সচলের সাথে আমার পরিচয় অনেক দিনের। পাঠক হিসেবে অনেক দিন ধরেই পড়ে চলেছি সচলায়তন। তবে কিছু নিয়ে যে কখনও লেখা হবে তা ভাবিনী। আসলে লিখতে গেলেই হারিয়ে ফেলি লেখার বিষয়। তাই লিখবো করেও লেখা হয়না কিছুই। তবে বেশ কিছুদিন ধরেই ভাবছিলাম আমার দৈনন্দিন করে চলা রান্নার কোন বিষয় যদি লেখা যায় তবে মন্দ হয় না। রান্নার কিছু লেখা কালে ভদ্রে সচলে পড়েছি উচ্ছলা আপুর মাধ্যমে। খুব দারুণ সব ছবি আর বর্ণনায় মুগ্ধ হয়ে পড়ি তখন। আসলে তাকে দেখেই রান্না নিয়ে কিছু লেখার আগ্রহ। আর আজকের আমার প্রথম লেখা শুরু করছি আঁচার নিয়ে।
আচারের নাম শুনলেই জিহ্বায় পানি চলে আসে তাই না? আঁচার বানানোর উপকরণ আসলে ভিন্ন। আম, তেঁতুল, আমড়া এরকম অনেক দেশীয় ফল দিয়ে আঁচার বানানোর একটা রীতি আমাদের দেশে খুবই প্রচলিত। তবে ঋতু ভেদে আঁচার বানানোর উপকরণে কিছুটা ভিন্নতা আসে।
যেহেতু এখন শীতকাল তাই চাইলেই আমের আঁচার বানানো খুব একটা সহজ হবে না। তবে জলপাই এই সময় বেশ সহজলভ্য। তাই আজ জলপাই দিয়ে আঁচার বানানোর একটা প্রচেষ্টা জারী রাখবো। জলপাই দিয়ে মূলত দুই রকমের আঁচার বানানো যায়। মিষ্টি এবং টক। আমি শুরুতে টক আঁচার তারপর মিষ্টি জলপাই আঁচার বানানোর বর্ণনা দিতে চেষ্টা করবো। আমি জানি এখানে অনেকেই থাকবেন যারা এই আঁচার হরহামেশাই বানিয়ে ঘরোয়া খাবারে পরিবেশন করছেন। তাই আমার প্রস্তুত প্রণালিতে কোন সংযোজন অথবা বিয়োজন থাকলে তা ধরিয়ে দিলে বাধিত হব।
যে কোন রেসিপির শুরুতেই থাকে উপকরণ আর প্রস্তুত প্রণালী আর এক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হবে না।
টক জলপাই আঁচার তৈরির উপকরণঃ
জলপাই- ১ কেজি
সরিষার তেল- ১ কেজি
পাঁচফোড়ন গুঁড়া- ১ টেবিল চামচ
শুকনা মরিচ গুঁড়া- ২ টেবিল চামচ
আস্ত শুকনা মরিচ- ২/৩ টি( তেল ছাড়া একটু ভেজে হাত দিয়ে গুঁড়া করে নিতে হবে)
কালি জিরা- ১ চা চামচ
চিনি- ১ টেবিল চামচ
রসুন বাটা- ২ টেবিল চামচ
আদা বাটা- ২ টেবিল চামচ
জিরা বাটা- ২ টেবিল চামচ
সরিষা বাটা-৪ টেবিল চামচ
হলুদ গুঁড়া- ১ চা চামচ
সিরকা- ২৫০ মিঃ লি:
লবণ- পরিমাণ মত
প্রস্তুত প্রনালিঃ
টক জলপাই আঁচার বানানোর প্রথম শর্ত হল আপনাকে বেশ পোক্ত বা বোতি জলপাইগুলোকেই আঁচার বানানোর জন্য বেছে নিতে হবে। এই রকম জলপাই সংগ্রহে রাখার পর আঁচার বানানোর প্রস্তুতি পর্বের একটা সূচনা করা যায়।
শুরুতেই জলপাই গুলোকে খুব ভালো ভাবে ধুয়ে নিয়ে কড়াইতে করে চুলায় বসিয়ে দিতে হবে পানি সহ। পানি ফুটে গেলে কড়াই চুলা থেকে নামিয়ে জলপাই আলাদা করতে হবে।
এবার চুলায় কড়াই দিয়ে সবটুকু তেল ঢেলে দিয়ে তার মধ্যে উপরে বর্ণিত পরিমাণ অনুযায়ী রসুন,সরিষা, আদা ও জিরা বাটা দিয়ে একটু কসিয়ে নিতে হবে। এরপর কসিয়ে নেয়া মসলার উপর পানি দিয়ে হলুদ গুঁড়া, মরিচ গুঁড়া ও লবণ দিয়ে আবার একটু কসিয়ে নিতে হবে। এবার সিদ্ধ হওয়া জলপাইগুলো মসলার মাঝে হারিয়ে যাবার পালা। কাজেই জলপাইদের এবার ঢেলে দিন এতক্ষণ ধরে কসিয়ে রাখা মসলার কড়াইয়ের ভেতর।সেই সাথে মিশিয়ে দিতে হবে সিরকার জল। তবে কড়াই বা প্যানের ঢাকনা দিয়ে ভালো করে কড়াই ঢেকে রাখার কথা ভুললে চলবে না।এবার কিছু সময় পরপর ঢাকনি তুলে জলপাইদের নেড়ে দিয়ে আধা ভাঙ্গা করে নিতে হবে। এরপর পানি একেবারে শুকিয়ে তেল উপরে উঠে এলে পাঁচফোড়নের গুঁড়া , ভাজা শুকনা মরিচের গুঁড়া ও কালি জিরা দিয়ে ভালোভাবে নেড়ে লবণ দেখে নামিয়ে ফেলতে হবে। ব্যাস তৈরি হয়ে গেল টক জলপাই এর আঁচার।
মিষ্টি জলপাই আঁচার তৈরির উপকরণ:
জলপাই- ১ কেজি
চিনি- ১ কেজি( পছন্দ অনুযায়ী)
পাঁচফোড়ন গুঁড়া- ২ টেবিল চামচ
আস্ত শুকনা মরিচ গুঁড়া( ভেজে নিতে হবে)- ১ চা চামচ
রসুন কুচি-১ টেবিল চামচ
সিরকা- পরিমাণ মত
সয়াবিন/ সরিষার তেল- ২ টেবিল চামচ
লবণ- পরিমাণ মত
প্রস্তুত প্রণালী:
এক্ষেত্রেও শুরুতেই জলপাই গুলোকে খুব ভালো ভাবে পানি দিয়ে ধুয়ে নিয়ে কড়াইয়ে অথবা প্যানে করে চুলায় বসিয়ে দিতে হবে।পানিতে জ্বাল দেয়ার পর পানি ফুটে গেলে কড়াই বা প্যান চুলা থেকে নামিয়ে পানি ঝরিয়ে জলপাই গুলো আলাদা করে ফেলতে হবে। এরপর প্যান অথবা কড়াইয়ের ভেতরে সব জলপাই,চিনি,সিরকা ও ১ টেবিল চামচ তেল এবং পরিমাণ মত লবণ দিয়ে প্যানের ঢাকনা ঢেকে চুলায় বসিয়ে দিয়ে জলপাইগুলো ভেঙ্গে দিতে হবে। এভাবে কিছুক্ষণ জ্বাল দেয়ার পর পানি সম্পূর্ণ শুকিয়ে আঠালো হয়ে আসলে তার ওপর পাঁচফোড়নের গুঁড়া , ভাজা কালিজিরা ও শুকনা মরিচ ( ভাজা গুঁড়া) ছিটিয়ে দিতে হবে। এরপর কাঠের চামচ দিয়ে একটু নেড়ে জ্বাল বন্ধ করে প্যান নামিয়ে ফেলতে হবে। অন্য একটি ফ্রাই প্যানে ১ টেবিল চামচ তেল নিয়ে রসুন কুচি দিয়ে নাড়তে হবে। হালকা বাদামী হয়ে এলে নামাতে হবে এবং এটা আঁচারের মধ্যে ঢেলে দিতে হবে। এবার একটু চেখে দেখতে হবে মিষ্টি,লবণ হয়েছে কিনা। আর সব কিছু ঠিক থাকলেই তৈরি হয়ে গেল মিষ্টি জলপাই আঁচার।
কি খুব জটিল হয়ে গেল নাকি আঁচারের এই রেসিপি। আসলে যারা রান্না ঘরে খুব একটা যাতায়াত করে না তাদের জন্য একটু জটিল হলেও আমার মত যাদের রান্না ঘরের সাথে একটা গভীর সম্পর্ক রয়েছে তাদের কাছে আশা করি এই রেসিপি দিয়ে আঁচার তৈরিতে খুব একটা সমস্যা হবে না।
এটা আমার প্রথম লেখা।অনেক ভুল থাকতে পারে। আশাকরি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। রান্না নিয়ে আরও কিছু লেখার ইচ্ছে আছে তাই পর্ব আকারে দিলাম অবশ্য যদি মডারেশন পার হয়।
বনি
মন্তব্য
কয়দিন আগেই জলপাই ভর্তা কইরা খাইলাম, কাছাকাছি রেসিপি। অতি উত্তম হইছিল। এইটাও মারাত্মক বুঝাই যাচ্ছে।
চমেৎকার রান্না হইছে, পাঁচ তারা। খালি চন্দ্রবিন্দু বেশী হইছে। আচারে চন্দ্রবিন্দু দেওয়ার দরকার নাই এরপরে
..................................................................
#Banshibir.
চন্দ্রবিন্দু দিলে সমস্যা কী? চন্দ্রবিন্দু তো ভালু গায়। আমি চন্দ্রবিন্দু ভালু পাই। আসেন একখান চন্দ্রবিন্দু শুনি
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
ছি আপ্নেও কোলকাতার গান শুনেন? দেশে শিল্পীর আকাল তাই এই অবস্থা। শুনতে হবে শুধুমাত্র নব্বই দশকের ব্যান্ডের গান। কোলকাতা রিক্সাওয়ালা ক্ষ্যাত মেরিটলেস ইত্যাদি গান না শুনার উদাত্ত আহ্বান জানাই।
..................................................................
#Banshibir.
[ ]
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
লালা নিঃসরণ প্রক্রিয়ার একটা ইমো না হওয়া পর্যন্ত থ্রিডি কবির সাথে একমত
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
চন্দ্রবিন্দু আমারও প্রিয় ব্যান্ড।
খাবারে ছবি সচলে ব্যান করা দরকার আসলে। আমারা যে শফিভক্ত তেঁতুল জল্পাই দেখলে লালাগ্রন্থি নিয়ন্ত্রন কঠিন হয়ে যায়। পোস্টে মাইনাচ ।
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
ধন্যবাদ সত্যপীর ভাই।চন্দ্রবিন্দুর ব্যাপারে পরের বার খেয়াল রাখব।
রসনায় রস আনা লেখা। এই পদ্ধতিতে আচার তৈরী করে খেয়ে তারপরে আরো মন্তব্য করা যাবে।
____________________________
ঝটফট তৈরী করে খেয়ে ফেলুন।
লেখা ভাল লেগেছে। (হ্যাঁ, চন্দ্রবিন্দুর প্রয়োগ আর বানান নিয়ে আর একটু খেয়াল করা দরকার)।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
ধন্যবাদ এক লহমা। বানান ও চন্দ্রবিন্দুর ব্যাপারে খেয়াল রাখার চেষ্টা করব।
ভালো কথা মনে করাইলেন। আম্মা এক ডিব্বা পাঠাইসে দ্যাশ থিকা। বাসা বদলের ঝামেলায় কূন চিপ্পিতে পইরা আছে ভুইলাই গেসি। দেখিতো......খোঁজ দ্য সার্চ!!! কেউ পারলে জলিল ভাইরে ডাক দ্যান। বাড়তি মোটিভেশন হিসাবে স্ক্রীনে আচারের ফটু ঝুলায়ে রাখলাম
পোস্টে সাড়ে পাঁচ তারা!!!
সাড়ে পাঁচ তারা দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।
আপনার জলপাই আচারের ছবি দেখে জিবে জল তো আসলোই সাথে আম্মুর জলপাই আচার বানানোর প্রক্রিয়াও মনে পড়লো।
আমি আচার খুব ভালু পাই, শফি হুজুরের ভক্ত কিনা!
শব্দ পথিক
অসংখ্য ধন্যবাদ শব্দ পথিক।এ রকম জিবে জল আরও আনতে চাই।
নতুন মন্তব্য করুন