গতকাল রাতে উত্তেজনায় ছটফট করছিলাম। উত্তেজনার বিষয় 'বিজয় দিবস।' মহান বিজয় দিবস এসে গিয়েছে অথচ এখনও আমার ফেইসবুকের প্রোফাইল পিক্ অথবা কভার পিক্ এ জাতীয় পতাকা লাগানো হয়নি। আহা! সবাই কি সুন্দর সুন্দর পতাকার ছবি দিয়ে তাদের প্রোফাইল সাজিয়েছে। সারাদেশে নিশ্চয় লক্ষ লক্ষ বাসার ছাদে লাল-সবুজের পতাকা গর্বে অহঙ্কারে মাথা উঁচু করে আমাদের স্বাধিনতার অস্তিত্বের জানান দিচ্ছে। দৃশ্যটা যে কী স্বপ্নময় সুন্দর তা আমি প্রবাস থেকেই কল্পনা করতে পারছি। কল্পনার চোখ দিয়ে দৃশ্যটা ভাবতেই আনন্দে মন ভালো হয়ে যাচ্ছে। সব বাসার ছাঁদে ছাঁদে আমাদের লক্ষ্য-কোটি অহঙ্কার পত্ পত্ করে উড়ছে।
ভাই, একটা বার চিন্তা করে দেখেন। সামনেই ফুটবল বিশ্বকাপ। কয়েকদিন পর এই বাসাগুলোর ছাঁদেই ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, ইটালি, স্পেইন এর পতাকা উড়বে। আমাদের লক্ষ কোটি অহঙ্কারের জায়গায় তখন উড়বে লক্ষ কোটি অবমাননা। স্বাধীন আমাদের দেশ প্রকাশ্যে অন্য দেশের প্রতিনিধিত্ব করবে। নিজের দেশের প্রতিনিধিত্ব না করে আমরা তখন আবার প্রমান করবো যে বিয়াল্লিশ বছরেও আমরা একটা পরিপূর্ণ দেশ হয়ে উঠতে পারিনি। আমরা এখনও বড্ড ছেলেমানুষ। আমাদের সম্মান থাকার মত অনেক কিছু থাকা সত্ত্বেও আত্মসম্মান নেই। আমাদের অহঙ্কারি হবার মত অনেক কিছু থাকলেও আমরা আমাদের জাতীয়তা নিয়ে অহঙ্কার করতে শিখিনি এখনো। আমরা জানি যে অহঙ্কার দূষণীয়। কিন্তু আমরা এখনো শিখিনি যে নিজের দেশের ব্যাপারে অহঙ্কার করার মধ্যে দোষের কিছু নেই। শুধুমাত্র এই একটা ব্যাপারেই অহঙ্কার দূষণীয় নয়। অহঙ্কার সুন্দর। বাড়াবাড়ি রকমের সুন্দর।
ভাই, আমি নিজেও ফুটবল ভীষণ ভালোবাসি। ব্রাজিলের খেলাটাই বেশি ভালো লাগে। আমিও গলা ফাটিয়ে আর্জেন্টিনার সাপোর্টার দের সাথে ঝগড়া করি। আড্ডার টেবিলে ওদের পঁচানোর উত্তেজনায় নতুন শার্টে চা ফেলে দেই। এই উত্তেজনাও আনন্দের। এই উত্তেজনায় ফুটবলের প্রতি ভালোবাসা এবং ফুটবলকে ভালোবাসার আনন্দ আছে। তাই বলে আমাদের স্বাধীন দেশে অন্যদেশের পতাকা ওড়ানোটা কতটুকু যুক্তিযুক্ত! আমি পড়াশুনার জন্য অস্ট্রেলিয়ায় থাকি। গেল বছর বাংলাদেশ যখন ক্রিকেট এশিয়া কাপের ফাইনালে উঠেছিলো তখন আমি গর্ব ও আনন্দে আত্মহারা হয়ে আমার বাসার বারান্দায় বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়েছিলাম। পতাকা ওড়ানোর ঠিক পয়তাল্লিশ মিনিটের মাথায় আমার বাসায় পুলিশ এসে যথাযোগ্য সম্মানের সাথে আমাকে বাংলাদেশের পতাকা নামিয়ে ফেলতে অনুরোধ করে। পৃথিবীর কোন উন্নত দেশেই সম্ভবত এরকম বাড়িতে বাড়িতে অন্য দেশের পতাকা লাগানো হয় না। মনের গভীর থেকে আমাদেরও বিশ্বাস করার সময় আসছে যে আমরাও উন্নত জাতি। এবং আমাদের এই বিশ্বাস খুব তাড়াতাড়িই আমাদের হাতে ধরা দেবে। ভুলে গেলে চলবে না যে আমরা পৃথিবীর দ্রুততম উন্নয়নশীল জাতিগুলোর একটি। আমাদেরও অহঙ্কারি হবার সময় খুব বেশি দূরে নয় মোটেই। তাই জাতিগত অহঙ্কারটা এখন থেকেই প্র্যাক্টিস করা উচিত নয় কি!!!
তারপরেও যারা নিজের প্রিয় ফুটবল দলের পতাকা উড়াতে খুব বেশি আগ্রহী তাদের জন্যও ব্যবস্থা রয়েছে। আজকেই আমি জাতীয় পতাকা ওড়ানোর প্রটোকল্ পড়ছিলাম। সেখানে লেখা আছে যে এক দেশে অন্য কোন দেশের পতাকা শুধুমাত্র তখনি ওড়ানো যায়, যখন তার পাশে নিজের দেশের সমান সাইজের পতাকা ওড়ানো হয়। নিজের দেশের পতাকা পাশে রেখে অন্যদেশের পতাকা ওড়ানোতে দোষের কিছু নেই। কোন স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রে সেই দেশের পতাকা পাশে না রেখে শুধুমাত্র অন্য কোন দেশের পতাকা ওড়ানোটা সেই স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্য খুবই অবমাননাকর।
এই বিজয়ের মাসে বাসার ছাঁদে যেই রডে আমরা অহঙ্কার উড়াচ্ছি, সেই রডেই কিছুদিন পর অবমাননা উড়ানো কি আমাদের উচিত হবে? চলুন বিজয় দিবস সামনে রেখে শপথ করি যে। আমরা সবাই আমাদের প্রিয়দলের পতাকার পাশাপাশি সমান সাইজের বাংলাদেশের পতাকা ওড়াবো, আর নাহয় কোন দেশের পতাকাই ওড়াবো না। এখন সময় এসেছে পূর্ণাঙ্গ বাংলাদেশ গড়ার। অহঙ্কারি এক জাতি হয়ে বেড়ে ওঠার। আমাদের দেশের বয়স কিন্তু বিয়াল্লিশ হয়ে গিয়েছে। আমাদের এখন বেড়ে ওঠার সময়। ছেলেমানুষির দিন এখন আর নেই। আমরা বেড়ে উঠলেই বাংলাদেশ বেড়ে উঠবে। কারণ, দেশটা তো আমাদেরই। আমরাই তো বাংলাদেশ।
************** "নাঈম অঙ্কন" *******************
মন্তব্য
একদম মনের কথাগুলো বলেছেন।
এইটা ভাল লাগলঃ
"আমাদের দেশের বয়স কিন্তু বিয়াল্লিশ হয়ে গিয়েছে। আমাদের এখন বেড়ে ওঠার সময়। ছেলেমানুষির দিন এখন আর নেই। আমরা বেড়ে উঠলেই বাংলাদেশ বেড়ে উঠবে। কারণ, দেশটা তো আমাদেরই। আমরাই তো বাংলাদেশ।"
এক কাজ করা যাক, এখানে যেভাবে লিখলেন, সেভাবে সামনাসামনি আলাপ অথবা আড্ডাতেও লোকজনকে এই কথা গুলো বলে সচেতনতা জাগিয়ে তোলার চেষ্টা চালান। পাঠকরাও ভেবে দেখতে পারেন।
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
চমৎকার মন্তব্যের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ
তোমাকে এখানে দেখে ভালো লাগছে। তোমার মতো অ্যাকটিভ মানুষের এভাবে চুপ হয়ে যাওয়াটা দুঃখ দেয়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
ব্যাপারটা আরো বিশ্রী দেখায়, যখন সেই পতাকাটি হয় এমন একটি দেশের, যে দেশের মানুষেরা আমাদের ক্রীতদাস বানিয়ে রাখতে চেয়েছিল, যারা মাত্র বেয়াল্লিশ বছর আগেই তিরিশ লক্ষ বঙ্গ সন্তানকে হত্যা করেছিল, ধর্ষন করেছিল দু লাখ মা-বোনকে, যাদের কাছ থেকে স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনতে, একটি পতাকার অধিকার পেতে ঢেলে দিতে হয়েছিল এক সাগর রক্ত!
আপনার সাথে একমত। আসুন আমরা সবাই মিলে মানুষকে বোঝাই।
.............................
তুমি কষে ধর হাল
আমি তুলে বাঁধি পাল
অন্যদেশটা যদি পাকিস্তান হয় তাহলে এইসব নিয়মকানুন মানলেও আমার আপত্তি আছে
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
একমত!
গান্ধর্বী
গান্ধর্বী
আপত্তি মানে - দেন এন্ড দেয়ার পিছন পাগলের মত একটা কিছু করে ফেলার ইচ্ছে আছে!
ফাকিস্তান ফুটবল বিশ্বকাপ খেলেনা বলে হয়তো ঐ পতাকা উড়তে দেখি নাই, ভারতের পতাকাও চোখে পড়েছে বলে মনে পড়ে না। যতদূর স্মরণ করতে পারছি ফুটবলার দেশগুলোর পতাকাই দেখি উড়তে। তবে মনে হচ্ছে এটাকে সুযোগ হিসেবে নিয়ে ঐ জারজগুলো আবার "চান তারা" ওড়ানোর চেষ্টা না করে! নিজে হুঁশিয়ার থাকবো - অন্যদেরকেও বলি হুঁশিয়ার থাকতে।
____________________________
হক কথা
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
নতুন মন্তব্য করুন