প্রেতাত্মা। (১)

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: শনি, ০১/০৩/২০১৪ - ১০:৩৭অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

২৮ নং ইন্সব্রুকার ষ্ট্রাসে; বাসার গায়ে ঠিকানা লেখা। হ্যাঁ এটাইতো সেই বাসা । পাহাড়ের চুড়ায় পুরাতন একটি বাসা। ঠিক ভাঙ্গাচোরা বলা যাবেনা; তবে তাতে বয়সের ছাপ স্পষ্ট। জার্মানীতে বাসা পাওয়া বিশেষ করে এইশিয়ানদের জন্যে খুব কঠিন কাজ। আমি সেই কঠিন কাজটি করেছি এক রকম সহযেই। প্রথম পরিচয়ে বাড়িওয়ালীকে দেখে ভাল লাগল। চামড়া কুচকে যাওয়া সাতাত্তর বছরের বৃদ্ধা মিসেস ভেহ্‌ এবং আশি বছরের মিষ্টার ভেহ্‌। এক আলোচনাতে আমরা বাসার চুক্তি চূড়ান্ত করে ফেললাম।

- আমরা বুড়াবুড়ি দুইজনেই এই বাসাটা দেখাশোনা করি বুঝলেন!

কফির কাঁপে চুমুক দিতে দিতে বললেন মিসেস ভেহ্‌।

- এমনি কোন সমস্যা নেই। খুব চুপচাপ থাকতে হবে কিন্তু। কিচেন সুবিধা নেই বুঝলেন। আর সিগারেট ফোঁকা বাড়ির ত্রিসীমানায় নিষিদ্ধ।

- জি। কোন সমস্যা নেই। আমার রুম খুব প্রয়োজন।

আমি মনেমনে চুক্তি সই পর্যন্ত অপেক্ষা করছি। রুমটা খুব দরকার। এত সস্তায় রুম পাওয়াতে মিসেস ভেহ্‌ এর থেকে বন্ধু কোমলকেই বেশি ধন্যবাদ দেয়া দরকার। বেচারা অনেক করলো আমার জন্যে।

- ওকে তাহলে সেই কথাই থাকলো। আপনি রুম পাচ্ছেন। আমি চুক্তিপত্র হাতে লিখে দেবো। ধন্যবাদ। শুভ সন্ধ্যা।

জার্মানীতে এখনও হাতে চুক্তিপত্র লেখা হয় শুনে অবাক হলাম। হয়তো উনারা আধুনিকতার ধারেকাছে যেতে চাননা। আমি আর বন্ধু কোমল বাড়িওয়ালার বাসা থেকে বের হয়ে আসলাম। মাথা থেকে একটা ভাবনা দূর করতে পারছিনা। বুড়া-বুড়ির চেহারায় অদ্ভুত একটা অন্যরকম কিছু। তাদের চোখগুলো ঠিক সাধারণ নয়। যাইহোক, মাথায় একটাই ভাবনা যত দ্রুত সম্ভব রুম গুছিয়ে ফেলতে হবে। সামনের মাস থেকেই কাজ।

আমার রুমের জানালার পাশেই কাঠ পালা করে রাখা। একটাই জানালা। জানালাটার অবস্থা এই বাসার মতই জরাজীর্ণ। খিড়কী গুলো ঠিকমত উঠে না। আমি ধুলো ঝেড়ে পরিস্কার করে ফেললাম। দরজাগুলোতেও ক্যাচক্যাচ শব্দ হয়। কেমন যেন গা ছমছমে একটা ভাব। আমাকে খুব দ্রুতই গুছিয়ে নিতে হবে। আগে এই রুমে হয়ত কোন দম্পত্তি ছিলেন। ড্রয়ার পরিস্কার করতে যেয়ে পুরনো স্কার্ট পেলাম। তারমানে পুর্বে এই রুমে বিদেশী ছিলো। সন্ধ্যা হয়ে আসছে। শীতকালে জার্মানীতে বেলা চারটা বাজলেই চারিদিকে অন্ধকার হয়ে যায়। সবকিছু পরিস্কার করে চুলাতে রান্না চাপাতে হবে। আমি দ্রুত হাত চালাই। বিছানার নিচে একটা পুরাতন ডায়রী পাওয়া গেলো। ডয়েচে লেখা অর্থাৎ জার্মান ভাষাতে লেখা। আমি যদিও ডয়েচ তেমন ভালো বুঝিনা। তারপরেও পড়ে দেখবো দেখি।

শাওয়ার রুমে সোঁদা গন্ধ। মেয়েরা যেসব শাওয়ার রুম ব্যবহার করে তার চেহারাতে একটা ছাপ থেকে যায়। ছড়ানো ছিটানো ডুশ জেল, শ্যাম্পুর কৌটো। খুব সুন্দর একটি পর্দা দেয়া বাথটব ঘিরে। হয়ত পুর্বের রুমমেটটি খুব শৌখিন ছিলেন। একটা ছোট রেডিও পেলাম। খুব দ্রুত গোসল সারতে হবে। চুলাতে তরকারী চাপিয়েছি। গরম আর ঠান্ডা পানির মিশ্রণ ছেড়ে দিলাম। গা জুড়াতে হবে। খুব ধকল গেছে কয়েকটা দিন। রেডিওতে লোকাল কোন এক চ্যানেলে গান বাজছে। আমি গা ঘষতে থাকি। দরজা আমার মুখোমুখি। হঠাৎ দরজার হ্যান্ডেল ঘুরতে দেখলাম। পরিস্কার। ক্যাচক্যাচ শব্দ।

- কে? কে ওখানে? কে দরজা হ্যান্ডেল ঘোরাচ্ছে?

হ্যান্ডেল ঘোরানো বন্ধ হয়ে গেলো। আমার আশেপাশের রুমে কেউ নেই। তারা সবাই বেড়াতে গেছে। ভয়ের একটা শীতল স্রোত আমার শরীরে খেলে গেলো। ঠান্ডা-গরম পানির মিশ্রণের মধ্যে ভেসে আমি স্থির নেত্রে দরজার দিকে তাকিয়ে থাকলাম। আর ঘটলোনা বিষয়টা।

পুর্বে থাকতাম ছাত্র হোষ্টেলে। সেখানে বড় কিচেন কাম ডায়নিং ছিলো। এখানে গুদাম ঘরে ছোট একটি ষ্টোভ রাখা। সেটিই আমার রান্নার একমাত্র চুলা। আর সুবিধা বলতে ছোট একটি ফ্রীজ। মনটা খুব খারাপ হলেও বাস্তবতাকে মেনে নিতেই হবে।

ভাত খাবার পরে চা খাওয়াটা আমার অভ্যাস। কেটলীতে চা চাপিয়ে ল্যাপ্টপ অন করলাম। প্রজাপতির ডানার দ্বিতীয় পর্ব শুরু করতে হবে। ফুটছে কেটলির পানি। পুরাতন কেটলি। অদ্ভুত শব্দ। চারিপাশে অন্ধকার হয়ে গেছে। কেমন যেন একটা নিশুতী ভয়াল ছমছমে ভাব। কেটলি হঠাৎ বন্ধ হয়ে গেলো। ভাবলাম হয়ত পানি গরম হয়ে গেছে। নাহ্‌ পানি গরম হয়নি। কেটলির হ্যান্ডেলে হাত দিতেই চলা আবার শুরু করলো। হাত সরিয়ে নিলাম। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলাম কেটলির দিকে। আবার বন্ধ হয়ে গেলো। কাছে এগিয়ে যেতেই আবার চালু হয়ে গেলো। আমি দুঃশ্চিন্তা ঝেড়ে ফেলতেই এগুলোকে যান্ত্রিক ত্রুটি হিসেবেই মেনে নিলাম; তবুও মনে একটা ভয় ঢুকেই গেলো। চারিপাশে যা হচ্ছে তা ভাল নয়।

চায়ের কাপ হাতে নিয়ে ল্যাপ্টপের দিকে তাকিয়ে আছি। মাথার ভেতরে প্রজাপতির ডানার প্লট ঘুরছে। বেশ কয়েক প্যারা লিখেও ফেলেছি। এই লেখার ফাঁকেই চায়ের কাঁপে চুমুক দিচ্ছি। ঠান্ডায় হাত গরম রাখতেই দুই হাতে কাপ ধরা। হঠাৎ ওয়ার্ড ফাইলের লেখাগুলো স্বয়ংক্রিয় ভাবে মোছা শুরু হলো। আমার হাতের ছোয়া ছাড়াই একটা একটা করে বর্ণ মুছে যাচ্ছে। আমার গায়ের রোম দাঁড়িয়ে গেলো। এ তো ভাইরাসের কাজ নয় তাহলে? আমি চায়ের কাপ ভয়ে ভয়ে টেবিলে রেখে কী-বোর্ডের দিকে হাত বাড়াতেই স্বয়ংক্রিয় ভাবে বর্ণ মোছা বন্ধ হয়ে গেলো। আবাত হাত সরিয়ে নিলাম; আবার বর্ণ মুছে যেতে লাগল। না এভাবে থাকা যাবেনা। এখানে নিশ্চিত কিছু একটা আছে।

ঘড়িতে রাত বারটা বাজে। এখনও রাতের বাসে চেপে বন্ধুদের হোষ্টেলে চলে যেতে পারব। দ্রুত জামা-কাপড় পালটে ব্যাগ গুছিয়ে নিলাম। হাতে চাবি নিয়ে দরজা খুলতেই আমার হাত-পা ঠান্ডা হয়ে গেলো একদম দরজার সামনেই অদ্ভুত দর্শনের একজনকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলাম। আমার হাত পা ঠান্ডা হয়ে গেলো।

- হ্যালো, মিষ্টার শাহ্‌ । শুভ সন্ধ্যা। আমি মিষ্টার গোয়েব্লার।

চলবে...!!!

Waez36ku@gmail.com (Shah waez )


মন্তব্য

প্রোফেসর হিজিবিজবিজ এর ছবি

গল্পটা একটু বেশী দ্রুত এগিয়েছে। ঘটনাগুলো যেন জমে ওঠার আগেই পার হয়ে যাচ্ছে। এগুলোকে আরেকটু রসিয়ে লেখা যেত তাতে করে ভয়ের আবহটা ঘন হতো।

এমনিতে ভৌতিক গল্প খুব ভালো লাগে। পরের পর্বের জন্য অপেক্ষায় রইলাম।

____________________________

অতিথি লেখক এর ছবি

শুভ সকাল। ধন্যবাদ লেখাটি পড়ার জন্যে। পরের পর্বটি পড়বেন আশা করি।
শাহ্‌ ওয়ায়েজ। (Shah Waez)

সাফিনাজ আরজু এর ছবি

ভৌতিক গল্প আমিও খুব পছন্দ করি। প্রোফেসর ভাইয়ের মন্তব্যটা খেয়াল রাখবেন তাহলেই আশা করি পরবর্তী পর্বে কিছুটা সত্যিকারের ভৌতিক আবহ তৈরি হবে। ভৌতিক গল্পে চারিপাশের পরিবেশের বর্ণনা কিন্তু বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভৌতিক আবহ তৈরির জন্য।

__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---

অতিথি লেখক এর ছবি

সাফিনাজ আপু, অনেক ধন্যবাদ আপনাকে আমার লেখাটি পড়ার জন্যে। আমি একেবারেই নতুন এই লেখার জগতে। কিছুটা এলোমেলো ভাব ছিলো। আসলে যে স্থানটির বর্ণনা আপনারা পড়ছেন আমি সেখানেই থাকি। লেখাটি এক রাতে বসে লেখা। আপনাদের গাইড লাইনগুলো অবশ্যুই মাথায় রাখবো। আবারও ধন্যবাদ কষ্ট করে লেখাটি পড়ার জন্যে। ভাল থাকবেন আপু হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

বানান ভুল। 'অবশ্যই'।

Shah Waez

সাফিনাজ আরজু এর ছবি

যে কোন ধরনের গল্পের জন্য একটা গুরুত্বপূর্ণ টিপস-- লেখার ২/৩ দিন পরে লেখাটি আবার পড়ে দেখুন। বানান ভুল সহ টেকনিক্যাল অনেক খুঁটিনাটি চোখে পড়বেই দ্বিতীয়বার পড়ার সময়। (যদিও নিজে সবসময় এই রুলটা মেনে চলিনা, তবে নিঃসন্দেহে কার্যকর পদ্ধতি ইয়ে, মানে... )
যাই হোক,সচলে স্বাগতম। হাসি

__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনার কথাটি শতভাগ সত্য। অনেক সময় বাক্য গঠনে জটিলতা বারবার পড়ে দূর করা যায়। তার থেকেও বড় কথা বানান ভুল চোখে পড়ে। আবারও ধন্যবাদ। ভাল থাকবেন আপু।

Shah Waez

waez36ku@gmail.com

আয়নামতি এর ছবি

সচলে স্বাগতম। দেখি কেমন ভৌতিক গল্প বলে ভয় দেখাতে পারেন!
আস্তে ধীরে সময় নিয়ে লেখুন তাতে গল্পও জমবে আর লোককে ভয়টাও জমিয়ে পাওয়ানো যাবে, নাকি বলেন?
এটা আপনার প্রথম লেখা বলেই হলো? তাহলে প্রজাপতির ডানা কে লিখছে ভুতে নাকি!
ওরে বাবা এখন তো দেখছি এট্টু এট্টু ভয় ভয় লাগছে রে ইয়ে, মানে... এভাবে ভয় পেলে চলবে তো? খাইছে

অতিথি লেখক এর ছবি

এখনও লেখি। সেখান থেকেই এখানে আসার ইচ্ছাটা আবারও মাথায় চেপে বসলো। তবে সচলায়তণে লেখা আসলেই কঠিন। অনেক সুক্ষভাবে দেখে প্রকাশ করে। দ্বিতীয় পর্ব লিখেছি। পড়বেন আশা করি। ভাল থাকবেন। হাসি

প্রেতাত্মা।

Shah Waez

waez36ku@gmail.com

প্রোফেসর হিজিবিজবিজ এর ছবি

যেভাবে প্রেতাত্মা লিঙ্কটা দিলেন তাতে তো প্রথমে ভেবেছিলাম আপনার নিকটাই "প্রেতাত্মা" নাকি! কিন্তু আগে তো পড়ে এসেছি অন্য নিক। তারপর আসল নিকটা চোখে পড়লো! হি হি হি - নিজের বোকামীতে একা একাই হাসলাম কিছুক্ষণ।

অট: আপনার নিকটা বাংলায় লেখা যায় না?

____________________________

অতিথি লেখক এর ছবি

যায়তো। অবশ্যই। আসলে আমিতো এখনও গেষ্ট রাইটার। তাই নিয়ম অনুযায়ী ভাবলাম নামটা ইংরেজিতেই দিতে হবে। এজন্যেই দেয়া। আমার নিক নেম ''শাহ্‌ ওয়ায়েজ''। ধন্যবাদ আপনাকে।

shah waez

waez36ku@gmail.com

প্রোফেসর হিজিবিজবিজ এর ছবি

বাংলায় শাহ্‌ ওয়ায়েজ লিখে নামের জায়গাতে কপি-পেস্ট করে দিলেই আপনার নাম চলে আসবে। আর মন্তব্যের নীচে যেখানে shah waez লিখছেন সেখানে শাহ্‌ ওয়ায়েজ লিখে দিন।

ধন্যবাদ।

____________________________

এক লহমা এর ছবি

চলুক চলুক। হাসি

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

অতিথি লেখক এর ছবি

এক লহমা, অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। ভাল থাকবেন হাসি
shah waez

waez36ku@gmail.com

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ আপনাকে। ভাল থাকবেন।

shah waez

waez36ku@gmail.com

গান্ধর্বী এর ছবি

আরো লিখুন।

শুভকামনা হাসি

------------------------------------------

'আমি এখন উদয় এবং অস্তের মাঝামাঝি এক দিগন্তে।
হাতে রুপোলী ডট পেন
বুকে লেবুপাতার বাগান।' (পূর্ণেন্দু পত্রী)

অতিথি লেখক এর ছবি

গান্ধর্বী...ধন্যবাদ আমার লেখাটি পড়ার জন্যে। ভাল থাকবেন। হাসি

shah waez

waez36ku@gmail.com

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।