আমার কোন একটা জিনিস ভালো লাগে এবং সেটা যখন আরেকজনের কান্নার কারণ হয় এবং সে যখন কোন যুক্তি খুঁজে পায়না তার প্রতিবাদ করার, ফলে নীরবে মেনে নিয়ে শুধু জ্বলতে থাকে কুল কাঠের আগুন, আমার ভাল লাগে। কাদের মোল্লার ফাঁসি, বিশ্বজিতের খুনিদের বিচার আমাকে সেই আনন্দ দিচ্ছে, আমি কিছু মানুষের অন্তর্জ্বালা দেখে আপ্লুত হচ্ছি। আসলে, এই অন্তর্জ্বালা শুরু সেই প্রজন্ম চত্বরের আন্দোলনের শুরুর দিন থেকে। তারও অনেক আগেই এই অন্তর্পীড়ন শুরু হওয়ার কথা ছিল কিন্তু হয়নি। বাংলাদেশের আর দশটা মানুষের মত এরাও বিশ্বাস করেছিল এই সরকার শেষ পর্যন্ত যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে খেলাই করবে, খেলার শেষ বাঁশি বাজাবে না। আর তাই এই নিয়ে তাদের খুব বেশি চিন্তিতও দেখা যায়নি, এমন কি যখন কাদের তার দু আঙ্গুল তুলে উপহাস করেছিল এরা আনন্দে আত্মহারা হয়েছিল। আমরা যারা অতি- আশাবাদী মানে জাফর ইকবাল স্যারের মত আশাবাদী তারা হতাশ হয়েছিলাম, ক্ষুব্ধ হয়েছিলাম এবং এই সরকারকে বিশ্বাস করার জন্য নিজেদের ধিক্কার দিয়েছিলাম।
অন্তর্জ্বালার সূত্রপাত এখান থেকেই। কিছু ব্লগারের আন্দোলনের ডাক এবং সবাইকে অবাক করে দিয়ে সারা বাংলাদেশের অভুতপুর্ব সাড়া এদের অথৈ সাগরে ফেলে দেয়। এরা হাবুডুবু খেতে থাকে। কি করবে বুঝে উঠতে পারে না; মানে শ্যাম রাখি না কুল রাখি অবস্থা আর কি। কিন্তু এরা বাংলাদেশের সেই সম্প্রদায় যারা সর্বত্র সুবিধা খুঁজে বেড়ায়। আর তাই নিজেদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে গড্ডলিকায় গা ভাসিয়ে প্রাণের কাদের মোল্লাকে ফাঁসিতে ঝুলাতে তারা শাহবাগে হাজির হয়েছিল এবং আবিষ্কার করেছিল তাদের অন্তরের কোথাও আগুনের সূত্রপাত। তথাপি, সান্ত্বনার কিছু যায়গা তখন খালি ছিল, সরকারকে কষে গালি দেবার একটা ফুরসৎ ছিল। সরকারকে গালি গালাজ করে নিজেদের কাদেরের ফাঁসি চাওয়ার প্রায়শ্চিত্ত এরা করেছিল আত্মাভরে।
আর তখনই কিছু অবতার এদের রক্ষা করতে আবির্ভুত হয় এই শ্যামল বাংলায়। মাহমুদুর, ফরহাদ মাজহার, আন্দালিব এর মত কিছু জ্ঞান পাপী বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিবিদ এদের ত্রাণ কর্তা হিসেবে দেখা দেয় ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলে। এরা হাফ ছেড়ে বাঁচে- কি বাচাই না বেঁচে গেলাম! ভাগ্যিস এই দেশে মাহমুদুর রহমানের মত নির্ভিক সাংবাদিক কিংবা ফরহাদ মাজহারের মত পণ্ডিত যে কিনা সক্রাতিসের চেয়েও জ্ঞানী না হলেও সমকক্ষ এবং আর দুইয়েক দিন পর তাকে ছাড়িয়েই যাবে নিশ্চিত এবং এই প্রজন্মের তরুণদের কাণ্ডারি (তারেক রহমানের অনুপস্থিতিতে) আন্দালিব এসেছিলেন এই পলিমাটির বদ্বীপে।
তারা চাচ্ছিল একটা খড়খুটা, পেয়ে যায় বৃক্ষ এবং সঙ্গে সঙ্গে তাদের ভোল পালটে যায়। কাদের মোল্লার ফাঁসির যায়গায় তারা ব্লগারদের ফাঁসি দিতেই বেশি উদগ্রীব হয়ে ওঠে।
শাহবাগ আন্দোলনকারীরা তাদের কাছে তখন হয় নাস্তিক না হলে লীগের দালাল। হুম, আমরা ফাঁসি চাই তা বলে কি নাস্তিকের হাতে হাত রেখে আন্দোলন করব, আমাদের কি পরকালের ভয় নেই? তাও বা যদিও করতাম কিন্তু এই যে লীগের দালাল এদের সাথে আন্দোলন করি কি করে? এদের হাতে লেগে আছে বিশ্বজিতের রক্ত; বিশ্বজিতের আত্মা কষ্ট পাবে না। এটাও যাক, এই যে নিরপেক্ষ ভেকধারী এরা কি আর নিরপেক্ষ আছে? এরা লীগের পকেটে ঢুকে গেছে না; দেখো এদের ব্যাংকে কত জমা হয়েছে। এরা আসলে সরকারের এজেন্ট। কই দেখেছো, এরা বিশ্বজিত সম্পর্কে কোথাও কিছু বলেছে? সরকারের কোন রূপ বিপদে পড়ুক এরা তা চায় না; বরং এরা সরকারেরই একটা পাখনা আর কি।
কিন্তু ধুপ করে এদের অন্তরে ভিসুভিয়াস জ্বলে ওঠে কাদের মোল্লার যখন ফাঁসি নিশ্চিত হয়ে যায়। যখন তারা জানতে পারে আজকেই কাদের শেষ। তারা এতোই পুড়তে থাকে হিতাহিত জ্ঞান ভুলে যায়; কাঁদবে না কি আগে যেমন সবার সাথে তাল মিলিয়েছিল তেমন মেলাবে বুঝতে পারে না, শুধু জ্বলতে থাকে।
কিছু মানবতার ভেকধারী সংগঠন এবং জাতিসংঘের কিছু কুতুবের অতিরিক্ত বাড়াবাড়িতে এরা সবজান্তা হয়ে যায় এবং বাজাতে থাকে পুরোনো সেই রেকর্ড- “বলেছিলাম নাটক; বলেছিলা কিনা? এই সরকার এটা কখনই করবে না। এটা তত্বাবধায়ক আন্দোলনের দিক থেকে নজর সরাতে সরকারের এক পরিকল্পিত নাটক” । একই সাথে তাদের ভাগ্যাকাশে আবির্ভুত হয় নতুন অবতার রনির বেশ ধরে। তারা পেয়ে যায় নতুন ওহী, মাতম করতে থাকে ফেসবুকে আর ব্লগে –‘এই কাদের সেই কাদের নয় আরও কাদের আছে। এই কাদেরকে মেলানো যাবে না সেই কাদেরের সাথে।’ তারা রবিন্দ্রনাথ ও উচ্ছে দিয়ে নতুন এক ব্যাঞ্জন রাঁধে এবং খেতে থাকে পরম তৃপ্তি ভরে।
এদের অন্তরে আসল পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরিত হয় সরকার যখন সব মানবাধিকার সংগঠনকে ঝেটিয়ে বিদায় করে কাদের মোল্লাকে হুরপরিদের কাছে পাঠিয়ে দেয় যেখানে সে দ্রাক্ষা রসের সাথে উচ্ছে ভাজি আর লইট্টা মাছের ঝোল খেতে পারে অনন্তকাল। এদের আর যাওয়ার যায়গা থাকে না; অন্তর পুড়ে ছাই হয় শুধু। তারা বিড়বিড় করতে থাকে আমরা কি এই জাতিসংঘ চেয়েছিলাম, বানকি মুন কি চাঁদে মানবতা খোঁজে কাদেইরার মত মানুষকে ভুলে গিয়ে? কিন্তু প্রকাশ্যে তারা কিছুই বলতে পারে না; আপনি যা বলবেন তারা শুধু তা আপনার সামনে মেনে নিতে থাকে আর জ্বলে জ্বলে অঙ্গার হয়।
তাদের অন্তরে শেষ গুলিটা প্রবশ করে যখন এই বাকশালী সরকার বিশ্বজিতকে খুনের দায়ে নিজ দলের ২১ জনের কাউকে ফাঁসি কাউকে যাবজ্জীবন দিয়ে দেয়। যারা উঠতে বসতে বিশ্বজিতের নামে জিকির করত তারা বাকরুদ্ধ হয়ে যায়। তাদের ফেসবুক জুড়ে থাকে বিশাল শূন্যতা। তারা কোনরূপ প্রতিক্রিয়া দেখাতে ভুলে যায় যেমন কিছু রাজনৈতিক দল কাদের মোল্লার ফাঁসিতে নীরব থাকায় শ্রেয় মনে করে। মনের অজান্তে তারা স্বগতোক্তি করে -এখন আমরা কি নিয়ে শান্তি খুঁজব? এরা কি আমাদের শান্তির সামান্য জায়গাও রাখবে না। একটু সহানুভূতি কি আমরা পেতে পারি না?’
জাহিদ হায়দার
মন্তব্য
বিশ্বজিতের খুনীদের মৃত্যুদণ্ডের রায়ে জাতিসংঘ, কেরি, ওয়ারসি, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, অ্যামনেস্টি, অধিকার, বিম্পি, জামাত, বামাত সব চুপ। এরকম বাগবিনাশী রায় নিকট অতীতে আগে কোথাও দেখেছি বলে মনে পড়ছে না।
আপনার এই অন্তর্জালার দহন এদেশের প্রতিটি বিপ্লবী মানুষকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে। সাম্রাজ্যবাদের মোড়লদের যখন বিম্পি জামাতের পাশে নির্লজ্জের মত হাসিমুখে দাঁড়াতে দেখি তখন আসলেই মনে হয় একটা বড়ো হাতুড়ি এনে সব গুঁড়িয়ে দেই। এই দেশ আমাদের, তাই আমাদেরই এগিয়ে যেতে হবে নিজস্ব চেতনাকে ধরে রেখে। কোন পাশ্চাত্য শক্তি কিংবা জামায়াত এবং জামায়াতের পেটে ঢুকে যাওয়া বিএনপির দিকে তাকিয়ে হা হুতাশ করে আর যাই হোক এদেশের উন্নতি করা যাবে না।
-- দাঙ্গাবাজ
জ্বলছে যাদের, তাদের জন্য এন্টাসিড
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
আশা ভঙ্গের হতাশায়, বিষাদগ্রস্ত মনে তাহারা এখন নতুন অজুহাত খুঁজায় ব্যস্ত। "একটা নাটকের শেষে নতুন নাটকের অবতারণা হবে" এটাই এখন তাদের ভরসা।
কুন্ঠিত পান্থ
নতুন মন্তব্য করুন