কিছু কথাঃ
মানব ইতিহাসে প্রাচীন মিসর ছিল সবচেয়ে লম্বা সময়ের সভ্যতা, যা ৩০০০ বছরের বেশী টিকে ছিল। মিসরীয়রা অনেক দেবতার পূঁজা করতো, তার মধ্যে আইসিস এবং ওসিরিস ছিল সবচেয়ে জনপ্রিয়।
আইসিস এবং ওসিরিসের এই পৌরাণীক কাহিনীর উপর ভিত্তি করে মিসরীয় অন্তষ্টিক্রিয়া ও মমি তৈরীর প্রচলন শুরু হয় বলে ধারনা করা হয়।
এক সময়ে নাইল নদীতে প্রতি বছরই বন্যা হতো । আর সবাই বিশ্বাস করতো বন্যার সেই পানি হলো আইসিসের চোখ থেকে ঝরে পড়া পানি।
এই গল্পে যে সব দেবতাদের নাম উল্লেখ আছে তারা হলোঃ
আইসিসঃ মাতৃত্বের, রক্ষাকারী এবং নিরাময়কারী দেবী
ওসিরিসঃ মৃতপুরীর রাজা এবং পরজন্মের দেবতা
সেতঃ মরুভূমি, বিশৃংখলা এবং ঝড়ের খারাপ দেবতা। সম্পর্কে ওসিরিসের ভাই
হোরাসঃ রাজপদ নির্বাচন, যুদ্ধ, শিকার এবং আকাশের দেবতা, ওসিরিস ও আইসিসের ছেলে
রাঃ সূর্য দেবতা
আইসিস এবং ওসিরিসঃ
বহুকাল আগের কথা। যেদিন ওসিরিস জন্মগ্রহন করলো, সেদিন স্বর্গ থেকে একটা দৈব বাণী সবার কানে আসলোঃ
হে মানবকূল, তোমাদের প্রভুর আগমন ঘটলো এই পৃথিবীতে
ওসিরিসের জন্মের দুই দিন পরে তার ভাই সেত জন্মগ্রহন করলো। দুই ভাই সব দিক দিয়েই বিপরীত ছিল, তাদের ভিতর কোন দিকেই মিল ছিল না। ওসিরিসের গায়ের চামড়া ছিল কালচে, এবং উর্বর ভূমির মতো পরিপূর্ন। অন্যদিকে সেত এর মুখ ছিল লাল এবং প্রানহীন মরুভূমির মতো ফ্যাকাসে। ওসিরিস শান্তি ভালবাসতো , অপরদিকে সেত পছন্দ করতো যুদ্ধ।
সেই সময়ে মিসরের প্রথম ফারাও হিসাবে রা শাসন করতো। যখন রা অতিশীতিপর বৃদ্ধ হয়ে পড়লো, সে এই পৃথিবী ত্যাগ করে তার সূর্য নৌকা বেয়ে আকাশ দিয়ে স্বর্গে চলে গেলো। তারপর থেকে ওসিরিস রাজা হয়ে সেই সিংহাসনে বসলো। ওসিরিস হলো ফারাও এবং তার স্ত্রী আইসিস হলো রানী। তারা খুব ভালভাবে এবং বুদ্ধিমত্তার সাথে রাজ্য পরিচালনা করতো। সারা রাজ্য জুড়ে শান্তি বিরাজ করতো।
একদিন ওসিরিস পৃথিবী ভ্রমনে বের হলো। পথে যার সাথেই দেখা হতো, তাকেই শিক্ষাদান করতো, যেখানেই সে যেতো সেখানেই যেন শান্তির পরশ লাগতো। যখন সে দেশভ্রমনে বের হতো, সে সময় তার স্ত্রী আইসিস দক্ষতার সাথে দেশ শাসন করতো। ওসিরিস যখন দেশে ফিরে আসতো, তখন সারা দেশে আনন্দ উৎসবে ভরে যেতো। আনন্দ হবেই না বা কেন? দেশের সব মানুষ ওসিরিসকে যে অনেক ভালবাসতো!
শুধু একজন ওসিরিসকে সহ্য করতে পারতোনা। সে হলো তার ভাই, সেত।
দিনের পর দিন, বছরের পর বছর ধরে সেত তার ভাইয়ের ভাল কাজ দেখতো, আর চোখে ফুটতো ঘৃনা, মনের ভিতর টগবগ করতো হিংসা। যখন ওসিরিসের জয়োধ্বনি সেতের কানে আসতো, তার ঘৃনা আরো দাঊদাঊ করে উঠতো। সে ওসিরিসকে চিরতরে ধ্বংস করে দেয়ার পরিকল্পনা করলো।
গোপনে গোপনে সেত খুব সুন্দর একটা কফিন তৈরী করলো। এটা ছিল চমৎকার সাজসজ্জা ও নকশা করা, ওসিরিসের দেহ রাখার জন্য এটির পরিমাপ ছিল একেবারেই মানানসই ।
ওসিরিসের সন্মানে রাজকীয় ভোঁজসভার আয়োজন করা হলো। সেত তার দলবল নিয়ে সেখানে উপস্থিত ছিল। ভোঁজের পরে সেত সেই বাক্সটি সেখানে হাজির করলো। উপস্থিত অতিথীরা সেই বাক্সের কারুকাজ দেখে মুগ্ধতায় হতবিহবল হয়ে পড়লো। সিলভার, সোনা আর লাপিস লাজুলী (গাঢ় নীল মূল্যবান পাথর) দিয়ে বাক্সটি এত ঝকমক করছিলো যে এটাকে দেখাচ্ছিল আকাশের মতো গাঢ় নীল এবং সেই সাথে দামী পাথরগুলো রাতের আকাশের তারার মতো জ্বলজ্বল করছিলো। সেত ঘোষনা দিলো, যে অতিথী এই বাক্সটার ভিতরে ঠিকমতো শুতে পারবে, এই বাক্সটা সে উপহার হিসাবে পাবে। সব অতিথীরা উৎসুক হয়ে একের পর এক বাক্সটার ভিতরে গেল, শুয়ে দেখলো। কিন্তু তারা কেউ বাক্সটার চেয়ে লম্বা অথবা কেউ ছোট, কেউ বেশী চওড়া, কেউ বেশী চিকন । বাক্সটার পরিমাপ কারোর সাথেই মিলে না। সব শেষে ওসিরিস বাক্সটার কাছে এসে বললো ' আমি একটু চেষ্টা করে দেখি'। এই বলে সে বাক্সটার ভিতর যেয়ে শুয়ে পড়লো।
দেখা গেলো বাক্সটার পরিমাপ পুরোপুরি তার সাথেই মিলে গেলো। সেত সাথে সাথেই দড়াম করে বাক্সটার দরজা বন্ধ করে দিলো, ওসিরিস বাক্সটার ভিতরে আটকা পড়লো। সেতের অনুসারীরা ঝড়ের বেগে বাক্স টেনে নিয়ে যেয়ে পেরেক দিয়ে বন্ধ করে দিল ।
সেতের অনুসারীরা ওসিরিসসহ বাক্সটি সর্বশক্তি দিয়ে নাইল নদীতে ছুড়ে ফেললো। নদীর অন্ধকারাচ্ছন পানিতে বাক্সটি তলিয়ে গেলো। এভাবেই শেষ হয়ে গেলো মহৎ রাজা ওসিরিসের জীবন।
যখন আইসিস বুঝতে পারলো তার প্রিয়তম স্বামীর কপালে কি ঘটেছে, তখন সে বুক চাপড়িয়ে কান্না শুরু করলো। কিন্তু কান্নাভেজা চোখে বিধবা রানী প্রতিজ্ঞা করলো 'মানুষ মরে যায়, কিন্তু ভালবাসা বেঁচে থাকে। আমি ওসিরিসের জন্য সমস্ত মিসর তন্ন তন্ন করে খুঁজবো, এবং তাকে খুঁজে বের করবোই'।
আইসিস জানতো যে, নিয়মমাফিক মৃতদেহ সৎকার না করলে ওসিরিসের আত্মা কখনোই মুক্ত হয়ে পরকালে যেতে পারবে না।
আইসিস সন্ধান অভিযান শুরু করলো। আর যখনই সে সন্ধানে চলে গেলো, সেত তখনই সিংহাসন দখল করলো। তার শাসন ছিল ভয়ানক হিংস্র আর নির্মম। আইসিস বাধ্য হলো নাইলের ব-দ্বীপে অবস্থিত জলাভূমি আর বনের ভিতর আশ্রয় গ্রহন করতে। সেখানে জন্ম নিলো তার আর ওসিরিসের ছেলে হোরাস। প্রথম থেকেই আইসিস তার ছেলেকে মাতৃসেবা দিতে লাগলো। কিন্তু একসময় তার মনে হলো, যদি সেত তার ছেলেকে দেখে ফেলে তাহলে মেরেই ফেলবে। তাই আইসিস সেখানকার তার বিশ্বস্ত এক দয়ালু দেবীর কাছে ছেলেকে লালন পালনের জন্য রেখে গেলো।
ওসিরিসের মৃতদেহ খুঁজতে খুঁজতে আইসিস অনেক অনেক দুরে চলে গেলো, একটুও বিশ্রাম নেই। যাকেই পেলো তাকেই ওসিরিসের হদিস সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলো।
বহুদিন ধরে সে বৃথাই খুঁজে ফিরলো। একদিন ছোট ছেলেমেয়ের একটা দলের সাথে তার দেখা হলো। তারা একটা বাক্সের উপরাংশ নদীতে ভাসতে ভাসতে সাগরের দিকে চলে যেতে দেখেছিল। পানির প্রবল স্রোত সেই বাক্সটি ভাসিয়ে নিয়ে লেবাননের তীর পর্যন্ত নিয়ে গিয়েছিল, তারপর মৃদু ঢেউ এসে সেই বাক্সটিকে একটা ছোট চিরসবুজ ঝাউ গাছের গোঁড়ায় রেখে দিলো। অলৌলিক ভাবে গাছটির শাখা প্রশাখা দেখতে দেখতে বড় হয়ে বাক্সটির চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে যেয়ে সেটিকে তার নিজের কান্ডের ভিতরে এমনভাবে রেখে দিলো যাতে বাইরে থেকে একটুও দেখা না যায়।
দেখতে দেখতে সেই অদ্ভুত গাছটি অনেক লম্বা ও মজবুত হয়ে গেলো, সেই সাথে সুগন্ধি ছড়াতে থাকলো। একদিন এই গাছের সুখ্যাতি সেখানকার রাজার কানে গেলো। রাজা যখন এই গাছটি দেখলো, তখনই সে হুকুম করলোঃ
গাছটি কেটে ফেলো, এটিকে একটা স্তম্ভ করে আমার প্রাসাদে রাখবো
আশ্চর্য্য গাছের কান্ডটি সেখানকার রাজার রাজপ্রাসাদে স্থান পেলো, কিন্তু এটির রহস্য তার ভিতরেই নিরাপদে রইলো।
আইসিস তাড়াতাড়ি লেবাননে পাড়ি দিলো। সেখানকার রানীর পরিচারিকার সাথে তার বন্ধুত্ব হলো, কিভাবে বিভিন্ন উপায়ে চুল বাঁধা যায় আর বুননকার্য করা যায় তা নিয়েই মূলত গল্প করতো। চুলের বুননকার্যের উপর তার এই সব গুন দেখে সেখানকার রানী খুবই খুশী হয়ে আইসিসকে তার প্রাসাদে রেখে দিলো।
কিন্তু পরিচারিকারা রানীকে বললো যে, প্রতিরাতেই আইসিস তাদেরকে ঘর থেকে বাইরে পাঠিয়ে দিয়ে দরজা আটকে রাখে, এবং তারা ঘর থেকে বিচিত্র শব্দ শুনতে পায় যা অনেকটা পাখীর কিচিরমিচির শব্দের মতো।
একরাতে রানী সেই ঘরে লুকিয়ে রইলো। তার চোখ যেন বিস্ফোরিত হয়ে গেলো যখন সে দেখলো আইসিস একটি আবাবিল পাখীতে রূপান্তর হয়ে স্তম্ভের চারদিকে উড়ে বেড়াতে লাগলো, যে স্তম্ভের ভিতরে তার স্বামী আটকে আছে, আর দুঃখের গান গাইতে থাকলো।
আইসিসের সত্যিকারের দেবীর রূপ দেখে তার পদতলে লেবাননের রানী হাটু গেড়ে বসে পড়লো।
বিস্ফোরিত কন্ঠে জিজ্ঞাসা করলো 'দেবী রানী! আপনি এখানে?'
আইসিস করুনার স্বরে বললো 'আমি তোমায় আশির্বাদ দিবো, যদি তুমি এই স্তম্ভটি আমায় দাও'।
এরপরেই আদেশ হলো স্তম্ভটি নামিয়ে ফেলার। সেখানকার রাজার লোকেরা গাছের সেই বৃহৎ কান্ডটি কেটে ফেললো।
আইসিস তার স্বামীর কফিনটি বের করলো, আর সেটার উপর উপুড় হয়ে কেঁদে কেঁদে চোখের পানিতে ভাসিয়ে দিল।
সে কফিনটিকে একটি নৌকাতে নিয়ে চলে গেল।
আইসিস অধীর হয়ে অপেক্ষা করে ছিল কখন ওসিরিসের মুখখানা দেখবে। যখনই সে একা হলো, কফিনের দরজাটা খুলে ফেললো, সেখানে শুয়ে আছে প্রিয়তম ওসিরিস। কিন্তু মৃত। ওসিরিসকে ধরে আইসিস ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদতে থাকলো, তার চোখের উষ্ণ পানি প্রিয়তম স্বামীর শীতল মুখে পড়তে থাকলো।
আইসিস মিসরে পৌছানোর পরে কফিনটিকে নাইল নদীর ব-দ্বীপের জলাভূমির ভেতর লুকিয়ে রেখে দিয়ে সে তার ছেলেকে দেখার জন্য ব্যাকুল হয়ে ছুটে গেলো।
কিন্তু দূর্ভাগ্য যেন তার পিছ ছাড়লোনা। সেই রাতেই কে যেন ছায়ার মতো পিছে পিছে এলো। সেত!
সেত যখন কফিনের কাছে গেল, দেখেই সে বুঝতে পারলো। রাগে ক্ষোভে গর্জে উঠে সে ওসিরিসের মৃতদেহ কফিন থেকে হ্যাচকা টান দিয়ে বের করে আনলো। 'এইবার তুই আর ফিরে আসতে পারবি না' চিৎকার করে বলেই ওসিরিসের শরীরকে কেটে কেটে ১৪ ভাগ করলো। সেত উপহাসের সুরে বললো 'এইবার আইসিস আর তোকে রক্ষা করতে পারবে না', এই কথা বলে ওসিরিসের ১৪ ভাগ করা শরীরখন্ডকে এখানে ওখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফেলে দিলো।
আইসিস এমনিতেই অনেক কষ্ট সয়েছে, এখন এই দৃশ্য দেখে তার চোখ থেকে বৃষ্টির মতো এমন পানি পড়লো যে নাইল নদীতে বন্যা বয়ে গেলো।
আইসিস তখন প্যাপিরাস দিয়ে নিজেই একটা নৌকা বানিয়ে নাইল নদীর আশে পাশের সব জলাভূমিতে তার স্বামীর শরীরের টুকরা তন্ন তন্ন করে খুঁজে বেড়ালো। ওসিরিসের শরীরের প্রতিটা টুকরো আইসিস খুঁজে বের করে একসাথে করলো।
আইসিস এবং তার বোন নেপথীস ওসিরিসের মৃতদেহের পাশে বসে উঁচু স্বরে আজাহারী করতে লাগলো। তাদের করুন অসহায় বিলাপ আকাশ পানে হয়ে স্বর্গে পৌঁছালো। তাদের আজাহারী সূর্যদেবতা রা এর কানে যেয়ে পৌছাল, আইসিসের জন্য তার মায়া হলো। সে তখন দেবতা আনুবিস এবং থোথকে পাঠালো আইসিসকে সাহায্য করতে। তারা ওসিরিসের সমস্ত শরীরকে সাদা কাপড় দিয়ে পেঁচিয়ে ঔষধী তেলের ভিতর রেখে দিলো। এটাই ছিল মিসরের প্রথম মমি বানানো।
এরপরে আইসিস একটা বড় অলৌলিক কাজ করলো, যেটা আগে কেউ কখনো দেখে নাই। যখন সে তার দুই হাত উঠালো, সেগুলো পরিনত হলো দুইটি অসাধারন সুন্দর পাখায়। সে তখন ওসিরিসের মৃত শরীরের উপরে উড়ে যেয়ে তার পাখা দিয়ে বাতাস দিতে লাগলো, সেই বাতাস ওসিরিসের নাকের ভিতর ঢুকে যেতেই সে নিশ্বাস নিলো, পরক্ষনেই আবার বের করলো।
নিশ্বাস বের হওয়ার সাথে সাথেই ওসিরিসের আত্মা শেষ পর্যন্ত মুক্ত হয়ে মৃতদের জগতে চলে গেলো, আর সেই মৃতভূমিতে সবার বিচারক আর রাজা হিসাবে সে শাসন করতে শুরু করলো।
আইসিস নাইল এর ব-দ্বীপে ফিরে গেলো, যেখানে তার ছেলেকে রেখে গিয়েছিলো।
এর ভিতর অনেক বছর কেটে গেলো। হোরাস, যার কিনা মিসরের প্রকৃত রাজা হওয়ার কথা, অনেক শক্তিশালী আর সাহসী হয়েছে। ওসিরিস মাঝে মাঝে পরকাল থেকে ছেলেকে দেখতে আসে, আর যুদ্ধ করার কলা কৌশল শিখিয়ে দেয়। হোরাস তার পিতার জন্য প্রতিশোধ নেয়ার প্রতিজ্ঞা করে।
এক সময় হোরাস তার শত্রুকে হারানোর দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে যুদ্ধের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। শুরু হয় সেতের সাথে যুদ্ধ। দিনের পর দিন চলে যায় যুদ্ধ করতে করতে। অনেকেই বলে যে, হোরাস দেবতাদের অনুরোধ করেছিল তাকে সাহায্য করতে, আর সূর্যের মতো জ্বলন্ত আগুনের গোলায় রূপান্তর করে দেওয়ার জন্য। সে রূপান্তরিত হয় সূর্যের মতো জ্বলন্ত আগুনের গোলায়, সেই গোলার সাথে ছিল আগুনের পাখা। সেই প্রচন্ড আলোতে সেতের সাঙ্গপাঙ্গরা অন্ধ হয়ে একেবারেই হতবিহবল হয়ে গেলো, তারা তখন নিজেরাই একে অন্যকে মারতে লাগলো।
কিন্তু সেতকে হারানো এত সহজ নয়। সে নিজে তার শক্তিশালী অলৌলিক ক্ষমতাগুলো প্রয়োগ করা শুরু করলো। তার সৈন্যসামন্তদের বিশাল জলহস্তী আর কুমিরে রূপান্তর করে ফেললো। তারা নাইল নদীতে নীরবে ঘাপটি মেরে হোরাসের নৌকার জন্য অপেক্ষা করতে থাকলো।
হোরাস যখন নাইল নদীতে এলো, তার নিজের দলের মানুষদের সব প্রস্তুতি নেয়া ছিল। তাদের ছিল লোহার তৈরী বল্লম আর শিকল, সেই সাথে অলৌলিক ক্ষমতার শক্তি। নদীতে লুকিয়ে থাকা সেতের বিশাল জন্তুগুলোকে শিকল দিয়ে টেনে এনে বল্লম দিয়ে গেথে ফেললো।
যখন সেত দেখলো তার সব জন্তুগুলো ধ্বংস হয়ে গিয়েছে, সে এমন জোরে চিৎকার দিলো যে, বজ্রপাতের মতো মাটি কেঁপে উঠলো। 'হোরাসকে খুন করবো' বলতে বলতে নিজেকে কুৎসিত একটা দানবে রূপান্তর করলো, তার গলিত মাথা থেকে দূর্ঘন্ধযুক্ত রস পড়তে লাগলো। হোরাস এক কোপে সেতের মাথা আলাদা করে ফেলে শরীরটাকে কেটে টুকরো টুকরো করলো। এভাবেই ঘৃন্য দানবসদৃশ সেতের জীবনাবসান হলো।
হোরাসের জয় হলো। এই প্রথম বারের মতো সে তার বাবা ওসিরিসের সিংহাসনে বসলো। হোরাস তার বাবার মতোই প্রবল বুদ্ধিমত্তা আর সুখে শান্তিতে সাথে দেশ শাসন করলো।
দেবতারা অনেক দিন শাসন করার পরে এক সময় মানব সমাজের হাতে মর্তের শাসনভার ছেড়ে দিয়ে তারা সবাই স্বর্গে চলে গেলো ।
(ছবি ও গল্পের মূলসূত্রঃ Dawn Casy ও Nilesh Mistry রচিত Isis and Osiris)
desh_bondhu (দ্বেশ বন্ধু)
মন্তব্য
ভাল লাগল লেখাটি পড়ে।
কিছু টাইপো আছে ভাই- পূঁজা >পূজা , ভোঁজ> ভোজ, দূর্ঘন্ধযুক্ত > দুর্গন্ধযুক্ত।
আর 'দ্বেশ বন্ধু'টা দেশ বন্ধু হবে না?
ঐ বানানগুলো আমি ভুলই জানতাম। আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ ভুলগুলি ধরিয়ে দেয়ার জন্য।
লেখাটা ভাল লেগেছে শুনে ভাল লাগলো
নতুন অনেক কিছু জানা হল।
ধন্যবাদ এই অনুবাদটর জন্য, তা না হলে হয়ত কোনদিনই জনাতাম না হোরাসের বীরত্বের কাহিনী, সেত-এর বদমায়েশি, আইসিসের উজার করা ভালোবাসার গল্প।
ভালো থাকুন, শুভেচ্ছা।
এই কারনেই কথায় বলে 'নারীর ভালবাসা বলে কথা'
লেখাটা ভাল লেগেছে শুনে ভাল লাগলো
দেশ বন্ধু
চমৎকার হয়েছে! আরও লিখুন এমন।
মিশরীয় দেবতাদের নিয়ে দু'টো মজার ভিডিও দিলাম এখানে -
****************************************
লেখাটা ভাল লেগেছে শুনে ভাল লাগলো
ভিডিও ২ টা দারুন মজার
দেশ বন্ধু
যাক, মিশরীয় মিথও শুরু হলো। আপনার কি এটি সিরিজ হিসেবে লেখার ইচ্ছা আছে? লেখা ভালো হয়েছে।
- এস এম নিয়াজ মাওলা
না ভাই, মিশরীয় মিথ নিয়ে আর লিখবোই বাঁ কেমনে, আর বই নাই।
এই বইটা লাইব্রেরী থেকে আমার বাচ্চার জন্য নিয়ে এসেছিলাম, তাই ভাবলাম সবার সাথে শেয়ার করি।
দেশ বন্ধু
ভাল লেগেছে। পরের লেখার অপেক্ষায় থাকলাম।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
দেশ বন্ধু
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
দেশ বন্ধু
রিটার্ন অফ শি পড়ার সময় আইসিস ওরিসিসের নাম পড়ে ছিলাম। বিস্তারিত পড়ে ভালো লাগলো
আমার কেন জানি মনে হয় এইসব প্রাচীণ গল্পের মধ্যে অনেক ইতিহাস লুকিয়ে থাকে। উপমা আর আর ভাষার অলঙ্কার বাদ দিলে বের হয়ে আসবে
--------------------------------
হে প্রগাঢ় পিতামহী, আজো চমৎকার?
আমিও তোমার মত বুড়ো হব – বুড়ি চাঁদটারে আমি করে দেব বেনোজলে পার
আমরা দুজনে মিলে শূন্য করে চলে যাব জীবনের প্রচুর ভাঁড়ার ।
বাহ দারুণ তো , মমির মিথ নিয়ে আর ও কিছু লিখবেন নাকি??
মিসরীয় মিথ নিয়ে আর নয়। তবে মিসরীয় সভ্যতা, ফারাও, মমি এসব নিয়ে লিখবো, সেটা যাতে ছোটরাও পড়তে পারে।
দেশ_বন্ধু
মিশরীয় সভ্যতা, ফারাও, মমি এসব নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ লেখার জন্য কিছু গবেষণা-উপকরণ দিলাম। বেলিড্যান্সের অংশটুকু বাদে বাকি সব বোধহয় আপনার বাচ্চাকে সাথে নিয়েই দেখতে পারবেন।
****************************************
অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে এই সব দূর্দান্ত লিংক এর জন্য।
ভিডিওগুলো দেখেছি আগে, কিন্তু আমার কাছে একসাথে করা নেই। আপনি দূর্দান্ত একটা কাজ করেছেন সব একসাথে রেখে দিয়ে।
ইতিহাস নিয়ে আমার কাছে ছোটদের উপযোগী এনসাইক্লোপেডিয়া সহ বেশ কিছু ছবিওয়ালা বই আছে, বিবিসি,ন্যাটজিও এর ডিভিডি আছে। প্রাচীন মিসর নিয়ে আমার খুবই আগ্রহ, তাই সেসবের উপরে যেখানেই যে বই বা ডিভিডি পাই, সংগ্রহে রেখে দেই।
বেলি ড্যান্স তো ভারতেই হিন্দি গানের চেয়ে অনেক শালীন
দেশ বন্ধু
রিভার গড পড়ে তো আইসিস, ওসিরিস আর হোরাসের কাহিনি সম্পর্কে ভুল ধারণা হয়ে গেছিল! মজা পেলাম পড়ে।
আর একটা কথা - সেত নাকি সেথ?
____________________________
ইংরেজীতে বানান Set (Seth নয়), তাই লিখলাম সেত। হয়তো ত এর নীচে হসন্ত হতেও পারে। কিন্তু ইংরেজীর উচ্চারনেই লিখলাম আর কি।
দেশ বন্ধু
খুব সুন্দর করে সহজ করে এতো বড় গল্পটি আমাদের সকলকে উপহার দেওয়ার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ! আর, বানান নিয়ে ভাববেন না। আপনার লেখায় ঠাকুমা-দিদিমার বলা রূপকথার টান আছে !
দেশ বন্ধু
এতো বড় একটি গল্প কত সুন্দর আর সহজ করে বলা যায়, আপনার কাছ থেকে তা শেখার! যেন ঠাকুমা- দিদিমার মুখে রূপকথা শুনছি! সুমিতা
সেই ছোট বেলাতে ঠাকুর মার ঝুলি পড়েছি। এই তো গত বছর আমার বাচ্চা হওয়ার পরে তাকে কোলে রেখে প্রতিদিন ঠাকুর মার ঝুলি শুনাতাম। তাই লেখার সময়ে মনে হচ্ছিল বাচ্চাদের গল্প শুনাচ্ছি
দেশ বন্ধু
facebook
দেশ বন্ধু
মিশর আর মিশরীয় পূরাণ অনেক প্রিয় বিষয়। নাম দেখেই ঢুকেছিলাম পড়তে, কিন্তু সত্যি বলতে কি, বানান বিভ্রাটে অনেক হোঁচট খেয়ে খেয়ে পড়তে হলো।
আপনি একটু ণ-ত্ব বিধানটা টুক করে দেখে ফেলতে পারেন, এখানে হিমু ভাইয়ের চমৎকার দু'টি রম্য পোস্ট আছে। আর চন্দ্রবিন্দু জরুরি না হলে অতবেশি ব্যবহারের দরকার নেই!
আরেকটা জিনিস, ছবিগুলোর লিংক মানে মূল ছবি কোথা থেকে নিয়েছেন, তা জুড়ে দেয়া উচিত মনে হয়।
আরও কিছু মিশরীয় পূরাণ আশা করছি। ছোট ছোট গল্প হলে আরও ভালো হয়। লিখতে থাকুন।
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
বানান নিয়ে আসলেই সমস্যা, বিশেষ করে ণ আর ন নিয়ে। চন্দ্রবিন্দু জরুরি কি জরুরি না, সেটাই তো এখন বুঝতে পারি না
ছবিগুলোর লিংক এর সূত্র কিন্তু লেখার শেষেই দেয়া আছে
দেশ বন্ধু
দারুণ
নতুন মন্তব্য করুন