মৌলিক বই চুরি, প্রসঙ্গ - কাজী আনোয়ার হোসেন

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: রবি, ২৩/০২/২০১৪ - ১০:৩৪পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

কয়েকদিন আগে চরম উদাস লিখলেন বই চুরি নিয়ে। বইয়ের পিডিএফ আপলোড করে বিক্রি করা, এমনকি সেগুলো বিক্রি করা নিয়ে বেশ অসাধারণ একটা লেখা! তাই মনে হলো, মৌলিক বই চুরি করে নিজের নামে ছাপিয়ে দেয়ার ইস্যুটা নিয়েও লেখা দরকার।

কাজী আনোয়ার হোসেন, উনি বাংলাদেশের সবচেয়ে নামকরা অনুবাদক হতে পারতেন, কিন্তু হলেন সবচেয়ে বিখ্যাত নকলবাজ। ফেসবুকে আপনার একটা স্ট্যাটাস চুরি করতে দেখলেও নিশ্চয়ই আপনার গায়ে লাগে, আর অন্যদের এতো বিশাল মৌলিক গল্পগুলো চুরি করে নিজের নামে ছাপিয়ে দিয়ে কাজী আনোয়ার হোসেন "দ্যা গ্রেট কাজীদা" খেতাব পাচ্ছেন, এ ধরনের হিপোক্রেসি দেখলে কষ্টই লাগে। এটা নিয়ে আমার অবস্থান হচ্ছে, অনুবাদ করুক, নিজের নামে আরেকজনের গল্প না ছাপালেই হলো। এটা নিয়ে অনেকের সাথে কথা হয়েছে আমার। পুরো ব্যাপারটা তাই কনভার্সেশনের মত করে নিচে লিখলাম।

অনেকে বলেন, কপিরাইটের ঝামেলা এড়ানোর জন্য নাকি এই কাজ করেছেন।

সেবা তো অনেক অনূদিত বইও বের করছে। কই, সেখানে তো কপিরাইটজনিত সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছেনা! অনেকে অনুবাদ করছে, হয়তো অরিজিনাল লেখককে রয়্যালিটি দিচ্ছেনা। তৃতীয় বিশ্বের মাথাপিছু আয় যতদিন না পাল্টাচ্ছে, ততদিন এটা ঠিক হবেনা। আমাদেরকে চেষ্টা করে যেতে হবে সেই পরিস্থিতি ঠিক করার। কিন্তু কাজী আনোয়ার হোসেন কপিরাইটও দিচ্ছেননা, আবার নিজের নামেও চালাচ্ছেন।
কোন অবস্থাতেই মাসুদ রানা নামে ওগুলো ছাপানো উচিৎ হয়নি, কপিরাইটের ঝামেলা থাকুক আর না থাকুক। আপনি বাইরে গিয়ে একটা বই লেখেন, আপনার অজান্তে কাজী আনোয়ার হোসেন সেটাকে মাসুদ রানা বলে ছাপিয়ে দিক, তারপর দেখবেন কেমন লাগে !!

অনেকে বলেন, উনি বিদেশী গল্পকে মাসুদ রানা বানাতে যে কষ্ট করেন, এজন্য ওনাকে অরিজিনাল রাইটারের কৃতিত্ব দেয়া যায়।

বিদেশী গল্পকে মাসুদ রানা বানাতে কষ্ট হয় অনেক? প্লিজ, একটু অরিজিনাল ভার্সনগুলো পড়ে দেখবেন, লাইন বাই লাইন নকল, একদম লাইন বাই লাইন। নামগুলো চেঞ্জড শুধু। সেটার মধ্যে মাঝে মাঝে সামান্য একটু কনটেক্সট যোগ করা বা এদিক ওদিক করা কোনো ব্যাপার না। উনি পুরোটাই অনুবাদ করতে পারেন, এরপর অনুবাদকের কৃতিত্ব নিতে পারেন।

অনেকে বলেন, সেবার বইগুলোয় লেখা থাকে, "বিদেশি গল্পের ছায়া অবলম্বনে"

আমি বলি, সেবার অনেক অনেক (সত্যিকার অর্থে, অনেক) বইতেই আমি “বিদেশী গল্পের ছায়া অবলম্বনে” কথাটা দেখিনি। প্রথমদিকে লিখতেন, পরের দিকে সেই কার্টেসিটুকুও বাদ দিয়েছেন। আমার বাসাতেই মাসুদ রানার অনেক বই আছে, যাতে এ ধরনের কিছুই পাওয়া যাবেনা তন্ন তন্ন করে।

অনেকে বলেন, উনি নাকি বরাবরই বলেছেন এগুলো বিভিন্ন বিদেশি বইয়ের কাহিনী অবলম্বনে লেখা।

আমি বলি, উনি মুখে বললেই যে ওনার লেখা চুরি জাস্টিফায়েড হয়ে গেলো, তা তো না। অগ্নিপুরুষের কাহিনীর প্রশংসা করে একজন পাঠক যখন কাজী আনোয়ার হোসেনকে বাহবা দিয়ে মতামত পাঠালো (অন্য একটা বইয়ের শেষাংশে পড়েছিলাম), তখন তো উনি একবারের জন্যেও বলেননি এটা Men on Fire থেকে নেয়া। এরকম হাজার হাজার উদাহরণ আছে।

অনেকে বলেন, মাসুদ রানা সিরিজ জনপ্রিয় হবার পর নিয়মিত প্রকাশের জন্য পাঠকের চাপ থাকত একটা। এজন্য উনি এমন করেছেন।

পাঠকের চাপ থাকবে, এজন্য কি আপনি অনুবাদকে নিজের নামে চালিয়ে দেবেন নাকি ?? এটা অনেক বড় ধরনের অন্যায়।

অনেকে বলেন, উনি সেবা প্রকাশনী প্রতিষ্ঠা করেছেন, অনেককে লেখার সুযোগ করে দিয়েছে।

এগুলোর জন্য তাকে ক্রেডিট দিতে আমার কোন সমস্যা নেই। দেবো না কেন? কিন্তু এগুলোর জন্য তার চুরি করে লেখা জাস্টিফায়েড হয়ে যায় না।

অনেকে বলেন, প্রচুর পাঠক তৈরি করেছেন উনি। বইয়ের দামও কম রেখেছেন।

উনি নিজের পাঠক তৈরি করেছেন, অরিজিনাল রাইটারকে কোনো ক্রেডিট না দিয়েই। ক্লাইভ কাসলারের ডার্ক পিটের হেন কোন লেখা নেই, যেটা উনি নকল করেননি, কিন্তু আমি কাসলারের লেখা পড়ার আগে, অর্থাৎ মাসুদ রানা পড়তে গিয়ে কোনদিন ডার্ক পিট নামটাও জানতে পারিনি। উনি অনুবাদ করতে পারতেন বইগুলো, আসল লেখক ও আসল কাহিনীকে তার যোগ্য সম্মান দিয়ে। এতে অনুবাদক হিসেবে ওনার সম্মান বাড়তো বই কমতোনা। আর সেবার অনুবাদ বইগুলোর দাম কি অস্বাভাবিক বেশি? কখনোই না, তাহলে দামের প্রসঙ্গ এখানে অবান্তর।

অনেকে আর কিছু না পেয়ে বলে, তাহলে আপনি একটা লেখা লিখে দেখান না !!

অন্যদের মৌলিক একটা লেখা নকল করে বিখ্যাত হবার চেয়ে কম ভালো একটা লেখা লিখে কম খ্যাতি পাওয়া আমার কাছে নৈতিক দিক থেকে অনেক বেশি উত্তম। সে সাহিত্যের বিনোদন দিয়ে আসছে, চুরি করে। আপনার কাছে যদি এটাকে এক্কেবারেই নিষ্পাপ মনে হয়, তাহলে আপনারো তো একই কাজ করা উচিৎ। শুরু করুন তো নকল করে একটা লেখা, দেখুন তো মনের ভেতরে থেকে সায় পান কিনা !!

অনেকে বলেন, আপনি কি পাইরেটেড মুভি-সিরিজ দেখেন না?

তৃতীয় বিশ্বের মানুষদের মাথাপিছু আয়ের ব্যাপারে তো আগেই বলেছি। আরেকটা ব্যাপার, চড় মারা আর মানুষ খুন করা, দুটোই খারাপ কাজ বলে কি এখন রোজ রোজ মানুষ মারবেন? যেটা এই মুহূর্তে ঠিক না হলেই নয়, সেটা আগে ঠিক করা কি বেশি প্রয়োজন নয়? এভাবেই তো চর্চা তৈরি হবে, এভাবেই আমরা এমন একটা সংস্কৃতি তৈরি করবো, যেখানে মেধাকে তার প্রাপ্য সম্মানটুকু দেয়া হবে।

ফরহাদ হোসেন মাসুম
গ্র্যাজুয়েট স্টুডেন্ট
ইউনিভার্সিটি অফ আরকানসা, যুক্তরাষ্ট্র


মন্তব্য

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

ভাবানুবাদকে চুরি জাহির করার অপচেষ্টাটা দুঃখজনক। অনুবাদের ক্রেডিট না দেয়াটা কপিরাইট লঙ্ঘনের ব্যাপার। আর বইয়ের ক্ষেত্রে পয়সা না দিয়ে হাপিস করে দেয়াটা চুরি। চুরির প্রসঙ্গে কপিরাইট প্রসঙ্গ মিলিয়ে কি প্রমান করতে চাইছেন বুঝতে পারছি না। এই কি - যেহেতু কাজীদা 'চুরি' করেছেন তাই আপনার চুরি করা দোষের কিছু না? আফসোস। আপনাকে এ বিষয়ে করুণা করা ছাড়া আর কিছু করতে পারছি না।

অতিথি লেখক এর ছবি

কপিরাইট লংঘন করা তো চুরিই! তাহলে চুরির প্রসঙ্গে কপিরাইট আসবে না কেন? চরম উদাসের লেখাতে খুব ভালো করেই এটা উনি বুঝিয়ে দিয়েছিলেন।

কাজী আনোয়ার হোসেন ভাবানুবাদই করেছেন, কিন্তু ভাবানুবাদের জন্য নিজেকে মূল লেখক হিসেবে দাবি করা যায় না, অনুবাদকই দাবি করতে হয়। সেটা করলেই সমস্যা থাকতো না।

আমাকে করুণা করছেন কেন ভাই? আমি চুরিটা কোথায় করছি? আমি ক্লাইভ কাসলারের লেখা নিজের বলে দাবি করেছি?

হিমু এর ছবি

ভাবানুবাদ করে কাজী আনোয়ার হোসেন তো মূল লেখক হিসেবে নিজেকে দাবি করেননি। ভাবানুবাদক হিসেবেই দাবি করেছেন। বিদেশী কাহিনী অবলম্বনে সেগুলো লেখা, এ কথাও অনেকবার বলেছেন।

আপনার বাসায় হুমায়ূন আহমেদের "অমানুষ" বইটা আছে? ওটা খুলে একটু দেখবেন তো, ভেতরে কোথাও মেন অন ফায়ারের কথা লেখা আছে কি না। যদি না থাকে, তাহলে হুমায়ূন আহমেদকেও চোর বলে যায়েন।

সাফিনাজ আরজু এর ছবি

হিমু ভাইয়ের কথার সুরেই বলি -

কাজী আনোয়ার হোসেন তো মূল লেখক হিসেবে নিজেকে দাবি করেননি। ভাবানুবাদক হিসেবেই দাবি করেছেন। বিদেশী কাহিনী অবলম্বনে সেগুলো লেখা, এ কথাও অনেকবার বলেছেন।

এই কথা উনি বারবার বলেছেন, বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে বলেছেন। আপনার জন্য এখানে একটা সাক্ষাৎকারের লিংক দিলাম।

কাজি আনোয়ার হোসেন এর সাক্ষাৎকার-ইত্তেফাক ঈদুল আযহা সংখ্যা ২০১১

সম্পূর্ণ সাক্ষাৎকারটা পড়ে দেখতে পারেন তারপরেও আপনার লেখার সাথে যায় সেই অংশটুকু প্রশ্ন উত্তর হিসেবে নিচে তুলে দিলাম-

প্রশ্ন : প্রথম দু-তিনটা বইয়ের পরই শুরু হলো ভাবানুবাদ বা অ্যাডাপটেশন। রানার কাহিনি সংগ্রহ করা হয়েছে অ্যালিস্টেয়ার ম্যাকলিন, জেমস হেডলি চেজ, রবার্ট লুডলাম, উইলবার স্মিথ, ক্লাইভ কাসলার, হ্যামন্ড ইনস, ডেসমন্ড ব্যাগলি, ইয়ান ফ্লেমিংসহ অসংখ্য লেখকের বই থেকে। মৌলিক রচনা দিয়ে শুরু করে চলে এলেন অ্যাডাপটেশনে। আপনার কি মনে হয়, মাসুদ রানা দিয়ে যে ধারার সূত্রপাত করেছেন, তা আমাদের রহস্যসাহিত্যকে সমৃদ্ধ করতে পেরেছে?

উত্তর : আমার মনে হওয়ার কোনো গুরুত্ব বা মূল্য আছে বলে মনে করি না। আমি তো সমালোচক, বিচারক বা পাঠক নই। লেখক মাত্র।

আসল কথাটা বলি, আমি সাধারণ মধ্যবিত্ত বাঙালি পরিবারের সন্তান, লেখালেখিতে কিছুটা হাত ছিল। আমার পক্ষে দু-চারটে স্পাই থ্রিলার লিখে ফেলা কঠিন কিছু ছিল না, কিন্তু বিদেশি কাহিনির সাহায্য ছাড়া ৪১৩টা মাসুদ রানা লিখে নামাতে হলে আমার সময় লাগত কমপক্ষে ৪০০ বছর। সেই কারণেই আমার অ্যাডাপটেশন, বিদেশি কাহিনির অবলম্বন। এসব কাহিনি লিখতে হলে বিশাল ও বিচিত্র অভিজ্ঞতার ঝুলি থাকতে হয়, আমার পক্ষে সে অভিজ্ঞতা অর্জন করা কোনোক্রমেই সম্ভব ছিল না—সত্যি বলতে কী, কারও পক্ষেই সম্ভব নয়। ইংরেজি সাহিত্যেও বড় বড় থ্রিলার রাইটারের মৌলিক লেখার সংখ্যা ১২-১৪টির বেশি নয়।

আমার অ্যাডাপটেশন যে ধারার সূত্রপাত করল সেটা ভালো কি মন্দ, পড়ে ভালো লাগে কি লাগে না , বা এর ফলে আমাদের বাংলা রহস্য-সাহিত্য সমৃদ্ধ হলো কি হলো না—এসবের বিচার করবে, রায় দেবে পাঠক ও উপযুক্ত সমালোচক—এ বিষয়ে আমার কিছুই বলার নেই।

জানিনা আপনি কি কারনে আর কি উদ্দেশে উনাকে অসৎ প্রমান করতে চাইছেন।
লেখাটা একদম ভাল লাগল না।

__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

মূল বইয়ের নাম না দিয়ে শুধু ভাবানুবাদ লেখা যথাযথ রেফারেন্স বলে মনে করিনা। নিজেকে মৌলিক লেখক বলে দাবী করেননি একথা সত্যি। তবে রেফারেন্স যথাযথ নয় একথাও সত্যি।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

অতিথি লেখক এর ছবি

একজ্যাক্টলি, ঠিক এই কথাটাই বলতে চাইছিলাম, ত্রিমাত্রিক কবি !!

অতিথি লেখক এর ছবি

হুমায়ূন আহমেদ আর যাই করুক, চুরামি করেন নাই কখনো; দরকার পড়েনাই। কাজীদা কুনো বইয়ের কোথায় এরকম মূল লেখকের নাম লিখেছেন সেইটা এইবার দেখান একটু,

- খাইত হুমায়ূন পাঠক

হিমু এর ছবি

খালি মাসুদ রানায় দেখাতে হবে, নাকি যে কোনো বইতে দেখালেই চলবে? "তিনটি উপন্যাসিকা", "ছায়া অরণ্য", "পঞ্চ রোমাঞ্চ", "ছয় রোমাঞ্চ" খুলে দেখেন, লেখকদের নাম পরিষ্কার দেখতে পাবেন। সেগুলিও ভাবানুবাদ।

"কাঠামোগত সামান্য মিল" ছাড়া "আর কোনো সম্পর্ক" না থাকলে যদি হুমায়ূন আহমেদ সাধু থাকতে পারেন, কাজী আনোয়ারের দোষটা কোথায়?

অতিথি লেখক এর ছবি

মাসুদ রানা ছাড়া আবার কাজীদা হয় নাকি!!! ২০০ বই মেরে খালি অজনপ্রিয় কিছু বইয়ে নাম উল্লেখ করলে হইলো কিসু???

হুমায়ূন আহমেদের একটা অনুবাদের বই খালি দেখান যেখানে মূল লেখকের নাম নাই। তাছাড়া একজনকে চুরির অপবাদ দিয়ে আরেকজনের চুরি জায়েজ করার চেষ্টা করার মানেটা ঠিক বুঝলাম না।

চুরামি - উৎস ঠিকমত না জানানো।
সুতরাং পয়লা দোষ - উৎস ঠিকমত না জানানো।

আপাতত এটুকুতে একমত? তাইলেই হবে।

- খাইত হুমায়ূন পাঠক

হিমু এর ছবি

আজকে চুরির নতুন সংজ্ঞা শিখলাম। আপাতত মনে হচ্ছে এই সংজ্ঞা বানানো হয়েছে হুমায়ূনরে সাধু আর আনোয়াররে চোর বানানোর জন্য।

যদি ভাবানুবাদ চুরি হয়, তাহলে আমি যতদূর বুঝি, এ কে কুইন্যালের নাম বইতে লেখা থাকলেও যা, না থাকলেও তা-ই। আপনি "অমানুষ" বইটার কপিরাইট কার, সেইটা পেস্ট করতে ভুলে গেছেন মনে হয়। ঐখানে যদি এ কে কুইন্যালের বদলে হুমায়ূনের বা হুমায়ূনের মনোনীত কোনো ব্যক্তির নাম থাকে, তাহলে সেইটাও এই পোস্টের লেখকের বক্তব্য অনুযায়ী চুরি।

আপাতত এইটা বুচ্ছেন? তাইলেই হবে।

অতিথি লেখক এর ছবি

তর্কের খাতিরে ধরলাম হুমায়ূন আহমেদও চুর। তাইলে কাজীদা যে নামটা পর্যন্ত উল্লেখ না কইরা তার চেয়েও বড় চুর এইটা মানেন তো? তাইলেও হবে। কপিরাইটের দিল্লী তো আরো বহুত দূর।

আচ্ছা কাজীদা বাদ দেন। ধরেন আমি আপনের এট্টা গপ্পের নাম, ক্যারেক্টার আর স্থান পাল্টায়া কপিপেস্ট কইরা ফ্ল্যাপে লিখলাম 'আন্তর্জালিক গপ্পের ছায়া অবলম্বনে'। তাইলে কি আমি সাধু না চুর?

চুর মানলেই চলবে।(নাকি যেহেতু কাজীদা নিয়া কিছু কইলেই হুমায়ূন চইলা আসে সেহেতু আমার লগে আবার সাইমুম সিরিজের লেখকও কেনু একই কাম করে সেইটা নিয়া ত্যানা প্যাঁচাইবেন???? )

- খাইত হুমায়ূন পাঠক

হিমু এর ছবি

"তর্কের খাতিরে" ধরেন কেন? যদি কাজীদারে চোর ডাকতে পারেন, তাহলে বলেন হুমায়ূনও চোর। হুমায়ূনের বেলায় এতো "খাতির" কেন ভাইটু?

অতিথি লেখক এর ছবি

যদি না লেখা থাকে, তাহলে তাকেও চোর বলতে আমার কোনো সমস্যা নেই। ভাবানুবাদে আমার কখনো কোনো সমস্যাই ছিলো না, এমনকি ইন্সপায়ার্ড কর্মেও না। যেমন, ও হেনরীর গল্প নিয়ে (মেনশন করেই) লুটেরা বানানো হয়েছে।

অনুবাদক হিসেবে বইতে কই দাবি করলেন? বইয়ের প্রচ্ছদে এমন করে লেখা থাকতে হবে, Men On Fire - Philip Nicholson, অনুবাদক - কাজী আনোয়ার হোসেন। ফিলিপ নিকোলসনের নাম যদি ঐ বইতে না থাকে, সেটা মেনে নিতে পারবো না আমি।

অতিথি লেখক এর ছবি

সরি, লেখকের নাম আগেরটাতে ভুল লিখেছি, এ জে কুইনেল এর ম্যান অন ফায়ার।

প্রোফেসর হিজিবিজবিজ এর ছবি

আপনার লেখার সাথে মোটেও একমত পারলাম না, দু:খিত।

প্রথম কথা হলো - আপনার বক্তব্যের মূল কথাটার সাথেই আমার দ্বিমত আছে। যেমনটা মাহবুব মুর্শেদ ভাই বলেছেন - বই চুরি করা আর ছায়া অবলম্বনে লেখা দুটি মোটেও এক জিনিস না। সুতরাং দুটোকে এক সমতলে নিয়ে এসে আলোচনার শুরুতেই একটা গুরুতর অসংগতি তৈরী হয়েছে।

এর পরের কথাটা হচ্ছে কাজীদার "হিপোক্রসি"(!!) নিয়ে। আমি যতদূর পড়েছি, উনি কখনোই, আবার বলি, কখনোই অন্যের লেখাকে নিজের লেখা বলে চালিয়ে দেননি। উনি সবসময় বলে এবং লিখে এসেছেন ধ্বংস পাহাড় এবং ভারতনাট্যম উনার মৌলিক রচনা, (হ্যাকার নিয়ে আমার কনফিউশন আছে) বাকী সবগুলো এক বা একাধিক বিদেশী কাহিনি অবলম্বনে। উনার সাক্ষাৎকার থেকে শুরু করে সেবার আলোচনা বিভাগে পর্যন্ত। যারাই সেবার বই পড়ে বা কাজীদার এ সংক্রান্ত বক্তব্য পড়েছে সবাই একই কথা বলবে। সুতরাং এই মতের উপরে ভিত্তি করে আপনার "হিপোক্রেসি" সংক্রান্ত বক্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করছি।এবং যেহেতু এইদুটো বক্তব্যের উপরে আপনার পুরো লেখা দাঁড়িয়ে আছে তাই পুরো লেখাটার সাথেই দ্বিমত পোষন করছি।

অগ্নিপুরুষ সম্পর্কে কাজীদা নিজেই বলেছেন যে হুমায়ূন আহমেদের করা অমানুষ (যেটা রহস্য পত্রিকায় প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল) উনার মন ভরাতে পারেনি, তাই উনি নিজেই Man on Fire থেকে অগ্নিপুরুষ লিখেছেন। এটা উনি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন নাকি আলোচনা বিভাগে, আমার মনে নেই। অন্য কোন পাঠকের হয়তো মনে থাকতে পারে।

আপনার কথা অনুযায়ী "সেবার অনেক অনেক (সত্যিকার অর্থে, অনেক) বইতেই আমি “বিদেশী গল্পের ছায়া অবলম্বনে” কথাটা দেখিনি। প্রথমদিকে লিখতেন, পরের দিকে সেই কার্টেসিটুকুও বাদ দিয়েছেন।" আমি মাসুদ রানার সর্বশেষ বইটার প্রিন্টার্স লাইনের ছবি এখানে সংযুক্ত করে দিলাম।

____________________________

অতিথি লেখক এর ছবি

আমার বাসাতেও সেবা'র অনেকগুলো বই ছিলো। আমি বাইরে চলে এসেছি বলে দেখাতে পারছি না, দুঃখিত।

আর ছায়া অবলম্বনে লেখার ব্যাপারে তো পোস্টেই বলেছি। আমি ক্লাইভ কাসলারের ট্রেজার পড়েছি, পড়েছি মাসুদ রানার চাই সাম্রাজ্যও। লাইন বাই লাইন নকল। এজন্য একটা মজার কাহিনীও হয়েছে। আরেকজন (নামটা ভুলে গেছি) সেবার এই অনুবাদটা নিয়ে শুধু নামগুলো চেঞ্জ করে নিজের নাম অনুবাদক হিসেবে দিয়ে আরেকটা বই ছাপিয়ে ফেলেছে হার্ড কভারে।

আব্দুল গাফফার রনি এর ছবি

অগ্নিপুরুষ শেখ আব্দুল হাকিমের লেখা।

----------------------------------------------------------------
বন পাহাড় আর সমুদ্র আমাকে হাতছানি দেয়
নিস্তব্ধ-গভীর রাতে এতোদূর থেকেও শুনি ইছামতীর মায়াডাক
খুঁজে ফিরি জিপসি বেদুইন আর সাঁওতালদের যাযাবর জীবন...
www.facebook.com/abdulgaffar.rony

সাফিনাজ আরজু এর ছবি

আগ্নিপুরুষ বইটির রকমারি ডট কমের লিংক
যেখানে লেখক হিসেবে কাজী আনোয়ার হোসেন এর নাম লেখা রয়েছে।

__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---

আব্দুল গাফফার রনি এর ছবি

মাসুদ রানায় যদি কাজী আনোয়ার হোসেন নাম বাদ দিয়ে লেখা হয় তবে এক কপিও বিক্রি হবে কিনা সন্দেহ। তাই কাজী আনোয়ার হোসেন নামের আড়ালে কয়েকজন লেখেন মাসুদ রানা কিন্তু অলিখিত ভাবে হলেও লেখক স্বত্ত্ব ও রয়ালিটি দুটোয় পান আসল লেখক। কাওকে এতটুকু বঞ্চিত করেন না কাজীদা বা সেবা প্রকাশনী।

----------------------------------------------------------------
বন পাহাড় আর সমুদ্র আমাকে হাতছানি দেয়
নিস্তব্ধ-গভীর রাতে এতোদূর থেকেও শুনি ইছামতীর মায়াডাক
খুঁজে ফিরি জিপসি বেদুইন আর সাঁওতালদের যাযাবর জীবন...
www.facebook.com/abdulgaffar.rony

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনি কাজীদাকে চোর প্রমাণ করার চেষ্টা করে একটা বিকৃত বিনোদন পাচ্ছেন। এই লেখা দেখে অসংখ্য কাজীদা এবং সেবা প্রকাশনীর অনুরাগীরা ভীষণ কষ্ট পাবে এটা আপনার বিনোদনের বিষয়। আমি ব্যক্তিগতভাবে আপনার লেখা খুবই অপছন্দ করেছি। এখন দেখতে চাই বাকিরা কী বলেন এই লেখা দেখে।

একজন মানুষকে আমি ভীষণ শ্রদ্ধা করি, ভালোবাসি দেখেই হয়ত আমার এতো খারাপ লাগছে এই লেখা পড়ে। আপনি যখন একজন মানুষের কাজের ধারে কাছেও কোনো কাজ করার ক্ষমতা রাখবেন তখন এমন ধরণের উদ্ধত আচরণ দেখাবেন। যে সময়টায় সেবা প্রকাশনী যাত্রা শুরু করেছিলো সে সময়ের কয়জন লেখক বাংলাদেশের পাঠকের জন্য বিশ্বসাহিত্যকে সহজ সাবলীল ভাষায় জানার ব্যবস্থা করেছিলেন? আর আপনি কেন অগ্নিপুরুষ বইয়ের কথা এমন করে তুলছেন বুঝছি না। যেখানে কিছু বছর আগের এক সাক্ষাৎকারে কাজীদা নিজেই বলেছেন কেন এই বইটা তিনি আবার Man on fire থেকে অনুবাদ করেছেন। আপনার না জানার দোষে কী কাজীদা চোর হয়ে গেলেন?

মন মাঝি এর ছবি

তাহলে চুরির প্রসঙ্গে কপিরাইট আসবে না কেন? চরম উদাসের লেখাতে খুব ভালো করেই এটা উনি বুঝিয়ে দিয়েছিলেন।

এই পুরো লেখাটা পড়ে কেন জানি না, এটাকে চরম উদাসের লেখাটা পড়ে আঁতে চরম আঘাতপ্রাপ্ত কারও কুপিত চিত্তের বহিঃপ্রকাশ মনে হচ্ছে। একরকম ছদ্ম-মেটাব্লগিংও হয়তো!

****************************************

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

১) কোথায় কোথায় কাজীদা বিদেশি গল্পের অবদান স্বীকার না করে নিজেকে মূল লেখক দাবী করেছেন সেটার প্রমাণ না দিলে লেখাটা খেলো হয়ে গেল না? কোথায় কোথায় কাজীদা নিজেকে মৌলিক লেখক হিসেবে দাবী করেছেন, আমিও জানতে চাই।

২) আমি পার্সোনালি শুধু 'বিদেশি গল্পের ছায়া অবলম্বনে' না লিখে 'কোন' গল্পের ছায়া অবলম্বনে সেটা উল্লেখ করাও প্রয়োজন মনে করি।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

৭. মেটাব্লগিং অর্থাৎ "ইতিমধ্যে প্রকাশিত কোন ব্লগের প্রতিক্রিয়ায় এমন কোন পোস্ট, যার কন্টেন্ট বা বক্তব্য মূল পোস্টের মন্তব্য আকারেই আসতে পারে" এমন ধরনের পোস্ট কঠোরভাবে নিরুৎসাহিত করা হবে।

সচলায়তনের নীতিমালায় এটুকু পেলাম।
এই পোস্ট কি মেটাব্লগিং না?

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

মেটাব্লগিং এর ধারণা লেখকের নাও থাকতে পারে বলে মনে করছি। যেহেতু ওনাকে সচলায়তনে নিয়মিত ব্লগিং করতে দেখিনি।

সেবা প্রকাশনী আর কাজীদা কতটুকু রেফারেন্স দেন কীভাবে দেন সেটা নিয়ে আলোচনা করতে আমি কোন বাধা দেখি না। আমার মনে হয় বরং করাই উচিৎ, কেউ আমার লেখা শুধু জনৈক লেখকের ছায়া অবলম্বনে লেখা বললে আমি খুব খুশি হব বলে মনে হয় না। আলোচনা চলা উচিৎ।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

আলোচনায় আপত্তি তো করছি না। বইয়ের কপিরাইট বিষয়ে এরচেয়ে বেশি আলোচনা আমি নিজেই চরম উদাসের পোস্টে করেছি। এমনকি সেখানে সেবা প্রকাশনী, কাজীদা সবার প্রসঙ্গই তুলেছি।
আমার মনে হয়েছে আলোচনাটা সেখানে হতে পারতো। আলাদা পোস্ট প্রয়োজন ছিলো না।

কিন্তু এটা উদাহরণ হিসেবে রয়ে গেলে পরবর্তীকালে মেটাব্লগিং জায়েজ হওয়ার রাস্তা তৈরি হয়।

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

হুম সেইটা ঠিক আছে। আমি ভাবতেছিলাম, লেখক যেহেতু নতুন তারে এইসব টার্ম দিয়ে ভয় দেখাইলে পরের লেখায় হয়ত উতসাহিত হবে না আর। আর উদাসদার লেখাটা আসলে পরে আড় ফলো করি নাই, আপনার কমেন্ট দেখছি সম্ভবত দুই-একটা, সেবা নিয়ে আলোচনা তাইলে মিস করে গেছি, গিয়ে দেখে আসি কী অবস্থা।

লেখাটা আমার পছন্দ হয় নাই, লেখার টোন সুবিধার না। কিন্তু উনি যে প্রশ্নটা করেছেন সেটাকে কমেন্টে অনেকেই এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করেছেন, বা কাজীদার অন্য অবদান উল্লেখ করে রেফারেন্স না দেয়ার অপরাধকে লঘু করার চেষ্টা করছেন বা কথা না তোলার চিন্তা করছেন। এই ব্যপারটা ভাল লাগল না।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

অতিথি লেখক এর ছবি

আমিও আসলে চরম উদাসের লেখার কমেন্ট সবগুলো আর ফলো করিনি। আর মেটাব্লগিং হয়ে গেলে দুঃখিত। এটার প্রসঙ্গটা ভিন্ন মনে করেছি বলেই আরেকটা লিখেছিলাম। আমার বোঝার মধ্যে ভুল হয়ে থাকতে পারে।

আর অনুবাদক হিসেবে নিজেকে বইয়ের মধ্যে উপস্থাপন করলে কাজী আনোয়ার হোসেনের প্রতি আমার সম্মান আকাশচুম্বী হতো। আমি নিজে কেবলমাত্র বিদেশী গল্প-এর ছায়া অবলম্বনে বলে নিজের নামে কোনো বই ছাপাতে পারবোনা, আমি জানি আপনাদের মধ্যে কেউই সেটা পারবেন না, আপনাদের বিবেকে বাধবে, ইচ্ছেই করবেনা।

মেহদী হাসান খান এর ছবি

'বিদেশি গল্পের ছায়া অবলম্বনে' বলা আর 'সূত্র: ইন্টারনেট' বলার মধ্যে মৌলিক কোন পার্থক্য আছে কি? এইটা তো উল্লেখ করা না করা সমান কথা।

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

চলুক

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

ফাহিম হাসান এর ছবি

'বিদেশি গল্পের ছায়া অবলম্বনে' বলা আর 'সূত্র: ইন্টারনেট' বলার মধ্যে মৌলিক কোন পার্থক্য আছে কি? এইটা তো উল্লেখ করা না করা সমান কথা।

চলুক

আয়নামতি এর ছবি

লাখ টাকা দামের একটা মন্তব্য মেহেদী ভাই! চলুক

সুলতান এর ছবি

সহমত।

প্রোফেসর হিজিবিজবিজ এর ছবি

ঠিক, এই কথাটার সাথে একমত।

____________________________

মরুদ্যান এর ছবি

চলুক

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

আমার মনে হয় সূত্র পুরোটাই উল্লেখ করা উচিত। বিখ্যাত মানুষজন যা করেন আমরা সাধারণ মানুষ তা অনুসরণ করি; তাঁরা সঠিক কাজটি করবেন এটাই প্রত্যাশা।

সজল এর ছবি

আইনের চোখে যদি দেখি, যার বইএর "ছায়া/ভাবা"নুবাদ করা হচ্ছে
১। বই এর তার এবং তার বই এর নাম থাকতে হবে
২। সেই বইএর স্বত্তাধিকারী'র কাছ থেকে "ছায়া/ভাবা"নুবাদের অধিকার কেনা থাকতে হবে

আমি যদি ঠিকঠাক বুঝে থাকি ছায়া অবলম্বনে লিখা কিংবা ভাবানুবাদ করা হলো "ডেরিভেটিভ ওয়ার্ক"। ডেরিভেটিভ ওয়ার্ক কিন্তু কপিরাইটের আওতায় পড়ে, অন্তত অ্যামেরিকান কপিরাইট আইনে [রেফ], অর্থাৎ কোন বইএর কপিরাইট আপনার থাকলে আপনি তার "ডেরিভেটিভ ওয়ার্ক" তৈরী করতে পারবেন। কপিরাইট না থাকলে নিশ্চয় ডেরিভেটিভ ওয়ার্ক তৈরী করা্র অধিকার থাকে না।

তো, এই দিক চিন্তা করলে কি কাজী আনোয়ার হোসেন কপিরাইট ভঙ্গ করছেন না?

---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়

মন মাঝি এর ছবি

আইনের চোখে যদি দেখেন --
বাংলাদেশেও যদি "ডেরিভেটিভ ওয়ার্ক" সংক্রান্ত একই রকম আইন না থাকে, তাহলে উত্তরটা মনে হয় হবে - না। ভঙ্গ হবে না। বাংলাদেশ মার্কিন আইনের জুরিসডকশনের বাইরে। তবে দুই দেশের মধ্যে ইদানিংকালে এ সংক্রান্ত কোন চুক্তি-টুক্তি হয়ে থাকলে তার ইমপ্লিকেশন কি জানি না।

ও হ্যাঁ, এ প্রসঙ্গে একটা মজার চিন্তা মাথায় আসল। এই "ডেরিভেটিভ ওয়ার্ক" ইত্যাদির সংজ্ঞা মানলে, আমাদের আউল-বাউল-মরমী গান থেকে শুরু করে তাবৎ লোকসাংস্কৃতিক সম্পদই মনে হয় "চোরাই মাল" হয়ে যায়! হাসি

****************************************

রণদীপম বসু এর ছবি

সরাসরি সূত্র উল্লেখ না করে 'বিদেশী বইয়ের ছায়া অবলম্বনে' কথাটায় কিঞ্চিৎ কৌশল আছে বটে, তবে এটাও ঠিক যে কাজী আনোয়ার হোসেনই বাংলা সাহিত্যে এসপিওনাজ বা গোয়েন্দা কাহিনীর আধুনিক ঢংটাকে জনপ্রিয় করেছেন এবং বিপুল টিনএজ পাঠক তৈরি করেছিলেন প্রথম। হুমায়ূনের তুঙ্গ অবস্থা তো আরো অনেক পরের ঘটনা ! আমাদের সেই ছাত্রজীবনে প্রথম এই সেবা প্রকাশনাটাকে বিপুল বিস্ময় নিয়ে আত্মস্থ করেছিলাম। আমাদেরকে এতোটাই অভিভূত করেছিলো যে, কী দুর্দান্ত প্রতীক্ষায় থাকতাম মাসুদ রানার পরের বইটার জন্য। সে আমলে আমরা একটা সিকিউরিটি মানি জমা রেখে বই প্রতি দিনে একটাকা ভাড়ায় নিয়ে যেতাম। হা হা হা ! প্রথম তারুণ্যে ওয়েস্টার্ন বা কাউবয় জিনিসটাই তো জানলাম সেবার মাধ্যমেই !

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

অতিথি লেখক এর ছবি

পাঠক তৈরি করা প্রয়োজনীয়, কিন্তু আমি আসল লেখককে মন থেকে সম্মান জানাতে চাই। আমি পড়তে পড়তে মনে মনে বলতে চাই, "আরে, কাসলার তো জোস লেখে" অথবা "ক্যান্সির প্লটের টুইস্টগুলো তো খুবই ভালো হয়"

নাজিমউদ্দিন দা ভিঞ্চি কোড অনুবাদ করেছেন, পাঠক ওভাবেও তৈরি হচ্ছে। আমরা এখন একজনের বদলে দুজনের গান গাইছি। ড্যান ভ্রাউনের গল্প, নাজিমউদ্দিনের অনুবাদ, দুটোরই প্রশংসা করছি। এটাই কি তুলনামূলকভাবে উন্নত চর্চা নয়?

-ফরহাদ হোসেন মাসুম

দীনহিন এর ছবি

আমি ভাই এত কিছু বুঝি না, কে চোর, কে সাধু, আপনারা খুঁজে মরুন! আমি এই ফাঁকে সেবার আর একটি অ্যাডভেঞ্চারে মেতে থাকি!!
আমি ভাই একজন সাধারণ পাঠক, বিশ্বসেরা অ্যাডভেঞ্চারগুলি কাজীদা ছায়ানুবাদ করেছেন না ভাবানুবাদ করেছেন না আক্ষরিক অনুবাদ করেছেন, মূল লেখকের নাম দিয়েছেন কি দেননি, এগুলো অনুসন্ধানে আমার কাজ নেই।
আমি শুধু জানি, এই অ্যাডভেঞ্চারগুলি কাজীদাই কষ্ট করে আমার হাতে তুলে দিয়েছেন, আমার মত অসংখ্য বাংলাদেশীর শৈশব-কৈশোরকে রঙ্গিন করে তুলেছেন অসম্ভব সব থ্রিলিং মুহুর্ত উপহার দিয়ে, সমাজ-রাষ্ট্র-ভুগোল-ইতিহাস যা আমরা পাঠ্যবইয়ের মুখস্ত বিদ্যা থেকে জানতে পারিনি, তা জেনেছি সেবার এই বইগুলো থেকেই!
এই কারণে কাজীদা আমার ভীষণ শ্রদ্ধেয়, ভীষন নমস্য! সে চোর হোক আর সাধুই হোক!

.............................
তুমি কষে ধর হাল
আমি তুলে বাঁধি পাল

অতিথি লেখক এর ছবি

সম্ভবত: কাজীদার বয়ানেই কোথাও পড়েছিলাম, নিউজ রিপোর্ট হিসেবে না। কাজীদার পক্ষে এখন পুরো বই লেখা সম্ভব হয় না। মাসুদ রানা লেখার জন্য রাইটার্স প্যানেল আছে। কাজীদা কাঠামোটা বলে দেন, তারপর প্যানেলের লেখা পড়ে পরামর্শ দেন। তারপর, টুকটাক জোড়া দিয়ে ফাইনাল কপি করেন।

আমি এই মাত্র যেগুলো হাতে নিয়ে (আক্ষরিক অর্থে, কোন পিডিএফকপি না) দেখলাম:
স্বর্ণসঙ্কট
প্রথম প্রকাশ: ১৯৮১
রচনা: বিদেশি কাহিনি অবলম্বনে

কর্কটের বিষ + সার্বিয়া আক্রান্ত
প্রথম প্রকাশ: ২০০৫
রচনা: বিদেশি কাহিনি অবলম্বনে

জুয়াড়ী ১, ২
প্রথম প্রকাশ: ২০০২
রচনা: বিদেশি কাহিনি অবলম্বনে

আমি সোহানা
প্রথম প্রকাশ: ১৯৯৩
রচনা: বিদেশি কাহিনি অবলম্বনে

কাজেই, কাজীদা ইচ্ছে করেই নিয়মিতভাবে "বিদেশি কাহিনি অবলম্বনে" লিখছেন না, এমনটা খুঁজে পেলাম না।

ত্রিমাত্রিক কবি বলেছেন,

আমি পার্সোনালি শুধু 'বিদেশি গল্পের ছায়া অবলম্বনে' না লিখে 'কোন' গল্পের ছায়া অবলম্বনে সেটা উল্লেখ করাও প্রয়োজন মনে করি।

এটা হলে ভালো হয়। আমার মনে হয় জেমস বন্ডের কাহিনী (ইয়ান ফ্লেমিংয়ের গুলো বাদেও) নিয়েও কিছু রানা আছে। আমার মনে পড়ে দুই একটা রানায় কিছু মিশ্রণও আছে, মূল কাঠামো এক বইয়ের কিন্তু কিছু টুকটাক এদিক সেদিক থেকে এসেছে।

শুভেচ্ছা হাসি

[মেঘলা মানুষ]

অতিথি লেখক এর ছবি

এই পোস্টের লজিক ধরে আগাতে গেলে পৃথিবীর সমস্ত প্রধাণ লেখক/কবি/গীতিকার/চিত্রকর/চলচ্চিত্রকার/প্রেরিত পুরুষ প্লেজিয়ারিজম/কপিরাইট ভায়লেসন কেসে ধরা খাবেন বলে মনে হয়। যাই হোক, প্রতিক্রিয়া হিসেবে আমি কেবল হুমায়ূন আজাদের একটি প্রবচন কোট করতে পারি (মিসকোট হতে পারে; হাতের কাছে এখন প্রবচনগুচ্ছ নাই)ঃ "বাংলার প্রধাণ আর গৌণ লেখকদের মধ্যে পার্থক্য হল প্রধাণরা পশ্চিম থেকে প্রচুর ঋণ করেছেন, আর গৌণরা আবর্তিত হয়েছেন নিজেদের মৌলিক মূর্খতার মাঝে।"

Emran

তারেক অণু এর ছবি

ও ভাই,
আপনিই না গেল বছর কাজীদার জন্মদিনে এই একই জিনিস ফেসবুকে লিখলেন?????

সেখানে তো আপনাকে যথেষ্ট ফিডব্যাক দেওয়া হয়েছিল। এবার নতুন কিছু করেন ! দোষ বাহির করাটাও একটা শিল্প হতে পারে, নতুন কিছু বললে ভাল লাগত, একই বস্তা পচা জিনিস আবার এত দিন পর রিপিট করছেন কোন হিসেবে বুঝলাম না !‍

চরম উদাস এর ছবি

একমত না , কোনভাবেই না।

অতিথি লেখক এর ছবি

চলুক @ তারেক অণু

সাইদ

সবজান্তা এর ছবি

আমি যে মন্তব্যটা করবো ভাবছিলাম লেখাটা পড়তে পড়তে, মন্তব্যের ঘরে এসে দেখলাম মেহদী সে'টা বলে ফেলেছে। 'বিদেশী গল্পের ছায়া অবলম্বনে' আর 'সূত্র: ইন্টারনেট' -এর মধ্যে কোনো পার্থক্য আমি দেখি না। বাংলাদেশের বইয়ের মার্কেটের অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনা করে অনুবাদ/ভাবানুবাদের অনুমতি নেওয়া হয়তো সম্ভব না (এবং সেটা আপাতত মেনেও নিচ্ছি), কিন্তু ঠিকঠাক বই(গুলির)এর নাম দেওয়া উচিত।

তবে আপনার লেখার সুরে কেমন যেন কাজী আনোয়ার হোসেনের প্রতি বিদ্বেষ অনুভব করলাম। বিশেষত আপনার অনেকগুলি যুক্তি খুবই খেলো। আপনি বলছেন, কাজী আনোয়ার হোসেন বিদেশী লেখকের বই থেকে একদম লাইন ধরে অনুবাদ করেছেন, অথচ একটা প্রমাণও পেশ করেননি। আপনি স্মৃতি থেকে বলতেই পারেন, কিন্তু সে ক্ষেত্রে আপনার দাবির সুরটাও একইভাবে কিছুটা নিচে রাখতে হবে বলে আমি মনে করি। শুধুমাত্র আপনার স্মৃতির উপর ভরসা করে আমরা কেন কাজী আনোয়ার হোসেনকে এতো বড় অপবাদ দিবো, সে'টা একটু চিন্তা করে দেখেন।

তবে আপনার লেখা যেমনই হোক, ভাবানুবাদ বা ছায়া অবলম্বনে করা অনুবাদের ক্ষেত্রেও মূল বই এবং লেখকের নাম স্পষ্টভাবেই জানানো উচিত বলে আমার ব্যক্তিগতভাবে মনে হয়।

চরম উদাস এর ছবি

চলুক
মন্তব্যে একমত। আসলে এখন ইন্টারনেট ফিন্টারনেট এসে সবার মাঝে যোগাযোগ, তথ্যআদানপ্রদান, জানাশোনা সবই বাড়ছে। এখন সবাই অনেক সচেতন, ফট করে সার্চ দিয়ে বের করে ফেলতে পারে কোন জিনিস কোথায় আছে। তাই রেফারেন্স আরেকটু ভালোভাবে দেয়া দরকার বলে আমিও মনে করি।

অতিথি লেখক এর ছবি

বিদেশী লেখকের বই থেকে লাইন ধরে নকল করেছেন কিনা, সেটার প্রমাণ দিচ্ছি -

গুপ্ত সংকেত বইটাতে কাজী আনোয়ার হোসেনের অনুবাদের ফার্স্ট পেইজের একটা র‍্যান্ডম অংশ দিচ্ছি।
"ঠিক যেমন আশা করেছিলেন, কর্কশ ঘটাং আওয়াজ করে কাছাকাছি কোথাও নেমে এলো কোথাও নেমে এলো ভারী লোহার গেট। গ্যালারিতে আর কারো ঢোকার পথ বন্ধ হয়ে গেলো। কেঁপে উঠলো জ্যামিতিক নকশা কাটা, পালিশ করা কাঠের মেঝে। সেই সঙ্গে বেজে উঠলো এলার্ম।
এক মুহুর্ত স্থির হয়ে শুয়ে থাকলেন কিউরেটর। দম ফুরিয়ে যাওয়ায় এখনো হাঁপাচ্ছেন, চারিদিকে তাকিয়ে পরিস্থিতিটা বোঝার চেষ্টা করলেন। এখনো আমি বেঁচে আছি, ভাবলেন তিনি।
ক্যানভাসের তলা থেক ক্রল করে বেরিয়ে এলেন বেসন, প্রকাণ্ড গুহার মত জায়গাটায় চোখ বুলিয়ে লুকানোর জায়গা খুঁজছেন। এই সময় শোনা গেল কথাটা। এত কাছে থেকে যে গা শিরশির করে উঠলো তার।
"একচুল নড়বেন না"
হামাগুড়ি দেয়ার ভঙ্গিতে পাথর হয়ে গেলেন ল্যাক বেসন, ধীরে ধীরে ঘাড় ফেরাচ্ছেন।

***********************************
ড্যান ব্রাউনের ইংরেজি টেক্সটটা ছিলো এরকম,
As he had anticipated, a thundering iron gate fell nearby,
barricading the entrance to the suite.
The parquet floor shook. Far off, an alarm began to ring.
The curator lay a moment, gasping for breath, taking stock. I am still alive.He crawled out from under the canvas and scanned the cavernous space for someplace to hide.
A voice spoke, chillingly close. "Do not move."
On his hands and knees, the curator froze, turning his head slowly.

- আপনিই আমাকে বলেন এটা লাইন বাই লাইন অনুবাদ, নাকি ছায়া অবলম্বনে?

চরম উদাস এর ছবি

অনুবাদটা পড়ে একটু থমকে গেলাম। আমি মাসুদ রানার খুব বেশী বই পড়িনি। কিশোর ক্লাসিক ছিল ফেভারিট। এখন মনে হচ্ছে অস্বস্তিকর হলেও এই প্রসঙ্গ নিয়ে আরও আলোচনা দরকার আসলে।

সবজান্তা এর ছবি

উদাস ভাইয়ের মতো আমিও একটু থমকে গেলাম।

নাহ, এটা ছায়া অবলম্বনে কিংবা ভাবানুবাদ নয়। বরং আক্ষরিক অনুবাদই। আমি ব্যক্তিগতভাবে মাসুদ রানার খুব বড় ভক্ত নই, কারণ সম্ভবত তার আগেই কিশোর ক্লাসিকের হাতে ছিনতাই হয়ে গিয়েছিলাম। তিন গোয়েন্দার পরপরই ক্লাসিক আর ওয়েস্টার্নে (এটাও অবশ্য খুব বেশি না) চলে গিয়েছিলাম। রানা পড়েছি অল্প কিছু, কিন্তু কেন যেন ক্লাসিকের বাইরে আর কিছু পড়া হয়ে উঠেনি। যাই হোক, বলতে চাচ্ছিলাম যে আমি কাজী আনোয়ার হোসেনকে শ্রদ্ধা করি। শুধু শ্রদ্ধা করি বললে ঠিক হবে না, দারুণভাবেই শ্রদ্ধা করি। তবে শ্রদ্ধা করি দেখে যে, তিনি ভুল করতে পারেন না, এমনটা মনে করি না। মানবিক দোষ-ত্রুটির ঊর্ধ্বে আমরা কেউ নই। এখন পর্যন্ত আপনি যা দেখালেন তাতে আমার কাছে ব্যাপারটা নৈতিকভাবে ভুল মনে হচ্ছে।

মন্তব্যের ঘরে জানতে পারলাম এই সংক্রান্ত তর্কটা একদম নতুন না, এর আগেও হয়েছে। এর আগের বার এধরনের যুক্তির পালটা যুক্তি হিসেবে কী বলা হয়েছে, সেটা জানতে আমি আগ্রহী, কারণ আমি নিজে কোনো যুতসই জবাব খুঁজে পাচ্ছি না এই মুহূর্তে। কেউ জানালে আগ্রহ নিয়েই বিবেচনা করতে প্রস্তুত আমি।

ছোট্ট একটা অংশ যোগ করি শেষে-

* কাজী আনোয়ার হোসেন বিদেশী গল্পের ছায়া অবলম্বনে এই বাক্যটুকুও বেমালুম চেপে, বিদেশি গল্প থেকে নিয়েই বই লিখেছেন, এমন উদাহরণ এখন পর্যন্ত দেখতে পাই নি।

* আমার কাছে পিডিএফ বা মূল বই কোনোটাই নেই। ঠিক অবিশ্বাস করছি না, তবে ভালো হয় এই প্রমাণটাই যদি কেউ মূল বইয়ের থেকে ছবি তুলে বা স্ক্যান করে দেখান। ব্যাপারটা অনেক বেশি প্রামাণ্য হয়। শুনতে খারাপ লাগলেও এইযুগে এধরনের ম্যানিপুলেশন অসঅম্ভব না। ইন ফ্যাক্ট লেখকেরই উচিত ছিলো এতো বড় একটা দাবি করার সঙ্গে প্রমাণ হিসেবে এই ধরনের উদাহরণগুলি দাখিল করার।

অতিথি লেখক এর ছবি

কাজী আনোয়ার হোসেনের অনুবাদের স্ক্রীনশট (সবজান্তার অনুরোধে সংগ্রহ করলাম)

আর ড্যান ব্রাউনের অরিজিনাল টেক্সট,

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনার লেখাটার সাথে কোন ভাবেই একমত হতে পারলাম না। দীনহিন,রনদীপমদার কমেন্টের মর্ম উপলব্ধি করা সম্ভব না আপনার পক্ষে।আপনারা বড় হয়েছেন,হচ্ছেন দুনিয়া হাতের মুঠোতে নিয়ে।৭০ আর ৮০ দশকের বাংলাদেশ নিয়ে আপনাদের ধারণা মুঠোফোনে,ইন্টারনেটে আর সবশেষে ঐ বইয়ের পাতাতে।জ্ঞান অর্জনের অন্যতম বাহন হচ্ছে পড়া।আর সদ্য জন্ম নেয়া বাংলাদেশকে যারা পড়তে শিখিয়েয়া। তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সাপ্তাহিক বিচিত্রা,কাজীদা,কাজীদার সেবা প্রকাশনী এবং প্রয়াত হুমায়ুন আহমেদ।পাড়ার জীর্ণ লাইব্রেরীতে ২০টাকা জমা দিয়ে রাখা রনদীপমদারা বাসায় আসার আগে একবার ঢুঁ মেরে আসতেন নতুন কোন মাসুদ রানা বা সেবার বই এলো কিনা,আর আমরা তাকিয়ে থাকতাম তাদের হাতের দিকে।তারা ঘর থেকে বের হলে অথবা ঘুমিয়ে পড়লে বালিশের নিচথেকে চুরি করে কম্বল বা কাঁথার ভিতর শুয়ে অথবা স্কুলের পড়ার বইয়ের ভিতর লুকিয়ে আমরা পড়তাম। মা-বাবার বেঁধে দেয়া বইয়ের আর একটু বাহিরের নিষিদ্ধ(!)জগতে পড়ার সেই শুরু।এই কাহিনী ঐ সময়ের কমবেশি সবার।কাজীদাকে লেখক,আসল,নকল অনুবাদক,ছায়ানুবাদক,ভাবানুবাদক,চোর,অসৎ,আইন,বেআইন,কপিরাইট,ইত্যাদি ত্যানাপেচানি ব্লা ব্লার উপরে রাখব আমরা।উনারা আমাদেরকে পড়তে শিখিয়েছেন,জানতে উৎসাহিত করেছেন আর এখন তাদের বর্তমানের বিচারের কাঠগড়ায় দাড় করানোর ধৃষ্টতা আপনাদের থাকতে পারে আমরা পারব না
সেইসময়কে এইসময়ে বিচার বিশ্লেষণ সবাই করতে পারে কিন্তু উপলব্ধি বা ধারণ করতে সবাই পারে না।

অতিথি লেখক এর ছবি

গুল্লি
ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য। এ প্রজন্মের পাঠক বুঝতেও পারবে না যে, একটা বইয়ের জন্য তীর্থের কাক হয়ে থাকা কাকে বলে?

-------------------------
কামরুজ্জামান পলাশ

নীড় সন্ধানী এর ছবি

আপনি কিছু মৌলিক প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন কপিরাইট বিষয়ে। প্রশ্নগুলির আংশিক যৌক্তিকতা স্বীকার করেও আমাকে বলতে হচ্ছে আপনি আজকে ২০১৪ সালে যে বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারছেন ৩০/৪০ বছর আগের বাংলাদেশে সেটা প্রাসঙ্গিকই ছিল না। কেন প্রাসঙ্গিক ছিল না সেজন্য ছোট্ট একটা গল্প বলি।

আফ্রিকার কালাহারি মরুভূমিতে পিগমিদের একটা গ্রাম আছে। সেই গ্রামের মানুষের কাছে ওই গ্রামটিই পৃথিবী। তারা জানেই না ওই গ্রামের বাইরে আরো পৃথিবী আছে। সভ্যতার ক্ষীণ আলোও পৌঁছেনি সেই গ্রামে। বর্তমান পৃথিবী থেকে কয়েক হাজার বছর পিছিয়ে থাকা গ্রামটিতে পানির ভীষণ অভাব। এত অভাব যে ওরা ভোরের শিশির থেকেও পানি সংগ্রহ করে, গাছের শিকড়বাকড় কেটেও পানি বের করে। একদিন সেই গ্রামের এক যুবক দোগাতোপা ঘটনাক্রমে শহরে পৌঁছে গিয়েছিল। ফেরার পথে সে বিশাল কয়টা মিষ্টি জুশের জার নিয়ে আসে। গ্রামে ফেরার পর সে জুশগুলো বড় ড্রামে ঢেলে দেয়। তারপর ওখান থেকে ছোট ছোট মাটির পাত্রে একটু একটু করে বিক্রি শুরু করে। সারা গ্রামে রটে যায় দোগাতোপা মজার এক জিনিস এনেছে শহর থেকে। যদিও সবাই জানে জিনিসটা শহর থেকে আনা, তবু সারা গ্রামে জিনিসটা দোগাতোপার রস নামে পরিচিত হয়ে যায়। প্রতিদিন সকালে সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়ে দোগাতোপার দোকানের সামনে সেই রসের লোভে। শহরের কোথাকার কোন দোকানের জুশ এখানে হয়ে যায় দোগাতোপার রস। দোগাপোতা সবাইকে রস খাওয়াতে থাকে, পয়সা গুনতে থাকে, কিন্তু জুশ কোম্পানীর নামটা সেভাবে প্রচার করে না। প্রচার না করার কারণ ওই নামের তেমন কোন গুরুত্ব নেই গ্রামের মানুষের কাছে, তাদের কাছে বেশী দরকার জুশের স্বাদ নেয়া। জুশের সরবরাহ ঠিক রাখাই তার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হয়ে যায়।

এখন বলেন, এই যে গ্রামের মানুষ রস খেয়ে মজা নিচ্ছে কিন্তু জুশ কোম্পানীর নামও জানে না, এর জন্য দোগাতোপাকে কতটা দোষী সব্যস্ত করা উচিত? আমি বলি, দোগাপোতাকে দায়ী করাটা যতটা যৌক্তিক, কাজীদাকেও দায়ী করাটাও ততটাই যৌক্তিক। আপনার পোষ্টটাও ততটাই প্রাসঙ্গিক।

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ। আপনার যদি মনে হয়, আসল লেখকের নাম জানার দরকার নেই, শুধু লেখাটাই আসল, তাহলে কী আর বলবো? পোস্টেই তো বলেছি। শুধু একটা রিফ্রেইজ করি, আপনার লেখা নিয়ে দোগাতোপা নিজের লেখা বলে চালালে আপনার নিশ্চয়ই খারাপ লাগতো। তাইনা?

অতিথি লেখক এর ছবি

সম্প্রতি একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা নিয়মিতভাবে সচলায়তন থেকে সচলদের লেখা তাদের অনুমতি ছাড়া নিয়ে প্রকাশ করছে। পত্রিকায় প্রকাশিত লেখায় তাদের পরিচয় ত্রুটিপূর্ণভাবে প্রকাশিত হচ্ছে, লেখাগুলো অপ্রাসঙ্গিক বিভাগে ছাপা হচ্ছে।

পত্রিকাটির নাম বিচিন্তা, এর সম্পাদকের নাম মিনার মাহমুদ।

...

ন্যূনতম ভদ্রতাবোধ ও সম্পাদকীয় রীতিজ্ঞান থাকলে কেউ একটি সাপ্তাহিক পত্রিকার সম্পাদনা পর্ষদে বসে এ ধরনের আচরণ করতে পারেন না। এটি শুধু অশিষ্ট আচরণই নয়, সুস্পষ্টভাবে লেখকদের অধিকার লঙ্ঘন।

...

একজন লেখকের অজান্তে তার লেখা কোনো পত্রিকায় ছাপা হয়ে যাবে, এমনটি চলতে পারে না।

...

সচলায়তন এই চৌর্যবৃত্তির তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট লেখকেরা দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

সেই একই সচলায়তন আজ কাজীদা নিয়ে এতো নরম সুরে কথা বলছেন কেন? লম্বা-চওড়া ব্যাখ্যা দিয়ে সাফাই গাওয়ার চেষ্টাই বা করছেন কেন? ডাবল স্ট্যান্ডার্ড কি একেই বলে?

ঠিক বুঝে উঠতে পারলাম না।

-জিজ্ঞাসু

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

সেই একই সচলায়তন আজ কাজীদা নিয়ে এতো নরম সুরে কথা বলছেন কেন?

সচলায়তন প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এখানে কোন মতামত প্রদান করেছে নাকি? আমার তো তেমন কিছু চোখে পড়লো না। যতদূর জানি সচলায়তনে প্রকাশিত কোন লেখা বা মন্তব্যের দায় স্ব স্ব লেখকের।

অতিথি লেখক এর ছবি

একটু কষ্ট করে ঐ লিঙ্কে গিয়ে নিচে সবার কমেন্টগুলো দেখতে পারেন। আমি আলাদা আলাদাভাবে না দিয়ে সামষ্টিক অর্থে ওটা দিয়েছিযা সবার মতামতকেই রিপ্রেজেন্ট করে। আর 'সচলায়তন' এর প্রাতিষ্ঠানিক বক্তব্য ধারণ/সমর্থন না করে সচলায়তনে যুক্ত হওয়া যায় নাকি? নাকি এর সদস্যদের মতামত আর সচলায়তনের(!) মতামত আলাদা ভাব ধারণ করে?

আরো মজার প্রশ্ন, লিঙ্কে দেওয়া আর্টিকেলের দায় তাহলে কার??? অশরীরী কারো?

-জিজ্ঞাসু

হিমু এর ছবি

সচলায়তনের প্রাতিষ্ঠানিক বক্তব্য আর সচলায়তনে প্রকাশিত ইনডিভিজুয়াল ব্লগারের বক্তব্যকে আলাদা করে দেখতে পারার মতো সাবালক না হলে এই তর্কে ঢুইকেন না। আপনার কথামতো, এই পোস্টের লেখক ফরহাদ হোসেন মাসুমের বক্তব্যও সচলায়তনের বক্তব্য।

অতিথি লেখক এর ছবি

"কোনো পূর্ণাঙ্গ নৈতিক ইস্যুতে সচলায়তনের পূর্ণ সদস্যদের একমত হওয়া কমেন্ট আর সচলায়তনের প্রাতিষ্ঠানিক বক্তব্যের মাঝে অভিন্নতা নেই"।

এই মূল ধ্রুবক ধরে কমেন্ট করেছি। ওটা ভুল হলে আসলেই আমি নাবালক। সচলায়তনের বক্তব্য বলতে আমি কোনো ভুঁইফোড় ব্লগারের বক্তব্য বুঝাচ্ছিনা। সচলায়তনের প্রাতিষ্ঠানিক বক্তব্যের উদাহরণ দিলেই তা স্পষ্ট হবে ভেবেছিলাম। বোঝাই যাচ্ছে, স্পষ্ট হয়নি।

-জিজ্ঞাসু

হিমু এর ছবি

আপনি এই মন্তব‌্যে এসেও নাবালক আছেন। এই পোস্টে সচলায়তনের কোনো প্রাতিষ্ঠানিক বক্তব্য নাই। আছে সচলায়তনে যারা ব্লগিং করেন, তাদের। আপনি তাদের বক্তব্যকে টেনে সচলায়তনের ঘাড়ে চাপিয়ে সচলায়তনকে ডাবল স্ট্যান্ডার্ড নিয়ে অভিযুক্ত করেছেন। আপনার ঝোঁকটা ঐখানেই। এই স্বেচ্ছানাবালকত্বের বিনিময়ে আপনার পরিপাক ক্রিয়ার কোনো উপকার হয়ে থাকলে আর কথা বাড়াবো না।

অতিথি লেখক এর ছবি

সাবালক বড়দা,

আমি এখানে প্রত্যেকটা সহনশীল সচলের নরম-নরম কথাগুলোর পাশাপাশি ঐ লিঙ্কের ঐ একই সচলের গরম-গরম চোথাগুলো দিয়ে কমেন্ট করলে সেটা কি শোভনীয় হতো? নাকি সেটা ব্যক্তি আক্রমণের সংগায় পড়তো?

আর যেটা এড়িয়ে গেলেন সেটা নিয়ে হ্যাঁ বা না বলে দিন। আমিও কথা আর না বাড়াই।

"কোনো পূর্ণাঙ্গ নৈতিক ইস্যুতে সচলায়তনের পূর্ণ সদস্যদের একমত হওয়া কমেন্ট আর সচলায়তনের প্রাতিষ্ঠানিক বক্তব্যের মাঝে অভিন্নতা নেই"

এটা ভুল না সঠিক? নাকি নৈতিকতা বিষয়ে সচলায়তনের পূর্ণ সদস্যের বক্তব্য আর সচলায়তনের প্রাতিষ্ঠানিক বক্তব্য এক্কেবারে আলাদা?

আরো সহজে বলি, যেহেতু প্রাতিষ্ঠানিক শব্দে আপনার এ্যালার্জি বোঝাই যাচ্ছে।

কোনো পূর্ণাঙ্গ নৈতিক ইস্যুতে সচলায়তনের পূর্ণ সদস্যদের একপক্ষে একমত হওয়া আর তার কদিন পরে সেই একই ইস্যুতে একই সদস্যদের এক্কেবারে র‍্যাডিকাল শিফট করে অন্য পক্ষে চলে যাওয়া সেইসব ইন্ডিভিজুয়ালদের ডাবলস্ট্যান্ডার্ড এর সাক্ষ্য দেয় কি না?

আর সচলায়তনকে টানলাম না। কারণ বোঝাই যাচ্ছে এটা অশরীরী কিছু। এখানের সকল বক্তব্যই ইন্ডিভিজুয়াল। যদিও নীড়পাতায় লম্বাচওড়া কিছু নিয়ম-কানুন দেখতে পাচ্ছিলাম।

আর ভালোই হলো। এর সুযোগে আপনার কাছ থেকে প্রতিষ্ঠান আর নৈতিকতা নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক আর ইন্ডিভিজুয়াল বক্তব্যের ভিন্নতা নিয়ে বেশ জ্ঞান লাভ হলো।

আজ পরিপাকতন্ত্র ভালো নেই। কাজেই আর জ্ঞান লাভও করতে চাচ্ছিনা। যা জানার জেনে গেছি।

-জিজ্ঞাসু

হিমু এর ছবি

নাবালক ছোটদা,

স্কুল কলেজে কমার্স সেকশনে মাঝেমধ্যে কপালের ফেরে কিছু বলদ ছাত্র ভর্তি হয়। শিক্ষকরা যখন এদের বোঝাতে যান যে "কোম্পানি" একটা পৃথক অশরীরী এনটিটি, তখন গলদঘর্ম হয়ে যান। এরা কিছুতেই বুঝতে পারে না যে পৃথক অশরীরী সত্ত্বার অস্তিত্ব থাকতে পারে, কসাইয়ের মতো সবকিছুতেই হাড্ডি-গোস্তো খুঁজতে থাকে। আপনি তাদের মতো বারবার সচলায়তনের শরীর হাতড়ে হাতড়ে খুঁজে বের করে হয়রান হচ্ছেন দেখে মায়া লাগছে। এর শরীর নাই ভাইডি।

"কোনো পূর্ণাঙ্গ নৈতিক ইস্যুতে সচলায়তনের পূর্ণ সদস্যদের একমত হওয়া কমেন্ট আর সচলায়তনের প্রাতিষ্ঠানিক বক্তব্যের মাঝে অভিন্নতা নেই"।

আপনি বারবার ঘি চিপে দুধ বের করতে চাইছেন মনে হচ্ছে। সচলায়তনের পূর্ণ সদস্যদের মন্তব্যকে সচলায়তনের প্রাতিষ্ঠানিক বক্তব্য বানায় দেওয়ার জন্য কীবোর্ড ভেঙে ফেলছেন।

হ্যাঁ, ইনডিভিজুয়ালদের ডাবল স্ট্যান্ডার্ড নিয়ে আপনি কথা বলতে পারেন। কিন্তু আপনি তো ইন্ডিভিজুয়ালদের নিয়ে কিছু বলেন নাই। আসছেন সচলায়তনের গোস্তো খুঁজতে।

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

গত শতকের মধ্য ষাট থেকে শুরু করে সত্তর ও আশির দশক জুড়ে কাজীদা ছিলেন এ দেশের তরুন পাঠকদের মাঝে সবচেয়ে জনপ্রিয় লেখক। কারন তিনি শুধু ক্রাইম থ্রিলারেরই লেখক ছিলেন না, পশ্চাৎপদ একটি দেশের তরুন সম্প্রদায় এবং আধুনিক বিশ্বের মাঝে যোগসূত্র হিসেবেও কাজ করেছেন। সে কারনেই সনাতন অন্যান্য সব রহস্য উপন্যাস ছাপিয়ে মাসুদ রানা হয়ে উঠেছিল আধুনিক ভাবধারা সম্পন্ন তরুন সমাজের প্রথম পছন্দ।
লেখক এখানে যে প্রশ্নের অবতারনা করেছেন, তা কালের বিচারে প্রযোজ্য নয়। কাজীদা নিজেই জানিয়েছেন মাসুদ রানা সিরিজ লেখার প্রেক্ষাপট। তিনি সম্ভাবনাময় গায়ক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিলেন, কিন্তু সিদ্ধান্ত নিলেন পেশাদার লেখক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবেন। প্রথমে লেখা শুরু করেছিলেন "কুয়াশা" সিরিজ। সেসব দেখে এক বন্ধু তাঁকে বলেছিলেন- এ সব কি লিখছেন, ক্রাইম সাহিত্য এখন কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে জানেন? এই বলে কাজীদাকে তিনি কয়েকটি বিদেশী ক্রাইম থ্রিলার পড়তে দিয়েছিলেন। সেসব পড়ে কাজীদা বেশ লজ্জা পেয়েছিলেন। তারপর বেশ আয়োজন করে, অনেক তথ্য উপাত্ত ঘাঁটাঘাটি করে, প্রচুর সময় নিয়ে লিখলেন মাসুদ রানা সিরিজের প্রথম বই "ধংস পাহাড়", তারপর একই ভাবে পরবর্তী আরো কয়েকটি। পাঠক মহলে সেসব দারুণবাবে সমাদৃত হলো বটে, কিন্তু কাজীদা বুঝে গেলেন এভাবে প্রচুর সময় ক্ষেপন করে মৌলিক রচনা দিয়ে সিরিজ চালানো সম্ভব নয়। তখন তিনি অনুবাদ/ভাবানুবাদের পথে গেলেন।

এই তথাকথিত ভাবানুবাদকে এখন যে দৃষ্টিভঙ্গীতে দেখা হতে পারে, তখন সে দৃষ্টিভঙ্গীই ছিল না। কপিরাইটের বিষয়ে এখন যেমন সচেতনতা সৃষ্টি হয়েছে, তখন নিশ্চয়ই তেমন ছিল না। সে কারনে মাসুদ রানার বিরুদ্ধে তখন অপসাহিত্যের অভিযোগ উঠেছে জোড়ালোভাবে, কিন্তু চোরাই মালের অভিযোগ ওঠে নি। রাহাত খান, শাহরিয়ার কবির সহ লব্ধপ্রতিষ্ঠ অনেকেই তখন সেবা প্রকাশনীর পরিমন্ডলে লেখক হিসেবে বিচরণ করেছেন, কারে মনে ভাবানুবাদের নৈতিকতা বিষয়ে কোন প্রশ্ন দেখা দেয় নি। কবিগুরু তাঁর অনেক গানের সুর করেছেন দেশী বিদেশী বিভিন্ন গানের সুর নিয়ে, আমাদের জাতীয় সংগীতটিও তেমনই একটি গান। এখন কেউ তেমনটি করলে আর দেথতে হবে না, কিন্তু তখন এ নিয়ে প্রশ্নের উদয় হয় নাই। এই কালের নৈতিকতার বোধ দিয়ে সে কালের ঘটনাবলীকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর চেষ্টা সে কারনেই হাস্যকর।

ব্যক্তিগতভাবে আমি আমার তারুন্যে মাসুদ রানায় বুঁদ হয়ে ছিলাম। মুক্তকন্ঠে এ কথা স্বীকার করতে দ্বিধা নেই যে, মাসুদ রানার কল্যানে আমি বহুভাবে উপকৃত হয়েছি। কিন্তু পরে বইতে উল্লেখ থাকা সত্বেও যখন দেখেছি মাসুদ রানার অমুক বইটি বিদেশী অমুক বইয়ের অনুবাদ/ভাবানুবাদ, তখন ব্যাপারটা আমার ভাল লাগে নি, মাসুদ রানা পড়ে আর আগের মত মজা পাই নি।

সাফিনাজ আরজু এর ছবি

এই তথাকথিত ভাবানুবাদকে এখন যে দৃষ্টিভঙ্গীতে দেখা হতে পারে, তখন সে দৃষ্টিভঙ্গীই ছিল না। কপিরাইটের বিষয়ে এখন যেমন সচেতনতা সৃষ্টি হয়েছে, তখন নিশ্চয়ই তেমন ছিল না। সে কারনে মাসুদ রানার বিরুদ্ধে তখন অপসাহিত্যের অভিযোগ উঠেছে জোড়ালোভাবে, কিন্তু চোরাই মালের অভিযোগ ওঠে নি। রাহাত খান, শাহরিয়ার কবির সহ লব্ধপ্রতিষ্ঠ অনেকেই তখন সেবা প্রকাশনীর পরিমন্ডলে লেখক হিসেবে বিচরণ করেছেন, কারে মনে ভাবানুবাদের নৈতিকতা বিষয়ে কোন প্রশ্ন দেখা দেয় নি। কবিগুরু তাঁর অনেক গানের সুর করেছেন দেশী বিদেশী বিভিন্ন গানের সুর নিয়ে, আমাদের জাতীয় সংগীতটিও তেমনই একটি গান। এখন কেউ তেমনটি করলে আর দেথতে হবে না, কিন্তু তখন এ নিয়ে প্রশ্নের উদয় হয় নাই। এই কালের নৈতিকতার বোধ দিয়ে সে কালের ঘটনাবলীকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর চেষ্টা সে কারনেই হাস্যকর।

চলুক
সমস্ত মন্তব্য পড়ে আমিও এই কথাটাই বলতে যাচ্ছিলাম।
সত্যি বলতে সেবা প্রকাশনীর মূলত- অনুবাদ, কিশোর ক্ল্যাসিক, তিন গোয়েন্দায় বেশি পড়া হয়েছে, কালে ভদ্রে হয়ত কিছু মাসুদ রানা। বিদেশী কাহিনী অবলম্বনে কথাটি নিয়ে আসলে কখনও মাথা ঘামান হয়নি কারন সত্যি বলতে "কপিরাইট" শব্দটির মূল অর্থই পরিস্কার হয়েছে মাত্র বছর কয়েক হল।

আগে কখনও ভেবে দেখিনি এটা কপিরাইট লঙ্ঘন করে কিনা। কাজীদা যে সময়ে মাসুদ রানা লেখা শুরু করেছিলেন তখন ইন্টারনেটের কল্যাণে পৃথিবী এমন হাতের মুঠোয় ছিলনা, তাই হয়ত লেখকের নাম এবং গল্পের নাম উল্লেখ করার গুরুত্ব উনি সেভাবে উপলব্ধি করেননি।
যেমন প্লাগারিয়াজম যে আসলে কত বড় অন্যায় বছর কয়েক আগেও অন্ততপক্ষে দেশে যারা আছেন তাদের মধ্য বেশীরভাগ মানুষই জানতেন না। হয়তবা এখনও অনেকে সঠিক ভাবে জানেনা, তবে বর্তমান কালে যেভাবে ইন্টারনেট সহজলভ্য তাতে আশা করা যায়,এই বিষয়গুলো খুব দ্রুতই সবার মধ্যে ছড়িয়ে যাবে।
তবে একথাও ঠিক, গুপ্ত সংকেত বইয়ের যে উদাহারন দিলেন সেটি যদি সঠিক হয় তবে তা কখনই সমর্থন যোগ্য নয়।
সেবা প্রকাশনী অনেক বড় একটা প্রকাশনী। আমাদের দেশের পাঠক তৈরির ক্ষেত্রে এবং প্রকাশনা জগতে সেবার ভূমিকা যে অপরিসীম তা কম বেশি সবাই স্বীকার করবে। তাই ভবিষ্যতে অবশ্যই চাইব যেন সেবা থেকে প্রকাশিত যে কোন অনুবাদ বা ভাবানুবাদ বা বিদেশী গল্পের ছায়া অবলম্বনে যে কোন লেখায় উপযুক্ত রেফারেন্স উল্লেখ থাকে।

আপনার লেখার উদ্দেশ্যটা হয়ত ভালোই ছিল কিন্তু কেন জানি লেখা পড়ে মনে হয়েছে আপনি ব্যক্তি কাজী আনোয়ার হোসেনকে আক্রমন করেই লিখতে চেয়েছেন। এটি একান্তই আমার ব্যক্তিগত ধারনা, ভুল হলে দুঃখিত।

__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

আপনার মন্তব্যের শেষ দুটি প্যারা হয়তো আমার উদ্দেশ্যে নয়, তাই না?

সাফিনাজ আরজু এর ছবি

জি হ্যাঁ ভাই, আপনার উদ্দেশ্য নয়, ভুল হয়ে গেছে। ইয়ে, মানে...
ঐ মন্তব্যটা সম্পাদনা করতে পারছিনা,আন্তরিকভাবে দুঃখিত। মন খারাপ
এনিওয়ে, ঐ প্যারাগুলো ছিল লেখকের উদ্দেশে।

__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---

অতিথি লেখক এর ছবি

লেখক বোধহয় কোন বইচুরি সাইটের সাথে জড়িত তাই উদাস'দার পোস্ট সরাসরি লেখকের বিলো দা বেল্ট গেছে। ব্যাপার না।

যাই হোক, বুঝলাম দি গ্রেট কাজী'দা তত গ্রেট না কারণ তিনি অনেক অনেক লেখকের বই সরাসরি মেরে দিচ্ছেন। অতঃএব মাসুদ রানা স্ক্যান করে জলছাপ মেরে সাইটে উঠিয়ে দেয়া জায়েজ। কিন্তু ভাই বাকি লেখকেরা কি দোষ করেছেন? একটা মাসুদ রানার বিপরীতে তো অন্তত ১০০ টা মৌলিক বই স্ক্যান হচ্ছে। নিশ্চয় এ ব্যাপারে পোস্টের লেখক কোন অসাধারণ যুক্তি দিতে পারবেন।

আমি একটা ব্যাপারে শতভাগ নিশ্চিত লেখক মাসুদ রানা তেমন একটা পড়েননি। "ধ্বংস পাহাড়" থেকে শুরু করে ২০১৩-১৪ সালের আগে পর্যন্ত বের হওয়া মাসুদ রানা সিরিজের প্রতিটা বই আমি পড়েছি। সেই সূত্রে আমি বলতে পারি আপনি "নীল বজ্র" বইটার আগে পর্যন্ত র‍্যান্ডম যেকোন বই পড়ে দেখুন। ছায়া অবলম্বনে মৌলিক সাহিত্য কাকে বলে আপনি নতুন করে শিখবেন। "অগ্নিপুরুষ"-এর উদাহরণ গত ১৫/২০ বছরে অনেক দেয়া হয়েছে। আপনারা না পড়ে শুধু শুনেই অগ্নিপুরুষ নিয়ে লাফাতে আসেন। আরে ভাই ৬৭ সাল থেকে আরো অনেক বই লেখা হয়েছে। দয়া করে "মূল্য এক কোটি টাকা মাত্র" বা "দূর্গম দূর্গ" এগুলো নিয়েও কিছু বলুন।

আরেকটা কথা বলি টোলকিয়েন "লর্ড অফ দি রিংস" লেখার পরে ফ্যান্টাসি লেখকেরা কিন্তু কোন ভাবেই টোলকিয়েনের ছায়া এড়াতে পারেন না সে আপনি রবার্ট জর্ডান বলেন আর জর্জ মার্টিন বলেন। কই তারা তো বইতে কোথাও টোলকিয়েনের কথা উল্লেখ করেন না। যা বলার মুখেই বলেন। আপনি বরং নিজের দোষ আগে দেখুন পরে কাজীদা টানবেন।

-- ইমরান ওয়াহিদ

সত্যপীর এর ছবি

লেখক মৌলিক অমৌলিক কোন বইই স্ক্যান করে আপলোডের বিষয়ে কিছু বলেননি। ওনার অভিযোগ কাজীদাকে নিয়ে। লেখার টোন আমারও তেমন পছন্দ হয়নি কিন্তু অযথা লেখককে বই চুরির সাপোর্টার বানানোর কোন কারণ দেখিনা।

আপনার প্রথম দুইটি প্যারার কোন দরকার ছিলনা, পরের দুটি প্যারার যুক্তিগুলোই যথেষ্ট।

..................................................................
#Banshibir.

অতিথি লেখক এর ছবি

সত্যপীর ভাই,

কাজীদা'কে নিয়ে সচলে এর আগে লেখা এসেছে। তখন কিন্তু প্লেজারিজম বা বই নকল নিয়ে এরকম তত্ত্বকথা কেউ ঝাড়তে আসেননি। এখন উদাসদা বাংলা বই স্ক্যান ওয়েবসাইট নিয়ে কিছু কথা বলার পর হঠাৎ কাজীদা বই নকল করেন, এই নিয়ে এত বড় জ্ঞানগর্ভ আলোচনা, আমার নোংরা মনে সন্দেহ জাগালো আরকি।

বাংলা ব্লগে তো আমিও ঘোরাঘুরি করছি অনেক দিন। অনেক কিছুই দেখলাম। নিজে লিখতে না পারলেও কে কার লেখায় কি হিডেন বক্তব্য দিচ্ছেন তা খুব বুঝতে পারি। লেখক সরাসরি কিছু বলেননি তাই আপনারা বুঝেও বিষয়টাকে এড়িয়ে যাচ্ছেন। একজন লেখক হিসেবে এ এব্যাপারে আপনারা দায়বদ্ধ। আমি তো শুধুই পাঠক, আমি কেন এড়িয়ে যাব। আমি যা বুঝবো আমি তা লেখককে বলবোই

-- ইমরান ওয়াহিদ

সত্যপীর এর ছবি

কে কার লেখায় কি হিডেন বক্তব্য দিচ্ছেন তা খুব বুঝতে পারি।

হো হো হো

..................................................................
#Banshibir.

অতিথি লেখক এর ছবি

আমি কোনো হিডেন বক্তব্য দিচ্ছিনা। আমি ওপরেও বলেছি, এখানে আরেকটু ক্ল্যারিফাই করছি।

আমি বলতে চেয়েছি, বই স্ক্যান করে আপলোড করা যেমন অপরাধ, অন্যের মৌলিক লেখা নিজের বলে চালানো আরো বড় অপরাধ। তবে প্রথম অপরাধটাও এমন কোনো অপরাধ নয়, যেটাকে অবজ্ঞা করা যাবে। সেটাকেও গুরুত্বের সাথে নিতে হবে, এবং অবশ্যই অল্টারনেট ব্যবস্থা নিতে হবে যাতে লেখকরা তাদের সৃজনশীলতার সম্মানটুকু পায়। চরম উদাসের লেখা এবং আমার লেখা - দুটোতেই লেখকদের পরিশ্রমের সম্মান দেয়ার কথা বলা হয়েছে, দুটো ভিন্ন বিষয় নিয়ে।

সত্যপীর এর ছবি

কথাটা ইমরান ওয়াহিদকে বলতে চেয়েছিলেন মনে হয়। আমার কমেন্টের নিচে চলে এসেছে।

..................................................................
#Banshibir.

হিমু এর ছবি

আপনার কাছে একটা প্রশ্ন রাখি। আপনি নাজিমউদ্দিন সাহেবের করা ড্যান ব্রাউনের অনুবাদের কথা বলেছেন। নাজিমউদ্দিন সাহেব কি ড্যান ব্রাউন বা তার এজেন্টের কাছ থেকে অনুমতি নিয়েছেন? কেবল বইয়ের ওপর ড্যান ব্রাউনের নাম ছাপা থাকলেই কি সেটা চুরির দায়মুক্ত হয়ে যায়?

বাংলাদেশে অনেক অনূদিত বই প্রকাশ করা হয়। ঠিক কয়টার জন্যে লেখক বা লেখকের এজেন্টের অনুমোদন নেওয়া হয়, আপনার কি কোনো ধারণা আছে?

আপনি মূল বইয়ের লেখকের নাম উল্লেখ করলেই অনুবাদক বা প্রকাশককে সততার সনদ দিয়ে ফেলছেন। ভাবানুবাদকে যদি আমরা চুরি বলি, তাহলে শুধু নাম ছাপাই কি যথেষ্ট, নাকি মূল গ্রন্থের লেখকের অনুমোদনও প্রয়োজন?

মাহবুব ময়ূখ রিশাদ এর ছবি

চলুক চলুক

------------
'আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ !

অতিথি লেখক এর ছবি

ইমরান ওয়াহিদ ভাই, আমি বইচুরির কোনো সাইটের সাথে যুক্ত নই। এবং কোনো বইকেই বিনামূল্যে আপলোড করার পক্ষপাতী নই। তাই, আমি কোনো যুক্তি দিচ্ছি না। আমি কম খরচে ই-বুক কিনতে পারলে ভালো বোধ করবো, here, I said that on the record.

ছায়া অবলম্বনে লেখা আর অনুবাদ, দুটো দুই জিনিস। রবার্ট জর্ডান আর জর্জ আর আর মার্টিন ছায়া অবলম্বনে লেখেন। আর অনুবাদ করেন কাজী আনোয়ার হোসেন, ছায়া অবলম্বনে লেখেন না। এটার উদাহরণ আমি একটা কমেন্টে দিয়েছি। আর ওখানে অগ্নিপুরুষ এর উদাহরণ দেইনি, আরেকটা (গুপ্ত সংকেত) দিয়েছি। চাইলে আরো অনেক অনেক দেয়া সম্ভব, আপনিও জানেন।

- ফরহাদ হোসেন মাসুম

অতিথি লেখক এর ছবি

এত তর্কাতর্কির পরে তাহলে এন্ড রেসাল্ট কি দাঁড়ালো? আমরা শেষ পর্যন্ত কি কোন কমন গ্রাউন্ড পেলাম? কাজীদা ৬৭ সাল থেকে ভাবানুবাদ না করলে আমরা কবে স্পাই থ্রীলার বুঝতে শিখতাম তা আসলে বলা মুশকিল। আবার তিনি নামোল্লেখ ছাড়াই বিভিন্ন লেখকদের বই অনুবাদ করছেন যা পরবর্তী প্রজন্মকে ভূল মেসেজ দিচ্ছে। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, লেখকের অনুমতি না নিয়ে শুধু নামোল্লেখ করে দিলেই কি সমাধান হয়ে গেলো। লেখকের অনুমতি কি জরুরী না? সেক্ষেত্রে কাজী আনোয়ার হোসেন, হুমায়ুন আহমেদ বা নাজিমুদ্দিন সকলেই একই দোষে দোষী।

তাহলে উপায়? মৌলিক থ্রীলার লেখার কষ্ট স্বীকার করতে হবে কোন না কোন লেখককে। উদাহরণ স্বরূপ সচলের অনেকেই দেশের বাইরে থাকেন, তাঁরা বিদেশের পটভুমি খুব সহজে ব্যাবহার করতে পারবেন। কিন্তু তা আমরা টাকা খরচ করে কিনবো তো? ড্যান ব্রাউন সাহেবের ইনফারনো'র ইন্ডীয়ান সংস্করণের গায়ের দাম ৭৫০ রূপী, ডিসকাউন্ট দিয়ে খুব কম হলে ৫০০ রূপী হবে, বাংলাদেশী টাকায় অন্তত ৭০০ টাকা। আজ যদি তারেক অনু একখানা মৌলিক স্পাইথ্রীলার লিখে তার গায়ের দাম ৫০০ টাকা রাখেন কয়জন কিনবেন? ইবুক করলেও তো অন্তত ১০০/১৫০ টাকা হবে, কিনবেন কি? কয় কপি কিনবেন? ৫০/১০০? তারপর? এত কষ্ট করার পরে লেখকের পকেটে কত যাবে? তাহলে মৌলিক স্পাই থ্রীলারের চাইতে যা চলছে তাই চলুক, ৮০/৯০ টাকায় পেয়ে যাচ্ছেন বাংলায় স্পাই থ্রীলার।

একটা কথা মনে রেখেন কাজীদাকে শুধু বাংলায় স্পাই থ্রীলার লেখার জন্য গ্রেট বলা হচ্ছে না, গ্রেট বলা হচ্ছে গত প্রায় ৫০ বছর ধরে সিরিজটা চালিয়ে যাবার জন্য। প্রায় ৪৫০ টা মাসুদ রানা বের করার জন্য। এবং অবশ্যই অনেক নবীন লেখককে লেখালিখির জন্য একটা প্ল্যাটফর্ম তৈরী করে দেয়ার জন্য।

----ইমরান ওয়াহিদ

অতিথি লেখক এর ছবি

আমার উচিৎ ছিলো পোস্টেই আরো বিশদ আকারে বাতিঘর বা নাজিমউদ্দিনের ব্যাপারগুলো তুলে ধরা।

আপনারা যেটা জানেন না, সেটা হলো - ২০০৫ সালে নাজিমউদ্দিন ড্যান ব্রাউনের সাথে যোগাযোগ করেছিলেন এবং নো-অবজেকশন-সার্টিফিকেট বা অনাপত্তি নোটিশ নিয়েছিলেন। দশ হাজারের কম কপি ছাপা হয়, এমন কোনো দেশে বা সে দেশের অনুবাদে ওরা কোনো চুক্তিতে যান না। তাই, অনুবাদ ছাপানোতে লিখিত অনাপত্তি প্রকাশ করেছেন। ব্যাপারটা আশা করি, বোঝাতে পেরেছি।

উনি নাম উল্লেখ না করে ভুল ট্রেন্ড তৈরি করেছেন বলেই এখন মৌলিক থ্রিলার বেশি বিক্রি হচ্ছেনা, এটাও নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন। কী আর বলবো, বলুন?

- ফরহাদ হোসেন মাসুম

হিমু এর ছবি

উনি নাম উল্লেখ না করে ভুল ট্রেন্ড তৈরি করেছেন বলেই এখন মৌলিক থ্রিলার বেশি বিক্রি হচ্ছেনা, এটাও নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন।

না, বুঝতে পারিনি। মৌলিক থ্রিলার বিক্রি না হওয়ার সাথে নাম উল্লেখ না করার কী সম্পর্ক?

অতিথি লেখক এর ছবি

সেটা না হয় বোঝেননি। পরের অনুচ্ছেদে বোঝাচ্ছি। কিন্তু নাজিমউদ্দিনের করা ড্যান ব্রাউনের অনুবাদের অনুমতি নেয়ার ব্যাপারটা বুঝেছেন তো? This is huge, right? And we can all agree that this is the best practice. And if this is possible, why take the wrong route?

মৌলিক থ্রিলার বলতে বোঝাচ্ছি প্রচ্ছদে ড্যান ব্রাউন বা কাসলারের (বা যে কোনো অরিজিনাল লেখকের) নাম সম্বলিত বই। আর মাসুদ রানাতে গল্প নিয়ে আসল লেখকের নামে না বিক্রি করাটা হচ্ছে ভুল ট্রেন্ড। এটা না করে প্রথম থেকে লেখকের আর অনুবাদকের নাম মেনশন করে অনুবাদ করলে সেটাই বিক্রি হতো। কারণ, মানুষের কাছে অন্য ট্রেন্ডটা থাকতোইনা।

- ফরহাদ হোসেন মাসুম

হিমু এর ছবি

নাজিমউদ্দিন সাহেব ড্যান ব্রাউনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পেরেছেন, কারণ দুনিয়া এখন অনেক ছোটো। কাজী আনোয়ার হোসেন পাকিস্তান আমলে বসে মাসুদ রানা লেখা শুরু করেন, তখন মূল লেখক বা তার এজেন্টের সঙ্গে যোগাযোগ করা বা অনুমতি আদায়ের কাজটা কি এতো সহজ ছিলো?

মৌলিক থ্রিলারের আক্ষরিক অনুবাদ বলতে চেয়েছেন বোধহয়। এটা বিক্রি না হওয়ার পেছনে অনেক কারণ থাকতে পারে, আমি ধারণা করছি বিতরণ ব্যবস্থা সবচেয়ে বেশি দায়ী। আমাদের দেশে বইয়ের বিপণন খুব দুর্বল। আপনি কাজী আনোয়ারকে চোর বলে গালি দিচ্ছেন, যদিও দেশের অন্যতম সফল বই বিপণন ব্যবস্থা তাঁর হাতে তৈরি করা। আমি ১৯৯৩ সালে কুলাউড়ার রেল স্টেশনে সেবা প্রকাশনীর সব সাম্প্রতিক বই দেখেছি। বোধ করি নাজিমউদ্দিন সাহেবের করা অনুবাদ বইটি সেখানে রাখা হয় না।

প্রোফেসর হিজিবিজবিজ এর ছবি

বিতরণ ব্যবস্থার পাশাপাশি অনুবাদের মানও একটা বড় নির্ণায়ক বলে আমার মনে হয়। এই আক্ষরিক অনুবাদগুলোর বেশীরভাগেরই মান নিচুস্তরের।

আর একটা কথা - মৌলিক লেখা ভালো হলে সেটাও বিক্রি হয়। তা না হলে রকিব হাসানের বই হার্ড কভারে বের হলেও এত চলে কেন? কিংবা শেখ আবদুল হাকিমের থ্রিলার? নাকি বাতিঘর থেকে প্রকাশিত হয়নি বলে কিংবা উনারা আগে সেবা প্রকাশনীতে লিখতেন বলে উনাদের লেখাগুলো এখানে গণনার মধ্যে আসবে না? জানেন নিশ্চয়ই, বাতিঘর থেকে সাম্ভালা নামে তিন খন্ডে সমাপ্ত একটা সম্পূর্ণ মৌলিক থ্রিলার বের হয়েছে, লেখক শরীফুল হাসান। গত শনিবার বইমেলায় বাতিঘরের স্টলে খোঁজ করে জানলাম তিনটি বইয়ের বিক্রিই নাকি ভালো।

____________________________

রাশেদ  এর ছবি

সময়টুকু নষ্ট হল।

অতিথি লেখক এর ছবি

ভাই, এতো শত বুঝি না,।৮০-৯০ দশক এর দিকে টিফিন এর পয়সা বাঁচিয়ে ১০-১২ টাকা দিয়ে একটা বই কিনে, দেশে বিদেশে স্বপ্নের অভিযান চালাতাম। তখন ইন্টারনেট বা কোন নেট ই ছিল নাহ। ian fleming, dan brown, jack london, henry rider hagard এর লেখা বই কিনে পরা তখন স্বপ্নের স্বপ্নতেও কল্পনা করা যেত নাহ। এই আশ্চর্য জগতের দুয়ার খুলে দিয়ে ছিল সেবা। প্রকারন্তরে কাজী আনোয়ার হোসেন ওরফে কাজী'দা । আমি নিজে একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার এবং অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থায় কাজ করেছি লাস্ট ১৫ বছর। আপনি যা বুঝলাম, বাইরে থাকেন এবং বয়সে আমার ছোট হবেন। যে সুযোগ ও স্বপ্নের জগতের দুয়ার কাজী'দা একটা প্রজন্ম কে উপহার দিয়েছেন তার সুফল কিন্তু এই প্রজন্ম উপভোগ করছে।

আপনার কথা মত "কাজী'দা চোর" বুজলাম। আমি দোয়া করি আপনিও যেন উনার মাপের একজন চোর হওয়ার মত যোগ্যতা অর্জন করতে পারেন। যেন আপনার পরবর্তী কয়েক প্রজন্ম আপনার চৌর্যবৃত্তির সুফল ভোগ করতে পারে। নিজে আগে couple of thousands book translate করে বাংলা বই পাঠকদের হাতে তুলে দিন তারপরে চুরির সংজ্ঞা দিতে আইশেন। এতো বড় চোর হতে হলে আপনাকে হয়ত আর একবার জীবন প্রথম থেকে শুরু করার চিন্তা করতে হবে।

সিরিয়াসলি, ভাই আপনার এর থেকে ভাল কিছু করার নাই???? এক কাজ করেন জাস্ট এখন থেকেই লেটেসট ইংলিশ বই গুলো বাংলায় চুরি (থুক্কু, আই মিন অনুবাদ) করা শুরু করে দেন। দেখেন বাকি জীবনে ৪০-৫০ টা বই আমাদেরকে উপহার দিতে পারেন কিনা চোখ টিপি হাসি । এই উপকারটা তো আমরা বাংলা বই প্রেমিরা আপনার মত whistle blower এর কাছে থেকে আশা করতেই পারি। নাকি? কি বলেন ভাই? কাজি'দা এর একটু লোড ও কমলো। আর কত করবে সে আমাদের মত ইংলিশ না জানা গাইয়া দের জন্য।

ভাল থাকবেন।

Shomit

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।