আজ শুক্রবার। রাশেদ অফিসে যাওয়ার জন্য তৈরী হচ্ছে। একটু দূরে দাঁড়িয়ে রাশেদকে দেখছে মিলি। মিলির অস্থির লাগছে। কিছুদিন হল, রাশেদ কিছু একটা নিয়ে বেশ বিরক্ত। মিলি কি হয়েছে জানতে চাইলে, রাশেদ শুকনো হাসি দিয়ে বলে সব ঠিক আছে। আজ প্রায় ১ বছর হল, ওরা এই বিদেশে এসেছে, রাশেদের চাকুরী নিয়ে। দুজনে মিলে মোটামুটি গুছিয়ে নিয়েছে বাসা। আর ২মাস আগে যখন মিলি রাশেদকে বলল, “তুমি বাবা হতে যাচ্ছ।” এতো খুশি সে রাশেদকে কখনও হতে দেখেনি। সারাক্ষণ তার দাত বের হয়ে থাকত। বাসার বাজার করা, এমনকি একদিন মিলি বিরিয়ানি খেতে চেয়ে ছিল, সেটাও রান্না করে ফেলেছে। বাসায় ফিরেই মুখের সামনে মোবাইল ধরে থাকতো না। কিন্তু হঠাৎই সব কিছু বদলে গেল।
রাশেদের ব্যাগ গোছানো হয়ে গেছে। মিলির দিকে তাকিয়ে নিরুত্তাপ গলায় বলল, “আসি, তুমি ঠিক মত খেয়ে নিও।” মিলির কান্না পাচ্ছে, ইচ্ছা করছে না আর এই বিদেশে একা একা পরে থাকতে মাকে ছাড়া। তাও যদি নিজের জামাই একটু বুঝতো। গলায় একরাশ অভিমান আর জেদ নিয়ে বলল, “আমাকে টিকেট কেটে দাও, আমি বাংলাদেশ চলে যাব।” বেরোতে গিয়ে থমকে গেল রাশেদ।
“আবার সেই একি কথা! তোমাকে না বলেছি এরকম কথা আর বলবে না।”- স্পষ্ট বিরক্তি রাশেদের গলায়।
“আমার কিছু ভালো লাগছে না। তুমি দয়া করে আমায় দেশে পাঠিয়ে দাও।”
“আমি তো এখন ছুটি পাবোনা। তুমি একা একা কিভাবে যাবে? পরের ফেব্রুয়ারীতে আমরা একসাথে দেশে যাব।”
“আমি একা যেতে পারবো, আমাকে নিয়ে তোমার ভাবতে হবে না, আমার বাচ্চাকে নিয়েও না। তুমি আমাকে টিকেট করে দাও, আমি চলে যাই। তুমি নিজের মত এখানে থেকো।”
রাশেদ তাকিয়ে আছে মিলির দিকে। মিলি জোরে জোরে নিঃশ্বাস ফেলছে। রাশেদ আর কিছু বললে, বিশাল ঝগড়া বেধে যাবে। কিছু ভালো লাগছে না রাশেদের। মিলি তো বুঝবে ওর মনের অবস্থা এখন?? রাশেদ ঘুরে বের হয়ে যেতে যেতে বলল, “ঠিক আছে। আমি আজ টিকেট কেটে নিয়ে আসব। এখন আসি, অফিসে দেরি হয়ে যাচ্ছে।”
মিলি হতবাক হয়ে দেখল, রাশেদের চলে যাওয়া। তারমানে বাবা হওয়ার খুশিটা শুধু এক সাময়িক উত্তেজনা ছিল? এখন একা একা অফিস-বাসার সব কাজ করতে গিয়েই বিরক্ত রাশেদ! প্রথম প্রথম কি রেগে যেত, ওকে ফেলে দেশে চলে যেতে চাইলে। আর আজ কি অবলীলায় বলে ফেলল, সে টিকেট নিয়ে আসবে। একবারও বুঝলো না, মিলি রাগ করে এসব বলছে। মিলি অসহায়ের মত কাঁদতে শুরু করল।
রাশেদ বুঝতে পারছে সে খুব বাজেভাবে গাড়ি চালাচ্ছে। বেশ কিছু রাফ ওভারটেক করল। একটা বিজাতীয় রাগ চেপে আছে মাথায়। এতটা ছেলেমানুষী কিভাবে করে মিলি? অফিসের সিনিয়র ভাইরা বলেছে, প্রেগনেন্সির সময় হরমনাল ইমব্যালান্সের কথা। রাশেদ বলেছিল হেসে, এটা কোন ব্যাপারই না ওর কাছে। ও ঠিক সামলে নেবে। কিন্তু গত কিছুদিন ধরে যা হচ্ছে, রাশেদ আর পারছে না সামলে নিতে। মিলির এখন যে অবস্থা, রাশেদের সাপোর্ট দরকার ওর। কিন্তু যা ঘটছে, উল্টো রাশেদের এখন সাপোর্ট দরকার। মিলিকে বললে, মিলি হয়তোবা বুঝবে, আবার রেগেও যেতে পারে। বলে বসতে পারে, এত সামান্য একটা বিষয় নিয়ে তুমি এরকম করেছ আমার সাথে। রাশেদ বোঝে না, কিছু কিছু খুব সিরিয়াস ব্যাপার মিলির কাছে এতো হাস্যকর হয় কেন? আনমনে নিজের কাঁধ ঝাকালো রাশেদ। একটা ছেলে আর মেয়ের মাঝের এই পার্থক্য সবসময় একি থাকবে।
বাসায় ফিরে রাশেদ দেখে, সব অন্ধকার। কোন রুমে আলো জ্বলছে না। এটাই আশা করছিল। এখন মিলিকে কিভাবে ঠাণ্ডা করবে তাই ভাবছে রাশেদ। বিকেল ৬টা বাজে। ফুলের দোকানটা এখনও খোলা আছে। প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে, গোলাপের একটা তোড়া কেনা যেতে পারে। হুদা কিছু টাকা নষ্ট। রাশেদ সবসময় ভাবে মেয়েরা কেন যে বোঝে না, এক তোড়া গোলাপের থেকে পুরো একটা গোলাপ গাছ অনেক বেশি রোমান্টিক। সবসময় ভালবাসা দিতে থাকবে সেই গাছ। ব্যাগটা রেখে, ফুল কিনতে বের হতে যেতেই, মিলির বরফ শীতল গলা-“টিকেট এনেছো?”
জায়গায় জমে গেল রাশেদ। অন্ধকারে বুঝতে পারেনি, সোফায় ঘাপটি মেরে বসে ছিল মিলি। বুঝতে পারছে, আজ মিলি সারাদিন প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে, রাশেদের আজ সব ফ্রন্টেই পরাজয় হবে। একটাই উপায়, নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ। রাশেদের পক্ষে একজন ছেলে হিসেবে যতখানি আহ্লাদ গলায় নিয়ে আসা সম্ভব, তার সবটুকু এনে কাঁপা কাঁপা গলায় বলল, “অন্ধকারে কি কর বাবু?”
“টিকেট এনেছো?” এবার আগের চেয়েও ঘরের তাপমাত্রা কমে গেল।
“কিসের টিকেট বাবু?” রাশেদ কখনোই ভাজা মাছ দেখে নি।
আশেপাশে কোথাও ফুটন্ত তেলে বেগুন পরে গেল, “ন্যাকামি করছ কেন? তোমার ন্যাকামি অনেক দেখেছি, আর না। আমি সব গুছিয়ে রেখেছি, আমি দেশে চলে যাব। তোমার মত খারাপ মানুষের সাথে আমার-আমার বাচ্চার কোন সম্পর্ক নেই।”
হাহাকার নিয়ে রাশেদ মিলির কাছে গিয়ে মাথা নত করে বলল, “সরি, সরি, সরি, আর এরকম হবে না। বিশ্বাস কর।”
“তোমার এই সরি-র কোন মূল্য নেই আমার কাছে।”
“প্লীজ আমার কথাটা শুনো, তাহলে তুমি বুঝবে, আসলে হয়েছে কি.......................................”
মিলি একরাশ অবিশ্বাস নিয়ে তাকিয়ে রইল রাশেদের দিকে।
শনিবার বিকেল ৬টা। বাংলাদেশ সময় এখন রাত ১১টা। আজ সারাদিন রাশেদ টিভির সামনে বসে ছিল। মিলি বিরক্ত করে নি ওকে। মাঝে মাঝে অবশ্য অবাক হয়ে দেখেছে রাশেদকে আর চিন্তা করেছে, আরো পরে বাচ্চা নেয়া উচিৎ ছিল কি? রাশেদ এখনো এতো ছেলেমানুষ!!! সামান্য একটা ব্যাপারের জন্য গত কিছুদিন ধরে রাশেদ যা করল, মিলির অবাক লাগে ওদের বাচ্চাও যদি বাবার মত ছেলেমানুষ হয়। তখন এই দুই ছেলেমানুষ নিয়ে সে সবকিছু ম্যানেজ করবে কিভাবে??
রাশেদ টিভির সামনে থেকে উঠে দাঁড়াল। ঘুরে মিলির দিকে এগিয়ে আসছে। মুখে সেই চিরচেনা সব দাঁত বের করে হাসি। মিলির কাছে এসে আরো বড় হাসি দিয়ে বলল, “বাবু, আজ বাংলাদেশ হারিয়ে দিয়েছে আফগানিস্তানকে।”
সানি
মন্তব্য
জমলো না। গল্পের শিকড় নেই, শুধুই ডালপালা।
--ইমরান ওয়াহিদ
বুঝতে পারছিনা এটা কি সমাপ্ত নাকি চলবে টাইপ গল্প ॥
হঠাৎই সবকিছু বদলে গেলো কেন? এর কোন ব্যাখ্যা খুঁজে পেলাম না।
গল্পের গাঁথুনি দূর্বল। তবে আপনার লেখার ঢং ভালো - বেশ ঝরঝরে। আরো লিখতে থাকুন, লিখতে লিখতেই ঠিক হয়ে যাবে।
____________________________
গল্পের ভেতরে টানল বেশ,
শেষটা ভালো লাগেনি।
ভালো লাগল না ভাই গল্পটা।
আমার মনে হয়না ছেলেরা এইভাবে আচরণ করে সেই মানদণ্ডে রাশেদের আচরণ খুবই বিরক্তিকর।
তবে আপনার লেখার হাত ঝরঝরে, পরবর্তীতে চেষ্টা করুন একটা ভালো কাহিনীনির্ভর গল্প লিখতে।
তবে হ্যাঁ, হতাশ হয়ে লেখা থামিয়েন না যেন, লিখতে থাকুন লিখতে লিখতেই ঠিক হয়ে যাবে ।
__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---
নতুন মন্তব্য করুন