মন এবং সভ্যতাঃ একান্ত চিন্তা

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: শুক্র, ২৭/০৯/২০১৩ - ১০:৫৪পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

প্রাচীন মানুষের মন কেমন ছিলও? অবচেতন মন বলতে কি কিছু ছিলও? যদি অবচেতন মন থাকে তবে অবদমিত ঘটনাগুলোই বা কেমন ছিলো? এই সব অবদমিত ঘটনাগুলো কিভাবেই বা মানুষের চেতনার জগতকে প্রভাবিত করতো? অর্ধ-চেতন মন (Sub-Conscious Mind) বলতে কি কিছু ছিলও? নাকি, আজকে আমরা মন বলতে যা বুঝি তা নিছক কোটি বছরের বিবর্তিত রূপ? মনের এই স্তরগুলো ঠিক কবে থেকে একসাথে তাদের কার্যকলাপ শুরু করেছিলো ? অদূর ভবিষ্যতে মানব মনকে আমরা কিভাবে বিবেচনা করা হবে?

আজকের যুগের সাথে তুলনা করতে গেলে প্রাচীন মানুষের মন ছিলো নিতান্তই নীতি-নৈতিকতা বিহীন। তখন নীতি ছিলো একটাই; টিকে থাকার নীতি এবং সেটা যেভাবেই হোক। এমনকি টিকে থাকার জন্য তারা প্রথমে নিজেদেরকেই নিজেরা অনেক কাল ধরে খুনও করে আসছিলো। মানুষের মধ্যে অনেকেই ছিলো নরখাদক। সম্ভবত, সেই যুগে মনের একচ্ছত্র রাজা ছিলো ইড। সুপার ইগোর তখনো জন্মই হয়নি। নিজেকে ধ্বংস করা ছাড়া প্রায় সব কিছুই ছিলো সেই সময়টায় গ্রহণযোগ্য।

অস্তিত্বহানির ভয়টা যেহেতু শুরু থেকেই ছিলো, যেমনটা একটি নবজাতক শিশুর মধ্যে দেখা যায়, সুতরাং ইগো ছিলোনা এমনটা ভাবা উচিত হবেনা। ভয়গুলো ছিলো প্রাকৃতিক তাই টিকে থাকার প্রবল ইচ্ছার কাছে সেগুলো পরাজিত হয়েছিলো খুব সহজেই। তবে ইগোকে সঠিক কাজে লাগানোর কৌশলগত ক্ষমতা আবিষ্কার করতে নিশ্চয়ই মানুষকে অনেকদিন অপেক্ষা করতে হয়েছিলো এবং আজকের ইগো আদিম ইগোর হুবহু প্রতিমূর্তিটি নয় এটা খুব সহজেই বোঝা যায়।

কিছু কাল ধরে বিবর্তিত ইগো স্বত্বাই সম্ভবত মানুষকে প্রথম পারস্পরিক সহযোগিতার একটা পথ বাতলে দিয়েছিলো। যদিও নিজেদের টিকে থাকার জন্য কিছুটা স্বার্থপর ভাবেই মানুষ একসাথে বসবাস শুরু করছিলো তবু এই সহযোগিতার দিকটিই অবদমিত করেছিলো মানুষের অনেক বর্বর দিক। এই সময়ে এসে মানুষ অন্তত নিজ গোত্রের মানুষ খুন করা কমিয়ে দিয়েছিলো। অর্থাৎ সুপার ইগো যুগের এই পর্যায়ে মাত্র হামাগুড়ি দিয়ে হাটতে শিখেছে। সুপার ইগো একটু সামর্থবান হলে মানুষ অনুভব করলো যে টিকে থাকার জন্য শুধু স্বার্থপর সহযোগিতাই যথেষ্ট নয় বরং কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম কানুন সৃষ্টির প্রয়োজন। নিয়ম-কানুন গুলো জন্ম নিলো পারিবারিক, সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে। এবং এভাবেই মানুষের সংঘবদ্ধ বসবাস তার মানসিক কাঠামোতে পরিবর্তন এনেছে। অনেক কুসংস্কার যেমন আজো মানব হ্রদয়ে গেঁথে আছে তেমনে অনেক কুসংস্কারের মৃত্যুও হয়েছে। আর এর পেছনে চেতন এবং অবচেতনের গুরুত্ব যতটুকু তার চাইতেও বড় ভূমিকা রেখেছে অর্ধ-চেতন মন ( the sub-conscious mind) । কোন বিখ্যাত লেখক, কবি, কিংবা চিত্রকরকে যদি তাদের কোন অনবদ্য সৃষ্টির কারণ ব্যাখ্যা করতে বলা হয় তারা অনেক সময় দেখা যায় তারা সঠিক ব্যাখ্যা প্রদান করতে পারেন না। মূলত এইসকল সৃষ্টির পেছনে অবচেতন মনের অবদমিত ইচ্ছাগুলো প্রকাশ পায় এবং সচেতন জগতে এর এমন বহিঃপ্রকাশের একমাত্র মাধ্যম মানুষের অর্ধ-চেতন মন ( the sub-conscious mind) । অবচেতন মনের শৈল্পিক বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়ে মানব সভ্যতাকে টিকেয়ে রাখে আমাদের মনের অর্ধ-চেতন স্তরটি। অর্ধ-চেতনার জগতে আমরা সবাই এক অপার সম্ভাবনার প্রতীক বহন করতে থাকি। জন্মদাতা পিতার (সভ্যতা) প্রতি অর্ধ-চেতনের দায়িত্ববোধের পরিচয়টিও সুস্পষ্ট।

যাই হোক, একটা পর্যায়ে মানুষ সম্ভবত এটাও বুঝতে পেরেছিলও যে টিকে থাকাটা কোন একক বিষয় নয়।এমন প্রয়োজনেই হয়তো ইগোর গর্ভে জন্ম নিয়েছিলো সুপার-ইগো। ভালো মন্দের বিবেচনা বোধটা এখান থেকেই আর ব্যক্তিগত বিষয় রই লোনা। অবদমিত হতে থাকলো অনেক কিছু সৃষ্টি হলও মনের তৃতীয় স্তর “ অবচেতন মন”। সময়ের সাথে সাথে সমাজের অনুসারী মানুষ তৈরির চাপ বাড়তে থাকলো কেননা মানুষের টিকে থাকার প্রবল ইচ্ছার চাইতে নিজেদের অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলার ভয়টাও বেশি হারে বাড়ছে। দুঃখের কথাটি হচ্ছে মানুষ আজ নিজেকেই নিজের সৃষ্টির কাছে সমর্পণ করেছে। আগেই বলেছি বর্তমানের ইগো-সত্তাটিও আগেরটির কার্বন কপি নয়।

লেখার শেষ পর্যায়ে এসে এই কথাটি সাহস করেই বলেই ফেলা যায় যে, মন বলতে আমরা আজকে যা বোঝাই সভ্যতাই তার জনক। সমাজ সৃষ্টির ফলেই মানব মনের এমন দৈবাৎ বিবর্তন সম্ভব হয়েছিলো। তাই বলা যায় মনের এই তিন স্তর একসাথে কাজ করা শুরু করেছিলো মধ্যযুগের কিছু আগে কিংবা পরে এবং এখন খুব সক্রিয় ভাবেই এরা মানব আচরণে প্রভাব ফেলছে। এখনো হয়তো অনেক ক্ষেত্রেই আদিম স্বত্বা ইডকে জয়ী হতে দেখা যায়। তবে একটি সমাজ কাঠামো যতটুকু স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে ততই ইড স্বত্বা পরাজিত হবে। তবে ইডকে একদম বিমূর্ত করে দেয়াটা কোন সময়ই উচিত হবেনা। কেননা ইড আদিম স্বত্বা।

Sazzad Chowdhury


মন্তব্য

শাব্দিক এর ছবি

মনোবিজ্ঞান আমার পছন্দের বিষয়, এই বিষয় নিয়ে লেখার জন্য আপনাকে স্বাগত জানাই।
লেখা ভাল লাগল, তবে মনে হল আপনি অনেক স্বল্প পরিসরে অনেক বেশি বলতে চেয়েছেন। ইড, ইগো এবং সুপার ইগো ব্যাপারগুলো আরও প্রাথমিক ভাবে বিশ্লেষণ করলে ভাল হত। আশা করছি আপনার পরের লেখায় তা পাব।

---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ, এটা আমার প্রথম লেখা তাই হয়তো একটু উত্তেজনাও কাজ করছিলো। প্রাথমিক বিশ্লেষন পাবেন কথা দিলাম। তখন এই পোস্টটা হয়তো আরো ভালো লাগবে । কারন এটি আমার নিজস্ব বিশ্লেষণ, কেউ এভাবে লিখেছেন বা বলেছেন বলে মনে আসছেনা। আপনাকে আবারো ধন্যবাদ

মন মাঝি এর ছবি

পুরো বিষয়টাকেই সিউডোসাইন্স মনে হচ্ছে।

****************************************

অতিথি লেখক এর ছবি

মনোবিজ্ঞান কখনই পদার্থবিজ্ঞান বা রসায়নের মত বিজ্ঞান হতে পারবে বলে মনে হয়না । আর তাছাড়া যখন বিষয়বস্তু ফ্রয়েডের ইড ইগো সুপারইগো নিয়ে কিছুটা কল্পনার মিশ্রনতো থেকেই যায়। মন বলে কথা । যুক্তি দেখানোর চেষ্টাও করা হয়েছে এবং এদের কিছুই কিন্তু অস্বিকার করতে পারবেন বলে মনে হয়না। আর অভিমত সব সময় গ্রহন যোগ্যতা পাবে এটা চিন্তা করে লিখলে হয়তো চিন্তার প্রাসারিত রুপটাও ঠিক বুঝতে কষ্ট হয়ে যায় মাঝে মধ্যে শ্রদ্ধা

দীপালোক এর ছবি

চলুক
এত স্বল্প পরিসরে মনের মত গভীর গহন জিনিষ জানা বোঝা কি চাট্টিখানি ব্যাপার হাসি
একটা সিরিজ নামিয়ে দিন।

মর্ম এর ছবি

মনোবিজ্ঞান নিয়ে সচলে খুব বেশি লেখা পড়িনি, আপনি এখন নিয়মিত যোগান দিতে থাকবেন এই আশা রইল হাসি

~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...

অতিথি লেখক এর ছবি

শ্রদ্ধা ধন্যবাদ

অতিথি লেখক এর ছবি

লিখতে থাকুন মনোবিজ্ঞান নিয়ে, আগ্রহ সহকারে পড়ছি। তবে আরেকটু বিস্তারিত লিখলে খুব ভালো লাগবে।

-এস এম নিয়াজ মাওলা

অতিথি লেখক এর ছবি

চলুক ধন্যবাদ। অবশ্যই।

প্রোফেসর হিজিবিজবিজ এর ছবি

পড়লাম, কিন্তু বেশীরভাগই মাথার উপরে দিয়ে গেলো।

যাই হোক, মনোবিজ্ঞান নিয়ে লিখুন, আগ্রহী পাঠক তো আছেই। আর আমরাও আস্তে আস্তে জ্ঞান অর্জন করি।

____________________________

অতিথি লেখক এর ছবি

মনোবিজ্ঞান নিয়ে লেখা পড়তে ভাল লাগে। লেখা ভাল হয়েছে চলুক কিন্তু আরেকটু বিশ্লেষণ থাকলে ভাল হত।
ইসরাত

অতিথি লেখক এর ছবি

চলুক
প্রথম লেখার জন্যে অভিনন্দন।
সূচনার আগেই মনে হয় শেষ হয়ে গেল গুল্লি
কিন্তু অল্প লেখাতে সহজ একটা বিষয় আরো সহজ করে জানা হলো,কি করে কিসের জন্যে মানুষ দলবদ্ধ হতে শুরু করলো।কোন স্বার্থে নতুন নতুন নিয়ম তৈরি করতে শুরু করলো,নিয়ে আসলো নিয়ম,নীতি,ধর্ম,আইন প্রভৃতি।আশা করে সবগুলো বিষয় আরো বিশদ ভাবে লিখবেন।ভালোথাকবেন,পরেরটার অপেক্ষায় থাকলাম।

মাসুদ সজীব

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।