কুওরার এই প্রশ্ন এবং উত্তর থেকে আংশিক অনুদিত।
প্রশ্নটা ছিল এরকম-
প্রকল্পিতভাবে(hypothetically), মহাশূন্য পাড়ি দিয়ে পৃথিবীতে আসার জ্ঞান আছে এমন এমন কোন বুদ্ধিমান এলিয়ান সভ্যতা থেকে থাকে যদি, আমাদের সাথে যোগাযোগ না করার কোন কারণ আছে কি তাদের?
ধরে নেয়া হল যে তাদের জন্য আন্ত:তারকা ভ্রমণ অনেক দ্রুত এবং সহজ, এরকম ভ্রমণ আদৌ সম্ভব কি না তা আপাতত আলোচনার বাইরে। সেক্ষেত্রে সম্ভাবনা আছে যে তারা ইতিমধ্যে পৃথিবীতে এসেছিল, কিন্তু তারপরও আমাদের সাথে যোগাযোগ করেনি। কিন্তু ঠিক কি কি কারণে তারা আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে না চাইতে পারে?
একজন কুওরা ব্যবহারকারীর এই উত্তর দিয়েছিল:
তারা আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে চা চাইতে পারে ঠিক সেসব কারণে আমরা এই ছোট্ট প্রাণীটার সাথে যোগাযোগ করি না:
পিঁপড়ার সাথে যোগাযোগ করাটা তেমন অসাধ্য কোন কাজ না আসলে। এর জন্য শ্রেফ দরকার বাসায় বসে একটু গবেষণা করা, তারপর পিঁপড়ার ফেরোমোনের ভায়াল হাতে করে দরজার ফুটাতে বা উঠানের মাঝে পিঁপড়ার ঢিবির সামনে চলে গেলেই হবে। তাদেরকে আমরা দেখিয়ে দিতে পারব কোথায় খাবার পাওয়া যায়, বিপদে সঙ্কেত দিতে পারব, এমন কি কোথায় বাসা বানাতে হবে তাও বলে দিতে পারব। কিন্তু তারপরও আমরা তা করি না, কেন?
কারণ আমাদের সব কথা-বার্তা তাদের কাছে দুর্বোধ্য ঠেকবে। তাদের অপরিপক্ব ভাষায় অনুদিত হবার সময় আমাদের কথাগুলো ছাঁটাই হয়ে যাবে। ভাবুন একবার:"খাবার", "বন্ধু", "বিপদ", "নির্মাণ"; সমগ্র ইন্টারনেটকে কি এই চারটি শব্দ দিয়ে প্রকাশ করা সম্ভব? ভারী বর্ষণ আসতে পারে আর পাশের ঢিবি থেকে আক্রমণও হতে পারে, এসব নিয়ে আমাদের দুশ্চিন্তা কি তাদের আদৌ স্পর্শ করবে?
তাদের কথা শোনার জন্য আমাদেরও আগ্রহী হবার তেমন কোন কারণ নেই। কোন একটা পিঁপড়া কলোনির অনেক কারণ থাকতে পারে মানুষের সাথে যোগাযোগ করার। মানুষেরা তাদের খাবার এনে দিতে পারবে, তাদের বিপদে-আপদে সাহায্য করতে পারবে। বিনিময়ে তারা হয়ত আমাদের দেখিয়ে দিতে পারবে ঠিক কত গভীরে লার্ভা জমা করে রাখলে ভাল হয়! শুনতে অদ্ভূত লাগলেও এটাই কিন্তু তাদের ভাবনা হবে, কারণ মানুষ চাইতে পারে এমন বেশিরভাগ জিনিসেরই নাম পিঁপড়া ভাষায় নেই।
আমাদের অসীম কৌতূহলের কাছে তারা একেবারেই সামান্য, এবং তাদের কাছ থেকে পাওয়ার মত কিছুই নেই। কিন্তু এর চেয়েও আর অনেক বেশি বাস্তবমুখী এবং জরুরী সমস্যা আছে মানুষদের যেগুলো সমাধান বের করা অবশ্যই পিঁপড়াদেরকে কালজয়ী মানব-সাহিত্য বোঝানো থেকেও দরকারি।
এখানে পিঁপড়া আর মানুষের উপমা দিয়ে মানুষ আর সেই বুদ্ধিমান এলিয়ান সভ্যতার সম্পর্কটাই বোঝানো হচ্ছে। উপমা হিসেবে এটা খুবই যৌক্তিক। যদি সত্যি সত্যি কোন এলিয়ান সভ্যতা থেকে থাকে যাদের এরকম প্রযুক্তি এবং জ্ঞান আছে, পরিসংখ্যানগত দিক দিয়ে সম্ভাবনা আছে যে তারা মানব সভ্যতা থেকে বয়সে অনেক বড়, কারণ মানুষের জন্মের অনেক অনেক আগেই মহাবিশ্ব বাসযোগ্য হয়ে গিয়েছে। মুরের তত্ত্ব(Moore's law) অনুসারে, ২০৬৪ সালের কম্পিউটারগুলো এই ২০১৪ এর কম্পিউটারগুলো থেকে প্রায় ৩,০০,০০,০০০ গুণ বেশি শক্তিশালী হবে। তাহলে ভাবুন: মাত্র পঞ্চাশ বছরে যদি এরকম বদলে যেতে পারে, তাহলে আমাদের থেকে মাত্র এক কোটি বছর আগে জন্ম নেয়া একটা বুদ্ধিমান সভ্যতা কতটা এগিয়ে আছে? কল্পনা করতে গেলেও মাথা ঘুরে যায়!
তাদের অস্তিত্ব যদি থেকেও থাকে, আমাদের প্রতি আগ্রহী হবার কোন কারণই নেই তাদের।
- রাতুল মিনহাজ
মন্তব্য
অনুবাদটা পড়ে ভালো লাগলো। সচলে আসা বিজ্ঞান বিষয়ক লেখাগুলো ভালো লাগে আমার।
একমত হতে পারিনি এই বিষয়ে। মুরগি আমাদের চেয়ে অনেক নিচের শ্রেণীর প্রাণী, তাই বলে আমরা মুরগির প্রতি আগ্রহী নই তা নয়। মুরগিকে আমরা হ্যামলেট পড়ে শোনাই না, কেবল আমাদের দরকারে তাদের খেয়ে ফেলি।
খুবই স্থূল উদাহরণ টানলাম, এলিয়েনরা এসে আমাদের খেয়ে ফেলবে তা না; তবে নিচের শ্রেণীর কারো প্রতি আগ্রহ থাকবে না -এটা খুব বেশি সাধারণিকরণ হয়ে গেল না?
ভালো থাকুন, শুভেচ্ছা আপনাকে রাতুল মিনহাজ
মেঘলা মানুষ আপনাকে অনেক ধন্যবাদ কমেন্টের জন্য! সাহস এবং সময় করে অনুবাদটি করে ফেলার পরও ভার্সিটির জ্বালাতনে কমেন্ট পড়েছে কি না তা চেক করার সুযোগই পাই নি!
বুদ্ধিমত্তায় নিচু শ্রেণীর কোন প্রজাতি হিসাবে আমাদের সাথে ঠিক কেন এরকম আলোকবর্ষ এগিয়ে থাকা (light years ahead) এলিয়ান সভ্যতা আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে চাইবে না, তা আপনার স্থুল উদাহরণেই আছে আমার মতে। আমরা মুরগি পালি, মুরগির ওপর নির্ভর করে আমাদের কোটি টাকার ব্যবসায়, এর কারণ মুরগি বিবর্তনীয় ধারায় আমাদের সাথে এমন একটা অবস্থানে আছে যে এর প্রয়োজনীয়তাটাই সেরকম। অন্যদিকে, পিঁপড়ের অবস্থা অনেক করুণ মুরগির থেকে, আমাদের প্রয়োজনের সাপেক্ষে তারা আসলে কিছুই না। মুরগিসহ আরও অনেক নিম্ন বুদ্ধিমত্তার প্রজাতি আমাদের কাজে আসে, কিন্তু কতটা নিম্ন তার একটা সীমা নিশ্চয় আছে।
এলিয়ান-মানুষ সম্পর্কটাও এরকমই। যদি তাদের কাছে মহাশূন্য পাড়ি দিয়ে অন্য তারায় যাবার মত প্রযুক্তি থাকে(যা উদ্ভাবন করতে আমাদের ঢের দেরি), তাহলে নির্দ্বিধায় বলে দেয়া যায় তাদের বুদ্ধিমত্তাকে সন্তুষ্ট করার মত কিছুই নেই আমাদের কাছে। ব্যাপারটাকে আমি বুঝেছি এভাবে।
অনেক খুশি হলাম কমেন্টের জবাব দিয়ে যাবার জন্য।
হুম, এই কথাটা আমারও মাথায় এসেছে, মুরগির সাথে আমাদের খা্দ্যাভ্যাস জড়িত। আমাদের খেতে এলিয়েনদের ভালো নাও লাগতে পারে।
তবে, মানুষ কিন্তু অনেক অহেতুক গবেষণাও করে। মানুষের বানানো বন্য প্রাণীর উপর ডকুমেন্টারিগুলোর কথা ভাবলাম, অনেকগুলোই মানুষ বানিয়েছে কৌতুহল থেকে। আমাদের নিয়েই অন্য কোন মহাকাশীয় কারও কৌতুহল থাকতে পারে। আপনার গোছানো উত্তর ভালো লেগেছে। কিন্তু, তারপরও আমার মনে হয়েছে এলিয়নের বুদ্ধিমান ১০০০টা প্রজাতির মধ্যে কৌতুহলী কিছু কিছু প্রজাতি থাকার সম্ভাবনা আছে। কৌতুহল থাকাটা বুদ্ধিরই একটা উপসর্গ।
ভালো থাকুন, শুভেচ্ছা
কিছু তর্ক চলতেই থাকে, চলতেই থাকে, না? যা-ই হোক, কুওরাতে এই প্রশ্নটারই আরেক উত্তর থেকে বলছি। ফার্মির হেঁয়ালি'র কথা শুনেছেন কখনও? এখান থেকে পড়ে নিতে পারেন।
ফার্মির হেঁয়ালিপনা মানতে গেলে বলতে হয় এরকম কিছু কারণের কোনটার জন্য এলিয়ানেরা আমাদের সাথে কথা বলেনি এখনও:
> আমাদের একঘরে করে রাখা হয়েছে কোন কারণে
> আমরা নিতান্তই বোরিং
> অথবা তারা নিতান্তই বোরিং
> তারা আসলে খুবই নিরব প্রকৃতির
> তারা আমাদের মাঝেই আছে, কিন্তু ছদ্মবেশ নিয়ে
ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি
- রাতুল মিনহাজ
নতুন মন্তব্য করুন