি জানালে মেডুসা রাগান্বিত হয়ে বলেন, “এথেনা আমাকে দক্ষিণে আসতে দিতে চায় না, কারণ আমি তার চেয়ে অনেক সুন্দরী!” ক্ষুদ্ধ এথেনা মেডুসার সৌন্দর্য্যই শুধু দূর করলেন না, তাকে এতো কুৎসিতে রুপান্তরিত করলেন যে, যে কোন মানব বা প্রানী তার দিকে তাকালেই পাথরে পরিণত হয়ে যেতো।
শিল্পীর তুলিতে মেডুসা
অন্য এক মিথে আছে, মেডুসার সৌন্দর্য্য এতো বেশী ছিলো যে, অনেক পুরুষ তাকে কামনা করতো। কিন্তু তিনি এথেনার মন্দিরে পুরোহিতানীর কাজ করতেন। তার দীঘল সোনালী চুল এবং সৌন্দর্য্য সমুদ্র দেবতা পসাইডনের মনে কাম-বাসনা জাগ্রত করে। শেষ পর্যন্ত মেডুসা এবং পসাইডন এথেনার মন্দিরেই সঙ্গমে লিপ্ত হোন (মন্দিরের ভিতরে সঙ্গমে লিপ্ত হওয়াটা দেবতারা খুবই অপছন্দ করতেন, এটা ছিলো অপরাধের শামিল, অথচ পসাইডন নিজে ছিলেন একজন প্রধান দেবতা!)। এটা ঠিক জানা যায়নি, পসাইডন মেডুসার শ্লীলতাহানি করেন, না কি, মেডুসাই প্রথমে পসাইডনকে প্রলুদ্ধ করেন। সে যাই হোক, মেডুসা গর্ভবতী হোন এবং এথেনা যখন এই কাহিনী জানতে পারেন, তিনি খুবই ক্ষুদ্ধ হোন। মেডুসার চুলকে পরিণত করেন সাপে, শরীরকে ড্রাগনে এবং যেই মেডুসার মুখ দেখবে তাকেই পরিণত করেন পাথরে। পরবর্তীতে মেডুসাকে হত্যা করেন গ্রীক বীর পারসিউস, সেটাও দেবী এথেনার সাহায্যেই।
অনেক অনেক আগে গ্রীসের আর্গসে এক্রিসিয়ুস নামে এক রাজা ছিলেন। এক্রিসিয়ুসের কোনো পুত্র সন্তান ছিলো না, ছিলো এক কন্যা সন্তান ড্যানি। এক্রিসিয়ুসের আর কোন পুত্র সন্তান না হওয়াতে তিনি ডেলফিতে যান ভবিষ্যত জানার জন্য। সেখানে গিয়ে এক্রিসিয়ুস জানতে পারেন, তার কোনো পুত্র সন্তান জন্মাবে না। উপরন্তু তার কন্যা সন্তান ড্যানি এমন এক পুত্র সন্তানের জন্ম দিবেন, যিনি তাকে (এক্রিসিয়ুস) হত্যা করবেন। তাই এক্রিসিয়ুস ড্যানিকে বন্দী করে রাখলেন। কিন্তু নিয়তির বিধান কে খন্ডাবে? শেষ পর্যন্ত জিউসের ঔরসে ড্যানির গর্ভে এক পুত্র সন্তান জন্ম নেয়- তিনিই হচ্ছেন পারসিউস। (পারসিউসের জন্ম কাহিনী বিস্তারিতভাবে পারসিউস পর্বে থাকবে।)
রাজা এক্রিসিয়ুস ড্যানি এবং পারসিউসকে এক বিরাট কাঠের সিন্দুকে বন্দী করে সমুদ্রে ভাসিয়ে দিলেন। তারা গিয়ে পৌঁছালেন সেরিফোস নামের এক দ্বীপে। অনেক বছর পর সেই দ্বীপেরই রাজা পলিডিকটিস যুবক পারসিউসকে বললেন মেডুসার মাথা এনে দিতে। এই অভিযানে এথেনা বিভিন্নভাবে পারসিউসকে সাহায্য করেন (বিস্তারিত পারসিউস পর্বে থাকবে)। বহু কষ্ট করে পারসিউস যখন তিন গর্গন বোনের কাছে যান, তখন এথেনা চিনিয়ে দিলেন এদের মধ্যে কে মেডুসা। এরপর এথেনা এই পর্যায়ে পারসিউসকে তার বক্ষাবরনী হিসেবে ব্যবহৃত ব্রোঞ্জের পাতটি দিলেন, এবং বললেন, “যখন তুমি মেডুসাকে আক্রমন করবে তখন এই স্বচ্ছ পাতের দিকে তাকাবে। তুমি তাকে এর মাঝে দেখতে পাবে, যেমনটি দেখা যায় আয়নার মধ্যে। এবং এভাবেই তুমি এর ভয়ংকর ক্ষমতাটি- পাথরে পরিণত হওয়া, এড়িয়ে যেতে পারবে”। বলা হয়ে থাকে, মেডুসার কাটা মাথাটা পরবর্তীতে এথেনার ঢালে লাগানো হয়েছিলো।
পারসিউস মেডুসার মাথা কেটে ফেলেছেন
মেডুসাকে যখন পারসিউস হত্যা করছিলেন, সেই সময়ে মেডুসা পসাইডনের সন্তান গর্ভে ধারন করছিলেন। তাই পারসিউসের ফেরার পথে মেডুসার মাথার এক ফোঁটা রক্ত ওয়ালেট (যেটাতে করে মাথাটি পারসিউস নিয়ে আসছিলেন) থেকে যখন সাগরে পড়ে, সেখান থেকে তখন জন্ম হয় এক ডানা যুক্ত ঘোড়ার- পেগাসাস!
বেলেরোফোন ছিলেন করিন্থের রাজা গ্লকাসের পুত্র, ছিলেন সুদর্শন এবং সাহসী। লোকে বলতো, বেলেরোফোনের আসল বাবা ছিলেন পসাইডন (জিউসের চেয়ে কম ছিলেন না পসাইডন!), এবং মা ছিলেন ইউরিনমি। ইউরিনমি যদিও মরণশীল ছিলেন, তবুও দেবী এথেনা তাকে এমন সুশিক্ষা দিয়েছিলেন যে তিনি জ্ঞানে এবং বুদ্ধিমত্তায় হয়ে উঠেছিলেন দেবতাদের সমকক্ষ। তারই সন্তান ছিলেন বেলেরোফোন।
বেলেরোফোন চেয়েছিলেন এক অত্যাশ্চর্য ঘোড়ার মালিক হতে, আর সেই ঘোড়াটিই হচ্ছে পেগাসাস, মেডুসার রক্ত থেকে যার জন্ম। সেই পেগাসাসকে পোষ মানানোর জন্য বেলেরোফোন ছুটে গেলেন করিন্থের বৃদ্ধ তপস্বী পলিইডাসের কাছে। পলিইডাস তাকে বললেন, “দেবী এথেনার মন্দিরে যাও, সেখানে গিয়ে রাতে ঘুমাও। দেবতারা অনেক সময় স্বপ্নে মানুষের সাথে কথা বলেন”। বেলেরোফোন এথেনার মন্দিরে এসে রাতে ঘুমালেন। যখন গভীর ঘুমে মগ্ন তখন দেবী এথেনা স্বপ্নে এলেন, তার হাতে ছিলো সোনালী একটি জিনিস। তিনি বেলেরোফোনকে বললেন, “উঠ যুবক, আমার হাতের জিনিসটি নাও, এটি পেগাসাসকে পোষ মানাতে সাহায্য করবে”। ঘুম ভেঙ্গে গেলো বেলেরোফোনের। কিন্তু কোনো দেবীকে দেখতে পেলেন না, বরঞ্চ সামনে পড়ে থাকতে দেখলেন একটি সোনালী লাগাম। এভাবে এথেনা বেলেরোফোনকে সাহায্য করলেন পেগাসাসকে পোষ মানাতে। (বেলেরোফোনের বিস্তারিত কাহিনী পরবর্তীতে বেলেরোফোন পর্বে থাকবে।)
বেলেরোফোন পেগাসাসকে পোষ মানাচ্ছেন
মেডুসাকে নিয়ে লিখতে গিয়ে পারসিউস, পেগাসাস এবং বেলেরোফোনের গল্প চলে আসলো। এবার হারকিউলিসের সাথে এথেনার সম্পর্ক নিয়ে একটু বলি। গ্রীক বীর হারকিউলিসের চাচাতো ভাই ছিলেন রাজা ইউরিস্থিয়াস। এক পাপের প্রায়শ্চিত্ত করার জন্য হারকিউলিসকে বারোটি শ্রম করতে বলেন ইউরিস্থিয়াস। ইউরিস্থিয়াস সিদ্ধান্ত নিলেন হারকিউলিসের প্রথম শ্রম হবে এক অবোধ্য সিংহ, যেটা নিমিয়ার (গ্রীসের দক্ষিন-পূর্ব দিকের উপত্যকা) আশেপাশের অঞ্চলে ত্রাসের সৃষ্টি করেছে সেটাকে খুন করা। তিনি নিমিয়াতে গিয়ে সিংহকে খুঁজে বের করে খালি হাতে সিংহের শক্তিশালী থাবা উপেক্ষা করে সিংহের শ্বাসনালী শক্ত করে চেপে ধরলেন, যতক্ষন না পর্যন্ত সিংহটি শ্বাসরোধ হয়ে মারা যায়।
হারকিউলিস নিমিয়ার সিংহকে শ্বাসনালী রোধ করে হত্যা করছেন
সিংহটিকে মারার পর এর চামড়া ছাড়াতে গিয়ে প্রচন্ড বিপদে পড়েন হারকিউলিস। তিনি বার বার চেষ্টা করতে লাগলেন, কিন্তু প্রত্যেকবারই ব্যর্থ হলেন। এক পর্যায়ে যখন হতাশ হয়ে যাচ্ছিলেন, তখন দেবী এথেনা এক বৃদ্ধা মহিলার ছদ্মবেশে এসে হারকিউলিসকে বললেন, “সিংহের চামড়া ছাড়াবার জন্য এর ধারাল নখর ব্যবহার করো”। হারকিউলিস বৃদ্ধা মহিলারুপী দেবী এথেনার উপদেশ মতো খুব সহজেই সিংহের চামড়া ছাড়িয়ে নেন এবং এই চামড়া গায়ের উপর পরে নেন।
এথেনা আবার হারকিউলিসকে সাহায্য করেন ষষ্ঠ শ্রমের সময়। এই বার হারকিউলিস স্টিমফালাস নামের এক দেশে যান, যেখানকার মানুষেরা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলো এক ধরণের পাখির আক্রমনে। ঝাঁকে ঝাঁকে লাখে লাখে সেই পাখি বিরান করে তুলছিলো পুরো জনপদ এবং শস্যক্ষেত্র। হারকিউলিস প্রথমবার এই পাখিদেরকে হত্যা করতে ব্যর্থ হলেন। তখন সাহায্য করতে এগিয়ে এলেন দেবী এথেনা। তিনি তামা নির্মিত অসংখ্য ঝুনঝুনি দিয়ে শব্দ করতে লাগলেন, যাতে ভয় পেয়ে পাখিগুলো আকাশে বের হয়ে আসছিলো, সেই সুযোগে হারকিউলিস তীর ধনুক দিয়ে প্রতিটি পাখিকে হত্যা করছিলো। এভাবেই এথেনা দুই দুইবার হারকিউলিসকে সাহায্য করেছিলেন।
হারকিউলিস স্টিমফালাস পাখিদের হত্যা করছেন, পাশে দাঁড়ানো দেবী এথেনা
গ্রীক মিথলজিতে টিরেসিয়াস একমেবাদ্বিতীয়ম চরিত্র- একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্যের কারণে। এখানেও এথেনার নাম জড়িয়ে আছে। টিরেসিয়াস ছিলেন থিবসের ত্রিকালদর্শী ভবিষ্যতবক্তা। কিন্তু তার এই ভবিষ্যত বলার ক্ষমতা এমনি এমনি আসেনি, এসেছে এক হৃদয় বিদারক ঘটনার মাধ্যমে।
টিরেসিয়াসের বাবা ছিলেন রাখাল এভেরেস এবং মা ছিলেন নিম্ফ ক্যারিক্লো। নিম্ফ ক্যারিক্লো একদিন দেবী এথেনার সাথে গোসল করছিলেন। সেই সময়ে কোনো এক কাজে হঠাৎ করে টিরেসিয়াস সেই জায়গায় এসে পড়েন। তিনি এথেনাকে সম্পূর্ণ নগ্ন অবস্থায় দেখে ফেলেন। এথেনাকে নগ্ন অবস্থায় দেখে টিরেসিয়াসের কি অনুভূতি হয়েছিলো সেটা জানা না গেলেও, এতে প্রচন্ড ক্ষুদ্ধ হয়ে এথেনা তাকে অন্ধ করে দেন, যাতে তিনি আর কখনই কিছু দেখতে না পান। মা ক্যারিক্লো ছেলের এই পরিণতি সহ্য করতে পারছিলেন না। তিনি এথেনার কাছে দৃষ্টি শক্তি ফিরিয়ে দেবার জন্য অনেক কাকুতি-মিনতি করতে লাগলেন। অবশেষে এথেনার মন কিছুটা নরম হলে তিনি বলেন, “আমি যে শাস্তি দিয়েছি, তা ফিরিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা আমার নেই। তবে আমি টিরেসিয়াসকে ভবিষ্যত বলার অসাধারণ ক্ষমতা দিচ্ছি”। এই ভাবে এথেনা টিরেসিয়াসের দৃষ্টি শক্তি নষ্ট করে ফেলার ক্ষতিপূরণ করলেন!
টিরেসিয়াসের অন্ধ হওয়া নিয়ে আরেকটি দুর্দান্ত মিথ আছে, যদিও এটি এথেনার সাথে সম্পর্কিত নয়। মিথটি দেবী হেরার সাথে সম্পর্কিত। একদিন পেলোপোননেসের কাইল্লেনে পাহাড়ে টিরেসিয়াস হাঁটছিলেন। তিনি হঠাৎ দেখতে পেলেন একজোড়া সাপ সঙ্গমের নিমিত্তে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে আছে। টিরেসিয়াস তার হাতের লাঠি দিয়ে সাপ জোড়াকে আঘাত করে সঙ্গমে ব্যাঘাত ঘটালেন। স্বর্গে বসে দেবী হেরা পুরো ঘটনাটি দেখলেন। তিনি ঘটনাটি দেখে খুশি হতে পারলেন না। টিরেসিয়াসকে এমন অদ্ভুত এক শাস্তি দিলেন, যেটা অকল্পনীয়। তিনি টিরেসিয়াসকে মননে এবং শরীরে এক নারীতে রুপান্তরিত করে দিলেন। সাত বছর পর টিরেসিয়াস আবার এক জোড়া সাপকে মিলনরত অবস্থায় দেখলে, এবার আর আঘাত করলেন না। হেরা তখন খুশি হয়ে তাকে আবার পুরুষে পরিণত করেন।
টিরেসিয়াস লাঠি দিয়ে সঙ্গমরত একজোড়া সাপকে আঘাত করছেন
এই পর্যন্ত সবকিছুই ঠিক ছিলো। বেঠিকটা করলেন দেবরাজ জিউস। একদিন জিউসের সাথে হেরার তর্ক শুরু হলো – পুরুষ ও নারীর মধ্যে কে সবচেয়ে বেশী যৌন আনন্দ পায়? বুদ্ধিমতী হেরা জিউসকে বুঝালেন এই ক্ষেত্রে পুরুষই শ্রেষ্ঠ। কিন্তু জিউসের আগ্রহে সিদ্ধান্ত হলো এই ব্যাপারে টিরেসিয়াসকে জিজ্ঞেস করার, কারণ একমাত্র সেই দুই ভূমিকাতেই ছিলো। টিরেসিয়াস হেরার নিষেধের ইঙ্গিত সত্ত্বেও বলে ফেললেন, “পুরুষ আর নারীর দুইজনের যদি শরীরের দশটি অংশ থাকে, যার মাধ্যমে তারা যৌন আনন্দ পেয়ে থাকে, তাহলে তার মধ্যে নয়টি অংশ নারীর এবং একটি অংশ পুরুষের!” নারীর গোপন তথ্য ফাঁস করে দেওয়াতে হেরা টিরেসিয়াসের উপর এতো ক্ষুদ্ধ হলেন যে, তাৎক্ষনিকভাবে টিরেসিয়াসকে আঘাত করে অন্ধ করেন। ব্যাপারটি এতো দ্রুত ঘটে গিয়েছিলো, জিউসের কিছুই করার ছিলো না। তাই জিউস ক্ষতিপূরণ হিসেবে টিরেসিয়াসকে ভবিষ্যত বলার ক্ষমতা দিয়েছিলেন।
এথেনার গল্পকাহিনী পর্বটি শেষ করতে যাচ্ছি তিনটি ছোট ছোট কাহিনী দিয়ে। লেসবস নামে এক জায়গা ছিলো। অনেক অনেক বছর আগে সেই লেসবসের রাজা ছিলেন ইপোপিয়াস। ইপোপিয়াসের এক কন্যা ছিলেন, নিকটেমেনে। নিকটেমেনে ছিলেন অসম্ভব সুন্দরী এক মেয়ে। আশে পাশের সব জায়গায় নিকটেমেনের সৌন্দর্য্যের কাহিনী ছড়িয়ে পড়ে।
নিকটেমেনের জন্য দুর্ভাগ্য বয়ে আনে তার এই অসাধারণ রুপ। একদিন নিকটেমেনের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে তার বাবা ইপোপিয়াসের কী যেনো কী হয়ে গেলো। প্রচন্ড কাম-বাসনায় নিজের মেয়েকে জড়িয়ে ধরলেন ইপোপিয়াস। এক পর্যায়ে ইপোপিয়াস নিজের মেয়ে নিকটেমেনের সাথে সঙ্গমও করলেন। লজ্জায়, ঘৃনায় নিকটেমেনে বনে গিয়ে আশ্রয় নিলেন। নিকটেমেনেকে দেখে দেবী এথেনার মন আদ্র হয়ে উঠে। তিনি নিকটেমেনেকে পেঁচায় পরিণত করেন। সেই থেকে পেঁচা দিনের আলোয় কখনো সামনে আসে না (তারমানে এখনো পেঁচারুপী নিকটেমেনে তার বাবার কাজের জন্য লজ্জা পেয়ে যাচ্ছে!)
ডিডেলাস ছিলেন এথেন্সের খুব নামকরা স্থপতি। তার নাম এবং যশ-দুইই ছড়িয়ে পড়েছিলো দূর থেকে দূরে। বলা হয়ে থাকে, ডিডেলাস সম্ভবত এই স্থাপত্যবিদ্যা শিখেছিলেন স্বয়ং দেবী এথেনার নিকট হতে। ডিডেলাসের এক ভাগ্নে ছিলো, নাম ছিলো তার পারডিক্স (কেউ কেউ অবশ্য বলে থাকেন টালোস)। পারডিক্সের বয়স যখন বার বছর, তখন পারডিক্সের মা পারডিক্সকে কাজ শেখার জন্য ডিডেলাসের কাছে পাঠালেন। পারডিক্স ছিলেন প্রচন্ড প্রতিভাধর, ধারণা করা হচ্ছিল এই বিদ্যায় তিনি ডিডেলাসকেও ছাড়িয়ে যাবেন, আবিষ্কার করলেন সুঁই। মানুষের মন বোধহয় কখনই তার চেয়ে বড় কাউকে দেখতে চায় না। ডিডেলাসও সেই একই স্বভাবের মানুষ ছিলেন। পারডিক্সের প্রতিভায় ঈর্ষান্বিত হয়ে একদিন এক্রোপলিশ ভ্রমন করার সময় এর প্রান্ত থেকে ঢাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দেন। কিন্তু মাটিতে পড়ার আগেই দেবী এথেনা পারডিক্সকে পাখিতে রুপান্তরিত করে দেন। (ইকারুস এবং ডিডেলাসের কাহিনী পরে বিস্তারিত বলা হবে।)
এথেনার গল্পকথা শুরু হয়েছিলো পালাসকে দিয়ে যাকে হঠাৎ রাগের মাথায় দুর্ঘটনাবশত এথেনা হত্যা করেছিলেন, পরে ভীষন অনুতপ্ত হয়েছিলেন। এথেনার গল্পকথা শেষও করছি এথেনা কর্তৃক আরেকটি দুর্ঘটনাজনিত হত্যা দিয়ে।
আয়োডামা ছিলেন এথেনার মন্দিরের পুরোহিতানী। একদিন গভীর রাতে আয়োডামা মন্দিরের চত্বরে এক কাজে বেরিয়ে ছিলেন, ঠিক সেই সময়ে সেখানে দেবী এথেনাও ছিলেন এবং তার ঢালে ছিলো মেডুসার কাটা মাথা। আয়োডামা কিছু বুঝে উঠার আগেই ঢালের দিকে তাকিয়েছিলেন, এবং সঙ্গে সঙ্গে পাথরে পরিণত হলেন।
(ট্রোজান যুদ্ধে দেবী এথেনার বিশাল ভুমিকা নিয়ে ট্রোজান যুদ্ধের পর্বে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।)
এই সিরিজের পূর্বের লেখাগুলোঃ
গ্রীক মিথলজি (১-৭) : সৃষ্টিতত্ত্ব (ক্যায়োস থেকে ডিওক্যালিয়নের প্লাবন পর্যন্ত)
গ্রীক মিথলজি ৮ : জিউস, মেটিস এবং এথেনার জন্ম
গ্রীক মিথলজি ৯: এথেনার গল্পকথা- প্রথম পর্ব
লেখকঃ
এস এম নিয়াজ মাওলা
ছবি সূত্রঃ ইন্টারনেট
মন্তব্য
গ্রীক মীথে 'হারকিউলিস' নেই। শব্দটা আসলে গ্রীক মীথের 'হেরাক্লিজের' রোমান সংস্করণ।
****************************************
ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য। হারকিউলিস প্রসঙ্গে উইকিপিডিয়াতে লেখা আছে-
ঠিক এই কারণেই আসলে হেরাক্লিজের জায়গায় হারকিউলিস ব্যবহার করে হয়েছে। ভালো থাকবেন খুব।
-নিয়াজ
বাহ, পড়ছি। লিখে যান। পদ্মভোজীদের (lotus eaters) কাহিনী আমার সবথেকে প্রিয়।
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
পদ্মভোজীদের কাহিনীও আসবে- যখন ওডেসিয়াসের কাহিনী লেখা শুরু করবো। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
-নিয়াজ
এহ হে, পারসিয়াসের কাহিনির সার সংক্ষেপ দিয়েই দিলেন?
____________________________
না না, পারসিউসের কাহিনী কিন্তু বিশাল, এটা কিন্তু সার সংক্ষেপ নয়, ভাইয়া। কী জানি, সার সংক্ষেপ কি দিয়েই দিলাম?
ভালো থাকুন খুব।
-নিয়াজ
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
ধন্যবাদ কবি ভাইয়া।
ভালো থাকুন খুব।
-নিয়াজ
ধন্যবাদ ভাইয়া।
-নিয়াজ
উচ্চারণটা একিডনা হবে সম্ভবত।
আপনার লেখা আগে পড়িনি, এটাই প্রথম পড়লাম, মনে হচ্ছে গল্পগুলো খাবলে খাবলে দেওয়া হচ্ছে, আরেকটু ফ্লো থাকলে ভাল হত।
ধন্যবাদ কৌস্তভ ভাইয়া। এখানে তো ঠিক করতে পারছি না, পরবর্তীতে একিডনার নাম এলে ঠিক করবো। ভালো থাকুন খুব।
-নিয়াজ
নামধামে আমার শুধু প্যাচ লেগে যায়। তবে আপনার গল্প বলার স্টাইল বেশ লাগলো।
আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ বন্দনা আপু, ভালো থাকুন খুব।
-নিয়াজ
ধন্যবাদ সাক্ষী ভাইয়া।
-নিয়াজ
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
হায় মেডুসা! তোমার চরম লাঞ্ছনার মধ্যেও তোমার চোখে চোখ তুলে তাকানোর সাধ্য হয় না কারো! পাথর, তোমার দৃষ্টির শীতলতা তাদের পাথর করে দ্যায়। তবু থামে না দেব-দেবীদের নির্মম আক্রোশ। গর্ভবতী তুমি হে মানবী, সেই তোমাকে ছলে-বলে মারে দেবীর অনুগ্রহ-ধারী পুরুষ। আর তখন জয়ধ্বনি ওঠে তার নামে - বীর, বীর পারসিউস!
দেব-দেবীরা এইভাবেই আধিপত্য বিস্তার করেন।
লেখা চলুক, চলতে থাকুক
- একলহমা
আপনার মন্তব্যগুলো পড়লেই খুব ভালো লাগে একলহমা ভাইয়া, মনটা জুড়িয়ে যায়। ভালো থাকুন খুব।
-নিয়াজ
হলিউডে এই কাহিনির ছায়ায় কী এই [url=en.m.wikipedia.org/wiki/Clash_of_the_Titans_(2010_film)]ফিল্ম[/url] হয়েছে?
র.নাহিয়েন
ক্ল্যাশ অব দি টাইটান মূলত পারসিয়াসের গল্প নিয়ে তৈরী। সেখানে মূল থিম ছিল ক্র্যাকেনের বিরুদ্ধে পারসিয়াসের লড়াই। কারণ ক্র্যাকেন ছিল হেডিজের পাঠানো দানব, যে হেডিজ পারসিয়াসের ফ্যামিলি ট্র্যাজেডির জন্য দায়ী। নিয়াজ ভাইয়ের পারসিয়াসকে নিয়ে লেখা পর্বে বিস্তারিত থাকবে আশা করছি।
____________________________
ঠিক ধরেছেন প্রফেসর ভাইয়া, পারসিউস নিয়ে পরে বিস্তারিত থাকবে।
-নিয়াজ
প্রফেসর ভাইয়াই বলে দিয়েছেন। আপনাকে ধন্যবাদ।
-নিয়াজ
পড়ে যাচ্ছি, লেখা চলুক।
স্বয়ম
লেখা চলবে ইনশাআল্লাহ।
-নিয়াজ
facebook
ধন্যবাদ অণু ভাইয়া।
-নিয়াজ
নতুন মন্তব্য করুন