গ্রীক মিথলজি ২৩ (আর্টেমিসের গল্পকথা- এলোয়াডি, আলফিউস ও আরেথুসা এবং ক্যালিষ্টোর কাহিনী)

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বিষ্যুদ, ৩১/১০/২০১৩ - ৪:৩২অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

নিজের কুমারীত্ব রক্ষার জন্য দেবী আর্টেমিস অনেককেই কঠোর শাস্তি দিয়েছিলেন। যেমন- একটাওন, বুউফাগোস। এইসব শাস্তিতে ছিলো প্রতিহিংসার ছাপ। তবে এক্ষেত্রে প্রতিহিংসার চেয়ে বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছিলেন যে ঘটনায় সেটা ছিলো ওটাস এবং এফিয়ালটেস নামে দুই জময ভাইয়ের সাথে।

ওটাস এবং এফিয়ালটেসের কাহিনীঃ

ইফিমেডিয়া ছিলেন ট্রিওপাসের কন্যা, থাকতেন গ্রীসের থেসালীতে। এই ইফিমেডিয়ার বিয়ে হয়েছিলো এলোয়াসের সাথে, কিন্তু ইফিমেডিয়া প্রেমে পড়ে গেলেন সমুদ্র দেব পসাইডনের। প্রতিদিন ইফিমেডিয়া সাগর তীরে এসে বসতেন, সাগরের জলরাশি এসে তাকে ভিজিয়ে যেতো। একদিন এভাবেই এলেন পসাইডন এবং ইফিমেডিয়ার সাথে মিলিত হলেন। তাদের মিলনে জন্ম নিলো ওটাস এবং এফিয়ালটেস নামের দুই জময ভাই। পার্থিব পিতা এলোয়াসের কারণে তাদেরকে বলা হতো এলোয়াডি।

এই জময ভাইয়েরা ছিলো দৈত্য, কিন্তু দৈত্য বলতে আমরা যেরকম কিম্ভুতকিমাকার চেহারা বুঝি, তাদের চেহারা সেরকম ছিলো না। তারা ছিলো সুদর্শন এবং সুগঠিত দেহের অধিকারী। বলা হয়ে থাকে, পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর মানব অরিয়নের পরেই এই দুই ভাই ছিলো সুদর্শন।
দুই ভাই খুব দ্রুত বড় হতে লাগলো। তাদের যখন নয় বছর বয়স, প্রস্থে ছিল নয় কিউবিট (১ কিউবিট = ১৮ ইঞ্চি) এবং দৈর্ঘ্যে ছিলো নয় ফ্যাদম (১ ফ্যাদম = ১.৮২ মিটার)। এই বিশাল আকৃতির জন্য তাদের মধ্যে গর্ব ছিলো, তারা যে দেবতাদের চেয়ে শক্তিশালী সেটা প্রমাণ করার জন্য উঠে পড়ে লাগলো। এফিয়ালটেস ঠিক করলো দেবী হেরাকে অপহরণ করবে, একইভাবে ওটাস সিদ্ধান্ত নিলো দেবী আর্টেমিসকে কব্জা করবে। এই ব্যাপারে তারা স্টিক্স নদীর নামে শপথ পর্যন্ত নিয়ে ফেললো, যে শপথ ছিলো অলঙ্ঘনীয়।

তারা সিদ্ধান্ত নিলো এই কাজের জন্য প্রথমে যুদ্ধ দেবতা অ্যারিসকে বন্দী করতে হবে, এরপর অলিম্পাসে আক্রমণ করে হেরা এবং আর্টেমিসকে অপহরণ করতে হবে। দেবতা অ্যারিস তখন ছিলেন থ্রাসে। তারা থ্রাসে গিয়ে অ্যারিসকে খুব সহজেই বন্দী করে ফেললো। তাদের সৎ মা এরিবোয়ার ঘরে ব্রোঞ্জের জারে অ্যারিসকে আটকে রাখলো, ততদিনে অবশ্য তাদের প্রকৃত মা ইফিমেডিয়া মারা গেছেন।


শিল্পীর তুলিতে ওটাস এবং এফিয়ালটেসের হাতে বন্দী দেবতা অ্যারিস

দেবতা অ্যারিসকে বন্দী করার পর তারা অলিম্পাস পাহাড় আক্রমন করা শুরু করলো। অলিম্পাসে উঠার জন্য তারা ওসা পাহাড়ের উপর পেলিয়ন পাহাড়কে বসিয়ে উঁচু করতে লাগলো। তাদের আত্মবিশ্বাস এতো বেশি ছিলো, কারণ তারা এক ভবিষ্যতবানী জানতো, সেখানে বলা ছিলো এই দুই ভাইকে কোনো দেবতা বা মানুষ হত্যা করতে পারবে না। তাই জিউস বজ্র নিক্ষেপ করে দুই ভাইকে হত্যা করতে চাইলেও, তাদের বাবা পসাইডন ভবিষ্যৎবানীর কথা জিউসকে মনে করিয়ে দেন। জিউস তখন তাদেরকে হত্যা করা থেকে বিরত থাকেন।


জেমস গ্লেসনের আঁকা- ওটাস এবং এফিয়ালটেস পাহাড়ের উপর পাহাড় বসিয়ে অলিম্পাস আক্রমনের প্রস্ততি নিচ্ছে

এই অবস্থায় দেবতা এপোলোর পরামর্শে আর্টেমিস তাদের কাছে সংবাদ পাঠালেন। তিনি জানালেন, তারা যদি অলিম্পাস আক্রমণ বন্ধ করেন, তাহলে তিনি তাদের সাথে নাক্সোস দ্বীপে দেখা করবেন এবং ওটাসের সাথে মিলিত হবেন। এই সংবাদে ওটাস প্রচন্ড খুশি হলেও, হেরার কাছ থেকে একই রকম সংবাদ না পাওয়াতে এফিয়ালটেস খুব ক্ষুদ্ধ এবং ঈর্ষান্বিত হয়। দুই ভাইয়ের মধ্যে শুরু হয় ঝগড়া। দুইজনই তখন নাক্সোস দ্বীপে। জময হলেও এফিয়ালটেস ছিলো ওটাস থেকে কিছুটা বড়। তাই সে বলতে লাগলো, যদি শুধু আর্টেমিস মিলিত হওয়ার জন্য রাজী হয়, তাহলে বড় ভাই হিসেবে এফিয়ালটেস প্রথমে মিলিত হবে। ঠিক এই সময়ে আর্টেমিস খুব সুন্দর এক হরিণের বেশে তাদের সামনে উপস্থিত হোন। দুই ভাই সিদ্ধান্তে আসলো, যে আগে হরিণটিকে শিকার করতে পারবে, সেই আর্টেমিসকে পাবে।

তারা দুইজনই হরিণ শিকারে মত্ত হয়ে উঠলো। হরিণরুপী আর্টেমিস এমন এক অবস্থায় আসলেন, মাঝখানে তিনি এবং দুইপাশে দুই ভাই। দুই ভাই-ই একসাথে হরিনটির দিকে বর্শা ছুড়ল। আর্টেমিস খুব দ্রুত জায়গা পরিবর্তন করলেন, ফলে দুই ভাই-ই তাদের নিক্ষিপ্ত বর্শায় পরস্পর বিদ্ধ হয়ে মারা যায়। এভাবেই ভবিষ্যতবাণীটি সত্য হয়- কোনো দেবতা বা মানুষের আঘাতে তারা মারা গেলো না, কিন্তু মারা গেলো পরস্পরের আঘাতে, একই সাথে দেবী আর্টেমিস বুদ্ধিমত্তার সাথে তার সতীত্ব রক্ষা করলেন।

তাদের মরদেহ আনা হলো বোয়েটিয়াতে, যদিও নাক্সোসের অধিবাসীরা তাদেরকে বীর হিসেবেই সবসময় চিহ্নিত করতো। তারাই ছিলো প্রথম মরণশীল, যারা হেলিকন পর্বতের মিউজদের উপাসনা করতো।

তাদের মৃত্যুর পর দেবতা হার্মিস এরিবোয়ার বাসস্থানে গিয়ে অর্ধ মৃত অবস্থায় অ্যারিসকে উদ্ধার করেন। বলা হয়ে থাকে অ্যারিস প্রায় তের মাস বন্দী অবস্থায় ছিলেন। অন্যদিকে দুই ভাইয়ের আত্মা চলে গেলো টারটারাসে, সেখানে স্টিক্স নদী তাদের ক্রমাগত শাস্তি দিতে লাগলেন, তার নামে নেওয়া শপথের জন্য, যে শপথ তারা পূর্ণ করতে পারলেন না।


গুস্তাভের আঁকা টারটারাসে এফিয়ালটেস (বামে), সাথে অন্যান্য জায়ান্টরা

(অন্য এক মিথে আছে, দুই ভাই আফ্রোদিতির প্রেমিক অ্যাডোনিসকে খুব পছন্দ করতো। তারা মনে করলো অ্যাডোনিসের মৃত্যুর জন্য অ্যারিস দায়ী। তাই তারা অ্যারিসকে বন্দী করেছিলো। তাদের সৎ মা এরিবোয়া নিজেই হার্মিসকে জানিয়ে দেন অ্যারিসকে বন্দী করে কোথায় রাখা হয়েছে। হার্মিস সেখানে গিয়ে অ্যারিসকে উদ্ধার করেন।)

আলফিউস ও আরেথুসার কাহিনীঃ

আলফিউস ছিলেন এক নদী দেবতা। তিনি দেবী আর্টেমিসের প্রেমে পড়লেন। কিন্তু যখন তিনি বুঝতে পারলেন, তিনি আর্টেমিসের হৃদয় পাবেন না, তখন সিদ্ধান্ত নিলেন আর্টেমিসকে অপহরণ করবেন। আলফিউসের ছল চাতুরীতে আর্টেমিস আলফিউসের কাছে গেলেন, কিন্তু যখন আলফিউসের বদ মতলব বুঝতে পারলেন, নিজের মুখ মন্ডল কাদা দিয়ে ঢেকে ফেললেন, আলফিউস আর্টেমিসকে চিনতে পারলেন না।

আরেথুসা নামে আর্টেমিসের এক সঙ্গী ছিলেন। দেবীর মতো তিনিও পুরুষ সঙ্গ পরিহার করতেন। আরেথুসার কাছে মূল্যবান ছিলো শিকার এবং বনভূমির নির্জনতা ও স্বাধীনতা। একদিন এক শিকারের পিছনে ছুটতে ছুটতে আরেথুসা এক স্বচ্ছ সলিলা নদীর ধারে এসে উপস্থিত হলেন। পানির দিকে তাকিয়ে মুগ্ধ হয়ে আরেথুসা নগ্ন অবস্থায় স্নান করতে নামলেন। ঠিক সেই সময়ে আলফিউস আর্টেমিসকে না পেয়ে খুব হতাশায় ছিলেন। হঠাৎ করে নগ্ন আরেথুসাকে দেখে চিন্তা করলেন, আর্টেমিসকে পাইনি তো কী হয়েছে, আর্টেমিসের সুন্দরী সঙ্গী তো আছে!

পানিতে সাঁতার কাটা অবস্থায় আরেথুসা অনুভব করতে পারলেন পানির নীচে কী যেনো নড়ছে। ভয় পেয়ে তিনি তীরে উঠতে গেলেই আলফিউস বলে উঠেন, “এতো তাড়া কিসের সুন্দরীতমা? আমি নদীর দেবতা আলফিউস। আমি তোমাকে ভালোবাসি!” কিন্তু পুরুষ সঙ্গ পরিহার করা আরেথুসার মনে তখন একটাই চিন্তা- পালানো, দিলেন দৌড়। পিছনে পিছনে দৌড়াতে লাগলেন আলফিউসও। দীর্ঘ সে দৌড়। এক সময় আরেথুসা ক্লান্ত হয়ে পড়লেন। সতীত্ব রক্ষার জন্য করুণ কন্ঠে দেবী আর্টেমিসকে ডেকে বললেন, “আমাকে বাঁচাও!”


বার্নার্ড পিকার্টের আঁকা এলফিউস এবং এরেথুসা

আর্টেমিস শুনলেন তার প্রার্থনা। আরেথুসাকে রুপান্তরিত করলেন এক জলের ঝর্নায়। জায়গাটা ছিলো সিসিলির সবচেয়ে বড় শহর সিরাকুজের একটি অংশ, অর্টিজিয়া দ্বীপ সেটা। সেই ঝর্না ধরনীর বুকে প্রবাহিত হলো টানেল হিসেবে। কিন্তু এতেও শেষ রক্ষা হলো না আরেথুসার। মিথে আছে দেবতা আলফিউসও একটি নদীতে রুপান্তরিত হয়ে ঐ টানেলে প্রবেশ করেন। নদীর জলের সাথে মিলে মিশে থাকলো ঝর্নার জল!

এতো গেলো আর্টেমিসের সতীত্ব রক্ষার কাহিনী। সতীত্ব রক্ষা ছাড়াও আর্টেমিসের ক্রোধের শিকার অবশ্য আরো অনেকে হয়েছেন। এর একটা প্রধান কারণ ছিলো অহংকারী হয়ে উঠা। অবশ্য সব দেব-দেবীই যুগে যুগে অহংকারীদের শাস্তি দিয়ে এসেছেন। আর্টেমিস এবং এপোলো যেমনভাবে শাস্তি দিয়েছিলেন নাইওবিকে, তার সাত পুত্র এবং সাত কন্যা সন্তানকে হত্যা করে। নাইওবি ছিলেন ট্যান্টালাসের কন্যা, তার এক ভাই হচ্ছেন বিখ্যাত রাজা পেলোপস। পেলোপস ছাড়াও তার আরেক ভাই ছিলেন, ব্রোটিয়াস। ব্রোটিয়াস ছিলেন খুব ভালো শিকারী, এবং হয়ে উঠলেন অহংকারী। তিনি বলতে লাগলেন, তিনি আর্টেমিসের চেয়েও বড় শিকারী। স্বভাবতই ক্ষুদ্ধ আর্টেমিস ব্রোটিয়াসকে উন্মাদে পরিণত করলেন এবং উন্মাদ ব্রোটিয়াস আগুনে ঝাপ দিয়ে আত্মহত্যা করেন।

শুধু তাই নয়, আর্টেমিস এমন কয়েকজনকে শাস্তি দিয়েছিলেন যারা তার সঙ্গী ছিলেন, এবং সতীত্ব হারিয়ে তাকে জানাননি। এদের মধ্যে বিখ্যাত হচ্ছেন ক্যালিষ্টো।

আর্টেমিস, ক্যালিষ্টো এবং জিউসের কাহিনীঃ

আর্কাডিয়ার রাজা লাইকায়নের কথা নিশ্চয়ই মনে আছে? ডিওক্যালিয়নের প্লাবন সংঘটনের প্রত্যক্ষ কারণ ছিলো যে রাজা, তিনি ছিলেন আর্কাডিয়ার রাজা লাইকায়ন। পঞ্চাশ জন পুত্রের সাথে তার এক কন্যাও ছিলো, যার নাম ছিলো ক্যালিষ্টো।

ক্যালিষ্টো সম্পর্কে অনেকগুলো মিথ প্রচলিত আছে। সবচেয়ে প্রচলিত মিথ হচ্ছে, ক্যালিষ্টো প্রতিজ্ঞা করেছিলেন তিনি তার সতীত্ব রক্ষা করবেন এবং আর্টেমিসের সঙ্গী হিসেবে সব সময় থাকবেন। যারা আর্টেমিসের সঙ্গী হিসেবে থাকতেন, তাদের একটি অত্যাবশ্যকীয় শর্ত ছিলো কুমারী থাকা। কিন্তু দেবরাজ জিউস একদিন ক্যালিষ্টোকে দেখলেন। এবং স্বভাবতই মুগ্ধ হলেন!

ক্যালিষ্টোকে প্ররোচিত করে জিউস তার সাথে মিলিত হলেন। ক্যালিষ্টো ঘটনাটি আর্টেমিসের কাছে গোপন রাখলেন। কিন্তু স্নানের সময় ক্যালিষ্টোকে অন্তঃসত্ত্বা দেখে আর্টেমিস ক্ষুদ্ধ হয়ে ভালুকে রুপান্তরিত করেন। অন্য শিকারীরা তখন ভালুকরুপী ক্যালিষ্টো এবং তার সন্তান আরকাসকে ধরে ক্যালিষ্টোর বাবা লাইকায়নের কাছে নিয়ে যান। লাইকায়ন আরকাসকে লালন পালন করতে থাকেন, আরকাস এভাবে বড় হতে থাকেন। অন্যদিকে ভালুকরুপী ক্যালিষ্টোকে বনে ছেড়ে দেন। পরবর্তীতে একদিন ক্যালিষ্টো অসাবধানতাবশত ঘুরতে ঘুরতে জিউসের এক মন্দিরে চলে যান, সেখানে তখন ছিলেন তারই সন্তান আরকাস। মন্দিরকে অপবিত্র করার অপরাধে, ক্যালিষ্টোর আসল পরিচয় না জেনেই যখন ক্যালিষ্টোকে হত্যা করতে উদ্যত হলেন, জিউস তখনই ভালুক ক্যালিষ্টো এবং তার সন্তান আরকাসকে আকাশের নক্ষত্রে রুপান্তরিত করেন। নক্ষত্রমন্ডলে ক্যালিষ্টোকে বলা হয় সপ্তর্ষিমন্ডল (বড়) এবং আরকাসকে বলা হয় সপ্তর্ষিমন্ডল (ছোট)।

দ্বিতীয় যে মিথ প্রচলিত, সেখানে দেখা যায়, জিউস আর্টেমিসের ছদ্মবেশেই ক্যালিষ্টোর সাথে মিলিত হোন এবং স্নানের সময় ক্যালিষ্টো যখন বুঝতে পারেন তিনি অন্তঃসত্ত্বা, তখন এই ঘটনার জন্য আর্টেমিসকে দায়ী করতে থাকেন। আর্টেমিস স্বাভাবিকভাবেই এই অভিযোগে ক্ষুদ্ধ হয়ে ক্যালিষ্টোকে ভালুকে পরিণত করেন।


আর্টেমিসরুপী জিউস এবং ক্যালিষ্টো (শিল্পী- ফ্রাঙ্কোইস বাউচার, ১৭৪৪ সাল)

ক্যালিষ্টো নিয়ে যে তৃতীয় মিথ প্রচলিত, সেখানে বলা হয়েছে, ক্যালিস্টো জিউসের প্ররোচনায় জিউসের সাথে মিলিত হলে, জিউসের স্ত্রী দেবী হেরা ক্ষুদ্ধ এবং ঈর্ষান্বিত হয়ে ক্যালিষ্টোকে ভালুকে রুপান্তরিত করেন এবং দেবী আর্টেমিসকে প্ররোচিত করেন ভালুকরুপী ক্যালিষ্টোকে হত্যা করতে। এই অবস্থায় জিউস দেবতা হার্মিসকে পাঠান, হার্মিস ক্যালিষ্টোর গর্ভ থেকে শিশু আরকাসকে উদ্ধার করে দেবী মায়া (জিউস যার গর্ভে দেবতা হার্মিসের জন্ম দিয়েছিলেন)-র কাছে লালন-পালন করতে দিয়ে আসেন এবং জিউস ক্যালিষ্টোকে পরিণত করেন আকাশের নক্ষত্রপুঞ্জতে- সপ্তর্ষিমন্ডল (বড়)। পরবর্তীতে ক্যালিষ্টোর পুত্র আরকাসকেও নক্ষত্রপুঞ্জে স্থান দেওয়া হয়- সপ্তর্ষিমন্ডল (ছোট) হিসেবে।

মিথলজির সময়কাল হিসেবে, ক্যালিষ্টোর ঘটনা ঘটেছিলো ডিওক্যালিয়নের প্লাবনের পূর্বে। প্লাবনের পর, বলা হয়ে থাকে, ক্যালিষ্টোর পুত্র আরকাস জীবিত থাকেন এবং ওক গাছ থেকে জন্ম নেওয়া পেলাসগিয়ান (গ্রীসের আদি অধিবাসী)-দের এক নতুন প্রজন্মকে শাসন করেন। তার বংশধররা সেই সাম্রাজ্য ট্রোজান যুদ্ধের সময়কাল পর্যন্ত শাসন করতে থাকেন।

আর্টেমিসের ক্রোধের আরো অনেক কাহিনী প্রচলিত আছে, যেমন – ক্যালিডনীয় বন্য শুকরের কাহিনী, আগামেমননের কন্যা ইফিজেনিয়ার কাহিনী, ভাই এপোলোর এক প্রেমিকা করোনিসের কাহিনী। কিন্তু শিকারী দেবী আর্টেমিসের প্রতিহিংসা আর প্রতিশোধের কাহিনী শুনতে শুনতে নিশ্চয়ই বিরক্ত হয়ে গেছেন সবাই, তাই না? তাই এই কাহিনীগুলো এখানে নয়, অন্য কোথাও শোনানো হবে। কিন্তু আর্টেমিস কী শুধু শিকারই করে গেছেন সবসময়? সবসময় কি শুধু অন্যকে শাস্তিই দিয়ে গেছেন? না, কুমারী দেবী আর্টেমিসও একসময় প্রেমে পড়েছিলেন। প্রেমে পড়েছিলেন পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর মানব অরিয়নের। সেই কাহিনী থাকবে পরবর্তী পর্বে।

(দীর্ঘ বিরতিতে এই পর্বটি এলো। এর সম্পূর্ণ দায় দায়িত্ব আমার প্রফেশনাল ব্যস্ততা। সেজন্য আমি দুঃখিত। অনেকের লেখাও এই সময়ে পড়া হয়ে উঠেনি, সেজন্যও আমি দুঃখিত। ভালো থাকুন সবাই, সব সময়ের জন্য। )

এই সিরিজের আগের লেখাগুলোঃ

সৃষ্টিতত্ত্বঃ
পর্ব-১: বিশ্ব-ব্রক্ষ্মান্ডের সৃষ্টি এবং ইউরেনাসের পতন
পর্ব-২: টাইটান যুগের সূচনা এবং অলিম্পিয়ানদের জন্ম
পর্ব-৩: প্রথম টাইটান যুদ্ধ এবং জিউসের উত্থান
পর্ব-৪: মানবজাতির সৃষ্টি, প্রমিথিউস এবং পান্ডোরা উপাখ্যান
পর্ব-৫: প্রমিথিউসের শাস্তি এবং আইও
পর্ব-৬: আবার যুদ্ধ- জায়ান্ট এবং টাইফোয়িয়াস
পর্ব-৭: ডিওক্যালিয়নের প্লাবন

দেবতাদের গল্পঃ
পর্ব-৮: জিউস, মেটিস এবং এথেনার জন্ম
পর্ব-৯: এথেনার গল্পকথা-প্রথম পর্ব
পর্ব-১০: এথেনার গল্পকথা- দ্বিতীয় (শেষ) পর্ব
পর্ব-১১: আফ্রোদিতির গল্পকথাঃ আফ্রোদিতি, হেফাস্টাস এবং অ্যারিসের ত্রিমুখী প্রেমকাহিনি
পর্ব-১২: আফ্রোদিতির গল্পকথাঃ অ্যাডোনিসের সাথে অমর প্রেমকাহিনী
পর্ব-১৩: আফ্রোদিতির গল্পকথাঃ এনকেসিসের সাথে দূরন্ত প্রেম
পর্ব-২০: আফ্রোদিতির গল্পকথাঃ লেমনসের নারী এবং অন্যান্য
পর্ব-২১: লেটোঃ এপোলো এবং আর্টেমিসের মায়ের কাহিনী
পর্ব-২২: আর্টেমিসের গল্পকথাঃ একটাওনের মন্দভাগ্য

ভালোবাসার গল্পঃ
পর্ব-১৪: পিগম্যালিয়ন এবং গ্যালাতিয়া
পর্ব-১৫: পিরামাস এবং থিসবি
পর্ব-১৬: হিরো এবং লিয়েন্ডার
পর্ব-১৭: বোসিস এবং ফিলোমোন
পর্ব-১৮: কিউপিড এবং সাইকী- প্রথম পর্ব
পর্ব-১৯: কিউপিড এবং সাইকী- শেষ পর্ব

লেখকঃ

এস এম নিয়াজ মাওলা

ছবি সূত্রঃ ইন্টারনেট


মন্তব্য

 মেঘলা মানুষ এর ছবি

ধন‌্যবাদ পেশগত ব্যস্তটার মাঝেও নিয়মিত লিখে যাবার জন্য। আপমার এই লেখাগুলো খুব সরল ভাষায় লেখা, পড়তে ভালো লাগে।

আর, আর্টেমিসকে আপাতত: বিদায় দেবার সিদ্ধান্ত নিয়ে ভালো করেছেন, আজ একে শাস্তি, তো কাল ওকে শাস্তি রেগে টং

শুভেচ্ছা হাসি

 মেঘলা মানুষ এর ছবি

আগের কমেন্টে টাইপোর জন্য লজ্জিত।
*পেশগত ব্যস্তটার= পেশাগত ব্যস্ততার
*আপমার=আপনার

আরেকটা জিনিস মনে আসে এই গল্পগুলো পড়লে, গ্রিক মিথলজি মোটামুটি জিউসের লাম্পট্য দিয়েই ভরা।

আপনাকে শুভেচ্ছা হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনাকে পড়ার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ মেঘলা মানুষ।
ভালো থাকুন সবসময়ের জন্য।

-নিয়াজ

এক লহমা এর ছবি

গল্প ভাল লেগেছে, যথারীতি।

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

অতিথি লেখক এর ছবি

যথারীতি আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ একলহমা ভাইয়া।
ভালো থাকুন খুব।

-নিয়াজ

প্রোফেসর হিজিবিজবিজ এর ছবি

গল্পগুলো পড়তে গিয়ে বারবার মনে হচ্ছে হাতে ক্ষমতা থাকলে কত কিছুই না করা যায়! যেমন ক্যালিস্টোর দ্বিতীয় মিথ। জিউস যদি আর্টেমিসে ছদ্মবেশে আসে, তো ক্যালিস্টোর কী করার আছে? আবার নিজের সঙ্গীর প্রতি আর্টেমিসের এরকম বিরূপ আচরণ কেন, ক্যালিস্টো তো জিউসকে চিনতে পারে নি!! শাস্তি দিতে হলে জিউসকে দেয়া উচিৎ। আসলে জিউসকে তো আর আর্টেমিস শাস্তি দিতে পারবে না, তাই ক্যালিস্টোর উপরে রাগ ঝেড়েছে!

আমাদের বর্তমান রাজনীতির সাঠে এর কিছু মিল পাচ্ছি। টপ বস যা খুশি তাই করতে পারে, পাতি বসরা টপ বসকে কিছু বলতে না পারলে নিজেদের ক্রোধ হাসিল করে নেয় সাধারণ জনগনের উপরে!

____________________________

এক লহমা এর ছবি

হাঃ হাঃ হাঃ, পুরাই ঠিক!

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

অতিথি লেখক এর ছবি

অয়ন ভাইয়া, এরকম আরো বহু জিনিস পাওয়া যাবে গ্রীক মিথে। ভালোই বলেছেন- আমাদের দেশের রাজনীতির সাথে পুরোপুরি মিল আছে হাসি

ভালো থাকুন ভাইয়া, খুব।

-নিয়াজ

গীতহীন গীতিকার এর ছবি

ভাই...এই মাত্র আপনার লেখা সব গুলো পরব পড়ে শেষ করলাম...
এতদিন ধরে একটানা পাঠকের মনোযোগ ধরে রাখা আসলেই কষ্টকর...
আপনি সেটা পেরেছেন...
ভাই...পরবরতি পর্বগুলো কিভাবে পাবো,একটু জানাবেন?
আমি এখানে নতুন,তাই সঠিক নিয়ম-কানুন জানি না তো... হাসি

গীতহীন গীতিকার

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।