চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় কলেজ চট্টগ্রাম সরকারি কলেজের বহিরঙ্গে চমক এসেছে। কিন্তু অন্তরঙ্গে মৌলবাদ রয়ে গেছে। কলেজে ঢুকতে গিয়ে প্রধান ফটক পার হলেই চোখে পড়ে ছাত্র শিবিরের বিশাল বিশাল সব ব্যানার। আবাসিক হলগুলো জুড়ে আছে ব্যানার-পোস্টার-ফেস্টুন-দেয়ালিকা! আছে দাওয়াতি কার্যক্রমের পোস্টার। যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার পক্ষে পোস্টারও আছে। কলেজের একটি প্রবেশপথ প্যারেড ময়দান দিয়ে ঢুকতে চোখে পড়ে শিবিরে যোগদানের আহ্বান সম্বলিত সারি সারি ব্যানার। অথচ, আজ (৯ই ফেব্রুয়ারি) প্রথম আলো'র প্রতিবেদনে জানা গেল- 'কলেজটা সত্যিই বদলে গেছে'।
কিন্তু, চট্টগ্রাম কলেজটা বদলে যায় নি। এতটুকুও না। মৌলবাদ এই ক্যাম্পাসে বহাল তবিয়তেই আছে। কলেজ আর ছাত্রশিবির যেন কবি রুদ্র'র সেই উচ্চারণ- 'আমার ভিতর বাহিরে অন্তরে অন্তরে, আছো তুমি হৃদয় জুড়ে'! আজ বাংলাদেশ সময় দুপুরবেলা চট্টগ্রাম কলেজ ক্যাম্পাস ঘুরে কলেজের বেশ কিছু ছবি তোলা হয়েছে। এই ব্লগে পোস্ট আকারে প্রকাশের উদ্দেশ্যেই মূলত আমাদের ছবি তোলা। কয়েকটি ছবি ইন্টারনেট থেকে সংযোজন করা।
ভিতরে বদল না হলে যে আসলে কিছুই বদলায় না, প্রথম আলোর চালাকি দেখার পর সে বিষয়ে সংশয় থাকার কথা নয়। বহ্বারম্ভে লঘুক্রিয়া! কোনও বদল হল না, শুধু বাইরে থেকে যা চোখে পড়ে! আমরা খেয়ার করছি- রাজনৈতিকভাবে শিবির এখন বেশ কোণঠাসা। কু-কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য তারা বেছে নিয়েছে এই সরকারি কলেজের হোস্টেল। শিবিরের সাংগঠনিক কার্যক্রমের ওপর সরকারিভাবে কড়াকড়ি আরোপ হওয়ার পরও এই প্রকাশ্য তৎপরতা কেন? সাধারণ ছাত্রদের দলে টানা, বায়তুলমালের টাকা আদায়, মহানগরীর রাজনীতিতে কলেজ শাখার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে শিবিরের এই কার্যক্রমকে আড়াল করলো প্রথম আলো।
খেয়াল করুন-
১. প্রতিটা গেটের এবং ডিপার্টমেন্ট ও গুরুত্বপূর্ণ প্রতিটি ভবনের সামনে একাধিক ব্যনার এবং পোস্টার লাগানো।
২. শহীদ মিনার এবং যে ম্যুরাল নিয়ে এত স্তুতি গাওয়া হয়েছে প্রতিবেদনে, সেগুল্রির সামনেই তিনটি বিশাল ব্যনার আছে। একেবারে ৫-৭ হাত দূরত্বে।
৩. উন্মুক্ত লাইব্রেরি এবং মসজিদের গেটের সামনে লাগানো পোস্টার ও মসজিদের গেটে লাগানো পোষ্টারের নীচে খেয়াল করুন।
৪. প্রথম আলো চাইলেই মূল ফটকের সামনের ব্যনারটি ছবিতে তুলে ধরতে পারত। তারা সেটা করেনি। এবং এই ব্যনারটি কে এড়িয়ে ছবি তোলা যে খুবই কঠিন সেইটা একাধিক এঙ্গেল থেকে তোলা ছবিতে ভালো ভাবে বুঝা যাবে। দূর থেকে নেওয়া কিছু শটও আছে। এমন কি সেগুলিতেও এই ব্যনারের ছবিটা চলে আসে।
কলেজে প্রবেশ করার পর সরেজমিনে দেখা মিলেছে- মূল ফটক পার হলেই মৌলবাদী ছাত্র শিবিরের ব্যানার! যা আমাদের সাদামাটা চোখে পড়লেও প্রথম আলোর ল্যান্সে ধরা পড়ে না। মৌলবাদকে এইরকম আড়াল করার এই অপচেষ্টা আমরা ঘৃণাভরে প্রত্যাখান করি। চট্টগ্রাম নগরের বুকে মৌলবাদী কার্যক্রমকে এমন তিলোত্তমা ঝা-চকচকে পরিবেশনের নামই কী তবে প্রথম আলো? বহুবছর আগে বঙ্কিমচন্দ্র প্রশ্ন করেছিলেন, 'এই জীবন লইয়া কী করিব'। আজ প্রশ্ন উঠে- প্রথম আলো'র এই 'বদল'র রাজনীতি লইয়া কী করিব? যে বদল সত্যকে আড়াল করে, সেই বদল দিয়ে কী করবো? বদলে যাওয়ার মানে কী?
প্রথম আলো সর্বাধিক প্রচারিত দৈনিক বলেই এই সমালোচনা। সাম্প্রতিককালে প্রথম আলোর ভূমিকা ভীষণ প্রশ্নবিদ্ধ। মৌলবাদী রাজনীতিকে এইভাবে চকচকে আধুনিক মোড়কে উপস্থাপন এবং এইসময় প্রথম আলোর ভুমিকা আমাদের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ। চট্টগ্রামে জামায়াত-শিবিরের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত চট্টগ্রাম সরকারি কলেজের শেরে বাংলা হলে সাড়াঁশি অভিযান চালিয়ে গত আগস্ট মাসেই শিবির সন্দেহে ৫৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এই সময় হলের বিভিন্ন কক্ষে তল্লাশি চালিয়ে বেশকিছু জিহাদি বই উদ্ধার করা হয়।
অবকাঠামোগত পরিবর্তন নিশ্চয়ই কর্মোদ্যোগী ফল। কিন্তু, কায়দা করে ছবি তুলে কেবল সদর দরজার অবস্থা প্রকাশ করার মানে কী? এই একটি ছবি কি সারা কলেজের প্রতিনিধিত্ব করে? যে ব্যানার, যে আহ্বান, যে মৌলবাদী পরিবেশ, তার অব্যাহত সাংস্কৃতিক প্রচারের তো এতটুকুও ক্ষয় হয়নি, তাহলে কেন বলা হচ্ছে কলেজটি বদলে গেল? এইভাবে শিবিরকে আড়াল করা তো শাক দিয়ে মাছ ঢাকারই অপচেষ্টা!
লেখা: রাজীব নন্দী, শিক্ষক ও এ্যাকটিভিস্ট
ছবি: নির্ঝর মজুমদার, ব্লগার ও সাংবাদিক
ছবির ক্যাপশন:
১. কলেজের প্রধান ফটক- ২০০৭ সালের ছবি
২. ফটকটি ভাঙ্গা হলো- ২০১২ সালের ছবি
৩. নতুন ফটক- ২০১৪ সালের ৯ই ফেব্রুয়ারি তোলা ছবি
৪. বাইরেও থেকেও দেখা যাচ্ছে শিবিরের ব্যানার
৫. অথচ প্রথম আলো বলছে- কলেজটাই নাকি বদলে গেলো
৬. ছাত্রী হোস্টেলের সামনে জেহাদের ডাক!
৭. শহীদ মিনারের পাশেই তো শিবিরের ব্যানার
৮. কলা ভবনের পেছনে নবীনকে বরণ করে নিচ্ছে শিবির
৯. প্যারেড কর্নারে, কলেজের ডান পাশে তরুণদের প্রতি শিবিরের আহ্বান
১০. বিজ্ঞান অনুষদের ভবনে শিবিরের প্রচারণা
১১. দ্বিতীয় গেইটেও আছে শিবিরের সেইরকম ব্যানার
১২. ভূগোল বিভাগে উঠতেই চোখে পড়বে শিবিরের এমন ব্যানার
১৩. মসজিদের দিকে আগাতেই এমন ব্যানার দেখা যাবে
১৪. কলেজের ভেতর থেকে প্রধান ফটকের উল্টা দিক, দেখুন শিবিরের ব্যানার
১৫. ছাত্রী হল থেকে উপরে উঠে রাস্তায় বের হওয়ার সময় চোখে পড়বেই শিবির
১৬. গণিত বিভাগের সামনে রবের শ্রেষ্টত্বের ঘোষণা করছে শিবির
১৭. পূর্ব দিকের অন্যতম ফটকে শিবিরের ব্যানার দেখুন, যা রাস্তা থেকেও দেখা যায় দিব্যি
১৮. একাদশ শ্রেণীতে বরণ করে নিচ্ছে শিবির
১৯. উন্মুক্ত পাঠাগারে ঢুকতেই চোখে পড়বে ‘জননেতা শহীদ কাদের মোল্লা’র জন্য জাতির বিবেকের কাছে প্রশ্ন রাখা পোস্টার
২০. সোহরাওয়ার্দী হলের পাশেই দেখুন কেমন ব্যানার
২১. কলেজের পূর্বগেইটের চিপা গলিতেও উঁকি দিচ্ছে শিবির
২২. কলেজের জামে মসজিদে আপনাকে আমন্ত্রণ
মন্তব্য
প্রথম আলো যদি বলে ভালো
আসলে তা কালোই হবে, ধরে নিয়ে পড়া ভালো।
প্রথম আলো যদি বলে কালো
ভয়ের কিছু নেই, নিশ্চিন্ত থাকতে পারো।।
বদলে যাওয়া বলতে কি কেবলই নতুন গেট, নতুন করে রং লাগানো -এসব?
পোষাক বদলালেই তো আর মানুষটা বদলায় না।
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ সময় নিয়ে, ছবি তুলে তুলে ভেতর -টাকে সামনে তুলে ধরার জন্য।
[মেঘলা মানুষ]
প্রথম আলোর রিপোর্টটা আহমেদ মুনির এর। তিনি তো চট্টগ্রামের বেশ পরিচিত সাংবাদিক মুখ, তাইনা?
পরিচিত অপরিচিততে কিছু যায় আসে না। বড় মিডিয়া হাউসের সাংবাদিকের পাল নিজেদের সবকিছুর উর্ধ্বে ভাবতে ভালোবাসে। তাদের কেউ করতে পারবে বলে মনে করে তারা।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
সেটাই। এই লোক এরকম রিপোর্টিং কিকারনে করলো সেটাই ভাবছিলাম।
সার্ভে নিয়ে কাজ করতে গেলে আমাদের নন-রিপোর্টিং বায়াস নিয়ে কাজ করতে হয়। বাংলাদেশে দেখছি নন রিপোর্টিং এবং অতি অবশ্যই মিস-রিপোর্টিং বায়াস নিয়ে কাজ করার প্রচুর সুযোগ আছে!
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
লেখায় ৫ তারা।
বদলটা ত নিতান্তই এক ছল বলে মনে হল!
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
নিজে সময় করে ছবি তুলে, লেখাটি লিখে সবার সমনে তুলে ধরার জন্যে পোস্টদাতাকে অনেক ধন্যবাদ।
প্রথম আলুর বদলে যাওয়া মানে হলো প্রগতিশীলতার নাম করে সন্ত্রাস আর জঙ্গি মৌলবাদী দল জামাতকে সবার চোখের আড়াল করা, প্রথম আলুর বদলে যাওয়া মানে সবাইকে (আওয়ামিলী/বিম্পি) সমান খারাপ প্রমাণ করা আর সেই খারাপের হাওয়া জামাতের গায়ে না লাগতে দেওয়া। দিন দিন প্রথম আলুর এই নোংরামি স্পষ্ট হচ্ছে কিন্তু সেটা গুটি কয়েক মানুষের কাছে, দেশের বেশিভাগ মানুষের পক্ষে তাদের এই সুক্ষ নোংরামি বোঝা সম্ভব না। এমন লেখাগুলো তাই ওদের মুখোশ খুলে দেওয়ার জন্যে খুব প্রয়োজন, তাই শেয়ার দিলাম ফেসবুকে। প্রথম আলু দেশের সবচেয়ে সর্বাদিক প্রচারিত দৈনিক, এটা জাতি হিসাবে আমাদের জন্যে দুর্ভাগ্যের
মাসুদ সজীব
হু, এমন বদল নীতি ও আদররশের সাথে সংগতিপূণ নয়
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
প্রথম আলুর এই রুপ- নতুন তো কিছু নয়, নতুন কি আর !
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ লেখাটির জন্য।
__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---
মানুষ / দ্যাশ সবই বদলাইবো সত্যই যেদিন প্রথম আলো বদলাইবো।
নতুন মন্তব্য করুন