ছোটবেলার থেকে আমার প্রাগে যাওয়ার শখ। লন্ডন মিউনিখ বার্লিন নিউ ইয়র্ক সিডনি আমাকে টানে না। আমি যেতে চাই প্যারিস, ভিয়েনা, প্রাগ, বুদাপেস্ট, যে শহর ঝকঝকে মসৃণ নয়, কিন্তু প্রতিটা পাথরে একটা করে গল্প আছে। ইউরোপে আসার পরেই, আমার কাজ হলো, কিভাবে কত বেশি জায়গায় ঘোরা যায়। আমার বন্ধুভাগ্য সুপ্রসন্ন, ব্রাজিলের এক ছেলের সাত্থে বন্ধুত্ব হয়ে গেলো, যে আমার মতই কাধে একটা ব্যাগ ঝুলিয়ে বের হয়ে যায়, একটা পাউরুটি নিয়ে সারাদিন হাটতে পারে। তার নাম গিলার্মে।
ঠিক করলাম, প্রাগে যাবো, এক বা দুই সপ্তাহ আগেই, অর্ধেক দামে, টিকিট কিনে ফেললাম ট্রেনের। এখানে বলে রাখি, ইউরোপে ছাত্র-ছাত্রীদের জন্যে সবকিছুর দাম অর্ধেক। টিকিটের কাহিনী হল, সে রির্টান টিকিট পেলো, আমি পেলাম না। আমি দৌড়-ঝাপ শুরু করলাম, পেলাম না। এদিকে হোস্টেল বুকিং করে ফেলসি, কিন্তু ফেরত আসার খবর নাই। মহা চিন্তায় নেটে হাবিজাবি খোজা শুরু করলাম। হঠাৎ পেয়ে গেলাম, চেক ট্রেন সার্ভিস, ডাবল্ দাম দিয়ে নিয়ে নিলাম, স্লিপিং বার্থ (এইটা আমার জীবনের সবচেয়ে ভালো ডিসিশন ছিল, নিঃসন্দেহে!)। শুক্রবার আমার ক্লাস নাই, আমি তো সকাল থেকেই প্রস্তুতি নিচ্ছি, বিরাট লিস্ট বানায় ফেলসি, কই কই যাবো, কি কি করবো। একটা প্ল্যান ছিল, একগাদা বিয়ার নিয়ে আসবো সবার জন্যে, চেক বিয়ার বিখ্যাত তাই!
গিলার্মে ডর্ম রাতে ছেড়ে দিবে, সে প্রাগ থেকে যাবে মিউনিখ, কিন্তু ডর্ম ছাড়া যে এত পেইন, এইটা সে জানত না। আমরা বের হয়ে যাবো, তখন রিসিপসনে বসা মহিলা বললো, কিছু পেপারওয়ার্ক করা লাগবে। ১০টায় ট্রেন, আমরা ৯টায় বের হচ্ছিলাম, তো ব্যাপার না। দাঁড়ায় আছি আমি, আর গিলার্মে ফিলআপ করতেসে। মহিলা একটু পরে বললো, ঠিক হয় নাই। আসলে এই পর্যন্ত সে একটা কথাও ইংরেজিতে বলে নাই, সে একবর্ণ ইংরেজি বুঝে না। আকারে-ইঙ্গিতে ইশারায় সব বুঝাচ্ছে, আমার মেজাজ বেশ খারাপ হচ্ছে। এরপরে সে বুঝালো, বেডিং আর কি কি সব জিনিশ তাকে নিচে নামিয়ে যেতে হবে, আমরা দৌড়াতে দৌড়াতে গেলাম, আনলাম, জমা দিলাম। এক পোলিশ কাপল যাচ্ছিলো, তাদের অনুরোধ করলাম, প্লিজ আমাদের একটু হেল্প কর, তারা দোভাষী হিসেবে কাজ করল কিছুক্ষণ। যতক্ষণে সব বুঝানো শেষ ততক্ষণে বুঝলাম, ট্রেনটা আমরা মিস করতে যাচ্ছি। আমার ইচ্ছা হচ্ছিলো, মহিলাকে ওইখানে দাড়ায়ই কানের নিচে কয়েকটা লাগায় দিতে। গিলার্মে আমাকে বলে, সব তার দোষ। মোটেও তার দোষ না, এক ফোটাও না। সে ফেরত আসবেই তো ডর্মে, চেকআউটের সময় সব বুঝিয়ে দিলেই হত, সেই মহিলা কোন রিস্কে যাবেনা, যেন আমরা পালাচ্ছি! (তাকে আমরা কোন এক সময়ে মহা পেইন দেয়ার ইচ্ছা আছে, এবং ডর্মে সবাইই তার উপর বিরক্ত)
আমরা দৌড়াতে দৌড়াতে বাস স্টপে গেলাম, স্টেশনে যাবার বাস মিস করসি। আবার দৌড়, এবার ট্রামস্টপ, চোখের সামনে ১০-১৫ ফুট দূরে ট্রাম থামলো, চলেও গেলো, আমরা ধরতে পারলাম না। আরেক বাসস্টপে দৌড় দিলাম, বাসে উঠলাম, স্টেসন যাবে না, চেঞ্জ করতে হবে আরেকখানে নেমে, তাও উঠলাম, মাথা আর কাজ করতেসে না। নামলাম কোন একখানে, কিচ্ছু নাই, -১ বা -২ টেম্পারেচার, ভয়ঙ্কর কুয়াশা, ১০-১২ ফুটের বেশি দেখা যায় না। একটা ট্যাক্সি পেলাম, উঠে পড়লাম, ট্রেন স্টেশনের পার্কিং-এ ঢুকতেসি, ট্রেন আমাদের চোখের সামনে দিয়ে বের হয়ে গেল। ভাড়া দিয়ে, গিলার্মে সত্যি সত্যি কাদতে বসলো ফুটপাথেই, আমিও বসা। আমি বললাম, দোষ তো তোমার না, সে তাও বলে তার জন্যেই সব ভুল হল।
আমার মাথা তখন পুরাই আউলা, যেভাবে হোক আমি প্রাগে যাবোই। বাস, ট্রেনস্টেশন সব বন্ধ, নেটে গুতানো শুরু করলাম। কিছুই পাই না, দুইজনে মন খারাপ করে রুমে চলে আসলাম। আমি তারপরেও খুজতেসি, কিভাবে যাওয়া যায়। শেষে পেয়ে গেলাম বাস, ভেঙ্গে ভেঙ্গে যেতে হবে, ভোরে রওনা দিতে হবে, আরেকটা শহরে (ভারস্লাভ) কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে ইত্যাদি ভেজাল। যা থাকে কপালে, আবার কাটলাম টিকিট, আমি যাবোই, গিলার্মে আর যাবে না, সে তো কাদতেই আছে। সে আমার সব টিকিট আর বাকি সব পে করে দিবে, তার নাকি অপরাধবোধ হচ্ছে (আমি অবশ্য ওকে টাকা দিয়ে দিয়েছিলাম, সে পুরোটা নেয়নি)। ভোরে উঠার কোন রিস্কই নিবো না, আর ঘুমাইই নাই, তাই সকালে আর বাস মিস হল না! গিলার্মে আর গেলো না, আমি বেশি জোরাজুরি করলাম না, দুঃখী মানুষকে চিয়ার আপ করে তোলার ক্ষমতা আমার বেশি ভালো না। গেলাম ভারস্লাভ, ছোট্ট সুন্দর শহর। আমি ব্যাগ নিয়া বিনা টিকিটে বাসে-ট্রেনে ঘুরি ফিরি আর মার্কেটে টয়লেট করি (একমাত্র ওখানেই সেটা ফ্রি!)। আমার হাতে ৬ ঘন্টার মত সময়, আমি এর মাঝে শহর ভাজা ভাজা করে ফেললাম। পয়সা উশুল করতে হবে না, এমনি বিরাট লসে আছি! বাস করলো একঘন্টা লেট, আমার সমস্যা নাই, জাম্বো সাইজ স্যান্ডুইচ বানায় আনসি ৬ খান। একটা একটা করে শেষ করি।
প্রাগ পৌছালাম সন্ধায়, পৌছে এক ঘন্টা ধরে আমি আর হোস্টেল খুজে পাই না। ঘুরে ফিরে একই জায়গায় চলে আসি। ভাষা বুঝি না, ম্যাপ বুঝি না, ফোন নাই, নেট নাই, আমার গা দিয়ে ঘাম বের হওয়া শুরু হইসে। আসলে পোল্যান্ডে আসার পরেই আমি একটা স্মার্টফোন কিনে নিসি, সেটায় অ্যাপ ভরে নিসি একটা, যেটায় পোল্যান্ডের সব বাস-ট্রাম-ট্রেন রুট দেখায় দেয়, কিভাবে যেতে হবে তাও বলে দেয়। প্রাগে গিয়ে আমার সব অফ, খুজে বের করতে হবে ম্যানুয়ালি। ট্রাম লাইন ধরে হাটা শুরু করলাম। স্টেশন বুঝার চেষ্টা করলাম, ম্যাপটাও। শেষে অনেক হিসাবের পর, একটা ট্রামে উঠলাম এবং আসলেই হোস্টেলে পৌছে গেলাম, মনে হল, আমি আলেকজান্ডার, বিশ্বজয় করে ফেলেছি! কিন্তু কথা হইল, শয়তানের হাড়ে হাড়ে থাকে বদমাইশি, এই যেমন আমার আছে। রুমে ব্যাগটা ফালায় দিয়েই, একটা স্যান্ডুইচ খেয়ে আবার বের হয়ে পড়লাম রাস্তায়। হারায় যাবো তো কি হইসে, রাতের প্রাগ দেখবো না? ফেরত আসছিলাম কখন মনে নাই, ২টার আগে হবে না। এবং আমি প্রথম দর্শনে প্রাগের প্রেমে পড়ে গেলাম। এত সুন্দর একটা শহর হতে পারে? কি কি দেখলাম, তার নাম-টাম জানি না, কিছু চিনি, কিছু চিনি না, ওইগুলার কথা না বললেও হবে, যাদের দেখার ইচ্ছা গিয়ে দেখেন, নাইলে বাড়িতে পচে মরেন, আর আরেকজনের লেখায় বর্ণনা পড়ে কোন লাভ নাই।
মজার ঘটনা যা ঘটলো, সেইটা বলতে ইচ্ছা করতেসে বরং। প্রাগে গেসি, আর বারে যাবো না, তাতো হয় না, গেলাম বারে, অর্ডার দিলাম না বুঝে বেশ দামী দেখে একটা ড্রিঙ্ক। আসার পরে দেখি সেটা বেশ বড় সাইজের ভদকা শট। পাব্লিক উৎফুল্ল, কোথাকার এক ব্রাউন চ্যাংড়া ছ্যাড়া এই কঠিন মাল অর্ডার দিয়া ফালাইসে। আমি ঢোক গিলা শুরু করসি, বাবারে এই জীবনে যাই খেয়ে থাকি, এইটা আমার জন্যে না, দেখেই বুঝসি। কোনমতে এক চুমুক দিয়েই, বাপের নাম, মায়ের নাম, নিজের নামও ভুলে গেলাম। কি করি, এত টাকা দিয়ে অর্ডার দিসি, ফেলতে তো পারিনা, গিলতেও না। অর্ডার দিলাম বিয়ার, এখন মিশাই কেমনে? কেউ দেখলে তো মাইরাও ফেলতে পারে, ভদকা আর বিয়ার মিলায় খায়? অশিক্ষিত গ্রাম্য বর্বর কোথাকার! চিপায় গিয়া দুষ্কর্মটি করে ফেল্লুম! তারপর বীরের বেশে বিয়ার খাই আর মুখ বিকৃত করি, পাব্লিক ভাবে, বাচ্চা ছেলে, বিয়ার খেয়েই কেদে দিচ্ছে। আরে ব্যাটা তোরা যদি বুঝতি, কি খাচ্ছি, আমাকে মাফ করে দিতি!
রাতে তিন-তলা বিছানায় এসে আক্ষরিকভাবেই উল্টা হয়ে ঘুমাইসি, কোন হুশ ছিলো না। সকালে তাই ভাবসিলাম, ৯টায় বের হবো, হলাম ১০টায়। হোস্টেল চেকআউট করে, ব্যাগ কাধে নিয়ে, পুরোদস্তুর ব্যাগ-প্যাকারস। যা দেখি তাতেই মুগ্ধ, সবকিছুর একগাদা ছবি তুলি, হা করে তাকায় থাকি (আমি মোটেই ফটোগ্রাফার না, আমার ছবি তোলা আমার স্মৃতির জন্যে। আর নিজের ছবি তুলি না, কারন কি দরকার? জাহির করার তো দরকার নেই, আমি কত জায়গায় গেসি, এই দ্যাখ তার প্রমান! নিশ্চয়ই কোথাকার কোন এক অপদার্থকে এত সুন্দর একটা ছবিতে মানাবে না, মানায়ও না। এই ব্যাপারে আমি আমার বন্ধু সুদীপের কাছে ঋণী, সেই বলসিলো, নিজের ছবিটা তোলা বাদ দে, ওইটা কেউ দেখতে চায় না, তুই নিজেও না!)
সে যা হোক, দুনিয়াবী চিন্তা ভাবনা তো করতে হয়, পেটে ছুচো ডাকছে, সকালে আবার সেই স্যান্ডুইচ খেয়ে বের হইসি (ওই খাওয়ার পর থেকেই আমার স্যান্ডুইচের প্রতি ভয়াবহ বিতৃষ্ণা জন্ম নিসে, আর কত?)। আমি আর স্যান্ডউইচ খেতে চাই না, বাইরে কোথাও খাবো। এরই মধ্যে সুভ্যেনির কিনে ফেলসি বেশ দাম দিয়ে, পকেটে আর বেশি টাকা নাই। আগের রাতেও তো ভালই খরচ গেসে, বার, আইস্ক্রিম, হট চকলেট, যা যা খাইলে কোন কাজে আসেনা আরকি, সব খাইসি। টাকা এক্সচেঞ্জে গেলাম, দেখি আমি সব টাকা আনি নাই! কিছু ক্রাকোতে ডর্মে ফেলে আসছি ভুলে, মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। প্রাগ ক্যাসেল দেখতেও তো ভালো টাকা লাগে! যা আসে পকেটে নিয়ে ক্যাসেলে যাওয়া শুরু করলাম, পেটে পাথর বেধে। পাহাড়ে উঠতে উঠতে ক্ষুধা আরো বেড়ে গেলো, বের করলাম আমার অখাদ্য লাগতে শুরু করা স্যান্ডুইচ, নির্মম দৃষ্টি দিয়ে তাই খেয়ে ফেললাম। প্রাগ ক্যাসেলে পৌছে টিকিট কাটার লাইনে দাঁড়ায় ভাবি, আমার শুধু স্টূডেন্ট টিকিট কাটার টাকাটাই আছে, যদি ঢুকতে না দেয় (আমার তখনো পার্মানেন্ট স্টুডেন্ট আইডি হয় নি)।
তারা আসলেই একটু সন্দেহ প্রকাশ করলো আমার টেম্পোরারি আইডি নিয়ে। আমি কাদো কাদো চেহারা নিয়ে বললাম, বহুদূর থেকে আসছি, বাংলাদেশ থেকে। তারা আমাকে অবাক করে দিয়ে বাংলাদেশ চিনে ফেললো এবং আমার রিকুয়েস্টও শুনলো। বিদেশের মাটিতে আমি মনে হয় সবচেয়ে খুশি হইসিলাম সেদিন। ক্যাসেলে কি কি দেখলাম, বর্ণনা দেয়ার সামর্থ্য আমার নেই। মাথা ঘুরে গেসিলো, এবং এখনো ভুলতে পারি নাই, সারাজীবনই মনে থাকবে। আর আমি এগুলা বলতে লেখতেসি না, তা আগেই বলসি। ওসব ভালো ভালো কথা নামী লেখকদের ভ্রমণকাহিনীতেই পাওয়া যায়।
ক্যাসেল আর তার আশেপাশের এলাকা ঘুরতে ঘুরতে, আর বলতে ভুলে গেসি, চার্লস ব্রিজও ঘুরে আর হাত-পা-হাটু সব টন টন করতে লাগলো। আর লাগলো পানির পিপাসা। অশ্লীল স্যান্ডুইচ খেয়ে ক্ষুধা যেতে পারে কিন্তু পিপাসা? তার উপরে পকেট গড়ের মাঠ। ঠিক করলাম, ২৫০ মিলি পানি কিনবো। যেখানেই পাই, এত্ত দাম, মেজাজ পুরাই খারাপ হয়ে গেল। তার উপরে দেখি বিয়ারের দাম পানির থেকে কম। শালা, দেশে মাগনা পানি, আর কাড়ি কাড়ি টাকা দিয়ে বিয়ার খাই, এইখানে পয়সা দিয়ে পানি কিনুম? তাও এত্তগুলা টাকা? বিয়ারই খামু!
কিনলাম বিয়ার, পাব্লিকলি ড্রিঙ্ক করা মানা, কিসের কি, মেইন স্কয়ারে ফুটপাথে বসে বিয়ারই খেলাম, পুলিশে ধরলে কমু, টাকা নাই, কি করবি বল? দে, পশ্চাৎদেশে চাইলে দুটা ঘা দিয়ে ছেড়ে দিতে পারিস। অপেক্ষা করছিলাম ফ্রি ওয়াকিং ট্যুরের জন্যে, দিলাম ট্যুর, পা ব্যথা নিয়েই। পা ব্যথা তো কত হবে, পা ব্যথা নিয়ে তো প্রাগ আর হবে না! মনে হল, ইউরোপ আসা আসলেই সার্থক, এত পাগলামি করে, সারাদিন উল্টাপাল্টা ঘোরা, সব সার্থক। বিকাল হল, সন্ধ্যা নামলো, আমার ঘোরা শেষ, একলা বসে থাকলাম আমার সেই মেইন স্কয়ারে। বোরিং লাগছিলো কি? এক মুহূর্তের জন্যেও না। কিন্তু ক্ষুধা, হাত-পা ব্যথা, টায়ার্ড, আর সংকল্প করেছি, স্যান্ডুইচকে না বলুন! ৮টার দিকে রওনা দিলাম ট্রেন স্টেশনের দিকে, ১০টায় ট্রেন, এবার জনাব আর ভুল করবে না। হু হু বাবা, ২ ঘন্টা আগে গিয়ে বসে থাকবো!
অলিগলি, রাস্তা দিয়ে ঘুরতে ঘুরতে, মার্কেটে টয়লেট সেরে (ফ্রি বলে কথা!) স্টেশনে পৌছে গেলাম ৯টার মধ্যেই। আর পারলাম না, কিছু কিনে খেতেই হবে, শেষ কয়েকটি মুদ্রা দিয়ে একখান বাচ্চা পোলাপানদের সাইজের ওয়েফার পেলাম। আমার পকেটে আর একটা টাকা নেই তখন, ট্রেনের টিকিটটা যদি হারায় যেত, আমার কি হত জানিনা। খালি ওয়েফার মুখে দিয়ে মনে হল, অমৃত! বেহেশত্তে হুর না, ওয়েফার যদি থাকে, তবেই যেতে রাজি আছি!
ট্রেন আর মিস করিনি, খালি ২বার প্ল্যাটফর্মে ট্রেনের একমাথা থেকে আরেকমাথা দৌড় দিসি, আমার কামরা খুজে পাচ্ছিলাম না। যা ঘটে গেসে গত ২ দিনে, তার তুলনায় এটা কিছুই না। রাতে ভাল ঘুম হইসিলো, সকালে ভালোয় ভালোয় ক্রাকো পৌছায় ক্লাসও করসি। (সব বোরিং ব্যাপার-স্যাপার, রাতে ট্রেনের বেড থকে পড়ে গেলে একটা কাহিনী হইতো আরকি, এক সুন্দরী ছিলো তো!)
এই হইলো আমার অদ্ভুত প্রাগ ট্যুর। আমি কি এনজয় করসি? অবশ্যই! কিছু ভুল হয়তো আবার সুযোগ পেলে শুধরে নেবো, কিছু ছিলো পুরোপুরি বোকামি। কিন্তু আমি ২০ ডলারে প্রাগ ঘুরে ফেলসি, সবাই আমারে ট্রাভেলিং গুরু বানায় দিসে, এটা কি কম নাকি! আমি কাউকে বলবো না, এমনভাবে ঘুরতে, আমার ভুলগুলো থেকে বরং শেখা যেতে পারে। আর প্রাগে গেলে, বউ বা বান্ধবী, কাউকে নিয়ে যান, পিলিজ লাগে! এটা একা ঘোরার শহর না, কারো হাত ধরে সারাটা বিকেল বসে থাকার শহর, একসাথে মেইন স্কয়ারে দাঁড়িয়ে সাবানগোলা বুদবুদ ওড়ানো আর বোকা বোকা ছবি তোলার শহর।
(আমি লেখাটা লিখলাম আমার ভাই-কাজিন আর কিছু বন্ধুদের জন্যে। আমার অদ্ভুত ভ্রমণ শুনে ডর্মে সবাই বলসে, লিখে ফেলো, এইরকম আজবভাবে কেউ ঘুরতে পারে, জানতাম না। আর একটা লাভও হইসে আমার, আমি এখন তাদের কাছে বস ট্রাভেলার এবং মোস্ট ওয়েলকাম টু গো উইথ দেম এনিওয়ার!
শেষ কথাঃ আমার সাথের শেষ স্যান্ডুইচটা আমি ফেলে দিসিলাম, এবং আর একটা স্যান্ডুইচও খাইনি আসার পর থেকে!)
**লেখাটা আমার ফেসবুক নোটে ছিলো, পরে ভাবলাম, যদিও কিছু খুব কাছের মানুষের "কেমন লাগে ইউরোপ?" প্রশ্নের জবাবে লিখেছিলাম, এখন মনে হলো, দিয়ে দেই ব্লগে। কজন আর এই পাগলামি করে!
আর আমি ফেরত আসার প্রায় ১ মাস পর স্যান্ডুইচ খাওয়া আবার শুরু করেছি, বানানো সোজা বলে কথা**
ধ্রুব আলম
মন্তব্য
আপনার অভিজ্ঞতা পড়ে ভালো লাগলো, আপনার স্মৃতি শক্তিও বেশ ভালো বলতে হবে।
তবে, কিছু জিনিস বাংলা হরফে ইংরেজি না লিখে, বাংলাতেই লিখতে পারতেন।
যেমন, মোস্ট ওয়েলকাম টু গো উইথ দেম এনিওয়ার= এখন যে কোন জায়গায় যাবার সময় সবাই আমাকে সাথে নিতে চায়
- শুনতে মন্দ না।
সচলের নিয়মে আগে সচলে প্রকাশিত লেখা ৭২ ঘন্টার মধ্যে ইন্টারনেটে অন্য কোথাও থাকার কথা না। ফেসবুক নোটের লেখা সচলে না দিয়ে, আগে সচলে দিয়ে ৭২ ঘন্টা পর ফেসবুক নোটে দিন।
আশা রাখছি আমার কথায় রাগ করেননি বা মনক্ষুণ্ন হননি, উপরের কথাগুলো আমার না; আমি সচলে এমনটা পড়েছি বলেই আপনার সাথে শেয়ার করলাম। ভালো থাকবেন।
শুভেচ্ছা
এটা ফেসবুকে লেখা হয়েছে নভেম্বরের ৯ তারিখ, আর আমি সচলে সচল, ১ সপ্তাহও না!
আর আমি সচলে কেন জানি ইংরেজি লিখতে পারছি না, অভ্র বন্ধ করলেও না। ব্যাপারটা ঠিক বুঝলাম না! অন্যখানে ঠিকই কাজ হচ্ছে।
ধ্রুব আলম
বলেন কি? মাঝে মাঝে উল্টো আমার ইংরেজি বন্ধ করতে সমস্যা হয়। Strange (আমার তো কাজ করল)আপনি ইংরেজি সিলেক্ট করে দেখেছেন কি? ব্রাউজার বদলেও দেখতে পারেন।
আপনি কি পুরো ইংরেজিতে লেখার কথা বলছেন?
(সচলের কিন্তু একটা পুরো ইংরেজি সেকশনও আছে!)
আপনি তা হলে এমএস ওয়ার্ডে লিখে কপি-পেস্ট করে ফেলুন।
সত্যি হল, আমি নিজেও অন্য জায়গায় লিখে তারপর এখানে পেস্ট করে ফরম্যাটিং দেখে নিই।
শুভেচ্ছা
নতুন মন্তব্য করুন