আমি ফুটপাত থেকে নেমে কয়েক পা পিছিয়ে এলাম । তারপর রাস্তার মাঝে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে ডাকলাম – “ তিথিইইইইইইইইইইইইইইইই” ।
কোন সাড়াশব্দ নেই !
চারতলা বাড়িটার দিকে মুখ উঁচু করে আমি আবারো ডাকলাম “ তিথিইইইইইইইইইইইই” ।
কেউ সাড়া দিল না ।
হাত দুটো মেগাফোনের মত মুখের কাছে ধরে ডাক দিলাম – “ তিথিইইইই” ।
কিন্তু এই দুপুর রাত্রিতে আমার ডাক কেউ শুনলনা । রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে আমি আর আমার ছায়া ।
কেউ একজন দূর থেকে হেঁটে আসছে ।
আমি আবারো ডাক দিলাম –“ তিথিইইইইইইইই” ।
দূরের সেই লোকটা আমার কাছে এসে বলল –“ একটু জোরে ডাকুন না ভায়া, এতো আস্তে ডাকলে কি শুনতে পাবে ?”
“চলুন একসাথে তিথিকে ডাক দিই” ... আমি প্রস্তাব দিলাম লোকটাকে । লোকটা মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো ।
“ আমি এক , দুই , তিন গুনবো, তিন বলার সাথে সাথেই ডাকবেন ‘তিথিইইইইইই’।
এক...... দুই ...... তিন......
“তিথিইইইইই...” আমরা দুজন ডেকে উঠলাম একসাথে ।
কয়েকজন লোক রাতের শেষ শো এর সিনেমা দেখে বাড়ি ফিরছে । তারা আমাদের দেখে কৌতূহলী হয়ে এগিয়ে এলো ।
“চলুন আমরাও তিথিকে ডাকি” ওরা বলল । আমি সানন্দে ওদের সঙ্গী করে নিলাম ।
আমি গুনলাম......... এক... দুই...তিন...
সব্বাই চিৎকার করে উঠল—“ তিথিইইইইইইইইইইইইইইই” ।
আরও অনেকেই এসে আমাদের সাথে যোগ দিল । আমি অবাক হয়ে খেয়াল করলাম আধা ঘণ্টার ভেতর চল্লিশ জনের মত লোক জড় হয়ে গেল । সবাই সুর করে কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে ডাকতে লাগলো “তিথিইইইইইইইইই...” ।
তবে এত লোক একসাথে একটা সমবেত চিৎকার দেয়া সহজ নয় । কিছু কিছু লোক হয় আগে ডেকে ফেলছে না হয় পরে ! ফাজিল টাইপের কেউ কেউ আবার অদ্ভুত শব্দ করে চিৎকারের সুরটাই কেটে দিচ্ছে । এদেরকে মুরুব্বি গোছের কিছু লোকজন ঘাড় ধরে বের করে দিল ।
আমরা ঠিক করে নিলাম একদল বলবে – “ তিইইইইইইইইইই” । আরেক দল বলবে –“ থিইইইইইইইইইইই”। ‘তি’ ধ্বনি ক্রমাগত উচু থেকে নীচে নামবে আর থি ধ্বনি নিচু থেকে উঁচুতে উঠবে ।
বেশ কিছুক্ষণ এমন করে চলল । সমবেত চিৎকার চলছিল দারুণ ভাবে ।
হঠাৎ মুখে বসন্তের দাগ ওয়ালা একটা লোক আমাকে জিজ্ঞেস করল “ আচ্ছা তিথি বাড়িতে আছে তো ?”
“তা তো জানি না ! ” আমি বললাম ।
“ চিন্তার বিষয় ! আচ্ছা বাড়ির চাবি আপনার কাছে নেই ?” লোকটা আবারো জানতে চাইল ।
“ চাবিতো আছেই” আমি নির্বিকার ভাবে উত্তর দিলাম ।
“ তাহলে উপরে গিয়ে দেখছেন না কেন ?”
“ এইটা তো আমার বাড়ি না” ।
“ তাহলে এইটা কার বাড়ি ? তিথির ? এই তিথিটাই বা কে ?” বেশ ঝাঁজের সাথে জানতে চাইল কয়েকজন ।
“ এইটা কার বাড়ি সেটা আমি জানি না, আর তিথি কে সেটাও আমার জানা নেই” আমি নিরুত্তাপ ভঙ্গিতে উত্তর দিলাম ।
“ তাহলে কেন আপনি এখানে দাঁড়িয়ে তিথি তিথি করে চিল্লাচ্ছেন ?” একজন কেমন বিব্রত ভাবে প্রশ্ন করলো ।
“ তিথি নাম পছন্দ নয় ? তাহলে চলুন অন্য কোন একটা নামে ডাকি । এই যেমন ধরুন সুরঞ্জনা কিংবা শ্যামলী” আমি বললাম ।
সবাই মনে হয় একটু রেগেই গেল ।
“ আপনি এতো গুলা লোকের সাথে এই জঘন্য প্র্যাক্টিক্যাল জোকটা করলেন কোন সাহসে ?” বসন্তের দাগওয়ালা লোকটা তেড়েফুঁড়ে এলো আমার দিকে ।
“ আমি কিন্তু আপনাদের ডাকিনি একবারের জন্যও । সবাই স্বেচ্ছায় যোগ দিয়েছেন চিৎকারে” ।
আমার কণ্ঠে বোধহয় কিছুটা উত্তাপ ছিল । সবাই কেমন বেকুব হয়ে গেল ।
এক সৌম্যদর্শন বৃদ্ধ সামনে এগিয়ে এলেন ।
“দেখুন, গণ্ডগোল করে লাভ কি ? তাঁর চেয়ে চলুন আমরা শেষবারের মত তিথিকে ডাকি, তারপর বাড়ি চলে যাই”।
সবাই সম্মতি দিল ।
আমি বললাম, এক... দুই... তিন
সবাই একসাথে চিৎকার করে উঠল—“ তিথিইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইই”
এরপর সবাই যে যার বাড়ির পথ ধরল ।
আমিও সামনের রাস্তা ধরে হাঁটতে থাকলাম ।
বেশ খানিকটা এগিয়ে যাবার পর আমি পেছন থেকে শুনতে পেলাম কেউ একজন এখনো ডেকে চলেছে—“ তিথিইইইইইইই” ।
কেউ একজন এখনো রয়ে গেছে চিৎকার করতে, একগুঁয়ে একরোখা একজন ।
_____________________________________________________________________________________________________
মূল গল্পঃ The Man Who Shouted Teresa
#ইটালো কালভিনো
অনুবাদঃ তাহসিন রেজা
মন্তব্য
ভাল লাগলো। তা একটা কথা, 'তিথি' নামটাই কেন?
অনেক ধন্যবাদ প্রৌঢ় ভাবনা । তিথি আমার এক ছোট্ট পিচকি বোনের নাম ।
হাহা, ইন্টারেস্টিং।
চট করে মূল গল্পটা নামিয়ে পড়ে ফেললাম, নেট থেকে Theresaকেও দেখে ফেললাম।
বানানটা তিথী হলে আরো ভাল হতো, এই আর কী। খি খি।
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
থেংকু তিথীঈঈঈঈঈঈঈঈঈ শর্টফিলিমটা দেখেফেলেছি তবে মূলগল্পের মত হয়নি একদমই।
শর্টফিলিমটা দেখেই কিন্তু এইটা লেখা ।
তাহসিন
শুভকামনা তিথী । এডিট করার অপশন থাকলে তিথীইইইইইইই করে দিতাম ।
খুব ভালো থাকবেন সব সময় ।
তাহসিন রেজা
এরকম গল্প লিখতে তেমন পরিশ্রম হয়না। তবে কিছুক্ষণের জন্য ভাবায়। ঝ্ররঝরে অনুবাদ।
রাজীব মাহমুদ
এরকম লেখা লিখতে 'তেমন পরিশ্রম হয়না' এই কথাটায় সামান্য দ্বিমত করছি। যে কোন লেখাই তা ভালো খারাপ ছোট বড় যাই হোক, লিখতে গেলে কিছু পরিশ্রম তো হয়ই। এই সামান্য পরিশ্রমটুকুও কিন্তু সমাজের দশজনের সবাই করতে পারেনা। বিশেষ করে অনুবাদ (তাও আবার ঝরঝরে পর্যায়ের) করতে গিয়ে আমার তো সেটাকে ভীষণ রকম কঠিন কাজ মনে হয়েছে সব সময়। কাজেই যাঁরা পারেন তাঁদের পরিশ্রমটুকু যত কমই হোক, সেটুকুকে আমি অন্তত সম্মান করি।
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
আশাদি যদিও তুমি ব্যাপক বিনয় দেখিয়েছো, কিন্তু, কথা সত্য!
একটা বাক্য লিখতে গেলে যাদের কীবোর্ড ভাঙে আমার মতো, তারাই জানে লেখুক হওয়া চাট্টিখানি কথা নহে!
আপনাকে কে বলল যে আমি সম্মান করিনা? আমি শুধু বলেছি যে এরকম লেখায় পরিশ্রমটা কম। যখন আমি চিন্তা করি টলস্টয়ের 'ক্রয়েটজার সোনাটা'র মত গল্পের কথা, তখন মনে হয় ওরকম গল্প লেখা অনেক বেশী পরিশ্রমের। অবশ্যই সব লেখাই কম-বেশী পরিশ্রমের।
গল্প ভালো লেগেছে।
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
থ্যাঙ্কু দিদি ।
তাহসিন রেজা
মজা তো।
__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---
তাহসিন রেজা
গল্পটা আর অনুবাদ সব মিলিয়ে দারুণ
---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।
অনেক অনেক ধন্যবাদ শাব্দিক ।
তাহসিন রেজা
আরে বাহ! বহুদিন পর একটা এমন গল্প পড়লাম
তিথি আর সুরঞ্জনা সচলে আছেই, এখন একজন শ্যামলীর অভাব।
ঝটপট আরো পোস্ট নামিয়ে ফেলুন, একটা নীড়পাতা থেকে হাপিশ হবার সাথে সাথেই যেন আরেকটা আসে। ফ্রেন্ডলি হুমকি দিয়ে রাখলাম।
............................................................................................
এক পথে যারা চলিবে তাহারা
সকলেরে নিক্ চিনে।
হুমকিতে ডরাইছি
থ্যাঙ্কু সুরঞ্জনা দিদি । অনেক অনুপ্রেরণা পেলাম আপনার মন্তব্যে
তাহসিন রেজা
চমৎকার গল্প। অনেক দিন মনে গেথে থাকবে!
অনেক ধন্যবাদ কমল ভাই ।
তাহসিন রেজা
চমৎকার গল্প । পড়ার পর নিজের অজান্তেই ডাকতে শুরু করেছি ' তিথিইইইইই... তিথিইইইইইইইইইইইই ... '
ধন্যবাদ হে নামহীন অতিথি ।
তাহসিন রেজা
চমেৎকার!
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
ধন্যেবাদ
তাহসিন রেজা
দারুণ লাগলো! ঝরঝরে ভাত থুরি অনুবাদ।
সুরঞ্জনার ফ্রেণ্ডলি হুমকিকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করবেন বলে আশা রাখি
অনেক অনেক অনেক ধন্যবাদ আপু ।
তাহসিন রেজা
ভাল লেগেছে। আমাদের সবার মনেই এমন কিছু মধুর নাম আছে যা কখন মনে হয় এমন চিৎকার করে ডাকি। মনে হয় সেই ডাক তার কানে পৌঁছে যাবে সে জাখানেই থাকুক না কেন।
অর্ঘ্য।
থ্যাঙ্কু অর্ঘ্য
তাহসিন রেজা
দারুন সুন্দর গল্প । পড়ার পর থেকেই মাথায় বাজছে " তিথিইইইইই... ... তিথিইইইইইইইইইইইই "
Mohammad Anwar
তাহসিন
দারুন লাগলো!
অপ্রকৃতিস্থ
তাহসিন
জোস তো।
..................................................................
#Banshibir.
অনেক ধন্যবাদ পীর ভাইয়া
তাহসিন
এইবারে এসে "ফাটাইলাইছেন" তাহসিন ভাই। সাবলীল ঢঙে এগিয়ে গেছে পুরো গল্পটা, একটুও হোঁচট খায়নি কোথাও। দারুণ।
ছোট্ট একটি গল্প, অথচ কী অদ্ভুত ব্যঞ্জনাময়! অসাধারণ সুন্দর লেগেছে।
চলতে থাকুক অনুবাদ। তবে এতো দেরী করে দিলেন কেন এবার? প্রথম দুটো তো বেশ তাড়াতাড়ি পোস্ট করেছিলেন!
____________________________
জীবন যে ছুটি দিচ্ছেনা, তাই দেরি হয়ে গেল ।
আপনার জন্যে অনেক শুভকামনা প্রোফেসর ।
তাহসিন
মজার গল্প।
অনুবাদ খাসা হয়েছে।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
থ্যাঙ্কু এবং শুভকামনা
তাহসিন
মজা পেলাম।
ভালো থাকবেন তাহ্সিন রেজা।
--------------------------------
কামরুজ্জামান পলাশ
ধন্যবাদ কামরুজ্জামান পলাশ
তাহসিন
হাহাহা মজার হয়েছে।
ধন্যবাদ শাফি ভাই
তাহসিন
কি নাম কইলেন মিয়া, এখন খালি মাথার মধ্যে তিথি ঘুরতাছে।
---------------------
সলিটারি সাইলেন্স
তাহসিন
বেশ মজার তো গল্পটা।
ধন্যবাদ বন্দনাপু ।
তাহসিন
বাহ্, দারুন তো - গল্প আর অনুবাদ দু'টোই!
এটা কি 'এবসার্ড' ঘরাণার গল্প নাকি?
****************************************
থ্যাঙ্কু মন মাঝি ।
"এবসার্ড" ঘরাণার ! আমিও ভাবছি
তাহসিন রেজা
সেইরাম তো!!!
থ্যাঙ্কু
তাহসিন রেজা
মজারু গল্পের খাসা অনুবাদ!
------------------------------------------
'আমি এখন উদয় এবং অস্তের মাঝামাঝি এক দিগন্তে।
হাতে রুপোলী ডট পেন
বুকে লেবুপাতার বাগান।' (পূর্ণেন্দু পত্রী)
ধন্যবাদ
তাহসিন
সুন্দর অনুবাদ।
ও ভাই, নতুন একখান লেখা দেন তাড়াতাড়ি।
ধন্যবাদ
তাহসিন
নোওওওওরাআআআআ
তাহসিন
এই গল্পের সবচেয়ে সুন্দর দিক হলো একটা চমৎকার পরিবেশকে ফুটিয়ে তোলা। এটা সহজ কাজ নয়। অনুবাদ হোক আর যাইহোক লেখকের কৃতিত্ব এখানেই। গল্পের মজাটা থাকতে থাকতেই শেষ করে ফেলে অতৃপ্তি ধরে রাখাটাই কম কথা না। ভাল লেগেছে। আরও লেখবেন আশা করি।
Shah Waez (শাহ্ ওয়ায়েজ।)
Facebook
..............................................................................................
কোথাও নেই ঝুমঝুম অন্ধকার
তক্ষক ডাকা নিশুতিতে
রূপকথা শুনে শিউরে উঠে না গা
স্বপ্নে আমার শরীরে কেউ ছড়ায় না শিউলি ফুল
আলোর আকাশ নুয়ে এসে ছোঁয় না কপাল
হাহাহা
হুজুগে বাংগালি আর কি
বেশ ভালো লাগলো। আচ্ছা দুপুর রাত্রি কথাটা কি ঠিক? মানে মাঝ রাত্রি লিখলেই ভালো হত না,
নতুন মন্তব্য করুন