আরেকবার নবনী ও সাইকেল ডাক্তার !!

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: সোম, ০৩/০৩/২০১৪ - ১০:৪৩অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

১।
রোগীর প্রায় মরে থাকা বা বৃদ্ধাঙ্গুলের সুতাসদৃশ শিরায়ও সর্বদা অব্যর্থভাবে ক্যানুলা করতে পারত সেই সাইকেল ডাক্তার...কিন্তু যেদিন মাথাখারাপ নবনীর তিন মাইল দূর থেকে দেখা যাওয়া সদা জেগে থাকা তরতাজা শিরায় সামান্য একটা বাটারফ্লাই ক্যানুলা সাইকেল ডাক্তার দিতে পারেনা সেদিনই নবনী স্পষ্ট করে বুঝতে পারে জগতে সবকিছু জাগতিক না বরং তাতে হঠাৎ হঠাৎ স্বর্গ দেখা দিয়ে ওঠে....

সেই স্বর্গ যেথায় কেবল ভালোবাসা থাকে....

২।
সাজগোজ নবনী করতেই চায়নি কিন্তু মা’র চোখ আর বাবা’র কপালে ছেপে থাকা চিন্তার ভাঁজের দিকে তাকিয়ে নিজেকে তৈরি না করে পারেনা সে... সাজগোজ করার পর যা হবার তাই-ই হল... বরাবরের মতই তাঁকে আজ অপ্সরার মত দেখাচ্ছে... বার বার আয়নায় গিয়ে নিজেকে সে দেখে আর নিজের রূপে মুগ্ধ হয় ... সমস্যা একটাই আয়নায় চোখ পড়তেই তার চোখ জলে ভরে যাচ্ছে... কেন সৃষ্টিকর্তা তাকে রূপবতী করে গড়েছিলেন ভেবে সৃষ্টিকর্তার প্রতি অভিমান করে বসে নবনী .. অভিমানের ভারে নাকে জমা বিন্দু বিন্দু ঘাম আর জলভরা চোখের গলে যাওয়া কাজলে তার রূপ যেন আরও কিছুটা বাড়তে থাকে ... নিজেকে সে দেখে আর মনে মনে বলতে থাকে সবার তাকে ভালো লাগুক শুধু একজনের যেন তাকে ভালো না লাগে... সেই একজন যে তাকে তার সাইকেল ডাক্তারকে ভুলিয়ে দিতে আসছে...
৩।
পারিজাতকে স্কুল থেকে আনা নেয়া মিসেস রহমান নিজেই করেন... একে তো মেয়ে ছোট তার উপর মেয়েটা তাঁর থেকেও রূপবতী আর তাঁর মেয়েটা ভীষণ দুষ্টও ... বলা তো যায় না কখন,কোথায় কি অঘটন ঘটে যায়... তাই তিনি রোজই অফিস সেরেই বেরিয়ে পড়েন মেয়ের স্কুলের উদ্দেশ্যে... এমনই ছিল সেদিনটাও... অফিসের পর পর গিয়েছেন পারিজাতের স্কুলে... বেরিয়েই রাজকন্যার বায়না সে আজ মুভ এন পিকে আইস্ক্রিম খাবে কারণ সে ক্লাসটেস্টে টপ করেছে... কি আর করা অগত্যা মেয়েকে নিয়ে গেলেন সেখানে... আইস্ক্রিম শেষ করে যখন উঠছেন ঠিক তখন পেছন থেকে অনেক পুরনো কিন্তু চেনা একটা স্বর শুনলেন... কি মনে করে পেছন ফেরা লোকটার খুব কাছ গিয়ে দাঁড়ালেন তিনি... লোকটা ঘুরে দাঁড়াতেই মিসেস রহমানের নিঃশ্বাস আটকে গলার কাছে একদলা জল জমতে থাকে... লোকটি আর কেউ নন... তাঁর সেই ভুলে যাওয়া স্বর্গ দেখানো সাইকেল ডাক্তার... বসবেনা বসবেনা করেও মিসেস রহমান বসে পড়েন সাইকেল ডাক্তারের সামনে মেয়েকে সাথে নিয়েই... তাঁকে এতটা অপ্রস্তুত অবস্থায় দেখে সাইকেল ডাক্তারই এবার এগিয়ে আসেন পরিবেশ সহজ করতে... কিছুটা সময় পর আরেকবার নতুন করে আইস্ক্রিম আসে, শুরু হয় জমে থাকা হাজার দিনের মুহূর্তের গল্প... কিছুটা সময় গল্পের সাথে এগুতেই ‘দায়িত্বশীল মিসেস রহমান’ আবারও সেই মেলাদিন আগে হারিয়ে যাওয়া ‘হাসিখুশি তরুণী’ হয়ে ওঠেন...কিন্তু একটা সময়ে পারিজাতের অস্থিরতায় তাঁদের গল্প থামে... এবার ফেরার পালা... পারিজাতকে নিয়ে মিসেস রহমান তাঁর প্রাডায় উঠতে গিয়ে দেখেন সাইকেল ডাক্তার তাঁর পাজেরোর দরজাটা খুলে তাঁর দিকে তাকিয়ে আছেন... দৃষ্টি সরিয়ে মিসেস রহমান যখন গাড়ির কাঁচটা তুলতে যাচ্ছেন ঠিক তখুনি সাইকেল ডাক্তার একটু জোরেই তাঁকে হাত নেড়ে বললেন ‘ভালো থেকো, নবনী’... মিসেস রহমান কোন কথা না বলেই ড্রাইভারকে গাড়ি ছেড়ে দিতে বলেন... সেই অনেককাল আগের মত মনে মনে কথা বলার অভ্যেস তাঁর এখনও যায়নি বলেই তিনি মনে মনে বলতে থাকে ‘তুমিও ভালো থেকো সাইকেল ডাক্তার...’ বলেই তাঁর মনে পড়ে তাঁর ‘সাইকেল ডাক্তার’ তাঁর কাছ থেকে হারিয়ে গিয়ে আজ অন্য কারো ‘পাজেরো ডাক্তার’ হয়েছেন... হাসিখুশি তিনি হয়েছেন দায়িত্বশীল মিসেস রহমান... শুধু কিচ্ছুটি হতে পারেনি নবনী... কারণ নবনীরা কখনও কিছু হতে পারেনা..

মেঘ মঞ্জরী


মন্তব্য

মহিউদ্দিন ডালিম এর ছবি

লেখার গাথুনী চমৎকার ।
কিন্তু মনটাই খারাপ হয়ে গেলো ।

আয়নামতি এর ছবি

বাহ! সুন্দর লিখেছেন, তবে প্রথম দিকে আরেকটু হাতপা ছড়াতেই পারতো গল্পটা।
এগল্পের আরেকটা পর্ব কী আমি মিস করেছি চিন্তিত
লিখতে থাকুন মেঘ মঞ্জুরী। শুভকামনা।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।