মর্জিনা সঙ্গে করে খাবার এনেছে। ইলিশ মাছ, রুই মাছ, মুরগি আর গরুর মাংস। মর্জিনা তার স্বামী মিরাজ আলীকে ভাত বেড়ে দেয়। মিরাজ আলী খেতে খেতে বলে, তর আফায় এত কিছু দিলো? কছ কি! মিরাজ আলীর গলায় খুশি, সন্দেহ, বিস্ময়।
মর্জিনা চোখ-মুখ কুঁচকে একটুক্ষণ চেয়ে দেখে মিরাজ আলীকে। তারপর ঝাঁঝের সঙ্গে বলে, তয় কি আমি চুরি কইরা আনছি?
মিরাজ আলী মর্জিনার দিকে চেয়ে একটু থতমত খেয়ে যায়। বলে, দুর, চুরি করবি ক্যা, এডি কি কছ, এমনেই কইলাম আর কি...।
মর্জিনা এবার আত্মপক্ষ সমর্থনের সুরে বলে, আফার মাইয়ারে আজকা দেখতে আইছে। পোলা পক্ষ আজই কথা ফাইনাল করছে। আফায় খুব খুশি। আমারে কয়, মর্জিনা মনে কইরা খাওন নিয়া যাইয়ো। যা মন চায় নিও, পোলা-মাইয়ারে গিয়া দিয়ো।
আফায় মানুষ ভাল। মিরাজ আলী বলে। বেশিরভাগ বড়লোক হইল হারামজাদা। বড়লোকের আত্মা হইল পুঁডি মাছের লাহান, বুঝছোত?
মর্জিনা বিরক্ত হয় স্বামীর কথা শুনে।
মাইনষের গীবত গাও ক্যান? কুন বড়লোক তোমারে কি করছে?
করছে, করছে। মিরাজ আলী ক্ষতিগ্রস্থের মত মাথা নাড়ে, কিন্তু একটাও সেরকম ঘটনা সে মনে করতে পারে না। তবে সে যখন সুস্থ ছিল, ঢাকা শহরে রিকশা চালাতো তখন বড়লোকদের কাছে প্রতিনিয়ত যে ব্যবহার পেয়ে এসেছে সেটাই একটা প্রচন্ড ঘৃণা হয়ে তার মনে জমে রয়েছে। মিরাজ আলীর কাছে অবশ্য বড়লোক মানেই প্যান্ট শার্ট পরা ভদ্রলোক চেহারার মানুষজন। মূলত এরাই তার প্রতিপক্ষ।
গরুর মাংস দিয়ে ভাত মেখে মিরাজ আলী মুখে দিতেই বুঝতে পারে তরকারিটা টক হয়ে গেছে। মুখ ভর্তি ভাত চিবুতে চিবুতে মিরাজ আলী এবার জিতে যাবার ভঙ্গিতে মুচকি হাসে। যেন এতক্ষণে সে বুঝে যায় মর্জিনার আফার দরদের আসল কারণ। বড়লোকের খাওন পঁইচ্চা গেলে সেইটা হয় গরীরের খাওন। ডাস্টবিনে যেইটা কুত্তা বিলাই খায় তারচেয়ে এককাঠি উপরে হলো তাদের স্থান। মিরাজ আলী মর্জিনার দিকে চেয়ে আগের মত মুচকি হাসে।
মর্জিনা তার স্বামীকে চেনে। বড়ই কুটিল স্বভাবের লোক। নুলো হয়ে যাবার পর স্বভাবটা আরো বেড়েছে। তিন বছর আগে চাল বোঝাই ট্রাক উল্টে পড়ে তার রিকশার উপর। আরোহী দুইজন ট্রাকের চাপায় মরলেও সে ঠ্যাং চাপা খেয়ে জানে বেঁচে যায়।
খোঁড়া হয়ে যাবার পর অভিমানটাও বেড়েছে খুব। যে কোন বিষয়েই নিজেকে বঞ্চিত আর নিগৃহিত মনে করে। ভালবেসে কেউ কিছু দিলেও ভাবে নিশ্চয় এর মধ্যে কোন বদ স্বার্থ আছে।
বউয়ের রোজগার খায় বলে মিরাজ আলীর অভিমানটা আরো বেশি। একেক দিন মর্জিনার ফিরতে রাত্রী ন’টা-দশটা বেজে গেলে মিরাজ আলীর সেদিন মেজাজ টং হয়ে থাকে। মর্জিনা ঘরে ঢুকলেই খেঁকিয়ে উঠে।
-আইলি ক্যান, যেনে আছিলি হেনেই হুইয়া থাকতি!
-কতা বালা কইরা কইয়ো ফতির বাপ! কই হুইয়া থাকমু?
-আজকা থিকা তর কাম বন্ধ! ঘরে বইয়া থাকবি!
-থাকলাম। মর্জিনা শান্ত স্থীর একটা চোখে চেয়ে থাকে। অক্ষমের আস্ফলন দেখে লোকে যেমন করুণা করে তাকায় এ হচ্ছে সেই দৃষ্টি। মিরাজ আলী বউয়ের চোখের দিকে আর তাকায় না। সে জানে তার এই দম্ভ রাত পোহালেই টিকবে না। একটা মাত্র মেয়ে তাও গার্মেন্টেসে কাজ করে। সেই গামেন্টস আজ এক মাস বন্ধ। শ্রমিকরা বেতনভাতার দাবীতে আন্দোলন শুরু করলে মালিকপক্ষ ফ্যাক্টরি বন্ধ করে দেয়। এখন বউয়ের ঠিকে ঝিয়ের বেতন মাসে ১৫০০ টাকা আর মেসে রান্না করে যা পায় তা-ই ভরসা। কিন্তু নিজের বিড়ি-সিগারেটের পয়সাটা আসে কোত্থেকে? লুকিয়ে-চুরিয়ে তাই ভিক্ষেটিক্ষে করে মাঝে মাঝে। যাত্রাপথে লোকে খোঁড়া অন্ধ দেখলে দু-এক টাকা দেয়। তাতেই তার পান-সিগারেটের পয়সাটা এসে যায়।
-এরা আমাগো ঘিন্না করে বুঝছোত? বউকে বুঝায় মিরাজ আলী। আমরা সামনে গেলে নাকে কাপড় চাপা দেয়। ভিক্ষার কথাটা আর বলে না সে। কাজটা সে বউয়ের কাছে গোপন রাখে। একটা কালো কুৎসিত নুলো ভিখারী সামনে গেলো বাস-ট্রেনের যাত্রীরা শরীর কাঁটা করে রাখে স্পর্শ এড়াতে। মিরাজ আলী এসব বুঝতে পারে। সে তো পার্মানেন্ট ভিক্ষুক না তাই এসব খুব গায়ে লাগে। বড়লোকের মাতারিগুলির ঢং দেখলে শইলে আগুন ধইরা যায়! একেক সময় মনে হয়...
কিন্তু এখন বড়লোকের এই উচ্ছৃষ্ট পঁচা গলা খাবার ফেলে মিরাজ আলী উঠে পড়তে পারে না। এতবড় বিপ্লব তার পক্ষে দেখানো অসম্ভব। দুপুরে প্রায় কিছুই পেটে পড়েনি। সন্ধ্যার পর পট খালি মোচড় দিচ্ছিল। ন’টার পরে মর্জিনাকে খাবার হাতে ঘরে ঢুকতে দেখে তার আর তর সয় নাই। সেই খাবার ফেলে সে এখন উঠে কি করে? পেটে যে এখনো আগুন জ্বলছে। মিরাজ আলী তাই খেতেই থাকে। মাছ, মাংস সবটাই খায়। চেটেপুটে সবটুকু খায়। মর্জিনা খায়, তাদের মেয়ে ফাতেমাও খায়। এতগুলো পদ তো রোজ জুটে না। আত্মা মিটিয়ে খায় তারা।
খাওয়া শেষে মর্জিনা থালা বাসন ধুয়েমুছে সবার শেষে শুতে আসে। রাত তখন নিশুতি। মর্জিনা ঘুমন্ত স্বামী-সন্তানের দিকে চেয়ে দেখে। সারাদিনের এই একটু সময় যা সে একান্তে নিজের কাছে মুখোমুখি হয়। রাত আরেকটু ঘন হলে গিয়ে শুয়ে পড়ে মর্জিনা। কিন্তু দুচোখে ঘুম আসে না তার। মিরাজ আলীর হাত নিজের পিঠের উপর অনুভব করে এক সময়। মর্জিনা বুঝে এর অর্থ, কিন্তু ফিরেও তাকায় না। সারারাত পাশ ফিরেই শুয়ে থাকে...।
ভোরবেলা ঘন ঘন কয়েকবার পায়খানায় যায় মর্জিনা। শরীরে জ্বর। একটু পর পর পেট মোচড় দেয়। সকাল সাতটার মধ্যে তার ঘর থেকে বের হওয়ার কথা। প্রথমে একটা মেসে রান্না করে দিয়ে সেখান থেকে আফাদের বাসায়। কিন্তু মর্জিনা সকাল আটটা পর্যন্ত বিছানায় শুয়ে থাকে। বেড়ার ফাঁক গলে সকালের রোদ এসে ঘরে পড়ে। মিরাজ আলী বলে, কামে যাবি না?
-শইলে বিমার, চোখে দেহো না? অকারণে খিটখিটে মেজাজ দেখায় মর্জিনা।
ক্র্যাচে ভর দিয়ে মিরাজ আলী বস্তির ফার্মিসি থেকে একটা ফ্ল্যাজিন আর নাপা ট্যাবলেট কিনে আনে। ট্যাবলেট খেয়ে কাঁথা মুড়ি দিয়ে ফের শুয়ে থাকে মর্জিনা। স্বামীকে বলে মেসে গিয়া একবার কইয়া আসো আমার শইল খারাপ। আফাগো বাসার নাম্বার আছে, একটা ফোন দিয়া কও যে...
মিরাজ আলী তাড়াক করে উঠে দাঁড়ায়, ফোন দেওন লাগবো না। আমি যাইতাছি। মেসে আর তর আফার বাসায় গিয়াই কইয়া আহি। মিরাজ আলী একটা কাজ পেয়ে এবং মর্জিনার রোজগারে একটা ভূমিকা রাখতে পেরে তার খুশিই লাগে। নিজে গিয়ে সে বলে আসে, মর্জিনার শইল তো খারাপ, বিয়ানবেলা থিকা হেয় খালি পায়খানা যাইতাছে। শইলেও দেহি জ্বর। আমারে কইল, আফাগো বাসায় গিয়া একবার কইয়া আহো আমার শইলা খারাপ। আর হেগো কোন সদাই-ফদাই আনা লাগলে তুমি আইন্না দিয়ো।...
মিরাজ আলীকে ক্র্যাচে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আফার স্বামী বলে, তুমি বসো, দাঁড়িয়ে আছো কেন?
সোফা দেখিয়ে দেয় ভদ্রলোক। বসো, বসো। তারপর মন দিয়ে কথা শুনে মিরাজ আলীর। জিজ্ঞেস করে মিরাজের নুলো পা-টার কথা। এই সুযোগে অভাব অনটনের কথা সবিস্তারে বলতে থাকে মিরাজ আলী। কথার মাঝখানে তার জন্য নাস্তা আসে। নাস্তা দেখে যার পর নাই অবাক হয় সে।এক পিছ কেক আর একটা কলা। মিরাজ আলী এতটা আশা করে নাই। মর্জিনার আফারা সত্যিই ভাল মানুষ। তয় বেশির ভাগ বড়লোকই হারামজাদা এইটা মিরাজ আলী জানে। সে কেক আর কলা খায়। সকাল থেকে তো কিছু খায়নি। পকেটে পয়সা নেই। পকেটে পয়সা থাকলে সকালবেলা হাসেমের দোকানে বান রুটি আর এক কাপ চা, ব্যস, সকালবেলার চিন্তা শেষ। পকেটে একটু বেশি থাকলে হরিবাবুর মিষ্টির দোকান থেকে পরোটা আর ডাইল-ভাজি। বেশির ভাগ দিন কপালে কিছুই জোটে না। হাসেমের দোকানে বাকী খাওয়া যায় কিন্তু সেখানেও পঞ্চাশ টাকা পাওনা হয়ে আছে। খালি হাতে কোন মুখে যায় সেখানে। এখানে তাই কেক আর কলাটা সে গ্রোগ্রাসে খায়। তারপর দু গেলাশ পানি ঢগঢগ করে খেয়ে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে।
খাওয়া শেষে মিরাজ আলী যাওয়ার জন্য উঠে। চলে যাবে তখন আফার স্বামী ডেকে জিজ্ঞেস করে মর্জিনাকে অষুধপত্র কিনে দিয়েছে কিনা? মিরাজ আলী বিব্রতভাবে হাসে, হাত কচলায়। ভদ্রলোক পকেট থেকে একশো টাকার একটা নোট মিরাজ আলীর দিকে বাড়িয়ে দেয়। নীল কচকচে একটা নোট। জিভে পানি এসে যায় মিরাজ আলীর। এইরকম আস্ত একখান বড় নোট কতদিন তার হাতে আসে নাই। তবু মিরাজ আলী এক কথায় হাত বাড়ায় না। বিব্রতভাবে হাত গুটিয়ে রাখে ভনিতা করে।
আরে নাও, নাও। এ থেকে অষুধ কিনে দিও। ভদ্রলোক টাকাটা মিরাজ আলীর হাতে গুঁজে দিয়ে ভেতরে চলে যায়।
মিরাজ আলী ন’তলা এ্যাপার্টমেন্ট থেকে নেমে এসে নিচে দাঁড়ায়। যাবার আগে মাথা উঁচিয়ে একবার চেয়ে দেখে। এই উঁচু বাড়িগুলোর মানুষগুলো বড়ই রহস্যময়! মিরাজ আলী বস্তিতে গিয়ে ঢোকার আগে এক প্যাকেট সিগারেট কিনে। হরিবাবুর দোকান থেকে মালাই খায়। তারপর মর্জিনার জন্য সবরি কলা কিনে নিয়ে যায়। ঘরে গিয়ে মর্জিনাকে ডেকে তুলে বলে, কলা খা, পেট খারাপ ভাল হইয়া যাইবো...।
কিন্তু মর্জিনার শরীর ভাল হয় না। বার দুয়েক ফের পায়খানায় যায়। বিকেলবেলা মর্জিনার আফা তার এক ভার্সিটি পড়–য়া ভাইকে সঙ্গে করে হাজির হয় তাদের বস্তিঘরে। আফাকে দেখে মর্জিনা হা হয়ে যায়। একদিনের অসুখে আফায় তারে দেখতে আসছে?
-মর্জিনা, তর মাইয়ার কসম লাগে, সত্যি কইরা ক, তুই আমার মাইয়ার চেইন চুরি করছোত না?
মর্জিনা চোখ বড় বড় করে প্রথমটায় বিহ্বল হয়ে যায়। যেন আফায় কি বলছে সে বুঝতে পারছে না।
আফা, আপনে এডি কি কন? আমি চুরি করুম?
মর্জিনা তর মাইয়ার কসম, কাইল মৌয়ের ঘরে তুই ছাড়া তো কেউ যায় নাই। তরে এত বিশ্বাস করি। আজ সাত বছর ধইরা তুই কাম করছ আমার কাছে, মৌয়ের ঘরে তুই ছাড়া আর কে যাইবো?
-আফা এইডা আপনে কি কন? মর্জিনা চোখ ভাসিয়ে কাঁদতে শুরু করে।
চুপ কর। মানুষ জাতের বিশ্বাস নাই। একটা কুত্তারে রোজ ফ্যান দিলে জীবনে নিমকহারামী করতো না। তরে এত কইরাও... খুরশিদ কিছু পালি না...। আফার ভাই খুরশিদ ততক্ষণে তন্ন তন্ন করে ঘরের ভেতরটা খুঁজে ফেলে। ভার্সিটিতে তাদের রুমে একবার পুলিশ এসে অস্ত্র তল্লাসি করেছিল। রুমে তাই কেমন করে তল্লাসি করতে হয় সে জানে। হাড়ি-পাতিল, তোশক-বালিস সব ফেলেটেলে তছনছ করে ফেলেছে। ট্যাঙ্কের তালা ভেঙ্গে ভেতরটা তন্নতন্ন করে খুঁজেছে। জামা-কাপড়, হাড়ি-পাতিল সব ছুড়ে ফেলেছে বাইরে। ঘরে খোঁজার মত আর কিছু নেই। কিন্তু কোথাও কিছু পাওয়া যায় না। কিছু না পেয়ে তাই মেজাজটা খিঁচড়ে যেতে থাকে। উঠে কোমড়ে হাত দিয়ে দাঁড়ায় আফার ভাই। পাশে ক্র্যাচে ভর দিয়ে দাঁড়ানো মিরাজ আলীকে দেখে হঠাৎ সমস্ত ক্রোধটা গিয়ে পড়ে তার উপর। শার্টের কলার চেপে ধরে মিরাজ আলীর। চুতমারানী বুয়াটার স্বামীর গায়ে দুলাভাইয়ের পুরোনো শার্টটা দেখে মেজাজ আরো খারাপ হয়ে যায় খুরশিদের। যাদেরটা খাবি শালা তাদেরই গোয়া মারবি! মিরাজ আলীর কলার ধরে কষে থাপ্পর লাগায় আফার ভাই। বলে, মাল বাইর কর! কোন দোকানে বেচছোত ক’, এইটা আমার ভাগনী জন্মদিনে পাইছে, মাদারচোদ, জানে মাইরা ফালামু!
মিরাজ আলীর হাত থেকে ক্র্যাচ খসে পড়ে। ধাপ্পরে টাল সামলাতে না পেরে ছিটকে পড়ে খাটের কোণায়। ভুরুর কাছটায় লাগায় মাথাটা নড়ে উঠে। ভোঁ ভোঁ করতে থাকে দুনিয়াটা। কষ বেয়ে রক্তটা যখন মুখে লাগে তখন নোমতা স্বাদ পেয়ে মিরাজ আলী বুঝতে পারে রক্ত বের হচ্ছে। এক দৃষ্টিতে সে চেয়ে থাকে মর্জিনার আফার এই ভাইটার দিকে। চোখের কোণায় রক্ত এসে ঝাপসা করে দেয়। দাঁতে দাঁত চাপে মিরাজ আলী। খাঁচায় বন্দি একটা আহত পশুর মত নিজেকে তার মনে হয়...। অক্ষম...অসহায়...
সারা ঘর খুঁজেও যখন কিছু পাওয়া গেলো না তখন মর্জিনার আফার ভার্সিটি পড়া ভাই এদেরকে পুলিশে তুলে দেয়ার প্রস্তাব করে। পুলিশই যা করার করবে। উপস্থিত বস্তিবাসীরও একই মত, মারধর করে লাভ কি, পুলিশে দেন, তারা যা করার করবো নে। কিন্তু মর্জিনার আফা দুই ভরী সোনার চেইনের জন্য পুলিশে যেতে চায় না। থানা পুলিশ তার পছন্দ না। রাগে-ক্ষোভে দরজার উপর দাঁড়িয়ে যাওয়ার আগে শুধু বলে যায়, মর্জিনা, আল্লায় তর বিচার করবো!
মিরাজ আলী নিঃশব্দে চেয়ে দেখে সব। মর্জিনার আফার অভিশাপটা এতক্ষণ তাকে যা দিতে পারেনি সেই যন্ত্রণাটাই দেয়। আল্লায় খালি তাগোই বিচার করবো? আর কারোর বিচার করবো না? এই প্রথম চোখে পানি আসে মিরাজ আলীর। সব বড়লোক শালা এক...!
মর্জিনা বিছানায়ই পড়ে থাকে। শরীর আর ভাল হয় না। দিন পনোরো পরে মর্জিনা স্বামীকে ডেকে বলে, আমার শইল আর ভাল হইব না। অসুখ তো আমার শইলে না, মনে। তোমারে একটা ভাতের হোটেল খুইল্লা দিমু বস্তিতে, চালাইতে পারবা না?
মিরাজ আলী অবাক হয়ে চায় মর্জিনার দিকে।
ট্যাকা পাবি কই? মিরাজ আলী জানতে চায়।
স্বামী-স্ত্রী দুজন দুজনের দিকে তাকায়। মাঝখানে বয়ে যায় কিছু নিঃশব্দ মুহূর্ত। মিরাজ আলী চোখের সামনে একটা ভাতের হোটেলকে দেখতে পায়। আপাতত এই স্বপ্নই তাকে বিভোর করে রাখে...।
-সুষুপ্ত পাঠক
মন্তব্য
কাহিনীর প্রবাহে ভেসে গিয়েছিলাম, শেষে এসে একই মুদ্রার অন্য পিঠ বের হয়ে আসলো যেন।
চমৎকার লাগলো। আরও, গল্পের প্রতিক্ষায় থাকলাম।
শুভেচ্ছা
[মেঘলা মানুষ]
@মেঘলা মানুষ, অশেষ কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ পড়ার জন্য ও মন্তব্য করার জন্য।
@মেঘলা মানুষ, অশেষ কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ পড়ার জন্য ও মন্তব্য করার জন্য।
-সুষুপ্ত পাঠক
ভাল লাগল। সচলে আপনার প্রথম লেখা?
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
ভাল লাগার জন্য ধন্যবাদ। হ্যাঁ, সচলে এটাই আমার প্রথম লেখা।
-সুষুপ্ত পাঠক
চমৎকার লাগলো, সুষুপ্ত পাঠক। একটা টুইস্ট শেষে হবে বুঝতে পারছিলাম, তারপরও যখন সত্যিই টুইস্টটা এলো, চমকে গিয়েছিলাম! আপনার গল্প বলার ভঙ্গি "সিম্পলি সুপার্ব"। হাত খুলে লিখতে থাকুন। গান্ধর্বী, সাগর রহমানের পরে বোধহয় আরেকজন চমৎকার গল্প লিখিয়ে পেলাম আমরা।
ও, বাই দ্য ওয়ে, সচলায়তনে স্বাগতম।
____________________________
ধন্যবাদ @প্রোফসার হিজিবিজিবিজি , পড়ার জন্য ও মন্তব্য করার জন্য। ভাল থাকবেন।
-সুষুপ্ত পাঠক
"গান্ধর্বী, সাগর রহমানের পরে বোধহয় আরেকজন চমৎকার গল্প লিখিয়ে পেলাম আমরা।"
সহমত।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
ধন্যবাদ @এক লহমা।
-সুষুপ্ত পাঠক
ভাল লাগল, আরও গল্পের অপেক্ষায় রইলাম।
__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---
ধন্যবাদ @সাফিনাজ , পড়ার জন্য ও মন্তব্য করার জন্য।
-সুষুপ্ত পাঠক
শামীম ভাই, আপনাকে এখানে দেখে দারুণ ভাল লাগছে। লেখা পড়েছেন জেনে খুব ভাল লাগলো। ভাল থাকবেন।
সচলে স্বাগতম।
লেখা চমৎকার ঝরঝরে, ভাল লেগেছে। শেষ বাঁকটা পছন্দ হয়নি, কি আর করা যাবে, লেখক যেমন চেয়েছেন!
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
অন্যরকমও হতে পারতো। কিন্তু যখন লিখি তখন যেন চরিত্রগুলোই আমাকে নিয়ন্ত্রণ করে! তারা তাদের পরিণতি ঠিক করে দেয়! লেখালেখির আনন্দটাই এখানে। ধন্যবাদ কমেন্ট করার জন্য।
আপনার লেখার হাত বেশ ভালো। লেখা চলুক।
-ভাবুক পাঠক
@ভাবুক পাঠক, ধন্যবাদ আপনাকে।
-সুষুপ্ত পাঠক
আপনার লেখার ভঙ্গিটা সুন্দর। চালিয়ে যান।
শুভকামনা
------------------------------------------
'আমি এখন উদয় এবং অস্তের মাঝামাঝি এক দিগন্তে।
হাতে রুপোলী ডট পেন
বুকে লেবুপাতার বাগান।' (পূর্ণেন্দু পত্রী)
@গান্ধর্বী, অশেষ ধন্যবাদ পড়ার জন্য।
-সুষুপ্ত পাঠক
চমৎকার
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে
নতুন মন্তব্য করুন