ইন্টার্ন ভাইয়া বলে যাচ্ছেন, ''আমার ডিউটি সেদিন ছিল ট্রমা সেন্টারে। দুপুরের দিকে একজন পেশেন্ট আসলো। রোগীর সাথে দুইজন লোক। একজন দেখলাম তেমন কথা বলছে না, তবে চোখে দিশেহারা ভাব, অন্যজন বকবক করেই যাচ্ছে।। বিশাল জ্ঞানী। অন্য লোকটাকে বলছে, ''কি রকম রক্ত পড়ছে দেখছেন? এই রকম রক্ত পড়লে এই হয়ে যাবে সেই হয়ে যাবে। পা মনে হয় ভেঙে গেছে।'' পেশেন্টের আরটিএ (রোড ট্রাফিক এক্সিডেন্ট)। পা দিয়ে ভালোই ব্লিডিং হচ্ছে। হাত দিয়ে ধরে বুঝলাম ফ্র্যাকচার হয়নি। স্টিচ দিলেই শেষ হয়ে যাবে। এক্স-রে করানোর পর প্যাডে সুচার (সুতা) আর ঔষধ লিখে দিলাম নিয়ে আসার জন্য। বেশি কথা বলা এটেন্ড্যান্ট কম কথাওয়ালাকে বলল, 'আপনি বসেন। আমি নিয়ে আসছি। পরে টাকা দিলেই চলবে।' লোকটা ঔষধ আনতে যাওয়ার পর আমি জিজ্ঞেস করলাম, 'লোকটা কে? আপনাদের আত্মীয়?' কম কথাওয়ালা উত্তর দিলো, 'না। এখানে আসার পরে দেখা। খুব ভালো লোক। আমাদের অনেক উপকার করছে।' বুঝলাম দালাল। একটু পরে লোকটা সুচার আর ঔষধ নিয়ে আসলো। চারটা সুচার লাগলো। আমি নিজ হাতে স্টিচ দিলাম। প্রেসক্রিপশন লিখে দিলাম। সবমিলিয়ে কত খরচ হয়েছে জানো?''
আমি বললাম, ''কত''?
- সুচারের দাম একটু বেশি। সুচার আর ঔষধ মিলিয়ে খুব বেশি হলে দাম ১৫০০ বা ২০০০ হবে। বিল এসেছিল কত জানো?
-কত?
-আন্দাজ করো।
-দালাল যেহেতু কিছু টাকাতো মারবেই। উউউউ... কত? ৩০০০-৪০০০?
-১২০০০ টাকা। আমার লেগেছিল চারটা সুচার। বিল এসেছে ১২ টা সুচারের।
-কী বলেন? আপনি কিছু বলেননি কেন?
-আমি বললে হয়তো রোগী কিছু কম টাকা দিয়ে চলে যেতে পারতো? কিন্তু আমি রুমে যেতে পারতামনা। আমার হাত-পা ভেঙ্গে শুইয়ে রাখা হতো।
-!!!
-বিশ্বাস হচ্ছে না। আরতো বেশিদিন নেই। তুমিও ইন্টার্ন করবে, তখন বুঝবে। আমাদেরতো প্রায়ই হুমকি দেয়া হয়, এই এই কোম্পানির ঔষধ লিখবেন। নাহলে রুমে যেতে পারবেননা। ড্রাগ লেখা নিয়ে আমার তেমন চিন্তা নেই। মূল চিন্তাটা কী জানো? এই পেশেন্ট যদি কোনদিন জানে ২০০০ টাকার ট্রিটমেন্ট করে তার কাছ থেকে ১২০০০ টাকা নেয়া হয়েছে, সে যা বলবে তা হচ্ছে, শুওরের বাচ্চা ডাক্তার। নিশ্চয় ছয় সাত হাজার টাকা কমিশন পেয়েছে। কিন্তু পেশেন্টটা জানলোনা, আমি এক টাকাও পাইনি। আমি শুধু আমার জীবনটা বাঁচিয়েছি।
উপরের ঘটনাটি ফরিদপুর মেডিকেল কলেজে ঘটেছে ১ মাসও হয়নি। আমার জীবনের কাহিনী। এবং এটা বাংলাদেশের প্রায় সব মেডিকেলেরই কাহিনী।
ডাক্তাররা বিশাল ভালো, তারা মানবতার সেবা করেন, ঈদের দিনেও তাদের ছুটি নেই- এই সকল কথা লিখার জন্য আমি কি-বোর্ড ধরিনি। আমি জানি ঈদের দিনে সেনাবাহিনীর অর্ধেক সদস্যও ছুটি পাননা, পুলিশের বিশাল অংশ ছুটি পাননা, সুতরাং ডাক্তাররা ঈদের দিনে ওটি করে মহান হয়ে গেছেন- এই সকল কথা বলার কোন মানে হয়না। উনারা চাকরি করছেন, সুতরাং চাকরির রুলস অনুযায়ী কেউ ছুটি পাবেন, কেউ পাবেননা-এটাই নিয়ম। এটা দিয়ে মহান হওয়ার কিছু নেই। আমি শুধু কিছু বাস্তব বিষয়ের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই।
আমাকে যদি জিজ্ঞেস করা হয়, আপনি কোন পেশাকে সবচেয়ে মহান হিসাবে মনে করেন, আমি কোন চিন্তা-ভাবনা ছাড়াই সাথে সাথে উত্তর দিবো, শিক্ষকতা। আমার ব্যক্তিগত মতামত, শিক্ষকতার চেয়ে মহান আর কোন পেশা হতে পারেনা। কিন্তু আমি নিশ্চিত, মোটামুটি সবাই তাদের স্কুল-কলেজ লাইফে এমন শিক্ষকের মুখোমুখি হয়েছেন যার কাছে কোচিং না করলে, কখনোই ভালো রেজাল্ট করা যায়না। এরকম শিক্ষক প্রায় প্রতি স্কুলে ১-২ জন থাকেন। আমার জীবনে আমি এমন শিক্ষক পেয়েছি যিনি আমার যে উত্তরটা কেটে দিয়েছেন, যার ফলে আমি মার্জিন মার্কসে পাশ করেছি, সেই একই উত্তরে তার কাছে কোচিং করা ছাত্রকে পূর্ণ মার্কস দিয়ে ৮০% এর উপর মার্কস পাইয়ে দিয়েছেন। সব জায়গায় এরকম শিক্ষক থাকার পরও কেউ কখনোই বলবেননা, মাস্টারেরা সবাই খারাপ, এদের টাকা না দিলে এরা মার্কস দেয়না।
রানা প্লাজা ধ্বসে ১০০০ জনের উপর মারা গেলেও কেউ কখনো বলেনা এবং এটা বলা উচিতও না, সব ইঞ্জিনিয়াররা খানকির পুত, এরা টাকার জন্য বিল্ডিং-এর ডিজাইন উল্টা-পাল্টা করে। কারণ খুব সোজা। কেউ খারাপ কাজ করলে সেই দোষী, তাকেই শাস্তি দেয়া উচিত, অন্যদের নয়। আর একটা পেশার সবাই খারাপ হয়ে গেছে এটা ভাবার কোন কারণ নেই। ইমাম সাহেব ৭ বছরের বাচ্চাকে মসজিদের ভেতর ধর্ষণ করলেও কারো ধর্মানুভূতীতে আঘাত লাগেনা। কেউ বলেনা বা বলাও উচিত নয়, সকল ইমামরা চুদির ভাই, ছোট বাচ্চাদের দেখলেই এদের দাঁড়িয়ে পড়ে। রাজ্জাক সাহেব জামাতীদের পক্ষে ওকালতি করলেও আমাদের বলা উচিত না, ব্যারিস্টার, এরাতো মানুষের জাত না। উল্টা-পাল্টা সংবাদ রিপোর্ট করার পরেও কেউ বলেনা, সাংবাদিক! হুহ, সবগুলা চুতমারানি। ........................ থামেন, একটা পেশা আছে, যাদের সবাইকে এক লাইনে গালি দেয়া যায়।
ডাক্তার! শুওরের বাচ্চারা, সবগুলা কসাই।
না উপরের লাইনটা সব জায়গায় ঠিক নয়। বিদেশি ডাক্তাররা খারাপ না। বিদেশি হওয়ার জন্য সাদা চামড়া লাগবেনা, পাশের দেশ ভারত গেলেই চলবে। শুধু কসাই হলো বাংলাদেশি ডাক্তার। আরো সহজ করি। প্রাইভেট মেডিকেল বা হাসপাতালের ডাক্তাররাও কসাই না। কসাই শুধু সরকারি হাসপাতালের ডাক্তাররা। এরা এতো এতো টেস্ট দিয়ে কমিশন খায়, ক্যান আগের কালের ডাক্তাররা টেস্ট ছাড়া রোগী দেখে নাই? জাফ্রিকবাল স্যার, উত্তর দিয়ে যান।
আমার রুমমেট পিয়াল। তার খালার গল্পটা শুনুন।
খালা যথেষ্ট ধনী পরিবারের। গাইনিকোলজিকেল কী একটা সমস্যায় তিনি এক ডাক্তারের কাছে গেলেন। ডাক্তার তাকে ৪টা না ৫ টা টেস্ট করিয়ে নিয়ে আসতে বললেন। তিনি টেস্ট করিয়ে ডাক্তার দেখিয়ে এসে পিয়ালের কাছে গজগজ করা শুরু করলেন, ''বাংলাদেশের এইগুলা কিসের ডাক্তার! শুধু কমিশন খাওয়ার ধান্দা। এতগুলা টেস্ট করতে দিলো! সব যদি টেস্ট করতে হয় তুমি ডাক্তার হয়েছো কেন? আগেরকার ডাক্তারেরা টেস্ট না করে ঔষধ দেয়নি।'' খালা দুই মাস পরে ঘোষণা দিলেন, তিনি এই দেশে আর ডাক্তার দেখাবেননা। বাংলাদেশের ডাক্তার একটাও ভালো না। তিনি ইন্ডিয়া যাবেন। সেখানে ডাক্তার দেখাবেন। খালা একমাস পরে ভারতে ডাক্তার দেখিয়ে আসলেন। পিয়ালের কাছে হাসতে হাসতে বললেন, ''ইন্ডিয়ার ডাক্তারেরা কত ভালো জানিস? একদম শিওর না হয়ে কোন ঔষধই দেয়না। আমাকে ১৩ টা টেস্ট করলো, তারপর ঔষধ দিলো। আর বাংলাদেশি ডাক্তারদের দেখ। কোন টেস্ট-ফেস্ট করেনা। আন্দাজের উপর ঔষধ দিয়ে দেয়।''
খুব ভালো করে লক্ষ্য করুন, বিদেশি ডাক্তার আর টনসিলেকটমি অপারেশন করতে লাখ টাকা লাগে এরকম প্রাইভেট হাসপাতালের বিরুদ্ধে কারো কোন অভিযোগ নেই। সকল অভিযোগ সরকারি মেডিকেলের ডাক্তার আর গ্রাম থেকে উঠে আসা নুরুল ইসলামদের বিরুদ্ধে। এই অভিযোগপ্রাপ্তরা লাঞ্ছিত হতে হতে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেলেই শুরু হবে কর্পোরেট স্বাস্থ্য শোষণ।
আমি বলছিনা সকল ডাক্তার ভালো। অনেক ডাক্তার পৈশাচিকরকম খারাপ আচরণ করেন রোগীদের সাথে, ৫০ টাকা কম রাখতেও রাজি না, ঔষধ কোম্পানি থেকে কমিশন খান, ডায়গনস্টিক সেন্টার থেকে কমিশন খান- সবই সত্য। কিন্তু আপনি যখন সিম্পলিফিকেশন করে পুওর ম্যানস সকল ডাক্তারদের একই তকমা -'ধান্দাবাজ', 'কমিশনখোড়', 'কসাই'- বরাদ্দ করেন, তখন সত্যিই গায়ে লাগে। আর বিদেশি ডাক্তারদের প্রতি যাদের অনেক মায়া-মহব্বত, আপনাদের বলছি, আপনারাতো ভারতে গিয়ে প্রাইভেট ডাক্তারের চেম্বারে বা হাসপাতালে দেখান, দয়া করে একবার ভারতের সরকারি হাসপাতালে ঢু মেরে আসবেন। একবার ঘুরে আসলে বলবেন, বাংলাদেশেতো ওয়ার্ল্ড ক্লাস স্বাস্থ্য সেবা। আর যদি সরকারি হাসপাতালে যাওয়ার সময় সুযোগ করতে না পারেন, তাহলে কষ্ট করে ভারতে গিয়ে টাকা-পয়সা খরচ করার কী দরকার- দেশেই লাখ টাকা খরচ করার জন্য স্কয়ার, এপোলো আছে- ঐখান থেকে ঘুরে আসুন। আর হ্যাঁ, আপনাদের ঐ ইন্ডিয়ান ডাক্তারও কিন্তু ডায়গনোস্টিক সেন্টার থেকে কমিশন পান।
একজন ডাক্তার কত টাকা বেতন পান? আপনার সর্দি হোক, কাশি হোক, পেটে ব্যথা, মাথায় ব্যথা, চুলের আগা ফাটা- যাই হোক না কেন, আপনি কার কাছে যাবেন? একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে। কখনই একজন এমবিবিএস ডাক্তারের কাছে যাবেননা। ফলে এখন আমাদের এমবিবিএস করার পরই মাথায় ঘুরে পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন করতে হবে। ধরেন এডমিশন টেস্টের বিশাল সমুদ্র পাড়ি দিয়ে আমি এমএস বা এমডিতে ভর্তি হয়ে গেলাম। ভর্তি হওয়ার পর কী করতে হবে জানেন? আমাকে একজন প্রফেসরের আন্ডারে একটি মেডিকেল কলেজে ৪ বছর কাজ করতে হবে। আমার বিশাল গালভারী একটা পোস্ট থাকবে- অনারারি মেডিকেল অফিসার। বেতন কত জানেন? ০ টাকা। জ্বি, আসলেই আমাকে কোন বেতন দেয়া হবেনা। বলতে পারেন, এইসময় আমি খাবো কী? আমার মা ঘোষণা দিয়েছেন, এমবিবিএস পাশ করার পর আমার নামে কোন টাকা-পয়সা স্যাংশান হবেনা। আর কোন পেশা দেখাতে পারবেন যেখানে টানা চার বছর কোন বেতন ছাড়া সার্ভিস দেয়া হয়?
বাংলাদেশের সরকারি মেডিকেলের ডাক্তাররা খুব খারাপ। মনে যদি করতে পারেন, কিছুদিন আগে প্রথম আলোর দ্বিতীয় পাতায় ৩ কলাম জুড়ে একটা বক্স খবর ছাপানো হয়েছিল। খবরটা খুবই ভিবৎস। খবরটা এরকম- ফরিদপুর মেডিকেল কলেজে বাচ্চা ডেলিভারির সময় বাচ্চার মাথা ছিঁড়ে চলে এসেছে। এরকম কাজ হলে ডাক্তারদের মানুষ গালি দিবেনা কেনো বলুনতো? কিন্তু প্রথম আলো যে খবরটা ছাপতে ভুলে গেছে সেই বাচ্চাটা আইইউডি (ইন্ট্রাইউটেরাইন ডেথ) ছিল। আইইউডি হলে জরায়ুর ভিতরে মেসিরেশন (মানুষ মারা গেলে যেরকম পঁচতে থাকে, এখানেও এরকম পঁচতে থাকে। পার্থক্য হলো, মানুষ মরলে পঁচা গন্ধ বের হয়, আর আইইউডিতে একটু মিষ্টি গন্ধ বের হয়) হয়। নিয়মটুকু হচ্ছে, আইইউডি হলে আমরা কখনই সিজারিয়ান সেকশন করিনা। মাকে লিথোটমি পজিশনে শুইয়ে রাখা হয়, যাতে নরমালি বাচ্চা ডেলিভারি হয়। একটা আইইউডি যার ইতমধ্যেই মেসিরেশন ডেভেলাপ করেছে তার ডেলিভারির সময় এই মিসএডভেঞ্চার- এটা প্রথম আলো উল্লেখ করতে ভুলে গেছে এবং এর কোন ফলোআপও তারা ছাপেনি। জুড়সে বলুন, কসাই ডাক্তার।
আমার প্যাথলজির প্রফেসর ড. সৈয়দ গোলাম কিবরিয়া সরকারি মেডিকেলের ৩০-৪০ হাজার টাকার চাকরি ছেড়ে লাখ টাকার উপরের বেতনের প্রাইভেট মেডিকেলের চাকরিতে জয়েন করেননি। মাইক্রোবায়োলজির প্রফেসর ড. রাফিউদ্দিন আহমেদকে তার ২২ বছরের চাকরি জীবনে ২৫ বার ট্রান্সফার করা হয়েছে। তিনি চাকরি ছেড়ে দিতে পারতেন। তারপরেও পড়িয়ে যাচ্ছেন। এরকম অনেক উদাহরণ আমি দিতে পারবো। উনারা শুধু এই দেশটাকে দিয়ে যাচ্ছেন। আরেকবার 'শালার পুত কসাই' বলার আগে একবার চিন্তা করবেন প্লিজ।
_______________________________________________________
এ হাসনাত
সচলে আমার অন্যান্য লেখাঃ
প্রিয় আওয়ামিলিগ...
আমার নজরুল কাহন
মহান শাবি ভ্রমণ
মেডিকেল লাইফ সাক্স
আমি যামুনা। আমার ইচ্ছা।
ঢাকা-সিলেট বাস ভ্রমণ এবং আমার স্বজাতি ভাবনা
মৃত্যু
মন্তব্য
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
ক্যান?
আমার একগাদা ব্যাচমেট ডাক্তার... প্রায় অনুরূপ অভিজ্ঞতাগুলোর সাথে আমি পরিচিত... তাই
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
শুধুমাত্র সমস্যা (যেমন দালাল) আর সমস্যার সম্ভাব্য সমাধান থাকলেই বোধহয় বেশী ভালো লাগতো। লেখাটার টোনে সরকারী মেডিকেল কলেজের ডাক্তারদের কেমন যেনো ভিক্টিম হিসেবে দেখানোর একটা প্রয়াস আছে যেটা পাঠককে মূল বিষয় ছাড়িয়ে অন্যদিকে তর্কে নামাবে বলে মনে হচ্ছে।
____________________________________________________________________________________
তবু বিহঙ্গ, ওরে বিহঙ্গ মোর,
এখনি, অন্ধ, বন্ধ কোরো না পাখা।
এসব বলে আর লাভ কি ভাই।।।আমাদের তথাকথিত প্রফেসর রাও কিন্তু কম ক্ষতি করেনি এই প্রফেশনের।সাধারন মানুষ আর কত বুঝবে।
সহমত। গত সপ্তাহেই একটা ইন্ডিকেশন ছাড়া ল্যাপারোটমি দেখলাম। তাঁর মদন এসিস্ট্যান্ট আবার ওটি নোটে লিখেছে, ইন্ডিকেশন- সাব এক্যুট ইন্টেস্টিনাল অবস্ট্রাকশন- বোঝো কাণ্ড! চুরিটাও ঠিকভাবে করতে শেখে নি! এদের বিরুদ্ধে কে কথা বলবে? বললেই এফ,সি,পি,এস ফেইল!!
অনেক দুঃখ থেকে লেখাটি উৎসারিত। তবে আরো গোছানো এবং শানিত যুক্তির ঝলক থাকতে পারত। এ ধরনের বিষয়ে আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে কাজ দেয় বেশি। আপনার লেখার চুম্বক অংশ আসলে এটুকু -
"কর্পোরেট স্বাস্থ্যশোষণ" -একেবারে মোক্ষম নামকরণ। এবং এর শিকার কিন্তু স্বয়ং তরুণ ডাক্তাররাও, যারা দিন রাত মুখে রক্ত তুলে গাধার খাটুনি খাটছেন। কারণ উঁচু তলার কনসালটেন্টরা সবাই যে, হিপোক্রেটিক ওথের সম্মান রক্ষা করেন -এমন নয়, এবং তাঁরা থাকেন ধরা-ছোঁওয়ার বাইরের গজদন্ত মীনারে। মানুষ জানেও না যে, কর্পোরেট হাসপাতাল এবং বেসরকারী মেডিকেল কলেজগুলোও মাত্র ১৬-২০,০০০ টাকায় তরুণ মেধাবী চিকিৎসকদের ৪৮ ঘণ্টার শ্রম কিনছে। ইউরোপের ওয়ার্ক-ডিরেক্টিভে ডাক্তারদের সর্বোচ্চ কর্মঘণ্টা ৪৮ ঘণ্টা নির্ধারণ করা আছে, কারণ ওসব দেশে ৪০ ঘণ্টা কাজ করলে বাকি সময়ের জন্য পর্যাপ্ত ডাক্তার পাওয়া যাবে না। বড়লোকের দেশে ডাক্তারি পড়ার জন্য এত লম্বা লাইন নেই। আমাদের দেশে ইউরোপ থেকে ৪৮ ঘণ্টার কনসেপ্ট-টা আমদানী হল ঠিকই- কিন্তু বাড়তি ৮ ঘণ্টার শ্রমের দামটা দিতে ভুলে গেলেন কর্পোরেট কর্তারা। ডাক্তারের ওয়ার্কিং ডে কিন্তু অধিকাংশ দেশেই রোস্টার অনুযায়ী সপ্তাহে পাঁচ দিনের বেশি নয়। আমাদের এখানেই ছ'দিনের চল। ভারতের ব্যাপার জানি না। ইউরোপ-আমেরিকায় মেডিকেল স্কুলগুলো ৫ দিন খোলা থাকে। তাতে ওদের শিক্ষার্থীরা আমাদের চেয়ে কিছু কম শেখে না! আমাদের এখানেই সম্ভব বৃহস্পতিবার রাতে ওয়ার্ড ফাইনাল দিয়ে শনিবার সকালে তিনটে আইটেম পরীক্ষা দেওয়া। শুক্রবারেও পরীক্ষা খুব ব্যতিক্রম নয়। এভাবে শুধু রোবটই তৈরী হওয়া স্বাভাবিক। তারপরও তো আমাদের ডাক্তারির শিক্ষার্থীরা মানুষ হয়েই বেরুচ্ছে! এটা অনেক বড় কিছু।
৫বছরের এম,বি,বি,এস এবং এক বছরের ইন্টার্নশিপ -অর্থাৎ মাস্টার্সের ইকুইভ্যালেন্ট ডিগ্রীধারী লোককে ঢাকার বাইরে কিছু জায়গায় ১২০০০-১৫০০০টাকার অপমানজনক বেতনেও কাজ করতে হয়। যা বি,সি,এস স্কেলের মোট বেতন (১৭৪০০ টাকা) এর চেয়েও কম। এসব নিয়ে কথা বলার কেউ নেই। কারণ বসদের মাসে ইনকাম মাশাল্লাহ- ঢাকায় তো অনেকেরই কোটি ছুঁই ছুঁই- ঢাকার বাইরে ৫লাখ থেকে ১৫লাখের আশেপাশে।
তরুণদের মধ্যে যাদের উচ্চ পর্যায়ের আত্মীয়-স্বজন আছে, তারা পোস্টিং পায় ভালো জায়গায়, কেউ কেউ আবার পাশ করেও স্রেফ আরামের জন্য অন্য পার্ট ১ করা লোকদের বঞ্চিত করে সহকারী রেজিস্ট্রারের পদ জবর দখল করে রাখেন। বড় ভাইদের মুখে শুনতে পাই পোস্টগ্র্যাজুয়েট পরীক্ষকদের অনেকে স্রেফ ব্যবসায়িক কারণে ছাত্রদের পাশ করান না। একটা নজির তো ইন্টার্নশিপের সময় নিজ কানেই শুনলাম। ক্যাজুয়াল মুডে স্যার বলছেন- "তিন জন একই রকম ভালো পরীক্ষা দিয়েছে, কিন্তু তিন জনকেই তো পাশ করানো যায় না। তাই এক জনকে এবার পার করলাম।" থিসিস পার্ট কারো একবারে উৎরেছে এমন সৌভাগ্যবান ব্যক্তির দেখা মেলে নি!
পোস্টগ্র্যাজুয়েশনের পরীক্ষকদের যদি ৫ লাখ টাকা বেতন দিয়ে শুধুমাত্র রেফার্ড কেস দেখার প্রস্তাব দেয়া হয়- তাঁরা কি রাজি হবেন? তাহলে ছাত্রদের আসল পরীক্ষা হোত। তাছাড়া আরেকটা কথা শুনতে পাই পোস্টগ্র্যাজুয়েশনে বিশেষত সার্জারিতে পাশ করতে নাকি ২৪ ঘণ্টা লেগে থাকতে হবে!
প্রশ্ন হল মানুষ ২৪ ঘণ্টা কীভাবে কাজ করবে? দুই, কোন কাজ শিখতে ২৪ ঘণ্টা লাগলে বুঝতে হবে সেই কাজে তার সহজাত দক্ষতা বা অ্যাপ্টিচ্যুড নেৎ। কাজেই কাজটি ত।র ছেড়ে দেয়াই উচিত!
দালালদের দৌরাত্ম্য ক্লিনিকগুলোর মালিক এবং বিশেষণে বিশেষায়িত বিশেষজ্ঞ গণের মধ্যে কিছু লোক করেছেন। তরুণ চিকিৎসকদের হাত-পা বাঁধা। বি,সি,এস হতে দুই বছর সময় লাগে। এ সময় ১৫,০০০-২০০০০ এর অমানবিক বেতনে ৪৮ ঘণ্টা না খাটলে বা খ্যাপ না দিলে তার বাসা ভাড়া, পেটের ভাত এবং এফ,সি,পি,এস-এম,ডি-এম,এস পরীক্ষার ফি - কিছুই জুটবে না। দুর্ভাগ্যজনক হলেও এটা একটা ক্যাচ-২২ সমস্যা। অনাহারীদের দুঃখের কথা আর কি বলব।
শুধু এটাই বলি, উপযুক্ত পারিবারিক সাপোর্ট এবং জায়গামত মামা-চাচা না থাকলে এম,বি,বি,এস পড়াটা এখন বুদ্ধিমানের কাজ নয়।
আপনার লেখা চলুক। লেখা ভালো হয়েছে।
কথাটা শুনে কষ্ট লাগলেও মনে এখন তাই সত্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আপনি ইন্ডিকেশন ছাড়া ল্যাপারেটমি দেখেছেন। ক্লিনিকে ক্লিনিকে ইন্ডিকেশন ছাড়া সি-সেক এখন ডাল ভাত হয়ে দাঁড়িয়েছে।
প্রচুর দেখেছি উহাও।
আপনিও উদাহরণ তৈরী করুন।
ভালো থাকবেন।
--------------------------
কামরুজ্জামান পলাশ
এক হাতে তালি বাজে? মিসপার্সেপশন চেন্জ করতে হলে একটা পাহাড় নড়ানো ভূমিকম্প লাগবে - অথবা কয়েকযুগ সময় লাগবে।
রূমমেট পিয়ালের খালার গল্প দিয়ে আপনি কি জেনারেলাইজেশন করলেন? যে জেনারেলাইজেশন না করতে আপনি পুরো লেখায় রিকোয়েস্ট করলেন? আপনি যা বলেছেন তা যুক্তিযুক্ত এবং বহুলাংশে সত্যি। কিন্তু আপনার লেখার মূল জিনিস যেটা - জেনারেলাইজেশন না করার অনুরোধ, ঠিক সেই কাজটি আপনি কেন করলেন বলুন তো? এই খালারা তো সাধারণ জনগণের প্রতিনিধি নন, এঁরা তো ঈদেকেনাকাটা করতেও কলকাতা/থাইল্যান্ড/সিঙ্গাপুর যান। আমার মতে চিকিৎসকদের উচিৎ আমাদের দেশের সাধারণ মানুষ, যাঁদের সামর্থ্য নেই বিদেশ তো দূরে থাক, বেসরকারী হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা নেয়ার, তাঁদের সাহায্য করা। এতে আর কিছু না হোক, দিনশেষে আয়নায় নিজের মুখ দেখে আদর করতে ইচ্ছে করবে।
সমস্যাগুলো তুলে আনাতে ভালো লাগলো। এর সমাধান কী করে হতে পারে, এনিয়ে কি কিছু চিন্তা ভাবনা করেছেন? করে থাকলে আনুন না আরেকটা পোস্টে।আপনার লেখা পড়তে ঝরঝরে,লিখতে থাকুন।
____________________________
দয়া করে ভুল অর্থে চিন্তা করবেননা। আপনি যেভাবে বলছেন সেই চিন্তা করে আমি লিখিনি। লিখেছিলাম উদাহরণ দিতে। খালার কথা চিন্তা করুন। তিনি বাংলাদেশি ডাক্তারদের (ডাক্তারকে নয় কিন্তু) কিভাবে খারাপ, আর বিদেশি ডাক্তারদের ফেরেশতা হিসাবে চিহ্নিত করেছেন। বাংলাদেশে এরকম হাজার হাজার মানুষ পাবেন, যারা এরকম চিন্তা করেন। এটা যে কেবল সমাজের উপরের তলায় তা না, নিচের তলায়ও বিদ্যমান। আমি একটা টিউশনি করাই। সেখানে সব মাসে তারা আমাকে পুরো বেতনটাও দিতে পারেনা। ১৫০০ টাকা দিয়ে বলবে, ভাই এই মাসে দিতে পারলামনা। আগামি মাসে দেখি। আমার ছাত্রীর বাবার চোখে বাংলাদেশের ডাক্তার একটাও ভালো না। আর ভারত হচ্ছে স্বর্গ।
আপনার কেন মনে হচ্ছে কেউ যখন 'ডাক্তাররা কসাই' বলেন, তখন সব ডাক্তার এর কথা মাথায় রেখে বলেন? সে তো সুনির্দিষ্ট ডাক্তার এর কথা ভেবে বলতে পারেন! আর আপনি কি বলতে চান, যেসব ডাক্তার অসাধু ডাক্তারি করবেন তাদের আমরা ছেড়ে কথা বলব? তাদের অন্যায় এর কথা আমরা বলবনা? অনেক তো আপনাদের অসহায়তার উদাহরণ দিলেন, কেন বলেননি খোলাসা করে যে কি কি অন্যায়, অসাধুতা কিছু ডাক্তাররা করে থাকেন রুগীর সাথে, কিভাবে অনেক ডাক্তার রুগীদের চরমভাবে বিপর্যস্ত করে ফেলেন? ভালোর সাথে মন্দ থাকবেই, এ কথাটা মেনে নেয়া যায়। কিন্তু তাই বলে বলবেননা মন্দ লোকের ব্যাপারে কথা বলা যাবেনা?! নিজের কোলে ঝোল টানছেন কেন বুঝলামনা! এও বুঝলামনা ভাবছেন কেন গালিবর্ষণকারী ব্যক্তি সবসময় generalised করে গালি দেন। আরেকটা কথা, সাধারণ মানুষ আপনাদের মত বিজ্ঞ ডাক্তার নন, সবাই ধৈর্যের এবং সহনশীলতার প্রতিমুর্তিও নন, সবার শিক্ষাগত মান ও এক নয়। এই সাধারণ মানুষগুলোর তাই সহজে ভেঙ্গে পড়ার কথা, না বুঝে নানাবিধ কটু মন্তব্য করা এদের পক্ষে অস্বাভাবিক নয়। বিজ্ঞ ডাক্তার সাহেব, এসব তো আপনাদের বুঝার কথা! আপনি যে আমজনতা কে একটা lesson দিয়ে দিলেন, কিছু না ভেবেই কি দিলেন? গালি না দেয়ার মত কাজ করলে, গালি দেয়ার মত মানুষের সংখ্যা হয়তো কমে আসবে। আমজনতার জন্য লিখেছেন ভালো করেছেন, দয়া করে অসাধু ডাক্তারদের উদ্দেশ্যেও এবার কিছু লিখুন।
আপনি রেগে যাচ্ছেন কেন সেটা বুঝলামনা। আপনার ধারণা মানুষ যখন গালি দেয় তখন জেনারেলাইজড করেনা। আমার তা ধারণা না। পড়াশুনার খাতিরেই দিনের বেশিরভাগ সময় হাসপাতালের চারিদিকে কাটাতে হয় তো। মা ডাক্তার, বোনও ডাক্তার। সুতরাং অভিজ্ঞতাতো কম হলোনা।
আমি কি একবারও বলেছি যারা অসৎ তাদের বিরুদ্ধে কথা বলা যাবেনা।
কমেন্ট পড়ে মনে হচ্ছে আপনার এ ব্যাপারে জানা প্রবল পরিমাণে। আপনিও লিখুন না। প্রথম বাহবাটা আমিই দিবো।
আর হ্যাঁ, রাগটা কমান দয়া করে। স্বাস্থ্যের জন্য ভালোনা।
দালালদের জন্ম কাদের পৃষ্ঠপোষকতায়??
আমার ধারণা সম্পর্কে আপনার অনুমান কিছুটা ভুল। কিছু মানুষ হিতাহিত জ্ঞানশুন্য হয়ে সবার উপর রাগ ঝাড়ে। কিন্তু সবাই নয়! আপনি সেই উধো জাতীয় কিছু মানুষের পিন্ডি বুধো জাতীয় লোকদের ঘাড়ে চাপালে তা generalization এর মতই লাগে! প্রমান: আপনার লেখা পড়ে শুধু আমার একার ই এমন ধারণা হয়নি! যা হোক। ক্ষোভ পুষে রাখা স্বাস্থের পক্ষে হানিকর। যেমন আপনি আপনার লেখার শেষাংশে এই অবোধ মানুষগুলোর উপর জমে থাকা ক্ষোভ পুষে রাখেননি, আমিও তেমন রাখলামনা! ওহ! আরেকটা কথা! অসাধু ডাক্তারদের সম্বন্ধে আমার জানা প্রবল পরিমানে না হলেও কিছু পরিমানে তো আছে বটেই! যেখানে আমি এবং আমার সন্তান এমন কোনো এক অমানবিক ডাক্তারের পাল্লায় পড়ে যথেষ্ট ভুগেছি! হ্যা, লেখার মত কিছু উপাদান জমা তো আমার ভেতরে আছে বটেই! লিখব হয়ত কখনো! উত্সাহিত করার জন্য ধন্যবাদ। ডাক্তারদের প্রতি প্রবল শ্রদ্ধাবোধ বরাবর ই ছিল এবং আছে। শুধু ইদানিং ভরসা করতে ভয় পাই। মানুষ চেনা বড্ড কঠিন! আবার কাকে ভরসা করে না জানি পস্তাতে হয়? যেসব ডাক্তাররা আমাদের মত সাধারণের মনে ডাক্তার ভীতি ঢুকিয়ে দিয়েছে, তাদের সত্যি ই কসাই ডাক্তার ছাড়া অন্য কিছু বলা যায়না! ভুক্তভুগীর কাতারে দাঁড়ালে টের পেতেন কত দুঃখে মানুষ এসব বলে!
প্রথমেই বলে নেই দেশের ডাক্তারদের সমন্ধে আমার কোন অভিযোগ নেই। তবে বিদেশে এসে কয়েকবার ডাক্তারের কাছে গিয়ে যেটা ভালো লেগেছে, তা হলো, ডাক্তারেরা রোগের লক্ষণ মন দিয়ে শুনেন এবং তারপর ডায়াগনোসিসে কিভাবে পৌছুচ্ছেন সেটা ব্যাখ্যা করেন, শারীরবৃত্তিয় কি ঘটনার ফলে আমি রোগ লক্ষণ দেখতে পাচ্ছি, এবং কি কি ভাবে চিকিৎসা করা সম্ভব সেগুলো বুঝিয়ে বলেন, অথবা রোগ বিষয়ে আরও কিভাবে জানতে পারব সে তথ্যসূত্র দেন। এবং যখন রোগ নিয়ে নিজেও একটু পড়াশোনা করি তখন ডাক্তারের চিকিৎসাপদ্ধতি ও ডাক্তারের উপর ভরসা পাই যে তিনি সঠিক পরামর্শ দিচ্ছেন। টেস্ট করাতে হলে কেন করতে দিচ্ছেন সেটাও বুঝতে পারি।
এখন যদি চিন্তা করি আমার দেশের একজন রোগী, তারা এত কিছু ধৈর্য ধরে শুনবেন কি না, বা পরে পড়াশোনাও করবেন কি না? এম্নিতেই ডাক্তাররা এত সময় দিতে পারেন না বা দেন না, তার উপর আমাদের দেশের রুগীরা এখনো সেইযুগেই আছেন যেখানে তারা ডাক্তারের বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি, কবিরাজী আরক আর হুজুরের পানি পড়া সবই এক পাল্লায় মাপেন, সবই তাদের কাছে ম্যাজিক এর মতো রোগ সারানোর উপায়। যদি ঝাঁড় ফুকে (পড়ুন চিকিৎসায়) সাথে সাথে কাজ না দেয়, তবে অমুক ম্যাজিশিয়ান ভুয়া বলে দেবে। আর সবাই মোটামুটি নিজেই এক একজন বিশেষজ্ঞ , নিজের শরীরের খবর ডাক্তার 'আমাত্তে বেশি বুজেন?' মনোভাব। কাজেই ডাক্তারদের সহজেই বিচার করে কসাই বলে দেই আমরা।
নিজেকে এই সাধারণ মনোভাব থেকে বের করে শিক্ষিত করতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে বটে। বাংলাদেশে সমস্যাটা দুই পক্ষেই। আপামর রুগীদের চিকিৎসা পদ্ধতি সমন্ধে সচেতন করা কিভাবে সম্ভব জানি না, তবে তরুণ ডাক্তাররা যারা এসব তকমার ভার বহন করতে চান না, তারা নিজে হয়তো উদ্যোগ নিতে পারেন, রুগী দেখার সময় তাদেরকে চিকিৎসা প্রক্রিয়া সমন্ধে আরও বিশদ ভাবে বলে/ বুঝিয়ে রুগীকে আলোকিত করতে।
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
আমাদের দেশে এই প্র্যাকটিস তো নেই-ই,বরং কেউ এটা করতে চাইলে,তাকে তার সিনিয়রের কাছে জবাবদিহি করা লাগে!!!!(ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতা)
লেখাটা দেরীতে চোখে পড়লো, কিছুটা যুক্তি এবং কিছুটা আবেগের মিশেলে লেখা।
বাংলাদেশে ডাক্তারদের এই অবস্থার জন্য ডাক্তাররাই দায়ী। ভুল চিকিৎসা, ড্রাগ এবং টেষ্ট কমিশন, ইন্ডিকেশন ছাড়া অপারেশন করা, রোগীর সাথে রুঢ় ব্যবহার করা- সবকিছুই ডাক্তারদেরই সৃষ্টি। ডাক্তাররা রোগীকে সময় দেন না, কাউন্সেলিং করে না। একজন রোগী কতটা যে অসহায় অবস্থায় থাকে, তা ভুক্তভোগীই জানে। অথচ ডাক্তার যদি তার সাথে একটু সময় নিয়ে কথা না বলে, তাহলে হবে?
আপনার লেখায় আবার সরকারী ডাক্তারদের প্রতি সহানুভূতি দেখা গেলো- আমার কাছে সব ডাক্তারই সমান মনে হয়। বরঞ্চ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে বছরের পর বছর ধরে যে অনিয়ম চলছে, তা কিন্তু সরকারী ডাক্তারদেরই সৃষ্টি!
আর কিছু লিখতে ইচ্ছে করছে না। বাই দ্য ওয়ে, আমি নিজেও একজন ডাক্তার, তাই আমাকে আবার বিরুদ্ধপক্ষ ভেবে বসবেন না!
-এস এম নিয়াজ মাওলা
আপনার কথায় দৃঢ়তা ও অপ্রিয় সত্যভাষণের সাহস লক্ষ্য করে ভালো লাগল। যদিও এর জন্য আমাদের ফ্র্যাটারনিটিই আপনার শত্রু হয়ে দাঁড়াবে, বলবে আপনার মত ডাক্তার সমগ্র ডাক্তার সমাজের শত্রু! অথচ আপনি ঠিক বলছেন! সত্যজিৎ রায়ের ইবসেনের নাটক অবলম্বনে করা "গণশত্রু" ছবিটি মনে পড়ে? সে রকম!
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বসে টাকা নিচ্ছেন -এমন ডাক্তারও আছেন। সরকারী চাকরীতে নিয়মিত বেতন তুলছেন, আবার উঁচুতলার লবিং এর সুযোগ নিয়ে দিব্যি ঢাকায় বসে আরেকটা চাকরী করছেন- এই নজিরও দুর্লভ নয়। এই কাজগুলো কেন করছেন, বললে বলে কম বেতনের কথা, অন্য চাকরীতে ঘুষের সুযোগের কথা! কিন্তু তারা খেয়াল রাখে না যে হিপোক্রেটিক ওথের নামে চূড়ান্ত হিপোক্রিসি করে তাঁরা যা করছেন তা ঘুষের চেয়ে নয়। এরা সবাই যে খারাপ মানুষ -তা নয়। এরা সুযোগের সদ্ব্যবহার করে কিছু বেশি কামাতে চাইছে। কেননা এই সমাজে অর্থই সকল সুখের মূল। ডাক্তারিই একমাত্র খাত যেখানে বেসরকারী চাকরীতেও সংসার চালানোর মত বেতন পাওয়া যায় না, যদিও ৮ ঘণ্টা বা তারও বেশি বিনা পারিশ্রমিকে প্রতি সপ্তাহে বাড়তি খাটিয়ে নেয়া হয়। উঁচু তলার স্যারদের মধ্যে অনেকেই ভীষণভাবে ট্যাক্স ফাঁকি দেন। ওয়েলফেয়ার ইকোনমি তাহলে কী দিয়ে চলবে? একবার এক ফোরামে সারকাসটিক স্টাইলে বললাম," বাংলাদেশ ডাক্তারদের স্বর্গরাজ্য। ম্যাল্প্র্যাক্সিস করে পার পেয়ে যাওয়া, ট্যাক্স ফাঁকি, প্রভাব খাটিয়ে ট্রেনিং পোস্ট ধরে রাখা বা দ্বিতীয়বারের মত নিয়োগ নেয়া- ইত্যাদি প্রসঙ্গে বলেছিলাম। শেষ লাইনে এটাও বলে দিয়েছিলাম যে, এত সুবিধা মুষ্টিমেয় কিছু লোকের জন্যই, অধিকাংশ তরুণ চিকিৎসকের অবস্থাই খুব খারাপ। হরি হরি, লোকজন পুরোটা না পড়েই আমাকে নির্লজ্জভাবে ব্যক্তিগত আক্রমণ করা শুরু করল, জেনারালাইজেশনের দায়ে। কিছু লোক এটাও বলল যে, আমি নাকি মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভ! আমার নাকি ফোরামে নিজের ব্যক্তিগত পরিচয় দিতেই হবে! উল্লেখ্য এই উত্তেজিত আক্রমণকারীদের অধিকাংশই দেখলাম সারকাজম শব্দটির অর্থ জানে না! মডারেটর সব বুঝেও নীরব রইলেন। আমি নীরবে সরে গেলাম। আশা করব সচলের মত একটি প্ল্যাটফরমে আপনি তেমন ব্যক্তিগত আক্রমণের শিকার হবেন না। সত্য খুব তেতো। হজম করা কঠিন।
এসব নিয়ে আর কত বলব। খুব বেশি হতাশ লাগে। আপনারা লিখে যান। একদিন আমাদের তরুণ চিকিৎসকরা নতুন দিন আনবে। শিশু ও মাতৃমৃত্যুহার রোধে আমরা যে সাফল্য দেখিয়েছি, তার পুরো কৃতিত্বই তরুণ চিকিৎসকদের।
আমি শুধু একটা বিষয়ে বলব। বাংলাদেশে সরকারি হাসপাতালে একজন ডাক্তারকে একদিনে যত রোগী দেখতে হয় উন্নত দেশগুলোতে সারা মাসেও তা দেখতে হয় না। সেকারণে সময় দিয়ে রোগী দেখা যায় না। আর অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, যে রোগী উপজেলা পর্যায়েই চিকিতসা করা সম্ভব তা মেডিক্যাল কলেজে চলে আসছে, ফলে এখানে রোগী সাম্লানো কঠিন হয়ে পড়ে।
নতুন মন্তব্য করুন