সব মানুষই লড়াই করে, করতে হয়। জীবনের কোনো না কোনো বাকে সবাইকেই যুদ্ধে নামতে হয়। কিন্তু লড়াই সবাই করলেও যোদ্ধা সবাই হতে পারে না। যুদ্ধ করার শপথ নেবার কঠিন মানসিক শক্তি সবার থাকে না। একজন ডাক্তার যেমন শপথ নেয়, যে কোন পরিস্থিতি তে সে একজন মানুষকে চিকিতসা সেবা দিতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। একে সম্ভবত ''হিপোক্রিটাস ওথ" বলা হয়। তেমনি দেশের প্রয়জনে যে কোন পরিস্থিতিতে যুদ্ধ করার শপথ নিতে হয় একজন সৈনিক কে। যুদ্ধ করার সাহস আর যুদ্ধ জয়ের কৌশল কে যারা জীবনের ব্রত হিসেবে বেছে নেবার সাহস রাখেন তারা নেতৃত্ব দেন সৈনিকদের। একজন সেনা নায়কের ভেতরের স্বত্বাটাও কিন্তু একজন অপরাজেয় সৈনিকেরই।
একজন সেনানায়ক শত্রুর ওপর ঝাপিয়ে পড়ার ট্রেনিং নেন। কিন্তু শত্রুর গুলির সামনে দাড়াতে আসলে কেমন লাগে সেটা কি শেখানো যায় ? সাহসী একজন সৈনিক বা সেনানায়ক তার শৌর্য , বীরত্বের অহমে শত্রুর গুলিতে জীবন দিতে প্রস্তুত থাকেন। বীর মাত্রই এই ধরনের জীবনাবসানকেই গৌরব বলে মানেন।
খুব কম মানুষের ধারনা আছে একজন মেজর, কর্নেল বা ব্রিগেডিয়ার একটা সেনাবাহিনীর জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। যার এক আদেশে শত, হাজার সৈনিক হুংকার দিয়ে শত্রুর উপর ঝাপিয়ে পড়ে; বাচবে , না মরবে সেই হিসাব না করে। তেমন সেনা অফিসার ক্ষয় হওয়া মানে যুদ্ধে নেতৃত্ব হারানো। আমরা প্রতিনিয়ত যুদ্ধে লিপ্ত জাতি না। তাই আমরা জানিনা ক্রান্তিকালে একজন কর্নেল ঠিক কি করতে পারেন।
আমরা ১৯৭১ এ খুব বেশি সেনা অফিসারকে পাই নি । অল্প যে কজন ছিলেন তারা অসম সাহসে যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। ৭২ পরবর্তি বাংলাদেশে বহুমাত্রিক অভ্যুত্থানে প্রচুর সেনা অফিসার হারানো আমাদের জন্য বিশাল ক্ষতি ছিল। সেই ক্ষতি কাটিয়ে ঊঠে সেনাবাহিনী যখন স্থিতিতে আসলো, ৫ বছর আগে আজকের এই দিনে আমরা হারালাম বিশাল এক দল সেনা অফিসারদের।
৫৭ জন প্রশিক্ষিত সেনা অফিসার একসঙ্গে একটা বড় যুদ্ধেও কোন দেশ হারায় না। পেছন থেকে অতর্কিত হামলা আর বিশ্বাসঘাতকতাই পারে একসঙ্গে এতজন সেনা নায়কের প্রাণ নিতে। যদি ঐ দিন অফিসাররা জানতেন তাঁদের শত্রু আসলে কারা, তাহলে তারা যুদ্ধ করতেন, এবং অবশ্যই এতজন বিনা যুদ্ধে মারা যেতেন না। তাঁরা আস্থা রেখেছিলেন সরকারের উপর, আমাদের উপর। তাঁরা নিজেরা অস্ত্র হাতে তুলে নেননি আগেই। তাঁরা ভেবেছিলেন যেই দেশ, যেই মানুষ, যেই সার্বভৌমত্ব রক্ষার শপথে তাঁরা জীবন দিতে প্রস্তুত, সেই দেশ তাঁদের রক্ষা করবে।
৫৭ জন সেনা নায়ক বন্দুকের গুলি বুকে নিয়ে গৌরবময় বীরের মৃত্যু আলিংগন করার শপথ নিয়ে সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু বিশবাসঘাতকের হাতে ছিল নিজের দেশেরই বন্দুক। গুলি চলেছে নিজের অধস্তন সৈনিকের বন্দুক থেকে। বিনাযুদ্ধে দেশ হারিয়েছে এতগুলো মুল্যবান সেনা নায়ক। এই দায় কার ?
ট্রিগার টেপা বিপথগামী বিডিআর সেনা সদস্যরা কি শুধুই ক্ষোভের বহিপ্রকাশ ঘটিয়েছিল ? নাকি এর পেছনে রয়েছে ষড়যন্ত্রের বিশাল কালো পর্দা ? বিনা যুদ্ধে সেনা অফিসার ক্ষয়ের বিচার করা যেতে পারে। কিন্তু শুধু বিচারেই এই ক্ষয় শোধ হয় না। ষড়যন্ত্রের মুল উপড়ে ফেলে এর সমুচিত ফয়সালা না হলে যোদ্ধার প্রাণহানীর অমর্যাদা করা হয়।
আমার দেশ কে রক্ষার শপথ নিয়ে যে যুবক সেনা নায়ক হবার শপথ নেবেন তার সামনে ৫৭ টা এপিটাফ আছে। সেই এফিটাফে যেন লেখা না হয় "ভাগ্য বঞ্চিত"।
একজন কর্নেল তাহের, একজন খালেদ মোশাররফ, একজন মেজর হায়দার বা একজন কর্নেল গুলজার ফুল গাছের টবে পানি ঢাললে এমনি এমনি পয়দা হয়না। আর বিনা যুদ্ধে এই ভাবে হারিয়ে যাবার জন্যও এদের তৈরী করা হয়না।
পিলখানা হত্যাকান্ডের বিচার হয়েছে !
পিলখানা ষড়যন্ত্রের বিচার চাই!!!!!
সমুচিত বিচার।
- মুকুল চৌধুরী
http://mukulchowdhury.blogspot.com/
মন্তব্য
নতুন মন্তব্য করুন