আবারও ফিরে আসছে ওই দাতাল শুওরেরা- ১

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: সোম, ১৬/১২/২০১৩ - ৯:০৬অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

১।
আমার জন্ম খুব সাধারণ পরিবারে। কঠোর ইসলামিক ধ‍্যানধারণা কিংবা মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ সম্পর্কে তীব্র সচেতনতা এর কোনটাই আমার পরিবারে ছিল না। স্বাধীনতার ইতিহাসের প্রথম হাতেখড়ি হয় বাবার কাছ থেকে আর বাকিটা বই পড়ে কিংবা সিনেমা দেখে। তবে বিএনপি আর আওয়ামী লীগ দুই সরকারের সময়েই স্কুলে পড়ার কারণে স্কুলের বইয়ে মুক্তিযুদ্ধের দুই রকম ইতিহাস পড়ার দুর্ভাগ্য হয়েছে। এটা দু:খজনক একটা ব্যাপার তবে বড় একটা অংশ বাদ দেয়া ছাড়া বিএনপির মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে ভয়ংকর কোন ম্যানিপুলেশন ছিল না। যেমন, রাজাকার নামটা বাদ ছিলো, বলা হতো এদেশীয় দোসর তবে রাজাকাররা দেশ রক্ষার চেষ্টা করছিল এমন কিছু দেখেছি বলে মনে পড়ে না। অন্তত দশ এগারো বছরের কিশোর হিসেবে ওই বইগুলো থেকে এতটুকু বুঝতাম যে মুক্তিযুদ্ধ আসলে বিশাল একটা ব‍্যাপার।

আওয়ামী লীগ আসার পর স্কুলের পাঠ‍্যবইয়ে বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ, জিয়াউর রহমানের ২৬ এর বদলে ২৭ মার্চে স্বাধীনতার ঘোষণা, জামাত ই ইসলামীর বিরোধিতা এই ব‍্যাপারগুলো যোগ করা হলেও সেগুলো নতুন কিছু ছিল না। আমার ধারণা ছিল এগুলো তো পরিবার থেকেই জানার কথা, বাবা-মা কিছু না বললে মুক্তিযুদ্ধের ওপর বই আছে, তাও না পড়লে গল্পের বইতেই তো ইতিহাসের এই ব‍্যাপারগুলো পাওয়া যায়। এর বাইরেও যে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের অন‍্য একটা ভাসর্ন থাকতে পারে সে ব‍্যাপারে আমার কোন ধারণাই ছিলো না।

এই অন‍্য ভাসর্নের সাথে পরিচিত হই আরেকটু বড় হওয়ার পর। আমাদের গ্রামের এক আত্মীয় একাত্তরকে বলতেন গন্ডগোলের বছর। প্রথম শুনে বুঝতে পারিনি গন্ডগোলের বছর মানে কোনটা। পরে অন‍্যরা বললো উনি একাত্তরকে গন্ডগোলের বছর বলেন। কারণ? ওনার বাবা শান্তি কমিটির মেম্বার ছিল (সম্ভবত রাজাকার শব্দটার একটা ইউফেমিজ্ম হিসেবে শান্তি কমিটির মেম্বার বলা হতো। নিজের একজন আত্মীয়কে রাজাকার বলাটা আসলেই খুব কষ্টকর)। এই ব‍্যাপারটা শোনার পর আমার খুবই খারাপ লাগছিলো। একটা মানুষের কাছে তার বাবা পৃথিবীর সমান বিশাল। যেকোন সন্তানের কাছে বাবা পারে না এমন কোন কাজ নেই। বাবা আমাদের গর্বের স্থান, আমার ভরসা, শ্রদ্ধা, আদর্শ সবকিছু। হঠাৎ একদিন কেউ যদি আবিষ্কার করে তিনি বাবা হিসেবে যাকে চিনে আসছেন তিনি আসলে একজন খুনী এবং ধষর্ণকারী, আমার মনে হয়না কোন স্বাভাবিক মানুষের পক্ষে সেই মুহূর্তে মানসিক সুস্থতা ধরে রাখা সম্ভব। মানসিক সুস্থতা ধরে রাখার জন‍্য এর বিরুদ্ধে একমাত্র ডিফেন্স মেকানিজম হতে পারে পুরো ব‍্যাপারটা অস্বীকার করা। যেমন, সাইকো সিনেমার নরম‍্যান বেট্স এর কথাই ধরা যাক। মা এবং তার প্রেমিককে হত‍্যা করার পর এই অপরাধবোধ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন‍্য হত‍্যার পুরো বিষয়টা তার স্মৃতি থেকে মুছে ফেলে।

আমার ওই আত্মীয়’র বাবার ব‍্যাপারটা জানার পর থেকে তাকে এড়িয়ে চলতাম। আর কথা হলেও কখনও মুক্তিযুদ্ধের প্রসঙ্গ তুলতাম না। আমার মনে হতো কি দরকার লজ্জা দিয়ে। এমনিতেই হয়তো উনি ব‍্যাপারটা নিয়ে অপরাধবোধ ভোগেন, সেখানে আমি খোচাখুচি করলে কষ্ট হয়তো আরো বেশী পাবেন। উনি বলতেন আরে মুক্তিযুদ্ধে তো ৩০ হাজার মানুষ মরছে, শেখ মুজিব ভুল কইরা ৩০ লাখ বলছে। তারপর বলতেন, রাজাকাররা আসলে চেষ্টা করতো সাধারণ মানুষগো পাকবাহিনীর কাছ থিকা রক্ষা করতে, ওরা মানুষ মারতো এইটা ভুল কথা। আমি চুপ করে শুনতাম, ওনার বাবা কি করেছেন সেটা মোটামুটি পরিবারের সবাই জানতো। আমার মনে হতো উনি এসব বলে ভালো থাকার চেষ্টা করছেন, পারিবারিক মন্ডলের বাইরে কখনো এসব শুনি নি বলে আমার ধারণা ছিল এসব ওনার একান্ত নিজস্ব মনগড়া ইতিহাস। মানসিক সুস্থতা ধরে রাখার সামান‍্য প্রচেষ্টা।

২।
আমার আত্মীয় সেই রাজাকারপুত্রের কাছে শোনা ইতিহাসের এই ভার্সনটা আমি আবার শুনতে পাই ২০০৬ এ, যখন আমি সামহোয়ারইনব্লগ পড়া শুরু করি। এই ভিন্ন ভার্সনের আইডিয়াটা দেয়া হতো খুব সুক্ষভাবে। ইনসেপশন সিনেমাটার কথাই ধরি। ওখানে ডমিনিক কবকে এ‍্যাসাইনমেন্ট দেয়া হয় রবার্ট ফিশার এর অবচেতন মনে এমন একটা আইডিয়া ঢুকিয়ে দেয়ার জন‍্য যাতে ফিশার তার বাবার মৃত‍্যুর পর বিজনেস এম্পা‍য়ারটা ভাগ করে ফেলে। সামহোয়ারের পোস্টগুলোতেও এমন একটা হিডেন এজেন্ডা থাকতো। যেমন, মার্চ কিংবা ডিসেম্বর মাসের আগে পরে দু’একজন হঠাৎ করে পোস্ট দিতো- মুক্তিযুদ্ধে কি আসলেই ৩০ লক্ষ মানুষ মারা গিয়েছেন? এ ধরনের পোস্ট যারা দিতো ওদের অন‍্য পোস্টগুলো সাধারণত থাকতো ডিরেক্ট কপি পেস্ট। উদাহরণ হিসেবে এই ব্লগটা দেখতে পারেন। এরপর মুক্তিযুদ্ধে যে আসলেই ৩০ লক্ষ মানুষ মারা যায়নি এটা নিয়ে আসতো আরেকটা পোস্ট। সেই পোস্টের সোর্স হিসেবে অবধারিতভাবে আনা হতো শমির্লা বসুর লেখা একটা বই আর ফিরোজ মাহবুব কামালের ব্লগ। মজার ব‍্যাপার ছিলো এই রিপিটিটিভ পোস্ট করার ব‍্যাপারটা প্রতি বছরই হতো নতুন নতুন নিকে। ওই কয়েক বছর যারা ব্লগ অনুসরণ করেন নি আপনারা ধারণা করতে পারবেন না ব‍্যাপারটা কতটা ওয়েল অর্গানাইজ্ড ছিল। এই পোস্ট আর এটা দেখতে পারেন। এই লিংকে এধরনের অসংখ‍্য পোস্টের তালিকা পাবেন। পড়ে থাকলে দেখবেন বেশীরভাগ পোস্টের মূল বক্তব‍্য একই। ৩০ লক্ষ মানুষ মারা যায়নি, গোলাম আযম ভাষাসৈনিক, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কি আসলেই গুরুত্বপূর্ণ, রাজাকাররা কি আসলেই খারাপ, মুক্তিযোদ্ধারা কি আসলেই ভালো, বুদ্ধিজীবীদের আসলে ইন্ডিয়ানরাই হত‍্যা করেছে, এ ধরনের ব‍্যাপার নিয়ে পোস্টের পর পোস্ট আসতো। শুধু তাই না ওই সময়টাতে উইকিপিডিয়াতে কিছু সময় দেয়ায় বুঝতে পারি উইকিতে রাজাকার, জামাত ই ইসলাম, গোলাম আযম, মতিউর রহমান নিজামী এই ধরনের পেজগুলোতে খুব সুক্ষভাবে ১৯৭১ এ তাদের ভূমিকাগুলো বাদ দেয়া হচ্ছে।

যোসেফ গোয়েবল্স একবার ব্রিটিশদের সম্পর্কে বলেছিলেন যে, ওরা যখন মিথ‍্যা বলে তখন অনেক বড় মিথ‍্যা বলে এবং সেটা থেকে নড়চড় করে না, যতটা হাস‍্যকরই লাগুক না কেন। ব্লগের প্রচারণাটাও এই মতবাদের উপর ভিত্তি করে তৈরী ছিল। প্রথমবার যখন বলবে, “রাজাকাররা কোন মানুষ খুন করে নাই” আপনি বলবেন শালা ছাগু। দ্বিতীয়বার যখন বলবে “রাজাকাররা কোন মানুষ খুন করে নাই”, আপনি বলবেন, ছাগু আবার আসছোস। তৃতীয়বার যখন বলবে, “রাজাকাররা কোন মানুষ খুন করে নাই” আপনি এবার দেখেও না দেখার ভান করবেন। কারণ ব্লগিং করার জন‍্য আপনাকে কেউ টাকা দেয় না। দেশ বাঁচানো কিংবা সমাজ রক্ষা করাও আপনার ব্লগিং এর উদ্দেশ‍্য না। এই কারণে একটা রাজাকার ছাগু কি করলো তাতে আপনার কিছু যায় আসে না। কিন্তু এখানে সমস‍্যা হলো আপনি যার পোস্ট দেখে কোন প্রতিবাদ না করেই চলে যাচ্ছেন, সে ওই পোস্ট্ লেখার জন‍্য টাকা পাচ্ছে। ব্লগিং এ টাকা পয়সার এই ব‍্যাপারটা বিশ্বাসযোগ‍্য ছিল না আমার জন‍্য। তবে এটা যে কতটা সত্যি আর ভয়ংকর সেটা দেখতে পাই উইকিপিডিয়াতে।

উইকিপিডিয়ায় এমন কিছু একাউন্ট (অনেকসময় নির্দিষ্ট কিছু আইপি) ছিল যেগুলো বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ, রাজাকার, আল-বদর, গোলাম আযম, মতিউর রহমান নিজামী, দেলোয়ার হোসেন সাঈদীসহ অন‍্যান‍্য রাজাকার, ছাত্রশিবির, জামাত ই ইসলামী, বুদ্ধিজীবী হত‍্যা এই পেজগুলো ছাড়া আর কোন পেজে কোন এডিট করতো না। তাদের একমাত্র ফোকাস ছিল একাত্তরে জামাতের নৃশংস ভূমিকার অংশগুলো এসব পেজ থেকে খুব সুক্ষভাবে বাদ দেয়া। যেমন আপনি যদি গত পরশুর উইকিতে কাদের মোল্লার পেজটা দেখেন তাহলে খেয়াল করবেন কাদের মোল্লা ১৯৭৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ‍্যালয় থেকে ডিপ্লোমা এবং মাস্টার্সে ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হয়েছে (?) এমন একটা তথ‍্য দেয়া ছিল, এবং এই তথ্যের উৎস হচ্ছে www.freejamatleaders.com (???) । অর্থাৎ তারা নিজেরাই নানারকম পেজ তৈরী করে সেটাকে উইকির রেফারেন্স হিসেবে ব‍্যবহার করছে (আজকে দেখলাম কাদের মোল্লার ওই পেজ ইতিমধ‍্যে ঠিক করা হয়েছে)। উইকির এডিটর, এ‍্যাডমিন সবাই স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করেন। এই জামাতী পেইড এডিটরদের প্রতি নজর রাখাটা এই অল্পকিছু স্বেচ্ছাসেবকদের পক্ষে সম্ভব হয় না। এই কারণে উইকিতে মুক্তিযুদ্ধ সংশ্লিষ্ট অসংখ‍্য পেজ থেকে জামাত ই ইসলামী ও ইসলামী ছাত্র সংঘের ভূমিকা সুকৌশলে বাদ দেয়া হচ্ছে। উইকির অল্প কিছু স্বেচ্ছাসেবকদের বিপরীতে রয়েছে জামাত আর শিবিরের লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে তৈরী করা আইটি টিম, যাদের একমাত্র কাজ হচ্ছে ইন্টারনেটে সুচতুরভাবে জামাতের পক্ষে প্রপাগান্ডা চালানো। আপনি যেকোন ব্লগে যান, ফেসবুকে যান আপনি একজন জামাত-এ‍্যাপোলজিস্ট খুজে পাবেন। সে আপনাকে রেফারেন্স দেবে শর্মিলা বসুর বই, ফিরোজ মাহবুব কামালের ব্লগ, কিংবা দৈনিক নয়াদিগন্ত থেকে।

সামহোয়ারইনব্লগে প্রো-জামাতী সবাই পেইড ব্লগার ছিল না। আরেক গ্রুপ ব্লগার ছিল যাদের ওই পেইড ব্লগারগ্রুপ খুব মান‍্য করে চলতো। এরা ফুল ঘাস লতাপাতা নিয়েই বেশীরভাগ সময় পোস্ট দিতো। তবে অতি অতি সুক্ষভাবে তাদের পোস্টে কিছু হিন্ট দেয়া হতো। উদাহরণ হিসেবে দেখানো যায় এই পোস্ট এর প্রথম প‍্যারাটা :

যদি কাউকে প্রশ্ন করা হয়। আপনি কি বাংলাদেশকে চিনেন? উত্তর সাধারণ কিন্তু যদি একটি বিশেষ দলকে প্রশ্ন করা যায়ঃ সম্ভাবনাময় একটি দেশ কিন্তু তালেবান, র্ধমান্ধ, মৌলবাদী তথা জামাত শিবিরের ওরফে রাজাকারদের (কোন প্রমান এবং যুক্তি ছাড়া) নিধন করা ছাড়া কোন উন্নতি হবেনা। তাদের কে আমি তথাকথিত মুক্তিযোদ্ধা প্রেমিক বলি।

তার বক্তব্য হচ্ছে জামাতিরা যে রাজাকার এর পক্ষে কোন তথ্য প্রমাণ নাই। এই পোস্টদাতার নাম ওয়ালী। উনি আল-বদর বাহিনীর প্রধান সংগঠক রাজাকার কামারুজ্জামানের পুত্র (পরবর্তীতে এক পোস্টে এর ছোট ভাই মুক্তিযোদ্ধাদের কুত্তার বাচ্চা বলায় একে এবং এর ছোট ভাই দু’জনকেই ব্লগ থেকে ছেটিয়ে বিদায় করা হয়)। এই আপার লেভেল ব্লগারদের ব্যাকগ্রাউন্ড চেক করলে আপনি মোটামুটি একই জিনিস পাবেন। এরা একাত্তর সালের জামাত এবং ইসলামী ছাত্র সংঘের সদস্যদের সরাসরি বংশধর। এর মধ্যে পুত্র আছে, কন্যা আছে, ভাগ্নী, ভাতিজিও আছে। গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার ছিল এদের কেউ জামাত কিংবা শিবিরের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত না। ব্লগে তারা প্রথমেই একটা নিরপেক্ষ ব্লগার ইমেজ তৈরী করতো। উদ্দেশ্য ছিল এই নিরপেক্ষতার আড়াল থেকে জামাত-‌এ্যাপোলোজিস্ট হিসেবে কাজ করা। তবে অনেক সময়েই বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে তাদের এই নিরপেক্ষতার ইমেজটা খসে পড়তো। কেউ যখন গোলাম আযম সম্পর্কে কটু কথা বলতো তখন তাদের অনেকেই দৌড়ে আসতো গু-আযম কতটা সৎ লোক তা প্রমাণের জন্য।

এই পেইড ব্লগার এবং আল-বদর বংশধরদের সাথে মিথস্ক্রিয়া করাটা ছিল খুব কঠিন একটা কাজ। কোনকিছু প্রমাণ করা এদের উদ্দেশ্য থাকতো না, এদের উদ্দেশ্য ছিলো একটাই, সেটা হলো অবচেতন ভাবে মানুষের মনে আমাদের স্বাধীনতার অজর্ন, ত্যাগ, তিতীক্ষা সম্পর্কে প্রশ্ন তৈরী করা। ৩০ লক্ষ মানুষ কি আসলেই মারা গিয়েছেন, আল-বদর কি আসলেই খারাপ, পাকিস্তানী বাহিনী কি সত্যি সত্যি ধষর্ণ করতো, এই ধরনের অসংখ্য ব্যাপারে তারা বিতর্ক তৈরী করতো।

প্রথম প্রথম আমার ওই আত্মীয়র মতোই এই রাজাকার বংশধরদের জন্য খারাপ লেগেছিলো। এই কম বয়সী ছেলে মেয়েগুলো নিজের বাবাকে নিয়ে গর্ব করতে পারে নি কখনো, নিজের দেশকে নিয়ে গর্ব করতে পারে নি, দেশপ্রেমের মতো অসাধারণ একটা অনুভূতি থেকে তারা বঞ্চিত। সারা দেশের মানুষ কর্তৃক ঘৃণিত একটা আদর্শের উপর ভর করে দেশের ইতিহাস, শ্রেষ্ঠ সন্তান আর গর্বের বিষয়গুলো সম্পর্কে নোংরা নোংরা কথা বলার মার্ধমে নিজেদের গ্লানিবোধ আর কষ্ট থেকে মুক্তি পাওয়ার চেষ্টা করছে। এই বিষয়টা অনুধাবন করে মাঝে মাঝে বেদনাবোধ হতো। আমি মনে করি রাজাকারের সন্তান মানেই রাজাকার না। পিতার আদর্শই যে পুত্র কন্যার অনুসরণ করতে হবে এমন কোন শর্ত নেই। কিন্তু আমি জানি আপনারা পারবেন না সেই আদর্শ থেকে বের হয়ে আসতে। আমার পিতা ছিল একজন খুনী, তিনি ধষর্ণ করতেন, তিনি কমবয়সী মেয়েদের তুলে দিতেন পাকিস্তানী বাহিনীর হাতে, কোন মানব-সন্তানের পক্ষে এসব মেনে নিয়ে সুস্থভাবে বেচে থাকা সম্ভব না। আপনারা যতোদিন বেচে থাকবেন ততোদিন এসব অস্বীকার করেই বেচে থাকতে হবে।

৩।
গত ১৪ তারিখ রাতে শিবিরের মুখপাত্র বাশেরকেল্লা একটি চমৎকার কাজ করে। ২০০৬ থেকে আজ পযর্ন্ত জামাত ই ইসলামী এবং শিবির ঘুরিয়ে পেচিয়ে যেসব কথা বলার চেষ্টা করে আসছে তার একটা সংক্ষিপ্ত সার প্রকাশ করে। এটিকে জামাতি আদর্শের ভিত্তিও বলা যায়। আশার কথা হলো, এটি প্রকাশের ৪০ মিনিটের মাথায় তারা আবার সেটা মুছে ফেলতে বাধ্য হয়। আশার কথা বলছি এই কারণে যে কোন পাব্লিক ফোরামে তারা এটি প্রকাশ করেনি, নিজস্ব গ্রুপে নিজেদের সমথর্কদের মাঝেই তাদের এই আদর্শের প্রচার এতো তীব্র গালির সম্মূখীন হয়েছে যে, প্রকাশের এক ঘন্টা পার হওয়ার আগেই তাদের সেটি মুছে ফেলতে হয়। পোস্টটির গুগল ক্যাশ লিংক, মিডিয়া ফায়ার লিংক

এই ঘটনাটা আমাদের আবার নতুন করে আশাদীপ্ত করে । এটি প্রমাণ করে জামাত যদি এদেশে টিকে থাকতে চায় তবে তাদের টিকতে হবে মিথ্যার ওপর ভিত্তি করে। মানুষের করুণা ভিক্ষার জন্য সবসময়েই তাদেরকে মিথ্যা বলতে হবে যে কাদের মোল্লা আসলে একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন, যেই মূহুর্তে ওরা স্বীকার করে নেবে যে,

কাদের মোল্লা জামায়াতে মেধাবী নেতাদের একজন। উনি একাত্তরের আগে ইসলামী ছাত্রসংঘ করতেন। একাত্তরে যখন ইসলামী ছাত্রসংঘের সদস্যদের নিয়ে আলবদর গঠিত হয় তখন তিনিও আলবদরে যোগ দেন।

ওদের সমথর্করাই বারবার চিৎকার করে বলবে,

তোরা বেজন্মা।

(পর্ব-১ সমাপ্ত)
---------------------
দ্বিতীয় পর্বে আসছে অনলাইনের এই দাতাল শুওর কারা আর কিভাবে চিনে রাখবেন এদের।

সৌরভ সাখওয়াত


মন্তব্য

সত্যপীর এর ছবি

চমৎকার। দ্বিতীয় পর্ব দ্রুত আসুক। শুয়োরের বাচ্চাদের দাঁত ভেঙে দেওয়া চাই।

স্ক্রীনশটটি অসাধারন।

সংযুক্তিঃ অনুমতি পেলে স্ক্রীনশটটি টুইটারে শেয়ার করতে চাই।

..................................................................
#Banshibir.

অতিথি লেখক এর ছবি

অবশ‍্যই। শেয়ারের জন‍্যই তো ইমেজ, ক‍্যাশ লিংক, মিডিয়া ফায়ার লিংক দিয়ে বসে আছি হাসি

আলতাইর এর ছবি

পপকর্ন লইয়া গ্যালারীতে বইলাম পপকর্ন লইয়া গ্যালারীতে বইলাম

টেন ইস্টার দেয়ার মত ল্যাখা!

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

চলুক

রকিবুল ইসলাম কমল এর ছবি

দুর্দান্ত লেখা। পরের পর্বের অপেক্ষায়।

তীরন্দাজ এর ছবি

অসাধাণর ও তেমনি অসাধারণ পর্যবেক্ষণ। ওয়ালিদের সাথে তর্কযুদ্ধ করার অভিজ্ঞতা আমারও আছে।

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

অতিথি লেখক এর ছবি

আমি রাজাকারদের ছেলেমেয়েদের মানসিকতা বুঝতে পারিনা। নিতান্ত অন্ধ না হলে বাংলাদেশে বাস করে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বাস্তবতা না বোঝা সম্ভব নয়। এবং এরা যে বোঝেনা তা-ও না। তা-না হলে এভাবে ম্যানিপুলেট করার চেষ্টা করতনা। কারুরই বাবা মা-কে দিয়ে ছেলে মেয়ে বিচার করা উচিত না। কিন্তু জামাতিদের পরিবারকে জামাতিদের মতই বিপদজনক মনেহয় আমার।

ওয়াইফাই ক্যানসার

অতিথি লেখক এর ছবি

এক কথায় অসাধারণ!!!
হাততালি চলুক

সুবোধ অবোধ

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

অসাধারণ, পপকর্ন লইয়া গ্যালারীতে বইলাম

[...ব্লগের সেই অসাধারণ সময়টায় আমরা ব্লগ চিনতামই না
তখন যারা যুদ্ধ করে গেছেন তাদের স্যালুট...]

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

অর্ক রায় চৌধুরী এর ছবি

এই শুয়োরদের কোন লজ্জা নেই। ওরা ওদের পিতৃপুরুষের আদর্শ নিজের ভেতর ধারন করতে এতটুকু লজ্জিত হয় না।
দারুন লেখা। ছড়িয়ে দিন।

স্যাম এর ছবি

অসাধারণ!!!

'সংক্ষিপ্ত সার' টা ওরা মুছে দিলেও এটাই খানকির পোলাদের রক্তে মিশে আছে - জামত/শিবির মানসিকতার কুত্তার বাচ্চারা সবাই ঐ দল করেনা কিন্তু তাদের সংক্ষিপ্ত সার একই। নিপাত কামনা করি জারজদের।

আরো লেখা প্রত্যাশা করি।

টিউলিপ এর ছবি

অসাধারন লেখা। পরের পর্বের অপেক্ষায় পপকর্ন নিয়ে বসলাম।

___________________

রাতের বাসা হয় নি বাঁধা দিনের কাজে ত্রুটি
বিনা কাজের সেবার মাঝে পাই নে আমি ছুটি

রণদীপম বসু এর ছবি

দারুণ হচ্ছে লেখা ! চলুক চলুক

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

তারেক অণু এর ছবি
প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

আহা, দারুণ ! চলুক

অতিথি লেখক এর ছবি

দুদার্ন্ত হাততালি

মাসুদ সজীব

অনিকেত এর ছবি

দারূণ একটি লেখা--দাবানলের মত ছড়িয়ে পড়া উচিত এই লেখাটা---
স্যালুট আপনাকে!

শুভেচ্ছা নিরন্তর---

অতিথি লেখক এর ছবি

অসাধারণ। পরের পর্বের অপেক্ষায় আছি।

স্বয়ম

সুমন_সাস্ট এর ছবি

জামাত যদি এদেশে টিকে থাকতে চায় তবে তাদের টিকতে হবে মিথ্যার ওপর ভিত্তি করে।

মিথ্যার সবচেয়ে বড় ম্যাজিক হলো যে, ওদের নিজেদের একজনের কথার সাথেই অন্যজনেরটা মিলবে না; একসময় ওরা নিজেরাই নিজেদেরকে নিয়ে ডুববে।

--
মাগো তুমি রেখো জেনে, এই আমরাই দেব এনে,
আঁধারের বাধা ভেঙে রাঙা ভোর, রোদ্দুর মাখা দিন।

http://www.youtube.com/watch?v=8OB_uPY4i4M

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

এটি প্রমাণ করে জামাত যদি এদেশে টিকে থাকতে চায় তবে তাদের টিকতে হবে মিথ্যার ওপর ভিত্তি করে।

দারুণ কথা। অসাধারণ লিখেছেন।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

চরম উদাস এর ছবি

আপনি কে গো ভাই?? আপনাকে শত সহস্র কুর্নিশ। গুরু গুরু
এত চমৎকার, এত সাবলীল,এত গুছানো একটা লেখা! মুগ্ধ হলাম। আপনে থামলে আপনার পিছনে লেগে এই জীবন ঝালাপালা করে দিব রে ভাই। জলদি জলদি পরের পর্ব নামান। দাতাল শুয়োরদের চেহারা চেনার জন্য মারাত্মক একটা আর্কাইভ হিসেবে কাজ করবে এই সিরিজ।

হযবরল এর ছবি

দূর্দান্ত একটা লেখা। ব্লগে জামাতের পরিকল্পিত মিথ্যাচার খুব সুন্দরভাবে উঠে এসেছে।

নিলয় নন্দী এর ছবি

অসামান্য একটা লেখা।
আমাদের সবার উচিত এই লেখাটাকে অনলাইনে ছড়িয়ে দেয়া।
হ্যাটস অফ ! চলুক চলুক চলুক

মর্ম এর ছবি

লেখকের একাউন্ট করে দেয়ার জন্য অনুরোধ রইল মডুদের কাছে।

সম্ভব হলে নীড়পাতায় বা 'মুক্তিযুদ্ধ' পাতায় লেখাটার লিংক স্থায়ীভাবে রাখার অনুরোধ ও রইল। এই লেখাটা (যে লেখাগুলো আসছে সামনে সম্ভবত সেগুলোও) সেটুক গুরুত্ব রাখে।

একটা লেখায় গুরুত্বপূর্ণ অনেক লেখা তুলে আনার কাজটা এত সহজ নয়, সেটুকু করতে পারার জন্য আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ, সৌরভ। সচলে আপনাকে নিয়মিত আশা করি। চলুক

~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...

অতিথি লেখক এর ছবি

সহমত

মাসুদ সজীব

ইয়াসির আরাফাত এর ছবি

এতো নির্মোহভাবে সত্য কথাগুলো কিভাবে বলে দিলেন? এই লেখা প্রমাণ করে, আপনাকে আরও অনেক অনেক লিখতে হবে। ভালো থাকবেন সৌরভ

এক লহমা এর ছবি

খুব সুন্দর করে গুছিয়ে তুলে ধরেছেন। পরের পর্বের জন্য সাগ্রহ অপেক্ষায় রইলাম।

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

খেকশিয়াল এর ছবি

পরের পর্ব পড়ার জন্য অধীর অপেক্ষায়। আর আপনাকে কুর্নিশ গুরু গুরু

-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'

সাফিনাজ আরজু এর ছবি

অসাধারন লেখা। গুরু গুরু
পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম ভাই।

__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---

মৃষৎ এর ছবি

সাধারণত অনলাইন মাধ্যমে আমার জামাতবিরোধী এক্টিভিটি হলো গালিগালাজ-ধাওয়া-ধাওয়ি-গদাম চালানো। আপনি করলেন বিপরীত কাজ কন্সট্রাক্টিভ বিশ্লেষণ ও পর্যবেক্ষণ। আমি একটু ধাক্কা খেলাম। আপনাকে কৃতজ্ঞতা জানানোর ভাষা নাই। কাউকে কাউকে এই কন্সট্রাক্টিভ পরিশ্রমের কাজগুলো করতে হবে। দ্বিতীয় পর্ব দিবেন এটা বিনীত অনুরোধ। এই সিরিজ শেষে আপনার অন্যান্য চিন্তাগুলোও জানতে চাই। আমার বিশ্বাস নতুন চিন্তার খোরাক আপনি জোগাবেন।

সাফিনাজ আরজু এর ছবি

অসাধারণ একটা লেখা। গুরু গুরু
পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।

__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---

অতিথি লেখক এর ছবি

আরও লিখুন ভাই, সবার ভালো করে জানা প্রয়োজন এইসব দাঁতালো শুয়োরদের আসল পরিচয়

-- দাঙ্গাবাজ

ফারজানা এর ছবি

সাইকো মুভিটা দেখার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু আগেই একটা স্পয়লার খেয়ে গেলাম। সিরিয়াস ডিসকাশন চলতেসে জন্য কিছু বলতেসি না। কিন্তু স্পয়লার খাইতে আমি একদম পছন্দ করি না।

ধুসর জলছবি এর ছবি

গুরু গুরু গুরু গুরু

তানিম এহসান এর ছবি

খুব গোছানো আর পরিশ্রমী লেখা। আপনার লেখা নিয়মিত পড়তে চাই। গুরু গুরু

প্রোফেসর হিজিবিজবিজ এর ছবি

পরের পর্বের জন্য বসে আছি। লেখা শেয়ার দিলাম।

____________________________

ফিউসা  এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ সুন্দর লেখাটির জন্য।

ঈয়াসীন এর ছবি

অসম্ভব রকমের গোছানো একটি লেখা পড়লাম, চমৎকার। চলুক। চলুক

------------------------------------------------------------------
মাভৈ, রাতের আঁধার গভীর যত ভোর ততই সন্নিকটে জেনো।

পোকিয়াস_পোকা এর ছবি

হাততালি হাততালি

আয়নামতি এর ছবি

উত্তম জাঝা! কোলাকুলি
লাড্ডুগুড্ডু হইলেও শেষ পর্যন্ত এই পোস্টটা পড়তে পেরে অসম্ভব ভালো লাগলো।
আরোসব অজানা নাড়ীনক্ষত্র জানতে বসে থাকলাম পরের পর্বের জন্য।
আপনি নিয়মিত লিখুন।

কড়িকাঠুরে এর ছবি

অসাধারণ... হাততালি

যাযাবর এর ছবি

ছাগুদের ৩ লাখ না ৩০ লাখের সমুচিত জবাব আছে এখানে।
ভাই, লেখাটা দারুন হচ্ছে। চালিয়ে যান। আমাদের ঠেঙানিতে বাংলা হবে ছাগুমুক্ত।

https://www.facebook.com/photo.php?fbid=495729477207647&set=a.264307610349836.57997.264282527019011&type=1&theater

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।