আগের পর্বে শুধু কেনিয়ার সাথে বাংলাদেশের দুঃখজনক পারফর্মেন্স বর্ণনা করেই ক্ষান্ত দিয়েছিলাম। আজ বাকি দলগুলোর সাথে বাংলাদেশের বাজে পারফর্মেন্সের উদাহরণ দিতে যাচ্ছি।
জিম্বাবুয়েঃ
বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রতিদ্বন্দ্বী, একসময় জিম্বাবুয়ের সাথে আমাদের পাল্লা দিতে হত আইসিসি টুর্নামেন্টে। তারপরে তারা অনেক এগিয়ে গেলো, কেনিয়া এলো। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কারণে তারা আবার পিছিয়েছে, বাংলাদেশ কতটুকু এগিয়েছে বলা দুষ্কর। কারন ১৫-২০ বছর আগের ফলাফল মাঝে মাঝেই ভূত হয়ে যেন দেখা দেয়। সেগুলোর নমুনাই এখানে দেয়া হলো।
ম্যাচ-১ (১৯৯৭)
আবারো কেনিয়ার সেই দুঃস্বপ্নের টুর্নামেন্ট। জিম্বাবুয়ে টসে জিতে আগে ব্যাট করে ২৮৪ রান করে, বাংলাদেশ জবাবে ৩৩ ওভারে ৯২ রানে অলআউট হয়। এই ম্যাচ নিয়ে আর কি বলার আছে? প্রতিবারের মত ১০০ পার হতে না পারা, ৫০ ওভার খেলতে না পারা এবং ২য় সর্বোচ্চ স্কোর অতিরিক্ত খাত (১৬ রান)। সবচেয়ে লজ্জার ব্যাপার জিম্বাবুয়ে মাত্র ৪ জন বোলার ব্যবহার করে বাংলাদেশকে অলআউট করেছিলো এবং এই ম্যাচ, জিম্বাবুয়ের অলিখিতভাবে সর্বকালের সেরা বোলার হিথ স্ট্রিক খেলেইনি।
ম্যাচ-২ (২০০৭)
১০ বছর এগিয়ে যাই, বাংলাদেশ এখন টেস্ট খেলে, জিম্বাবুয়ে আর আগের সেই দল নেই। সাদারা দেশ ছাড়ছে, অর্থনীতি বিপর্যস্ত, ক্রিকেট নিয়ে ভাবার সময় কোথায়? বাংলাদেশ এমনই এক সময়ে খেলতে গিয়েছিলো সেখানে। বাংলাদেশ এখন জিম্বাবুয়ের সাথে জয়ের আশা করে। দলে আছে সাকিব, হাবিবুল বাশার, শাহরিয়ার নাফিস, আশরাফুল, মুশফিক, মাশরাফি ও রাজ্জাক। এই দল জিম্বাবুয়ের অনভিজ্ঞ বোলিং-এর সামনে ৪৬ ওভারে ১৫৩ রানে গুটিয়ে যায়। ৮১ রানেই ৭ উইকেট পড়ে গিয়েছিলো, সেখান থেকে বহু বিপদের কাণ্ডারী মোহাম্মদ রফিক দলকে টেনে তোলেন, নইলে হয়তো ১০০ এর নিচেই শেষ হতো ইনিংস। ৩ উইকেট নেন, পুরো ক্যারিয়ারে ১২ উইকেট নেয়া সিন উইলিয়ামস। বাংলাদেশ কেমন ব্যাটিং করেছিল, তার প্রমান পাওয়া যায় এ থেকেই।
কেউ কি আশা করেছিলেন, বোলিংটা অন্তত ভালো করবে বাংলাদেশ? মনে হয়না। জিম্বাবুয়ে ৩৬ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে পৌছে যায় লক্ষ্যে। ২ উইকেটের একটি নেন সাকিব, আরেকটি রানআউট (সেটিও সাকিব)। বাংলাদেশ অতিরিক্তও দেয় ২৫ রান। ঠিক বোঝা যায় না, আমরা কি ১৯৯৭-এ আছি না ২০০৭-এ!
নেদারল্যান্ড
এই দেশটি বিশ্বকাপ খেলেছিলো ১৯৯৬-এ, ১৯৯৯-এ খেলতে পারেনি, আমরা তাদের হারিয়ে, খেলেছিলাম। ২০০৩ থেকে তারা আবার নিয়মিত খেলছে বিশ্বকাপে।
ম্যাচ-১ (২০১০)
বেশিদিন আগে না, ২০১০ সালে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ড সফরে গিয়েছিল। গ্লাসগোতে তারা একটি ম্যাচ খেলে নেদারল্যান্ডের সাথে। বৃষ্টির জন্যে ম্যাচ কমে হয় ৩০ ওভারের। বাংলাদেশ করে ৭ উইকেটে ১৯৯ রান, রানরেট প্রায় ৭। একটি টেস্ট দলের থেকে আরেকটু বেশি আশা করা যায়, তবে বৃষ্টিভেজা কন্ডিশনে এই রানকে যথেষ্ট বলা যেতে পারে।
বোলিং-এ নেমে বাংলাদেশ না পেরেছে রান ঠেকাতে, না উইকেট নিতে। মাত্র ৪ উইকেট হারিয়ে, ৭ বল বাকি থাকতেই ম্যাচ জিতে নেয় ডাচেরা। এ ম্যাচে কিন্তু তাদের সেরা খেলোয়াড় রায়ান টেন ডয়েসটেও খেলেনি। এই ম্যাচ নিয়ে কিছু বলার থাকে না, যেখানে একটি টেস্ট দলের বোলিং লাইনআপ, সহযোগী সদস্য দেশের ব্যাটিং লাইনআপকে ওভারপ্রতি প্রায় ৭ করে রান দিয়ে ম্যাচ হেরে যায়।
নেদারল্যান্ডের এখনো পর্যন্ত একটাই জয় কোন টেস্ট খেলুড়ে দেশের বিপক্ষে, নামটা কি আর বলে দিতে হবে?
কানাডা
২০০৩ থেকে নিয়মিত বিশ্বকাপ খেলে, এর আগে ১৯৭৯ এ একবার খেলেছিলো। বর্তমানে তারা একদল অপেশাদার শখের খেলোয়াড় নিয়ে গড়া একটি দল, তাদের ক্রিকেট নিয়ে এর বেশি কিছু জানা যায় না। সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতই তাদের দল মূলত ভারতীয়, পাকিস্তানি তথা দক্ষিণ এশিয়ান দিয়ে গঠিত। তাদের সাথে আমাদের দল ২ বার মুখোমুখি হয়েছে।
ম্যাচ-১ (২০০৩)
ফিরে গেলাম ২০০৩ সালের দুঃস্বপ্নের বিশ্বকাপে। কানাডা টসে জিতে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেয়। বাংলাদেশের বোলিং-এর সামনে দাড়াতে পারেনি তারা, ১৮০ রানে অলআউট হয়। পিচ হয়তো একটা ফ্যাক্টর ছিলো, কারন বাংলাদেশ খুব ভাল বোলিং করেনি। যার প্রমাণ দেয়, ২৩টি অতিরিক্ত রান, যার ১৪টিই ওয়াইড।
পিচে যাই থাক, বিশ্বকাপে খেলা সম্ভবত সবচেয়ে দুর্বল দলটির সাথে বাংলাদেশ (একটি টেস্ট খেলুড়ে দেশ হিসেবে বিবেচনা করতে হবে) হেসেখেলে জিতবে, এটাই সবাই আশা করেছিলো। আমরা দেখতে পেলাম ঠিক তার উল্টোটা। ২৮ ওভারে ১২০ রানে অলআউট হলো বাংলাদেশ। ৫ উইকেট নিলেন কডরিংটন, যিনি তার সারাজীবনে পরে খেলা বাকি সব ম্যাচ মিলিয়েও আরো ৫ উইকেটই পেয়েছিলেন। কানাডার ৪ জন বোলার মিলেই ১০ উইকেট নিয়েছিলেন। এটা হয়তো বাংলাদেশের সর্বকালের নিকৃষ্ট পারফর্মেন্স হয়ে থাকবে।
কানাডার একমাত্র জয়, বিশ্বকাপে (২০১১ পর্যন্ত) এবং টেস্ট দলের বিপক্ষে।
ম্যাচ-২ (২০০৭)
২০০৭ সালে বিস্বকাপের আগে আইসিসি সহযোগী সদস্যদের সাথে বাংলাদেশের একটা সিরিজ হয়েছিলো। কেন হয়েছিলো, কারন মনে করতে পারছি না, খুজেও পাচ্ছি না। তবে বাংলাদেশ মুখোমুখি হয়েছিলো কানাডার, ৪ বছর পর, প্রতিশোধের সুবর্ণ সুযোগ বা বিশ্বকে প্রমাণ করার সুযোগ যে, আমরা অনেক এগিয়েছি। টসে জিতে কানাডা বাংলাদেশকে ব্যাটিং-এ পাঠায়। তাদের সিদ্ধান্ত যে ভুল ছিলো না, তা প্রমাণ করতে বাংলাদেশ বেশি সময় নিলো না। ৩০ রানেই নাই হয়ে গেল ৩ উইকেট। মনে রাখতে হবে এই বাংলাদেশ দলটি কিন্তু প্রায় ২০১৪-র দলের মতই। বর্তমানে খেলে যাচ্ছেন এমন ৭ জন আছেন এখানে (আশরাফুল ও শাহরিয়ার নাফিসসহ)। সাকিব সেঞ্চুরি করে বিপদে দলের হাল ধরেন, সাথে হাবিবুল বাশার ও আশরাফুল।
কানাডা জবাবে শূন্য রানে একজন রিটায়ার্ড হার্ট ও ১ রানে ১ম উইকেট হারালেও, ১৭৭ রানের জুটি গড়ে তোলে। বাংলাদেশ বল করেছিলো মোটামুটিভাবে যাচ্ছেতাই। ২৫টি অতিরিক্ত রান, ৫টি ওয়াইড, ৮টি নো-বল, একমাত্র সাকিব ছাড়া কারো ওভারপ্রতি রান দেয়ার গড় ৪ এর নিচে নেই। বাংলাদেশ প্রতিপক্ষকে অলআউটও করতে পারেনি। কানাডা ৭ উইকেটে ২৬৫ করে থামে, বিজয় থেকে ১৪ রান দূরে। বাংলাদেশ মাত্র ১৩ রানের জয় নিয়ে মাঠ ছেড়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে।
আয়ারল্যান্ড
বর্তমানে টেস্ট খেলার অন্যতম দাবীদার এবং বাংলাদেশের নতুন নেমেসিস আয়ারল্যান্ড। তাদের সেরা খেলোয়াড়েরা ইংল্যান্ড হয়ে টেস্ট খেলতে চলে না গেলে, হয়তো এতদিনে বাংলাদেশকে বলেকয়ে প্রায় নিয়মিতই হারাতো আয়ারল্যান্ড!
ম্যাচ-১ (২০০৭)
২০০৭ সালের বিশ্বকাপ বাংলাদেশের জন্যে স্মরণীয়। ভারতকে হারিয়ে, ১ম রাউন্ডেই বিদায় করে দিয়ে সুপার এইটে ওঠা, সাউথ আফ্রিকার সাথে ১ম জয়, দেশে ফিরে এসে অসংখ্য জনের অসংখ্য প্রশংসাবাণী, সম্বর্ধনা, টিভিতে অনুষ্ঠান ও সাক্ষাতকারের নিচে চাপা পরে যায় একটি হার, আয়ারল্যান্ডের সাথে। আমরা বাঙ্গালিরা নিজের দুর্বলতাকে ঢেকে রাখতে পছন্দ করি। বাকিরা যেখানে উপায় খোজে আর ব্যবস্থা নেয় সমাধানের, আমরা তাড়াতাড়ি ময়লা ঝাঁট দিয়ে কার্পেটের তলায় লুকাই।
আয়ারল্যান্ড প্রথমে ব্যাটিং করে ২৪৩ রান করে, ৭ উইকেটে। বাংলাদেশ কতটা বাজে বল করেছিলো সেটা বলতে হলে আমাদের আরেকটু গভীরে নজর দিতে হবে। ২৩টি রান দিয়েছিলো অতিরিক্ত, ৬টি ওয়াইড, ৫ টি নো-বল, বোলাররা উইকেট নিয়েছিলো মাত্র ৩টি, বাকিগুলো রান আউট, ওভারপিছু ৪ এর নিচে রান দেয়া (যা ২০০ রানের নিচে আয়ারল্যান্ডকে আটকাতে পারতো, টেস্ট দলের কাছে , সহযোগী দলের বিপক্ষে, যা আশা করা খুব বেশি আদিখ্যেতা নয় বলেই মনে হয়) একমাত্র বোলার মাশরাফি। একটু অভিজ্ঞ হলেই আয়ারল্যান্ড হয়তো করতে পারতো ২৭০ বা ২৮০। অবশ্য তারা নিশ্চয়ই ধারণা করেনি, বাংলাদেশকে হারাতে ২৪৩-ই যথেষ্ট।
বাংলাদেশ ব্যাটিং-এ নেমে কখনোই মনে হয়নি জিততে পারে। নিয়মিতভাবে উইকেট হারাতে হারাতে মাত্র ১৬৯ রানে অলআউট হয়, ৪২ ওভারে। এর মাঝে ২২ রান আসে অতিরিক্ত খাত থেকে। এটি আয়ারল্যান্ডের ২য় জয় কোন টেস্ট দলের বিপক্ষে, এবং ২য় সর্বনিম্ন স্কোর আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে কোন টেস্ট খেলুড়ে দেশের। ভাগ্য সহায় যে, ১ম দুটি রেকর্ডই পাকিস্তানের।
ম্যাচ-২ (২০১০)
আবার ২০১০ এর বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ড সফর। সফরের ১ম ম্যাচ, টসে জিতে আয়ারল্যান্ড বোলিং নেয়। বাংলাদেশ ধুকতে ধুকতে ২৩৪ রান করে। এর মাঝে জুনায়েদ সিদ্দিকির ১০০ ও সাকিবের ৫০ বাদে, উল্লেখযোগ্য স্কোর হলো ১৮ বাই মিঃ অতিরিক্ত। আর বাকিরা সব টেলিফোন নাম্বার। পিচে কি কোন জুজু ছিলো? মনে হয়না। নাহলে মাত্র ৩ উইকেট হারিয়ে ৪৫ ওভারে আয়ারল্যান্ড কিভাবে ম্যাচ জিতে নেয়? বাংলাদেশও অতিরিক্ত রান প্রদানে কোন কার্পন্য করেনি, ৮ ওয়াইড ও এক নো-বলের মাধ্যমে মোট ১৮ রান উপহার দেয়।
আয়ারল্যান্ড ২০৮ ও ২১৭ রানে দুটো উইকেট না হারালে ম্যাচটি হয়তো ৯ উইকেটেই জিততো। যা হোক, কোন উইকেটই ম্যাচে বাংলাদেশ ফিরেছে বলে ধারণা দেয়নি।
আফগানিস্তান
এশিয়ার নতুন ক্রিকেট দল, যারা রিফিউজি ক্যাম্পে থেকে, খেলাধূলা নিষিদ্ধ এমন এক দেশে জন্ম নিয়ে এখন ক্রিকেট নিয়ে স্বপ্ন দেখে। আর তাদের দৈত্যবধের কাব্য শুরুতে সাহায্য করি আমরা, যারা গত প্রায় ১৪ বছর ধরে ক্রিকেটদৈত্য হবো হবো করেও লিলিপুটই রয়ে গেলাম। তবে নিজেদের গায়ে বাঘের তকমাটা লাগিয়ে নিয়েছি বটে!
ম্যাচ-১
একটাই খেলেছি ম্যাচ আমরা আফগানিস্তানের সাথে, এশিয়া কাপ ২০১৪-তে। টসে জিতে বাংলাদেশ বোলিং-এর সিদ্ধান্ত নেয়। ৯০ রান করতেই আফগানদের ৫ উইকেট পড়ে যায়, ওভার মাত্র ২৭। ১৫০ রান হয় কিনা, পুরো ৫০ ওভার খেলতে পারে কিনা, এমন সব প্রশ্ন যখন মাথায়, তখন তারা ২৫৪ রান করে বসে, আর মাত্র একটা উইকেট হারিয়ে। শেষ ১০ ওভারে বাংলাদেশ দেয় ১০০ রানের বেশি। এছাড়াও ১০ ওয়াইডসহ ১৭টি রান অতিরিক্ত দিতেও বাংলাদেশ ছিল বেশ উদার। টেস্ট ক্রিকেটকে গলির বা পাড়ার ক্রিকেটে নামিয়ে আনে আফগানরা।
একটা স্লো পিচে এই রান তোলা কখনোই সোজা না, কেউ আশাও করেনি সোজা হবে। তবে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা দেখিয়ে দিল, কাজটা আসলে কত বেশি কঠিন! ১ রানে দুই উইকেট, ৮৮ তে ৪টি খুইয়ে দিশে হারা বাংলাদেশ, আফগানদের ভূরি ভূরি ক্যাচ মিসের পরেও ২২২-এ গিয়ে থামে। এতে জিয়াউর রহমানের ৪১ রানের অবদান অনেক, কারন ১৬৫-তেই ৮ উইকেট চলে যায় বাংলাদেশের।
বোনাস পয়েন্ট নিয়ে জেতার আশায় নেমে, বোনাস পয়েন্ট দিয়েই ম্যাচ হারতে বসেছিলো বাংলাদেশ। প্যান্ট খুলে নিয়েছে, নিক, জাঙ্গিয়া যে যায়নি, সে সুখেই বিভোর হয় বাংলাদেশ ক্রিকেট টিম। দেশের মাটিতে ১ম কোন টেস্ট দল, কোন সহযোগী দলের কাছে হারে।
এই লেখায় আমি আমার মতে, তথাকথিত 'ছোট দল'গুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের সবচেয়ে বাজে কয়েকটি পারফর্মেন্স তুলে আনার চেষ্টা করেছি। এছাড়াও দেখানোর চেষ্টা করেছি সময়ের সাথে দলের ফলাফল, হয়তো আরো বেশ কিছু জঘন্য ম্যাচ বাংলাদেশ খেলেছে, কিন্তু একই দলের সাথে স্বল্প সময়ের ব্যবধানে, তাই আমি উপেক্ষা করে গেছি। এই লেখাটি হয়তো ক্ষোভ থেকেই লেখা আমার, তবে আসলেই আমাদের ক্রিকেটের সাথে যুক্ত কাউকে এটা দেখাতে পারলে হতো। সিন্দাবাদের বুড়োর মত অদ্ভুত কিছু যেন আমাদের উপর ভর করে আছে। মাঝে মাঝেই আমাদের পারফর্মেন্সে দেখা দেয় সেটা, দেখে মনেই হয়না আমরা ২০১৪-তে আছি। মনে হতে থাকে আমরা এমন এক ক্রিকেট দল, যাদের উদ্দেশ্য পুরো ৫০ ওভার খেলা, ২০০ রান করা আর দুয়েকটা ব্যক্তিগত অর্জন!
কবে এবং কিভাবে এ রোগ শুধরাবে, জানি না। পাকিস্তান তো ৬০ বছরেও শুধরায়নি। আমরাও কি সে পথে যাব নাকি? সেকেন্ড মোস্ট আনপ্রেডিক্টেবল টিম ইন ক্রিকেট? শুনতে তো ভাল লাগছে না। এর থেকে তো আন্ডার এচিভার নিউজিল্যান্ডও আমার কানে ভালো শোনায়।
ধ্রুব আলম
মন্তব্য
আপনি কট্টর সমর্থক - তা নিয়ে সন্দেহ নেই, কিন্তু আমার অনেক দিনের খেলা দেখার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি - ক্রিকেট কিন্তু আন্সার্টেনটির খেলা, সুতরাং নিচের শ্রেণীর দলের কাছে হার বজায় থাকবে। আপনার লেখায় কিছু পজিটিভ ফ্যাক্টর থাকলে ভাল লাগত আরও। সবসময় যে বাংলাদেশ নিজের দোষে হেরে যায় তা নয়, অন্য দলগুলোও অনেকটা ভাল খেলে অনেকসময়। আমি ইচ্ছা করলে এই সব খেলাগুলো এনালিসিস করে দিতে পারি, কিন্তু বিস্তারে আলোচনা করার পরিবর্তে সংক্ষেপে কারণগুলো দিলাম -
১) ক্রিকেট স্বাভাবিক অনিশ্চয়তার খেলা। ভিন্ন ভিন্ন চরিত্রের পিচে বিভিন্ন আবহাওয়ায় একেক ধরণের প্লেয়ার সুবিধা পায়। কিছু বেসিক জিনিস বাদ দিলে বাকি সবই প্লেয়ারকে শিখতে হয় খেলে খেলে অর্থাৎ অভিজ্ঞতা থেকে।
২) বাংলাদেশের টেস্ট স্ট্যাটাস প্রি-ম্যাচিওর। আরও পরে আসা উচিত ছিল, ইন-ফ্যাক্ট টেস্টে এখনও বাংলাদেশের মনে রাখার মত পার্ফর্ম্যান্স বিরল। উন্নতি যা হয়েছে মূলত একদিনের ম্যাচে। টেস্ট স্ট্যাটাস দিয়ে মাপলে ভুল পরিসংখ্যানে আসতে পারেন। আইসিসি ও তার রাজনীতির কথা জানেন।
৩) অ্যাসোসিয়েট দেশগুলো আগের তুলনায় এখন অনেক সুবিধা পায় ... সুতরাং গ্যাপ অনেক কমে গেছে। নতুন রেভিনিউ মডেলে টপ অ্যাসোসিয়েট দেশগুলো শেষের দিকের টেস্ট দেশগুলোর সাথে তফাৎ থাকবে ২-৩% প্রফিট শেয়ারের।
৪) আইসিসির নিজস্ব মাঠে অ্যাসোসিয়েট দলেরা প্র্যাকটিস করার সুবিধা পায় এখন। তারা নিয়মিত ক্রিকেট টুর্নামেন্টও খেলে।
পরের অংশে আসি- বাংলাদেশ সংক্রান্ত।
১) কোনো বোলার নেই যে প্রেডিক্টেবল নয়। এখন বর্তমান ক্রিকেটে ভাল বোলার মানে যে কিছুটা হলে আন-প্রেডিক্টেবল। উদাহরণ - সঈদ আজমল/নারাইনের এর মত দুসরা বা ভাল লেগস্পিনারের মত গুগলি নেই। নিচের দিকের দলগুলোর বিরুদ্ধে এই আন-প্রেডিক্টেবল বোলার-দের সাফল্য অনেক বেশী।
২) ব্যাটসম্যানেরা উপমহাদেশের বাইরে খেলার সুযোগ পায় না, এটা অবশ্য বোলার-দের ক্ষেত্রেও সত্য। উদাহরণ - অস্ট্রেলিয়ার বাউন্সে মুশফিকের স্লগ সুইপ খেলা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। মুশফিক ভাল ব্যাটসম্যান, খেলার ধরণ পরিবর্তন করে নেবে, কিন্তু তার আগে সমস্যায় পড়বে। মুশফিকের কথা বললাম, কারণ ও এখন অস্ট্রেলিয়ার মাঠে কোন আনর্তজাতিক ম্যাচ খেলে নি। মূল কারণ এখানে বাংলাদেশের প্লেয়ারেরা বাইরে খেলে না খুব একটা, এমনকি ঘরোয়া ক্রিকেটেও ব্রাত্য।
৩) নিচের দিকের দলগুলো বাংলাদেশকে টার্গেট করে - বাংলাদেশের খেলা নিয়ে তারা যে এনালাইসিস করে, তা বাংলাদেশের পক্ষে করা সম্ভব না।
৪) বি-সি-বি র পরিকল্পনাহীনতা। আগামী ২০১৫ বিশ্বকাপের আগে পর্যন্ত বাংলাদেশের কোন ম্যাচ নেই অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড বা দক্ষিণ আফ্রিকায়। পরের বিশ্বকাপে আবার এই সমস্যা স্কটল্যান্ডের বিরুদ্ধে দেখা দিলে অবাক হবার কিছু নেই। বাংলাদেশের উচিত নিয়মিত আয়ারল্যান্ডের সাথে একদিনের সিরিজ খেলা - একটা জটিল রাজনীতির কারণে সেটা হয় না। ক্রিকেটের র্যাঙ্কিং সিস্টেম এমন, যে কম পয়েন্ট-ওয়ালা দলের কাছে হারলে রেটিং পয়েন্ট অনেক কাটা যায়। সেজন্য কেউই কম পয়েন্ট-ওয়ালা দলের সাথে খেলতে চায় না। শ্রীলঙ্কা বাংলাদেশ টেস্ট সিরিজে শ্রীলঙ্কা ১-০ জিতে পয়েন্ট খুইয়েছে, বাংলাদেশে পয়েন্ট পেয়েছে। কারণ তাদের রেটিং গ্যাপ এতটাই বেশী, যে এক্সপেক্টেড রেজাল্ট ২-০। একি ভাবে বাংলাদেশ ২০১২ সালে নেদারল্যান্ডস ও স্কটল্যান্ডের কাছে হারায় তাদের রেটিং এতটাই ধাক্কা খেয়েছে যে তা থেকে উদ্ধার পাওয়া সম্ভব হয় নি। এখন রেটিং আফগানিস্তানের সমান, আয়ারল্যান্ডের পিছে। এই কারণে বাংলাদেশ যদি প্রতিবছর আয়ারল্যান্ডের সাথে ওই দেশে গিয়ে সিরিজ খেলে তাহলে রেটিং এ ধাক্কা খাবার সম্ভাবনা আছে।
খেলায় উন্নতি একটা কন্টিনুয়ারস প্রসেস, এটা বছর বছর চলতে থাকবে। পজিটিভ দেখুন, সামনের জন্য প্রস্তুত হন। এটাই কাম্য। হার নিয়ে একটা বিচলিত হবার প্রয়োজন নেই।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য। পজিটিভ কিছু নিয়ে লেখার অবশ্যই চেষ্টা করবো।
ধ্রুব আলম
এই লিখার পয়েন্টটা আসলে কি?
একটু ফ্লাশব্যাক।
কিছুদিন আগেই নিউজিল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করলাম। শ্রীলংকার সাথে প্রথম টেস্ট বাজে ভাবে হারলেও পরেরটা ড্র করলাম। দুইটা টি-২০ ম্যাচই খুবই ক্লোজভাবে হারলাম। শ্রীলংকার মত দলের ৭০ রানের নিচে ৮ উইকেট ফেললাম।
ঠিক ওই ম্যাচটাই পরে শ্রীলংকা জিতল, আর আমরা সবাই হঠাৎ আগের সবকিছু ভুলে গেলাম। খেলোয়াড়রা কেন চাপে থাকবে? তাদের চাপ কে দিচ্ছে? আমরাই কি না? তাদের চেয়ে আমরা খেলা বেশি বুঝলে কি আমরাই আজকে মাঠে থাকতাম না?
আর সবচেয়ে বড় কথা পরিসংখ্যান বাদ দিলে লিখায় আছে আর কি? পুরা লিখাই তো ক্রিকইনফোর কয়েকটি লিংক দিয়েই প্রতিস্থাপন করে ফেলা যায়। পুরা লিখার সাথে "আইএমডিবিতে সবচেয়ে কম রেটিংপ্রাপ্ত ইতালিয় মুভিসমূহের নাম এবং অভিনেতা-অভিনেত্রীদের তালিকা"-এরকম একটি লিখার পার্থক্যটা কিসে?
"প্যান্ট খুলে নিয়েছে, নিক, জাঙ্গিয়া যে যায়নি, সে সুখেই বিভোর হয় বাংলাদেশ ক্রিকেট টিম।"
চমৎকার ভাষা, খেলোয়াড়রা পড়লে অনেক অনুপ্রেরণা পেতেন!
দিগন্ত এবং অতিথি লেখকের মন্তব্য থেকে বুঝতে পারছেন কি যে এইটা একটা ফালতু লেখা হইসে?
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
খেলোয়াড়দের সাথে দর্শকদের আর সাংবাদিকদেরও ম্যাচিউরিটি থাকা জরুরী যেটার প্রমাণ উপমহাদেশের দলগুলোর দর্শকরা দিতে বরাবরই ব্যার্থ। একটা ম্যাচ জিতলেই বিশ্বজয়ের মত সেলিব্রেশন করাও ঠিক না তেমনি খারাপ সময় আসলেই তাদের মনোবল আরো বেশি ভেঙে দেয়া অপরিপক্কতারই উদাহরণ। কম রানে জেতা ম্যাচও আপনি এই তালিকায় নিয়ে এসেছেন তালিকা লম্বা করতে।
এত শক্তিশালী ভারত দলও কিছুদিন আগে তাদের থেকে অনেক নিচের দল নিউজিল্যান্ডের কাছে টেস্ট ওয়ানডে দুইটাতেই সবগুলো ম্যাচ হেরে আর ড্র করে ফিরে এসেছে। বাংলাদেশ দলে তামিম, মাশরাফি, সাকিব নেই, আপনি শ্রীলঙ্কা দল থেকে সাঙ্গাকারা-জয়াবর্ধনে-মালিঙ্গাকে বের মাঠে নামান, তারপর তারা কয়টা ম্যাচ জিতে দেখেন।
গোল্ডফিশ মেমোরি হলেতো সমস্যা ভাই, ব্যর্থতা যেমন ছিলো অনেক সাফল্য ছিলো বিশেষ করে গত দুই বছরে। দিগন্ত ভাইয়ের মতো এনালাইসিস করলাম না। শুধু একটু ভেবে বলেন নিউজিল্যান্ডকে দুবার ওয়াইট ওয়াশ করার কথা দুই বছর আগে কোন বাঙালি চিন্তা করেছে, আপনি করেছিলেন? এত তাড়াতাড়ি সেটা ভুলে গেলেন? শ্রীলংকার মাটিতে টেষ্ট ড্র, মুশফিকের ডাবল সেঞ্চুরি সহ, ওয়ানডেতে জয়। দুই বছর আগে এই এশিয়া কাপেই তো ভারত-শ্রীলংকাকে হারিয়ে বাংলাদেশ এশিয়া কাপের ফাইনাল খেলেছে। সেখানে ও জয়ের বন্দর থেকে ফিরে এসেছে। সুতরাং হতাশ হয়ে যাওয়ার মতো কিছু হয়নি। একটা দু:সময় যাচ্ছে, এটা কেটে যাবে। আর আপনি যে ভাষার উপসংহার টেনেছেন সেটা শোভন নয়, ভালোবাসলে ভালো সময় যেমন পাশে থাকতে হয় তেমনি দু:সময়েও থাকতে হয়।
মাসুদ সজীব
আমি যদি একটা লেখা লিখতাম, বাংলাদেশের সেরা ২০ জয়, হাজার হাজার তালিয়া পড়তো। "এই দুঃসময়ে বাংলাদেশের এমন একটি অনুপ্রেরণাদায়ক লেখারই প্রয়োজন ছিলো" কমেন্ট পড়তো।
আমার এই লেখার পেছনের কারন অবশ্যই আফগানিস্তানের কাছে হার। এটা আমার কাছে এতই তেতো লেগেছে যে, একটি নোংরা মন্তব্যও করেছি। দুঃখিত তার জন্যে। লেখাটা নির্মোহ হওয়ার কথা ছিল, অন্তত তাই উদ্দেশ্য ছিলো আমার। হয়নি।
সবাই যখন বললো, এটা আপসেট, আমিও তাই লিখতে চেয়েছিলাম, দেখতে চাইলাম এটা আপসেট, একটি বিছিন্ন হার। ঘাটাঘাটি করলাম, দেখলাম, এটা মোটেও আপসেট না।
আমি দেখাতে চেয়েছি, (১) সময়ের সাথে বাংলাদেশ নিয়মিতভাবে এমন পারফর্মেন্স উপহার দেয় এবং (২) গলদ খালি দুনিয়ার বাকি সবার না, নিজেদেরও আছে, কারা, কবে এই বিষয়টা নিয়ে বসেছি?
নিজেরা পত্রিকায় সেরা জয় সাজাই, কিন্তু কেউ কি একবারো কেউ কি লিস্ট করেছে, বাংলাদেশ আসলে কোথায় দাড়িঁয়ে?
আমি ২০১৩-র জিম্বাবুয়ের সফর বাদই দিয়েছি, লজ্জাজনক হারগুলোকে তুলে এনেছি। যদি সামগ্রিক ফলাফল বিবেচনা করতাম, তাহলে দেখতাম, পাকিস্তান ও হালের ওয়েস্ট ইন্ডিজ বাদে কেউ এত আনপ্রেডিক্টেবল না। যেকোন তথাকথিত 'নিচুসারির' বা 'দুর্বল' বিদেশি দলও বাংলাদেশে এসে ১টা জয়ের আশা করতেই পারে (এবং তা সত্যও হয়)।
ভেবে দেখুন আয়ারল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা বা ভারতে সফর করে একটা জয়ও কি আশা করবে? যদি জয় আসে, সেটা হবে আপসেট, তাদের জন্য বোনাস। কিন্তু বাংলাদেশ, ওয়েস্ট ইন্ডিজ বা পাকিস্তানে তারা সেই মাইন্ড সেটআপ নিয়েই আসবে যে, একটা জয় আসতেই পারে, কারন আমরা (আয়ারল্যান্ড) ভালো খেলি আর না খেলি, এরা এক ম্যাচ খারাপ খেলবেই। আমরা নিজেদের সেভাবেই তুলে ধরেছি।
আপনারা জয়গাথা পড়তে চান, পড়ুন, ওটা সবখানেই পাওয়া যায়। আর পাওয়া যায়, গালাগালি, মাটিতে পুঁতে ফেলা রিপোর্ট।
আর এটা অতি অবশ্যই ক্রিকিনফো ঘাটিয়ে বের করা লেখা। ওখানে ঘাটানই বা কয়জন, ঘাটালে অনেক অপ্রিয় সত্য বের হয়ে আসবে, যা আমাদের ক্রিকেট কর্তাদের বা এনালিস্টদের করা উচিত বলে মনে করি।
ধ্রুব আলম
আপনি কি অন্য কারও কমেন্ট পড়েন বা পড়লেও বোঝেন? নাকি নিজের মতামতে অটল থেকেই চোখ বুজে কমেন্ট করে যান?
সুবোধ অবোধ
উনি এত বড় তালেবর ব্যক্তি। অন্যের কমেন্ট পড়ার টাইম কি আর উনার আছে?
মন্তব্যের জন্যে ধন্যবাদ। জবাব দিতে যে সময় লাগতে পারে, এবং আমি যে বাংলাদেশের খেলা দেখছিলাম, সেটা আসলেও আপনার জানার কথা নয়।
ধ্রুব আলম
আমার মন্তব্যটি অনেক পরে প্রকাশিত হয়েছে। সেটি আমার অবস্থান পরিষ্কার করার জন্যে করা হয়েছিলো, কারো জবাবে নয়।
ধ্রুব আলম
আমরা জয়গাথা পড়তে চাই এমন কথা আপনাকে কে বললো ? সমালোচনা হোক, সেটা গঠনমূলক হতে হবে। আফগানিস্তানের সাথে পরাজয় টাকে ফ্লুক হিসাবে না দেখলেও আপনাকে মানতে হবে যে বাংলাদেশের একটা খারাপ সময় যাচ্ছে, তাই এমন পরাজয় গুলো হচ্ছে। এটা ঠিক সেখানে হয়ত কিছু খেলোয়াড়ের দায়ভার ও আছে। কিন্তু চিন্তা করে দেখুন দলের সেরা বোলার মাশরাফি নেই, সাকিব নেই, তামিম নেই। বাংলাদেশের মতো ছোট দল যদি তাদের সেরা তিন ক্রিকেটারকে মাঠের বাইরে রেখে নামে সেখানে দলের মাঝে কিছু শূন্যতা তৈরি হয়। বেশ কয়েকটি জায়গায় বাংলাদেশকে উন্নতি করতে হবে দ্রুত, না হলে সহযোগী দেশগুলোর সাথে পার্থক্য দিন দিন কমে যাবে এবং কয়েক বছরের মাঝেই সম-শক্তির দলে পরিনত হয়ে যাবে।
১। ঘরোয়া ক্রিকেটের মান উন্নয়ন করতে হবে, স্পোটিং উইকেট তৈরি করতে হবে। ব্যাটিং স্বর্গ বানিয়ে আপনি ভালো মানের ফাষ্ট বোলার আশা করতে পারেন না।
২। ফাষ্ট বোলার তৈরির জন্যে কয়েক বছরের প্ল্যান নিতে হবে, তার জন্যে তৃনমূল থেকে অল্প বয়সি খেলোয়াড় বাছাই করে গড়ে তুলতে হবে।
৩। আরো বেশি করে ম্যাচ খেলার সুযোগ তৈরি করতে হবে, বিশেষ করে শক্তিশালী দলগুলোর সাথে।
৪। টেষ্ট ক্রিকেটে ভালো করতে ফাষ্ট বোলারের পাশাপাশি লেগ স্পিনারও প্রয়োজন। তাই লেগ স্পিনার নিয়েও কাজ করা দরকার।
৫। আর দল নির্বাচনে আরো বেশি দক্ষতার ছাপ রাখতে হবে।
মাসুদ সজীব
আপনি এত বড় ভক্ত হইয়াও তো কইতে পারলেন না "Tigers, we are still with you"। দেখছেন গ্যালারীতে? এরাও সাপোর্টার, আপনিও। যান পিন্ডি চটকাইতে থাকেন বাংলাদেশ দলের। আপনাকে ইয়ে করতে পারলাম না বলে দুঃখিত
----ইমরান ওয়াহিদ।
আমি দুঃখিত, এ লেখায় হয়তো বলতে পারিনি যে বাংলাদেশের সাথেই আছি। তবে আছি, তাতে সন্দেহ নেই। পিন্ডি হয়তো চটকিয়েছি, যার সবটুকু ঠিক হয়নি। তবে চেষ্টা করেছি, উল্টো দিক থেকে দেখার। বাংলাদেশ উন্নতি করেনি, তাতো বলিনি। উন্নতি হয়েছে, অবশ্যই। কিন্তু মাঝে মাঝে পা হড়কানোর অভ্যাসটা ছাড়তে পারিনি। এগুলোকে আপসেট বললে হালকা করা হবে। আপসেট ২-৩ বছরে একটা ঘটে, প্রতি সিরিজে না। আমি চেষ্টা করবো বছর ধরে কিছু অদ্ভুত পারফর্মেন্সের উদাহরণ দিতে। দলটাকে পাকিস্তান হতে দিতে চাই না। হারুক না হয়, সাথেই আছি, থাকবো। কিন্তু যাদের সাথে জেতা উচিত, তাদের সাথে লজ্জাজনকভাবে না হারুক।
আজকের পাকিস্তানের সাথে হারে কষ্ট পেতে পারি, কিন্তু লজ্জা নেই। ভুল কিছু হয়েছে, কিন্তু শেষবিন্দু দিয়ে লড়াই তো করেছি। এর তুলনায় আফগানিস্তানের সাথে পরাজয়টিকে কি আপনি লজ্জাজনক বলবেন না? যখন শ্রীলঙ্কা ও নিউজিল্যান্ড আমাদের সাথে সহজে জয়ের কথা ভাবতে পারেনা! আমরা কি আর সেই দল আছি, সম্মানজনকভাবে হারবো বা প্রায়ই সহযোগী সদস্যদের সাথে হেরে যাবো?
এটা পিন্ডি চটকিয়ে বলা না, দুঃখ থেকে বলা, আক্ষেপ হিসেবে ধরুন। ভাষা হয়তো উপযুক্ত হয়নি, ক্ষমাপ্রার্থী। কিন্তু আমি বাংলাদেশি হিসেবে নিজের দলকে গরু-গাধা বলে গালি দিতে পারি, তা নিজেদের মাঝেই থাকে (সেজন্য পরে অনুশোচনাও হয়), এমন করে হারলে তো বাইরের মানুষরাও যা-তা বলে। বিদেশে থাকি বলে পাকিদের থেকেও কথা শুনতে হয়, "হা!হা! কি খেলে তোমার দল; চোকার"।
(আজও শুনতে হবে পাকিদের থেকে, "আবার হেরে গেলা? খ্যাক খ্যাক খ্যাক!")
ধ্রুব আলম
পাকিদের কথা আবার গোনার মধ্যেও ধরেন??!!!! কেমনে কি?!! কইলেই তো পারেন-"এমন একটা একটা দেশ তোমাদের, যেখানে বাইরের দেশের লোক যেতেই চায় না! এমনকি ক্রিকেটের হোমগ্রাউন্ড অন্য দেশে বানিয়ে খেলতে হয়! খ্যা খ্যা খ্যা!!!" পারেন না?
একটা ঘটনা বলি-
গত বিশ্বকাপের সময় ইংল্যান্ড আয়ারল্যান্ডের সাথে ৩২৭ রান করেও ৫ বল বাকি থাকতেই হেরে গেল। তার পরের ম্যাচ সাউথ আফ্রিকার সাথে ৬ রানে জিতলেও তারা মাত্র ১৭১ রান করেছিল। দলের অবস্থা নাজুক। পরের ম্যাচ বাংলাদেশের মাটিতে (চিটাগং এ) বাংলাদেশের সাথে। চিটাগং এর রাস্তায় হঠাৎ করেই প্রচুর পরিমান ইংল্যান্ডের জনগণের আনাগোনা দেখা গেল। বাংলাদেশের সাথে হেরে যাবার পর এরকমই একদল ইংলিশ কে বিসিবির স্পোর্টস ফিজিশিয়ান ডা. দেবাশিষ চৌধুরী রাস্তায় জিজ্ঞেস করলেন-"তোমরা এতজন চলে এসেছ একসাথে?!!"
উত্তরে তারা কি বলেছিল জানেন?
-"আমাদের দল এখন খারাপ করছে। আমরা মনে করি এখন আমাদের দলের সাথে থাকাটা জরুরী। মানসিক ভাবে সমর্থন দেয়ার সাথে সাথে শারীরিক ভাবে পাশে থাকাটাও তাদের জন্য দরকার। তাই আমরা দলকে সাপোর্ট দেয়ার জন্য চলে এসেছি।"
(ঘটনা টা ডা. দেবাশিষ এর কাছ থেকেই শোনা)
কাদেরকে গরু গাধা বলে গালি দেন? আপনি কি জানেন, এমনকি একটা T 20 ম্যাচ খেলতে নামলেও মাশরাফীর পায়ে প্রায় পাঁচ হাজার টাকার টেপ পেচানো থাকে(যখন সবাই সুস্থ মাশরাফীকে খেলতে দেখে)? এটাকে বলে ডেডিকেশন। আপনি কি জানেন আফগানিস্তানের সাথে খেলার দিন মুশফিক তার কাঁধের যে কন্ডিশন নিয়ে খেলতে নেমেছিল, সেই কন্ডিশন নিয়ে পৃথিবীর খুব কম প্লেয়ারই খেলতে নামে। এটাকে বলে ডেডিকেশন। আমার আপনার চেয়ে ওদের কষ্ট আরও অনেক বেশি লাগে। আমরা গালি দিয়ে ঝাল মিটাই। আর মুশফিক বাথরুম থেকে চোখে পানি দিয়ে কান্না ধুয়ে মুখ শক্ত করে সাক্ষাৎকার দিতে আসে।
আরেকটা ঘটনা বলি-
ঘরোয়া লীগে ফর্মের তুঙ্গে থাকা বিজয়ের হঠাৎ দুঃসময় দেখা দিল। তখনও সে জাতীয় দলে চান্স পায়নি। অনুর্ধ ১৯ দলে খেলে। একটা ১৬ ম্যাচ(আমি গুনতাম নিজে নিজেই) ৩০ রানের বেশি করতে পারছিল না কোনমতেই। ভাল শুরু করে, হঠাৎ দুর্ভাগ্যজনকভাবে আউট হয়ে যায়! আউট হয়ে এসে মানসিক ভাবে বিদ্ধস্ত অবস্থায় বসে থাকে। মাথায় হাত রেখে সান্তনা দেয়ার চেষ্টা করে বলতাম-" কি হইছে? ব্যাপার না। নেক্সট ম্যাচে পারবি।" হতাশ গলায় বলত-"আমি কি খারাপ খেলতেছিলাম? ভাই, দেখনা কি বলে আউট হয়ে গেলাম!!"
বলতাম-"দেখিস, যেদিন ৩০পার করবি, সেদিন সেঞ্চুরি করেই বের হবি।"
বিজয় বলল-"দেইখো, তাই করব।"
বিজয় কথা রেখেছিল। ১৬ ম্যাচ পরে যেদিন ৩০ রান পার করল সেদিন সে ঠিকই সেঞ্চুরি করেছিল। তার দল ১৭০ রানে অলআউট হয়ে গেলেও সে ঠিকই সেঞ্চুরি করল।
পাশে থাকুন দুঃসময়ে। বিশ্বাস রাখুন। এরা ঠিকই আপনার বিশ্বাসের মূল্য দেবে।
সুবোধ অবোধ
"একটানা ১৬ ম্যাচ" হবে। 'বিধ্বস্ত' তে টাইপো। দুঃখিত!
সুবোধ অবোধ
আশা করি আজকের খেলা দেখার পরে কিছুটা বোধোদয় হয়েছে।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
হা হা! অবশ্যই! দেখেন আমি চাইবো পরের কোন ওয়ানডেতে যেন তথাকথিত দুর্বল দলগুলোর সাথে ম্যাচ না হারে। মাঠে নামার আগে শুধু ওইটা মাথায় রাখলেই হবে, পাকিদের তুলাধুনা করসিলাম, আর এদের সাথে কেন পারবো না, জিতবোই। খারাপ পজিশনে ম্যাচ চলে গেলেও।
ধ্রুব আলম
আফগানদের সাথে হারটাকে ফ্লুক হিসেবেই দেখুননা। আমাদের যদি দুয়েকটা মানসম্পন্ন পেসার থাকতো তাহলে আসলে আত খারাপ পরিস্থিতি ঘটতো না। এক ম্যাশ আর কতো করবে? আজকে আমরা পাকিস্তানী পেসারদেরকে ভালো খেলেছি, কিন্তু পরের ম্যাচে যে মালিঙ্গা, পেরেরাকে খেলতে পারবো তার কিন্তু গ্যারান্টি নেই। নিজের ঘরে পেসার খেলে অভ্যাস না থাকলে আইরিশ, আফগান পেসাররাও আমাদের একহাত নিয়ে নিতে পারবে।
অ:ট: আপনাকেই তো খোমাখাতায় চউদার পোস্টে দেখলাম, তাইনা?
----ইমরান ওয়াহিদ
নতুন মন্তব্য করুন