দৃশ্যপট ১
আমার এক বন্ধুর আত্মীয় রাতের বেলায় প্রচণ্ড মাথাব্যাথায় মোটামুটি অতিষ্ঠ হয়ে একটা মাথা ধরার ট্যাবলেট আর একটা ঘুমের ট্যাবলেট খেয়ে ঘুমিয়ে থাকল। পরের দিন সকালে তার আর সকাল হয়নি, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়ে ঘুমের মাঝেই মারা যায় সে।
দৃশ্যপট ২
আমার ভাতিজাকে আমরা তার জন্মের পর থেকেই নিয়মিতভাবে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতাম, মাসিক ভিত্তিতে, চেক আপের জন্য। ডাক্তার সব সময় বলতেন ‘হেলদি বেবি, হ্যাপি বেবি’।
সাত মাস বয়সে আমার ভাতিজা মারা যায় জন্মগত কিডনি সংক্রান্ত জটিলতায় যেটা ডাক্তার ধরতে পারেননি সাত মাসেও।
এখানে বলা দুইটি ঘটনাই সত্যি।
বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে রোগী – ডাক্তারের মাঝে পারস্পরিক অবিশ্বাস। ডাক্তারের অনুযোগ, ‘রোগী নিজে নিজে ওষুধ খেয়ে অবস্থা খারাপ করে আমার কাছে আসে, আমি সাইড ইফেক্ট সামলাবো না চিকিৎসা করব?’ রোগীর অভিযোগ, ‘ডাক্তার তো ভালো করে দেখলই না, শুধু শুধু এক গাদা টেস্ট দিলো। শালা কসাই খালি চিনে টাকা।’
অত্যন্ত দুঃখের সাথে জানানো যাচ্ছে, দুইটিই বহুলাংশে সঠিক। রোগী এবং ডাক্তারের পরস্পরের দোষারোপের মাঝে কত জীবন রোজ হারিয়ে যাচ্ছে, তার হিসেব কি রাখা হয়?
না, রাখা হয় না। আমাদের দেশের ডাক্তাররা একেকজন জেমস বন্ড, লাইসেন্সড টু কিল। মারতে আসার আগে একটু থামুন চিকিৎসক বন্ধুরা, একটু চিন্তা করে বলুন তো, আমাদের দেশে আপনাদের পেশায় জবাবদিহিতা কতখানি আছে? বুকে হাত দিয়ে বলুনতো, আপনাদের মাঝে কতজন চিকিৎসা ব্যাবসায় (চিকিৎসা সেবা নয়) নিয়োজিত ?
যাই হোক, কাদা ছোড়াছুড়ি করে শুধু শুধু কর্দমাক্ত না হই, কি বলেন। জানি আপনারা ৫-৭ বছর মেলা কষ্ট করছেন, এখন টেকাটুকা দরকার। কিন্তু তারপরও, মানুষের জীবন নিয়ে কথা, কি দরকার রিস্ক নেবার?
এই অধম একটা মডেল দাড় করেছি, অবশ্যই এটা মৌলিক না, অনেক জায়গায় অনেক দেখা জিনিসের একটা জগাখিচুড়ী, যেইটা বাংলাদেশে করা সম্ভব এবং এইটা এক রকম উইন উইন সল্যুশন, রোগী, ডাক্তার এবং সরকার, সবার জন্য।
ভুমিকাঃ
একটি দেশের স্বাস্থ্য ব্যাবস্থার অবস্থা দিয়ে দেশটির আর্থসামাজিক অবস্থার একটি সংক্ষিপ্ত চিত্র পাওয়া যায়। অর্থনৈতিক অবস্থা যতই ভালো হোকনা কেন, সুষ্ঠু, সময়োপযোগী এবং কার্যকরী স্বাস্থ্যসেবা ব্যাবস্থা না থাকলে তাকে ঠিক ‘উন্নত দেশ’ বলা যায়না। গুরুজনেরা যেমনটি বলেছিলেন, ‘স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল।’
বর্তমান অবস্থাঃ
একটা ‘আকবর-বীরবল’ কৌতুক দিয়ে শুরু করি। একবার সম্রাট আকবর তার সভাসদদের ডেকে বললেন যে রাজ্যের স্বাস্থ্যসেবার ব্যাবস্থার অবস্থা শোচনীয় এবং তিনি এই ব্যাপারে কিছু একটা করতে চান। একথা শুনে বীরবল বাবাজি উঠে বললেন, ‘গোস্তাখি মাফ জাঁহাপনা, কিন্তু আমাদের দেশে আসলে রোগীর চেয়ে ডাক্তারের সংখ্যা বেশি, এসব নিয়ে মাথা না ঘামানোই উত্তম।’ সভাসদরা ব্যাপক আমোদিত হলেন, কেউ কেউ তেড়ে মারতে এলেন, কেউ গালমন্দ করলেন, আর সম্রাট হাসলেন। বীরবল তখনকার মত কিছু বললেন না। সপ্তাহখানেক পরে একদিন বীরবল একটা কম্বল গায়ে জড়িয়ে রাজসভায় হাজির হলেন। সবাই আহা উহু করে পড়লো, বীরবল কাতর কণ্ঠে বললেন তার জ্বর। সভায় আরেক পশলা হাসি ঠাট্টা হল। ‘আরে বেকুব, এইটুক জ্বরে এই অবস্থা? যাও অমুক পাতার রস খাও, দেখো জ্বর কই পালায়!’ ‘আরে ধুর, অই পাতার রসে আর এমন কি, যাও তমুক গাছে বাকল নিয়ে চিবোও, জ্বর যদি না পালিয়েছে, আমি পাগড়ী পরা ছেরে দেব!’ এইরকম আরও অনেক। বীরবল কম্বলটি খুলে রেখে মৃদু হেসে সম্রাটের দিকে তাকালেন। আকলমন্দ সম্রাট এই ব্যাপারে আর কখনও কিছু বলেননি।
আমাদের দেশের সাধারণ নাগরিকদের মাঝে স্বাস্থ্য সচেতনতার অভাব চোখে পড়ার মত। কয়েকটি অত্যন্ত ব্যায়বহুল হাসপাতাল ছাড়া অধিকাংশ হাসপাতালের অবস্থা শোচনীয়, আর ব্যায়বহুল হাসপাতালগুলোতে যে খুব ভালো অবস্থা, তাও বলা যাচ্ছেনা।
অধিকাংশ মানুষের সঠিকভাবে ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণে অপরিসীম অনীহা দেখা যায়। তারা গলির মাথার ওষুধের দোকান থেকে প্যারাসিটামল খেয়ে নিতেই বেশি উৎসাহী।
অন্যদিকে দেখা যায় বেশিরভাগ ডাক্তার যত বেশি সম্ভব রোগী দেখেন বেশি ভিজিটের আশায়, স্বাভাবিকভাবেই সব রোগীর প্রতি সর্বোচ্চ মনোযোগ দেয়া সম্ভব হয় না। আর এই অমনোযোগিতায় ঘটে যেতে পারে চরম অঘটন।
প্রস্তাবিত মডেলঃ
আমাদের দেশে এখন সবার একটা জাতীয় পরিচয়পত্র আছে এবং এর মাঝের নম্বরটি ইউনিক। একই নম্বরের দুইটি জাতীয় পরিচয় পত্র নাই। আর যাদের বয়স ১৮ এর নিচে, তাদের আছে জন্ম নিবন্ধন সনদ। এর মাঝেও একটি নম্বর থাকে যেটি ইউনিক। এই নম্বর দুইটিকে একীভূত করা সম্ভব। যখন কেউ প্রাপ্ত বয়স্ক হবেন, তখন তার জাতীয় পরিচয়পত্রটি জন্ম নিবন্ধন সনদের নম্বরে ইস্যু হবে। ওই একটি নম্বরই একজন নাগরিক তার সারা জীবন রাখবেন, ওইটি হবে তার পরিচিতি (কাগজে কলমে)।
একটি জাতীয় ডাটাবেজ হবে যেখানে সব নম্বর থাকবে এবং সব নম্বরধারীর যাবতীয় স্বাস্থ্যসেবার ইতিহাস (মেডিক্যাল হিস্টরি) ওই ডাটাবেজে সংরক্ষিত থাকবে। যদি টেকনাফে বসবাসকারী কোন নাগরিক তেতুলিয়াতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পরেন এবং সংজ্ঞাহীন অবস্থায় হাসপাতালে আসেন, তাহলে তার পকেটে থাকা জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর ডাটাবেজে মিলিয়ে নিয়ে তেতুলিয়ার ডাক্তার তার ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থাগ্রহণ করতে পারবেন। ওই ডাটাবেজে শুধুমাত্র একজন চিকিৎসক (যিনি তার রেজিস্ট্রেশন নাম্বার দিয়ে লগ ইন করতে পারবেন) কোন পরিবরতন বা পরিবরধন সাধন করতে পারবেন। হাতে লেখা কোন প্রেসক্রিপশন আর থাকবে না। প্রেসক্রিপশন হবে প্রিন্টেড, ফার্মেসী প্রিন্টেড প্রেসক্রিপশন ছাড়া ঔষধ বিক্রি করতে পারবে না। যখনই একজন ডাক্তার কোন প্রেসক্রিপশন ‘প্রিন্ট’ করবেন, তখনই তা ওই রোগীর ফাইলে সেভ হয়ে যাবে। যাবতীয় রোগ নিরীক্ষার ফলাফল ডায়গনসটীক সেন্টার সরাসরি ডাক্তারের কাছে পাঠাবে, ওই রোগীর ফাইলের রেফারেন্স নাম্বারে, সেটিও সেভ হয়ে থাকবে রোগীর ফাইলে। স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারি যেকোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যাক্তি এই নেটওয়ার্কে যুক্ত থাকতে বাধ্য থাকবেন।
কিভাবে সম্ভবঃ
অনেকেই হাসছেন। ভাবছেন, নতুন পাগলের আমদানি হয়েছে। অবাস্তব কথাবার্তা শুরু হয়েছে।
কিন্তু না গো না! এ অবাস্তব না!
বাংলাদেশে ৪৬৪ টি উপজেলা আছে এবং সব উপজেলাতেই একটি করে স্বাস্থ্যকেন্দ্র আছে। এছারাও সব জেলা সদরে আছে সরকারি হাসপাতাল, কিছু কিছু জেলায় একাধিক। রাষ্ট্রায়ত্ত ‘টেলিটক’ এর মাধ্যমে প্রত্যেকটি হাসপাতাল এবং স্বাস্থ্যকেন্দ্রকে এই নেটওয়ার্কের মধ্যে নিয়ে আসা সম্ভব। প্রত্যেকটিতে একটি করে কম্পিউটার বসিয়ে শুরু করা যেতে পারে। বেসরকারি হাসপাতাল এবং প্রাইভেট প্রাকটিশনার যারা আছেন, তাদেরকে বাধ্যতামূলক ভাবে এই নেটওয়ার্কে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।
এখন প্রশ্ন আসবে এই বিশাল কর্মযজ্ঞের অর্থের যোগান কোত্থেকে আসবে। দুই একটি বলি, জাপানি JICA অথবা বিল অ্যান্ড মেলিণ্ডা গেটস ফাউনডেশন স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে প্রচুর কাজ করে থাকে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে। এদেরকে অংশিদার করা যেতে পারে। আর ট্যাক্সের পয়সা যায় কই? ফ্রিগেট কিনার পয়সা থাকলে আমাদের চিকিৎসা হবে না কেন?
কিভাবে এটি ‘উইন-উইন’
• সরকারের জন্যঃ
প্রথমতঃ দেশব্যাপি এই নেটওয়ার্ক রাতারাতি রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান টেলিটককে দেশের এক নম্বর টেলিফোন অপারেটর বানিয়ে দেবে, যেখান থেকে সরকারের বিপুল উপার্জনের সুযোগ রয়েছে।
দ্বিতীয়তঃ বেসরকারি যত ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্যসেবা খাতে জড়িত আছেন, তাঁরা একটি নির্দিষ্ট মাসিক ফি এর মাধ্যমে এই নেটওয়ার্কে যুক্ত থাকবেন (বাধ্যতামূলকভাবে), এখান থেকেও বিপুল রাজস্ব আসবে সরকারের।
তৃতীয়তঃ একজন চিকিৎসকের উপার্জনের সঠিক পরিমাপ সরকারের কাছে কখনোই থাকে না। এই ব্যবস্থা চালু হলে সকল চিকিৎসকের কাছ থেকে সঠিক অঙ্কের আয়কর আদায় করতে পারবে সরকার।
চতুর্থতঃ অবস্থাসম্পন্ন রোগীরা, যারা কিনা ঢেকুর উঠলে সিঙ্গাপুর যান, তাঁরা দেশীও স্বাস্থ্যসেবার উপর আস্থা ফিরে পাবেন এবং বিপুল পরিমান বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে।
পঞ্চমতঃ দেশের নাগরিকদের আর ভুল বা অপচিকিতসায় মরতে হবে না, সরকার আর কি চায় ?
• রোগীদের জন্যঃ
প্রথমতঃ ভুল চিকিৎসা পেতে হবে না আর, যেহেতু সব কিছু রেকর্ডেড থাকছে, ডাক্তার বাবু ওষুধটা সাবধানেই দেবেন!
দ্বিতীয়তঃ যদি কখনও চিকিৎসক পরিবর্তন করতে হয় এবং আগের প্রেসক্রিপশন না থাকে, চিন্তা নেই, রেকর্ড আছে। এক ক্লিকেই সব পাওয়া যাবে।
তৃতীয়তঃ যদি কখনও কোন রোগী চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরন করেন এবং যদি তাঁর কাছের লোকরা মনে করেন এখানে চিকিৎসকের বিন্দুমাত্র অবহেলা রয়েছে, তাঁরা সরকারি সংস্থার কাছে অভিযোগ করতে পারবেন এবং পুর্নাংগ তদন্ত সম্ভব হবে।
• চিকিৎসকের জন্যঃ
প্রথমতঃ কেউ বলতে পারবেনা ‘রোগী মারা ডাক্তার’, বললে ফাইল খুলে দেখিয়ে দেবেন, যে ওটা আমার না, আজরাইলের কাজ।
দ্বিতীয়তঃ যেসব রোগী বিদেশে দৌড়োত, তাঁরা আস্থা ফিরে পেয়ে এখন আপনাদের কাছে আসবেন, কি কি ওষুধ লিখলেন, হিসাব থাকবে। ওষুধ কোম্পানির কমিশন মিস হবে না আর। ডায়গনসটীক সেন্টারের টাও না। ইনকাম বাড়বে, কমবে না!
তৃতীয়তঃ নতুন রোগী এলে হাতড়ে মরার দরকার নাই। সব লিখা আছে। এক ক্লিক দূরে!
আমি জানি এটা একদিনে সম্ভব না। এক বছরেও না। এটা সম্পূর্ণভাবে করতে কমপক্ষে ১০ বছর সময় দরকার। আমরা যদি আজকে থেকে শুরু করি, ১০ বছর পরে আমাদের থাকবে একটি বিশ্বমানের স্বাস্থ্যব্যবস্থা। আমরা গর্বভরে বলতে পারব, আমার দেশে কেউ বিনা চিকিতসায় মরে না। আমার দেশের ডাক্তার রোগী মারে না।
যারা এতক্ষণ কষ্ট করে পড়েছেন, এবং লেখককে গালমন্দ করেছেন এবং করছেন, তাদেরকে ধন্যবাদ। কিন্তু একটু চিন্তা করুনতো, এটা কি আসলেই অসম্ভব? না বোধহয়, তাহলে আমার দুইটা প্রশ্নের উত্তর দিন, IF NOT NOW, THEN WHEN? IF NOT US, THEN WHO?
(অনাহুত পরিব্রাজক)
মন্তব্য
জাতীয় স্বাস্থ্য ডেটাবেইজ করার জন্য আমেরিকাতে প্রচুর চিন্তা ভাবনা হচ্ছে। অনেকরকম মডেলের কতা চিন্তা ভাবনা করা হচ্ছে। যেমন: একটা সেন্ট্রাল ডেটাবেইজ রাখা কিংবা ছোট পেন ড্রাইভের মতো লকেট বা ঘড়ি ইত্যাদি। বিচ্ছিন্ন কিছু কাজ হলেও উপযোগী আকারে তেমন কিছু হয়নি। যেমন আমি নর্থশোর হেলথ সিস্টেমের মধ্যে কিছু ডাক্তার দেখাই। এদের সব তথ্য একটা সিস্টেমে লিপিবদ্ধ থাকে। এই সিস্টেমের মধ্যে থাকলে ডাক্তাররা সরাসরি সে তথ্য দেখতে পারে। সিস্টেমের বাইরে গেলে আর সেটা সম্ভব না।
আমেরিকাতে এখন ই-প্রেসক্রিপশনের চল উঠেছে অনেক। হাতে হাতে প্রেসক্রিপশন না দিয়ে সরাসরি ফার্মেসীতে পাঠিয়ে দেয় ডাক্তার সেখান থেকে তুলে নিতে হয় ঔষধ।
ভালো আইডিয়া। কিন্তু ইমপ্লিমেন্টেশনে খরচ এবং অন্যান্য প্রাক্টিকাল লিমিটেশন অনেক বেশী।
৫-৭ বছরে তো শুধু লাইসেন্স পায় রে ভাই, রোগী পেতে বছর দশেক লেগেই যায়!
কিন্তু ভাল বলেছেন মশাই। তবে সময়টা কলিকাল, দেশটা বাংলাদেশ, কত বছর লেগে যাবে ঠিক নেই, সদিচ্ছাই তো সবকিছু নয়, আবার কোন্দলেরও ইয়ত্তা নেই!
সবচেয়ে আগে দরকার নীতি নির্ধারকদের সদুদ্দেশ্য। ইচ্ছা থাকলেই উপায় হয়। যদি সত্যিই সেবা দেয়ার/দেয়ানোর ইচ্ছে থাকে, তাহলে সেটা করা সম্ভব। দেশেই সম্ভব, দেশের সন্তানদের কাজে লাগিয়ে। আজ যদি আমরা বিশ্বমানের সফটওয়্যার, অ্যাপস তৈরী করতে পারি, তাহলে স্বাস্থ্যসেবার জন্য প্রয়োজনীয় অনুষঙ্গ তৈরী অবশ্যই করতে পারবো। কিন্তু সবার আগে দরকার যাদের এটা বাস্তবায়ন করার ক্ষমতা ও দায়িত্ব রয়েছে তাদের সদিচ্ছা। জনগনের টাকা পকেটে না ভরে জনগনের কাজে ব্যয় করার মানসিকতা। তাহলেই সব হবে। আর এজন্য আমাদেরও সচেতনতা সৃষ্টি করার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।
____________________________
একাউন্টেবিলিটি এর কোন বিকল্প নাই। কিন্তু সমস্যা টা ঠিক এখানেই না।
আমরা ভাবতে পারি প্রফেসর মাহাতাব, বা প্রফেসর পরিমল এর মত রোগী, ডাক্তার আর ছাত্রদের নিরপদ ভরসার আশ্রয় ছিলেন যারা, তারা কেন সব ছেড়ে আজ বিদেশগামী। তাদের টাকার অভাব ছিলনা এখানেই। কিছু একটা আছে এখানে যার কারনে তারা বিব্রত এবং দেশত্যাগী। এরকম শ'খানেক উদাহরন দেয়া যাবে। ভিতরে না থাকলে সমস্যা টা ঠিক বোঝা যাবেনা। বুঝে কিছু করার মত যাদের যোগ্যতা আছে তারা নিজেদের বাঁচাতেই হিমশিম খাচ্ছে। আমিও ঠিক ভিতরের বলা যায়না তাই এগুলো আপাতত পাশ কাটালাম।
বাংলাদেশে ন্যাশনাল আইডেন্টিটি নিয়ে কাজ চলছে। সরকারের শেষ সময় বলে কেউ মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে না, তবে প্রজেক্ট প্রোপোজাল আর কর্মপন্থা সব তৈরি।
বাংলাদেশের সব সরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান কার্যকরী একটা মোবাইল ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক এর অন্তর্ভুক্ত। কমুনিটি ক্লিনিক ও এর আওতায় আছে। ব্যাবহার ও হচ্ছে। বেশ কয়েকটি হাসপাতাল টেলিমেডিসিন সেবা প্রদানে সক্ষম যন্ত্রপাতি সমৃদ্ধ। চিকিৎসা সম্পর্কিত তথ্য রাখার জন্য জাতীয় ডাটাবেস তৈরির কাজ শেষ। সরকারী বেসরকারী সব হাসপাতাল এই ডাটাবেস ব্যাবহার করতে পারবে বিনামুল্যে। ইলেক্ট্রনিক মেডিকেল রেকর্ড সিস্টেম ও ইমপ্লিমেন্ট করা হচ্ছে বেশ কয়েকটা জায়গায়। মেডিকেল ইনফরমেটিক্স এর ফরমাল কোর্স ও চালু করা হয়েছে সংশ্লিষ্টদের সহায়তায় বাংলাদেশ ইন্সিটিউট অফ হেল্থ সাইন্সেস এ, আর কয়েকটা জায়গায় চালুর পথে।
আমাদের সমস্যা ভিন্ন কোথাও। এবং সমাধান ও সহজ নয়।
রুট কজ এনালাইসিস করলে আমাদের প্রথম এবং প্রধান সমস্যা যা এসব কার্যকরী করার পথে প্রধান অন্তরায় তা হল রেফারেল সিস্টেম। সরকারী ভাবে রেফারেল সিস্টেম চালুই আছে। আমাদের মানসিকতায় রেফারেল সিস্টেম চালু হবে যেদিন, সেদিন ই সম্ভব এসব এর কার্যকারিতা দেখা। মেডিসিন এর বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এর কাছে যদি লাইন দিয়ে সব ভাইরাস জ্বর এর রুগি বসে থাকি তবে কি করে হবে। মেডিকেল সিস্টেম একটা socio-Technical System, এখানকার ইনফর্মেশন ফ্লো আর টেকনিকাল ডেভেলপমেন্ট এর নিজস্ব একটা ধারা আছে যেটা বাংলাদেশে বিপর্যস্ত সঠিক রেফারেল সিস্টেম অনুসরন এর অভাবে।
ভালো আইডিয়া।
facebook
খুবই ভাল আইডিয়া। যদিও ভাল আইডিয়ার দাম আমাদের দেশে কম।
একজন ফিজিওথেরাপি স্টুডেন্ট হিসেবে সারাটা ছাত্র জীবন কেটেছে একটা স্বতন্ত্র কলেজ প্রতিষ্ঠার দাবীতে। ফলাফল? কখনো রাজপথ,শহীদ মিনারে অবস্থান ধর্মঘট করে রাতের পর রাত,মানববন্ধন,পুলিশের মাইর, অকারণে পুলিশের লকআপে আটক,মিথ্যা মামলার বোঝা টানা...
অথচ জায়গা বরাদ্দ হয়েও,একনেক থেকে টাকা স্যাঙ্কশন হয়েও এখনো পর্যন্ত কলেজের কাজও শুরু হয়নি।
সেইসব অভিজ্ঞতা বলতে গেলে আপনার লেখার প্রসঙ্গ থেকে পুরাই অন্যদিকে চলে যেতে হবে।
যাই হোক,স্বাস্থ্যখাতের কর্তারা কিভাবে দেশের স্বাস্থ্য সেবার উন্নয়ন হবে সেই চিন্তা না করে ওই পজিশনে বসে কিভাবে নিজের আখের গোছানো যাবে সেই চিন্তায় ব্যাস্ত থাকেন। এটা অবশ্য সব ক্ষেত্রেই। আর এই কারণে সত্যিকার ভাবেই আন্তরিকতার সাথে সেবা দিয়ে যাওয়া ডাক্তাররাও কাঠগড়ায় উঠে যান।
পরিকল্পনা উত্তম।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
ভালো আইডিয়া দিয়েছেন আপনি। কিন্তু মুর্শেদ ভাইয়ার মতো বলতে চাই- ইমপ্লিমেন্টেশনে খরচ এবং অন্যান্য প্রাক্টিকাল লিমিটেশন অনেক বেশী।
এবার একটু অন্য কথা বলি। পেশায় আমি চিকিৎসক, সেই হিসেবেই বলা। প্রথমেই আমার ব্যক্তিগত এক অভিজ্ঞতা শেয়ার করি। আমি তখন মেডিকেলের ছাত্র, আমার বাবা ছিলেন ময়মনসিংহের জেলা ও দায়রা জজ। একদিন হঠাৎ হার্ট এটাক হলো। তখন সিকদার মেডিকেলেই হার্টের ভালো চিকিৎসা হতো, কার্ডিওলজিস্ট ছিলেন খুব নামকরা একজন ডাক্তার (নাম বলতে চাচ্ছি না, পরে এমপি হয়েছিলেন এই টার্মে, এক বছর আগে মারা গেছেন)। তিনি এনজিওগ্রাম করে আব্বুকে সরাসরি বললেন, আপনার অবস্থা খুব খারাপ, অপারেশনে যাওয়া যাবেন না, গেলে ওটি টেবিলেই মারা যেতে পারেন! দুই বছর পর অনেক কষ্টে আব্বুকে রাজী করিয়েছিলাম অপারেশন করাতে- ব্যাঙ্গালোরের ডাঃ দেবী শেঠী করেছিলেন। এই হচ্ছেন আমাদের নামকরা একজন কার্ডিওলজিষ্টের কথা!
আমাদের রোগীরা নামকরা ডাক্তার ছাড়া রোগ দেখাতে চায় না। আর একজন নামকরা ডাক্তার দিনে ১০০-এর উপর রোগী দেখলে পার রোগী কত মিনিট সময় দিতে পারবেন? এই তাড়াহুড়োর মধ্যে ভুল চিকিৎসা দেওয়ার সম্ভাবনা থেকেই যায়।
একটি কথা খুব ঠিক বলেছেন- আমাদের দেশে ডাক্তারদের জবাবদিহিতা নেই। কিছু হয়েছে মান্নার স্ত্রীর করা মামলায়- ইউনাইটেড হাসপাতালের বিরুদ্ধে? আমাদের রোগীরাও সচেতন নয়। ডাক্তাররা এর সুযোগ নিচ্ছেন পুরোদমে। রোগীকে কাউন্সেলিং করতে হয়- এই কথাটা কতজন ডাক্তার গুরুত্ব দেন?
তবে পরিবর্তন হচ্ছে। ধীরে ধীরে। আমি আশাবাদী বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নতি হবেই এবং আপনি যেটা বলেছেন- ডাক্তার রোগীর পারস্পরিক অবিশ্বাস, সেটা কমবে।
আরেকটা কথা মনে পড়ে গেলো, আমাদের দেশে ইউকের মতো ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের সিস্টেম চালু করা যেতে পারে। একেকজন ডাক্তার একটি নির্দিষ্ট এলাকার সব জনসংখ্যার জন্য দায়িত্বশীল থাকবেন। প্রতিমাসে খোজ খবর রাখবেন, ডাটা এন্ট্রি করবেন। তিনিই ঠিক করবেন- কারো উচ্চতর চিকিৎসা লাগবে কি, লাগবে না। বা কোথায়, কাকে দেখাবে। আরেকটা ব্যাপার, ডাক্তারদের যদি নিয়ম করে দেওয়া যায়, জেনেরিক নামে অষুধ লিখতে, তাহলে ফার্মাসিউট্যাকলের সাথে বানিজ্য অনেক কমে যাবে বলে আমার ধারনা।
আরো অনেক কথা বলার ছিল। সময় করে এই পোষ্টে এসে বলে যাবো, ইনশাআল্লাহ।
-এস এম নিয়াজ মাওলা
সহমত।
বুকে হাত রেখে বলছি, অপমানজনক বেতনে বাংলাদেশের তরুণ চিকিৎসকরা যে সেবা দিচ্ছেন- পৃথিবীর কোথাও তার নিদর্শন নেই। মানুষের ক্ষোভ অত্যধিক রোগী দেখা বড় স্যারদের প্রতি- যাঁরা নিজেদের কায়েমী স্বার্থকে বাস্তবায়ন করতে রেফারেল সিস্টেম ধ্বংস করেছেন দালাল মারফত। ফলে চলতি কথায় দাঁড়িয়ে গেছে "এম,বি,বি,এস কোন ডিগ্রিই না! এফ,সি,পি,এস পাস না করলে সে ডাক্তারই না!" ফেলোশিপ খুবই সম্মানের ব্যাপার। কিন্তু এটি না করলে যে জীবন ব্যর্থ - এই বলদামি ও ইঁদুর দৌড় একমাত্র বাংলাদেশেই আছে! এম,বি,বি,এস অত্যন্ত কঠিন এবং সম্মানজনক ডিগ্রী। রেফারেল সিস্টেম তৈরি করে এর সম্মান না দিলে সব সিস্টেমই ব্যর্থ হতে বাধ্য। এক্ষেত্রে কোর্সের মানোন্নয়ন এবং ছাত্র ও শিক্ষক উভয়পক্ষেই অন্যায্যতা দূর করতে হবে।
আপনার আইডিয়া বেশ ভালো বলতে হবে। আমাদের দেশে ও যদি বাইরের মত প্রথমে জেনারেল প্রাক্টিশিনারকে দেখিয়ে পরে রেফার করে বিশেষজ্ঞ দেখার সিস্টেম চালু করা হত, এবং মানা হত, তাহলে মনে হয় জটিলতা কিছুটা কমতো।জ্বর হলে ও লোকে বিশেষোজ্ঞ দেখাতে গেলেতো সমস্যা।আর এই সুযোগ বিশেষজ্ঞ্ ডাক্তাররা নিচ্ছেন। আর তরুন ডাক্তারদের মাঝে এই জন্য বেশ হতাশা দেখতে পাচ্ছি, তাদের সেবার তুলনায় তারা আসলেই সেভাবে পেইড হননা।
সহমত।
পেশেন্ট রেফার করার সংস্কৃতি বাংলাদেশে নেই বললেই চলে। নির্দিষ্ট বিষয়ের বিশেষজ্ঞের কাছে রেফার করা তো দূরের কথা পারলে যেতে নিষেধ করে। এমনকি ইউরোলজিস্ট যদি অর্থপেডিক সার্জারি করে পেশেন্টের অজ্ঞতার সুযোগ নিয়ে তাও আবার সম্পূর্ণ বিনা কারণে তখন কি সেখানে আর কিছু আশা করা যায়?
আর রিহ্যাবিলিটেশন সেক্টরের মত ইম্পর্টেন্ট সেক্টরটিতো গরীবের বউ এর মত-সবারই ভাবী!!! সবাই রিহ্যাব এক্সপার্ট!!!
মূল লেখা এবং কিছু সুচিন্তিত মন্তব্যে সাধুবাদ জানালাম। আমার মনে হয় এরকম লেখা নিয়মিত প্রকাশ হওয়া দরকার, যাতে করে জাতীয় সচেতনতা সৃষ্টি হয়, আমাদরে আসলে এটারই বড় অভাব।
সুচিন্তিত মতামতগুলোর জন্য ধন্যবাদ। হতাশায় টইটম্বুর কিছু অভিমত দেখলাম। আবারও বলি, IF NOT NOW, THEN WHEN? IF NOT US, THEN WHO?
খুবই চমৎকার প্রস্তাবনা। হেলথ সিস্টেম ঠিক করার জন্য অবশ্যই এরকম একটা ন্যাশনাল ডাটাবেজ তৈরি করা দরকার। যদিও কাজটা সময়সাপেক্ষ এবং ব্যায়বহুল তবুও শুরু করা দরকার। তবে শুধু এটা করেই আসলে কাজ হবে না। আমাদের প্রতিটা জায়গাতেই ছোট বড় মিলিয়ে অনেক সমস্যা এবং সেগুলো একসাথে মিলে জগাখিচুড়ি একটা অবস্থার তৈরি হয়েছে।
যেমন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে একটা আদর্শ হেলথ ইউনিটের জন্য ডাক্তার নার্স আর সহকারী (ওয়ার্ড বয়, আয়া, টেকনিশিয়ান) এদের অনুপাত থাকতে হবে ১:৩:৭, অথচ আমাদের দেশে আছে পুরো উলটো। এখানে ডাক্তার বেশি নার্স কম , সহকারী আরও কম। এই হেলথ ইউনিট দিয়ে মানুষকে সাটিস্ফেক্টরি লেভেলের চিকিৎসা দেয়া কখনই সম্ভব না। আমাদে দেশে যেহেতু হিউম্যান রিসোর্চ অনেক বেশি টাস্ক শিফটিং আমাদের জন্য খুব ভাল একটা অল্টারনেটিভ হতে পারে। ডাক্তার না বাড়িয়ে ডাক্তার এর হাত বাড়িয়ে দেয়া যায়। কিন্তু সরকার এখনও ডাক্তার বাড়িয়ে চলছে। সেই অনুপাতে অন্য গুলো বাড়াচ্ছে না। তারপর মানুষ যখন সেবা ঠিক মত পাচ্ছে না তখন ডাক্তার কে গালি দিচ্ছে। সরকারের ভোট তো আর নষ্ট হচ্ছে না!
আমাদের দেশ যদিও ফারমাসিউটিকেলস এ অনেক এগিয়েছে কিন্তু এরপরও অসংখ্য কম্প্যানি আছে যারা মানসম্মত ওষুধ তৈরি করছে না। এবং গ্রামের দিকে এসব কম্প্যানির ওষুধ অনেক বিক্রিও হচ্ছে। আইন আছে কিন্তু আইনের ফাক ফোকর দিয়ে এরা কাজ করেই যাচ্ছে। আপনি প্রথম যে ঘটনাটা বললেন সেটা শুনে ওষুধের মান নিয়েই প্রথম সন্দেহ হল। এটাকে বন্ধ করা না গেলে ডাক্তার রোগী বাঁচাতে পারবে না।
ডায়াগনস্টিক সেন্টার গুলোর অবস্থাও অনেক ক্ষেত্রেই শোচনীয়। সরকারি হাসপাতাল গুলোতে হয় মেশিন নেই নয়ত টেকনিশিয়ান নেই অথবা থাকলেও একজন যে একা সামলাতে পারছে না। আমি নিজে ইন্টার্ন থাকা অবস্থায় এক রোগীকে শুধু মাত্র এ কারনে বাঁচাতে পারিনি। পরীক্ষা করার লম্বা লাইনে দাড়িয়ে থাকতে থাকতেই সে মারা যায়। আর বেসরকারি ক্লিনিকে খরচ যা হয় দাম রাখে তার ৫০ গুন। যেটা মানুষের ভোগান্তির একটা বড় কারণ।
ডাক্তারদের মধ্যে যারা অসাধু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তারা বেঁচে যাচ্ছে রাজনীতির ছত্রছায়ায় থেকে। আমার পাশের যে ডাক্তার অন্যায় করছে আমার পক্ষে তার অন্যায় বন্ধ করা সম্ভব না। আমি তাকে বললে নিশ্চয়ই সে ঠিক হবে না। এজন্য দরকার সঠিক ভাবে আইনের প্রয়োগ। বরং একদলকে এভাবে অন্যায় করেও টিকে থাকতে দেখে আর একদল উৎসাহী হচ্ছে। আর একদল হতাশ হচ্ছে।
রেফারেল সিস্টেম এর কথা এরই মধ্যে কয়েকজন বলে ফেলছেন যেটা খুব বেশী জরুরী।
আমাদের মেডিকেল শিক্ষা পদ্ধতির ভিতরেও বেশ কিছু গণ্ডগোল আছে। এম্বিবিএস লেভেলে তো আছেই, উচ্চতর ডিগ্রি গুলোর ক্ষেত্রে সমস্যা আরও বেশি। এরকম কয়েকশো সমস্যা আছে যেগুলোর আশু সমাধান দরকার।
এদেশে হেলথ পলিসি যারা বানায়,হেলথ সিস্টেম যারা চালায় তাদের অধিকাংশেরই হেলথ সিস্টেম ম্যনেজমেন্ট, হেলথ ফানান্সিং নিয়ে ধারনা নেই, থাকলেও অল্প ।
হেলথ সিস্টেম নিয়ে পড়াশোনা করতে যেয়ে যতটুকু বুঝলাম আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা গভারনেন্সি/ লিডারশীপ এ। কারণ হেলথ সিস্টেম এর যে কোন একটা বিল্ডিং ব্লক ঠিক করতে চাইলে সেটা করাতে হবে গভারনেন্সির হাত দিয়ে। আপনি যেই সমাধান বললে, আমি যেগুলো বললাম সবক্ষেত্রেই তাই। আমাদের গভারনেন্সির অবস্থা কেমন সেটা কম বেশি আসলে সবাই জানি। আমি এরপরও হতাশ না। এরপরও সব ঠিক হবে তবে সেটা অনেক ধীরে। গভারনেন্সি ঠিক থাকলে কাজটা একটু দ্রুত হত।
আপনার পরিকল্পনা কিংবা ভবিষৎ চিন্তা আধুনিক বাস্তব সম্মত।কিন্তু সমস্যাটা হলো অন্যখানে যারা এই দেশটা চালায় তারা এটা বুঝার ক্ষমতা রাখে না। ।তাই এমন পরিবর্তন এর চিন্তা বাস্তবায়ন এই দেশে আদৌ হবে কিনা আমি ঠিক জানি না,আর হলেও সেটা আমার আপনার জীবদ্দশায় না।আপনি আমাকে হয়তো নিরাশাবাদী বলতে পারেন,কিন্তু সত্যটা হলো আমি আশার কিছু দেখি না।আমরা যাদের হাতে রাষ্ট্রের শাসন ব্যবস্থা তুলে দেই তারা ঠিকমতো একটা মৌলিক গরুর রচনা লিখতে পারবে না।
সুশিক্ষার অভাবের সাথে রয়েছে সীমাহীন দুর্নিতি,দারিদ্রতা,সুশাসন এর অভাব।এতো বাধা পেরিয়ে এতোটা আধুনিক চিন্তার মননশীল মানুষ, সততা আর নীতি ভিত্তিক রাজনীতিক দল কিংবা রাজনীতিক চর্চা পাবো কিনা ঠিক জানি না।সুশাসন প্রতিষ্ঠিত না হলে আমরা শুধু আশার বানী উড়িয়ে যেতে পারবো কিন্তু সেই কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌছাতে পারবো না কোন দিন।
মাসুদ সজীব
নতুন মন্তব্য করুন