আমার ধারনা ছিল আমার পক্ষে ভয় পাওয়া সম্ভব না। এমনকি কোন খারাপ পরিস্থিতিতেই ভয় না পেয়ে নিজেকে মাঝে মাঝে অনেক কুল মনে হত। ভুল ভাঙল কালকে টিভিতে বাসে পোড়া মানুষদেরকে দেখে। আমি নিয়মিত লোকাল বাসে চলাচল করা পাবলিক। টিভিতে যখন দেখছিলাম বিহঙ্গ পরিবহনের যাত্রীদের পেট্রল বোমাতে ঝলসানো শরীর, তখন ভাবলাম আপাতত কিছুদিন আর বাসে চলাফেরা করবনা। সম্ভবত এটাই ভয়ের সবচাইতে কাছাকাছি অনুভূতি যা আমি পেতে পারি।
ফেইসবুকে আমার এক বন্ধু আছে, কোন এক সাপোর্ট গ্রুপ থেকে আমরা বন্ধু হয়েছিলাম। সে রোজ স্ট্যাটাস দেয় সে তার ফেইসবুক একাউন্ট ডিএকটিভেট করে দিবে। তার কোন বন্ধু নেই। সে আর এত কষ্ট সহ্য করতে পারছেনা। সে আত্মহত্যা করবে। ইত্যাদি। আমি রুটিন করে তার স্ট্যাটাসে মন্তব্য করি, আমি তোমার বন্ধু, এই কষ্টও সহ্য হয়ে যাবে, অন্তত আজকের দিনটা তুমি আত্মহত্যা কোরোনা, একটু ঘুমাও, একটু খাও, নোনতা কিছু খাও, বাইরে থেকে হেটে আসো, গোসল কর। আমার মত আরো দুই একজন মাঝে মাঝে কমেন্ট করে। আমি বা আমরা কেউ তার বন্ধু কিনা জানিনা। আমার পক্ষে কারো বন্ধু হওয়া সম্ভব কিনা জানিনা। আমি জানিনা আমি তার জন্য আসলেই কেয়ার করি কি না। কারন আমি তার কার্যক্রম দেখে আবেগ বা বিরক্তি কিছুই অনুভব করিনা। যদি আমি আমার ওষুধ পত্র, মুড স্ট্যাবিলাইজারের উপরে না থাকতাম, তাহলে কি আমি বিরক্ত হয়ে তাকে আমার বন্ধু তালিকা থেকে বাদ দিয়ে দিতাম?
সাইকায়াট্রিস্টের কাছে নিয়ে যাওয়ার আগে আমার দুটি প্রধান অনুভূতি ছিল রাগ এবং দুঃখ। রেগে গেলে আমি জিনিসপত্র ভাংচুর করতাম। দুঃখের অনুভূতি এতটাই প্রবল ছিল যে ইচ্ছা করত ব্লেড দিয়ে হাত পা কেটে ফেলি, দুঃখের কষ্টটা থেকে মন সরানোর জন্য। আনন্দ ছিল খুবই ক্ষণিকের অতিথি। কোন কিছুতে খুশি হতে ভয় পেতাম, কারন জানতাম, এই অনুভূতি বেশি সময় থাকবেনা, এবং তখন যে মহাজাগতিক শুন্যতাবোধ বুকের মধ্যে খুব দ্রুত জায়গা করতে থাকবে, মানুষের মস্তিস্ক সম্ভবত তা ধারণ করতে সক্ষম না। হয়ত ভবিষ্যতে শরীরের যন্ত্রনা যেমন মাপা হয় তেমন করে মানসিক যন্ত্রনা পরিমাপেরও কোন প্রযুক্তি উদ্ভাবিত হবে। তবে মার্শা লিনেহান নামে একজন বিজ্ঞানী, যিনি দীর্ঘদিন বর্ডারলাইনদের নিয়ে গবেষনা করেছেন, তিনি বলেছিলেন, আমাদের মত মানুষেরা নাকি শরীরের নব্বই ভাগ অংশে থার্ড ডিগ্রি বার্ন নিয়ে ঘুরে বেড়ানো মানুষ। কোন ইমোশনাল চামড়া নেই, সামান্য এদিক ওদিক হলেই অপরিসীম যন্ত্রণার মুখোমুখি হয়ে যেতে হয়। যাই হোক যতদিন না এটা 'হাতে কলমে' প্রমাণ করার কোন ব্যবস্থা না হবে, ততদিন সম্ভবত অন্ধ পঙ্গুদের সাথে তুলনা দেওয়া বন্ধ হবেনা।
তবে যখন থেকে আমাকে মুড স্ট্যাবিলাইজার দেওয়া হচ্ছে আমি সম্ভবত অনেক ভাল আছি। আগে যেইসব ঘটনাতে রাগে অন্ধ হয়ে যেতে পারতাম, এখন তো তাতে হেসেই ফেলি। শুরু শুরুতে মনে হত আমি যেন ইমোশনালি কেইজড, কেন আমি আগের মত রাগ দুঃখ হতাশা বিরক্তি অধৈর্য অনুভব করতে পারিনা। তখন আমাকে ডাক্তার বোঝালেন, আশেপাশের মানুষে নাকি এরকম একমুখী রাগ দুঃখ হয়ই না। বরং তারা এই অনুভূতিগুলিকে বিভিন্নভাবে চ্যানেল করে। তা ওষুধপাতি খাওয়া অবস্থায় আমার অনুভূতিগুলি যেইরকম, বেশিরভাগ মানুষ যদি সাধারণ সবস্থায় সেইরকমই অনুভব করে, তাহলে বলতে হবে, বেশিরভাগ মানুষের অনুভূতির স্কেল বেশ ভোঁতা। সে যাই হোক, যখন থেকে আমি ওষুধ খাচ্ছি যেনে হোক না জেনে হোক অনেকেই বলেছে আমার মধ্যে কোথায় যেন একটা ইতিবাচক পরিবর্তন হয়েছে। তাই ধরে নিচ্ছি আমরা ঠিক পথেই যাচ্ছি।
তারপরেও মেজর ডিপ্রেশানে ভুগছে, এমন কারু বন্ধু হওয়া অত্যন্ত ইমোশনালি ডিমান্ডিং কাজ। হাসিখুশি, প্রাণোচ্ছল, সফল মানুষদেরকে সবাই ভালবাসে, সবাই তাদেরই বন্ধু হতে চায়। গভীর বিষণ্ণতা, আনস্টেবল মুড যাদের বিচারবুদ্ধি নষ্ট করে দেয়, তাদের জায়গা হয় একাকিত্বের অন্ধকার কোণে। একা একা এই কষ্ট সহ্য করার চাইতে আত্মহত্যা করে মরে যাওয়া মাঝে মাঝে সহজ বলে মনেহয়। আমার মনে আছে, আমার যখন একবার সাইকায়াট্রিস্টের সাথে মতে মিলছিলনা, বাসাতেও অনেক সমস্যা হচ্ছিল, আমি আর সহ্য করতে না পেরে অনেক ঘনিষ্ঠ এক ডাক্তার বন্ধুকে সবকিছু খুলে বলি। তাকে বলি আমি আত্মহত্যা করতে চাই। সে তখনকার মত আমাকে সান্ত্বনা দিলেও, পরে আর কোনদিন ফোন করেনি। দেখা হলেও খুব স্বাভাবিক আচরণ করে, যেন ওই কথোপকথনটি আমাদের মধ্যে কখনোই হয়নি। এই ভুলটা সম্ভবত অনেকেই করে। যদি মনের অসুখের ডায়াগোনোজড ব্যক্তি, বা আত্মহত্যাপ্রবন কেউ আপনার কাছে তার অবস্থার কথা খুলে বলে, তবে আপনারও উচিত তার কাছে সৎ হওয়া। যদি আপনার কাছে তার আপডেট নেওয়া, তাকে সাপোর্ট দেওয়া খুব কঠিন মনেহয়, তাকে খুলে বলুন। তাকে বলুন যে আপনি তার বন্ধু এবং তার জন্য কেয়ার করেন, কিন্তু ব্যাপারটা আপনি নিতে পারছেননা। কিন্তু ব্যাপারটা পুরোপুরি চেপে যাওয়া চরম ইনভ্যালিডেটিং একটা ব্যাপার। বিষণ্ণ ব্যক্তিরা বুদ্ধিহীন নয়। আপনি খুলে বললে আপনার বন্ধু বুঝবে।
আর যদি সম্ভব হয়, আপনার বিষণ্ণ বন্ধুটির সাথে একটু কথা বলুন। সে যদি বারবার আত্মহত্যার কথা বলে, সে সম্ভাবনাটি উড়িয়ে দেবেননা। আমাদের মধ্যে একটা প্রচলিত ধারণা আছে, যারা বেশি বেশি আত্মহত্যার কথা বলে, তারা আত্মহত্যা করেনা। এই কথাটি সত্য নয়। যারা আত্মহত্যা করে, তারা প্রায় সবসময়েই মরার আগে কাউকে না কাউকে সে যে আত্মহত্যা করতে চায়, এ কথাটা বলে।
আমাদের মধ্যে আরো একটা ধারণা আছে, যাদের আত্মহত্যা করবার, তারা যে কোন পরিস্থিতিতেই আত্মহত্যা করবে। এ কথাটাও ঠিক নয়। তাদের সাথে একটু কথা বললে, তাদেরকে দিয়ে একটু ধৈর্য ধরানো সম্ভব হলে, তাদেরকে এ সিদ্ধান্ত থেকে সরিয়ে আনা সম্ভব।
কেউ যদি বলে সে আত্মহত্যা করতে চায়, আমরা তার কাছ থেকে আর বেশি কিছু জানতে ভয় পাই। ভাবি এটা নিয়ে কথা বললে সে হয়ত উৎসাহ পাবে, কিংবা তার আত্মহত্যার দায় আমার কাঁধে চলে আসবে। এটা ভুল এবং স্বার্থপর ধারণা। তাকে জিজ্ঞাসা করুন, সে কবে মারা যাবে, কিভাবে মারা যাবে, ঠিক করেছে কিনা। বিশ্বাস করুন, এগুলি খোলামেলা ভাবে আলোচনা করে আপনি তার আত্মহত্যার সম্ভাবনাকে কমিয়েই আনবেন।
আমাদের মধ্যে প্রচলিত ধারণা আছে বোকা, স্বার্থপর, এটেনশান সিকিং লোকেরা আত্মহত্যা করে। এ কথাগুলি শুনতে খুব সুন্দর লাগলেও আসলে সত্যি নয়। যারা আত্মহত্যা করে মনের কষ্ট তাদের অসহনীয়, অসহনীয় হয়ে যায়। হয়ত সে যে পরিস্থিতিতে ছিল (চাকরি হারানো, পরীক্ষায় ফেল, প্রেমে ব্যর্থতা, বাবা-মায়ের ঝগড়া, দুরুহ অসুখ কিংবা বিষন্নতা), আপনার কাছে হয়ত মনে হচ্ছে একটু ধৈর্য ধরলে এর থেকে উত্তরণ সম্ভব ছিল, কিন্তু ওই ব্যক্তির মানসিক কষ্ট তাকে ওইটুকু ধৈর্য ধরার সময়ও আর দিচ্ছিলনা। আগুনের মধ্যে আটকা পড়া মানুষের মত অন্ধের মত সে তখন কেবল একটু মুক্তির পথ খুঁজে। আপনার পর্যবেক্ষণ সত্য কিন্তু তার এই কষ্টটা মিথ্যা না, যা হয়ত অনুভব করা আপনার সাধ্যের বাইরে। তার মনেহয় কেউ তার কথা শুনছে না, কেউ তার কষ্ট বুঝছে না, কেউ তাকে গুরুত্ব দিচ্ছেনা, মৃত্যুই একমাত্র বিষয় যেটা সে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে তাই সে মৃত্যুকেই বেছে নেয়। এই সিদ্ধান্তটি মানুষটার জন্য সহজ নয়। কিন্তু সে তখন আর কোন উপায় খুঁজে পায়না। আত্মহত্যাকারী অসম্ভব, অসম্ভব ভীত একজন মানুষ। আপনি যেমন শরীরের কষ্ট ভয় পান, সে ভয় পায় তার নিজেরই মনের কষ্টকে। আগুনে আটকা পড়া পশুর মত এই কষ্ট থেকে মুক্তির জন্য সে যে কোন কিছুই করতে পারে। মরাটাই তখন তার কাছে বাঁচা মনে হয়। বাঁচার জন্য, মুক্তির জন্য তখন সে শরীরের কোন কষ্ট বা ক্ষতিরই পরোয়া করেনা।
তাই যারা মরে যেতে চায় তাদের নামের সাথে বিভিন্ন বিশেষণ দিয়ে, তাদেরকে হিউমিলিয়েট করে যদি মনে করেন তাদেরকে এ পথ থেকে ফেরাতে পারবেন, তবে আপনাকে আমার কিছুই বলার নেই। আমার পরিচিত একজন বন্ধু চতুর্থবারের চেষ্টায় সফলভাবে আত্মহত্যা করে। ৪বারই তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল। আমি ভাবি, প্রথম ৩বারে কোনো একজন ডাক্তার যদি তাকে নির্বোধ সুইসাইডাল হিসাবে জাজ না করে যদি একটু তাকে বলতো, তোমার কষ্টটা সত্য, কিন্তু এর থেকেও মুক্তির উপায় আছে, জীবন এতো সহজে শেষ হয়ে যায়না, তাহলে হয়ত সে বেঁচে থাকত। হয়ত।
ওয়াইফাই ক্যানসার
মন্তব্য
আপনার লেখাটি পড়ে একধরনের বিষন্ন অনুভূতি হলো।আমি নিজেও একজন বিষন্ন মানুষ। কিন্তু আমি যখনই নিজের কষ্টের কথা ভাবতে থাকি তখন মনে হয় আমার চেয়ে আমার দেশের অনেক মানুষ অনেক কষ্টে আছে। যারা না খেয়ে থাকে। ৬ ফিট বাই ৬ ফিট এর একটি খুপরি ঘরে ছয় সাত জন একত্রে রাত কাটায়। তারাও মানুষ। তাদের ও আমার মত হাত, পা আছে। তাদের তুলনায় আমি অনেক ভালো আছি। অন্তত আমার সকাল এ উঠে কি খাব বা খেতে পাব কিনা এই ভেবে পাগল হবার মত অবস্থা হয় না।ভাবতে হয় না। মাথার উপর ছাদ না থাকার কষ্ট নিয়ে ঘুম ভাঙ্গে না না। অন্তত তাদের জন্য আমার এখনো অনেক কিছু করার এবং বলার আছে। আমাকে নিজের নিজেকে শেষ করে দেবার সময় হয়ত এখনো আসেনি।তাই আমি এখনো আত্মহত্যা করার মত চিন্তা করতে পারি না। আমার মনে হয় আত্মহত্যা করা মানে নিজের অক্ষমতা প্রকাশ করা। কিন্তু আমি যত টুকু জানি মানুষই একমাত্র সক্ষম শক্তিশালী প্রাণী যার প্রজ্ঞা ,বুদ্ধিমত্তা অতুলনীয়। জয় করার জন্যই মানুষের জন্ম। চেষ্টা করে হাল ছেড়ে না দেয়ায় মানুষের ধর্ম। এইজন্য আমার মনে হয়, মানুষের জীবন তা যে করেই হোক বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করাই মানুষের সর্ব প্রথম কাজ হওয়া উচিত। অন্তত ঐসব না খেতে পাওয়া মানুষের কাছে থেকে আমাদের এই একটা লেসন নিতে হয়। যে কোনো অবস্থাতেই শেষ চেষ্টা করতে হয় টিকে থাকার জন্য।তাছাড়া, এত কষ্ট করে যে আমাকে পৃথিবীতে এনেছে অন্তত সেই মায়ের প্রতি সম্মান দেখানোর জন্য হলেও আত্মহত্যার কথা ভাবা যায় না।
চমৎকার
..................................................................
#Banshibir.
আসলেই চমৎকার।
সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। আপনার চিন্তাধারা সত্যিই সুন্দর এবং হৃদয়স্পর্শী। ভাল লাগল আপনার চিন্তার সাথে পরিচিত হতে পেরে।
প্রথমেই ক্ষমাপ্রার্থী সচলায়নে নিরুৎসাহীত করা হইলেও আমি ইংরেজি অক্ষর ব্যবহার করতেসি। আমার বানান-ব্যাকরণ ভুলের জন্যও ক্ষমাপ্রার্থী। ভুল ধরায়া দিলে কৃতজ্ঞ থাকবো।
Depression-য়ে ভোগা অনেকেই genetically predisposed. আবার অনেকেই আছে যাদের intrapersonal and/ or interpersonal intelligence সঠিকভাবে developed হয় নাই ( অনেক কারণেই হইতে পারে। Genetic কারণেও হইতে পারে, পারিবারিক সম্পর্কের কারণে হইতে পারে, অন্যান্য social/ environmental factors-য়ের কারণেও হইতে পারে। ) যার ফলে তারা depression-য়ে ভোগে। সুতরাং, আর্থিক অবস্থা ভালো হইলেও একজন depression-য়ে পড়তে পারে।
আরেকজনের কি আছে, আর কি নাই, সেইগুলা দিয়ে সব সময় নিজের জীবনকে তুলনা করা যায় না। আপনি যদি রিকশা দিয়ে যাইতে যাইতে রাস্তার ফুটপাতে বসে থাকা এক বাচ্চাকে শুকনা এক টুকরা রুটি খাইতে দেখে ভাবেন, আপনি তার চেয়ে অনেক ভালো আছেন, আর তখন নিজেকে সুখী বোধ করেন, that's fine. কিন্তু আপনার সামনে যখন significant stress আসবে, আপনার যদি সেই stress-কে manage করার মত skill না থাকে, তাইলে আপনি বসে বসে, পলাশী বাজারের সামনের পথসংসারী ওই মহিলার চেয়ে আমি সুখী আছি, এই চিন্তা করে স্বাভাবিকভাবেই সুখবোধ করবেন না। That's not practical.
আপনার সমস্যা নিয়ে কাজ করবেন আপনি। সমস্যা থেকে বাইর হওয়ার জন্য আপনার হাতের কাছে যা আছে, সেইগুলা নিয়েই কাজ করতে হবে। ( তবে, of course, আপনি সব সময়ই মানুষের কাছ থেকে specific behaviour/ ways of dealing with problems শিখতে পারেন। )
আমার মনের কথাগুলি এত সুন্দর করে গুছিয়ে বলে দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।
লেখা পড়ে মতামত কি জানালে খুব খুশি হব
আত্মহত্যা করতে চায়, এমন কারো সাথে কথা বলার অভিজ্ঞতা নাই আমার। আত্মহত্যা করতে চাওয়া মানুষরা কি ভেবে আত্মহত্যা করতে পারে, সেইটা সম্পর্কেও আমার জ্ঞান প্রায় একেবারেই শূণ্য।
"তাকে জিজ্ঞাসা করুন, সে কবে মারা যাবে, কিভাবে মারা যাবে, ঠিক করেছে কিনা।"
আমার মনে হয়, একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হইতে পারে, "আপনি কেন আত্মহত্যা করতে চান? আত্মহত্যা না করলে কি সমস্যা হবে, আর করলে কি সমস্যা হবে না?"
আমার মনে হয়, আত্মহত্যা করতে চাওয়া সবার না হলেও অন্তত কারো কারো ধারণা, তার জীবনে সে যা চায়, তা পাওয়ার আর সম্ভাবনা নাই। আর সম্ভাবনা নাই কেন, তার কারণ সেই মানুষটার জানার কথা। তার চাওয়াগুলা যদি reasonable হয়ে থাকে, সেইগুলা পাওয়ার জন্য চেষ্টা করতে বলেন।
তাকে একটা কথা বলতে পারেন। তার জীবনের সবচেয়ে আনন্দের/ সুখের সময়গুলার কথা মনে করতে বলতে পারেন বলেন। সেই সময়গুলার কথা মনে করতে বলেন, যে সময়গুলাতে he felt that he's happy, and he felt that's what he needs in life. The moments in which he felt good about himself, his life. বলেন, it may be difficult, but he can again get the things that once made him happy. বলেন, এক রাতে কিসুই বদলায়া যায় না। ( তার জীবন বদলাইতে কতো সময় লাগবে, তা depend করে তার জন্য কতোটুকু change দরকার, আর তার সমস্যার psychological root কতো গভীর। ) ৫ বছর লাগতে পারে, ১০ বছর লাগতে পারে। কিন্তু change is possible. বলেন, মরে গেলে তার দুঃখগুলা আর থাকবে না। কিন্তু একটা মরা মানুষ happiness-ও feel করতে পারে না। এই জীবনে যে মূহুর্তগুলাতে সে happiness feel করসে, সেই রকম কিসুই সে মরে যাওয়ার পরে আর পাবে না। বলেন, if you're dead, you're dead. You're just some disorganized atoms in the universe. There is no life after that. ( সমস্যা হইলো যারা ভাবে মৃত্যুর পরের "জীবনে" আর তাদের এই জীবনের দুঃখ-কষ্ট থাকবে না, আর সেই "জীবনের" জন্য এই জীবন ছেড়ে দেয়, আপনি তাদের বিশ্বাস বদলাইতে পারবেন না। কিসুই করার নাই এইখানে। You can't help a person with reasons who is not in touch with rationality. )
তবে আমি একটা ব্যাপার মনে করি। আত্মহত্যা নিয়ে চিন্তার ( "আত্মহত্যা করার plan" বুঝাচ্ছি না ) দরকার আছে। Unless you know what you will miss if you die, you can't know the value of your life. আপনি বলতে পারেন, আত্মহত্যা নিয়ে ভাবার দরকার কি, শুধু মৃত্যু নিয়ে ভাবলেই তো হয়। না, হয় না। আপনি কিভাবে মরতেসেন, সেইটা নিয়ে ভাবা important. আপনি যদি ভাবেন, আপনি বয়স হইলে বা ক্যান্সারে বা রোড accident-য়ে মারা যাবেন, you wouldn't feel responsible for your death, and that's why you wouldn't feel the value of your life. যখন আপনি ভাববেন, আমি যদি আমার জীবন শেষ করে দেই, তাহলে আমি music শুনে যে আনন্দটা পাইসি, বা বৃষ্টির শব্দ শুনে যে ঘুমের আরাম পাইসি, সেই দিন আহারের দই ফুচকা খেয়ে যে মজাটা পাইসি, বা প্রিয় কোন মানুষের সাথে ( মা, বোন, বন্ধু ) কথা বলে/ তাদের হাতের স্পর্শ পেয়ে যে স্বস্তিবোধটা করসি, বা কৃষিকাজের প্রথম আবিষ্কারক হচ্ছে পিঁপড়া ( আমাজনের পাতাকাটা পিঁপড়ারা পাতা কেটে সেইগুলা ছত্রাকের গোঁড়ায় দিয়ে ছত্রাক চাষ করে, আর তাদের বাসা totally air-conditioned ) এইটা জেনে যে অবাকটা হইসি, বা হাঁসের বাচ্চাদের মায়ের পিছনে পিছনে যাওয়া দেখে যে অবাকটা হইসি, বা একটা রঙধনু দেখে ''কি সুন্দর'' ভাবতে পারসি, বিশাল প্রশান্ত মহাসাগরের sedative নীলের মধ্যে হাম্পব্যাক whale-য়ের বাচ্চার সাথে সাঁতার কেটে যাওয়া দেখে যে অবাকটা হইসি ( Nature's great events-য়ের 6th episode-টার কথা বলতেসি ), সেইগুলা আমি কোনদিনই মরে গেলে পাবো না; তাহলে you will want to be alive. You'll choose to be alive. And you'll know how amazing our "property" of just having a life is.
ও আচ্ছা, "কান পেতে রই", একটা মানসিক সহায়তা হেল্প লাইন, অনেকের জন্য helpful হইতে পারে। suicide prevention এই সংগঠনের অন্যতম উদ্দেশ্য।
www.shuni.org
আমার ওই ফ্রেইন্ডটা বিদেশে থাকে আর ও এখন হাসপাতালে ভর্তি। তবে আপনার লেখাটা থেকে আমি অনেককিছু শিখতে পারলাম, আমি ওর সাথে এভাবে কথা বলার চেষ্টা করব। তবে কিছু কথা ওকে বললে আমার নিজেকে হিপোক্রিট মনে হবে। আপনার কিছু কথা পড়ে খারাপ লাগছে।
মিউজিক আমি কিছু সময়ের জন্য শুনতে পছন্দ করলেও বেশিরভাগ সময় আমি নীরবতা পছন্দ করি, ফ্যান এসি ফ্রিজের শব্দও আমার অসহ্য লাগে। আমি সবসময় ঘুমাতে যাই এই চিন্তা করে ঘুমের মধ্যে মরে গেলে ভাল হয়। প্রতিবার ঘুম ভেঙে গেলে আমার দিনের মধ্যে সবচাইতে বেশি খারাপ লাগে। মনেহয় আবার কেন উঠতে হল, ঘুমের মধ্যে কেন মরে গেলামনা। যেকোন মানুষ, সে যে-ই হোক না কেন, শরীর স্পর্শের মত কাছে আসলে খুবই অকওয়ার্ড লাগে। ডকুমেন্টারি দেখা শুরুই করতে পারিনা, যেই বিষয়ই হোক না কেন। যদিও পিঁপড়ার কথাটা খুব ভাল লেগেছে। আসলে প্রকৃতি আমাকে সবচাইতে বেশি শান্ত করে। খটখটা রাস্তার মধ্যে গাছের জন্য আমার খারাপ লাগে। ছোটবেলাতে আমি গাছের সাথে কথা বলতাম। কুকুরবিড়াল খরগোশ আমি সবার সাথে কথা বলি। বিশেষ করে কুকুরের সাথে। কুকুরের সাথে সময় কাটাতে মানুষের চাইতে বেশি কমফর্টেবল লাগে। আমি তাদেরকে বুঝতে পারি এবং তাদের সাথে রিলেট করতে পারি। আমি ইউটিউবে কুকুরের ভিডিও দেখতে পছন্দ করি। সম্ভবত ইট মেকস মি হ্যাপি। এখন আর আমার খারাপ লাগছেনা। হয়ত আমার ওই ফ্রেইন্ডেরও এমন কিছু থাকবে যা তাকে আনন্দ দেয়। আমি তার সাথে এটা নিয়ে কথা বলতে চেষ্টা করব।
আপনাকে ধন্যবাদ আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য। এটা আমাকে অনেক কিছু ভাবিয়েছে। ভাল থাকবেন।
Sorry, reply দিতে দেরী হয়ে গেল। বিশাল হ্যাঁপার মধ্যে ছিলাম।
আমি কিসু কথা বুঝাইতে পারি নাই। প্রথম কথা হচ্ছে, আমার আগের মন্তব্যের কথাগুলা শুধু আপনার বন্ধুর জন্য না, আপনার জন্যও প্রযোজ্য। যদিও আপনি আত্মহত্যা করতে চান, এমন কথা বলেন নাই, কিন্তু আপনি বলসেন প্রতিবার ঘুম ভাঙ্গার পর আপনি ভাবেন, কেন ঘুমের মধ্যে মরে গেলেন না আপনি। আপনি আত্মহত্যার কোন পরিকল্পনা করসেন বলে লিখেন নাই, কিন্তু মৃত্যুকে কামনা করাটাও, by definition, not helpful for life.
আরেকটা ব্যাপার বুঝাইতে পারি নাই। ইয়ে মানে, music, documentary, প্রিয় মানুষের সংস্পর্শ, দই ফুচকা, রঙধনু, হাঁসের বাচ্চা এইগুলা সবই আসলে উদাহারণ ছিল। ( যেমন, ব্যক্তিগতভাবে আমার কাছে রঙধনু তেমন পছন্দের কিসু না। ) আপনার ভালো লাগে কুকুর, সেইটাই আসল কথা। আপনার মানুষের স্পর্শ ভালো লাগে না, কিন্তু অবশ্যই আপনার মানুষের সাথে কথা বলতে ভালো লাগে, অন্ততঃ আপনি যে ব্যাপারগুলা নিয়ে কথা বলতে চান, যদি মানুষগুলা বুঝতে পারে ( তাই আপনি সচলায়তনে লিখতেসেন। ) Nature আপনার কাছে ভালো লেগে থাকে যদি, তাহলেও আপনি Nature's great events documentary-টা দেখতে পারেন ( রাইফেল স্কয়ারে পাবেন। এক ডিভিডিতে ছয়টা পর্ব। অথবা torrents থেকেও নামাইতে পারেন। ) এইটার প্রথম episode দেখলে আপনার মাথা খারাপ হয়ে যাবে ( আক্ষরিক অর্থে না। ) কথা হচ্ছে, আপনারও ভালো লাগার অনেক কিসু আছে। আপনি তো মৃত্যুর পরে কোন জীবন আছে বলে বিশ্বাস করেন না ( আপনি নাস্তিক, তাই ধরে নিচ্ছি ), আপনার জন্য এই কথাটা accept করতে পারাটা আরো অনেক বেশী সহজ।
ভেবে দেখেন, আপনি ঘুমের মধ্যে মরে গেলে কোনদিনই আর কুকুর দেখতে পারবেন না। আপনার যে কষ্টগুলার জন্য ঘুমমৃত্যু আশা করতেসেন সেই কষ্টগুলা থাকবে না; ঠিক আছে। কিন্তু ভেবে দেখেন, এই জীবনে কষ্ট কমানোর অনেক উপায় আছে। কিন্তু মৃত মানুষকে আপনি কোন উপায়েই কুকুর দেখার আনন্দ অনুভব করাইতে পারবেন না। আপনার যদি পোষা কুকুর থাকে, তাহলে তার কথা ভাবেন। না থাকলে একটা কুকুর পালেন। আপনি থাকলে একটা কুকুরের জীবন আরো অনেক ভালো হবে। না থাকলে হবে না।
হ্যাঁ, আপনি ঠিক বলসেন। আপনার বন্ধুরও ভালো লাগা কিসু আছে। তাকে জিগেস করেন। গভীর বিষণ্ণতায় থাকলে সে হয়তো প্রথমে কিসু বলতে পারবে না। তাকে জিগেস করেন, তার প্রিয় খাবার কি। আবারও, গভীর বিষণ্ণতায় থাকলে সে হয়তো নিজের সম্পর্কেও বেশী কিসু বলতে পারবে না। আপনি আপনার প্রিয় খাবারগুলা সম্পর্কে বলেন, আর তাকে জিগেস করেন, "আপনার এইটা খাইতে কেমন লাগে?" খাবার এইখানে একটা উদাহারণ। আপনি nature, পোষা প্রাণী, movie, অনেক কিসু নিয়েই জিগেস করতে পারেন। এমনকি আপনার বন্ধুর প্রিয় জিনিষ যদি হয় music বা documentary বা এমন কিছু যা আপনি পছন্দ করেন না, বা আপনার আইডিয়াই নাই ( ধরেন, তার প্রিয় খেলা রাগবি ) তাকে সেইগুলার ব্যাপারেও জিগেস করেন। তার কাছে সেই ব্যাপারে আরো জানতে চান। তার কাছ থেকে recommendation চান, এবং সে যদি তার প্রিয় কিসু recommend করে, তাকে ধন্যবাদ জানান।
আমি আপনার একটা ব্যাপার প্রশংসা করি। আপনি আপনার বন্ধুকে সাপোর্ট দিচ্ছেন, এইটা খুব ভালো একটা কাজ করতেসেন। আপনি তার জন্য কোন আবেগবোধ করতেসেন না, but then you're also doing the right thing. ( আপনি যা করতেসেন, সেইটা আপনার জন্য right, কারণ being social increases the chances of your survival. ) After all, "It's not who we are underneath, but what we do define who we are." আবেগ আমাদেরকে খালি একটা সাহায্যই করে, to make decision about taking/ not taking an action in a short time ( without going through reasoning. ) আপনি তো reasoning করতেসেন। So, you have got what it requires to make the right decision. Of course, আমাদের emotion-ও দরকার আছে, since জীবনের বেশীর ভাগ সময়ই আমাদেরকে quick decision নিতে হয়। কথা বলার সময়, যেমন। কিন্তু reasoning-য়ের উপর থাকার অভ্যাস করলে এক সময় দেখবেন, reasoning itself can work as emotion for you. In other words, your emotions will build up on your reasoning.
আরেকটা ব্যাপার। আমার মনে হয়, আপনি আবেগ বোধ করতেসেন না, তার একটা সম্ভাব্য কারণ হইতে পারে, আপনার মধ্যে জীবন সম্পর্কে একটা strong negative idea কাজ করতেসে। হয়তো আপনি ধরে রাখসেন, কোন একটা কারণে ( কি কারণে, সেইটা figure out করা আপনার কাজ ) আপনার জীবন যা চাইসেন/ যা হইতে চাইসেন, তা কোনদিনই পাবেন/ পারবেন না। তাই বেঁচে থেকে কি লাভ? অন্য কথায়, আপনি ভাবতেসেন, বেঁচে থাকার মধ্যে যা যা করতে হয়, সবই অর্থহীন, কারণ এইগুলা করেও যা চাইসিলেন জীবনে, তা পাবেন না। And that idea acts as a strong negative impulse to anything you do, in other words, your having a life.
যদি আমার উপরোক্ত hypothesis ঠিক হয়ে থাকে ( আপনার যদি এই মূহুর্তে মনে হয়, hypothesis-টা সত্যি, it doesn't mean, এইটা আসলেই সত্যি। পক্ষে-বিপক্ষে দুই দিকেই চিন্তা করে সিদ্ধান্তে আসেন। ), তাহলে "আমি বাঁচবো" এইটাকে আপনি আপনার কালেমা বানায়া নেন। আপনি ঠিক করেন, আপনি কমপক্ষে আরো ১০ বছর বাঁচবেন। যেমনেই হোক, বাঁচবেন। এই ১০ বছরে আপনি আপনার যে সমস্যাগুলার জন্য বাঁচতে চান না, সেই সমস্যাগুলা থেকে বাইর হবেন। দুনিয়ার অমুক-তমুক আপনার সাথে থাকুক বা না থাকুক, আপনি বাঁচবেন। নিজের জন্য বাঁচবেন। বাঁচার জন্য বাঁচবেন। কিন্তু সবার আগে, আপনি কালেমা বানান যে, এই ১০ বছর আপনাকে বাঁচতেই হবে। যেমনেই হোক, বাঁচার জন্য একটা না একটা পথ বাইর করতেই হবে। ( ১০ বছর কিন্তু এমন কিসু না। ভেবে দেখেন, পাঁচ বছর আগের ঘটনাগুলার কথা ভাবলে মনে হবে, এইগুলা গতকালকে ঘটসে। ) ১০ বছর পরে মৃত্যু নিয়ে ভাবার সুযোগ তো আপনার চলে যাচ্ছে না।
আগের মন্তব্যে কিসু miss করে ফেলা কথা লিখসিলাম আরেকটা মন্তব্যে ( যেটা আসে নাই ):
আপনার এই ১০ বছরের কাজ হবে, আপনার জীবনটাকে যেমন দেখতে চাইসিলেন ( provided, "আমি একদিন Alexandar the great-য়ের বিশ্বদখলের রেকর্ড ভাঙবো" জাতীয় অবাস্তব, unnecessary স্বপ্ন আপনি দেখেন নাই ) সেই রকম করার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করা। একটা মানুষ, সে যেই হোক না কেন, তার জীবনকে যেমন দেখতে চায়, exactly সেই রকম জীবন কোনদিনই পায় না। সুতরাং, আপনি তার পরে আরো ১০ বছর দেখবেন, আপনি প্রস্তুতি নেয়া সত্ত্বেও কিসু কিসু জিনিষ যেমন চাইসিলেন, exactly তেমন পান নাই। আপনার জীবনে তখন আরো কিসু change আনার চেষ্টা করতে হবে ( আপনি নিজেই করবেন, কারণ তার আগের ১০ বছরে আপনি change আনার চেষ্টা করে দেখসেন যে, it really works in almost all cases. ) এবং দেখবেন, যে জীবনটা আপনি চাইসিলেন, সেইটা থেকে আপনার বাস্তব জীবনের তফাতটা ক্রমশঃ কমে যাইতেসে, যদিও কোনদিনই আপনার বাস্তব জীবন আর চাওয়া জীবনের মধ্যে তফাত শূণ্য হবে না। There will always be moments in which you would think that some things might have been better. তাছাড়া, মানুষের সব স্বপ্ন ( = চাওয়া ) কোনদিনই সত্যি হয় না, কারণ মানুষের একটা স্বপ্ন সত্যি হইলে সে আরেকটা বানায়। কারণ, সব চাওয়া যদি সত্যি হয়ে যায়, তাইলে মানুষ বাঁচবেটা কি পাওয়ার জন্য?
১০ বছরের প্রস্তুতি আর ১০ বছরের trials of life-এর পরে তো মৃত্যু নিয়ে ভাবার সুযোগ আপনার থাকতেসেই।
আপনার লেখাটা পড়ে অনেক ভাল লাগল। আমি পরলোকে বিশ্বাস করি না এবং আমি বিশ্বাস করি, জীবন সুন্দর হতে পারে। তাই আমি কখনো বেশি সুইসাইডাল ছিলাম না। মাঝে মাঝে বেশি কষ্ট হলে ভেবেছি আজকে রাতটা ঘুমিয়ে কালকে সকালে দেখব।
আমার বন্ধুকে আমি খাবারের ব্যপারে জিজ্ঞাসা করব কিন্তু আসলে আমার আগ্রহের বিষয় কম তাই আমার পক্ষে কনভারসেশান চালানো মুশকিল।
আমার উপায় থাকলে আমি কুকুর পালতাম কিন্তু সম্ভব না।
১০ বছর বাঁচার ব্যপারে আপনি কি যুক্তি দিলেন আসলে আমি বুঝতে পারিনি। I just want to stop and don’t go anywhere, don’t do anything. I feel like an undead person from a different universe stuck among the adults who keep doing stupid things totally forgetting they’re also going to die and they all keep pushing me so hard. আমার পক্ষে যে কোন পড়াশুনা, ক্যারিয়ার, এমনকি কনভারসেশানে নিজেকে যুক্ত করা অসম্ভব কষ্টকর। আমি কোন কিছুতেই আগ্রহ ধরে রাখতে পারিনা। ২০ বছরের মত সময় আমি অভিভূতের মত নিজেকে টেনে এনেছি। কিন্তু এখন আর আমার শক্তি নেই। এ অবস্থায় আরো ১০ বছর অনেক দীর্ঘ সময়। আসলে জীবন হয়ত অনেকের জন্য সুন্দর হতে পারে। কিন্তু এই সমাজ আমাদের মত মানুষদের জন্য নয়। অবশ্য যারা অন্যরকম, সমাজ কখনোই তাদের জন্য ছিলনা। মাইনরিটিরা অনেক রকম কোপিং মেকানিজম এডপ্ট করে। আমি নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু এখন পর্যন্ত যেইটুকু আনন্দ/ শান্তি পাওয়া গেছে, তার জন্য ১০ বছর বেঁচে থাকার মানে হয়না।
আপনি আমাকে বলবেন হিপোক্রিট, কেননা আমি আমার বন্ধুকে অন্য কথা বলছি। আসলে আমার মতে আত্মহত্যার প্রসেসটা খুবই ট্রমাটাইজিং। আমি চাইনা কাউকে এই প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যেতে হোক। আমি আসলে জানিনা কোনটা বেশি খারাপ।
আপনি একটা ব্যাপারে ভুলভাবে চিন্তা করতেসেন।
আপনি ২০ বছরে কতোটুকু শান্তি পাইসেন, সেই হিসাব আমি আপনাকে করতে বলি নাই। আপনি যদি ২০ বছরে ২০ সেকেণ্ডের শান্তিও পেয়ে থাকেন, আপনি সেই শান্তির সময়টার কথা মনে করেন। কথা হচ্ছে, আপনিও জানেন, জীবনে শান্তি পাওয়া সম্ভব। আর শান্তি পাওয়া যদি সম্ভব হয়ে থাকে, শান্তিকে দীর্ঘায়িত করাও সম্ভব।
ধন্যবাদ, আমাকে বলার জন্য কোন ব্যাপারটা আমি আপনাকে বুঝাইতে পারি নাই। আমি আরেকটু simple করে বুঝানোর চেষ্টা করি। ( দুইটা ১০ বছরের হিসাব বাদ দিলাম, খুশী? )
আমার থিওরিটা ছিল এমন। আপনার বয়স ধরা যাক, ২০। তো এই বিশ বছরে আপনি শান্তি পাইসেন ধরা যাক মাত্র ২০ দিন। তার মানে, এই ২০ দিন বাদে বাকি ২০ বছর আপনার কোন অসুবিধা/ সমস্যা ছিল, যে কারণে আপনি শান্তি পান নাই। ( সমস্যা না থাকা সত্ত্বেও শান্তি না পাওয়াটা একটা illogical কথা। By definition, যে জিনিষটা অশান্তি করে, তাকে আমরা সমস্যা বলি। )
এখন ২০ বছরের সমস্যা তো আর এক রাতে ঠিক হয়ে যাবে না। সমস্যাগুলার সাথে cope-up করা উপায়গুলা শিখার জন্য সময় লাগে। অভ্যাস করা লাগে, অভ্যাসের জন্য সময় লাগে। তো আপনি নিজেকে সেই সময়টা দেন।
আপনি নিজেকে বলেন, আমি সামনের ৫-১০ বছর ( আপনার কাছে ১০ বছর বেশী মনে হইতেসে বলে ৫-১০ বানাইলাম। কিন্তু এর কমে হবে না, ভাই। একদাম ৫-১০। ) সুখী হইতে চাই না। আমি সামনের ৫-১০ বছর কিভাবে সুখী হইতে হয়, সেইটা শিখতে চাই। ( আর শিখে ফেলার পরে বাকি জীবনটা সুখী থাকতে চাই। ) আমি জানি, আমার জীবনে অনেক সমস্যা আছে। সেই সমস্যাগুলার সমাধান করা সম্ভব। আমার জীবনের সমস্যাগুলা কি ( বহু প্রকার সমস্যা থাকতে পারে। সমস্যাগুলা হয়তো আপনার আশেপাশের মানুষের ব্যবহারে। আবার হইতে পারে, ওই ধরণের সমস্যা হইলে কিভাবে সেইটাকে manage করতে হয়, সেইটা আপনাকে কেউ শেখায় নাই। ফলে, আপনি ভুলভাবে manage করতেসেন। সেই ভুলের জন্য আরো সমস্যা হইতেসে। আবার হইতে পারে, একটা জিনিষ আপনি চান, কিন্তু কিভাবে পাইতে হয়, সেইটা আপনাকে কেউ শেখায় নাই। ফলে দেখা গেলো, আপনি জিনিষটা পাওয়ার জন্য ভুলভাবে চেষ্টা করতেসেন, সেই জন্য আপনার জীবনে সমস্যা হইতেসে। ) তা figure out করার জন্য আমার সময় লাগবে। সেই সমস্যাগুলার সমাধান বাইর করার জন্যও আমার সময় লাগবে। আমি নিজেকে সেই সময়টা দিবো। আমি সামনের ৫-১০ বছর আমার জীবনের সমস্যাগুলা ঠিক করবো। সুখী হওয়া যাচ্ছিল না যে সমস্যাগুলার জন্য, সেই সমস্যাগুলা ঠিক হয়ে গেলেই তো আপনি সুখী, তাই না?
তো আপনার এই ৫-১০ বছরের সুখী হওয়া উপায় বের করার চেষ্টা করতে করতেই দেখবেন, আপনি সুখী হইতেসেন ( বিশ্বাস করেন, জীবনে মানুষ তখনই সুখী থাকে, যখন সে আসলে কিসু করার মধ্যে থাকে। আপনি যদি সুখী হওয়ার চেষ্টার মধ্যেই থাকেন, that is going to make you happy, I bet. )
এখন কথা হইলো, আপনাকে আগে প্রতিজ্ঞা করতে হবে যে, আমি এই ৫-১০ বছর সুখী হওয়ার চেষ্টা করবেন। এই চেষ্টা আমাকে করতেই হবে। আর যেহেতু আপনার মৃত্যু কামনার চিন্তা এই চেষ্টাতে গ্যাঞ্জাম করতে পারে, তাই আপনাকে আরেকটা প্রতিজ্ঞা করতে হবে। আপনি নিজের কাছে প্রতিজ্ঞা করেন যে, এই ৫-১০ বছর আমি বাঁচবোই। আমি চেষ্টা করেই ছাড়বো যেহেতু, সুতরাং না বেঁচে তো আর সেইটা করা সম্ভব না। দুনিয়ার যদু-মধু-রাম-শ্যাম আমার সাথে থাকুক বা না থাকুক, আমি সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করবোই। এক উপায়ে সমাধান না হইলে আরেক উপায় try করবো। কিন্তু আমার চেষ্টা করতেই হবে।
[ তবে আরেকটা কথা বলে রাখি। একটু আগে যে লিখলাম, "সুখী কিভাবে হইতে হয়, সেইটা শিখতে চাই; আর শিখে ফেলার পরে বাকি জীবনটা সুখী থাকতে চাই'', এই কথাটার মধ্যে একটা catch আছে। সুখী হওয়ার কোন মন্ত্র নাই। সুখী হওয়ার জন্য কিসু করতে হয়। কিসু করার মধ্যে থাকতে হয়। সুখী হওয়ার চেষ্টা করার সময় আপনি অনেক কিসু করবেন, and that will make you happy. But once you know the ways that make you happy, there's a chance that you'll feel relaxed, and stop doing things ( laziness is every living thing's first choice ) thinking that "I will resume doing the things that make me happy if and when I don't feel happy". That will be a mistake. এইটা অনেকটা "অর্জনের চেয়ে রক্ষা করা কঠিন"-য়ের মতো কথা। আপনি সুখী হইতে চাওয়ার উপায়টা ( = কিসু করার উপরে থাকা ) জানার পর যদি সুখী হওয়ার কাজগুলা না করেন ( = কিসু করার উপরে না থাকেন ), তখন আপনি আর সুখী থাকবেন না। ]
.................................
"I just want to stop and don’t go anywhere, don't do anything."
খেয়াল করে দেখেন, আপনার এই কথা দিয়ে বুঝা যাচ্ছে যে, আপনার brain আপনাকে negative impulse দিয়ে ভরায়া ফেলসে। আপনার stop করার জন্যও কারণ আছে, don't go anywhere-য়ের জন্যও কারণ আছে, don't do anything-য়ের জন্যও কারণ আছে ( brain randomly কোন decision নেয় না। দুনিয়াতে সব কিসুরই একটা কারণ আছে। ) আপনি একটু চিন্তা করে বাইর করেন, আপনার brain কোন কারণগুলার কথা ভেবে ( = কি সম্ভাব্য ঘটনার কথা চিন্তা করে ) এই সিদ্ধান্ত নিতেসে। তারপর আপনি logically/ factually/ rationally analyze করে + কারো সাথে discuss করে + real-life experiment করে দেখেন, আপনার brain যে সব সম্ভাব্য ঘটনার কথা চিন্তা করতেসে, সেইগুলা আসলেই সত্যি কিনা। সত্যি না হয়ে থাকলে তো আর সমস্যাই থাকলো না। সত্যি হয়ে থাকলে সেই সম্ভাব্য ঘটনাগুলাকে ( যেগুলা আপনার জন্য অসুবিধাজনক ) কিভাবে manage করা যায়, সেইটা ভাবেন।
.................................
"I feel like an undead person from a different universe stuck among the adults who keep doing stupid things"
Stupid things-য়ের উদাহারণ?
আপনার লেখাটি চমৎকার।
আমার ধারণা যারা আত্মহত্যার কথা ভাবছে তাদের জন্য বা তাদের আশেপাশের মানুষগুলোর সচেতনতার জন্য এই লেখাটি খুব কাজে দেবে।
-অসাধারণ।
আমারও চোখ খুলে দিলেন আপনি।
-এই বিষয়টি অনেকের কাজে দেবে, আমি নিশ্চিত।
ভালো থাকবেন ওয়াইফাই ক্যানসার।
আপনার নতুন জীবনের জন্য শুভকামনা।
************************
কামরুজ্জামান পলাশ
কে কখন আত্মহত্যাপ্রবন হয়ে উঠবে তা আমরা কেউই জানিনা। সবার একটু সচেতনতার জন্যই এই লেখা। আপনি পয়েন্টগুলি ধরতে পেরেছেন দেখে খুব ভাল লাগল। শুভকামনার জন্য অনেক ধন্যবাদ। আপনিও ভাল থাকবেন।
আত্মহত্যাপ্রবণ মানুষরে নিয়া বহুত ঘোল খাইছি জীবনে; কয়েকজনরে ঠেকানো গেছে দুয়েকজন গেছে এক্কেবারে। কিন্তু কাজটা বহুত কঠিন
০২
তবে আমার মনে হয় যারা নিজের অবস্থা এইভাবে বিশ্লেষণ করতে পারে তাদের বিষণ্ণতা কেটে যায় দ্রুত
কাজটা নিঃসন্দেহে অনেক কঠিন এবং এটাই একটা পয়েন্ট। আত্মহত্যাপ্রবণদেরকে ব্যাঙ্গবিদ্রুপ করা একটি অমানবিক ব্যপার, এতে তাদের হতাশা, কেউ তাদেরকে বুঝবেনা- সত্যিকারের সাহায্য করবেনা- এই মনোভাবই বাড়িয়ে দেওয়া হয়।
০২
হাহা, হাতে অনেক সময় যাদের তারা কতরকম ব্যাখ্যা বিশ্লেষণই না করতে পারে
ওয়াইফাই 'ক্যান্সার' হয়ে না থেকে 'ওয়াইফাই আনসার' হয়ে যান। কারণ এখন ব্রডব্যান্ড এর চেয়ে ওয়াইফাই এর কদর বেশি। আর আপনার পসিটিভ চিন্তাধারা বলে দিচ্ছে আপনি সকল সমস্যার উত্তর ভালো ভাবেই দিতে পারবেন। আপনার নতুন জীবন এর জন্য অনেক শুভকামনা।এই লেখাটার প্রথম মন্তব্য টা আমার ছিল। আপনার ভালোলেগেছে জেনে আমার ও ভালো লাগলো।
শিশির অশ্রু
ধন্যবাদ শিশির অশ্রু। আপনাকেও অনেক শুভকামনা। ভাল থাকবেন।
ওয়াইফাই ক্যানসার
নতুন মন্তব্য করুন