সা লি শ ।। সা গ র র হ মা ন
আতামিয়ার গাঢ়ের রগ ত্যাড়া। সে রগ ত্যাড়া গাঢ় আরেকটু ত্যাড়া করে বললো, আপনেগো সালিশ আমি মানি না।
মনা হিস্ হিস্ করে বললো, তুই এইসব কি কস্? তোর মরণের সাধ হইছে, নাহ্?
এমন সময় ঘটনাটা ঘটল। উপরের বট গাছের থেকে সালিশের মাঝখানে টুপ করে পড়ল একদলা সাদা সাদা পাখির পায়খানা। পড়ে ঘাসের উপর বিচিত্র নকশা তৈরী হলো। আতামিয়া আবার বললো, খালি আমি না। পাখিতেও আপনেগো সালিশ মানে না। আপনেগো সালিশে সে টাট্টি করে। বলে সে থুক্ করে এক দলা থুথু ফেললো মাটিতে।
উপস্থিত জনতার মাঝে একটু খানি হাসির হল্লা উঠল। রুস্তম হুংকার দিয়ে উঠলো, কে হাসে? খায়েশ অইলে সালিশের বাইরে গিয়া হাসেন। সালিশ হাসি তামাশার জায়গা না।
চেয়ারম্যান হাত তুলে রুস্তমকে থামালেন, তুই থাম রুস্তম। হাসুক। হাসনের দরকার আছে। হাসা-হাসি জিনিস খারাপ না।
রুস্তম চুপসে যায়। তার হাতে গব্দা লাঠি। সে মাটিতে লাঠি ঠুঁকে ঘোঁত করে নিঃশ্বাস ফেললো।
চেয়ারম্যান সফিক উল্যাহর মেজাজ-মর্জি আড়ল দিঘীর পানির মতো ঠান্ডা। তিনি তার আধ পাকা চুলে হাত বুলিয়ে বললেন, আতামিয়ার কথায় যুক্তি আছে। এই সালিশ সে না মানলে না মানতে পারে।
লোকজন সব হা হয়ে যায়। কি বলে চেয়ারম্যান সাব? চেয়ারম্যান সাহেব লোকজনের অবাক হওয়া উপভোগ করতে চুপ করে থাকলেন। তার পাশের চেয়ারে বসা হাইস্কুলের হেডমাস্টার জমিয়ত পাটোওয়ারী। তিনি বললেন, চেয়ারম্যান সাব, এটা কি বলেন? তবে আমরা সবে এখানে আসছি ক্যান? এত সবের দরকার কি?
চেয়ারম্যানের গলায় শীতলতা আরো বাড়ে। তিনি বুঝ দেবার ভঙ্গিতে বললেন, রাগ হন ক্যান হেড স্যার। আমাগো কথা আমরা বলছি, আতার না মাননের কথা, সে না মানছে। মামলা ডিস মিস।
সালিশে উপস্থিত লোকজন বিভ্রান্ত হয়ে যায়। আতামিয়ার কোন ভাবান্তর নেই। সে বাঁশের চিকন কঞ্চি দিয়ে ভেতরের দিকের দাঁত খোঁচানোর চেষ্টা করে।
খায়ের মোল্লা ৩নং ওয়ার্ডের মেম্বার। বসেছে চেয়ারম্যান থেকে চার চেয়ার ডানে। চেয়ারম্যানের স্বভাব চরিত্র সম্পর্কে সে ভালই জানে। ঠান্ডা মাথার মানুষ। ঠান্ডা মাথার মানুষের কাম-কাইজের কানুনই আলাদা। সময় মত ঠিকই যা করার করবে, মাঝখানে একটু খেলানো। তবু রাগে তার গাল চুলকাতে থাকে। কাঁচা পাকা গোঁফ দাড়িতে সে ঘ্যাস ঘ্যাস করে চুলকায়। বজর নাপিত্যারে ধইর্যা একটা থাবড়া দেওন দরকার। কি শেভ করায় হারামজাদা, দুই দিনের মাথায় জঙ্গল। ভিড়ের ভিতর সে চোখ বুলায়। বজরকে সে দেখতে পায় ডান দিকের কলের গোড়ায়, পাশের জনের সাথে কানাকানি করে কিছু বলছে আর মুখ লুকিয়ে হাসছে। সবতে আসছে মজা দেখতে। হারামজাদার দল। ইলেকশানের সময় না হলে এসব সালিশ-মালিশের খ্যাত্তা পুড়তাম, আতার মায়েরে বাপ।
খায়ের বুঝতে পারে তার রাগ মাথায় উঠছে। মাথায় উঠানো ঠিক হবে না। মাথা ঠান্ডা রাখা দরকার। ইলেকশানের সময় মান সম্মানটা ইম্পোটের্ন্ট। আগে পাবলিক ভোট দিতো ইস্ত্রি করা পায়জামা-পাঞ্জাবী দেখে। ধব্ধবা সাদা পায়জামা পাঞ্জাবী পরে এক গাল হাসি মুখে গিয়ে দু‘হাত মোসায়েবা করে বলতে হবে, আপনেগো সামনে দাখিল। চড় চাপ্পড় দিলেও দিতারেন, ভোট দিলে বড় জোর আপনেগো খেদমত কইরা বেহেশতে যাইতে পারুম, এই পর্যন্তই। বেহেশতে যাওনের বড় শখ। আমার বাপ মা বেহেশত বাসী হইছেন। তাগো লগে দেখা করনের ইচ্ছা। হুর-টুরের লাইগা না।
লোকটার জামা কাপড়ের সাথে লেগে ধব্ধবা পাঞ্জাবী নষ্ট হবার ভয় না থাকলে কোলাকুলি করে ফেলা যায়। কোলাকুলিতে বেশি ফায়দা। কানে কানে আরো দু এক কথা যোগ করা যায়, যেমন, আপনের সময় নষ্ট করতেছি, এই জন্য শরমিন্দা। সময় থাকলে একটু ভোটের অফিসে যদি পায়ের ধূলা দেন, কিছু খেদমত করি। খেদমত করার সুযোগ দিবেন না আপনের ভাইগ্নারে?
ইলেকশানটা এখন একটু জটিল। কোলাকুলি করেও কাজ হাসিল হবার উপায় কমে আসছে। কোলাকুলির সাথে খেদমতটা অবিশ্যম্ভাবী থাকতে হয়। আগে মিষ্টি মুখে চা পান খাওয়ালেই হতো, এখন- ধরেন মামীর লাইগা পান লইয়া যাইয়েন, বইলেন ভাইগ্না দিছে দোয়ার লাগি বলে হাতে টাকা গুঁজতে হয়।
খায়ের ঠিক করে, মাথা কিছুতেই গরম করা যাবে না। তার এম্নিতেই মাথা গরমের ধাত্। গরমের ধাতে পানি ঢেলে রাখতে হবে। ওম শান্তি ওম শান্তি থাকাটা জরুরী। খুবই জরুরী।
ভিড়ের মধ্যে একটা গুঞ্জন চলতে থাকে। গণহারে চা জাল দেয়া হচ্ছে। দূর থেকে দেখলে মনে হতে পারে কোন ফাংশন চলছে। লোকজন সব লাইন ধরে চা খাচ্ছে। শুধু বিশিষ্ট জনদের সামনে গোল গোল বেলা বিস্কুট পিরিচে রাখা। চেয়ারম্যান বেলা বিস্কুট পছন্দ করেন না বলে তার জন্য চেলি বিস্কুট। হেড স্যারের ইচ্ছে একটা চেলি বিস্কুট খান। হাত বাড়িয়ে নিতে সংকোচ হচ্ছে বলে নিতে পারছেন না। আড়চোখে বিস্কুটের প্লেটের দিকে তাকালেন। আর মাত্র একটা পড়ে আছে। চেয়ারম্যান সাব কি এই বিস্কুট‘টাও খাইয়া ফেলবো? - এই কথাটা হেড স্যারের মাথায় ঘুরতে লাগলো। হঠাৎ তিনি সালিশে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। চেলি বিস্কুটের দিকে আড় চোখ রেখে তিনি অপেক্ষা করতে লাগলেন।
- ঐ কি রে, আতামিয়ার চা কই? সবাই চা খাইতেছ, আতা‘রে দিলা না?
চেয়ারম্যান সাহেবের কথায় গুঞ্জন থমকে গেল। আতা মুখ হতে দাঁত খোঁচানো কঞ্চি বের করে বললো,
- চা খামু না চেয়ারম্যান সাব। রঙ চা খাই না। রঙ চা খাইলে শইলের কালার জ¦ইলা যায়।
এক পশলা হাসির ধমক উঠে। চেয়ারম্যানও হা হা করে হাসেন।
- আতা ভালই রঙ জানে। হা হা হা হা। তুলনাহীন রঙ।
চেয়ারম্যানের সাথে সবাই হা হা করে হাসে। হাসে না কেবল খায়ের মেম্বার। অন্যদিন চেয়ারম্যানের ঢঙ তার ভালই লাগে। সেও তাল দেয় মাঝে মাঝে চেয়ারম্যানের সাথে । এখন তার পিত্তি জ্বলার মত হলো। বুইড়া ধামড়া, চেয়ারম্যানির কচু জানে। চেয়্যারম্যানগিরি বাদ দিয়া তোর করণ দরকার জোকারি। দিলদারের পাট গাইলেই পারে। দিলদার আইছে কোহানকার।
খায়ের মেম্বার প্রাণপণে গলায় উষ্মা লুকানোর চেষ্টা করে বললো, চেয়ারম্যান সাব, বেলা গড়ায়। ঝামেলাটা মিটান লাগে।
চেয়ারম্যান সাব বললেন, মেম্বার সাব, অধৈর্য্য হওনের কিছু নাই। আতা ছেলে খারাপ না। কি রে আতা, তুই ছেলে খারাপ?
আতা সংগে সংগে মাথা নাড়ে,
- জ্বে না। শুধু মাইনষে কয় আমার মাথায় ছিট আছে। তয় চেয়ারম্যান সাব, আমি কিন্তু টের পাই না। কে জানে, থাকলেও থাকতে পারে। মাইনষে কি আর মিছা কইব?
আবারও হাসির রোল উঠে। আতাও হাসে। তার মাঝখানের দাঁত ভাঙা। ভাঙা দাঁতের ভিতর দিয়ে পিচ করে থু থু ফেলে সে ঘাসের উপর।
হেড স্যার ঝুঁকে চেয়ারম্যানের কাপে কতটুকু চা আছে দেখার চেষ্টা করলেন। চায়ের পরিমাণ দেখে আন্দাজ করা যেতে পারে চেলি বিস্কুট টা চেয়ারম্যান সাহেব খাবেন কিনা। চায়ের পরিমাণটা বুঝতে পারলেন না।
রফিক উদ্দিন ইউনিয়ন পরিষদের প্রধান মেম্বার। বয়স্ক মানুষ। খুক খুক করে কাশতে কাশতে বললেন,
- আতা মিয়া, ছিট ফিট যা থাকার থাকুক। কামটা তুমি ভালো কর নাই, এইটা মানো?
- জ্বে না, মানি না।
- গোবর তুমি লেপ নাই বইলতে চাও?
- জ্বে লেপছি। গোবর নিছি শহুল ভাইয়ের গোয়াল তন। শহুল ভাই গোবর জমায় জমিতে দেয়ার লাগি। রাইতের বেলা গোয়ালে গিয়া নিছি। গরুর লাথ্থি খাওনের চান্স আছিল। আপনেগো দোয়া, সমইস্যা হয় নাই।
চেয়ারম্যান সাহেব বললেন, তোমার বুদ্ধির প্রশংসা কইরতে হয় আতা। গোবর নাকি এমন ভাবে লাগছে পানি দিয়া ধুইয়াও উঠাইতে কষ্ট হয়।
- এই কথা সইত্য চেয়ারম্যান সাব। কামটায় বুদ্ধি খরচ করছি। গোয়ালের ভিতর ঢুইকা এক খাবলা গোবর নিয়া পোস্টারে লেপ্টাইয়া দিলেই তো আর অইল না। আমার একটা বিবেচনা আছে।
- গোবরের লগে কি মিশাইছিলা?
- এইটা অইল গিয়া চেয়ারম্যান সাব একটা সিরকেট বিষয়। তয় আপনি চাইলে আপনেরে গোপনে কমু। সবার সামনে কওয়া ঠিক অইব না। খাটা খাটনি আছে। বুদ্ধি খাটাইয়া একটা বিদ্যা বাইর করছি, ফস্ কইরা বলন ঠিক অইব না। ঠিক অইব, কন?
- তা ঠিক কথা। যার যার বিদ্যা , তার তার কাছে রাখন ভালো। তয় ভাইগ্য ভালো, গোবর নিছি লা, আরো খারাপ কিছু নিলে এলাকায় থাকন দায় হইত।
লোকজন আবারো হেসে উঠে। রাগে খায়ের মেম্বারের মুখ আরো প্রচন্ডভাবে চুলকাতে থাকে। সে ঘ্যাঁস ঘ্যাঁস করে চুলকায়। এই সালিশ ডাকন একটা হিজড়ার মতন কাম অইছে। হিজড়া চেয়ারম্যানের হিজড়া সালিশে না আইসা বিষয়টা নিজের মীমাংসার দরকার ছিলো। কাউরে দিয়া নিজের পাছায় একটা লাথি দেওন দরকার। খায়ের মেম্বার সত্যি সত্যিই যেন নিজের পাছায় লাথি দেবার জন্য চারদিকে চোখ ঘুরিয়ে কাউকে খুঁজতে লাগলেন।
- খায়ের সাব, কয়টা পোস্টারে আতা গোবর লেপছিলো বলছেন? লোকজনের হাসাহাসি একটু ভাটা পড়তেই চেয়ারম্যান জিজ্ঞেস করলেন। খায়ের মেম্বার মুখ ভোঁতা করে উত্তর দিলো,
- পুরা কাউন্ট করন যায় নাই। তয় আমার ভাতিজা নিজে ঘুইরা ঘুইরা গুনছে। তেরটা পর্যন্ত সে পাইছে।
আতা বললো, চেয়ারম্যান সাব, গনন ভুল অইছে। সতেরটাতে ঘটনা ঘটাইতে পারছি। গোবর শেষ অইয়া গেছিল। ইচ্ছা ছিল সব গুলায় করণ। একা মানুষের কাম। বেশি আগাইতে পারি নাই।
- আতামিয়া, সতেরর নামতা পারো।
আতা হাত তুলে বললো, জ্বে পারি। নামতা শিখছিলাম বিশের ঘর পর্যন্ত। স্কুলে শিখছিলাম, অখনও ভুলি নাই। নামতা বলমু?
- বাহ। ভালো তো। সব গুলা বলনের দরকার নাই, সতেররটা বলো। একটু সাবধানে বলবা, হেডস্যার সামনে বসা আছেন, ভুল ত্রুটি করন ঠিক অইব না।
- সতেররটা একটু জটিল। তয় ইনশতআল্লাহ, পারুম। স্যার ভুরত্রুটি নিজ গুনে মাপ দিবেন। ধরেন গিয়া, সতেরো একে সতেরো, সতেরো দু গুনে চৌত্রিশ, তিন সতের অইল গিয়া একান্ন...
- বাহ বা। পারতেছ তো। খাড়াও, একটু থাম। হেডস্যার ঠিক আছে না এ পর্যন্ত?
চেয়ারম্যানের কথা-বার্তার লাইন হেডস্যার ধরতে পারছেন না। তিনি চেলি বিস্কুটটার একটা হেস্তনেস্ত হওয়া দরকার ভাবতে ভাবতে বললেন, নামতা ঠিক আছে।
- আতামিয়া, হেডস্যার বলছেন তোমার নামতা ঠিক আছে। তাইলে তো বিচার একেবারে খারাপ হয় নাই, তিন সতের একান্ন, তোমারে একটা কনসেশান দেয়া হইছে। সতেরটা নষ্ট করছ, পাঁচ গুনা করন দরকার ছিলো। তয় তোমার মাথায় একটু ছিট আছে বইলা তোমার লাইগা কনসেশন, মাত্র পঞ্চাশটা। এক বসায় লেইখা ফেলতে পারবা। তোমার হাতের লেখা কেমন?
- জ্বে হাতের লেখা ভালো। গোটা গোটা আছে।
- মাশাল্লাহ, তাইলে তো বেশি ভালো। এই রঙ চা ছাড়া কিছু নাই? আতারে একটা দুধ চা বানাইয়া দাও।
চেয়ারম্যান সাহেব চেলি বিস্কুটের প্লেটের দিকে হাত বাড়ালেন। হেড স্যারের বুক চ্যাঁত করে উঠলো। চেয়ারম্যান সাহেব বিস্কুট নিলেন না, প্লেটের দিকে একটা লাল পিঁপড়া যাচ্ছিল, সেটাকে পিষে মারলেন।
ভিড়ের মধ্য হতে কেউ একজন বলে উঠলো, চেয়ারম্যান সাব, সে তো বলছে এই সালিশ সে মানে না। খায়ের মেম্বার ভিড়ের মধ্যে দেখার চেষ্টা করলেন কথাটা কে বলেছে? বুঝতে পারলেন না। চেয়ারম্যান সাহেব বললেন,
- সালিশ করার কথা কে বললো? আতা পাগলা মানুষ। তার আবার সালিশ কি? না বুইঝা একটা ভুল করছে, তার একটা বিহিত হচ্ছে।
আতা উবু হয়ে বসে ছিল। উঠে দাঁড়িয়ে বললো, চেয়ারম্যান সাব। না বুইঝা করি নাই। মিথ্যা কথা লেখছে, এইটারে গোবর দিয়া লেপা দিলাম। মিছা কথা দেখলে শইলে জ্বালা করে। সইয্য করতে পারি না।
খায়ের মেম্বারের দাঁত কিড়মিড় করে উঠলো। শালার পাগল, কিলায়া পাগলামী ছুটামু, খাড়া, ইলেকশানটা যাক।
রফিক মেম্বার বললো, কোন কথাটা মিছা লেখছে?
আইছে আরেকজন, একবার বিস্তারিত সব শুনছে, আবার বিতং কইরা শুনতে চাইতেছে। শুইনা মশকো করবো। সব হইল গিয়া আমারে ডুবানোর ধান্দা। পাগলের লগে তাল দিতেছে, শালার শালা সব। খায়ের মেম্বারের ইচ্ছে করে চুপ যা ব্যাটা বলে ধমকে উঠে।
আতা রফিক মেম্বারের প্রশ্নের উত্তর দেয়,
- আমি গাঙ থেইকা ডুব দিয়া বাড়িত যাইতে ছিলাম, হঠাৎ নজর কইরা দেখি উত্তর বাড়ীর সামনে রাইসমিলের পাকা ওয়ালে রঙিন কাগজ টানানি। কাছে গিয়া দেখি রফিক মেম্বারের ভোটের পোস্টার। পোস্টারটা পইড়া মাথায় দিল চক্কর। দেখি মেম্বার সাবের নামের আগে ‘জনদরদী‘ আর ‘সমাজসেবক‘ কথা দুইটা লেখা। কইছিলাম না মিছা দেইখলে আমার শইল জ্বালা করে। শইল জ্বলতে শুরু করলো। ফের গিয়া গাঙে ডুব দিলাম। পানির তলায় বইসা চিন্তা কইরা বাহির করলাম, একটা ব্যবস্থা নেওন লাগে। মিছা থাকন ঠিক না। সবতে মিছা পড়বো, মিছা বিশ্বাস করবো।
- সবতে যে তোমারে পাগল কয়, কথা দেখি সইত্য না। চেয়ারম্যান সাব, হের মাথা তো পুরাই ঠান্ডা।
আতার মুখে লজ্জা ফুটে উঠে।
- ঠিক কইছেন মেম্বার সাব। এইটা একটা রটনা। আগে একটু ছিলো। মাশাল্লাহ, দিন দিন উন্নতি করতেছি। মাথা ঠান্ডা হইতেছে। ঠান্ডা হইতে হইতে বেরেইনে কফ্ না বইসা যায়, এইটা নিয়া একটু চিন্তিত। দোয়া রাইখেন।
হেড স্যারের মনে হচ্ছে, চেলি বিস্কুটটা চেয়ারম্যান সাহেব বোধ হয় খাবেন না। খেলে নিশ্চয় এতক্ষনে খেয়ে ফেলত। চেয়ারম্যান সাহেবের হাতে এখনো আগের বিস্কুটের গুঁড়া লেগে আছে। গুঁড়া লাগা হাতে তিনি মুখ মুছলেন। চেলি বিস্কুটের গুঁড়া লেগে রইল থুতনির কাছে। হেড স্যার মুখে চায়ের কাপ তুলে আবার নামিয়ে রাখলেন। কিছু চা রেখে দেয়া দরকার, চেলি বিস্কুট চা ছাড়া জমে না।
রফিক মেম্বার বললো, কিন্তু পোস্টারের কথা দুইটা যে মিছা, তুমি বুঝলা কেমনে?
খায়ের মেম্বারের মনে হচ্ছে আর চুপ করে থাকা ঠিক হচ্ছে না। একটা প্রতিবাদ করার দরকার। এই বুইড়াই মনে হয় এই পাগলরে দিয়া কামটা করাইছে তারে অপমান করানের লাগি। না হইলে এ খোঁচাইয়া এই সব কথা পাগলটারে দিয়া আবার বলাইতেছে কি জন্য? মুখ খিঁচে বসে থাকে খায়ের মেম্বার।
আতা বলে, মেম্বার সাব, মাথা কিঞ্চিত গরম হইলেও আমার স্মরণ মাশাল্লা ভালো। পাঁচ বছর আগে না মেম্বার সাব আগের চেয়ারম্যানের সাথে যুক্তি কইরা গম বেইচা দিছিল গঞ্জে? হেইটা লইয়া মামলা মোকদ্দমাও হইল। অখন আপনেগো বিবেচনায় কন, হেই লোক সমাজসেবক কেমনে হয় আর জনদরদীই বা কেমনে হয়? আমারে বুঝান। বুঝাইতে পারলে গু খাই। দুই কথা বুঝাইবেন, দুই চিলুমচি গু খামু, আল্লার কিরা।
লোকজনের মধ্যে হাসির গমক উঠে। খায়ের মেম্বারের মাথায় রগ ছেঁড়ার মত টং করে রাগ উঠে। মুখে তোতলাতে দাঁড়িয়ে বলে, আতা হারামজাদা, তুই বেশি বাড়ছস। পাগলের ঘরের পাগল। চেয়াম্যান সাব, এইটা কি সালিশ চলতেছে না পাগলের ওয়াজ শুনতে আসছি?
চেয়ারম্যান সাহেব চেয়ারে আড়মোড়া কেটে বললেন, মেম্বার সাব, বসেন। মাথা গরম করন ঠিক না। বসেন। বসেন। আরে আমি আছি না?
- তাই বইলা আমারে সবার সামনে অপমান করব ওই হারামজাদায়?
- আমি দেখতাছি। আপনে বসেন মেম্বার সাব। আতামিয়া, চুপ যাও। কথা যা বলার বলছ। অখন মন দিয়া শুন।
খায়ের মেম্বার বসে পড়ে। চেয়ারম্যান সাহেব আবার বলেন, আতা মিয়া। সামনে আগায়া আসো। জমায়েতের মাঝখানে আসি দাঁড়াও।
আতার ঘাড় আবার বাঁকা হতে থাকে। সে বলে, চেয়ারম্যান সাব, মাঝখানে গেলে পাখিতে ঘটনা ঘটানোর সম্ভাবনা আছে। হে গো স্বভাব খারাপ।
পাশ থেকে মনা চাপা স্বরে বলে, আতা সামনে যা। মুরুব্বীর সামনে বেয়াদবী করস। তোর মরণ ঘনাইছে।
আতা লোকজনের মাঝখানে গিয়া দাঁড়ায়। তার মাথায় খাজুলি বিচি। বিচি চুলকাচ্ছে। সে দাঁড়িয়ে মাথার বিচি চুলকাতে লাগলো। চেয়ারম্যান সাহেবের গলা ভারী হয়,
- আতা মিয়া। সালিশ তুমি না মানছ, এইটা দোষের কিছু না। তোমার না মাননের রাইট আছে। রাইট পাইছ। পাইছ না?
- জ্বে চেয়ারম্যান সাব। পাইছি। আপনেগো বিবেচনা ভালো।
- কিন্তু দেখতেছো সব মুরুব্বীরা আসছে তোমার সাথে ফয়সালা করনের লাগি?
- এই বিষয়টা নিয়ে একটু শরমিন্দা আছি চেয়ারম্যান সাব। আমার লাইগা সকলের কষ্ট।
- এই তো কথা বুঝছ। ভেরী গুড বুঝছ। অখন ময় মুরুব্বীর কথা তো শুনা লাগে।
- জ্বে একশ বার শুনমু। মুরুব্বীর কথা অমান্য করুম এমন শিক্ষা আমি পাই নাই। আমি ফাইভ পাশ দিছিলাম।
- ফাইভ পাশ খারাপ না। ভালো। তাইলে আর কথা না বাড়াইয়া কাগজ কয়খান লেইখা ফেল। খাড়াও, তোমার লাইগা আরো একটা কনসেশান আছে। গরীব মানুষ, কাগজ কলম কই পাইবা?
- এই কথাটা ঠিক ধরছেন। কাগজ কলম নাই আমার কাছে। একটা পুরান খাতা আছিল ঘরে, হাতের লেখা মশক করি মাঝে মাঝে। চা খাইতে গেছিলাম। মশা উড়তেছিল কানের কাছে। দিলাম থাপ্পড়। শালার মশা থাপ্পড় খাইলো না। খাইলাম আমি। ফস্ কইরা চায়ের কাপ গেল ঢালা। পুরা খাতা নষ্ট।
- মশার লগে তো পারবা না। ফেরাউনেই পারে নাই। তুমি কেমনে পারবা? যাউগ্গা। কথাটা শুন। আমি খায়ের সাহেবরে বইলা তোমার লাইগা আড়াই দিস্তা কাগজ আর একটা লাল কালির কলম ব্যবস্থা কইরা দিতাছি। পঞ্চাশটা লিখবা, বাকি কাগজ তোমার। হাতের লেখা মশকো করবা। পোস্টারের মত কইরা বড় বড় কইরা লিখবা, আমি ভুল করেছি। খায়ের মেম্বার মানুষ ভালো। তাকে ভোট দিন। বানান শুদ্ধ কইরা লিখবা। একটা দোষ করছ, মুরুব্বীরা তোমারে সেনেহ কইরা অল্পের উপর শাস্তি দিতেছে। এইটা শাস্তিও না। ধইরা নাও, তোমার হাতের লেখা সুন্দর করনের একটা সুযোগ। তারপর যেখানে যেখানে গোবর লেপছো, সেইখানে সেইখানে লাগাইয়া দিবা। আর ভোটের সময়ও খায়ের সাবের কথা মনে রাখবা। খায়ের সাবে তোমারে মাপ কইরা দিব। মামলা ডিসমিস।
- চেয়ারম্যান সাব। মামলা ডিসমিস কেমনে হয়? মিছা লিখতে কন আমারে? শইল জ্বালা ধরবো আমার। হাতেও কুষ্ঠ হইতে পারে।
চেয়াম্যানের চোয়াল শক্ত হয়।
- তাইলে তুমি সালিশের কথা মানবাই না।
- অবশ্যই মানুম। মানুম না ক্যান, কন? পাগল বইলা আমার একটা বিবেচনা নাই? তয় এই বিচার মানতে পারুম না চেয়ারম্যান সাব। শইলের জ্বালায় বড় যন্ত্রণা হয়। অন্য কিছু শাস্তি দিতারেন। বিবেচনা করি।
খায়ের মেম্বার নিশ্চিত হয়, কামটা ভাল হয় নাই। এত ভাল মানুষ সাইজা সালিশ ডাকনের কিছু ছিল না। হারামজাদারে ধইরা পোস্টার তনে গোবর চাটাইয়া চাটাইয়া খাওয়ানোর দরকার ছিলো। জন্মের সিধা হইত। হারামজাদা পাগলতো না-ই, কারো ট্যাকা খাইয়া আমারে অসম্মানের লাগি কাম করতেছে। তার হাতের আস্তিন আপনা আপনিই গুটিয়ে আসে। কিলিয়ে কাঁঠাল পাকানোর জন্য তার হাত নিশপিশ করতে থাকে। খায়ের মেম্বারের ভারী স্বাস্থ্য। তার শরীর এই অগ্রহায়নের শেষাশেষিতেও ঘামিয়ে যায়।
চেলি বিস্কুটের দিকে আরো একটা লাল পিঁপড়া রওনা হয়। হেড স্যার ঝট করে পিরিচটা তার দিকে একটু টেনে রাখলেন। চেয়ারম্যান সাহেব চাপা স্বরে তাকে বলেন, চেলি বিস্কুটের দিকে ঝোঁকটা দেখছেন? বিস্কুটটা ভালো। পিঁপড়ারা ভালো জিনিস চিনে তাড়াতাড়ি। বলে তিনি চায়ে চুমুক দেন। সুড়ৎ করে একটা শব্দ হয়। হেডস্যার ভেবে পান না, এই লোকের চা শেষ হয় না ক্যান। চা শেষ মানে বিস্কুট খাওনও শেষ। তখন ব্যাপারটা দাঁড়াবে,চায়েরম্যানের সাহেবের চা খাওয়া শেষ হইলো, বিস্কুটটা পড়ে থাকলো পিরিচে, তিনি চায়ে ডুবায়ে খাওয়ার জন্য বিস্কুটটা তুলে নিলেন।
চেয়ারম্যান সাহেব চায়ের কাপ টেবিলে রেখে বললেন, আতামিয়া, এই শাস্তি যখন তোমার মনে ধরে নাই, আরেকটা শাস্তি বিবেচনায় আছে। ছিটগ্রস্থ লোকের জন্য শাস্তিটা খারাপ না। কষ্ট কম। পঞ্চাশটা পোস্টার লেখাও ম্যালা দিগদারী।
সালিশের লোকজন নড়ে চড়ে বসে। আতা আগ্রহ নিয়ে বলে, শাস্তিটা বলেন। বিবেচনা করি।
- তোমার পরনের লুঙিটার কালার ভালো। কত দিয়া খরিদ করছো?
- হে হে চেয়ারম্যান সাব। জোবেদের দোকান তনে খরিদ করছি। দাম ছিলো, সত্তইর। আমি বলছি, তোমার ক্ষেতে দুই দিন কাম কইরা দিমু। ট্যাকা পয়সার দেওনের দরকার নাই, একটা লুঙি দিবা। বুদ্ধি কইরা কইছিলাম। জোবেদ রাজী হইল। দুই দিনের কামলার ট্যাকা হইল ষাইট। দশ ট্যাকা কমে জিনিস পাইয়া গেলাম। হে হে । বুলু কালার কিনছি। বুলু কালারে আমারে ফুটে ভালো।
- হ, ভালো ফুটছে। অখন লুঙিটা খোল। ডরের কিছু নাই। লুঙি রুস্তমের কাছে থাকবো। কেউ নিবো না। লুঙিটা খুইলা হাটের ভিতর দিয়া হাইটা যাইবা। না থাক। হাটনের দরকার নাই। দৌড়াইয়া যাইবা। এই মাথা হইতে ঐ মাথা, মামলা ডিসমিস হইব। বহুত দিরং হইছে। আর না।
- কি কন? ন্যাঙটা হাটুম?
- হাটতে তো কইনাই। দৌড়াইবা। রুস্তম তোমার লগে লগে থাকবো। ডরাইয়ো না, হের হাতে লাঠি। কেউ তোমারে কিছু কইব না। পাগলের জন্য শাস্তি হিসেবে এইটা শাস্তিই না। কয়দিন পর এমনিতেই লুঙি খুইলা হাটবা। আগে থেইকা একটু প্র্যাকটিস থাকলো। বুঝলা না?
পুরো সালিশের লোকজন হঠাৎ থমকে যায়। একটা নিস্তব্ধতা থম্ মেরে থাকে হাটের পাশের এই অশ্বত্থ তলায়।
চেয়ারম্যান আবার বলেন, শাস্তি কেমন?
আতার পাশে ঝট্ করে উটে আসে মনা। সে তার পিঠে মৃদু ধাক্কা দিয়ে বলে, আতা, অখখনও খাড়ায়া আছস? মাপ চাইয়া পোস্টার লেখনের শাস্তি লইয়া ল। পাও ধইরা মাপ চা হারামজাদা।
আতা ফোৎ করে নাক ঝাড়ে। গাঢ় বাঁকা করে বলে, কার কাছে মাপ চামু মনা ভাই? দোষ তো কিছু করি নাই।
চেয়ারম্যান সাহেব বলেন, মাপামাপির টাইম শেষ। অখন একশনের টাইম। তিন দান খেলন আমার স্বভাব না। দুই দান খেইল্যা ফেলছি। পরথম দান সে চালছে, দ্বিতীয় দান আমি চাললাম। চালাচালি শেষ। আতামিয়া, শাস্তিটা কি খারাপ হইছে?
আতা বলে, জ্বে না, শাস্তির ব্যবস্থা ভালো। মিছা কথা লেখনের থাইক্যা ভালো।
মনা আবার বলে, তুই পুরাই পাগল হইছস। পোস্টার লেখতে পারবি না হারামজাদা, ন্যাঙটা হাঁটবি? যা, হাঁট, ন্যাঙটা হাঁট।
আতা হাসে, হাঁটতে তো কয় নাই মনা ভাই। দৌড় দেওনের সুযোগ দিছে। জানা শুইনা মিছা কথা সইয্য করনের চে ন্যাঙটা হাঁটন ভালো না? লুঙির তলে সবতেই তো ন্যাঙটা।
চেয়ারম্যান সাহেব হাই তুলতে তুলতে বলেন, তাইলে আর দেরীর কি দরকার? কার্যক্রম শুরু হোক, আপনেরা সকলে কি বলেন?
লোকজনের মাঝে একটা গুঞ্জন উঠে। রফিক মেম্বার বলে, হ, শাস্তি ঠিক আছে। একটা দিষ্টান্তমূলক শাস্তি হইব। এমন সাহস আর কারো হইব না। খায়ের সাব, বিচারে খুশি তো।
খায়ের মেম্বারের দাঁড়িয়ে বলে, জ্বে, আপনেগো মুরুব্বীর বিবেচনা, ফাযিলটা একটা শিক্ষা পাইব এইটাই বড় কথা।
আতা বলে, মেম্বার সাব, শাস্তিটা আমারও পছন্দ হইছে। তয় আপনের কাছে আমার একটা আর্জি আছে?
খায়ের মেম্বার প্রায় গর্জন করে উঠে, কিসের আর্জি?
আতা তার বুলু লুঙির গিঁটে হাত দেয়। হাসতে হাসতে বলে, আপনের নাম দিয়া একটা সুল্লুক মিলাইছি। দু লাইনের সুল্লুক। ন্যাঙটা হইয়া দৌড়াইতে দৌড়াইতে সুল্লুকটা আমি বলমু। আপনের অনুমতি চাই।
হারামজাদায় আবার কি যন্ত্রণা পাকাইছে। খায়ের মেম্বার রাগে আতার দিকে দুই পা এগিয়ে আসে। ঘুসি পাকাইয়া বলে, কিয়ের সুল্লুক?
আতার হাসি বিস্তৃত হয়। মুখ ভরা হাসি নিয়ে বলে, সুল্লুকটা আপনেও আমার লগে গাইতে পারেন। সহজ। হাত উঠাইয়া শোলগানের মতো কইবেন, গম চুরা খায়ের সাব, ভোটের লাগি ডাকছে বাপ। চিল্লাইয়া চিল্লাইয়া কইবেন।
খায়ের মেম্বার লাফ দিয়ে আতাকে ধরতে যায়। আতা নিজের লুঙি খুলে ততক্ষণে মাথায় বেঁধে ফেলেছে। সে খিল খিল করে সুল্লক বলতে বলতে ভরা সালিশের মাঝখান দিয়ে হাটের দিকে ছুট লাগায়। পেছন পেছন খায়ের মেম্বার অকথ্য গালিগালাজ করতে করতে ছুটেন। ভারী শরীর নিয়ে বেচারা হুমড়ি খেয়ে পড়েন একটা চেয়ারে। চেয়ারের কানায় তার লুঙি লেগে ঘ্যাচঁ করে গিঁট খুলে যায়। সালিশের মাঝখানে ফিনফিনে দামী লুঙি তার হাঁটু বেয়ে নিচে পড়ে যায়। কিন্তু সে দিকে তার খেয়াল নেই কোন। তিনি হারামজাদাটারে মাটিতে পুঁতে ফেলার জন্য ছুটতে থাকেন। আতার অনাহারী হালকা পাতলা শরীর পলকে বাতাস কেটে হাটের মাঝখান দিয়ে দৌড়াতে থাকে। চোখে ঠাওর করার আগে সে নাই হয়ে যায়, পেছনে আড়াই মন ওজনের খায়ের মেম্বার হাঁপাতে হাঁপাতে হুমড়ি খেয়ে পড়তে পড়তে দৌড়ান। তার পেছন পেছন দৌড়ায় রুস্তম। তার হাতে খায়ের মেম্বারের লুঙি। সে বলতে থাকে, মেম্বার সাব, খাড়ান, আপনের ন্যাঙটা দেখা যায়।
প্রথম ন্যাঙটা শরীরটি চোখে ধরা পড়ার আগেই সাঁই করে মিলিয়ে যায়। যেন চোখে ধাঁধা লাগিয়ে সেটি দৌড়ায়। দ্বিতীয়টি বিকেলের মরা আলোয় ন্যাঙচাতে ন্যাঙচাতে ভরা হাটের মানুষের চোখে ফুটতে থাকে, ক্রমশ বেশি করে।
চেলি বিস্কুটের পিরিচের দিকে এক দল লাল পিঁপড়া রওনা হয়েছে। চেয়ারম্যান সেটা দেখলেন। তিনি পিরিচটি হেডস্যারের দিকে সরিয়ে বললেন, হেড স্যার, আমার চা শেষ। আপনে বিস্কুটটা খাইয়া ফেলান, চা দিয়া ডুবাইয়া খান। মজা পাইবেন। চা দিয়া চেলি বিস্কুটের সোয়াদই আলাদা।
হেডস্যার কিছু বললেন না। তার বিস্কুটটি কেন জানি আর খেতে ইচ্ছে করছে না।
মার্চ ২০১৩
-০-
মন্তব্য
আপনি এত কম লেখেন কেন? সেই কবে ১৪/০৭/২০১৩ তে লিখেছিলেন একটি অসাধারণ অমৌলিক গল্প। তারপর আর দেখা নেই!!!
আপনার লেখার হাত এত সুন্দর, আর আপনি এত গ্যাপ দিয়ে লেখেন এটা মানা যায় না। নিয়মিত লিখুন।
এবার গল্প প্রসঙ্গে - আগাগোড়া দারুন একটা গল্প হয়েছে, যেমন ঠাসবুনোট, তেমনি বলার ভঙ্গিমা। শুধু শেষে এসে খায়ের মেম্বারের ন্যাংটো (এই বানানটাই আমার ভালো লাগে) হয়েও টের না পাওয়াটা অবাস্তব মনে হয়েছে। এই দৃশ্যকল্পটা আপনি প্রতীকী হিসেবে দেখাতে চেয়েছেন, কিন্তু খায়ের মেম্বারের যেরকম চরিত্র চিত্রণ করেছেন তাতে করে হাটের মাঝে লুঙ্গি খুলে গেলেও সে টের না পেয়ে দৌড়াতে থাকবে বলে মনে হয়নি।
চেলি বিস্কুটের অনুষঙ্গটা জম্পেশ হয়েছে।
____________________________
প্রোফেসর সাহেব, আপনি আমার পুরনো গল্পটির কথা এমন করে মনে রেখেছেন দেখে যারপরনাই আনন্দিত হলাম। আপনার প্রতি কৃতজ্ঞতা। প্রশংসা বাক্য সমূহের জন্যও ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
গল্প প্রসংগে আপনার অকপট কথা গুলো মনে রাখলাম, আরো নিবিড় পাঠ করে চেষ্টা করবো যদি কিছু করতে পারি।
গ্যাপ দিয়ে লিখি কারণ,
আমি অতিথি এখানে, লিখে প্রকাশ হবে কিনা এ অপেক্ষা আমার খুব যন্ত্রণা দায়ক মনে হয়, হা হা হা (কিন্তু সত্যি), তার উপর আমার লেখা সব গল্পই এত বড় সাইজের, মানে দেখুন না, শুধু মাত্র সাইজ দেখেই লোকজন পড়লেন না মনে হয়, কাকে দোষ দিবো, অনলাইনে আমিও প্রায় তাই করি। আপনার মতো সৎ পাঠক আমরা খুব জনই আছে সত্যি।
আপনার প্রতি আমি আবারও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। ভাল থাকেবন।।।।।।। সাগর রহমান
না লিখলে হাচল হবেন কিভাবে? আপনি যখন প্রথম গল্পটা লেখেন, তখন এক লহমা, আমি সাক্ষী সত্যানন্দদা, গান্ধর্বী সহ আমরা বেশ কয়েকজন অতিথি লেখক ছিলাম। আপনি নিয়মিত লিখলে খুব দ্রুত হাচল হয়ে যাবেন, কারণ এখানে লেখার মানই একমাত্র বিবেচ্য বিষয়।
আর গল্প বড় হলে তো ক্ষতি নেই - বরং টানটান গল্প তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে গেলে মনে হোয়, যা: ফুরিয়ে গেলো!! তবু যদি আপনার কাছে বড় মনে হয়, ভেঙে ভেঙে দুই/তিনটি পর্বে লিখতে পারেন!
____________________________
জবরদস্ত হইচ্চে
উপরে প্রোফেসর হিজবিজবিজ-এর মন্তব্যর সাথে সহমত।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
ধন্যবাদ এক লহমা। কৃতজ্ঞতা জানবেন।
- সাগর রহমান ( নাম লিখছি কেননা আমি যে উত্তর দিলাম সেটা সচল বুঝবে কি করে, আমার নামতো নিল না কোথাও, নাহ, সচলের কর্মকান্ড বুঝতে পারছি না এখনো।)
এখানে দেখুন
আরো জানতে এখানে দেখতে পারেন।
____________________________
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
ধন্যবাদ সাক্ষী সত্যানন্দ। ভাল থাকবেন।
বাহ চমৎকার লিখেছেন। রাজনৈতিক ডামাডোলে চাপা পড়ে গেল। আপনার লেখার হাত চমৎকার আপনি আরও নিয়মিত লিখবেন আশা করি।
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
আরও লিখুন প্লিজ।
__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---
অত্যন্ত সুন্দর একটা লিখা
নতুন মন্তব্য করুন