বই মেলা শুরু হয়েছে থেকে গত পরশুর (২৩ ফেব্রুয়ারী) আগ পর্যন্ত একবার মেলায় ঢোকার সুযোগ-ই পাচ্ছিলাম না! পুরো প্যাকড শিডিউল! এর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দুইদিন প্রোগ্রাম থাকা সত্ত্বেও মেলায় ঢোকার ফুরসৎ হয়নি। ইচ্ছে ছিল অণু দা'র মোড়ক উন্মোচন থুক্কু উনার বইয়ের মোড়ক উন্মোচনে দৃক গ্যালারিতে যাব। কিন্তু এমনই বেয়াড়া আর অনিবার্য কাজ, যে যেতেই পারলাম না। মহা ব্যাস্ততা থাকা সত্ত্বেও ভেবেছিলাম উদাস দা'র মোড়ক উন্মোচন করেই ছাড়ব। ৬ টায় কাজ থাকার পরও তাই যাত্রা করলাম বইমেলার উদ্দেশ্যে। কপাল!! ৫ টায় টিএসসিতে গিয়ে যে লাইন দেখলাম তাতে 'লাইনে আসুন' 'লাইনে আসুন' করে তার আগের কয়দিন ধরে ফেসবুকের বুকে পড়ে উদাস দা'র কান্নাকাটির ফলাফল মনে হল। লোকজন উনার কান্নাকাটিতে আকুল হয়েই হোক আর কান্নাকাটি থেকে বাঁচার তাগিদেই হোক সব এসে লাইনে দাড়িয়ে গেছে। সেই লাইন শেষে ঢুকতে গেলে আমার কাজের বারোটা বেজে যাবে, তাই অগত্যা বিরস বদনে লাইনে না গিয়েই ফিরতে হল। আর হিম্ভাই এর মোড়ক খোলার দিন তো ঢাকাতেই ছিলাম না।
যাই হোক গতকাল "কোন কথা নাই, আইজকা যামুই" বলে ঢুকে গেলাম মেলায়। ঢুকেই লাইনে চলে আসলাম। ভাগ্যিস ... এই মুদ্রণের শেষ দুইটা বই-ই ছিল। স্টক খালি করে দিয়ে দু'দুটাই (পাপী মনের লোকজন, তফাৎ যান) কিনে নিলাম। একটা নিজের জন্য আরেকটা বান্ধবী কে লাইনে আনার জন্য। দুইটা লেখা বাদে বাকি গুলো তো আমার পড়া-ই, তবে উপুত হয়ে শুয়ে পড়া। সুখের কথা হল, এবার চিৎ কাইত বিভিন্ন ভাবে শুয়েই পড়া যাবে। এটা কেনার পর চলে গেলাম "পৃথিবীর পথে পথে" কিনতে। ফেসবুক মারফত খবর পেয়েছিলাম 'হংস পুরুষ' ৪ টা থেকে উপস্থিত থাকবেন পাটিকা পরিবেষ্টিত অবস্থায়। অথচ গিয়ে দেখি শুধুই দুইজন তরুণী বিক্রেতা, অণু দা হাপিশ! বই নিতে নিতে তাদেরকে-ই জিজ্ঞেস করলাম-"অণু দা কুথায়?"
-"উনি সন্ধ্যায় আসবেন।"
-"অ, আচ্ছা। গোয়েন্দা ঝাকানাকা রে কোথায় পাব বলতে পারেন?"
কিছুক্ষণ চিন্তা করে বিভ্রান্ত তরুণী বললেন -"না ভাই, ঠিক জানিনা।"
ফেসবুক তথা ভার্চুয়াল জগৎ এর সুবাদে সচলের অনেকের সাথে পরিচয়, মাঝেমধ্যে কথা হলেও একদম লাইভ যোগাযোগ এক নজরুল ভাই এর সাথেই আছে। শখের মেলায় নজু ভাই আর নুপুর ভাবীর স্টলে তানিম এহসান ভাইয়ের সাথে বেশ খানিকক্ষণ আড্ডা দিলেও ফোন নাম্বার নেয়া হয়নি। আর অণু দা তো পরিচয় দেয়ার পর "ওওও, আপনার কমেন্ট তো প্রায়ই দেখা হয়" বলে আবার কোন পাটিকার ডাকে সারা দিতে চলে গিয়েছিলেন বলে উনার সাথে কথা ওই অতটুকুই। ভরসা নজু ভাই। ফোন দিলাম উনাকে। গোয়েন্দা ঝাকানাকা কে কোথায় পাওয়া যাবে সেই খোঁজ পেলাম উনার কাছ থেকে। তবে 'ছায়াগোলাপ' কই পাওয়া যাবে সেই খোঁজ পেলাম না। আগে তো কত লাল গোলাপ, নীল গোলাপ, সাদা গোলাপ এমনকি কালো গোলাপ ও দেখেছি। টিভি পর্দায় নায়কের দেয়া সেইসব গোলাপের পাপড়ির ছোঁয়ায় নাইকা কে শিহরিত হতেও দেখেছি। আর এ যেন কেমন এক গোলাপ, যার পাপড়ি পর্যন্ত যাওয়াই লাগবে না, পাতায় পাতায়-ই নাকি শিহরণ!!! তাও আবার হালাল শিহরণ!!! এই গোলাপ তো চাই-ই চাই। গোয়েন্দা ঝাকানাকার দরবারে গিয়ে ঝাকানাকা কে ঠিকই পেলাম কিন্তু সেখানেও 'ছায়াগোলাপ' এর খোঁজ পেলাম না। ওখান থেকে চলে গেলাম 'মুলধারা ৭১' কিনতে। যদিও এটার ই-বুক আছে তবু এটার কাগুজে ভার্সন টা কিনব বলে আগে থেকেই টার্গেট ছিল। কেনা হয়ে গেলে দেখি আমার পকেটও খালি হয়ে গেছে! তাই ‘ছায়াগোলাপ’ কেনার আশা আপাতত বাদ দিতে হল। তবে খোঁজ যখন পেয়ে গেছি কিনে ফেলব মেলা ফুরোনোর আগেই।
ও, বলতে ভুলে গেছি, বই মেলায় ঢোকার আগেই কিনে নিয়েছিলাম পদ্ম ভাইয়ের প্রথম কবিতার বই "লিখতে লিখতে যাচ্ছি" উনার কাছ থেকেই। কবিতার বই, তাই পড়াও শেষ। সম্পূর্ণই ভিন্ন ধাচের কবিতা। কবিতা প্রেমিদের ভাল লাগবে আশাকরি। একমাত্র উনার অটোগ্রাফ-ই পেলাম। উদাস দা অটোগ্রাফ আর ফটোগ্রাফ এর লোভ দেখিয়ে বই কেনাল ঠিকই, কিন্তু তার টিকির সন্ধানও পেলাম না! লেখক পরিচিতি পড়ে জানতে পারলাম চাঁদের গায়ে ঘুরাঘুরি করা উনার শখ। তাই তিনি এখন সাইদীর সাথে মোহাব্বতকা পাছরাপাছরি (কোলাকুলি। পাছরাপাছরি মানে হচ্ছে ধস্তাধস্তি। আর মোহাব্বতের সাথে ধস্তাধস্তি ... বুঝেনই তো!! ) করতে চাঁদে গিয়েছেন ভেবে সান্ত্বনা পাওয়ার চেষ্টা করলাম।
'লাইনে আসুন' এর দুইটা বাদে বাকি সবগুলো লেখাই পড়া ছিল। বাকি দুইটাও পড়লাম। বরাবরের মতই চরম উদাসীয়! ঝাকানাকা এখনো পড়া শুরু করতে পারিনি। তবে, প্ল্যানচেটে নামানো তিন ভুতের বইয়ের প্রশংসা দেখেই আমি মুগ্ধ! আর সুজন্দার করা কাভার অনবদ্য। পৃথিবীর পথে পথেও এখনো পড়া শুরু করতে পারিনি। তবে শীঘ্রই সবগুলো শুরু এবং শেষ করে ফেলব। যারা এখনো বই কেনেন নি তারা দ্রুত এই বইগুলো কিনে ফেলুন। তা না হলে লেইট করলেই দেরি হয়ে যাবে।
--------------------------------
সুবোধ অবোধ
মন্তব্য
মানীর মান আল্লা রাখেন বলে একটা কথা আছে। আপনি যেভাবে পুস্তক বাদ দিয়ে স্বয়ং লেখকদের মোড়কের ব্যাপারে আগ্রহ দেখাচ্ছিলেন তাতে করে বড় বাঁচা বেঁচে গেলেন লেখুকত্রয় একটা বাদে বাকিসবগুলো বই কেনা হয়েছে।
পিতিমির পথে পথে বইতে অণুর অটোগ্রাফ পাইছিইইই
হে হে হে... পালাবে কুতায়??
কোনটা কিনেন নাই? মনে হয় "লিখতে লিখতে যাচ্ছি ",তাই না?
আমি অণু দা'র অটোগ্রাফ, ফটোগ্রাফ কিছুই পাই নাই। অণু দা অভিশাপ!!!! আর বাকি দুইজন তো দেশেই নাই।
ঠিকই ধরেছেন 'লিখতে লিখতে যাচ্ছি' নাই লিস্টে।
আচ্ছা মন্তব্যের ঘরে ফটুক দেয় কিভাবে?
সেটা জানিনা বলে অন্যদের পিত্তি জ্বালিয়ে দিতে পারছিনা অণুর অটোগ্রাফ দেখিয়ে
এই হচ্ছে ছায়াগোলাপের আমিষুলপনার পেইজ। এই দিন দিন না, আরো দিন আছে।
"আমিষুলপনা:২০১৪" পড়ছিলাম। কিন্তু স্টল নং ভুলে গেছিলাম। নেটওয়ার্ক এর কারণে ইন্টারনেট এও ঢুকতে পারছিলাম না। তাই ....
এখন খোঁজ পেয়ে গেছি। ৩৩৯-৩৪০
সুবোধ অবোধ
আপনি দেখি দুইবার লাইনে আসছেন। দুইটা কেনু?
- ফরহাদ হোসেন মাসুম
আমি তো সচল পড়ে পড়ে সেই অনেক আগে থেকেই লাইনে আছি। তবুও কাগুজে ভার্সন কিনলাম। আর আরেকটা কিনছি কারে লাইনে আনার জন্য, তা তো বললাম-ই।
বইমেলা রিলেটেড যাবতীয় পোস্টে হিংসা ছড়িয়ে বেড়াই, তাতে চিত্তের ঈষৎ আরাম হয়।
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
এই যে হিংসা করে আনন্দ পাওয়ার একটা উপলক্ষ করে দিলাম, এখন টেকাটুকা দেন ...
আমি এখনো বইমেলায় যাইতে পারি নাই।
আমি এখনো বইমেলায় যাইতে পারি নাই।
আমি এখনো বইমেলায় যাইতে পারি নাই।
কেন পারিনি? বলতে গেলে কী-বোর্ডের আয়ু ফুরিয়ে যাবে।
গতকালকেরটাই বলি।
বিকেল চারটায় অফিস থেকে বেরিয়ে বাসায় গেলাম হাতের ব্যাগটা রাখতে। বই এর ব্যাগ টানতে হবে সেই কথা ভেবে।
গিয়ে দেখি বউ এর গলায় 'কাশি'রাজ এর সঙ্গীত শুরু হয়েছে। আর ছোট ছেলে জ্বরের ঘোরে অচেতন হয়ে আছে।
জ্বর মেপে দেখি ১০৪ ডিগ্রী। জামা-জুতো খুলে ছেলের মাথায় পানি ঢাললাম আর গা স্পঞ্জ করে দিলাম। এরপর ডাক্তারের শরণাপন্ন।
এর মাঝে বড় ছেলেকে স্কুল শেষে বাসায় নিয়ে আসা।
আর হয় যাওয়া?
আজ কি যাওয়া হবে? নাকি কাল?
বুকপকেটে রাখা বই কেনার লিষ্ট এর কি হবে রে ভাই?
*******************
বইমেলায় যারা এর মাঝে ঘুরে এসেছেন তাদের সবাইকে আমার পক্ষ থেকে হিংসা উপহার।
--------------------------
কামরুজ্জামান পলাশ
আপনার পরিবারের সবার জন্য শুভকামনা।
অট:
আপনার "বুক পকেটে জমিয়ে রাখা বই কেনার লিস্টের কি হবে রে ভাই? " লাইনটা দেখে একটা গানের কথা মনে পড়ল -
"এখন আমি নদীর মত চলি,
স্রোতস্বিনী গঙ্গা বহুদূর।
বুক পকেটে জমিয়ে রাখা স্বপ্ন
পাখির ডানায় গন্ধে ভরা সুর ..."
আপনি দেখি ভালোই লাইনে এসেছেন। ......... বার লাইন!
বইমেলা নিয়ে কোন পোষ্ট দেখলেই তিথীডোরের মত আমারও হিংসায় প্রান পুড়ে। মনে কয় আপ্নেরে অভিশাপ দেই
লেখা মজারু হয়েছে।
__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---
অভিশাপ দিয়েন না গো ভাই, অভিশাপ খাইতে তিতা!!
লাইনে না আইসা উপায় আছে? উদাস দা যেমনে কান্দাকাটি লাগাইছিলেন...
আফনেরে ধইন্যা পাতা।
সুবোধ অবোধ
আপনার লেখাটা পড়ে এক্ষুনি মেলায় যেতে ইচ্ছে করছে । দেখি, একদম শেষদিন যাবো একবার ।
তাহসিন রেজা
একদম শেষ দিন কিল্লাই?
সুবোধ অবোধ
দশম বারের মত ঘুরে আসলাম ।
মুচমুচে লেখা , মেলায় আবার যান, গেলেই এমন লেখা !
facebook
আহা!! কি উপমা!!!
আপনে তো বাইত গেছেন গা। অটগ্রাফ পামু কোনে??
সুবোধ অবোধ
'হংস পুরুষ'
এইডা দ্যা গ্রেইট উদাস দা'র দেয়া নাম।
সুবোধ অবোধ
বইমেলা ভালু না
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
হ। টেকাটুকার শ্রাদ্ধ হয়।
আবার না কিনেও থাকা যায় না!
সুবোধ অবোধ
মাত্র দুই কপি লাইনে আসুন কিনলেন? আপনের বান্ধবী মাত্র একটা কেন??
আফনে খ্রাপ লুক! অটোগ্রাফ, ফটোগ্রাফ কিছুই পাইলাম না।
হ, এই একজনকে দেয়ার সময়ে সে "লাইনে আসব মানে?!! এইটা কি ধরনের টীজ!! " বলে যে অগ্নি দৃষ্টি দিয়েছিল .... আমিও একটা হাসি দিয়ে বললাম -"আচ্ছা, এইখানে (কাভারের পর ১ম পেইজে, যেখানে শুধু 'লাইনে আসুন' লেখা) 'লাইনে আসুন' এর উপরে 'বেলাইনে না থেকে' লিখে দেই?
কি আর কমু? আপনের বই তার হাতিয়ারে পরিনত হল!!!!
বান্ধবী অভিশাপ!!
সুবোধ অবোধ
মেলায় প্রায় দশদিনের মত গেসি। আজকেও যাব। সারাদিন থাকব। পকেটের কী অবস্থা ভাবতেও ভয় লাগতেসে। যাক গা, কাল থেকে ঐদিকে নজর দিব নি ।
লেখা ভালো লাগসে
------------
'আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ !
আমি গতকাল থেকে ঢাকার বাইরে। না হলে আজ আবার যেতাম।
পড়ার এবং মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ ...
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
নতুন মন্তব্য করুন