৩১২, ভাল ছাত্র - খারাপ ছাত্র, একটি সাধাসিধে কথা, দুই বিভাগের ড্রোন লড়াই এবং অন্যান্য।

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: রবি, ০২/০২/২০১৪ - ৬:৪৪পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

জাফর ইকবাল স্যার আমার খুব প্রিয় মানুষের একজন। ছোটবেলায় স্কুলে টিফিন না খেয়ে, স্কুলে হেটে হেটে গিয়ে রিক্সার ভাড়া বাচিয়ে জমানো টাকা দিয়ে যতগুলা বই কিনেছিলাম, বোধকরি তার ৬০ ভাগ বই জাফর ইকবাল স্যারের লিখা। ওনাকে আমার যত না তার লেখার জন্য ভাল লাগে তার চেয়ে বেশি ভাল লাগে তার সাধাসিধে কথাগুলার জন্য। খুব অবলীলায় এবং খুব সহজ ভাবে অনেক অনেক কঠিন কঠিন কথা খুব সহজেই উনি বলে ফেলেন। স্যারের একটি সাধাসিধে কথা আমার সবসময়ই ভাল লাগে, "তোমার নিজের দেশের সমস্যা অন্য কেউ এসে সমাধান করে দিবে না, নিজেদের সমস্যা নিজেকেই সমাধান করতে হবে।"
একটা ছোট সমস্যার কথা বলি, প্রতিবছর শীত আসলে আমাদের দেশে শীতপ্রধান অঞ্চলগুলোতে একটা বিশাল জনগোষ্ঠী থাকে যাদের শীতবস্ত্রের প্রয়োজন হয়, এবং এই চাহিদা পূরণ করার সামর্থ্য তাদের নিজেদের নেই। যথারীতি বিভিন্ন সংগঠন এবং ফেইসবুকের বিভিন্ন গ্রুপ থেকে প্রায় প্রতিবছর এদের জন্য শীতবস্ত্রের ব্যবস্থা করা হয়। আমার নিজের বন্ধুদের দেখেছি, ফেইসবুকে তারা বিভিন্ন ইভেন্ট ওপেন করে এবং আশ্চর্যজনক ভাবে অনেক মানুষ তাদের এই কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে। কেউ পুরানো শীতবস্ত্র দেয়, আবার কেউ বা সরাসরি টাকা দেয়। এইরকম চলছে, এবং কতদিন চলবে জানি না। কিন্তু বিষয়টা যদি এইরকম হয়, আমরা সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিলাম যে আমরা আর আগামী বছর থেকে আর কারও জন্য শীতবস্ত্রের ব্যবস্থা করব না। এই কাজে আমাদের যেই পরিমাণ অর্থ, শ্রম আর সময় ব্যায় হয় তা দিয়ে আমরা এমন কিছু করব যাতে সেইসব অসহায় মানুষগুলো নিজেরাই নিজেদের শীতবস্ত্র কিনতে পারে তাহলে পুরো বিষয়টাই কিন্তু অন্যরকম হবে।
এই সমস্যাটা সমাধান করার জন্য, কিন্তু সবার বিল গেটস হতে হবে এমন নেই। সমাধানটা আমাদের হাতের কাছেই আছে। ধরে নেয়া যাক, কারও বন্ধুদের গ্রুপে মোট দশজন আছে যারা একে অপরকে জান-পরান দিয়ে ভালোবাসে। খুজলে দেখা যাবে , এই গ্রুপের দশজনের অন্তত দুইজন থাকবে এমন যাদের বাবা ভয়াবহ রকম বড়লোক, আর বাকী তিন থেকে চারজনের মামা-চাচা-খালু । যদি ধরে নেই এই বড়লোক সম্প্রদায়ের সবাই মুসলিম তাহলে কাজটা আরও সহজ। প্রতিবছর ঈদ-উল-ফিতর এর সময় একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ যাকাত দেয়া এই টাইপ ভয়াবহ রকম বড়লোকের জন্য ফরয হয়ে যায়। এখন যদি এই বন্ধুদের কেউ উদ্যোগ নেয় যে তারা তাদের বাবা-চাচা-খালু কে উদ্বুদ্ধ করবে যাকাতের শাড়ী কিংবা লুঙ্গী না বিলিয়ে সেই টাকা একসাথে করে যদি অন্তত দশজন লোককে দশটা রিক্সা কিনে দেয়া যায় তাহলে এরপর থেকে অন্তত দশজন লোকের জীবন ধারণের একটা পাকাপাকি ব্যবস্থা হয়ে যাবে।
আমাদের দেশের মানুষ অত্যন্ত সৌভাগ্যবান যে, হাজারো সমস্যা থাকা সত্ত্বেও এদেশের মানুষরা একে অপরের প্রতি অদ্ভূতরকমভাবে সহানুভূতিশীল। নিতান্তই শনি কিংবা রাহুর দশা যদি কারও ঘাড়ে চেপে না বসে তাহলে তার সামনে যদি উসকো-খুসকো চুল, একটি ছেড়া গেঞ্জী, আর খোলা পোস্টঅফিস সমেত হাফ প্যান্ট পড়ে কোন বাচ্চা ছেলে-মেয়ে কাদো কাদো ভাবে বলে দুইদিন ধরে কিছু খায় নি, তাহলে আমি বাজী ধরে বলতে পারি নিজের পকেটে শুধু রিক্সা ভাড়া রেখে বাকী টাকা দিয়ে ওই না খাওয়া ছেলে-মেয়েটিকে পেটপুরে খাওয়াবে যে কেউ। এইজন্যই আমরা এত সৌভাগ্যবান, কেননা আজও আমাদের মাঝে ভালবাসা আছে, তা ফুরিয়ে যায়নি; শুধু তাকে খুজে নিতে হয় আর বন্টন করে যেতে হয়। পৃথিবী সব জিনিস বন্টন করলে তা একসময় শেষ হয়ে যাবে কিন্তু ভালবাসা আর জ্ঞান কখনও ফুরাবে না, উপরন্তু তা প্রতিনিয়ত বেড়েই চলে।
আমাদের গবেষণা গ্রুপের বাকী দুইজনই সাদা আমেরিকান। দুইজনই অস্বাভাবিক রকম ভাল ছেলে। একদম খাটি ভদ্রলোক, আমার যে কোন প্রয়োজনে যথাসাধ্য সাহায্য করে, কনফারেন্সে একসাথে গেলে আমরা একসাথে ঘুরে বেড়াই, আমি কেন এলকোহল খাই না কিংবা একটু খাইলে কী হয় এইটাইপ উটকো যন্ত্রণা তারা আমাকে কখনই দেয় নি।আমার মনে আছে গতবার সামারে প্রথম রোযার সময়টাতে আমরা ইলিনয় তে একটা কনফারেন্স এটেন্ড করতে গিয়েছিলাম। রাতের বেলা সেহেরী খাব বলে, আমাকে নিয়ে রাত তিনটা বাজে বের হয়েছিল রেস্টুরেন্ট খুজতে যাতে আমি সেহেরীর সময় কিছু খেতে পারি। যথেষ্ট ভাল মানুষ হওয়া সত্ত্বেও এদের মাঝে আমি যেই জিনিসটার অভাব দেখেছি সেইটা হল ভালোবাসার অভাব। আমরা খুব সহজেই একজন আরেকজনকে যেইভাবে ভালোবাসাতে পারি, এরা তা পারে না। আমাদের মাঝে ভালোবাসা আছে বলেই হাজারো যন্ত্রণার মাঝেও আমাদের জীবনটা এত সুন্দর, নিজেরা প্রচন্ড কষ্টের মধ্যে থেকেও আমরা আর একজনের দুঃখের কথা শুনলে হু হু করে কেদে উঠি, যেইটা তারা পারে না।
এইবার আসি ৩১২ এর কথায়। আমি কোন রাশিচক্র বিশারদ না যে আমি এই ৩১২ দিয়ে কারও ভাগ্যের সংখ্যা তাত্ত্বিক বিশ্লেষন করব। এই ৩১২ হল সদ্য জি আর ই পরীক্ষা দেয়া আমার ভার্সিটি জীবনের হলের রুমমেট এর স্কোর। নিজের কোন ছাত্র এস এস সি পরীক্ষায় A+ পেলে যেমন ভাল লাগে, ঠিক তেমনি ওর স্কোরটি শুনে আমার সেইদিন খুবই ভাল লেগেছিল, আর আরও ভাল লেগেছিল যখন ও লিখেছিল "Tui na thakle hyto amr gre deya ht na.... U r my hero Dosto"। আসলে আমি কিছুই করিনি আমি শুধু ওকে কিছু সাধারণ গাইডলাইন আর উৎসাহ দিয়ে গিয়েছিলাম। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা টিটিএফ (টাইনা টুইনা ফাস্ট ক্লাশ) এর দলে ছিলাম। আমাদের কোন আশা নেই, ভরসা নেই ভয়াবহ রকম অবস্থা। আমি যখন উচ্চ শিক্ষা র জন্য মনস্থির করি তখন অনেকেই যে মনে মনে হেসেছিল তাতে কোন সন্দেহ নেই। কারন আমি একরকম খারাপ ছাত্র, আমার রেজাল্ট 3.02. অবশ্য খারাপ ছাত্রের তকমা আমার গায়ে তখনই লেগে যায়, যখন আমি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাইনি। অথচ সেই আমি খুব ভাল ছাত্র ছিলাম যখন আমি আইডিয়াল স্কুলে অবলীলায় সম্মিলিত মেধা তালিকায় প্রথম বিশ জনের মধ্যে থাকতাম। ভাল ছাত্র খেতাব পাওয়ার ব্যাপারটা খুব উপভোগ্য ছিল, কিন্তু আমি খুব সৌভাগ্যবান যে, জীবনের একটা গুরুত্বপূর্ণ সময়ে খারাপ ছাত্রের উপাধি কপালে জুটেছিল। কোন এক অদ্ভূত কারণে, আমাদের দেশের খারাপ ছাত্রদের প্রতি কোনরকম যত্নই নেয়া হয় না, বরং উল্টো চলে নানা রকম মানসিক অত্যাচার। আরে তুমি ত এইটা পারবা না করতে; তোমার রেজাল্ট খারাপ আর তুমি আসছ এই বিষয়ে থিসিস করতে, যাও সহজ কিছু দেখ। এইরকম হাজারো রকম মানসিক অত্যাচার চলে আমাদের উপর। অথচ শুধুমাত্র উৎসাহ এর সঠিক দিক নির্দেশনা পেলে যে কেউ অনেক ভালো কিছু করে দেখাতে পারে যদি তার অধ্যবসায় থাকে।
এই যে জি আর ই পরীক্ষা একে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে খুব সস্তা ধরণের কোটি টাকার ব্যবসা হয় প্রতিবছর। যেই ছেলেটা চার বছর এর ডিগ্রী অর্জন করে কোন এক অদ্ভূত কারণে তাকে কোন না কোন কোচিং সেন্টারের দ্বারস্থ হতে হয় প্রস্তুতি নেয়ার জন্য। আমি নিজেও যে সাত হাজার টাকা জলে দিয়েছিলাম, এবং এই জিনিস বুঝতে আমার তিন সপ্তাহ লেগেছিল। পরবর্তীতে আমি সেই জায়গায় আমার নিজের সংগৃহীত প্রায় তিন গিগাবাইটের কোর্স ম্যাটারিয়াল একজন ইন্সট্রাকটরকে দিয়ে এসেছিলাম। আমাকে যেতে হয়েছিল, কারণ আমি তখন খারাপ ছাত্র ছিলাম বিধায় সবাই আমাকে নিয়ে হেসেছিল। যার কাছেই গিয়েছিলাম গত বাধা উত্তর আর তাচ্ছিল্য মনোভাব ত ছিলই, উপরন্তু কারও কারও রেডিয়েশন এর উত্তাপ থেকে আমার পরিধেয় বস্ত্র আমাকে রক্ষা করতে পারে নি। আমার মত এই রকম হাজারো খারাপ ছাত্র আছে যারা নিজেদের টাকা একরকম জলেই ফেলে। অথচ আমরা চাইলেই কিন্তু এই জনপ্রতি দশ-বার হাজার টাকা বাচিয়ে দিতে পারি খুব সহজেই, যা দিয়ে তারা নিদেনপক্ষে অতিরিক্ত একটা বিশ্ববিদ্যালয়তে আবেদন করতে পারবে।
ধরে নেয়া যাক, এই বছর মোট ৫০ জন ছেলে জি আর ই পরীক্ষায় একটা মোটামোটি মানের ভাল স্কোর করেছে। তাদের এই প্রস্তুতি কালে তারা অন্তত এইটা খেয়াল করেছে যে, তারা কোন টপিক্সে ভাল। কেউ ম্যাথ এর প্রোবাবিলিটি, কেউ ডাটা ইন্টারপ্রিটেশন, কেউ সেন্টেন্স কমপ্লীশন কিংবা কেউ রিডীং কম্প্রিহেনশন। এখন তারা সবাই মিলে যদি ডিসিশন নেয় তারা যে যেই টপিক্সে খুব ভাল তারা সেই টপিক্স এর উপর একটা লেকচার শীট এবং একট ত্রিশ মিনিটের টিউটোরিয়াল ক্লাশ এর ভিডিও রেকর্ডিং বানিয়ে সবার জন্য উন্মুক্ত করে দিবে তাহলে অনেক ছেলে-মেয়ের দশ বার হাজার টাকা বেচে যাবে।
এখন আসি এই বেচে যাওয়া টাকা দিয়ে তারা কি করতে পারে, অতিরিক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করবে, কিংবা এপ্লিকেশন প্যাকেজ পাঠানোর খরচ চালাবে, কিংবা লেখার শুরুতে বর্নিত প্রথম সমস্যার সমাধানে ওই বেচে যাওয়া টাকার কিছু অংশ তারা দিয়ে দিবে।
এইভাবে চাইলে জি আর ই, জি ম্যাট, আই এল টি এস, টোফেল এর হাজার হাজার ভিডিও টিউটোরিয়াল কিন্তু আমরা নিজেরা স্ব-উদ্যোগেই অনলাইনে উন্মুক্ত করে দিতে পারি। শুধু প্রয়োজন একটু সদিচ্ছার। আমরা চাইলে খান একাডেমীর মত কোন একটা একাডেমী করে ফেলতে পারি, যেই একাডেমী থেকে হাজারো শিক্ষার্থী বিনামূল্যে বিভিন্ন টেস্ট এর জন্য প্রস্তুতি নিতে পারি। কিন্তু এই সহজ এবং অসাধারণ কাজ করার জন্য আপনাকে কেউ কোনদিন উদ্বুদ্ধ করবে না। কারণ, এতে কোন না কোন ব্যবসায়িক মানসিকতা সম্পন্ন জনগোষ্ঠীর বিশাল ক্ষতি হয়ে যাবে। অথচ আপনাদের মাঝে থেক বের হয়ে আসতে পারে খান একাডেমীর প্রতিষ্ঠাতার মত কেউ একজন। আমি শুধু একটা সম্ভাবনার কথা বললাম, আপনি চাইলে এর পরিধিকে আরও বড় করতে পারেন। আপনি চাইলেই প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষামূলক বিভিন্ন কার্টুন কিংবা স্লাইড অথবা টিউটোরিয়ালের ভিডিও বানিয়ে বাজার অবমুক্ত করে দিতে পারেন খুব সহজেই। হয়ত আপনার সেই ভিডিওটি দেখে বিজ্ঞানের প্রতি উদ্বুদ্ধ হয়ে বিজ্ঞানে পড়তে আসা কোন ছেলে কিংবা মেয়ে আজ থেকে বিশ-ত্রিশ বছর পর এম আই টি কিংবা হার্ভাড এর কোন এক সম্মেলনে বক্তৃতা দিবে, তখন হয়ত কৃতজ্ঞতা স্বরূপ আপনার নামই সবাইকে বলবে যে আপনার কারণেই সেই বিজ্ঞানকে ভালোবাসতে পেরেছিল। জীবনে এই ধরনের মুহূর্ত সবার আসে না, আর আসলেও তাকে টাকা দিয়ে কেনা যায় না।
এই পর্যন্ত সব ঠিক ছিল, কিন্তু এখন একটা খুব বিতর্কিত বিষয় এর অবতারণা করব। বাংলাদেশের ছেলে মেয়েরা যেই কয়টি ফাটাফাটি কাজ করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে তার মধ্যে আমি দেশের দুইটি ভিন্ন ভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের বানানো কোয়াডকপ্টার এবং ড্রোনের কাজটিকে এগিয়ে রাখব। ফেইসবুক আর অনলাইন মিডিয়ায়ই মূলত তাদের কাজ নিয়ে আমি পড়েছি, কিন্তু কিছুদিন ধরে খেয়াল করলাম তাদের মধ্যে একরকম অদ্ভূত লড়াই শুরু হয়ে গিয়েছে। যেইখানে আমাদের উচিত ছিল, আমরা নিজেদের অর্জিত জ্ঞান ভাগাভাগি করে আরও ভাল কিছু করব, কিংবা আমাদের দেশের প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলে-মেয়েদের নিয়ে একটা সম্মিলিত কর্মশালা করব যেইখানে একরকম হাতে ধরে তাদের কাজ শিখানো হবে সেইটা না করে আমরা ফেইসবুকের বিভিন্ন গ্রুপের পোস্টে কাদা ছুড়াছুড়ি করছি।
ঠিক একই রকম বিবেচনা করা উচিত লুনাবোটিক্স কম্পিটিশন সহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতার জন্য। আমরা একটা জিনিসই বার বার ভূলে যাই, আমি যদি জিতি তাহলে বাংলাদেশই জিতে আর আমি যদি হারি তাহলে বাংলাদেশই হারে। ইতিমধ্যে আমাদের দেশের ছেলেমেয়েরা লুনাবোটিক্স কম্পিটিশনে খুব ভাল করেছে। হয়ত কোন একদিন তারা ঠিকই প্রথম-দ্বিতীয়-তৃতীয় স্থান দখল করবে এইটা সত্য, কিন্তু এই কাজটাকে চাইলেই অনেক সহজ করে দেয়া যায়। বাংলাদেশের যতগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের টীম এই কম্পিটিশনের জন্য প্রিপারেশন নেয় প্রতিবছর, একটু ভাল করে খুজলে দেখা যাবে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের কেউ কেউ প্রোগ্রামিংয়ে ভয়াবহ রকম ভালো, কেউ হার্ডওয়ারে, কেউ খুব ভাল স্ট্রেস এনালাইসিস কিংবা মডেলিং করতে পারে, আর কেউ একের পর এক ফাটাফাটি আইডিয়ার জন্ম দিতে পারে। তারা সবাই এক হয়ে শুধু এই ডিসিশন নেই যে, আগামী ২০১৫ এর কম্পিটিশন এর জন্য তারা যে কোন তিন মাস দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মশালার আয়োজন করবে যেইখানে তারা তাদের অর্জিত জ্ঞান আর নিজেদের সীমাবদ্ধতা নিয়ে আলোচনা করবে তাহলে দেখা যাবে আমাদের মাঝে থেকে এমন কোন টীম বের হয়ে আসবে যারা লুনাবোটিক্স কম্পিটিশনে সবাইকে পিছনে ফেলে প্রথম স্থান দখল করে নিবে। হতে পারে তারা বাংলাদেশের কোন অখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ের কেউ হবে, কিন্তু যেই প্রথম হোক না কেন সবার আগে কিন্তু বাংলাদেশই প্রথম হবে।


মন্তব্য

সাফি এর ছবি

১। জি আর ই পরীক্ষার জন্য কোচিং জীবনে প্রথম শুনলাম।
২। শিরোনাম বাদে পুরো লেখায় আর কোথাও ড্রোন শব্দটা পেলাম না।
এই ইন্টার্নেটের যুগে, কোন কিছু শিখতে হলে নিজের সদিচ্ছাই যথেষ্ঠ। আর শেখাতে হলে শিক্ষক.কম তো আছেই।

দীনহিন এর ছবি

আর শেখাতে হলে শিক্ষক.কম তো আছেই।

বাহ্‌! ভাল বলেছেন তো! একখানা তো আছেই! আর একখানার কি দরকার? এখন থেকে কেউ কিছু শেখাতে চাইলে শিক্ষক ডট কম-এ যাবে, আর শিখতে চাইলেও যেতে হবে সেখানে! এর বাইরে কেউ যেতে পারবে না কেউ, ভাবতেও পারবে না!

শিক্ষা ও শিক্ষকতার জন্য যে বৃত্ত বেঁধে দিলেন, তার থেকে বেরুনোর জন্য হলেও আর একখানা ডট কম স্কুলের যে খুব প্রয়োজন, ভাইয়া!

.............................
তুমি কষে ধর হাল
আমি তুলে বাঁধি পাল

অতিথি লেখক এর ছবি

শিক্ষক।কম ত আছেই। কিন্তু আমার কাছে মনে হইছে শুধু অনলাইনে না থেকে অফলাইনে পরিধি বাড়ানো যায় কিনা। বিশেষত বাংলাদেশের স্কুল গুলোর ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের জন্য। এদের কাছে বিজ্ঞান মানেই বিভিষীকা। গ্রামের ছেলেমেয়েরে রীতিমত অঙ্ক মুখস্ত করে। এদের জন্য কিছু করা গেলে ভাল হত। আর আমরা হায়াস স্টাডি এব্রোড থেকে অনলাইনে জি আর ই/ টোফেল/ আই এল টি এস এর ক্লাস অবমুক্ত করেছি। যদিও তা নিতান্তই নগণ্য।

অতিথি লেখক এর ছবি

অফটপিকঃ একটা কবিতা দিছিলাম। কিন্তু ওইটা কি হারিয়ে গেল না মডারেশন বোর্ড এর পছন্দ হয় নাই কিনা বুঝতেছিনা। এডমিন দের কেউ কী বলতে পারবেন?

সাফি এর ছবি

অপেক্ষা করে দেখুন। আপনি লেখা দেওয়ার পরে যদি অন্য অতিথি লেখকের লেখা প্রকাশ হতে দেখেন তাহলে ধরে নেওয়া যেতে পারে যে লেখাটি মডারেশন প্যানেল পার হতে পারেনি। অতিথি হিসেবে লেখা/মন্তব্যের সময় নীচে নিজের নিবন্ধিত নাম উল্লেখ করতে ভুলবেন না।

অতিথি লেখক এর ছবি

অনেক যত্ন নিয়ে লিখেছেন, আর আপনার আবেগটাও চমৎকার ভাবে ফুটে উঠেলে লেখায়।
অন্যের জন‌্য নিস্বার্থভাবে কিছু করা আর দেশকে আরও মর্যাদার আসনে দেখার যে বাসনা -দুটোই খুঁজে পাওয়া যায় আপনার লেখায়।

লেখার শেষে নাম/ নিক কিছু দিয়ে দেয়া দরকার, তা না হলে অতিথিদের আলাদা করা যায় না। (আমি নিজেও অতিথি)।

এখন জিআরই নিয়ে কিছু কথা বলি:
১। এটা এমন একটা পরীক্ষা যার জন্য কোচিং থেকে সাহায্য পাওয়াটা খুব কঠিন। একট আঢটু গাইডেন্স থাকতে পারে, তবে বেশিরভাগ জিনিসই নিজের করতে হয়। আমি যে আমলে পরীক্ষা দিয়েছিলাম, তখন ব্যারনের ৩৫০০ শব্দ মুখস্থ করাটা ছিল প্রথম কাজ, কোচিংয়ের প্রাদুর্ভাব ঘটেনি তখনও।

২। জিআরই এর জন্য যেটা বেশি দরকার সেটা হল দিকনির্দেশনা (গাইডেন্স)। এটা পাওয়া যাবে, সহপাঠী, সিনিয়র এমনকি জুনিয়রদের কাছ থেকেও। পরবর্তীতে আমিও সাধ্যমত অনেককে বুদ্ধি-পরামর্শ দেবার চেষ্টা করেছি। (আপনিও করছেন নিশ্চয়ই)। এটা যে কত বড় একটা কাজ সেটা আমরা অনেকসময় বুঝতে পারি না।

৩। দুইজন বা ততোধিক পরীক্ষার্থী মিলে টিম বানিয়ে পড়তে পারলে সেটা অনেক কাজে দেয়। আমি আমার এক সহকর্মীর সাথে মিলে পড়াশোনা করেছিলাম। একজন যা জানতাম, সেটা আরেকজনের সাথে চর্চা করলে সেটা অনেক ফলপ্রসূ হয়।

৪। জিআরই এর পর একজন পরীক্ষার্থীর মাথায় নানা ঝামেলা এসে ভর করে, এবার প্যাকেজ রেডি করা, ফি দেয়া এসব অনেক কিছু। আর, বিদেশে আসার পরপর গুছিয়ে বসাও কম হ্যাপা না -এগুলোর মধ্যে দিয়েই আপনি এসেছেন। আমি বলতে চাইছি না কোন ভালো কিছু করার কোন সুযোগ নেই, আমি কেবল বলতে চাইছিলাম, এটা বেশ কঠিন।

৫। পড়ার ম্যাটেরিয়ালসও একটা বড় জিনিস। আপলোড করে শেয়ার করা অনেক ঝামেলা। আপনি সেগুলো ডিডভিডিতে রাইট করে পরবর্তিতে পরীক্ষা দেবে এমন কয়েকজনের কাছে রেখে আসলে, এগুলো আরও অনেকের কাছে ছড়িয়ে পড়ত। তবে, নীলক্ষেতেও ভালো ভালো জিনিস পাওয়া যায় শুনেছি।

আরই কিছু প্রাসঙ্গিক বিষয় মনে আসলো:

ক। বাংলাদেশে ভিডিও টিউটোরিয়াল দেখা বেশ কঠিন ব্যাপার। ৩জি আসলেই ডাটার লিমিট অনেক কাজেই বাধা দেয়। যেমন, দেশের বাইরে বসে how to cook chicken লিখে ইউটিউবে দেখে নেয়াটা কোন ব্যাপারই না, অন্যদিকে দেশে বসে ২গিগা বা ৪গিগার মাঝে মাস পার করাটা কঠিন বৈকি।

খ। 'শিক্ষক' এর কথা সাফি বলেছে, এটা একটা চমৎকার প্লাটফর্ম। ছড়িয়ে ছিটিয়ে না থেকে সবকিছু একজায়গায় একই ছাতার নিচে গোছানো আকারে পাওয়া একটা বড় কাজের জিনিস।

গ। লুনাবোটিক্সের বিষয়ে (বা এরকম প্রতিযোগিতা যেখানে দেশের সম্মান জড়িত) আপনার বক্তব‌্যটা চমৎকার। তবে, অনেক সময় দেশ থেকে টিম পাঠানোর সুযোগ থাকে না, ইউনিভার্সিটি থেকে পাঠানোর কথা বলা থাকে।

শুভেচ্ছা হাসি

[মেঘলা মানুষ]

(অফটপিক: ক্যাপচা-র হাতে মার খেয়ে আবার অতিথি হয়ে ঢুকলাম। ক্যাপচা আরেকটু সহজ করা যায় না? জানি বেশি সহজ করে ফেললে বট-রা সব পড়ে ফেলে। 'মলম' কম্পানির ক্যাপচা ভাঙতে এখন এনিগমা মেশিন হতে হয় ওঁয়া ওঁয়া )

অতিথি লেখক এর ছবি

পুরটাই পড়লাম।
আশা করি, এই পোস্ট পড়ে অনেকেরই দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হবে।

ইউক্লিড

সাফিনাজ আরজু এর ছবি

কিছু মনে করবেন না ভাই, আপনার লিখাটা আমার কাছে বেশ অগোছালো মনে হয়েছে।
আপনি অনেকগুলো বিষয় নিয়ে এলোমেলো ভাবে লিখার চেষ্টা করেছেন তা না করে যদি একেক পোস্টে একেক বিষয় নিয়ে গুছিয়ে আরও যুক্তি নির্ভর লিখা লিখতেন পড়তে বেশী ভাল লাগত।

-যেমন শীত বস্ত্রের সমাধান নিয়ে আপনার আবেগটা ভালো লাগল, কিন্তু এর আরও অল্টারনেটিভ সমাধান হতে পারে, সেটি নিয়ে বিচ্ছিন্ন ভাবে লিখা আসতে পারে, মন্তব্যগুলো থেকে আরও গ্রহণযোগ্য উপায় বের হয়ে আসতে পারে।
- ভাল ছাত্র-খারাপ ছাত্র নিয়ে আপনার দৃষ্টি ভঙ্গি ভাল লেগেছে, এক্ষেত্রেও একই কথা আরও অনেক বিষয় আলোচনায় আসতে পারত।
- আবার ধরেন লুনাবোটিক্সের বিষয়, এটা নিয়েও আরও দীর্ঘ আলোচনা হতে পারত।
- জি আর এ আমি কখনও দেই নাই সুতরাং এই বিষয়ে কিছু বললাম না।
- হেডিং এ দুই বিভাগের ড্রোন লড়াই দেখলাম, ভিতরে এই সম্পর্কিত তেমন কিছুই লেখা নাই।
-উপরের মন্তব্বে ইতিমধ্যে দুইজন বলেছেন শিক্ষক.কম এর কথা, আপনি আগ্রহী হলে সেখানে শিক্ষক হিসেবে নিবন্ধন করে ফেলতে পারেন কিন্তু। চমৎকার একটা প্ল্যাটফর্ম।
মোটকথা, প্রতিটি বিষয় নিয়েই আরও গুছিয়ে অনেক কিছু লিখা যেতে পারত।

গতবার সামারে প্রথম রোযার সময়টাতে আমরা ইলিনয় তে একটা কনফারেন্স এটেন্ড করতে গিয়েছিলাম। রাতের বেলা সেহেরী খাব বলে, আমাকে নিয়ে রাত তিনটা বাজে বের হয়েছিল রেস্টুরেন্ট খুজতে যাতে আমি সেহেরীর সময় কিছু খেতে পারি। যথেষ্ট ভাল মানুষ হওয়া সত্ত্বেও এদের মাঝে আমি যেই জিনিসটার অভাব দেখেছি সেইটা হল ভালোবাসার অভাব। আমরা খুব সহজেই একজন আরেকজনকে যেইভাবে ভালোবাসাতে পারি, এরা তা পারে না। আমাদের মাঝে ভালোবাসা আছে বলেই হাজারো যন্ত্রণার মাঝেও আমাদের জীবনটা এত সুন্দর, নিজেরা প্রচন্ড কষ্টের মধ্যে থেকেও আমরা আর একজনের দুঃখের কথা শুনলে হু হু করে কেদে উঠি, যেইটা তারা পারে না।

এই প্যারা থেকে কিন্তু আপনার প্রতি আপনার দুই কলিগের ভালবাসায় প্রকাশ পেয়েছে। তারপরেও কেন বললেন ওরা ভালবাসতে পারেনা ঠিক বুঝলাম না। তাহলে কি কান্নায় ভালবাসার একমাত্র প্রকাশ?
আসলে মূল ব্যপারটা হল কালচারাল পার্থক্য। আমরা জাতি হিসেবে বেশী আবেগী, এই আবেগ কিন্তু সব ক্ষেত্রে ভাল না, ভুল ভাবে অতিরিক্ত আবেগ চালিত হলে তা মানুষ কে ভুল রাস্তায় নিয়ে যেতে পারে।

ওদের হয়ত প্রকাশভঙ্গি কম কিন্তু তার মানে কোনভাবেই এটা নয় যে তারা ভালবাসতে জানেনা।

যাই হোক, আমার ব্যক্তিগত চিন্তা থেকে মন্তব্য করলাম। তার মানে এই না যে আমি কথায় ঠিক। হাসি
আরও লিখুন, আরও গুছিয়ে যুক্তিনির্ভর লিখা।
লিখা শেষে নিজের নাম/নিক দিলে এটা কার লেখা বুঝতে সুবিধা হয়।
শুভকামনা রইল। হাসি
ভাল থাকবেন।

__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---

অতিথি লেখক এর ছবি

চলুক

দীনহিন এর ছবি

পুরোটা পড়ার পর একটা আফসোস বেরিয়ে এল, আহা, এমন করে যদি সবাই ভাবত! সবাই যদি চিন্তা করত দেশের জন্য, মানুষের জন্য! সবার জন্য কিছু একটা করার এমন অস্থিরতা, এমন শুভচিন্তা থাকত!

এই কাজে আমাদের যেই পরিমাণ অর্থ, শ্রম আর সময় ব্যয় হয় তা দিয়ে আমরা এমন কিছু করব যাতে সেইসব অসহায় মানুষগুলো নিজেরাই নিজেদের শীতবস্ত্র কিনতে পারে তাহলে পুরো বিষয়টাই কিন্তু অন্যরকম হবে।

সমস্যাটা তো এখানেই, সর্বস্ব শুষে কিছু শীতবস্ত্র বিলোতেই হয়, নইলে শোষকের আত্মা অশোধিত থেকে যায় যে!

এইজন্যই আমরা এত সৌভাগ্যবান, কেননা আজও আমাদের মাঝে ভালবাসা আছে, তা ফুরিয়ে যায়নি; শুধু তাকে খুঁজে নিতে হয় আর বণ্টন করে যেতে হয়।

আসলে এটুকুই আছে, আর সব ফুরিয়ে গেছে!

পৃথিবী সব জিনিস বণ্টন করলে তা একসময় শেষ হয়ে যাবে কিন্তু ভালবাসা আর জ্ঞান কখনও ফুরাবে না, উপরন্তু তা প্রতিনিয়ত বেড়েই চলে।

হিংসা ও অজ্ঞতাও কিন্তু ফুরোয় না, ভালবাসা আর জ্ঞানের সাথে বেশ ঘেঁষাঘেঁষি করেই চলতে পছন্দ করে তারা!

যথেষ্ট ভাল মানুষ হওয়া সত্ত্বেও এদের মাঝে আমি যেই জিনিসটার অভাব দেখেছি সেইটা হল ভালোবাসার অভাব। আমরা খুব সহজেই একজন আরেকজনকে যেইভাবে ভালোবাসাতে পারি, এরা তা পারে না।

ভালবাসার প্রকাশ ভিন্নতা থাকতে পারে, তাই বলে 'ভালবাসার অভাব' বলাটা কি ঠিক হল?

কোন এক অদ্ভুত কারণে, আমাদের দেশের খারাপ ছাত্রদের প্রতি কোনরকম যত্নই নেয়া হয় না, বরং উল্টো চলে নানা রকম মানসিক অত্যাচার।

গুড অবজার্ভেশন! সবচেয়ে ক্ষতিটা করেন বোধহয় অভিভাবকরা, 'খারাপ' শুনতে শুনতে এক সময় সত্যি 'খারাপ' হয়ে যায়।

আপনার আইডিয়াগুলো নিয়ে অনেক কথা হতে পারে, কিন্তু আপনি ভাবেন এবং বসে না থেকে কিছু একটা করতে চান, এই বিষয়টি নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়!

.............................
তুমি কষে ধর হাল
আমি তুলে বাঁধি পাল

শেহাব এর ছবি

আমার কাছে মজাই লাগে। বাচ্চা বাচ্চা ছেলে তো, একটা উত্তেজনা বেশি আর কি।

ধুসর গোধূলি এর ছবি

ফেইসবুকের বিভিন্ন গ্রুপে কী নিয়া কাদা ছোঁড়াছুড়ি হচ্ছে? কার হাত্তিটা বড় সেইটা নিয়ে নাকি কে আগে হাত্তি কিনছে সেইটা নিয়ে? চিন্তিত

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।