রাঙামাটি ভ্রমণের এই সময়টাতে অজানা অনেক কিছু দেখবার যেমন আনন্দ ছিল তেমনি ছিল কোন এক বিকেলের কিছু সময়ের দুঃখ মাখা স্মৃতি। সুখের মুহূর্ত মানুষ ভুলে যাই কিন্ত দুঃখবহ স্মৃতি কেবলই তাড়া করে ফেরে। সেবারের এই স্মৃতি কটু যাত্রায় আমার সাথে ছিল আমার সাড়ে তিন বছরের ছেলে, স্ত্রী আর দু একজন নিকটজন। আমাদের গন্তব্য শুভলং ঝর্ণার সাথে কিছুক্ষণ দেখা করা তারপর তার বুক চিরে বের হওয়া পানি গায়ে ছিটিয়ে ফিরে আসা।
সেদিনের ওই বিকেলটা ছিল বেশ পরিষ্কার অনেকটাই মেঘমুক্ত। দুপুরে খাবার পরই আমরা আর দেরী না করেই তাই রওনা দিলাম ঝর্ণার কাছে । সবাই বেশ আনন্দের সাথেই রওনা হল কারণ এই ঝর্ণার কথা আমরা শুনেছি অনেক। তাই খুব বেশী দেরী না করে বেশ আগ্রহ ভরে ছুটে যাওয়া। কিন্তু কাছে গিয়ে আমরা সবাই হতাশ। অনেক প্রত্যাশার পরে প্রাপ্তি কমে গেলে তখন যেমন হতাশা ভর করে আমাদের ক্ষেত্রেও ঘটলো তাই। ঝর্ণা আছে, চারপাশ জুড়ে ভিড় করা দর্শনার্থীরাও কম না শুধু কমে গেছে ওই ঝর্ণার পানি।
অক্টোবরের মাঝামাঝিতে বৃষ্টি এখানে অনেকটা কমে আসে আর তাই ঝর্ণার পানির এই কৃচ্ছতা সাধন। সবার মাঝেই একটা দীর্ঘশ্বাস কারণ এর পানিতে ছুঁয়ে যাবার ইচ্ছা সবারই প্রবল। অনন্যোপায় হয়ে সবাই কিছু সময় খরচ করে কয়েকটা নানান ভঙ্গির পোজ দিয়ে ছবি তুলে তৎক্ষণাৎ ফিরে আসার প্রস্তুতি নিয়ে স্পীড বোটে রওনা দিলাম। বিকাল তখন গড়িয়ে অনেকটা গোধূলির দিকে ধাবমান। বোটে চালক সহ আমরা ছজন। খালের চারপাশ অনেকটা শান্ত, আকাশে খানিকটা মেঘের আনাগোনা। শুভলং থেকে রাঙামাটি যাবার সময় এই দৃশ্য বেশ পরিচিত। এই মেঘ আবার কিছুক্ষণ পরই রোদের হাসি।
তবে সেদিন আর রোদ হাসেনি শুধু একটু বাতাসে সামান্য ঢেউ দোলা দিয়ে আবার চলে যাচ্ছে। আমরা সেই ঢেউ খেয়ে অনেকটাই আন্দোলিত ও পুলকিত বোধ করছি। আমার ছোট্ট ছেলেটি পানি দেখলেই বলে ‘এখানে গোসল করবা’ -সেই সাথে একটা ছোট্ট টান দিয়ে তার আবদার শেষ করে। এবারও তার ব্যতিক্রম হলনা তবে বরাবরের মতই একটা নেতিবাচক উত্তর দিয়ে তাকে শান্ত করা হল। আমাদের বোট বেশ ভালোভাবেই চলছে। চালকের সাথে দুইটা প্লাস্টিকের কৌটা ভর্তি অকটেন যার একটি রাঙামাটি ঘাটে এসেই শেষ হবার কথা।
আমরা বিশাল প্রকৃতি, পাহাড়ে ঘেরা বিশাল খালের পাড় হঠাৎ শুরু হওয়া গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি উপভোগ করছি। ক্যামেরাই ছবি তোলা চলছে সেই সাথে ছোট ছোট ঢেউয়ের ছিটকে পড়া পানিতে চলছে অনাকাঙ্ক্ষিত জলকেলি। ঢেউয়ের প্রথম দু চার ঝাঁপটাই আমরা এটাকে বেশ আনন্দের সাথেই নিয়েছি কারণ পাহাড়ের মাঝ দিয়ে যেতে যেতে ছবি তোলার সেই ব্যস্ততায় এর অপেক্ষমাণ পরবর্তী বিশালতা তখনও অতটা আঁচ করতে পারিনি। কিছুদূর যেতেই আমাদের চারপাশের পাহাড় সরে গিয়ে দেখতে পেলাম বিশাল জলাশয়ের উপস্থিতি। চারপাশে শুধু পানি আর পানি।
বৃষ্টি বাড়ছে, আছে বাতাসের চাপ সেই সাথে বাড়ছে দানবীয় সব ঢেউ। মুহূর্তেই আমাদের সবার মুখের রং যেন পরিবর্তন হয়ে গেল, আনন্দের মাঝখানে কেমন জানি বিষাদের মাত্রা আর হঠাৎ এমন পরিস্থিতিতে একটা অজানা আতঙ্ক সবাইকে গ্রাস করে ফেললো। চারপাশে তাকিয়ে নৌকা আর ট্রলারের উপস্থিতি আশঙ্কাজনক ভাবেই হ্রাস পেতে দেখলাম। নৌকা দেখা না গেলেও রাঙামাটি শহর খুব ক্ষীণভাবে তখনও দৃশ্যমান। বোঝা যাচ্ছে তীরে উঠতে আরও মিনিট বিশেকের মত পথ এখনও পাড়ি দেয়া বাকী।
ঢেউ ক্রমেই বাড়ছে, বাড়ছে উৎকণ্ঠা। আমার একবার পদ্মার বুকের লঞ্চে এই অভিজ্ঞতা কিছুটা হলেও বাকী সবাই এই পরিস্থিতিতে নতুন। আর অজানা পরিস্থিতি নতুনভাবে মোকাবেলা করা আসলেই বেশ কঠিন। এই কঠিন সময়ে আমার সামনের চেয়ারে আমার স্ত্রী তার কোলে আমার ছোট্ট ছেলে পাশেই আমার ছোট ভাই ও বোন। আমি সবাইকে খুব শক্ত করে স্থির হয়ে বসে থাকতে বললাম। ঢেউ কখনো সামনে দিয়ে কখনো পাশ দিয়ে যেন ঠেলে আমাদের সবাইকে ছিটকে ফেলে দিতে চাই। একবার ডানে একবার বামে আমরা যেন বোট নিয়ে উল্টে যাচ্ছি।
এমন সময় বোট চালক বলল যে তার এক বোতল তেল প্রায় শেষের দিকে খুব দ্রুত তেল না ভরলে স্টার্ট বন্ধ হয়ে যাবে। খুব আশ্চর্য হলাম কারণ তেল একেবারে শেষ গন্তব্যে শেষ হবার কথা। যাহোক এবার তেল পরিবর্তনের পালা। হেল্পার নেই তাই আমাকেই করতে হবে এ কাজ। কিন্তু অকটেনের ওপর বোতলের ছিপি বৃষ্টিতে বেশ পিচ্ছিল হয়ে গেছে তাই কিছুতেই খুলছে না। এদিকে তেল প্রায় শেষ। আমার ধ্যান এখন স্টার্ট আর তেল পরিবর্তনের দিকে। আমার সামনের আতঙ্কিত মানুষদের আমি কয়েক মুহূর্তের জন্য যেন ভুলে গেলাম।
অনেক চেষ্টার পর ছিপি খুলে আমি তেলের পাইপ প্লাস্টিকের ভেতরে প্রবেশ করালাম। অকটেন বাহিত ইঞ্জিন প্রাণ হারিয়েও আবার যেন সতেজ হয়ে উঠলো। কিন্তু আমাদের প্রাণ তখনও নিস্তেজ। আমার স্ত্রী ছেলেটিকে কোলে নিয়ে নীরবে অশ্রু বিসর্জন দিয়ে চলেছে আর বোটে থাকা অপর প্রাণীরাও আতংকে যেন শেষ মুহূর্তের প্রার্থনায় রত। কেন জানিনা কোন এক সময় মনে হচ্ছিল সত্যি বুঝি তলিয়ে যাবো এই সাগর সম খালের বুকে। সাতরে ওপারে উঠতে পারবো কিনা জানিনা তবে আমার ছেলে আর ছোট ভাইটির জন্য বেশ চিন্তা হচ্ছিল। এরা দুজনই কেবল সাতার জানেনা। বাকীরা হয়তো পারবে তবে এই দুজনের কি হবে সেটাই আমার সেই মুহূর্তের জন্য একমাত্র চিন্তা হয়ে দাঁড়ালো।আমি ওদের দিকে খুব একটা তাকাতে পারছিলাম না কারণ তেলের পাইপটি আমি নিজ হাত দিয়ে পাহারা দিচ্ছি পাছে আবার খুলে গিয়ে স্টার্ট বন্ধ হয়। তখন আমার লক্ষ্য একটাই আর তা হল স্টার্ট চালু রাখা কারণ বন্ধ হলেই তখন বোটের নিয়ন্ত্রণ চলে যাবে ঢেউয়ের হাতে। আর সেটা হলেই ডুবে যাবো আমরা সবাই।
যাহোক স্টার্ট আর বন্ধ হয়নি তবে বন্ধ হবার উপক্রম হয়েছে আমাদের নিঃশ্বাস। ওই সময় আমার পায়ের জুতা খোলার চেষ্টা করেও পারিনি কারণ আমার দু হাত তখন তেলের বোতলের ওপর পাইপ আটকে রেখেছে। অনেকবার মনে হয়েছে এই বুঝি ডুবে যাবো। কখনো আবার পাড়ে ভিড়িয়ে পরে যাবার পরিকল্পনাও করেছি যদিও সে আশা তখন কেবলই স্বপ্ন কারণ পাড় যেন অদৃশ্য তখন। তবে একাগ্র চিত্তে তখন একটাই কামনা যেন এর মাঝেও তীরে ভিড়ি । অন্তত এই যাত্রায় বাঁচতে পারি আমরা সবাই। কিন্তু তীর যেন সহস্র মাইল দূরে তখন। ভয় আরও বাড়ল যখন পাশ থেকে একটা ট্রলারকে মনে হচ্ছিল এই বুঝি ডুবে যাই। আমি সবাইকে লাইভ সেভিং জ্যাকেট পরতে বললাম যদিও এর সংখ্যা ছিল অপ্রতুল।
বৃষ্টি কমেনি সেদিন সেটা ক্রমেই বেড়েছে, ঢেউ থামেনি বরং আমাদের বোট তার সংগ্রামে জয়ী হয়ে ঢেউকে হার মানিয়ে তীরে ঠিকই পৌঁছেছে। আমরাও ছেড়েছি শেষ সময়ে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস। কিন্তু রাঙামাটির এই খালের ওপরে আমাদের রেখে যাওয়া কিছু সময়ের স্মৃতি এক দুঃসহ কয়েক শত ঘণ্টার দুর্বিষহ মুহূর্ত হয়ে থেকে যাবে। এরপর আমি চড়েছি বোটে ঘুরেছি রাঙামাটির অনেক খানেই। কিন্তু পানিপথে এই লাল পাহাড়ে যাত্রা আমার পরিবারের কাছে যেন এখনও এক মূর্তিমান আতংক। জানিনা এই খালে তারা আর কখনো যেতে চাইবে কিনা !
নৌপথে যাবার সময় দু একটি পরামর্শ যা আমি আরও দু একজন ভুক্তভোগীর কাছ থেকে শুনেছি । আমার এই ঘটনার পর আমি পরামর্শ গুলো এখনও মেনে চলিঃ
১। লঞ্চে বা স্পীড বোটে চলার সময় লাইভ সেভিং জ্যাকেট পরে তারপর রওনা দেয়া। অনেক সময় জ্যাকেট থাকলেও আমরা তা পরিনা যেটা নেহাত বোকামি ছাড়া কিছু না।
২। যাত্রার সময় সু এবং মোজা খুলে তারপর ওঠা। ডুবে যাবার পর এগুলো ভারী হয়ে যাই তখন ভেসে ওঠা খুব কঠিন হয়ে পড়ে।
৩। এই ধরনের ঢেউ বা স্রোতের মুখোমুখি হলে যখন মনে হবে নৌকা বা ট্রলার উল্টে যাবে তখন গায়ের কাপড় সম্ভব হলে খুলে ফেলে তারপর পানিতে ঝাপ দেয়া।
অমি_বন্যা
রাঙামাটি নিয়ে অন্যান্য লেখা
১। http://www.sachalayatan.com/guest_writer/50537#comment-613011
২। http://www.sachalayatan.com/guest_writer/50616#comment-614617
৩। http://www.sachalayatan.com/guest_writer/50843
৪। http://www.sachalayatan.com/guest_writer/51014
আইভরি কোস্ট নিয়ে আমার লেখা
১। http://www.sachalayatan.com/taxonomy/term/15449
২। http://www.sachalayatan.com/guest_writer/46302
৩। http://www.sachalayatan.com/guest_writer/47462
৪। http://www.sachalayatan.com/guest_writer/45337
৫। http://www.sachalayatan.com/guest_writer/46795
৬। http://www.sachalayatan.com/guest_writer/45569
৭। http://www.sachalayatan.com/guest_writer/45222
৮। http://www.sachalayatan.com/guest_writer/45698
৯। http://www.sachalayatan.com/guest_writer/47017
১০। http://www.sachalayatan.com/guest_writer/47388
ঘানা নিয়ে আমার লেখা
মন্তব্য
পরামর্শগুলো কাজে লাগবে।
পরামর্শগুলো কিছু ভুক্তভোগী আর আমার কিছু অভিজ্ঞতা থেকে নেয়া। আসলেই কাজে লাগবে।
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
শুনেই একটু ভয় ভয় লাগছে। আসলে এমন পরিস্থিতিতে সাথে ছোট বাচ্চা থাকলে বিষয়টি আসলেই খুব ভীতিকর।
আপনারা যে তেমন বড় কোন বিপদে পড়েননি জেনে ভাল লাগল। পরামর্শগুলো কাজে লাগবে।:)
কেমন আছেন অমি ভাই?
__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---
আসলেই ভীতিকর ব্যাপার।
আমি ভালো আছি আপু, আপনি?
বড্ডা বাঁচা বেঁচে গেছেন পরিবারসহ। খুব তো উপদেশ দেয়া হলো, সুযোগ পেয়ে আমিও একটা দিয়ে যাই
কাপড় খুলতে হলে তো লাইফ জ্যাকেটও খুলতে হবে নাকি? সল্প সময়ে এটা বেশ কঠিন ব্যাপার বলে মনে হচ্ছে ভাই।
নিজে যাবেন যান, কিন্তু এমন দুর্যোগের সম্ভাবনা থাকা স্হানে শিশু এবং সাঁতার না জানা ছোট ভাইবোনদে নিয়ে যাবেন না প্লিজ!আ
আসলেই তাই। তবে সেদিন ভাবিনী এমন এক ঝড় আর বৃষ্টির কবলে আমাকে পড়তে হবে। আর এমন মুহূর্তে নিজেকে খুব অসহায় মনে হচ্ছিল। বিশেষ করে সাতার না জানা আমার ছেলে আর ছোট ভাইয়ের জন্য। আপনার উপদেশ মনে থাকবে।
কাপড় খুলতে হলে তো লাইফ জ্যাকেটও খুলতে হবে নাকি? সল্প সময়ে এটা বেশ কঠিন ব্যাপার বলে মনে হচ্ছে ভাই।
ঠিক তা নয়। লাইফ জ্যাকেট থাকা মানেই একটা সেফটি মেজারস আপনার রয়েছে। ওই সময় আপনার পোশাক খোলার মত অবস্থা থাকলে ভালো তবে না খুলতে পারলেও জ্যাকেট আপনাকে একটা প্রটেকসান দেবে। এক্ষেত্রে পায়ের জুতা এবং মোজা অবশ্যই খুলে ফেলতে হবে।
অমি_বন্যা
১। লঞ্চে উঠে আপনি যদি ডুবে মরার আগেই কোনমতে ভুলক্রমে লাইফ জ্যাকেট পরে ফেলেন, তাহলে আর দেখতে হবে না - লঞ্চ সুদ্ধ লোকের সম্মিলিত ঠাঠা অট্টহাসির ঠ্যালায় আপনি এমনিতেই লঞ্চ থেকে ছিটকে পানিতে পড়বেন। এদেশে যারা এগুলি পরে তারা চিড়িয়াখানার জন্তু ছাড়া আর কি? ছাগল চিনলেই ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার দেশ আর নদনদীর দেশ বাংলাদেশের বীর বাঙালি লাইফ-জ্যাকেট পরে লাইফ বাঁচানোর চেষ্টা করবে? সাবধানতা অবলম্বন করবে? ফালতু ঝুঁকি না নেয়ার সচেতনতা চর্চা করবে? কিম্বা অন্য কেউ করলে সেটা সহ্য করবে?? মাত্থা খারাপ?
নাহ্, এগুলি আমার বক্তব্য না, তবে এদেশে দুবার জলপথের অভিযানে (একবার ঝড়ের মধ্যেই) লাইফ-জ্যাকেট পরার অপচেষ্টা করতেই সফরসঙ্গী বন্ধুবান্ধব থেকে শুরু করে চেনা-অচেনা সহযাত্রীদের বক্র হাসি আর তীর্যক দৃষ্টির হুলে যেভাবে আক্রান্ত হয়েছি বা নিদেনপক্ষে তাদের সার্বক্ষণিক সকৌতুক মনোযোগ আকর্ষণ করেছি, তাতে লাইফ-জ্যাকেট পরে লাইফ বাঁচানোর মত সম্ভাব্য বা তাত্ত্বিক পরিস্থিতিতে পড়ার আগে আশেপাশের সবার বিনোদনের উৎস হওয়া থেকে তাৎক্ষণিক ভাবে নিজের চামড়া বাঁচানোটাই বেশি স্বস্তিদায়ক ও জরুরি মনে হয়েছে।
-- না পরার একটা কারন অন্তত বুঝতে পারছেন তো এখন?
তবে বয়সের সাথে আমি এখন বুঝি এটা কত বোকামি। আনফর্চুনেটলি কলেজ-ইউনির অনেক কিশোর-তরুন বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে গিয়ে বন্ধুদের সামনে অপ্রয়োজনীয় সাহস দেখাতে গিয়ে প্রায়ই কিন্তু বিপদে পড়ে। অনেক সময় আমার ধারণা, এটা অন্যান্য দায়িত্বহীণ বন্ধুবান্ধবদের উষ্কানিতেই ঘটে।
২। লাইফ-জ্যাকেটের ক্ষেত্রে প্রকৃত লাইফ-জ্যাকেট ও সুইমিং বা বয়ান্সি এইডের পার্থক্যটা ভাল করে জানা থাকা দরকার। এটা না জানলেও পরিস্থিতি ভেদে বিপদ ঘটতে পারে। বাংলাদেশে এক্ষেত্রে সচেতনতার যথেষ্ট অভাব আছে মনে হয়। এই উইকি এন্ট্রিটা দেখা যেতে পারে এজন্যে।
৩। লাইফ-জ্যাকেট হোক বা বয়ান্সি এইড, এগুলির ওজন বহনের একটা নির্দিষ্ট ক্ষমতা বা তার সীমা থাকে। অনেকেই যে কোন একটা শোলা বা ফোমের ভেস্ট হলেই মনে করেন যথেষ্ট হল। কিন্তু একজন ৬০ কিলোর মানুষ একটা ৩০ কিলো ক্যাপাসিটির ভেস্ট গায়ে দিলে, বা একজন মোটাসোটা ৮০-৮৫ কিলোর মানুষ একটা ৫০ কিলোর ভেস্ট গায়ে দিলে - সত্যিকারের প্রয়োজনের সময় সেটা কতটুকু কাজে আসবে জানি না। তাই এসব ক্ষেত্রে নিজের জন্য দেখেশুনে সঠিক জ্যাকেট বা এইডটাই বেছে নেয়া ভাল মনে হয়।
****************************************
একবার বরিশাল গিয়ে বানারিপাড়ার ভেতর দিয়ে সন্ধ্যা নদী পার হওয়ার সময় লাইফ জ্যাকেট পরছিলাম। একটা মানুষ সাঁতার জানে না, এই তথ্যটাই বরিশালবাসীর কাছে মারাত্মক অপমানজনক। প্রায় শ'খানেক লোক গোল হয়ে আমাকে দেখতে লাগলেন। আমার চেহারাটা ডাকাতের মতো বলে সন্ধ্যা নদীর এই তীরে আমি রক্ষা পাই। নৌকায় উঠে আমি সহযাত্রীদের টিটকিরি গায়ে না মেখে উদাস হয়ে বসে ছিলাম। এক পরহিতৈষী আমাকে একটু পর পর ডেকে ডেকে দেখাতে লাগলেন, কীভাবে ছয়-সাত বছরের শিশুরা প্রায় খালি গায়ে ছোটো ছোটো ডিঙি বেয়ে এদিক সেদিক যাচ্ছে।
"এক পরহিতৈষী আমাকে একটু পর পর ডেকে ডেকে দেখাতে লাগলেন, কীভাবে ছয়-সাত বছরের শিশুরা প্রায় খালি গায়ে ছোটো ছোটো ডিঙি বেয়ে এদিক সেদিক যাচ্ছে।"
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
পানি যে কতটা ভয়ংকর তা কেবল সাতার না জানা মানুষেরাই জানে। তবে নদী এলাকার মানুষ অথবা যারা সেই ছোট বেলা থেকেই পুকুরে বা নদীতে সাঁতার কেটে বেড়ে ওঠে তাদের কাছে মনে হয় সবাই মনে হয় তার মত সাঁতার জানে। কারন ছোট বেলা থেকেই তার সামনে দেখা মানুষগুলো সবাই সাঁতার জানে।
প্রায় শ'খানেক লোক গোল হয়ে আমাকে দেখতে লাগলেন। আমার চেহারাটা ডাকাতের মতো বলে সন্ধ্যা নদীর এই তীরে আমি রক্ষা পাই।
আপনি এইভাবে যে হাসাতে পারেন হিম্ভাই, সাংঘাতিক।
লাইফ জ্যাকেটের সাথে মুখে একটা মাস্কও পড়তে হবে।
অনেক সময় আমার ধারণা, এটা অন্যান্য দায়িত্বহীণ বন্ধুবান্ধবদের উষ্কানিতেই ঘটে।
আসলেই তাই। এর উদাহরণ আমরা দেখেছি। তবে কেউ একবার ঝড়ের কবলে পড়লে তার পর থেকে এইরকম লাইফ জ্যাকেট পড়ুয়াদের দেখে হাসির কথা না।
লাইফ-জ্যাকেটের ক্ষেত্রে প্রকৃত লাইফ-জ্যাকেট ও সুইমিং বা বয়ান্সি এইডের পার্থক্যটা ভাল করে জানা
থাকা দরকার।
এটা আমারও জানা নেই তবে আপনি বলার পর তা জেনে নেব আশা করি।
তাই এসব ক্ষেত্রে নিজের জন্য দেখেশুনে সঠিক জ্যাকেট বা এইডটাই বেছে নেয়া ভাল মনে হয়।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ, মন মাঝি ।
অমি_বন্যা
নতুন মন্তব্য করুন