গত রাতে অনেক বড় একটা আফসোস নিয়ে ঘুমাতে গেলাম ।
আহা, আমি যদি একাত্তরের আরো আগে জন্মাতাম! আর যদি রাজাকার হতে পারতাম ! যৌবন বয়সে মানুষের কতই না সুপ্ত আশা থাকে । মা, বোন আর কাছের চাচী, মামী, খালা-দের ছাড়া আশে-পাশের সুন্দরী মেয়েদের বুক কচলে দেয়া, একটু আনন্দ করা । অনেক ছেলে-পুলে পৈশাচিক আনন্দ মেটায় কুকুর-বিড়াল-পাখি মেরে, আর আমি আনন্দ মেটাতে পারতাম মানুষ মেরে । পরীক্ষা করতে পারতাম কত ধরনের নৃশংসতায় মানুষ মারা যায়, কোন ধরনের যন্ত্রনায় সে কিভাবে কোঁকায় । শিশুদের আছড়ে মেরে ফেলতে পারতাম, ছেলের সামনে মা-কে ধর্ষন করতে পারতাম, ভাইয়ের সামনে বোন-কে । আমার ঝুলিতে থাকত ছয় বছরের শিশু হতে ষাট বছরের বৃদ্ধা সবার সাথে সঙ্গমের অভিজ্ঞতা । নিজের আঙ্গুল, শিশ্ন ঢুকানোর পর ওদের যৌনাংগে ঢুকিয়ে দিতাম ধারালো কোন অস্ত্র; অবলোকন করতাম ওদের আনন্দ চিৎকার। জীবন্ত পুরুষের চোখ তুলে নেয়া আর জ্যন্ত নারীর স্তন কাটার ইচ্ছাটাও মিটত ।
তারপর আমি হতাম স্বাধীন দেশের মন্ত্রী। আমার অনেক ভক্ত থাকত, থাকত অনেক অনুসারী । আমি আগের মতই আমার সব পৈশাচিক আনন্দ মেটাতাম । আমার সমালোচনা করে এত সাহস কার ? আমার ভক্তকুল আছেনা ! সমালোচকদের অপর পারে পাঠানোর কাজ টা নিজ দায়িত্বে সেরে ফেলত আমার অনুসারীরা, আমাকে ভালবাসার নিদর্শন হিসেবে । আমার আদর্শকে এরা লালন করত । মানুষ পুড়িয়ে মারত, পিটিয়ে মারত, ধর্ষন করত, ভাংচুর করত । রাজনৈতিক মর্যাদায়, চরম বিলাসিতায় কাটতো আমার জীবন। এর-ই মধ্যে রাজনৈতিক দল টিকিয়ে রাখার জন্য, বোধাই মুসলমানদের আইওয়াশের জন্য একটু ধর্ম-কর্ম শুরু করতাম, দাঁড়ি রাখতাম, টুপি পড়তাম । আমি তো জানি পুরুষ মানুষ কত খারাপ ! আমার বৌ-মেয়েদের গায়ে হাত দেয় এমন বেটা-টি তো কেউ নেই, কিন্তু পাছে চোখ দিয়ে কেউ ধর্ষন করে এই ভয়ে তাদের সব-সময় প্যাকেট বন্দী করে রাখতাম । বেকুব জনগন ভাবত আহাঃ এই লোকটার জন্য-ই তো আরশ থেকে স্রষ্টা বাংলার জমিনে নেমে এসেছে ।
সারাটা জীবন উপভোগ করে মনের সব আশা মিটানোর পর শেষ জীবনে কিছু বেলাইনে যাওয়া নাস্তিক পোলা-মাইয়্যা দের আন্দোলনে আর রাজনৈতিক প্রতিহিংসাপরায়ন হয়ে বাকশাল সরকার হয়ত আমার ফাঁসির আদেশ দিত । কিন্তু ওদের বুঝার ক্ষমতা থাকতনা যে এটা একটা রাষ্ট্রীয় মৃত্যু । আমি তো এই বয়সে এমনিতেই মরতাম । কিন্তু সরকার আমার মৃত্যুর যে আয়োজন করত তাতে আসলে আমার লাভ-ই হত । সারা পৃথিবীর রাষ্ট্র নেতা হতে শুরু করে আম-জনতা, বিবিসি-সিএনএন-আল জাজিরা হতে শুরু করে সকল মিডিয়ার সাংবাদিক দের চোখ থাকত আমার উপর । আমি মরতে পারতাম জেনে-শুনে, পাক-পবিত্র হয়ে, তওবা করে । মন্ত্রী থাকা অবস্থায় যেমন আমার গাড়ির আগে-পরে থাকত পুলিশ প্রহরা, রাস্তা থাকত ফাঁকা, মৃত্যুর পরও একই প্রটোকলে আমার লাশ চলে যেত আমারই শেষ ইচ্ছানুযায়ী আমার গ্রামের বাড়ীতে । সবই হত রাষ্ট্রীয় খরচে। আমার মৃত্যুর প্রতিবাদে আরো অনেক লাশ পড়ত, কিন্তু এদের খবর কে রাখে বল, এরাতো আমার মত গুরুত্ব পূর্ন না ।
আর আমি যদি মুক্তিযোদ্ধা হতাম- আমার মা-স্ত্রী-মেয়েরা আমার সামনেই ধর্ষিতা হত, আমার শিশু সন্তানকে আমার সামনেই আছড়ে মারা হত, আমি গুলি খেয়ে মরতাম । আর বেঁচে থাকলেই বা কি লাভ হত! হয় পঙ্গু হয়ে রাস্তায়-রাস্তায় ভিক্ষা করতাম, না হয় আমার-ই স্বাধীন করা দেশে রাজাকারের হাতে লাথি খেতাম । আমাকে কেউ চিনতও না । মৃত্যুর পর হয়ত আমার লাশ বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা হত ।
ঘুমানোর পর রাতে স্বপ্ন দেখলাম ।
দেখলাম রাষ্ট্রীয় ভাবেই আমার দাফন হচ্ছে, আমার অনুসারীরা জানাযার নামাজ পড়ছে । জানাযায় অনেক খুঁজলাম আমার ছেলেকে, দেখলাম না । কবরে আমাকে নামাতে আসেনি । আশে পাশে স্ত্রী-মেয়েদের কান্নার শব্দ শুনলাম না ।
মেয়েরা আজ বোরকা পড়েছে, তবে পর্দার জন্য নয়, পড়েছে যাতে কেউ ওদের কে চিনতে না পারে । আমার জন্য ওরা আজ বিব্রত । আর ছেলে চাইছে যত তাড়াতাড়ি পারে আমাকে ভুলে যেতে । অন্যদেরকে ধোঁকা দেয়া সহজ, কিন্তু নিজের পরিবারকে ? ওরা তো সবচেয়ে ভাল চিনে আমাকে । ওরা যে আমার নিজের রক্তের ।
গত রাতের আফসোস আমার উধাও হয়ে গেল
তারেক-উজ-জামান
মন্তব্য
কী বলবো ! মন্তব্য নাই !
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
সুবোধ অবোধ
হুমম...
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
এখন হতাশার গল্প নয়, এখন আশার গল্প বলতে হবে। এতো বাধা এত ঝঞ্ঝাল পেরিয়ে আমারাই তো পেরেছি কাদেরকে ফাঁসির দড়িতে ঝুলাতে, ওদের বুকে কাঁপন ধরাতে। এই বাংলায় যে রাজাকার/ আবাল/ছাগুদের ঠাই নেই। যুদ্ধ চলছে, যুদ্ধ চলবে।
মাসুদ সজীব
নতুন মন্তব্য করুন